আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-৪১

0
1669

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৪১]

নিস্তব্ধ রাত! চারপাশ একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন। দূর আকাশে অর্ধ গোলাকার চাঁদটার আলোতে ধরনী আলোকিত। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের কর্কষ কণ্ঠস্বর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দের কারণে কান অব্দি পৌছাচ্ছে না। তবুও যেন চিন্তা মাথা থেকে নামছে না। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো দীবা। রাত প্রায় পৌনে দুইটা। কিন্তু রুম ফাঁকা কেন? রুমের আনাচে কানাচে, ওয়াশরুম অব্দি খোঁজ চালালো দীবা। কিন্তু কোথাও আবরারকে দেখতে পেলো না। এমনিতেই নুরার এমন কান্ড, তার উপর আবার এতো রাতে আবরার গায়েব। সব মিলিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় দীবা। মোবাইলটাও রুমে ফেলে এসেছে। নাহলে কল দিয়ে জেনে নিতে পারতো। কিন্তু গেলো কোথায় লোকটা?ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো দীবা। ঘড়ি ধরে সর্বোচ্চ দশ মিনিট অপেক্ষার পর আবরারের আগমন ঘটলো। দুশ্চিন্তা শেষে খুশি হওয়ার কথা ছিলো দীবার। কিন্তু তার বদলে আবরারের অবস্থা দেখে বিস্মিত হলো। বৃষ্টিতে ভিজে একদম চুপসে গেছে সে। চুল দিয়ে টুপটাপ পানির ফোটা পরছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল। দীবার মনে পরলো সেই দিনের রাতের কথা। যেদিন আবরার প্রথম তার রুমে এসেছিলো। তাও আবার বৃষ্টিতে ভিজে। জ্বর আসলো নাকি লোকটার? কথাটা মাথায় আসতেই অস্থির হয়ে গেলো দীবা। দ্রুত পায়ে আবরারের দিকে এগিয়ে এসে কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বললো, ‘আবার বৃষ্টি ভিজেছেন কেন আপনি?’

আড়ষ্ট চোখে দীবার দিকে তাকালো আবরার। চেহারা তার একদম মলিন। প্রত্যুত্তর করলো না একদম। দীবা আবরারের মলিন মুখশ্রীর দিকে ধ্যান দিলো না আপাতত। জলদি ব্যাগ থেকে আবরারের টিশার্ট প্যান্ট বের করলো। ওয়াশরুমের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো দ্রুত চেঞ্জ করে নিতে। আবরার বাধ্য ছেলের মতো তাই করলো। কাপড় বদলে রুমে আসলে দীবা তাকে বিছানায় বসালো। তারপর আবরারের সামনে দাঁড়িয়ে যত্ন সহকারে ভিজা চুল গুলো টাওয়াল দিয়ে মুছতে লাগলো। বৃষ্টি ভেজার অপরাধে রেগে শাসন করতে লাগলো, ‘আপনি কি বাচ্চা? বৃষ্টি ভিজতে গেলেন কেন? এখন যদি জ্বর আসে কি করবেন? আশেপাশে হাসপাতাল আছে কিনা তাও জানি না। ঘুরতে এসে হুট করে জ্বর বাধালে…’

দীবার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আবরার দীবার কোমড়ে দুই হাত রেখে দীবাকে জড়িয়ে ধরলো। আবরারের ভেজা চুল গুলোর কারণে দীবার পেটের কাপড়ের অংশ বিশেষ ভিজে চুপসে গেছে। আবরার দীবাকে জড়িয়ে ধরেই বললো, ‘আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি দীবা।”

আলতো ভাবে হাসলো দীবা। নিজের থেকে আবরারকে সরাতে সরাতে বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। এবার সোজা হয়ে বসুন চুল গুলো মুছি।’

কথাটা মজা করে বলেছিলো দীবা। কিন্তু আবরার ভাবলো হয়তো দীবা রাজের মতোই তার ভালোবাসাকে মোহ ভাবছে। তাই দীবাকে ছেড়ে চটজলদি উঠে দাঁড়ালো। অস্থির হয়ে দীবার দুই হাত ধরে বলে উঠলো, ‘বিশ্বাস করো দীবা। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি। আমি তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পরিনি। জানি বিয়ের দিন রাতে আমি তোমাকে ফেলে গিয়েছিলাম। তার জন্য তোমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। সেদিন আমি ভুল ছিলাম। আব্বুর উপর রেগে ছিলাম তাই মেনে নিতে পারি নি। তোমাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগলেও এখন সত্যি মন থেকেই ভালোবাসি। তোমার এই সৌন্দর্য না থাকলেও আমি তোমাকে ভালোবাসবো সারাজীবন!’

আবরারের মাঝে এমন অস্থিরতা দেখে হতবাক হয়ে গেলো। কি বলবে বুঝে আসলো না তার। মনে হলো আজকের রাতটাই কেবল বিস্মৃত হওয়ার রাত। প্রথমে নুরার ব্যবহার, তারপর আবরারের এমন অদ্ভুত আচরণ। তাই হতভম্ব হয়ে চুপচাপ ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। দীবাকে নিশ্চুপ দেখে আবরার আরো ভেঙ্গে পরলো। দীবার গালে হাত রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘বিশ্বাস করছো না আমার কথা? তোমরা এমন কেন বলো তো? মানছি সেদিন আব্বুর সাথে রেগে ছিলাম তাই তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছি। ফিরে এসেছি তো। সব মেনে নিয়েছি। সরি বলছি। আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। ভালোবাসি তোমাকে বিশ্বাস করো। আমার ভালোবাসা তোমার সৌন্দর্যের কারণে না। আমি তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পরিনি। বিশ্বাস করো দীবা। কি করলে বিশ্বাস করবে? টিএনেজারের মতো হাত কাটবো?”

আবরারের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। এই বুঝি চোখের কোটড় থেকে জলের বিন্দু কণা গাল বেয়ে পরবে। তার এমন অস্বাভাবিক আচরনের কারণে ভয় পেয়ে গেলো দীবা। অস্থির হয়ে আবরারের কপাল, গাল ও গলা ছুঁয়ে দিতে দিতে বললো, ‘জ্বর উঠেছে আপনার? কিসব আবুলতাবুল বলছেন। কি হয়েছে?’

দীবার কথার গুরুত্ব না দিয়ে আবরার নিজের মতো আবারো বলে উঠলো, ‘বলো বিশ্বাস করো না আমাকে?’

‘হ্যাঁ! বিশ্বাস করি আপনাকে। অনেক বেশি বিশ্বাস করি। আমি জানি আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।’

আবরার দীবাকে ঝাপটে ধরলো। বাচ্চাদের মতো এমন আচরনে দীবা বিস্মিত। আবরারকে শান্ত করার উপায় খুঁজলো। ঘড়িতে তো অনেক রাত। ঘুমালে হয়তো শান্ত হবে। তাই আর বিলম্ব করলো না দীবা। আবরারকে বিছানায় নিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরলো। আবরার দীবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। প্রথমের মতো আবারো বিলাপ করতে লাগলো, ‘আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি দীবা। আমি তোমার মোহে পরিনি।’

দীবা আবরারের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত করতে বললো, ‘আমি জানি তো। অস্থির হচ্ছেন কেন? বাচ্চাদের মতো কান্না করা থামিয়ে এবার ঘুমান।’

‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না?’

‘হ্যাঁ ভালোবাসি তো। অনেক বেশি ভালোবাসি।’

বলেই আবরারের কপালে গভীর একটা চুমু খেলো দীবা। অশান্ত আবরারের মন এবার শান্ত হলো। হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া লাগতেই শান্তিতে চোখ বন্ধ করলো। দীবাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরেই ঘুমের দেশে পারি জমালো। ফুঁশ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো দীবা। হঠাৎ দুই ভাই বোনের কি হয়েছে? কিছু না করেও নুরার থা’প্প’ড় খেতে হয়েছে তার। তাকে থা’প্প’ড় দেওয়ার পরেও নুরা নিজে কাদঁলো। আচ্ছা নুরা কি হারিয়েছে? রিমি তো শুধু তার ব্রেসলেট নিয়েছে তারই জন্মদিনে গিফট দিবে ভেবে। এছাড়া কোনো কিছুই তিনজনের অজানা নয়। তাহলে? নুরা কি কিছু লুকাচ্ছে তাদের থেকে? লুকিয়ে থাকলে সেটা কি? অতিরিক্ত চিন্তা করতে করতে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো দীবা।

জাগ্রত রইলো নুরা। কান্না তার বাধা মানছে না। ফ্লোরে বসে বিছানায় হেলান দিয়ে কাঁদছে। রাজের মুখ থেকে এমন কিছু শুনতে পারবে তার কল্পনার বাহিরে ছিলো। প্রথমে ক্রাশ ক্রাশ বলে চেঁচালেও কখন যে ক্রাশটাই সিরিয়াস হয়ে গেছে সেটা তার নিজেরও অজানা। রাজকে নিয়ে মনে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। অনুভূতির সুপ্ত কোণে ভালোবাসার জায়গা দিয়েছিল। কিন্তু তার সঙ্গে এমন হলো কেন? দীবাকে এতো আগে থেকে ভালোবাসে স্যার? কিন্তু দীবা তো বিবাহিত। তার ভাইয়ের বউ। আর দীবাকে সে তার নিজের বোনের মতোই মনে করে। তখন রাগের বশে কেন দীবাকে থাপ্পড় দিল সে? রাজ যদি দীবাকে ভালোবাসে তাহলে তো দীবার কোনো দোষ নেই। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো নুরা। চুল খামচে ধরে কাঁদতে লাগলো আবারো। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে। ফরশা মুখও রক্তিম। বারবার নাক টানছে। এতো কষ্ট কি শুধু তার জন্যই লিখা ছিল? কি এমন হতো যদি রাজ কাউ কে না ভালোবাসতো। তাহলে হয়তো নুরা রাজকে নিজের করতে পারতো না। কিন্তু এখন? আর ভাবতে পারলো না রিমি। মাথা ব্যাথা দ্বিগুণ হয়ে গেলো তার। চোখ দুটো ঝাপসা। চোখের পানি মুছে ওয়াশরুম থেকে চোখেমুখে পানি দিয়ে আসলো। টাওয়ার দিয়ে মুখ মুছার সময় আবরারকে বলা রাজের প্রতিটা কথা পূর্ণরায় মনে পরলো। সকচকিত হলো তার মস্তিষ্ক। রাজ কি বললো তখন? দীবা বিবাহিত হওয়ার পরেও দীবাকে ছাড়বে না? কিন্তু এমন তো হতে দেওয়া যাবে না। দীবাকে আরব ভাই ভালোবাসে। দীবাও তাই। মাঝ খানে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে স্যারকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু কিভাবে কি করবে সে? আকাশ সমান চিন্তা মাথায় ঢুকলো তার। চিন্তিত হলো আরব আর দীবাকে নিয়ে। কিভাবে দুইজনের সম্পর্কের মাঝে থেকে রাজ কে সরানো যাবে।
___________________

ভোরের আলো ফুটেছে কেবল। চারপাশ আলোকিত হলেও কোয়াশার কারণে আচ্ছন্ন। হালকা শীত শীত আমেজ চারপাশে। সাদা টপ শার্ট আর জিন্স পরনে তাই শীতের ঠান্ডা ভাবটা শরিরে খুব সহজেই লাগলো। সারারাত ভালো ঘুম হয়নি তার। তাই মাথা ঝিমঝিম করছে। ভোর হতে না হতেই রাইমার রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমের সামনে এসেছিলো। দরজার ফাঁকা অংশ দিয়ে দেখেছে নুরা ঘুমিয়ে আছে তাই ডাক দেয়নি। দীবাও আরব ভাইয়ের রুমে। তাই কাউকে বিরক্ত না করে নিজেই একা চা বাগানে ঘুরতে এসেছে রিমি। মাথায় নুরাকে নিয়ে আকাশ সমান চিন্তা। মন ভালো করার জন্য-ই এখানে আসা। চারপাশে চা পাতার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগুচ্ছে। তখুনি চা গাছের পাশে একটা ইয়েলো কালার বেলুন নজরে আসলো তার। বেলুনটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ছোট একটা তির চিহ্ন দেওয়া। অর্থাৎ তাকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে বলা হয়েছে। রিমি এমনিতেও কৌতুহল প্রেমী। তাই মনে আগ্রহ জন্মালো। এখানে বেলূণোটা রাখলো কে? বেলুনের সূত্র ধরে সামনে এগুলে আরো একটা বেলুন পেলো। যার মাঝে একটা চিরকুট আটকানো। রিমি চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে দেখলো ইংলিশে বড় হাতের অক্ষরে লিখা,

‘AREKTO SAMNE ASO PLEASE.’

ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো রিমি। সন্দেহ হলো কিছুটা। চিরকুট অনুযায়ী সামনের দিকে আগাতেই বিস্মিত হয়ে গেলো রিমি। অবাক চোখে সামনে তাকিয়ে রইলো। চা বাগানের মাঝে ছোট ছোট গাছে বেশ কিছু বড় বেলুন টাঙ্গানো। সেখানে প্রত্যেক টা বেলুনের মাঝে বড় হাতের অক্ষরে লিখা ‘SORRY MY LOVE.’

হেসে ফেললো রিমি। কাজটা যে অভ্রের তা বুঝতে বেশি সময় লাগে নি। বেলুন গুলোর মাঝে একটা হলুদ গোলাপ ফুল আছে। মিলি তড়িঘড়ি করে গোলাপটা হাতে নিয়ে নিলো। ঠোঁটে তার এখনো প্রাণবন্ত হাসি ঝুলানো। ফুলটা হাতে নিয়ে খুশি মনে দেখতে লাগলো। তখুনি পিছন থেকে কারোর অস্তিত্ব টের পিয়ে ফিরে তাকালো। অভ্রকে দেখে মুখের হাসি আরো চৌড়া হলো তার। অভ্র গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে বললো, ‘এর বেশি কিছু করা সম্ভব না এখানে। অনেক কষ্টে এই কয়টা বেলুন আর হলুদ গোলাপ জোগাড় করেছি। খুশি হয়েছো তো?”

খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলো রিমি, ‘প্রচুর!’

কথাটা বলেই এক দৌড়ে অভ্রের কাছে এসে অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো রিমি। মহারানীর রাগ ভাঙ্গাতে পেরে শান্তি পেলো অভ্রের মন। নিজেও মৃদু হেসে উঠলো। রিমি অভ্রকে ছেড়ে ফুলটা দেখিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমার হলুদ গোলাপ অনেক পছন্দ।’

অভ্র রিমির কোমড়ে দুই হাত রেখে তার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললো, ‘আর আমার তোমাকে।’

মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো রিমি। অভ্র রিমির এক গালে হাত রেখে বললো, ‘ আই লাভ ইউ রিমি।’

রিমি চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিলো, ‘আই লাভ ইউ টু।’
______________________

পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো দীবার। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই আবরারের মায়াবী মুখখানি ভেসে উঠলো সামনে। স্মিতি হাসলো দীবা। এগিয়ে আবরারের কপালে আলতোভাবে চুমু খেলো। খুব সাবধানতার সাথে নিজের থেকে আবরারকে সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। ধীর পায়ের কদম ফেলে নিঃশব্দে দরজা খুলে রুমের বাহিরে চলে আসলো। সারারাত ঘুমায় নি লোকটা। এখন একটু শান্তিতে ঘুমাক। এই ফাঁকে নুরার অবস্থা দেখে আসা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে নুরার রুমের সামনে আসলো। দরজা খুলা দেখে ভিতরে ঢুকলো চুপিচুপি। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো নুরা নেই। এতো সকালে গেল কোথায় মেয়েটা? তখুনি বারান্দা থেকে নুরার কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,

‘আমি এখানে।’

দীবা শব্দহীন পায়ে বারান্দায় গিয়ে নুরার পাশে দাঁড়ালো। নুরা নিশ্চুপ। গায়ে পাতলা শাল পেঁচিয়ে দূর দূরান্তরের পাহাড়ী গাছগাছালি দেখছে এক মনে। বিপরীতে দীবা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে এমন কি অপরাধ করে যে তার উপর নুরা এভাবে রাগতে পারে? কিছুই বুঝে আসলো না দীবার। ফুঁশ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো দীবা। সামনের দিকে তাকিয়ে আলতোভাবে শুধাল, ‘জানিস ছোট থেকেই আমার একটা ভাই বোনের শখ ছিলো। কিন্তু আম্মুর সমস্যার কারণে ডক্টর বলেছে আমার আর ভাইবোন হবে না। মন খারাপ হতো অনেক। আব্বুর সাথে যখন রাউজান ছেড়ে আগ্রাবাদ এসে ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন তোর আর রিমির সাথে পরিচয় হয়েছিলো। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তোরা খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলি আমার। মন থেকে তোদের দুইজন শ’য়’তা’ন কে ভালোবাসি।’

শ’য়’তা’ন বলায় অন্যদিকে তাকিয়ে শব্দ না করে হেসে ফেললো নুরা। আর দীবা নিজের মতোই আপনমনে বলতে লাগলো, ‘তোদের দুইজনের কাছে কখনো কিছু লুকাই নি। যা পেটে ছিলো সব বলে দিয়েছি। আজও বলছি। বিশ্বাস কর বোইন তোর কিছু আমি চুরি করি নাই। এখানে ঘুরতে আসার আগে রিমি তোর প্রিয় ব্রেসলেট চুরি করছে তোরই বার্থডে তে গিফট দিবে বলে। আমি না করেছিলাম। তবুও আমার কথা শুনেনি। মাঝ খান থেকে ফাউ তালে আমি নির্দোষ মাসুম মাইয়া চ/ড় খাইলাম।’

শেষের কথাগুলো কাদুকাদু গলায় বললো দীবা। নুরা হাসি থামাতে পারলো না। মৃদু হেসে দীবার দিকে ফিরে দাঁড়ালো। এক হাত বাড়িয়ে আহ্লাদী গলায় বললো, ‘আহারে, কোন গালে যেন মে’রে’ছিলাম?”

দীবা তার বাম গালটা দেখিয়ে দিলো। নুরা এগিয়ে গালে আলতোভাবে হাত বুলিতে তিনটা চুমু দিয়ে দিলো। আবারো হাত বুলিয়ে বললো, ‘আদর দিয়ে দিলাম। সরি আর হবে না।’

নুরার রাগ ভেঙ্গেছে দেখে দীবা খুশি হলো। খুশিতে তার চোখে পানি জমে গেছে। সে নুরাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘তুই অনেক ভালো নুরা।’

স্মিতি হাসলো নুরা। দীবাকে নিজেও জড়িয়ে ধরে আনমনে শুধাল, ‘তুই নিজেও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অনেক লাকি।’

চলমান…