#আমার চারু
#পর্ব-১৭(last part)
#ফারজানা নিলা(writer)
সকাল হয়ে গেল, রিমাকে ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে ফেললো অপরাজিতা। শহুরে বাতাস লেগেছে।এখন আর সকালে ঘুম ভাংগে না।
বেশ অনেক্ষন পর রিমা দরজা খুলেছে।
—ব্যাপার কি তোর, ডাকি যে কানে যায় না?আর চোখ মুখের এই অবস্থা কা।তাড়াতাড়ি নিচে আয়।
—আমি খাব না।
রিমা ধুম করে দরজা দিলো বন্ধ করে।বেলা হয়ে গেল তবুও রিমা রুম থেকে বের হচ্ছে না।
আয়নার সামনে রিমা দাঁড়ালো।
যেন আয়নার মানুষ টা হাজার প্রশ্ন করছে।
এই তুই এখনো দাঁড়িয়ে। তোর লজ্জা নেই।একটা ছেলে তোকে ফিরিয়ে দিয়েছে।তুই শরীর দিলেও সে তোকে এক সেকেন্ডেই ছুড়ে ফেলে দিলো।তবুও তোর লজ্জা নেই।
আহ চুপ কর,আমি আর শুনতে পারছিনা।রিমা সেই শাড়ি দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে পরলো।
শেষ সেকেন্ডে হয়তো বাচতে চেয়েছে।তবে আর হলোনা।
রাত হয়ে গেল,অপরাজিতা আবার ডাকতে আসলো।কোনো শব্দ নেই।
ডাকছে তবুও সাড়া নেই।
—-ওগো শুনছো রিমার কি হইছে কথা কয়না।ও জয়
—কি হইছে মা
—-সকালে রিমার চোখ মুখ ভালো ঠেকে নাই এখন কোনো শব্দ নাই।
জয় বেশ কিছুক্ষণ ধাক্কানোর পর দরজা ভেংগে ফেললো।রিমার নিথর দেহ ঝুলছে সিলিং ফ্যানে।
জয় বসে পরেছে।অপরাজিতার মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
রিমাকে নামানো হলো।
অপরাজিতা বেহুশ হয়ে গিয়েছে।পাড়ার মহিলারা এসে মাথায় পানি দিচ্ছে।
রিমাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
কাব্য খবর পেয়ে ছুটে এসেছে।
কাব্য হয়তো অল্প বুঝে ফেলেছে।রিমার এই কাজের কারণ।তবুও সে কাউকে কিছু বলতে পারবে না।কারণ বললে হয়তোব,রিমাকে ছিঃ ছিঃ করবে আর কাব্যকেও দোষ দিতে পারে।
হামিদ সাহেব ভেংগে পরেছে। এক মাত্র মেয়ে তাদের।সে কি করলো এটা।
ডাক্তার জানালো রিমা দিনের বেলায় মারা গিয়েছে।
কবর দিয়ে সবাই বাড়ি ফিরলো।কাব্য মনে মনে নিজেকে দায়ি করছে।কিন্তু রিমা যা করেছে সেটা অন্যায়।তাই বলে মরে যেতে হবে এমন তো না।বাসায় সবার নাওয়া খাওয়া বন্ধ বলতে গেলে।পুরো বাড়ি জুড়ে শোকের ছায়া।
কাব্য কলকাতা ফিরে গেল।
মদন কাকা টিভি রোগে পটল তুলেছেন।দোকান টা বন্ধ।মদন কাকার সাথে শেষ দেখাটা হলো না।
মদন কাকার চা টা আর খাওয়া হবে না।হয়তো আর এই দোকানটা ও থাকবে না।
কাব্যকে সিংগাপুর পাঠানো হবে অফিসের কাজে।সেখানে থাকা লাগতে পারে।
—-কাব্য সাহেব যে,আপনার তো কপাল খুলছে।শুনলাম বড় বাবু নাকি আপনাকে বিদেশ পাঠাচ্ছে।
—-হ্যা তা ঠিকি শুনেছেন।তবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি।ঠিক হলে জানাবে।
বাড়ি ফিরে গেল কাব্য।চারু দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।কাব্যর জন্য অপেক্ষা করছে।
—-কি ম্যাডাম কি করছেন?
—-আমার এক প্রেমিক আসবে বলেছে ফুল নিয়ে।তাই দাঁড়িয়ে।
—-বাহ তো প্রেমিক কি এসেছে?
—-প্রেমিককে দেখতে পাচ্ছি তবে ফুল দেখতে পাচ্ছিনা।
—যাক, ফুল তো ভুলে গিয়েছি।ঠিক আছে কাল নিয়ে আসব।
—-হয়েছে এবার বাসায় এসো।
চারু আজ বেশ অনেক পদ রান্না করেছে।খাবারও বেশ মজা হয়েছে।অবশ্য চারুর হাতের রান্না সব সময় খুব মজাদার হয়।
—-চারু তোমার সাথে কথা ছিলো
—-কি কথা বলো।
—-আমাকে হয়তো বিদেশ পাঠাতে পারে।
—-পাঠালে যাবে।
—-তুমি যাবে না?
—-না,আমি এখানেই থাকব।
—-থাকতে পারবে আমায় ছেড়ে?
—-হ্যা পারব।
আমি প্রেমিকা, আর প্রেমিকারা অপেক্ষা করতে জানে।
—-তাই নাকি।
কাব্য চারুকে কোলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গেল।
চারু তুমি আজ আমায় বাধা দিতে পারবেনা।
চারু নিরবে সম্মতি জানালো।
কাব্য চারুর ব্লাউজের হুক খুলে ফেললো।কপালে চুমু দিয়ে চুল গুলো খুলে দিলো।চারু আজ পুরোপুরি কাব্যর।সে তাকে পুরোপুরি কাব্যকে সপে দিলো।
—-চারু
—হু
—-চলো আমরা কাল বিয়ে করি।
—কাল?
—-কেন তোমার কোনো আপত্তি আছে?
—-না,ঠিক আছে কাল আমি তোমার বউ হবো।
—-ঠিক আছে ঠিক দুপুর দুইটায় আমি অফিস থেকে যাব কাজী অফিসে।তুমি ওখানে চলে যেও।
—ঠিক আছে।
সকালে চারু উঠে গেল।আজ সে বেশ সময় নিয়ে গোসল করেছে।দুধ আর গোলাপ দিয়ে গোসল করেছে।আজ তার বিয়ে বলে কথা।
একটা সুন্দর সাদা শাড়ি সবুজ পাড়ের শাড়ি পড়েছে।চুলের মধ্যে বেলী ফুলের মালা পেঁচিয়েছে। আজ খোপা করেছে।কালো টিপ, কাজল চোখ।
বেশ সুন্দর লাগছে।যে দেখবে সেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে।দুপুর একটা বাজার একমিনিট আগে ঘর থেকে বের হলো।
রাস্তায় যে দেখছে সেই তাকিয়ে আছে।কাজী অফিসে গিয়ে বসে আছে।কাব্য আসলে সিরিয়াল নিবে।
দুইটা তিনটা চারটা হয়ে গেল।কাব্য এখনো আসে না।
সবাই চারুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে।
একজন লোক এসে বললো
—–আপনি কি এখন আসবেন?
—–আমি আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করব।
—-ঠিক আছে।
ঠিক ৫.২৭ এ কাব্য আসলো।অফিসের লোকজন বসে বসে নাক ডাকে।
—-চারু আমার অনেক দেরি হয়ে গেল।
—-অহ।
—-আমার না এখনি যেতে হবে। বড় বাবু বলেছেন।আজকেই যাওয়া লাগবে।
—-ঠিক আছে যাও।
—-আগে আমরা বিয়ে করি তারপর।
—-বিয়ের সময় পেরিয়ে গিয়েছে।অন্য কোনো একদিন হবে।
—–কিন্তু চারু
—–আমি বাসায় গেলাম।আসি।
সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যায়।চারু এখন কালো শাড়ি পরে।সাদা শাড়ি ছাড়ার কোনো ব্যাখ্যা চারু দেয় না।
ছয় বছর পেরিয়ে গেল।এখন কাব্য অনেকটা সতেজ বলা যায়।
মদন কাকার দোকানটা এখন আর নেই।
সেখানে এখন গাড়ি ঠিক করার গ্যারেজ বানানো হয়েছে।
দুপুর একটায় কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে।
—–আরে কে। আসছি এতো জোরে কেউ দরজা ধাক্কায়
দরজা খুলে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে। চারু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
—–চারু
—–তুমি
—-দেরি করে ফেললাম তাই না
—-হয়তো।
—–বাসায় আসতে বলবেনা
—-তোমার বাসায় আমরা থাকি।তোমাকে না আসতে দেওয়ার কে।
—–আমরা মানে?
—–আমি আর আমার বাচ্চা।
—-তোমার বাচ্চা মানে।
—-হ্যা।তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো সেদিন রাতের কথা।আমি ভুলিনি।
চারু আর কাব্যের মিলনে একটি বাচ্চা হয়।সে ও জ্বীন।কাব্য তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
চারুর বাচ্চার নাম আয়াত।আয়াত মানুষ রূপে এসেছে আর কাব্য তাকে দেখতে পেয়েছে।ধবধবে সাদা।আয়াত জ্বীনদের সাথেই চলাফেরা করে।মানুষ এড়িয়ে চলে।কাব্য আয়াতকে বুকে টেনে নিলো।
আয়াত সব টাই জানে।
—–চারু
—-বলো
—-১.৫২ বাজে।চলো আমরা বিয়ে করব
—-এখন?
—-হ্যা, তোমার কোনো আপত্তি আছে?
—-আমার তো সেদিনো আপত্তি ছিলো না।তবে একটু দাড়াও।
চারু কালো শাড়ি ছেড়ে, সেদিনের সেই সাদা, সবুজ পাড়ের শাড়ি পরে আসলো।
কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করলো ঠিক ২.০১ এ।
সাক্ষী ছিলো আয়াত এবং আরো পনেরো জন জ্বীন।
এভাবে কি দেখছো,
—-দেখছি,অবশেষে আমার চারু আমার হলো।
সমাপ্ত।
(আমার চারু গল্পটি এখানেই শেষ হলো।ভালোবাসার মানুষ দের অপেক্ষা করতে জানতে হয়।অপেক্ষার বিপরীতেই সাফল্য লুকিয়ে থাকে।অনেক সময় সাফল্য না থাকলেও একটা শিক্ষা থাকে।আপনারা জানাবেন পুরো গল্পটা কেমন হলো।ধন্যবাদ)