#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট২১ (শেষপর্ব)
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
রেওয়াজের কথাগুলো খুব করে ভাবাচ্ছে মেঘকে।এতদিন সে কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় পায় নি।নিজেকে সে সুযোগটা দেয় নি।আজকে হঠাত করে কেন জানি কথাগুলো শুনে সে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা খেল।রেওয়াজ তার ফোনটা ড্রয়িং রুমের টিভির সাথে কানেক্ট করল।কিছুক্ষন পর একটা ভিডিও শুরু হল।এক জন মেয়ে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে।সামনে আয়াজ চোধুরীকে দেখা যাচ্ছে। গ্লাসে মদ ঢালছে সে।টানা দুই তিন পেগ গলায় ঢালার পর সে বেশ আয়েশ করে বসল।তার চোখে কামনা আর খুশির আভা ঝিলিক দিচ্ছে।উঠে এসে সে মেয়েটিকে জরিয়ে ধরতে চাইল।কিন্তু মেয়েটি এক হাত এগিয়ে তাকে থামিয়ে দিল।আয়াজ চৌধুরী এমন ব্যবহারে বেশ ক্ষিপ্ত হলেন।
-নাউ হোয়াট?এখন থামাচ্ছ কেন?ইউ নো হোয়াট আজকের এই রাতটার জন্য আমি কতকিছুই না করেছি!!মেঘকে আমি অনেক বার বলেছিলাম জাস্ট একটা রাতের জন্যে তোমাকে আমার কাছে পাঠাতে।কিন্তু অই মেঘ কোন ভাবেই রাজী হচ্ছিল না। দ্যাটস হোয়াই আমি তাকে ব্লাক মেইল করেছি। বাট সে ঘাড়ত্যাড়া তাতেও সোজা হয় নি।এই জন্যে আমি ওয়ার্কারদের টাকা দিয়ে স্ট্রাইক করতে বলি।আকিজ গ্রুপের মালিক কের পি এ কে টাকা দিয়ে নিজের সাপোর্ট এ নিয়ে আসি।তারপরেও আমি কোনভাবেই মেঘকে হারাতে পারছিলাম না।অতি মাত্রার প্রেম থাকলে যা হয়।দেন আমি ডিসাইড করি পেছন থেকে খেলার কোন মানেই হয় না।সামনা সামনি তোমার সাথে কথা বলি।তোমাকে ভয় দেখাই।তোমাকে নিজের করে পাবার অফার দেই।এন্ড ইউ নো বৃষ্টি তুমি অনিচ্ছা সত্ত্ব্বেও আমার অফার মেনে নেও জাস্ট মেঘকে বাচানোর জন্যে।নাউ কাম অন বৃষ্টি।ডোন্ট মেক মি ফোর্স ইউ।
.
.
লাস্টের কথা গুলো শুনেই মেঘের হাত থেকে ফোন পরে গেল।দু হাটুর উপর ভর করে মাটিতে বসে পড়ল।চোখ থেকে টপটপ। করে পানি পড়ছে তার। পারছে না সে সবটা অস্বীকার করতে।মস্তিষ্ক তাকে বার বার অস্বিকৃতি জানাচ্ছে।কিন্তু মন তাকে অনবরত দোষারোপ করছে।কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। ইচ্ছে করছে তার সব গুড়িয়ে দিতে।
রেওয়াজ তার পাশে বসে কাধে আলতো করে হাত রাখল।মুহুর্তেই মেঘ তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিল।
-আমি এই ভুলটা কিভাবে করতে পারলাম রেওয়াজ?কিভাবে?কিভাবে পারলাম বৃষ্টিকে অবিশ্বাস করতে?যে মেয়েটা আমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসল আমার জন্যে এতকিছু করল আমি কি না তাকেই….।
.
.
রোদ আর বৃষ্টি খেলছে।মিসেস রহমান বসে বসে তাদের খুনশুটি দেখছেন।রোদের বলটা গড়িয়ে গিয়ে কারো পায়ে গিয়ে ঠেকল।রোদ মাথা তুলে তাকাতেই মেঘকে দেখতে পেয়ে খুশিতে চেচিয়ে উঠল
-বাবা।
দৌড়ে গিয়ে সে মেঘের কোলে উঠল।কলিজার টুকরোকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল মেঘ।এলোপাথাড়ি চুমু খাচ্ছে সে রোদের মুখে।বৃষ্টি হা হয়ে সব দেখছে।তার চোখে পানি টলমল করছে।মিসেস রহমান ছেলেকে পেয়ে খুশিতে কেদে দিলেন।বৃষ্টি দৌড়ে চলে গেল রুমে।
এক কোনে দাড়িয়ে কাদছে সে।৫বছরের অপেক্ষার আজ অবসান ঘটছে।সেই সাথে বুকে জমে থাকা ব্যাথা গুলো মাথা চাড়া দিচ্ছে।কোমড়ে কারো শিতল হাতের ছোয়া পেয়ে পেছন ফিরে জড়িয়ে ধরল সে।মেঘের কোটে খামচে ধরেছে সে।চোখের পানিতে শার্ট ভিজে যাচ্ছে। মেঘ ও বা কম কিসে। সেও বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে।দুহাতে শক্ত করে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিয়েছে সে বৃষ্টিকে।
-আম সরি বৃষ্টি। আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ।আমার উচিত ছিল তোমাকে বিশ্বাস করা। তোমার ভালোবাসায় ভরসা রাখা।আম সরি বৃষ্টি।
-আই লাভ ইউ মেঘ।
অস্ফুটস্বরে কথাটা বের হয়ে আসল বৃষ্টির মুখ থেকে।
মেঘ যেন থমকে গেল কথাটা শুনে।ভেবেছিল হয়তো বৃষ্টি অভিমানের ঝোলা খুলে বসবে।অথচ সে কিনা…..
-বৃষ্টি তুমি…
-মেঘ আমি তোমার অর্ধাঙ্গিনী।
মেঘ হালকা হেসে বলল
-হ্যা।আমার অর্ধাঙ্গিনী An Ideal Wife.
-An my perfect mother
কথাটা বলেই গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে গেল রোদ।মেঘ আর বৃষ্টি রোদের কথা শুনে হেসে ফেলল।মেঘের কোলে চড়ে বৃষ্টির গলা জড়িয়ে ধরল রোদ।শুরু হল এক নতুন অধ্যায়।ভুল বুঝাবুঝির শেষে এক নতুন সংসার।
#অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট২১ (এক্সট্রা পর্ব)
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
হুট করে রেওয়াজের কাধ থেকে মাথা তুলে তার ফোন টা ছুড়ে মাড়ল মেঘ। এরকম কিছুই রেওয়াজ আশা করে নি।মেঘ হঠাত করেই চেচিয়ে উঠল
-আমি মানি না। এর সব মিথ্যে। সব মিথ্যে।
-মেঘ তুই অস্বীকার করলেই সত্যটা পাল্টে যাবে না। সত্য সব সময় অবিকৃত।বৃষ্টি কায়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।স্কুল লাইফ থেকেই ওদের পরিচয়।ইউএসএ তে জবের জন্যে তারা একসাথেই এপ্লাই করেছিল।ভাগ্যক্রমে বৃষ্টি আর কায়া দুই জনেই এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়েছিল।কিন্তু বৃষ্টি তোর জন্যে নিজের লাইফ নিজের ক্যারিয়ার সবটা ছেড়ে চলে আসে।কায়া হাজার বুঝানো সত্বেও বৃষ্টি তার কথায় অনড় ছিল।যে মেয়ে নিজের যোগ্যতায় পাওয়া লাখ লাখ টাকা পায়ে ঠেলে তোর মত একটা সামন্য ছেলের হাত ধরতে পারে সেই মেয়ে আর যাই হোক নষ্টা হতে পারে না। শিকাগো ফার্মে একটা প্রোজেক্ট থেকে আমার আর কায়ার পরিচয়।তারপর সম্পর্কটা ভালোবাসা পর্যন্ত এগিয়েছিল।কায়া প্রায় বলত তার বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা। কিন্তু আমি কখনো যানতে চাইনি সেই ফ্রেন্ডটা কে। কিন্তু সেদিন ডিনারের সময় বৃষ্টি ভাবী কে দেখে তোর বিহেবে বেশ পরিবর্তন খেয়াল করি আমি।ডিনার শেষে কায়া আমাকে সব কিছু খুলে বলে।ইভেন এই ভিডিওটাও আমাকে কায়াই দিয়েছিল।
-তাহলে এতদিন এই ভিডিওটা আমাকে কেন দেয় নি বৃষ্টি?
-তোর আগের ফেসবুক আর টুইটার একাউন্টের ইনবক্স চেক কর তো।
মেঘ তড়িঘড়ি করে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে তার সোস্যাল মিডিয়া একাউন্ট চেক করতে লাগল।একটা কনভার্সেশন ওপেন করতেই হাত থেকে ফোনটা পরে গেল তার।
.
.
-মেঘ সময় অনেক কিছুই পাল্টে দেয়।অনেক কিছু কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু কতটুকু হারাবো সেটা আমাদের আকড়ে ধরার উপর নির্ভর করে।তুই বৃষ্টিকে আকড়ে ধরতে পারিস নি। তাই সময় তোকে তার থেকে দূরে নিয়ে গেছে।তুই অস্ট্রেলিয়া আসার কিছু দিনের মধ্যেই এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।আয়াজ চৌধুরীকে জব থেকে বের করে দেওয়া হয়। ইভেন ফ্রড আর হ্যারেসমেন্ট কেসে ৫ বছরের জন্যে জেল এ পাঠানো হয়।বৃষ্টি অনেক চেস্টা করেছিল তোকে খুজার কিন্তু পায় নি।আন্টিকে নিয়ে শিকাগোতে শিফট হয়ে যায়।
.
.
দুই ফোটা পানি বেয়ে পরল মেঘের চোখ থেকে।ফোটোফ্রেমটা বাম হাতে মুছে নিল।মেঘ বৃষ্টি আর রোদের ছবি।
-বাবা চল না দেরি হচ্ছে তো কেক কাটব।
রোদের ডাক শুনে ফ্রেমটা বেড সাইডে রেখে গেল মেঘ।নিচে নামতেই দেখতে পেল রোদ তার৷ ফ্রেন্ডদের সাথে খেলছে।বৃষ্টি হাসি মুখে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে।ওয়েস্টার্ন ড্রেসের ভীড়ে সাদা শাড়িতে বৃষ্টি সবার নজর কাড়ছে।মেঘ সিড়ি বেয়ে নেমে গিয়ে বৃষ্টির পাসে দাড়াল।বৃষ্টি মেঘকে দেখে হালকা হাসল।মেঘ আলতো করে বৃষ্টির কপালে একটা চুমু একে দিল।রোদ এসে হাত ধরে দুজনকে টেনে নিয়ে গেল।
.
.
কেক কাটার পর সবাই যে যার মত গল্প করছে।হঠাত করে কিছু একটা শব্দ শুনে সবাই সেদিকে ছুটে গেল।মেঘ আর বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে দেখল কায়া রেওয়াজের সামনে দাড়িয়ে চেচাচ্ছে আরেকজন ফরেইনার গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আশে পাশের এক জন বলে উঠল মেয়েটি নাকি রেওয়াজকে বার বার কিস করার ট্রাই করছিল বাট রেওয়াজ পাত্তা দিচ্ছিল না। কায়ার চোখে পরতেই সে ঠাস করে মেয়েটার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
মেঘ রেওয়াজের কাছে গিয়ে তার কাধে হাত রেখে বলল
-ভাই এরা লিপস্টিক শেয়ার করবে কিন্তু হাসবেন্ড কে না।এরাই হল অর্ধাঙ্গিনী।(Ideal Wife)
রেওয়াজ মেঘের কথা শুনে হেসে ফেলল।
সমাপ্ত।