পর্ব ১৭+১৮
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_17
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
আড্ডা শেষে সকলেই যে যার রুমে চলে যাই। আমার ভালো লাগছিল না বলে আমি সেই টিলার দিকে চলে যাই। আকাশে আজ সাদা সাদা মেঘের ভেলা। তার মধ্যেই চলছে অজস্র তারার লুকোচুরির খেলা। বাইরে বেশ বাতাস বইছে। শীতল এক পরিবেশ। আমি ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছি ঠিক এমন সময় কানে কাউরো কন্ঠ ভেসে আসে। কেউ হয়তো বা গান গাইছে। গানের আওয়াজটা বেশ টানছে আমায়। তাই আর থাকতে না পেরে ছুটে চলি সেই গানের দিকে। আওয়াজটা টিলার ওইখান থেকেই আসছে তাই আমিও সেইদিকেই যাই। গিয়ে দেখি কেউ একজন টিলার উপর বসে আকাশের পানে তাকিয়ে গান গাইছে। আমি তার সামনে যেতেই চমকে যাই এ আর কেউ বরং রিয়ান।
রিয়ান চোখ বন্ধ করে আনমনে গেয়েই চলেছে।
.
” ❤Kal Raaste Me, Gham Mil Gaya Tha,
Lag Ke Gale Main… Ro Diya…
Jo Sirf Mera, Thaa Sirf Meraa
Maine Usse Kyun Kho Diya…
Haan Wo Aankehin Jinhein Main, Choomta Tha Bewajah…
Pyaar Mere Liye Kyun, Unme Baaki Na Rahaa…
Humnawa Mere, Tu Hai Toh
Meri Saansein Chalein,
Bata De Kaise Main Jiyunga
Tere Bina❤”
.
.
গান শেষে রিয়ান পাশে তাকাতেই আমাকে দেখে চমকে উঠে। সে এই সময় হয়তো বা আমায় এইখানে আশা করে নি। সে চোখ ঘুরিয়ে বলে।
.
— এত রাতে এইখানে কি করছো??
.
— ভালো লাগছিল না তাই এইখানে হাটতে এসেছিলাম। এসে আপনাকে পেলাম। আচ্ছা আপনি তহ এত সুন্দর গান গাইতে পারেন তাহলে সে সময় গান গাইলেন না কেন??
.
— ইচ্ছে করে নাই তাই!!
.
— হুহ!! আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি??
.
— করো!
.
— এত আবেগ নিয়ে কার জন্য গান গাইছিলেন?? আপনার গানে বুঝা যাচ্ছিল যে গানটা আপনি কাউকে উদ্দেশ্য করে গাইছিলেন। কে সে??
.
রিয়ান আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে।
— নান অফ ইউর বিজন্যাস। গম্ভীর গলায়
.
কথাটা শুনার পর আমার রাগ হয় অনেক। আবার এইটা ভেবে কান্না আসছে যে তার লাইফে হয়তো অন্য কেউ আছে। খুবই বিশেষ কেউ যার জন্য এত আবেগ দিয়ে তিনি গান গাইছিলেন। যদি তার জীবনে কেউ থেকেই থাকে তাহলে সকালে ওইটা আমার সাথে কি করলো?? কেন আবার আমার মনে তার জন্য সেই সুপ্ত অনুভূতি গুলো জাগিয়ে তুললো। কেন!!
আমি আর নিজের মধ্যে কথাগুলো চাপা রাখতে পারছিলাম না। বেশ কষ্ট হচ্ছিল আমার তাই চুপচাপ চলে আসতাম নিলাম। যেই না নেমে আসতে নেয় ঠিক তখনই হাতে টান অনুভব করি। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রিয়ান এক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে আছে। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রই। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে।
.
— একটু থাক না আমার পাশে বসে।প্লিজজজ!! করুন কন্ঠে।
.
তার এমন করুন কন্ঠ শুনে আমার বুকটা ধুক করে উঠে। তার এই করুন কন্ঠকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই। তাই আগের ন্যায় চুপচাপ বসে রইলাম। দুইজনের মধ্যেই পিনপিন নিরবতা।
হঠাৎই আমার মাথায় আবিরের কথাটা আসে। সাথে দুইজনের প্রতি দুইজনের সেই ব্যবহার গুলো। কোন এক সম্পর্ক যে তাদের মধ্যে বিরাজমান তা অনেক ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম কিন্তু তা কি?? আবির আর রিয়ানের যখনই সংঘর্ষ হয় তখনই তাদের হাব ভাব বদলে যায়। যেন দুইজন দুইজনকে চোখের সামনে সহ্যই করতে পারে না। কিন্তু কেন?
এইটা নিয়ে কৌতূহল জন্মাতে শুরু করে। শেষে নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাস করে বসি।
.
— আচ্ছা আবির আর আপনার মধ্যে সম্পর্ক কি?? না মানে আপনাদের দুইজনের ব্যবহারে বুঝা গেল যে আপনারা দুইজন দুইজনকে অনেক ভালো করেই চিনেন। কিন্তু আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটা বন্ধুসলুভ না বেশ কর্কশ প্রকৃতির। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় ও সুযোগ হয়ে উঠে নি। তা আজ কি আমায় বলা যাবে প্লিজজজ!!
.
রিয়ান একবার আমার দিকে তাকায়। তারপর এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে।
.
— আবির আমার চাচাতো ভাই।
.
— ভাই!! তাহলে তো আপনাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক হওয়ার কথা কিন্তু আপনাদের দেখা যা বুঝেছি দুইজন দুইজনকে সহ্য করতে পারেন না। এমন কেন??
.
— জানতে চাও এর কারণ কি??
.
— হ্যাঁ!! প্লিজ বলুন না।
.
— তাহলে শুনো….
.
??
.
আমার মা আমায় জন্ম দেওয়ার সময়ই মারা যায়। তখন থেকে বাবাই আমায় একা হাতে বড় করতে শুরু করে।
আমার যখন ২ বছর তখন আমার চাচা বিয়ে করে। চাচী আসাতে আমি মায়ের ভালবাসাটা কি তা বুঝতে শুরু করি। তিনি এসেই আমার দ্বায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে নিলেন আর আমায়ও বলেন আমি যেন তাকে “মা” বলেই ডাকি। সেই থেকে আমি “মা” বলেই ডাকতাম। তিনি আমায় সবসময় নিজের ছেলের মত আগলে রাখতেন।
আমার যখন ৪ বছর তখন আবির জন্ম হয়। আবির আশাতে পরিবারে খুশির স্রোত বোয়ে যায়।
কিন্তু এর মধ্যেও আমার প্রতি কাউরো ভালবাসা একটুও নরবর হয় নি। বিশেষ করে চাচীর। চাচী আমায় সেই আগের মতই ভালবাসতো এমনকি আবিরের থেকে বেশি আমার যত্ন নিত যাতে আমি এইটা না ভাবি যে আবির আশায় আমায় জন্য তার কাছে কোন জায়গা নেই।
এইভাবেই কাটছিল দিন। আবিরও আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ছোট থেকেই ও আমায় সহ্য করতে পারতো না। ওর ধারণা আমি ওর ভাগের ভালবাসা নিয়ে নিচ্ছি। এ নিয়ে ও আমার সাথে প্রায় সময় ঝগড়া করতো।
আমার যখন ১০ বছর তখন বাবা হার্ট স্টোক করে আর পারি জমান ওপারে। বাবা মারা যাওয়াতে প্রচুর ভেংগে পড়েছিলাম তখন চাচা,চাচীই আমায় সামলায়। তারা আমায় নিজের বড় ছেলে হিসাবে পরিচয় দেওয়া শুরু করে। তারপর তারা আমায় আর আবিরকে নিয়ে উত্তরাতে শিফট হয়ে যান।
আমাকে সাথে আনার ফলে আবির একদম খুশি হয় নি। ওর মনে কোথ থেকে একটা কথা গেথে গিয়েছিল যে আমি ওর বাবা, মাকে ওর থেকে কেড়ে নিয়ে যেতে এসেছি। তাই ও সবসময় আমার সাথে বাঝে ব্যবহারই করতো। কিন্তু তাও আমি কিছু বলতাম না ভাবতাম ছোট মানুষ তাই এমন করে।
কিন্তু আমার প্রতি ওর ঘৃণা দিন দিন বেড়েই চলেছিল। আমি সবসময় টপ করতাম আর আবির টেনেটুনে পাশ করতো। এতে চাচা, চাচী আমার থেকে কিছু শিখতে বললে ও চেঁচামেচি করতো। আমার নামও সহ্য করতে পারতো না। এর জন্য আমাদের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হয়।
একবারও জিদে আমার সকল বই খাতা ছিড়ে ফেলে আর তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। যার জন্য আমার অনেক জীদ উঠেছিল। ওর সাথে আমার বেশ মারামারি হয়। তখন চাচী এসে আমাদের থামায় আর সব শুনে চাচী ওকে থাপ্পড় মেরেছিল। এর পর থেকেই সে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়।
নিজের নাম থেকে “খান” সরিয়ে ফেলে। ওর মতে “খান” নামটা ওর সাথে থাকা মানে নিজেকে আমার ভাই হিসাবে পরিচয় দেওয়া।
এইভাবে বড় হয়ে উঠি আমরা। দুইজনের মধ্যে প্রায় দন্দ লেগেই থাকতো। একবার ও আমায় যা নয় তাই বলে এমন কি আমার মাকে নিয়ে বাজে বলে। তখন আর থাকতে পারি নি। ইচ্ছা মত মেরেছিলাম ওকে। এরপর থেকেই আমিও ওকে সহ্য করতে পারতাম না।
এর মধ্যে আমি চাচা চাচীকে বলে লন্ডনে চলে যাই পড়ালেখার জন্য। কারণ ওর সাথে থাকার রুচিটাই আমার উঠে গিয়েছিল।
সেখানে গিয়ে প্রায়ই সকলের সাথে কথা হতো শুধু আবিরকে বাদ দিয়ে। একবার যখন ফোন দেই তখন আবির ফোন ধরে আর চিল্লাপাল্লা শুরু করে আর আমায় বলে আমি যেন আর ফোন না দেই।
তাই আমিও জিদে দেশে আর ফোন দেই নি। চাচা চাচী যোগাযোগ করতে চাইলে আমি সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।
এর পর যখন দেশে আসি তখন জানতে পারি ১ বছর আগেই চাচা চাচী একটা কার এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। অথচ আমায় কেউ জানায় পর্যন্ত নেই।
তখন আবিরকে গিয়ে জিজ্ঞাস করি যে ও কেন আমায় জানাই নি যে চাচা চাচী মারা গেছে। তখন ওর উত্তর ছিল,
” আপনি আমার বাবা মার কিছু হন না তাই আপনাকে জানানো প্রয়োজনবোধ করি নি। তাদের লাশ উঠানোর জন্য তাদের ছেলে এইখানে ছিল তাই কোন বাহির মানুষকে ডাক দেওয়া বা জানানোর নিম্নতম ইচ্ছা আমার ছিল না।”
সেইদিব থেকে আমি ওকে আরও দেখতে পারি না। ওর প্রতি এক ঘৃণা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল আমার। যারা আমায় ছোট থেকে এত বড় করলো তাদেরকে শেষ দেখাটাও ও আমায় দেখতে দেয় নি।
সেই থেকে আমরা দুইজন দুইজনের পরম শত্রু হয়ে উঠেছিলাম। দুইজন দুইজনের ছাঁয়াও সহ্য করতে পারতাম না।
.
.
??
.
এই বলে রিয়ান থামে। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আবিরের মনে যে রিয়ানের জন্য এত ঘৃণা তা বুঝতে পারি নি কখনো। আমি কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে বলি।
.
— আমি বুঝতে পারছি আপনার ফিলিংস বাট আমার মতে আবির যা করেছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক নয়।
.
রিয়ান আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলে।
— মানে?? কি বলতে চাও তুমি??
.
— এইটাই যে আবির হয়তো বা নিজের দিক দিয়ে ঠিক। কেন না কোন বাচ্চাই তার মা বাবার ভালবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিতে চায় না। আবিরের বেলায়ও ঠিক তাই। ছোট বেলা থেকেই ও এইটা বুঝে এসেছে যে সবাই আপনাকে বেশি ভালবাসে ওকে না। আপনার জন্য ওর ভালবাসা কমে গেছে। তারপর যখন আপনি ওর বাসায় থাকতে শুরু করেন তখন ওর মনে এইটা গেধে গিয়েছিল যে আপনি হয়তো ওর ভালবাসায় ভাগ বসাতে এসেছেন। ওর অবুঝ মন বুঝতে পারে নি যে তার বাবা-মাও তাকে ততটাই ভালবাসে যতটা না আপনাকে। সে জন্যই ওর মনে আপনার জন্য হিংসে তৈরি হয়। আর যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
ওকে যদি কেউ বুঝাতো যে ও যা ভাবছে তা ভুল বা কেউ যদি ওর এই ভুল ভাঙাতো তাহলে হয়তো এমন হতো না। ওর ভুল ধারণার জন্যই এত কিছু।
ওর সেই ছোট মনে আপনার জন্য যে ক্ষোপ সৃষ্টি হয়েছিল তা দিন দিন বাড়তে বাড়তে এই পর্যন্ত এসে পড়েছে যে ও এখন চাইলেও তা দূর করতে পারবে না। তাই এইসব এ ওর পুরোপুরি দোষ দিলে তা কি অযৌক্তিক।
.
— এইভাবে কখনো ভেবে দেখি নি!!
.
— ঠিক তাই এই জন্যই ওর এই জিনিসটা কেউ বুঝতে পারে নি আর ওর ভুল ধারণাটা কেউ ভাঙাতে পারে নি।
.
— কিন্তু তুমি যাই বলো, ও শেষে যা করেছে তার জন্য আমি ওকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো না। ছোট থেকে ওর করা সব ভুল ক্ষমা করতে পারলেও এইটা পারবো না। কখনো না। হাল্কা চেঁচিয়ে।
.
আমি আর কিছু বললাম না। শুধু নীরবে এক দীর্ঘ শ্বাস নিলাম।
.
.
???
.
.
সকাল থেকেই তোড়জোড় লেগে আছে। পাহাড়ের বেশ গহীনে ছোট একটি গ্রামে আছে সেখানে নাকি কয়েকজন লোক বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য আমাদের বলা হয়েছে। তাই তাদের চিকিৎসার জন্য আমি, রিয়ান আর আরেকজন যাব বলে ঠিক করেছি। তাই সকল জিনিস ঠিক মতো গুছিয়ে নিচ্ছি। সকল প্রস্তুতি শেষে যেই না আমরা বের হতে নিব ঠিক তখনই….
#Part_18
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
পাহাড়ের আঁকা বাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ ধরে হেটে চলেছি আমি আর রিয়ান। চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। দেখতে মনে হচ্ছে ঘন জঙ্গলের মতো। সূর্যের তীক্ষ্ণ রশ্মি জমিনের সাথে মিলিত হতে চাইলে, গাছের পাতা এসে তাতে বাধা সাজে। কিন্তু তাও রশ্মি গুলো হার না মেনে কোন এক ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঠিকই এসে মিলিত হয়েছে জমিনের সাথে।
রিয়ান আর আমি চুপচাপ হেটেই চলেছি। মাঝে মধ্যে দুই এক কথা এই নিরবতা ভাঙতে বেরিয়ে আসে। সেখানে যাওয়ার জন্য কোন যানবাহন নেই বলে হেটেই যেতে হচ্ছে আমাদের।
প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ হেটে চলেছি। আর চলছে না শরীর কিন্তু কিছু বলতেও পারছি না। ভাবছি ড. রিয়ান যদি আবার কিছু বলে। তখনই সকাল বেলার মুডের কথাটা মনে পড়ে গেল।
.
.
পাহাড়ি এক গ্রামে কিছু লোক অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমাদের সেখানে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তাই আমি, রিয়ান আর হারুন যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সব কিছু রেডি করে যেই না বের হতে যাব ঠিক তখনই হারুন এসে বলে ও যেতে পারবে না। ওর নিমোনিয়া হয়ে গিয়েছে।
এইটা শুনে ড. রিয়ান যে পরিমাণ রেগে গিয়েছিল। পুরো ক্যাম্প মাথায় তুলে ফেলেছিল। এই ফাস্ট তাকে এতটা রাগতে দেখেছিলাম। হারুন বাদে সকলকেই কাজে ব্যস্ত ছিল বলে আমাকে আর রিয়ানকে একাই আসতে হয়।
.
.
এইসব মনে করতেই গা শির শির করে উঠে। ভাইরে ভাই এত রাগ পায় কোথা থেকে কে জানে! রিয়ান তখন যেই পরিমাণ রেগে ছিল মনে হচ্ছিল হারুনকে খুনই করে ফেলবে। এইসব ভেবে অন্যমনস্ক হয়ে হাটছি, হুট করেই গাছের শিকরের সাথে পা বেজে পড়ে যেতে নিলে রিয়ান আমার ধরে ফেলে। আমি চোখ তুলে রিয়ানের দিকে তাকাই। রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দেখে মনে হচ্ছে যে আমায় এখনই কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। আমি ভয়ে তারাতাড়ি নিজেকে সামলিয়ে উঠে দাড়াই। রিয়ান কিছুটা চেঁচিয়ে বলে।
.
— ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!! চোখ কি হাতে নিয়ে ঘুরো নাকি!! যখন তখন খালি পড়েই যাও। ঠিক মত চলাফেরা করা যায় না!!
.
আমি একটা কিউট টেডি ওয়ালা ইনোসেন্ট ফেশ করে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলি।
— I am tired. আর হাটতে পারছি না। একটু বসি না প্লিজজ!!
.
রিয়ান আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে। আমি একদম কিউট টেডি ফেশ করে দাড়িয়ে আছি। রিয়ান কিছু একটা ভেবে নিজের হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকায়। তারপর গম্ভীর গলায় বলে।
.
— ওকে দেন। ১৫ মিনিট রেস্ট করে নাও।
.
আমার খুশি আর দেখে কে ধপ করেই পাশের গাছের শিকড়ের উপর বসে পড়ি। আহহ কি শান্তি!! মনে হচ্ছে কত বছর ধরে বসি না। আমি গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসে থাকি। সতেজ ভরা এক নিশ্বাস নেই।
রিয়ানের কথা মনে পড়তেই চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সে পকেটে হাত দিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুচকিয়ে বলি।
.
— আপনাকে আলাদা করে আপায়ন করে বসতে বলতে হবে!!
.
— টায়ার্ড তুমি আমি না! সো তুমিই বসো। আ’ম ফাইন। গম্ভীর গলায়।
.
— খারুস বেটার খারুস কথা!! মিন মিন করে।
.
— তুমি কি কিছু বলেছো??
.
— আব কই না তো!! কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে।
.
— ওকে।
আমি চোখ বন্ধ করে বসে থাকি। হঠাৎ হাতে সুরসুরি অনুভব করি। তাই চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে নেই আসলে কি!! চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি কেটাপিলার। দেখার সাথে সাথে দেই এক চিৎকার। আর উঠে দাড়িয়ে হাত বার ঝাঁকাতে থাকি আর লাফাতে থাকি। আমার চিৎকার শুনে রিয়ান দ্রুত আমার কাছে এসে দাড়ায়। কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি। ভয়ে গা শির শির করছে।
আমার এমন কাজে রিয়ান হতভম্ব হয়ে যায়। বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে এইসব। ওর ভিতরে শীতল এক বায়ু বয়ে চলেছে। রিয়ান নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলে।
.
— কি হয়েছে রিয়ুপাখি!! তুমি এমন করছো কেন??
.
রিয়ানের আওয়াজে আমার ঘোর ভাঙে। আমি বুঝতে পারি আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আছি। সাথে সাথে আমি সরে এসে ভয় মিশ্রিত কণ্ঠে বলি।
.
— সরি আসলে হাতের উপর কেটাপিলার ছিল তাই ভয়ে এমন করেছি। মাথা নিচু করে।
.
— ইউ আর রেইলি জাস্ট ইম্পসিবল। এখন এইদিকে আসো!! শান্ত গলায়।
.
— মমমানে!! হতভম্ব হয়ে।
.
— মানে এইযে এইখানে আসো!! গম্ভীর হয়ে
।
.
আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে তার সামনে যাই। সে তার ব্যাগ থেকে একটা স্প্রে টাইপ কিছু বের করে আমার হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে।
.
— এইটা ইন্সেক্ট স্প্রে। নিজের গায়ে স্প্রে করে নাও। এতে ইন্সেক্টরা তোমার আশেপাশে আসবে না।
.
আমি মাথা দুলিয়ে সারা গায়ে স্প্রে করে নেই। তারপর আবার হাটা শুরু করি।
.
.
??
.
.
গ্রামটা পাহাড়ের একদম মাঝে। সবুজ শয্যাতে রাঙ্গীত গ্রামটি। গ্রামের পরিবেশটাও বেশ ছিপছাপ। বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি তাদের বাসা। পড়নে তাদের অতিসাধারণ কাপড়। চোখে মুখে এক প্রশান্তির হাসি। শহরের কলাহল থেকে একদম দূরে, একদম নীরব একটি পরিবেশ।
আমাদের এইখানে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। এসেই লেগে পড়ি আমাদের কাজে।
.
.
.
সব রোগীদের দেখতে দেখতে প্রায় রাত হয়ে যায়।এর ফলে আজ ফিরে যাওয়া সম্ভব না। এত রাতে পাহাড়ি অঞ্চলে চলাচল বেশ সুবিধার না। তাই আমি আর রিয়ান ঠিক করলাম এইখানেই আজ রাতটা থেকে যাব।
গ্রামবাসীরাও আমাদের আপায়ন করতে প্রস্তুত কিন্তু বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায়।
এই গ্রামে নাকি একটা নিয়ম আছে। বাহির থেকে যদি এই গ্রামে কেউ থাকতে চায় তাহলে নাকি তাদের আগে এই গ্রামের সরদার মিয়াং এর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তাই আমি আর রিয়ান গিয়ে হাজির হলাম তার বাসায়। এইখানের এক অধীবাসী একটি ছেলে আমাদের তার বাসায় নিয়ে এসেছে।
আমরা সরদারের বাসায় এসে দেখি কোন এক সভা চলছে। গ্রামের অনেকেই সেখানে উপস্থিত, তাদের থেকে একটু সামনে দুইজন যুবক,যুবতী মাথা নতো করে দাড়িয়ে আছে।
সামনে এক গাছের নিচে ৩ টা চেয়ার। সেই চেয়ারে প্রায় মধ্য বয়স্ক তিন লোক বসে আছে। এইখানে মিয়াং কে তা রিয়ান জানতে চাইলেন। তখন সেই ছেলেটি বলে,
.
— মাঝে বসা লোকটি মিয়াং।
.
আমরা সেইদিকে তাকাতেই দেখি একজন গুরুগম্ভীর প্রকৃতির লোক। মুখ ভর্তি দাড়ি। গায়ের রং কিছুটা চাপা। পড়নে ধুতি আর ফোতুয়ার মত কিছু একটা। সে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সেই যুবক ও যুবতীর উপর নিক্ষেপ করছে।
রিয়ান আর আমি তার কাছে যেতে নিলেই তার হুংকারে দাড়িয়ে পড়ি।
সে তার কড়া দৃষ্টি সেই যুবক যুবতীর দিকে নিক্ষেপ করে বলে।
.
— তোদের সাহস কেমনে হইলো এই গ্রামে বিয়া ছাড়া ঘুইড়া বেরানোর?? তোরা এইখান কার স্থানীয় হইয়াও এই গ্রামের নিয়ম কেমনে লগ্ন করলি?? বল!!
.
— মাফ কইরা দেন সরদার!! আর এমন ভুল হইতো না।
.
— তুই জানস না এই গ্রামে বিয়া ছাড়া কোন ছেলে মেয়ে একসাথে দাড়ানো তহ দূরে থাকুক কথা পর্যন্ত বলতে পারবো না!! যদি কেউ এই নিয়ম ভোঙ্গ করে তাহলে তাগোরে কঠোর থেকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
সেখানে তোরা হাত ধইরা হাটছোস!! তাহলে বল তোগো কেমনে মাফ করতাম আমি!! শাস্তি তহ তোগো পাইতেই হইবো। চেঁচিয়ে।
.
সেই যুবক যুবতীরা সরদারের পায়ে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে কিন্তু তিনি কিছুতেই মানলেন না। তারপর সরদারটা কাকে যেন ইশারা করে, সাথে সাথে কিছু লোক এসে সেই যুবক আর যুবতিকে ধরে ফেলে। তখন সরদার বলে উঠে।
.
— এগোরে মধ্য রাতে ওই জঙ্গলের গাছের লোগে বাইন্দা আবি। হিংস্র জন্তু এসে ওগোরে খাবলাইয়া খাবলাইয়া খাইলে খাইবো। আর যদি বাইচ্চা যায় তাইলে এগো রে নাওরা করে (টাক করে) গ্রাম থেকে ধাক্কা মেরে বের কইরা দিবি। নিয়ম ভাঙার ফল তো এরা পাইবোই।
আর তোরা কান খুলে শুনে রাখ যদি কেউ এগো বাচাইতে যাস তাহলে তার হাত কেটে ওই পাহাড়ের উঁচু থেকে ফালাইয়া দেওয়া হইবো। এখন এই দুইডা পোলা মাইয়ারে আমার চোখের সামনে থেকে লইয়া যা!! চিল্লিয়ে।
.
এই কথা বলার সাথে সাথে সেই যুবক যুবতীকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সকল গ্রামবাসীরাও চুপচাপ দেখতে থাকে। আমি আর রিয়ান একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি বার বার। মনের মধ্যে এক আলাদা ভয় কাজ করছে। আমাদের সাথে না জানি কি করে!! আমি রিয়ানকে কিছু বলতে যাবো তার আগে ছেলেটি বলে উঠে।
.
— সরদারররর!! আমগো গ্রামে নতুন দুইখান মানুষ আইসে। এইখানে থাকবার লিজ্ঞা আপনার কাছে অনুমতি লইতে আইসে।
.
সরদার এইবার তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমগো উপর নিক্ষেপ করে। তারপর কঠোর গলায় বলে।
.
— এইহানে লইয়া আয় হেগোরে!!
.
[ আমি গ্রামের আঞ্চলিক ভাষা তেমন একটা পারি না। যতটুকু জানি তা দিয়েই লিখার চেষ্টা করছি। তাই ভুল হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
.
না চাওয়া সত্তেও আমাকে আর রিয়ানকে তার সামনে যেতে হয়। দুইজনের মনে কেমন এক ভয় কাজ করছে। রিয়ানও আজ কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে আছে। আমরা সরদারের সামনে আসতেই সেই বলে উঠে।
.
সরদারঃ তোমগো নাম কি?? কইত থেইক্কা আইসো?? এইহানে কি কাম তোমগো!!
.
রিয়ানঃ জ্বী আমার ড. রিয়ান আর তিনি হচ্ছে ড. রিয়ানা। আমরা ঢাকা থেকে এসেছি এইখানে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। উকছুঁড়ি গ্রামে আমাদের একটা মেডিক্যাল ক্যাম্পও আছে। সেইখান থেকেই চিকিৎসা দিচ্ছি আমরা। এই গ্রামে নাকি অনেকেই অসুস্থ তাই তাদের চিকিৎসা দিতে এসেছিলাম আমরা। নিচু গলায়।
.
সরদারঃ অহহ ভালা ভালা। ভালা কাম করতাসো তোমরা।
.
রিয়ানঃ কিন্তু সমস্যা হলো এত রাতে এখন আমরা ফিরতে পারছি না। বুঝেন এই তো এত রাতে পাহাড়ি অঞ্চলে চলাচল কতটা বিপদজনক। তাই আজ রাতটা এইখানে থাকতে চাইছিলাম। যদি আপনি অনুমতি দিতেন আর আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন!!
.
সরদারঃ তা তো অবশ্যই দিমু কিন্তু তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবার লাগবো!
.
রিয়ানঃ কি প্রশ্ন??
.
সরদারঃ তোমগো কি বিয়া হইসে?? তোমরা কি স্বামী-স্ত্রী নি??
.
এর কথা শুনে আমি আর রিয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকি। দুইজনের মুখে কোন কথা নেই। রিয়ানকে বেশ শান্ত লাগলেও আমি শান্ত হতে পারছি না।
এখন যদি না বলি আর তিনি আমাদের সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করে তখন। আমি তো ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। মনটা কেন জানি বার বার কু ডাকছে। আমি বার বার রিয়ানের দিকে তাকাচ্ছি। রিয়ান তখন একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
.
রিয়ানঃ হ্যাঁ আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী। রিয়ানা আমার বউ।
.
কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়৷ আমি হা হয়ে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকি। এত বড় মিথ্যা!! আমি রিয়ানের হাত চেপে ধরে চাপা গলায় বলি।
.
রিয়ানাঃ এইসব কি বলছেন??
.
রিয়ানঃ মরতে না চাইলে চুপ করে দাড়িয়ে থাকো। একটু আগে দেখো নি কি হয়েছে!! এখন এইটা না বললে মরা ছাড়া উপায় নেই!! So be quite! চাপা গলায়।
.
অন্যদিকে, সরদার সাহেব কথাটা শুনে যেন খুশিই হলেন মনে হয়। সে মুখে এক হাসি নিয়ে বলেন,
.
সরদারঃ তাই তো কোন সমস্যাই নাইক্কা। তোমরা যখন স্বামী স্ত্রী তখন তোমরা এইখানে থাকবার পারো। আমার কোন আপত্তি নাই।
.
তখন তার পাশে থাকা দুই ব্যক্তির একজন বলে উঠে,
.
— এত তারাতাড়ি বিশ্বাস করবার নাই সরদার। এরা তো মিথ্যাও কইবার পারে!! শহরের মানুষ গো বিশ্বাস করবার নাই জানো না?
আসলে যদি এরা স্বামী স্ত্রী না হয় তখন আমগো কত বড় পাপ হইবো ভাবসো!! নিচু গলায়।
.
— এমন তো ভাবি নি??
.
— তো এখন ভাবো!! এগো রে কও এগো কাছে কোন প্রমাণ আছে নাকি যে তারা স্বামী স্ত্রী?? নিচু গলায়।
.
— হুম। তা ড. রিয়ান তোমগো কাছে কোন প্রমাণ আছে নি যে তোমরা স্বামী স্ত্রী??
.
কথা শুনার সাথে সাথে আমার হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে যায়। এখন কি হবে এই ভেবে!!
রিয়ানের মুখেও কিছুটা ভয়ে ছাপ দেখা যাচ্ছে। তাও রিয়ান কিছুটা সাহস নিয়েই বলে।
.
রিয়ানঃ না!! আর থাকবেই বা কেন?? এইখানে তো আমরা সকলের চিকিৎসা করতে এসেছি তো নিজেদের বিয়ের প্রমাণ নিয়ে ঘুরার তো কথা না আমাদের তাই না??
.
সরদারঃ কথাটা তো ঠিক কইছো কিন্তু কি নিশ্চয়তা আছে যে তোমরা মিথ্যা বলছো না??
.
রিয়ানঃ আজব তো আমরা মিথ্যা কেন বলবো?? মিথ্যা বলে লাভ কি?? আর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে রিয়ানাকে জিজ্ঞেস করেন যে ও আমার স্ত্রী কি না??
.
কথা শুনে আমি হকচকিয়ে যাই। আমারে কেন টানতাসে এইটাতে। আমি রিয়ানের দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। হাত পা রীতিমতো কেঁপেই চলেছে। সরদার আমার দিকে একবার তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
.
সরদারঃ এই পোলা কি সত্যি তোমার স্বামী??
.
কি বলবো বুঝতে পারছি না। ” হ্যাঁ ” যে বলবো তাও বলতে পারছি না। গলা ধরে আসছে। রিয়ান আস্তে করে আমার হাত ধরে। আমি রিয়ানের দিকে তাকতেই রিয়ান চোখ দিয়ে আমায় আশ্বস্ত করে “যে আছে। আমি যাতে ভয় না পাই আর হ্যাঁ বলে দেই”। আমি এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে শুধু মাথা দুলাই।
.
তখন আবার সরদারের পাশে থাকা ব্যক্তিটি বলে উঠে।
— সরদার আমার তো এখন কেন জানি সন্দেহ হইতাসে।
.
— তো কি করবো?
.
— এক কাজ করেন এগো আবার আমগো সামনে বিয়া দিয়া দেই। তাইলে আর কোন সন্দেহ থাকবো না।
.
— হো ভালা কথা কইসো। এইটা করা হোক।
.
কথাটা শুনে আমি আর রিয়ান মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে থাকি। কি হচ্ছে এইসব কিছুই মাথায় ঢুকছে না। কি থেকে কি হচ্ছে!! সব কেমন যেন ধোঁয়াশা লাগছে।
তখন সরদার বলে,
.
সরদারঃ তোমগো আমাগো সামনে আবার বিয়া করোন লাগবো!!
.
রিয়ানঃ না!! এইটা সম্ভব না!!
.
সরদারঃ কেন??
.
রিয়ানঃ না মানে.. যেখানে আমাদের একবার বিয়ে হয়েছে সেখানে আবার বিয়ে কেন করতে যাব আমরা??
.
সরদারঃ সমস্যা কোথায়?? বিয়া তো হইসেই তাইলে আবার বিয়া করতে সমস্যা কি?? নাকি তোমরা বিয়ে করো নাই??
.
রিয়ানঃ না আমরা বিবাহিত।
.
সরদারঃ তাইলে তহ হইলোই!! আমি কিছু শুনবার চাই না। তোমগো এখনই আমগো সামনে বিয়া করা লাগবো নাইলে এইহানে থেকে বের করে দেওয়া হইবো!!
.
রিয়ানঃ আমার কথ….
.
সরদারঃ কোন কথা না!! তোমরা মুসলিম নাকি অন্য ধর্মের??
.
রিয়ানঃ আমরা মুসলিম কিন্তু…
.
সরদারঃ ব্যাস!! আর কিছু কোওয়া লাগবো না। ওই যা তো কাজী রে ডাইক্কা লইয়া আয়। আজ এইখানে বিয়া হইবো!!
.
.
রিয়ান বিভিন্ন ভাবে তাদের বুঝাতে চেষ্টা করছে কিন্তু তারা বুঝতে নারাজ। এইদিকে আমি মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছি। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মাথা ঘুরছে। হাত পা যেন অবশ হয়ে আসছে। দাড়িয়ে থাকাটাও দায়ভার হয়ে উঠেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজী এসে পড়লো। গ্রামের মহিলারা মিলে ধরে আমায় এক চেয়ারে বসালো আরেক চেয়ারে রিয়ানকে। আমাদের মাঝে একটা পর্দা টানা হলো। একজন এসে আমার মাথায় ঘুমটা দিয়ে দেয়। আমি নির্বাকের মতই বসে থাকি। কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না আমার মুখ দিয়ে।
এখানে রিয়ান বার বার তাদের বুঝাতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।
এইদিকে, কাজী আমাদের নাম, বাবা-মার নাম, ঠিকানা, দেনমোহর সব লিখে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়। এইবার সকলেই আমাদের উপরে একবারে ঝেঁকে পড়ে ।
.
এরপর কাজী রিয়ানকে “কবুল” বলতে বলে। রিয়ান কিছু বলছে না দেখে সরদার জোরাজুরি শুরু করে। রিয়ান এক প্রকার বাধ্য হয়ে “কবুল” বলে।
তারপর আমাকে “কবুল” বলতে বলা হয়। আমি সেই আগের ন্যায় নির্বাকের মত বসে আছি। এতে সকলে এখন আমার সাথেও জোড়াজুড়ি শুরু করে। আমি নিজের সামনে অন্ধকার দেখছি। এর বাদে কিছু না। কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। শেষে না পেরে আমিও “কবুল” বলে ফেলি। সকলেই হই-হুল্লোড় করে উঠে।
সম্পূর্ণ হয় আমাদের বিয়ে। আমরা আবদ্ধ হয়ে যাই এক নতুন সম্পর্কে। শুরু হয় আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায়।
.
.
??
.
.
বদ্ধ এক রুমে চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষন আগেই গ্রামের মহিলারা এসে আমায় খাটে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। আমি সেই মূর্তি ন্যায় বসে আছি একদম নির্বাক।
মাথা আমার পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে কিছুক্ষণ আগেই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাও আবার রিয়ানের সাথে। রিয়ান এখন আমার স্বামী। এখনো সব কিছু আমার কাছে ধোঁশায় এই মনে হচ্ছে।
আমি যখন এইসব ভাবছি তখন দরজা খুলার আওয়াজ পাই। আমি সেইদিকে তাকিয়ে দেখি কিছু লোক রিয়ানকে জোর রুমের ভিতর ঢুকিয়ে চলে যায়।
রিয়ান এইবার মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। হয়তো অনুতাপে ভুগছে। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে থাকি। বেশ কিছুক্ষণ আমাদের মধ্যে নিরবতা কাজ করে।
রিয়ান সেই নিরবতা পেরিয়ে বলে উঠে।
.
— দেখো রিয়ু যা হয়েছে তা এক্সিডেন্টলি। এতে আমার কিছু করার ছিল না। আমি তো আমাদের বাঁচানোর জন্য এই মিথ্যা বলেছিলাম কিন্তু তারা যে এমন কিছু করবে তা বুঝতে পারি নি। আমি অনেক চেষ্টা করেছি এই বিয়েটা থামানো কিন্তু পারি নি। সরি!!
.
আমি আগের ন্যায় বসে থাকি। কিছু বলি না। তা দেখে রিয়ান বলে।
.
— আমার হাতে তখন কিছু ছিল না। এখন এইটা কে ভাগ্য বলা ছাড়া আমার আর কিছুই বলার নেই। আমাদের ভাগ্যে হয়তো এইটাই ছিল। তোমার আর আমার বিয়ে। বলে এক দীর্ঘ শ্বাস নেয়।
.
আমি সেই আগের মতই চুপ। তা দেখে রিয়ান আমার কাছে এসে বলে।
.
— রিয়ু কিছু তো বল!! তোমার এই চুপ থাকাটা আমি মেনে নিতে পারছি না। Please say something!! রিয়ুপাখি!!
.
আমি এইবার মুখ তুলে রিয়ানের দিকে তাকাই। রিয়ানের মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে। চোখ মুখে ক্লান্তির ছাপ। আমি এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলি।
.
— I want divorce!!
.
.
.
#চলবে