আমার_একটাই_যে_তুই পর্ব-২৯

0
5423

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_২৯

আমি কি করছি?
কেনো পড়ে আছি আমি এ বাড়িতে?
কিসের আসায় পড়ে আছি?
এতসব অত্যাচার কেন সহ্য করছি?
এখানেতো আমার আপন কেউ নেই!
তাহলে? কিসের আসায় পড়ে আছি?
শুধু ভালবাসার টানে? নাকি এই মানুষ টাকে কাছে পাওয়ার আশায়! তাকে বিয়ে করে সারা জীবন আপন করে নিজের সব দুঃখ ভুলে এক বুক ভালবাসা উজার করে তাকে আপন করে নেওয়ার লোভে? কি চাই আমি?

আমার জন্য দিন দিন মামি পাগলের মতো আচরণ করছে। রাত-দিন অভিশাপ করছেন! গালা গাল দিচ্ছেন! এই তো আজ দুপুরের ঘটনা। সেই ঘটনার পর থেকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি আমি! আর মনের মাঝে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ইউসুফ ভাই আমাকে রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেন মেডিকেলে পড়ার জন্য কিছুদিন হলো। আজ ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরি। নিজের ঘরে যাওয়ার সময় বড় মামির ঘর থেকে কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ পাই। বাসায় তখন কেউ ছিল না। আমি তাঁর রুমে গেলাম। মামি পানি নিয়ার চেষ্টা করছেন হয়তো তৃষ্ণার্ত সে! গ্লাসটি নিচে পরে ভেঙ্গে গেছে। মামা মারা যাওয়ার পর থেকে মামি বিছানা নিয়ে ফেলেছেন। আমি তার কাছে যেয়ে ক্ষীণ স্বরে বললাম,,

–“মামি কিছু লাগবে?”

মামি কিছু বললেন না তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলেন।

আমি কাছে গিয়ে তাকে পানি দিলাম। তিনি খেলেন না
মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে চেয়ে রইলাম। আমি নিরবে ছোট শ্বাস ফেলে পানি রেখে চলে যেতে নিতেই তিনি শক্ত কন্ঠে বললেন,,

–“তুই কিভাবে ভাবলী তোর হাতের পানি আমি খাবো? তুই লোভী, তোর মতো লোভী মানুষ আর একটা আমি দেখিনি। এতো লোভ তোর আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাষ! নিজের রূপ দেখিয়ে আমার ছেলেকে বস করেছিস। এত রূপ দেখানের শখ তোর পতিতালয় যা। রাত দিন রূপ দেখিয়ে ইনকাম করতে পাড়বি। না তুই তাদের থেকে নিকৃষ্ট। তার নিজের শরীর বেঁচে তো খায়। কিন্তু তুই? অন্যের ঘাড়ে বসে খেয়ে যাচ্ছিস। তাকেও বস করেছিস। আমার সন্তানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছিস।আমাদের জীবন জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়েছিস তুই।আমি তোকে অভিশাপ করি তোর জায়গা নরকেও না হয়।”

একটানে কথা বলে মামি হাপিয়ে উঠলেন। তার সামনে আমি দাঁড়িয়ে কান্না করতে লাগলাম। এতটাই খারাপ আমি! মামির চোখে বিষে পরিণত হয়ে গেছি আমি? দৌড়ে ঘরে চলে আসলাম। এ বাসায় আর থাকতে পারবো না আমি! যেভাবেই হোক বের হতে হবে আমাকে। এসব ভাবচ্ছি।

মধ্যরাত ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলেছি। চলে যাবো। আর সহ্য হয় না। কেন এমন হচ্ছে? একটি হাসি খুশি পরিবার এভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে! শুধু আমার জন্য? এইতো রাতের খাবারের টেবিলে খাবারে জন্য মাত্র বসেছিলাম আমরা। আমি বড় মামা মারা যাবার পর থেকে আলাদা রুমে খেতাম। আজ ইউসুফ ভাইয়ার জেদের কারণে নিজে যেতে হয় খেতে। তখনি শুরু নানুমা, মিশুপির কটু কথা।

–” এ মেয়ে এখানে কি করছে?”

–” আমাদের সাথে খাবে আজ থেকে!”

–” ইউসুফ দিন দিন তুমি বাড়াবাড়ি বেশি করছো না ওকে নিয়ে?”

–” বাড়াবাড়ির কি আছে? সবাই এখানে খাচ্ছে তো ও কেন একা খাবে!”

–“ও এখানে খেলে আমি খাবো না ভাইয়া!” খাবার টেবিল ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল মিশুপি।

নানুমাও রেগে আগুন। এক কথা দু কথায় ঝগড়া শুরু হলো। ইউসুফ রেগে মেগে বেড়িয়ে গেলেন। আর নানু মা আর মিশুপুর কথার বর্ষণ শুরু যা একে বাড়ে গিথে গেল।এবারের কথা গুলো ছিল পুরোটা আমার মাকে নিয়ে। যা মানতে আর পাড়লাম না। সটান হয়ে দাড়িয়ে সেখানেই ধাতস্থ করে ফেললাম। এখানে আর না।

______________________________________________

বাসার সবাই ঘুম। এখন বাসা থেকে বের হওয়া উচিত এভেবে পা বাড়াতেই ইউসুফ ভাই ঢুকলো আমার রুমে ঢুলতে ঢুলতে। তাকে দেখে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। তিনি আমার সামনে দাঁড়ালেন। তার রক্তবর্ণ চোখ, মুখ দেখে হু হু করে উঠলো আমার বুক। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন। আর বার বার বলতে লাগলেন,,

–” বাবুইপাখি! আমি খুনি! আমার বাবার খুনি! আমার জন্য আজ বাবা নেই! আমি দোষী। তোমার, মার, মিশুর, বাবার! না আমি যেতাম না এ হতো! আমি যে খুব খারাপ ছেলে! খুব খারাপ!”

আর্তনাদ করতে লাগলেন ইউসুফ ভাই। তার কান্না আমার কলিজা ফেঁটে যাচ্ছে।কারণ মামা মারা যাওয়ার পর থেকে এ ব্যক্তিটির চোখে এক ফুঁটা পানি পড়তে আমি দেখিনি। আর আজ ৬ মাস ব্যক্তিটিকে কান্না করতে দেখিনি। আর আজ তার চোখে পানি। ধীরে ধীরে ভর ছেড়ে দিলেন আমার উপর। কথা জড়িয়ে আসতে লাগলো তার। তাকে আমার বিছানায় শুয়ে দিলাম।ইউসুফ ভাই আমার হাত তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন। আর ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলেন। বিড়বিড় করতে লাগলেন,,

–‘” আমি খুনি! আমি বাবাকে মেরেছি! আমার জন্য সব কিছু। আমি খুনি। বাবুইপাখি আমি খুনি!”

বলতে বলতে তিনি চোখ বুঝে নিলেন। আমি আজ তাকে ছেড়ে যাচ্ছি এ কথা জানার পর হয়তো আর ক্ষমা করবেন না আমায়। কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে। উনার ভালোর জন্য। সবার ভালোর জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে তার হাত থেকে আমার হাত ছাঁড়িয়ে উঠে পড়লাম। সামনের দিক পা বাড়াতেই আমার ওড়নায় টান পড়ে। ভয় পেয়ে যাই আমি! ইউসুফ ভাই উঠে গেল না তো? ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি ইউসুফ ভাই শক্ত করে মুঠ করে আছে ওড়নার কোনা। আমি হালকা ঝুকে ওড়না ছাড়াতেই শুনতে পেলাম তার বিড় বিড় করে বলে কথা,,

–” বাবুইপাখি আমাকে ছেড়ে যেও না। কখনো না। মরে যাবো আমি! বাবার মতো তুমিও হারিও না।”

আমি কাঁদতে লাগলাম। মুখে কাপড় গুঁজে। আরেকটু ঝুকেঁ চুমু খেলাম ইউসুফ ভাইয়ার কঁপালে।কান্না জড়িত কন্ঠে বললাম,,

–” ভাল থাকবেন ইউসুফ! জানি না কিভাবে থাকবো। কিন্তু সবার ভালোর জন্য এটা করতেই হলো। তাই বলে ভাববেন না আমি আপনাকে ভালবাসি না। আমি অনেক অনেক ভালবাসি। আসি..!”

কথা গুলো বলতেই কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো। শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে তার হাতে আমার আঁকড়ে রাখা ওড়না তার হাতে রেখে দিলাম। অন্য হাতে একটি কাগজ রাখলাম। শেষবার সেই মুখ খানা দেখে বেড়িয়ে চলে এলাম স্বার্থপরের মতো বাসা থেকে। বার বার চোখ ভিজে উঠেছে। বাড়ির বাহিরে এসে বৃষ্টি বিলাস বাড়িটি আমার দেখে নিলাম ছল ছল চোখে। পা বাড়ালান অজানা-অচেনা কোনো গন্তব্যে।

চলবে,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এখন কি হবে? কুহু তো চলে গেল! ইউসুফ কি করবে?