আমার_একটাই_যে_তুই এক্সট্রা পর্ব

0
5704

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#এক্সট্রা_পর্ব

ইউসুফ ভাইয়ার সাথে ছাদে বসে আছি। আমার কান্না না থামছে না দেখে তিনি হুট করেই কোলে নিয়ে এলেন ছাদে। ঠিক সেই জায়গায় যেখানে উনি বসে গান শুনিয়েছেন আমাকে। ইন্টারেস্টিং বিষয় আজকেও পূর্ণ রূপালী থালা আমাদের সঙ্গ দিতে আসচ্ছে। সাথে আছে চিক চিক করা হাজারো তারা। আমি এসব লক্ষ করছি তখনি কানে ভেসে আসলো গিটারের শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে চমকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আমার নেতা সাহেবকে। গিটার কোলে জড়িয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসি। স্ব স্ব বাতাসে এলো মলো ভাবে এদিক ওদিক ছুটছে তার অবাধ্য চুল গুলো। চাঁদের রূপালী আলোয় দেখতে আরো যেন মায়াবী লাগচ্ছে তাকে। আজ কতদিন পর তার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুঁটেছে তা দেখেই খুশিতে চোখের জল গড়িয়ে পড়লো আমার। ইউসুফ ভাই গিটারে সুর তুলল। আমি মাথা নত করে চুপটি করে উপলব্ধি করছি তার গান।

–” তুমি রোদেলা অরণ্যে, যেন এক মায়া হরিণ
তুমি তীব্র খরার পরেই, যেন হৃদয় বৃষ্টি দিন,
যাদুকরী এক ছোঁয়ায়, তুমি বদলে দেবে আমায়,
আমি চোখ বুজে দেখি, তুমি এলে পায়ে পায়।
ভাবিনি এত সহসায় পূর্ণ হব ভালবাসায়।”

তার গানের মাঝে “ভালবাসা ” কথাটি শুনে পূর্ণ দৃষ্টি মেলা তাকালাম। তিনি এক পলকে চেয়ে আছেন আমার দিক।তা দেখে লাজুক হাসতেই তিনি পরের লাইনি গাইলেন।

–” তুমি খুব চাওয়ার পরেই যেন হাসলে এক ঝলক,
আমি চাইনা কিছুই তো আর, শুধু চেয়ে থাকি অপলক অবাক এক প্রভায়, কাছে টেনেছ আমায়
আমি রই যে ভাষাহীন সেই অদ্ভুত মমতায়,”

আমি লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। তা দেখে তিনি দুষ্ট-মিষ্টি হাসচ্ছেন। যা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে তাই লজ্জা ভুলেই নির্লজ্জ ভাবে চেয়ে রইলাম তার দিক। তার সুন্দর বিড়াল চোখ গুলোর দিক। তার আঁকা-বাঁকা দাঁত আর টোল পড়া গলা আর সেই থুতনির খাঁজের দিক।

–“তুমি সাত সাগর দূরে, যেন চমকে দেওয়া কাহিনী।
আমি ক্ষুদ্র প্রজা যে দেশের, তুমি সেই দেশের রানী।
মিষ্টি সুখের আশায়, খুজে নেবে এই আমায়,
আমি প্রাণপনে ভাবি, তুমি আমার সীমানায়।”

গান শেষ হতেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো শিশির কণার মতো টপ টপ করে। ইউসুফ ভাই গিটার সাইডে রেখে কাছে টেনে নিলেন আমায়। এতটা কাছে যে তার নিশ্বাস আর আমার নিশ্বাস মিলে এক হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আলো উনি অপলক আমার দিক তার সেই মহনীয় দৃষ্টি মেলে ধরেছেন। যেখানে আছে আজ হাজারো ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, আকুতি, মিনতি, অবৈধ অনেক আবদার। নিজের মাঝে হাজার যুদ্ধ করে এই অনুভূতি গুলো দাবিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করছেন তিনি।ইউসুফ ভাই তার সেই চোখ দুটি বন্ধ করে ফেললেন। আমার কঁপালে তার ভেজা ঠোঁটের নরম স্পর্শ। যাতে আমিও আবেশে বন্ধ করে নেই আমার চোখ গুলোও। ইউসুফ ভাই চুমু খেয়ে কঁপালে কঁপাল ঠেকিয়ে মৃদু সুরে বললেন,,

–“বাবুইপাখি খুব শীঘ্রই এক হবো আমরা। একে ওপরে হাতে হাত রেখে তোমার আমার দেখা হাজারো স্বপ্ন পূরণ করবো! নিজেদের ছোট একটি নীড় বানাবো! যেখানে থাকবে না কোনো চোখের পানি! থাকবে না কোনো বিষাদের চিন্হ। আর এটাই হবে তবমার ভাল রেজাল্টের উপহার।”

বলে মৃদু হাসলেন। চকিতে চোখ মেলে তাকালাম আমি তিনি হাসচ্ছেন। আর আমার ঠোটের কোনেও হাসি। আর চোখের কোন বেয়ে চলছে অজস্রধারা। ইউসুফ ভাই আমার চোখ মুছে দিলেন। গলা থেকে কানের পিছনে হাত রেখে ফিসফিস করে বললেন,,

–” আই লাভ ইউ বাবুইপাখি! ”

আমি তার দিক কেঁদে কেঁদেই বললাম,,

–” আই হেট ইউ! আই হেট ইউ! হেট ইউ লট!

বলে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আর ইউসুফ ভাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেসে যাচ্ছেন। এ যে শান্তির হাসি!

চলবে,