#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(১২)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
ইসরাক এর ছুটির মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। এদিকে তাকিয়ার অবস্থা সূচনীয়।কি করবে ভেবে পায় না ইসরাক।
রুমের ছোট বেলকনির কাম ছাদে সারাক্ষণ বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে তাকিয়া। কি এমন আকাশ বাতাস চিন্তা ভাবনায় মশগুল থাকে একমাত্র সেই জানে। ইসরাক পাশে বসে থেকে কফি গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“সবুজিনী?
তাকিয়া ইসরাক এর দিকে তাকায়। ইসরাক ইশারায় কফি গ্লাস হাতে নিতে বলে। কিন্তু তাকিয়ার কোন হেলদোল নেই মাথা ঘুরিয়ে আবার দৃষ্টি আকাশের পানে নিবদ্ধ করলো।এতে খুব ব্যাথিত হয় ইসরাক। দুটো কফির কাপ একপাশে রেখে দেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও আকাশের প্রতিবিম্ব দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মেঘ গুলো পেঁজা তুলোর মত উড়ে যাচ্ছে দেখতে মন্দ লাগছে না।সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালে দেখতে পাওয়া যায়।
এমনি করে ইসরাক এর ছুটির দিন গুলো শেষ হয়ে গেল। এবার যে যেতেই হবে।
যাওয়ার সময় আলিয়াকে পইপই করে বলে,তাকিয়ার খেয়াল রাখার জন্য।আর তাদের কে আস্বাস দিয়ে বললো,আর কোন বখা’টে ছেলেরা তাদের উত্তোক্ত করবে না।যদি কোন সমস্যা হয় তবে তার বন্ধু ফাহাদ কে যেন জানায়।
শেষ বারের মত তাকিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলো রুমের ছোট বেলকনির কাম ছাদে বসে আছে। কাছে গিয়ে বললো,
-“সবুজিনী আমি চলে যাচ্ছি! এবারো নিশ্চুপ হয়ে থাকবে?
তাকিয়ার থেকে কোন সারা না পেয়ে ইসরাক হাঁটু গেড়ে বসে তাকিয়ার কোলে মাথা রেখে তার ডান হাতটা মুঠো করে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয় ইসরাক। এতে করে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল তাকিয়া কিন্তু কিছু বললো না। ইসরাক দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-“সবুজিনী?ভুলোনা আমায়!
_________
এর সপ্তাহ খানেক পর তাকিয়ার মা কাকলী
তাকিয়ার খোঁজ পেয়ে যান!তার পোষা গু’ন্ডা গুলো কে নিয়ে এসে তাকিয়া কে নিয়ে যায়! আলিয়া তাদের ক্ষমতার সাথে পেরে উঠেনা, তবে ফাহাদ কে খবর দেয়। ফাহাদ এখানে পৌঁছানোর আগেই কাকলী তাকিয়া কে নিয়ে চলে যায়।
সবটা জেনে খুবই ব্যাথিত হয় ইসরাক।আশা ছেড়ে দেয় তাকিয়া কে সারা জীবন পাশে ছায়া সঙ্গিনী হিসেবে পাওয়ার।
এর মাস খানেক পর তাকিয়ার বিয়ে অন্যত্র ঠিক করে কাকলী! বিয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন তোরজোর চলে,এসব দেখতে দেখতে তাকিয়ার হুঁশ ফিরে আসে। ইসরাক কে খুব মিস করতে শুরু করে তাকিয়া।কি করবে দিক দিশা খুঁজে পায় না সে। বাবাকে বলে সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে ইসরাক কোন কাজে ঢাকার বাহিরে আছে। তারপর অনেক ভেবে চিন্তে সুমাইয়ার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে পালানোর প্লান করে।
তারপরের ঘটনা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন।
______
“বর্তমান”,
সূর্য মামা যখন পশ্চিম দিগন্তে পাড়ি জমায় তখন আরিসা আর আনিসা গ্রাম ঘুরতে বের হয় তাকিয়া কে নিয়ে। ঘরের চৌকাঠে পা রাখার সময় সাহারা বললেন,
-“এ বাড়ির বউ,মেয়েরা বে-পর্দা ঘুরে বেড়ায় না।
এ কথা বলে চলে গেলেন তিনি। তাকিয়া আবেগে আপ্লুত হয়ে সুতি কাপড়ের ওরনাটা পুরো শরীর জরিয়ে ঢেকে নেয়। তাকিয়া বুঝতে পারে সাহারা’র শাসনের মাঝেও এক রকম স্নেহ লুকায়িত ছিল।যা ভার্জ্যিক দিক থেকে শাসন মনে হলেও আসলে তা নয়। সাহারা আর যাই হোক এটা মানেন যে তাকিয়া এ বাড়ির বউ।এই ভেবেই তাকিয়া মুচকি হেসে আলহামদুলিল্লাহ বলে।
বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা কাঁচা রাস্তা ধরে জমির সরু রাস্তায় নেমে সবুজ ফসলের পাশ ঘেঁষে হাঁটে। কিছুদূর যেতে আখ চাষ করা কয়েকটি জমির দেখা মিলে। জীবনের এই প্রথম আখ চাষ দেখতে পায় তাকিয়া। খুশিতে আটখানা হয়ে গাছ নাড়াচাড়া করে সে। ইচ্ছে করছে এখান থেকে নিয়ে খাওয়ার জন্য। কিন্তু এটাতো চুরি করা হবে।কোরআন শরিফে বর্ণিত হয়েছে, চোর পুরুষ বা নারী হোক, তাদের হাত কে’টে দেবে। এটা তাদের পাপের শা’স্তি। এ দণ্ড আল্লাহর পক্ষ থেকে
নির্ধারিত।[১]
তাই এই ইচ্ছেকে মাটি চাপা দিয়ে সামনে এগিয়ে যায় তারা।সড়ক দিয়ে সামনে বেরি বাঁধের পাকা রাস্তায় উঠে তারা। মাঝে মাঝে দুই একটা অটো এবং কার যেতে দেখা যায়। রাস্তার দুই পাশে সবুজ বিভিন্ন গাছে ফুল ফুটে আছে।ঘাস ফুলের মাঝেও সৌন্দর্য থাকে যা সবার নজরে পড়ে না। একমাত্র প্রকৃতি প্রেমিকদের নজরে পড়ে।
তাকিয়া সাদা রঙের এক থোকা ঘাস ফুল হাতে নিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মুচকি হেসে বলে, আল্লাহ তা’আলার কি অপরূপ সৃষ্টি “সুবহান আল্লাহ”।
আরিসা বললো,
-“ভাবীমণি তুমি আগে কখনো গ্রামে আসোনি?
-“না গো সেই সৌভাগ্য হয়নি কখনো।জানো আমি ভিশন খুশি এখানে আসতে পেরে।
-“সে তোমাকে দেখেই বুঝেছি।
রাস্তার পূর্ব পাশে নদী বয়ে গেছে। তাকিয়া বললো,
-“চলো না একটু নদীর কাছে যাই?
আরিসা আর আনিসা সায় দিয়ে বললো,-“চলো।
তারপর তারা উঁচু রাস্তা থেকে খুব সাবধানে ধীরে ধীরে একে অপরের হাত ধরে নামে।আরিসা খানিকটা পিছলে পড়ে যেতে নিলে আনিসা ধরে সামলে নিল। তারপর নদীর পানি স্পর্শ করে সেই কি খুশি তাকিয়া।বলে বোঝানোর মতো না। তারপর রাস্তায় উঠে
তিনজন হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে আসে। সামনে কিছু লোকজন দেখতে পায় তাকিয়া,দেখে বললো ঐখানে কি করেন লোকজন? তাঁবু বানানো হয়েছে দেখা যাচ্ছে।
আনিসা বললো,
-“শুনেছিলাম আমাদের গ্রামে আর্মিরা এসেছেন তারা নাকি কিসব হাবিজাবি কাজ করেন আমি সঠিক জানি না ভাবীমণি।
এ কথা শুনে তাকিয়া বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।আর্মিদের দেখার জন্য দৌড়ে ছুটে!
আকস্মিক তাকিয়ার এহেন ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় আরিসা আর আনিসা।তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকিয়া অটোরিক্সার সাথে লেগে আহত হয়! মাথায় চোট পেয়ে র’ক্তক্ষরণ শুরু হয়! আশেপাশে কোনো মানুষজন নেই। অটোরিকশা চালক ভয়ে টটস্থ হয়ে আছে।আরিসা ধমকে বললো,
-“কি দেখছেন আপনি? তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলুন।
মূলত অটো চালকের কোন দোষ নেই এখানে। তাকিয়া হঠাৎ গাড়ির সামনে চলে আসায় অটো চালক ব্রেক করেও শেষ রক্ষা করতে পারেন নাই। তবুও ভ’য়ে কাঁপছেন তিনি।আনিসা বললো,
-“মামা যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন তাড়াতাড়ি চলুন। না হয় ভালো মন্দ কিছু হয়ে যেতে পারে।
আনিসা জানে এখন রিক্সা চালকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা চলবে না। না হয় তাকিয়া কে হসপিটালে নেওয়া সম্ভব হবে না। গ্রামের এই বেরি বাঁধের ছোট রাস্তায় গাড়ি চলাচল তুলনামূলক কম হয়।
অতঃপর,ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানে তাকিয়া কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডাক্তার ইনজে’কশন পুশ করে সেলাই করে দিলেন। দুইটা সেলাই লেগেছে। তাকিয়া ভ’য়ে পেয়ে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে! এখানো জ্ঞান ফিরেনি তার।ডাক্তার বলেছেন খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে ইনশা আল্লাহ।
এতক্ষণে বাসায় খবর পৌঁছানো হয়ে গেছে। সাহারা,নিলুফা আর ইসহাক ব্যাপারি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন হসপিটালে। সবাই আরিসা আর আনিসা কে ইচ্ছে মতো বকে দিয়েছেন। এতো দূর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য।
তারা হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বি’শ মিনিটের রাস্তায় চলে যায়। বড়দের ভাস্যমতে এতো দূর অথবা পাকা রাস্তায় না গেলে এরকম কিছুই হতো না।
_____
অধরপল্লব দুটো খুলে উপরে সিলিং ফ্যানের দিকে নজর পরে তাকিয়ার। বিরতিহীন ঘুরছে ফ্যানটা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনে মনে অবলোকন করলো তার সাথে ঘন্টাখানেক আগে ঠিক কি হয়েছে?মন হতে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে আশেপাশে যাদের দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না!ভ’য়ে টটস্থ হয়ে
দিল এক চিৎকার! চিৎকার দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,
-“আমি কিছু করিনি!আপনারা আমাকে ধরে নিয়ে যাবেন না প্লিজ! আমি জেলখানায় বন্দী হয়ে থাকতে পারবো না!
একজন উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,
-” ম্যাম আর ইউ ওকে?
আমরা আপনার কোন ক্ষ’তি করবো না,ট্রাস্ট মি।
চারজন মেয়ে আর্মি তাকিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! তাকিয়া এই প্রথম খুব কাছ থেকে আর্মিদের দেখছে তাই ভ’য়ে ভীত হয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল তার।তখনি রুমে প্রবেশ করে ইসরাক! তাকিয়া দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরে কেঁদে ওঠে। ইসরাক বললো,
-“যাদের দেখতে গিয়ে আহত হয়ে হসপিটালে এলে! এখন ভয় পাচ্ছেন কেন শুনি?
তাকিয়া থেমে থেমে বললো,
-“তাদের দূর থেকেই দেখতে শোভা পায় কাছ থেকে ভ’য় হয়!
ইসরাক দুষ্টু হেসে বললো,
-“তাহলে তো আমাকেও দূরে সরে যেতে হয়!…
_______
রেফারেন্স:
[১]সূরা মাইদাহ,সূরা নং-৪,আয়াত নং-৩৭।
______
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।