পর্ব ১৯+২০
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_19
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
আমি এইবার মুখ তুলে রিয়ানের দিকে তাকাই। রিয়ানের মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে। চোখ মুখে ক্লান্তির ছাপ। আমি এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলি।
.
— I want divorce!!
.
কথাটা শুনে রিয়ান একটা বড়সড় ধাক্কা খায়। সে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে এক না বলা কষ্ট উঁকি মারচ্ছে বার বার। রিয়ান নিজেকে কিছু সংযত রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
.
— এএএই সসব ককি বলছো তুমি রিয়ুপাখি!! তোমার মাথা ঠিক আছে তো!! তুমি আমার থেকে কেন ডিভোর্স চাচ্ছো??
.
আমি এই ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
— তো কি বলবো আর!! বলুন!! যে সম্পর্ক আমাদের মর্জিতে না বরং জোরাজোরিতে স্থাপিত হয়েছে তা কিভাবে রাখবো আমি!! আমাদের এই সম্পর্কে কোন টান নেই, ভালবাসা নেই, কোন অনুভূতি নেই, কোন দায়বদ্ধতাও নেই। বলুন আছে কি??
যে সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই সে সম্পর্ক রাখার কোন মানে হয় না। আর এমনেও না আপনি আমায় ভালবাসেন নননা আআআমি!! শেষের কথাটা বলতে গিয়ে আমার গলাটা ধরে আসছিল।
.
রিয়ান সব কথা শান্ত মাথায় শুনলেও শেষের কথাটা শুনে রিয়ানের মাথায় আগুন লেগে যায়। সে রাগকে কিছুটা সংযত রেখে বলে,
.
— তুমি আমায় ভালবাসো না?? দাঁত কটমট করতে করতে।
.
— নননননা!! So now I want divorcee. কাঁপা কাঁপা গলায়।
.
এই কথাটা যেন রিয়ানের রাগ শত গুন বাড়িয়ে দেয়। সে হুট করেই দাড়িয়ে যায় আর পাশে থাকা টিনের গ্লাসটা ছুঁড়ে মারে। সাথে সাথে কেমন টিং টাং শব্দ হয়ে উঠে।
আমি শব্দ পেয়ে দাড়িয়ে যাই আর কাঁপতে শুরু করি। রিয়ানের এমন রাগ আমি আগে কখনো দেখে নি। রিয়ানের চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আছে।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাব তার আগেই রিয়ান আমার খুব কাছে চলে আসে। আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না আমার। সে আমার গালে হাত রেখে হুট করেই আমার ঠোঁট তার ঠোঁট দ্বারা চেপে ধরলেন।
আমি অবাকের একদম শেষ পর্যায়ে চলে যায়। হাত পা একদম বরফ হয়ে যায়। বিষ্ময়কর চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে এইটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব।
প্রায় ১ মিনিট পর সে সরে আসে। আমি এখনো মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছি।
সে কাছে এসে তার কপালের সাথে আমার কপাল মিলিয়ে দাড়িয়ে থাকে৷ দুই হাত আমার দুই গালে রেখে একদম স্লো ভয়েসে বলে।
.
— তোমার মুখে যাতে আমি আর কখনো ” ডিভোর্স” শব্দটা না শুনি। তা না হলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না!!
.
আমি এইবার চোখ বন্ধ করে জোরে এক শ্বাস নিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই আর চেঁচিয়ে বলি,
.
— কেন!! কেন বলবো না? কিসের অধিকারে বলছেন আপনি আমায় এইসব আপনি!! বিয়ে হয়ে গিয়েছে বলে এখন স্বামীর অধিকার ব্যবহার করছেন??
.
— রাগ উঠিও না!!
.
— রাগ আমি উঠাচ্ছি না আপনি!! খেলনা পেয়েছেন আমায়!! যেমনে ইচ্ছা সেমনে চালাবেন, অধিকার দেখাবেন তারপর অভক্তি এসে পড়লে ছুঁড়ে ফালাবেন!!
বলুন কেন করছেন আমার সাথে এমন??কেন!! নিজ থেকে যখন দূরে সরে যেতে চাচ্ছি তখন কেন আমায় যেতে দিচ্ছেন না। কেন এই মিথ্যা নামক এক বিবাহের বন্ধনে জড়িয়ে রাখতে চাইছেন আমায়?? কেন!!
.
রিয়ান আমার বাহুদ্বয় দুটো চেপে ধরে বলে,
— Because I love you damn it!!! কিছুটা চেঁচিয়ে।
.
কথাটা আমার কানের আসার সাথে সাথে আমি পাথর হয়ে যাই। নড়া চড়া যেন একদম ভুলে যাই। শুধু স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না যে সে আমায় ভালবাসে!! আমায়!! আমি কোন মতে কাঁপা কাঁপা গলায় বলি।
.
— কককি বববলেন আপনি!! আআআবার ববলুন না প্লিজ।
.
সে আমার কপালের সাথে তার কপাল ঠেকিয়ে বলেন।
— কখনো বলা হয় নি জানি। কিন্তু আজ বলছি, ভালবাসি তোমায় রিয়ুপাখি খুব বেশি ভালবাসি। কখন কিভাবে ভালবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। শুধু এখন এতটুকু জানি তোমাতে আমি আসক্তি হয়ে উঠেছি। যার থেকে আমার কোন নিস্তার নেই।
এখন আমার এই আসক্তির যে তোমায় বড্ড প্রয়োজন!! তুমি নামক আসক্তি যে আমায় ঝেঁকে ধরেছে।
জানি না তুমি কি আদো আমায় ভালবাসো কি না!! কিন্তু আমি চাই তুমি সবসময় আমার পাশেই থাকো!! আমার আসক্তি হয়ে।
শেষে শুধু একটাই প্রশ্ন করতে চাই,
ভালবাসো কি আমায়??
.
আমি আর কিছু না ভেবে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই আর বলি।
— হ্যাঁ ভালবাসি অনেক বেশি ভালবাসি। সারাজীবন আপনার সাথে থেকেই কাটাতে চাই। আপনার আসক্তি হয়েই পাশে থাকতে চাই।
.
রিয়ান এক প্রশান্তির হাসি হেসে আমার জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
— সবসময় মনে রাখবে #আমার_আসক্তি_যে_তুমি।
.
.
???
.
.
গ্রামবাসীদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এসেছি নিজেদের গন্তব্যে। আজ নিজেকে কেন জানি পুরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। হয়তো আমি আমার ভালবাসা পেয়েছি বলে। আপন বলতে কাউকে পেয়েছি বলে। নিজের একাকিত্ব জীবনে কোন সঙ্গী পেয়েছি বলে। যে আমায় সবসময় আগলে রাখবে।
ক্যাম্পে এসে রিয়ান আর আমি একটু বিশ্রাম নিয়ে যে যার যার কাজে লেগে যাই। আমি আগেই রিয়ানকে বলে দিয়েছি যে আপাতত আমাদের বিয়ের কথা কাউকে না জানাতে। এখন যদি সবাই এই নিয়ে কিছু জানে তাহলে হয়তো সবাই বিষয়টা অন্য ভাবে নিবে। রিয়ানও বিষয়টা বুঝতে পেরে রাজি হয়ে যায় আর বলে ঢাকায় গিয়ে একবারে সে ধুমধামসে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবে। আমি আর কিছুই বলি না শুধু স্মিত হাসি।
.
.
??
.
.
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে এসেছে। সাথেই আকাশে তারারা এসে ভীড় জমিয়েছে। দূর পাহাড় হতে শেয়ালের হাক শুনা যাচ্ছে। ঝিঁঝিঁ পোকারাও তাল মিলাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দামকা হাওয়া বয়ে চলছে। আর সেই সাথে ঘাসেরাও মনের সুখে দুল খাচ্ছে।
আমি উঁচু টিলাটার উপর বসে আছি। সাথে রিয়ানও আছে। আমি রিয়ানের কাধে মাথা রেখে আকাশ দেখতে ব্যস্ত। রিয়ান এক হাত দিয়ে আলতো ভাবে আমায় জড়িয়ে ধরে আছে। আমার ভিতরে যেন প্রশান্তি ঢেউ বয়ে চলেছে। কখনো ভাবি নি যে নিজের ভালবাসার মানুষকে আপন করে পাবো। আজ সত্যি সারুকখানের সেই মোস্ট ফেমাস ডাউলোগটা মনে পড়ছে,
.
” আগার কিসি চিজ কো তুম দিল সে চাহো তো পুরি কায়নাত উসকো তুমসে মিলানে কি সাজিস মে লাগ জাতি হ্যায়।”
.
আজ সত্যি মনে হচ্ছে যেন কথাটা ১০০% সত্যি। আমি এই ভেবে মুচকি হাসতে থাকি। রিয়ান তা খেয়াল করে ভ্রু কুচকিয়ে আমার দিকে তাকায় তারপর বলে,
.
— কি এইভাবে মুচকি মুচকি হাসছো কেন??
.
মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে।
— এমনেই।
.
— হুহ!
.
— খারুস!! বিরবির করে। আচ্ছা আমার না একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল!
.
— করো। জিজ্ঞেস করতে হয় নি আমার। আমার নাক টেনে দিয়ে।
.
— আপনি আমায় আগে কেন বলেন নি আপনি আমায় ভালবাসেন। তার উপর যখন ভালোইবাসতেন তাহলে আমার সাথে ওমন খারুস মার্কা বিহ্যাভিওর কেন করতেন?? উত্তর দিন!!
.
— বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন জানি বলে উঠতে পারি নি। ভেবেছিলাম ঢাকায় দিয়ে না হয় একবারেই বলবো। কিন্তু তার আগেই এইসব হয়ে যায়। আর তার উপর তুমি সেই দিন ডিভোর্স কথা বলাতে আমার মাথায় রাগ উঠে যায়। তাই সেই দিনই একবারে মনের কথাটা বলে দেয়।
আর রইলো ওমন ব্যবহার কেন করতাম! তোমাকে আমার আবিরের সাথে সহ্য হতো না তাই যখনই তোমাদের একসাথে দেখতাম মাথা গরম হয়ে যেত আর যার জন্য তোমার সাথে ওমন বিহ্যাভ করতাম। আবার অনেক সময় তুমি বেশি বুঝো বলে রাগ লাগতো তাই এমন বিহ্যাভ করতাম।
.
— হুহ হিংসুটে!!
.
— এত দিন তো শুধু খারুস ছিলাম এখন হিংসুটেও!!
.
— আপনি খারুস ওয়ালা হিংসুটে। এই বলে আমি এক দৌড় দেই।
.
— তবে রেএএ!! রিয়ানও আমার পিছে পিছে চলে আসে।
.
.
?
.
এইভাবে খুনসুটির মধ্যে আমাদের দিন পার হয়ে যায় আর ঢাকা যাওয়ার সময়। রাঙামাটির এই অমূল্য কিছু উপহার আর স্মৃতি নিয়ে চলে আসি ঢাকাতে। যে এক পরিচয় নিয়ে ঢাকা থেকে বেড়িয়েছিলাম আজ ঠিক অন্য পরিচয় নিয়ে ফিরছি। যেই শহরে আগের আমার আপন বলতে কেউ ছিল সেখানে এখন আমার সবচেয়ে আপন বলতে কেউ আছে। রিয়ান আছে!!
এইসব ভেবেই এক প্রশান্তি ছেয়ে যায় আমার মনে।
পুরো রাস্তায় রিয়ানের সাথে দুষ্টুমি করতে করতেই চলে আসি ঢাকাতে। শুরু হয় নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়।
.
.
???
.
.
অন্ধকার আচ্ছন্ন এক রুমে প্রায় ৩ দিন যাবৎ আবির বন্ধি হয়ে আছে। চেয়ারের সাথে তার হাত পা আটকানো। চোখ দুটো কালো কাপড় দিয়ে বাধা।
এমনকি খাবার পানি সব বন্ধ তার। গতকাল খুব কাতরিয়েছিল বলে কেউ এসে তাকে পানি খাইয়ে দিয়ে যায়।
আবির তখন ঝিমুচ্ছেছিল ঠিক তখনই দরজা খুলার আওয়াজ হয়। তারপর এক বালতি পানি ওর উপর ঢালা হয়। আবির ধরফরিয়ে উঠে। কেউ একজন এসে ওর চোখের কাপড়টা খুলে দেয়। ৩ দিন চোখে আলো পড়ায় আবির চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। চোখে তার আলো সইছে না। বড্ড কষ্ট হচ্ছে তাকাতে। প্রায় অনেকখুন পর সে নিভু নিভু ভাবে চোখ খুলার চেষ্টা করে। সে আবছা আবছা চোখে দেখে কেউ ওর সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। হাতের ধারালো একটা ছুঁড়ির ধার মাপছে সে। বার বার চোখ বুঝছে আর খুলছে কিন্তু কিছুতেই সামনে থাকা ব্যক্তিটি চেহেরা স্পষ্ট দেখতে পারছে না। বহুত কষ্টে চোখ বড় বড় করে তাকানো চেষ্টা করব। আর সামনে যাকে দেখে সে একদম অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে অবাক হয়ে বলে।
.
— রিয়ান তুই!!!
#Part_20
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
রিয়ান পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। হাতে থাকা ধারালো ছুঁড়িটি ধার মাপছে সে। মুখে এক পৈচাশিক হাসি৷
আবির এই প্রথম রিয়ানের এমন রুপ দেখছে। ওর হাত পা পুরো ঠান্ডা হয়ে এসেছে। চোখে মুখে ভয় বিরাজমান। তাও আবির কিছুটা সাহস সংচয় করে বলে।
.
— তাহলে তুই এই সে যে আমাকে এই কয়েকদিন ধরে বন্ধি করে রেখেছিস??
.
— হু!! গম্ভীর গলায়।
.
— কিন্তু কেন!! কেন আমায় এইভাবে বন্ধি করে রেখেছিস?? কি চাস তুই!!
.
— তোর শাস্তি!!
.
— কিসের শাস্তি!! অবাক হয়ে।
.
— আমার জানের দিকে নজর দেওয়ার শাস্তি। আমার ভালবাসার দিকে হাত বারানোর শাস্তি। আমার রিয়ুপাখিকে আমার থেকে দূর করার শাস্তি!!! চেঁচিয়ে!
.
— রিয়ানা তোর না বুঝলি ও শুধু আমার!!
.
এই কথা শুনার সাথে সাথে রিয়ান যেন একবারে হিংস্রে হয় উঠে। রিয়ান উঠে গিয়ে সেই ছুঁড়িটা আবিরের গলায় হাল্কা চেপে ধরে। আবির এইবার ভয়ে পুরো জমে যায়। রিয়ান ছুঁড়িটা আরেকটু চেপে ধরে বলে,
.
— রিয়ানার নামও যেন তোর মুখে আর না শুনি। তা না হলে তোর অবস্থা যে কিরকম হতে পারে তা তুই কল্পনায়ও ভাবতে পারবি না।
.
— কককি কককরছিসস!! ছাড়!!
.
রিয়ান এইবার হু হু করে হাসতে শুরু করে। তারপর আরেকটু চাপ দিয়ে ধরে। সাথে সাথে রক্ত বেড়িয়ে আসে। হাল্কা কেটে গেছে।
.
— এতটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলি!! তাহলে পরবর্তীতে তোর সাথে যা হবে তা তুই সহ্য করবি কিভাবে??
এই বলে ছুঁড়িটা সরিয়ে নিয়ে আসে, আবির এইবার কাশতে শুরু করে। রিয়ান আবিরের চারদিকে ঘুরতে থাকে আর বলতে থাকে।
.
— জানিস প্রথম যেদিন তোকে আমি আমার রিয়ুপাখির সামনে দেখিছিলাম না সেইদিনেই তোকে খুন করতে ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু করতে পারি নি শুধু মাত্র তুই আমার ভাই বলে। আর সেটাই আমার ভুল ছিল। তুই দিন দিন তোর সীমা পেরিয়ে যাচ্ছিলি।
তোর সাহসও কিভাবে হয় আমার রিয়ুপাখির চোখ তুলে তাকানোর!! ওর দিকে হাত বাড়ানোরর!! চেঁচিয়ে!!
.
— আমি রিয়ুকে ভালবাসি!!
.
“রিয়ু” নামটা আবিরের মুখে শুনার সাথে সাথে রিয়ান আরও হিংস্র হয়ে উঠে। রিয়ান গিয়ে আবিরের দুই গাল চেঁপে ধরে আর বলে।
.
— যেদিন তুই প্রথম আমার রিয়ুপাখিকে আমি বাদে “রিয়ু” বলে ডেকেছিলি সেইদিনই তোর জবান আমি কেটে ফেলতে চেয়েছিলাম!! তোকে জিন্দা কবর দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু করেনি। কেন জানিস!! সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।
রিয়ুপাখির মনে আমার জন্য অনুভূতি জাগ্রত করতে, ওকে নিজের প্রতি দূর্বল করতে এত সবুর ধরে বসেছিলাম। একদিকে জানিস ভালোই হয়েছে যে তুই রিয়ুপাখির পাশে ছিলি। তুই না থাকলে হয়তো আমার রিয়ুপাখি বুঝতোই না আমার মূল্য!! আবিরকে ছেড়ে দিয়ে। আর আবিরের চারদিকে ঘুরতে থাকে।
.
— কিভাবে?? অবাক হয়ে।
.
— ভেরি সিম্পেল!! তুই ওর পাশে ছিলি বলে ও ভালবাসা আর বন্ধুত্বের অনুভূতি গুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পেরেছে। ও তো তোকে সর্বদা শুধু একটা ভালো বন্ধু মনে করে এসেছে। যার জন্য তোর প্রতি ওর কোন অনুভূতি ছিল না।আমার প্রতি ওর অনুভূতিগুলো একটু ভিন্ন ছিল বলেই ও সহজে বুঝে উঠতে পেরেছে। যার জন্য ও আজ আমার!! থেংক্স টু ইউ!! তাই তোর শাস্তিটা একটু কমই হবে। এই বলে আবিরের ডান হাতে ধারালো ছুরিটি চালিয়ে দেয়। আর সাথে সাথে ফিনিক করে রক্ত বেরিয়ে আসে।
আবির চোখ বন্ধ করে তা সহ্য করে নেয়।
.
— ভেবেছিলাম শাস্তি কম দিব! কিন্তু না তুই তার যোগ্য না। তোর সাহস কিভাবে হয় আমার জানকে কষ্ট দেওয়ার!! তাকে পানি ফেলার!! বল!!
যেখানে আমার প্রিয় গাড়িটাই আমার শাস্তি হতে রক্ষা পায় নি সেখানে তুই তো জীবন্ত মানুষ!!
মনে আছে চাচ্চু আমায় একবার একটা গাড়ি গিফট করেছিল!! আর ওইটা আমার ফেভরিট কার ছিল!!
সেটা জানিস আমার রিয়ুপাখিকে কষ্ট দিয়েছিল। ওর উপর কাঁদা ছুঁড়ে। সেই ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও আমার রিয়ুপাখি কষ্ট পেয়েছিল। তাই তো ওই গাড়ির আমি এমন অবস্থা করেছি যা অকল্পনীয়। কিন্তু জানিস কি এই সোসাইটির সবাই জানতো ওই আমার ফেভরিট কার। তাই হুট করে ওইটা সরিয়ে ফেলতে পারতাম না বলে কিছুটা মেলোড্রামা করা লাগে।। ইনোসেন্ট ফেস করে।
.
.
[[ জানি এখনো কিছু কিছু পাঠকগন আছে যারা এইটা বিশ্বাস করবেন না যে এইটা রিয়ানেরই কারসাজী। তাই তাদের বলছি মনে করেন তো গাড়ি নষ্টের পর সাইকোটা কি বলেছিল?? মনে নেই তাই তো!! থাক আমি এই বলছি সাইকো বলেছিল–
.
” এই গাড়ির তহ এই অবস্থা হওয়ার কথাই ছিল। যে গাড়ি আমার রিয়ু পাখির উপর কাঁদা ছুঁড়েছে সে গাড়িকে কি আমি এত সহজে ছেড়ে দিতে পারি?? উহু একদম না।
গাড়িচালককে (মানে তাকেই) আমার রিয়ুপাখি শাস্তি দিলেও গাড়িকে দেয় নি। গাড়িচালক (মানে রিয়ান নিজেই) তার শাস্তি পেলেও গাড়িটা পাই নি। তাই তহ আমাকেই গাড়িটার অবস্থা এমন করতে হলো। ”
.
আমি ক্লু দিয়েই রেখেছিলাম বাট কেউ ধরতে না পারলে আমার মত নিরিহ মাসুম বাচ্চা মানুষকে কেন দোষারোপ করেন হা!! লজ্জা করে না আপনাদের আমার মত একটা কিউট ইনোসেন্ট মাসুম সুইট বাচ্চা লেখিকাকে এত অপবাদ দিতে!! আল্লাহ এই অন্যায় সইতো না বইলা দিলাম। ]]
.
.
— ইউ আর সিক ম্যান!! তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস।
.
— হ্যাঁ আমি পাগল আমার রিয়ুপাখির জন্য আমি পাগল। আর আমার এই পাগলামির মাঝে যে আসবে সে মৃত্যু ব্যতিত আর কিছু পাবে না বুঝলি!! এই বলে রিয়ান আবিরের একটা আঙুল কেটে ফেলে!!
.
আবির চিৎকার দিয়ে উঠে।
.
— জানিস রকি ছেলেটার অবস্থাও আমি ঠিক এমনই করেছিলাম। কিন্তু ওকে তো জানে মেরেছিলাম তোকে তোর জানে মারবো না। তিলে তিলে কষ্ট দিব তার পর ওই কষ্টটাকেই আজীবনের জন্য তোর বুকের উপর লিখে দিব।
.
এই বলে রিয়ান অহরতো আবিরের হাতে ছুরি চালিয়েই যাচ্ছে। পরক্ষণেই আবিরের হাত পুরোপুরি ভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। তা দেখে রিয়ান তৃপ্তির হাসি হাসে। আবির আর সহ্য করতে পারছে না। মরে যাচ্ছে জ্বালায়।
ঠিক তখনই রিয়ান আবিরের হাতে একগাদা মরিচের গুঁড়ো লাগিয়ে দেয়। এইবার তো আবির আর থাকতে পারছে না। চিৎকার করতেছে। ওর মনে হচ্ছে ওর হাতটা যেন গলে পঁচে পড়ে যাচ্ছে। পারছে হাতটাকে কেটে ফেলতে।
.
— তুই ওই হাত দিয়েই আমার রিয়ুপাখিকে ছুঁয়ে ছিলি তাই না!! ওকে পানিতে ধাক্কাও এই হাত দিয়ে দিয়েছিলি তাই না!! দেখ আজ এর পরিনাম কি হলো!!
[ রিয়ানা যখন বলে যে ওকে কেউ ধাক্কা দিয়েছিল তখনই রিয়ানের সন্দেহ হয় আর খোঁজ লাগায়। তখন ও জানতে পারে এর পিছে আবিরের হাত ]
ছোট থেকে তোর সব অন্যায়, তোর ওই ব্যবহার মেনে নিলেও আমার ভালবাসার প্রতি নজর দেওয়া আমি কোন মতেই মানবো না। সি ইজ মাই লাইফ!! এত বছর ধরে ওকে নিজের করার স্বপ্ন বুনে আসছি আর তুই কিনা মাঝে এসে ওকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিস!! এইটা কিভাবে মেনে নেই আমি বল!!
এই বলে রিয়ান আবিরের বাম হাতে ছুরিটি বসিয়ে দেয়।
.
— এতটুকু সহ্য হচ্ছে না। তাহলে দেখ আমি কিভাবে আমার ভালবাসার নাম রোজ জীবিত করে রাখি।
এই বলে নিজের বা শার্টের হাত ফোল্ড করে কোনুই পর্যন্ত উঠিয়ে নেয়। তারপর হাতের উপর থেকে ফেক স্কিন উঠিয়ে ফেলে। আর সাথে সাথে ভেসে উঠে রিয়ানার নাম। আবিরের হাতের উপর থেকে ছুরিটা উঠিয়ে নিজের হাতে সেই একই জায়গায় আবার রিয়ানার নাম লিখা শুরু করে। কিন্তু রিয়ানের চোখ মুখে বিন্দু মাত্র “উহ” শব্দ ও নেই বরং আছে এক তৃপ্তিময় হাসি।
আবির এইবার আরেক দফা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিয়ানের দিকে। ওর পাগলামো যে সকল সীমা পেরিয়ে গেছে তা আবির ঠিকই বুঝতে পারছে।
রিয়ান ওর হাতে রিয়ানার নাম লিখা শেষে ছুরিটা পাশে রেখে অন্য হাত দিয়ে নামটা সে ছুয়ে দিতে থাকে। আর বলে।
.
— ” তেরা ইস্ক হি মেরা জানুন হ্যায়,
মেরে জিনেকি ওয়াজা হ্যায়। ❤
মেরি আশিকি আব সেফ তুমসে হ্যায়,
যো হার হাত গুজারনে কে লিয়ে তেয়ার হ্যায়❤”
.
তখন আবির বলে,
.
— একটা কথা তুই ভুলে গেছিস রিয়ান, ” ইস্ক যাব হাতসে গুজার জাতা হ্যায় তাব ভো যেহের বানজাতি হ্যায়। ওর যেহার জিন্দেগী নেহি মোত দেতি হ্যায়। ”
.
— ঠিক বলেছিস!! কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে না।
” মেরা ইস্ক যেহের জারুর হ্যায় পার সেফ দুসরো কে লিয়ে। মেরে ইস্ক সেফ দুসরো কি জান লেতা হ্যায়। খুদকি পেয়ার কি নেহি!! ”
.
— তোর এই ভালবাসা নামক পাগলামো একদিন রিয়ানার না ক্ষতি করে বসে। তুই ওর জন্য হিরো না ভিলেন!!
.
এই শুনে রিয়ান হু হু করে হাসতে শুরু করে। তারপর বলে।
.
— এই কাহিনির হিরোও আমি, ভিলেনও আমিই। ভালবাসার কারনও আমি, ঘৃণার কারনও আমি। বিষও আমি, অমৃতও আমি। রিয়ানার সব কিছুতে শুধু আমি আর আমি। এই আমিতে ওকে আসক্তি হয়ে মিশে থাকতে হবে।
জানিস এই ৫ বছর ওকে সব সময় দূর থেকেই ভালবেসে এসেছি। ওর অগোচরে ছাঁয়ার মত ওর পাশেই থেকেছি শুধু মাত্র এই দিনটার অপেক্ষায় যখন সে আমায় নিজ থেকে ভালবাসবে। ওর মনেও আমার জন্য অনুভূতি গুলো লুকোচুরি খেলবে।
এর জন্য রোজ ওর জন্য ফুল পাঠাতাম। কবিতায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতাম ওকে নিজের অনুভূতি বুঝানোর জন্য। রাতের গভীরে ওকে একটু ছুঁয়ে দেখতাম। আবার দিনের আলোয় মিলিয়ে জেতাম। জানিস যখন বুঝতে পারি রিয়ানা আমায় ভালবাসে তখন কেন জানি ভয় জন্মে গিয়েছিল যে ও আমায় ছেড়ে চলে যাবে। তাই তো গ্রামবাসীর সরদারকে দিয়ে আমি আমার আর রিয়ুপাখির বিয়ের ব্যবস্থা করি। আর এমন ভাবে সব সাজাই যে সব কিছু যেন একটা ঘটনা স্বরুপ আকার নেয়। কিন্তু আমার ভয় ছিল যে তুই এর মধ্যে বাঁধা হয়ে দাড়াবি তাই তো যেইদিন আমরা ওই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই সেইদিনই তোকে আমি এইখানে বন্ধি করে রেখে দেই। বাঁকা হেসে।
.
— ততুই মমানে ততোর আআর ররিয়ানার ববিয়ে হহয়ে গগেছে!! কাঁপা কাঁপা গলায়।
.
— ইয়েস মাই ব্রাদার!! সি হেস বিকাম মিসেস রিয়ানা সাদাত খান। ও চিরতরের জন্য আমার হয়ে গিয়েছে।
আর এখন পালা তোর শাস্তির। তুই যেহেতু আমার প্রিয় জিনিসকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিস সেহেতু আমিও তোর প্রিয় জিনিস কেড়ে নিব।
এই বলে রিয়ান ছুড়িটা উঠিয়ে আবিরের গলা আর বুকের ঠিক মাঝ বরাবর এক জায়গায় কাট দেয়। সাথে সাথে আবির ছটফট করে উঠে।
না রিয়ান ওকে জানে মারে নি বরং ওর কন্ঠ নালির শিরাটা কেটে দিয়েছে। যার জন্য সে চিরদিনের জন্য গলার স্বর হারিয়ে ফেলেছে। রিয়ান এইবার আবিরের চোখের সামনে ছুরিটা ধরে। আবির এইবার পারছেও না চিৎকার করতে। সে শুধু ভয়ে কাঁপছে।
কিন্তু তাকে অবাক করে সরে আসে রিয়ান। তারপর কাকে যেন ফোন করে আর কি জানি বলে। তারপর আবিরের কাছে এসে ওর ঘাড়ে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবির অজ্ঞান হয়ে যায়। রিয়ান আবিরের সামনে এসে ওকে একটা ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তারপর বলে।
.
— তোকে মারা আমার পক্ষে সম্ভব না। যত যাই হোক ভাই তো! হোক না চাচাতো!! তোকে ছোট থেকে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই প্রতিবারই আমায় দূরে সরিয়ে দিয়েছিস। সবসময় ঘৃণায় করে এসেছিস। তাই আমি তোকে আজ চিরদিনের জন্য আমাকে ঘৃণার কারন দিয়ে দিলাম। তুই শেষে আমার সাথে যা করেছিস তা আমি অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু আমার জানের দিকে তাকানোর হাল্কা শাস্তি তোকে দেওয়া জরুরি ছিল। আমি এত মহান নই যে নিজের ভালবাসা বিসর্জন দিয়ে দিব। অনেক বেশি ভালবাসি রিয়ুপাখিকে আমি। তাই তোকে এইটা বুঝাতে এত কিছু। আমি জানি আমি রিয়ুর প্রতি অনেক পসেসিভ। আর আমার পসেসিভনেস তোর জান নিতে দ্বিমত প্রকাশ করবে না।
চিন্তা করিস না তোর কন্ঠ একবারের জন্য নিয়ে নেই নি। পরবর্তীতে ঠিক ভাবে ট্রিটমেন্ট নিলে আবার ফিরে আসবে কিন্তু তা তুই জানবি না।
.
এই বলে এক দীর্ঘ শ্বাস নেয় সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু লোক এসে আবিরকে নিয়ে যায়। আর রিয়ানও বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
.
[[ এখন এক দল এসে বলবে লেখিকা আপু তো এখনো পুরো রহস্য ভেদই করে নি। এখনোও আরও কত কি আছে। তাদের বলছি আজকেই সব জানবেন নাকি। একদিনেই ভাত,খিচুড়ি,বিরিয়ানি,কাচ্চি,চকলেট,আইস্ক্রিম,ফুসকা,পাস্তা সব খাবেন নাকি?? একটু জিরিয়ে জিরিয়ে খান।
এখনো বহুত রহস্য বাকি আছে প্লাস সামনে আরও আসছে। সব যদি এখন বলে দেই তাহলে পড়ে গল্পটারে ঠ্যালা গাড়ির মত ধাক্কা দিতে হইবো আমায়। আর তাতে বুঝি আপনাদের কষ্ট হইবো না যে আপনাদের কিউট ইনোসেন্ট মাসুম লেখিকা এত কষ্ট করছে?? সো যাতে আপনাদের এত কষ্ট না হয় তাই আমি আস্তে আস্তে সব রহস্য ভেদ করবো। কিন্তু তাও একটা টুস্ট এর সাথে।? এখন আমি গল্পে গেলাম বাই!! ]]
.
.
??
.
রাত ১০ বেজে ৩৯ মিনিট,
আমি খাটের উপর বসে রিয়ানের কথা ভেবে চলেছি। আমার যে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে রিয়ান আমার স্বামী। রিয়ান যে আমাকে এত ভালবাসে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল।
রাঙামাটি থেকে আমরা এসেছি আজ প্রায় চারদিন হতে চললো। যেহেতু আমরা সকলেই এতদিন হাড় ভাঙা খাটুনি করে এসেছি তাই আমাদের ১ সপ্তাহ ছুটি দেওয়া হয়েছে। যার জন্য রিয়ানের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ কিছুই হয়নি। কিন্তু নতুন প্রেমিক প্রেমিকার মত ঘন্টার পর ঘন্টা কথা ঠিকই হয়েছে। আমার প্রতি রিয়ানের পাগলামো যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাথে অদ্ভুত অদ্ভুত আবদারও। তার মধ্যে একটি আবদার হলো রাতে ঘুমানোর আগে ইমোতে ভিডিও চ্যাট ওন করে তারপর ঘুমাতে হবে৷ সে নাকি সারারাত জেগে আমার ঘুমন্ত চেহেরা দেখবে। আরও এমন কিসব আবদার করে। আর যদি একবার মানা করি রেগে মেগে মিসাইল।
এইসব ভেবেই আনমনে হাসছিলাম তখনই রিয়ানের ফোন আসে। আমি ফোন হাতে নিয়ে আরেকদফা হাসি৷ তারপর ফোন কানের সামনে নিতেই রিয়ান বলে উঠে।
.
— বললেই তো হয় আমায় মিস করছো শুধু এত মনে করার কি মানে আছে?? এইভাবে আমার কথা ভেবে মুচকি মুচকি করে হাসা কি ঠিক বলো?
.
— আপনি কিভাবে জানলেন আমি এখন আপনার কথা ভেবে হাসছিলাম। অবাক হয়ে!!
.
— তার মানে সত্যি ভাবছিলে!
.
— আব ইয়ে মানে! না আমি আপনার কথা ভাবছিলাম না। আমি অন্য কাউরো কথা ভাবছিলাম।
.
— কি বললেএএএএ!! কার কথা ভাবছিলে বলো!! কার এত বড় সাহস যে কিনা আমি বাদে আমার রিয়ুপাখির ভাবনায় আসে?? রাগে ফুসতে ফুসতে।
.
— কথায় কথায় এত রাগেন কেন?? আবার আমাকে বকাও দেন!! এমনে এমনেই কি বলি খারুস!! আপনার কথাই ভাবছিলাম আমি। আপনি বাদে ওর কার কথা ভাববো??
.
— তো রাগ উঠালে কেন প্রথমে??
.
— কচু উঠাইসি!! হুহ!!
.
— তোমার কচু উঠানো উঠাচ্ছি আমি। তার আগে দরজা খুলো!
.
— মমমানে!!
.
— দরজা খুলো মানে দরজা খুলো। তোমার বাসার বাইরে দাড়িয়ে আছি।
.
— আব তেরা কেয়া হোগা রিয়ানা!! এই গাব্বার থুক্কু খারুস মিয়া তো তোর এইবার ছত্রিশটা বাজাইবো। (মনে মনে)
.
— কি হলো!! দরজা খুলো!!
.
আমি সাথে সাথে ফোন রেখে গেট খুলতে যাই। গিয়ে দেখি রিয়ান রেগে মিশাইল হয়ে দাড়িয়ে আছি। তা দেখে আমি একটা কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলি।
.
— আপনি এইখানে এত রাতে কি করছেন!!
.
— পেঁয়াজ বেঁচতে এসেছি। পেঁয়াজ কিনবে?? তোমার বাসায় এসেছি মানে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। ষ্টুপিড!! দাঁতে দাঁত চেপে।
.
— আব হ্যাঁ তাই তো। আমি কত বোকা তাই না। হেহে। জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে।
.
— এখন বাইরে দাড়িয়ে থাকবো নাকি??
.
— আব না না!! ভিতরে আসুন।
বলে সরে দাড়ালাম। রিয়ান ভিতরে এসে সোফায় বসে। আমি তার জন্য পানি নিয়ে আসি। তার দিকে পানি এগিয়ে দেই রিয়ান পানি হাতে নিয়ে বলে।
.
— তখন কি জানি বলছিলে??
.
— কবে, কখন, কোন সময়, কোথায়?? আমি তো কিছুই বলি নি। আমি কি কিছু বলতে পারি??
.
— তাই না!! হাতে থাকা গ্লাসটা টি-টেবিলের উপর রেখে আমার সামনে আসতে আসতে।
.
— আব অহহ মনে পড়েছে!! মনে পড়েছে!!
.
— গুড তাহলে বল কি বলছিলে!!
.
— বলছিলাম যে আপনি কত ভালো। একদম aww ki cute!! আপনি কত দয়ালু, মাসুম। রাগই করতে পারেন না। রাগ কাকে বলে জানেনই না। আপনি একদম কচু থুরি কোলবালিশের মত ভালো। চকলেটের চেয়েও মিষ্টি আপনার কথা। আপনি তো মিথিলা আন্টির কত ভালো জামাই।
লাস্টের কথাটা বলেই আমি মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরি। এ কি বলে ফেললাম আমি। এই জন্যই বলে কাউরে এত তেল দিতে নেই। তা না হলে ওই তেলে পড়ে নিজেরই পিছলে পড়তে হয়।
.
এইদিকে রিয়ানের তো মাথা ঘুরছে। রিয়ানা যে এমনও কথা বলতে পারে তা ওর জানা ছিল না। ও তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। তারপর গ্লাসে থাকা পানিটা খেয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয়। রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে।
.
— তুমি এমন পাম দেওয়া কথা থেকে শিখেছো??
.
— পেট্রোল পাম!! বলে আবার মুখে হাত।
.
— ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!!
.
–হুহ!!
.
— আচ্ছা শুনো যেটা বলতে এইখানে আশা!!
.
— কান খোলা আছে বলতে থাকুন।
.
পরে রিয়ান যা বললো তা শুনার সাথে সাথে আমি ৮২০ ভোল্টেজের ঝাটকা খেলাম। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম যে এইটা কি আদো সত্যি কিনা। আমি শুধু ড্যাবড্যাব করে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকি।
.
.
.
#চলবে