#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২৫
বাসায় ফিরতে ইউসুফ-কুহুর রাত –৮.৩০ বেজে যায়। সদর দরজা ক্রস করতেই দু জনেরই চোখে পড়ে। একটি মেয়ে খাবার টেবিলে বসে আছে। আর ইউসুফের মা খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছে৷ মেয়েটিকে দেখে ইউসুফ পরিচিত মনে হলো। মেয়েটির কাছে যেতেই দু জনেরই চোখ কঁপালে।ইউসুফ তেড়ে এসে বলল,,
—-” তুমি এখানে কি করছো আখি?”
আখি যেন শুনতেই পায়নি। খাবার খেয়ে যাচ্ছে আয়েশে। ইউসুফের রাগ যেন সারা শরীরে কিড়মিড় করছে। সে এগিয়ে যেতেই ইউসুফের মা এসে হাতে ধরে আটকায় বলে,,
—-” আজ দু দিন যাবত ও এখানেই। তোর বাবা নিয়ে এসেছে! খাবারের সময় হাঙ্গামা করিস না!”
ইউসুফ অবাক হয়ে বলল,,
—-” মা তুমি আমাকে আগে কেন বলো নি?”
—-” তোরে ঘুড়তে গিয়েছিস তাই বিরক্ত করিনি!”
—-” কিন্তু ও এখানে কেন আসচ্ছে?”
ইউসুফ আবার তেড়ে গেলো। আখির বাহু টেনে ধরে উঠালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,
—-” এখানে কেন এসেছো?হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?”
আখি হাসলো। ইউসুফের গালে বাম হাতে স্পর্শ করে বলল,,
—” ইউ!”
এক ঝাটকা মেরে সরিয়ে দিলো আখিকে ইউসুফ! আখি পড়তে গিয়েও পড়লো না। এদিকে কুহু ঠাই দাঁড়িয়ে বুঝাই যাচ্ছে না এ মুহূর্তে তার ভাবান্তর! ইউসুফ এবার আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলল,,
—“গেট আউট অফ মাই হাউস নাও! ”
আখি গেলো না। সোফায় আরাম করে বসে ইউসুফকে বলল,,
—-” আমার বাচ্চার বাবা যেখানে! আমিতো সেখানেই থাকবো?”
ইউসুফ স্তব্ধ হয়ে গেলো। বলল,,
—-” তোমার মতো নারী আমি আজ পর্যন্ত আর একটিও দেখিনি। এত নিচ তুমি। ছিঃ!”
আখির যেন কিছু যায় আসে না তেমন ভাব করে নীচের একটি ঘরে গিয়ে মিনিটের মাঝেই ফিরে এলো। হাতে একটি কাগজ নিয়ে সোজা কুহুর দিকে গেলো। ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল,,
—-” তুমি আমার কাছে প্রুভ চাইছিলে না? এই নাও তার প্রুভ। ”
কুহু কাগজটি খুললো। এক মুহূর্তের জন্য শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেলো যেন। এক পলক আখির দিক আর এক পলক ইউসুফের দিকে তাকালো। ইউসুফের চোখে তখন কুহুর দিকে হাজার প্রশ্ন যেন মেলে ধরেছে। যেন বলছে,,
—-” বাবুইবউ? তোর কি সত্যি এমনটি মনে হয় আমি কিছু করেছি? এই যে দুনিয়া শুদ্ধ তোর জন্য লড়াই করি সেই আমিটা কি তোকে ঠকাতে পাড়ি?”
কুহু চোখ নামিয়ে নিলো। ব্রেনের নার্ভ গুলো যেন অচল।শরীর কাঁপছে। গলা-ও যেন শুকিয়ে কাঠ। কুহু শুকনো ঢুক গিললো। কাঁপা কন্ঠে বলল,,
—-” এমন হাজারটা কাগজ বানানো যায় মিস আখি! ”
আখি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,,
—-” মেয়ে তুমি বড্ড বেকুব। বরটাকে এত বিশ্বাস করো? আর তোমার বর তোমাকে এভাবে ঠকিয়ে দিলো?”
কুহু এবার মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,,
—-” সামান্য কাগজের টুকরো আমার বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারবে না মিস আখি!”
কুহু আর দাঁড়ালো না। রুমে চলে গেলো। ইউসুফ টলমল চোখে তাকিয়ে রইলো কুহুর যাওয়ার দিক। তার বাবুইপাখির মনের কষ্ট সে ঠিক ধরতেই পেরেছে। মুখো যতই না বলুক। ইউসুফ জানে,”প্রতিটি মেয়ে তার বরটার সাথে পরনারী সহ্য করতে পারে না! ”
——————-
ঝড় উঠেছে। রাতের আকাশে বাজ পড়ে আন্ধারকে মৃদু আলোয় ভড়িয়ে দিচ্ছে। কুহু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। যেন তার মনের মাঝেও এমন বাজ পড়ছে। কুহুর পাশে এসে দাঁড়ালো নিঃশব্দে ইউসুফ। কুহু শূন্য দৃষ্টিতে চোখ মেলে বলল,,
—-” এমনটা কেন হয় নেতা সাহেব? আমি যখনি আপনার কাছে যাই! নতুন ঝড় আসে! ”
ইউসুফ কিছু বলতে পাড়লো না। শুধু কুহুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলো। কুহু আবার বলল,,
—-” আমি আপনাকে ছাড়া অচল নেতা সাহেব!”
—-” কাঁদিস না বাবুইপাখি! আল্লাহ চাইলে সব ঠিক করে দিবেন। ”
কুহু কাঁদতে লাগলো। ইউসুফ আবেশে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
———–
—-” বাবা! তুমি কি করতে চাইছো?”
পেপারের মাঝে মুখ গুঁজে বসে ছিল মহসিন। রাতে বেলায় ইউসুফকে তার রুমে দেখে কঁপাল কুঁচকালো। ইউসুফের করা প্রশ্নটি কান পর্যান্ত পৌছাতেই বলল,,
—-” আমি কি করতে চাইবো?”
—-” আখিকে এ বাসায় কেন এনেছো?”
—-” সে আমার ছেলের বাচ্চার মা হতে চলেছে তাই!”
ইউসুফ থমথমে গলায় বলল,,
—-“যা করছো! ভালো করছো না! আর হে! আমি খুব জলদি পদত্যাগ করছি। ”
মহসিন যেন এ ভয়েই ছিলেন।
———
হাসপাতালের তীব্র ফিনাইল এর উটকো গন্ধ পিট পিট করে চোখ খুলে আখি! চোখের সামনে চেনা পরিচিত মুখটি দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলেও। মস্তিষ্ক যখন প্রশ্ন করে উঠে,”আমি কোথায়?” ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আখি। নিজেকে হাসপাতালে দেখে অজানা ভয় ঝেঁকে বসে।
—-” ইউর গেইম ইজ ওভার!”
ইউসুফের কথাটুকু কানে যেতেই আখি ভয়ে থর থর করে কেঁপে উঠে। তোতলাতে তোতলাতে বলল,,
—-” ক–কিসের গ…গে..ইম?”
ইউসুফ বাঁকা হাসলো। কেবিনের মাঝে রাখা সোফায় পা তুলে বসলো। গলা উঁচু করে বলল,,
—” কামিং!”
আখি সাথে সাথে দরজায় তাকাতেই এক চিৎকার দিলো,,
—-” তুমি এমনটি করতে পারো না ইউসুফ! ”
ইউসুফ নির্বিকার ভাবে বলল,,
—-“ইউ নো হোয়াট? আই ওয়ান্ট মাই কিংডম টু ডু এভরিথিং আই ক্যান! ”
আখি অসহায় ভাবে চেয়ে রইলো। ইউসুফকে এতো হালকা ভাবে নেয়া উচিত হয়নি!এখন কি করবে?
চলবে,