অভিনয় পর্ব-১১

0
250

#অভিনয়
#পর্ব_১১
#মুমতাহিনা_তারিন

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না তেমন শাওন আর পারুর বেলায় ও থেমে নেই । আজকে তাহেরা বানু পারুদের দুয়ারে বসে আছে কারণ একটাই শাওনের সাথে পারুর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে হবে । তনুজা বেগম তাহেরা বানুর সাথে এই বিষয়ে কথা বলছে । পারু চুপ হয়ে আছে ওর ভিতরে কোনো আনন্দ অনুভূতি নেই । যদিও শাওন অনেক ভাবে নিজের ভুলের জন্য মাফ চেয়েছে । ওকে আগের মত ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করেছে ।কিন্তু পারু কিছুই প্রকাশ করেনি । শুধু দেখে গেছে । শাওন ও খেয়াল করেছে পারুর চুপ করে যাওয়াটা । আগে খোঁচা মেরে কিছু বললে ঝগড়া করতে লেগে যেত নইলে হাতের কাছে যা পেত তাই শাওনের দিকে ছুঁড়ে দিত কিন্তু এখন চুপচাপ দেখে ।

কিছুদিন আগে শাওনের শহরের বন্ধুরা অর্থাৎ ইমরান আর নাহিন এসেছিল । ওদেরকে সময় দিয়ে ও পারুকে ঠিকঠাক সময় দিত পারু কিন্তু যখন সবাই শুনলো শাওন পারুর জন্য নয়নের মত সুন্দরী স্মার্ট মেয়েকে বিয়ে করতে নাকচ করেছে তখন তো ইমরান হায় হায় শুরু করে দিয়েছিলো । পারুর মুখের পরেই ইমরান এক চোখ বিস্ময় নিয়ে বলেছিল ” এই মেয়েটার জন্য নয়নকে ছেড়ে দিলি!!! তোর কি মাথা ঠিক আছে ।আমার সত্যি মনে হচ্ছে ভাই তোকে এই মেয়ে কালোজাদু করেছে ।” নাহিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নি । শুধু বলেছিল যার সাথে তুই নিজেকে খুশি মনে করবি তার সাথেই থাকবে হোক না সে একটু কম সুন্দরী।

ইমরানের ওই কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিরব ভূমিকা পালন করেছিল পারু ওই যে কথা বলা বন্ধ হলো আর তেমন প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে নি । ইমরানের তো কোনো দোষ নেই এমনি ওর মধ্যে অসাধারণ কিছু নেই । তার উপর শাওন যথেষ্ট সুন্দর ,পরিপাটি আরো পঞ্চাশ থেকে শত হাজার বেতনের চাকরি করে ।আবার পড়াশুনায় যেমন ভালো তেমনি নেশা টেশা কিছু নেই উল্টো সুন্দর সচ্ছ চরিত্র । আর পারুর সেই তুলনায় কিছুই নেই ।পারু বুঝতে পেরেছে শাওনের সাথে বিয়ে হলে যে দেখবে সে এমন কথাই বলবে ।বলাটা নিতান্ত সাভাবিক । বর কালো হলে বউ যদি সুন্দরী হয় সেইটা সাভাবিক কিন্তু বড় সুন্দর বউ সুন্দর না এমন কিছু ঘটলে সমাজের মানুষ এমন একটা ভাব করে যেনো এইটার মত বিরল জিনিস আর কিছু হতেই পারে না । তখন ভাবে মেয়েটা নিশ্চয় ছেলেটাকে ভাজুং ভূজুং দিয়ে পটাইসে আবার কেউ কেউ বলে কালোজাদু করেছে নিশ্চয় ।তাদের নাক ছিটকানি দেখতে দেখতে শেষ ।

তনুজা পারুকে বুঝিয়েছে অনেক ।পারু সব মেনে নিয়েছে ও বুঝে গেছে চাচা চাচী ও একটি হালকা হতে চায় । চাচীর বাচ্চা কাচ্চা হয়নি বলেই হয়তো শান্তি মতো থাকতে পেরেছে নইলে কবেই কোন বুড়োর সাথে বিয়ে হয়ে যেত। দুনিয়ায় কেউ কারোর নয় সবাই ক্ষণিকের সঙ্গী হয়ে থাকে । আর পারু তো মেয়ে শাওনকে না বললে অন্য কাউকে নিশ্চয় বিয়ে করতে হবে আর সে যদি শাওনের থেকে ও খারাপ হয়! তখন গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া পারুর আর পথ থাকবে না ।নিজের ক্ষোভ গুলো জমিয়ে রাখলো পারু,, নিজের ছোট্ট হৃদয়ে । বাবা এমন বিয়ে দিতে চাইলো নিশ্চয় জিজ্ঞাসা করত বড্ড বোঝা হয়ে গেছি তাই না? কিন্তু আফসোস প্রশ্ন করার অধিকার টা নেই ,,যাদের বাপ নেই মা নেই তাদের সত্যি অধিকার থাকে না,, জেদ ধরে থাকতে পারে না ,,আর না পারে নিজের মত করে চলতে ।

সালাম মিয়া বাজার থেকে বড় একটা মাছ এনেছে হাতে করে । তনুজা আর তাহেরা বানু কে দেখে কিছুটা অবাক হলো । পারু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিল । রান্নাঘর থেকে ঝুড়ি এনে সব সবজি ঝুড়িতে ঢেলে রাখলো । একটা ঢাকুন নিয়ে উঠানে রাখলো ,,বতি নিয়ে বসে পড়লো মাছ কাটতে যত এইগুলো নিয়ে ভাববে ততই খারাপ লাগবে । ব্যাস্ত থাকলে কষ্ট একটু উপশম হবে ।

” আরে আপা আপনি কেমন আছেন? কি মনে করে আসলেন হঠাৎ?”

তাহেরা বানুর মুখটা নিমিষেই আঁধার হয়ে এলো । কোনোদিন নিজে ছোট হয় এমন কাজ থেকে দশ হাত দূরে থেকেছে তাহেরা আজকে ছেলের পাগলামি আবদারের কাছে সব ভন্ডুল হলো। তীর্যক ভাবে চাইলো পারুর দিকে । যার চাহনিতে আছে স্পষ্ট রাগ ক্ষোভ আর ঘৃণা।কে জানে কিছু না করেই পারুর উপরে এই রাগ না গিয়ে পড়ে।

” জি ভাই কি আর করবো বলেন বাবু তো পারু বলতেই অজ্ঞান নইলে নয়নের মত লক্ষ্মী মেয়ে রেখে পারুর হাতের জন্য আসা লাগে?”

সালাম মিয়ার হাসিটা বিলীন হয়ে গেলো তাহেরা বানুর কথায়। পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেলো ।এই থমথমে ভাবটা কাটাতে তনুজা কিছুটা নিরীহ গলায় সালাম মিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন –

” আমরা আর কি করবো বলো,, পারু আর শাওনের বিয়েটা এবার হোক । দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে আর আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। তাই ভাবি দিনক্ষণ ঠিক করতে এসেছিলেন”

” ওহ তাহলে কি ঠিক করলে?”

তাহেরা বানু আরেকটু মুখ গম্ভীর করলেন । তার কথায় বোঝা যাচ্ছে সে কতোটা অখুশি বিয়েটা নিয়ে ।বার বার মেকি হাসি দিয়ে নিজের অভিব্যাক্তি গুলো চেপে রাখছে।

” শাওন চাচ্ছে পরশুদিন বিয়েটা করতে খুব ছোটো ভাবেই দুই পরিবার আর কিছু আত্মীয় সজন নিয়ে”

পরশুদিন বিয়ে হবে শুনেই বুকটা ধক করে উঠল । মাছ কাটা থেমে গেলো । যতই খারাপ লাগা থাকুক ,,শাওনের পরে তো আর কোনো অভিমান তার নেই । যা ছিল সেটা শাওনের ভালোবাসায় আপাতত নিজের ছোট্ট অস্তিত্ব আড়াল করে রেখেছে । মনে আকাশকুসুম চিন্তার সমাবেশ হতে থাকলো । বিয়ে মানে সারাটাজীবন এক সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি । শরীর কম্পিত হতে থাকলো পারুর । মনে উদয় হলো এক ঝাঁক ভয় আর অনেকটা ভালোলাগা ।

” তাহলে তো হয়েই গেলো আমরা রাজি । ”

মনে মনে তাহেরা কয়েক বুলি আওড়ে নিলো । কিন্তু ঠোঁটে রাখলো লোক দেখানো হাঁসি ।

” তাহলে সেই কথায় থাকলো আজকে উঠি ভাই ।অল্প কিছু মানুষকে অন্তত জানতে তো হবে আরো কেনাকাটা করতে হবে ”

” জি আপা ”

____________________