#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৪২]
গভীর ঘুমে বিভোর থাকা নেত্রপল্লব পিটপিট করে খুললো আবরার। চোখের দৃষ্টি তার ঝাপসা। মাথাটা তীব্র ব্যাথায় ঝিমঝিম করছে। ঘড়িতে সময় কয়টা তার জানা নেই। রুমের পর্দা খোলা। পুরো রুম আলোকিত। চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই দীবাকে পাশে দেখতে পেলো সে। পলকহীন চোখে একমনে দেখতে লাগলো আবরার। দীবার উন্মুক্ত চুল গুলো বাহিরের বাতাসে উড়ছে। স্নিগ্ধ মুখখানি তে এক চিলতে হাসি ফুটে আছে। অনেক পুরাতন একটা বই হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে পড়ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। তার এই মুচকি হাসিতে মুগ্ধ হলো আবরার। নিজেও মৃদু হাসলো। বিছানায় শুয়ে থেকেই দীবাকে অবলোকন করতে লাগলো আবরার।
নুরার সঙ্গে ভোরের সময়টা কাটানোর পর খুবই একা একা লাগছিলো দীবার। রাইমার রুমের দরজা ভিড়ানো ছিলো। ভেবেছিল রিমি ও রাইমা বুঝি ঘুমিয়ে আছে। তাই তাদের বিরক্ত করেনি। আবরারের রুমে এসে দেখলো আবরারও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হতাশ হলো দীবা। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে পুরো রুমের আসবাবপত্র ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। তারপর একটা তক্তার পিছনে খুব পুরনো একটা ডাইরি পেয়েছে। হাতের লিখা প্রতিটা পৃষ্টা। একজন যুবকের প্রেমকাহিনী। সেই যুবকের প্রেমিকার সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলো উল্লেখিত রয়েছে। ঘটনা গুলো পড়তে পড়তেই দীবার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটেছে। অনেকটা সময় বই মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। আবরারকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, ‘গুড মর্নিং!’
আবরার বালিশে মাথা রেখেই স্মিতি হেসে বলল, ‘গুড মর্নিং! কখন ঘুম থেকে উঠেছো? ডাকো নি কেন?’
দীবা ডাইরি টা বন্ধ করে বিছানার পাশে থাকা ছোট কর্ণার টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো, ‘অনেক আগেই। নুরার সাথে ছিলাম এতোক্ষণ। এখনো কেউ উঠেনি। ভালো লাগছে না একা একা।’
শেষের কথাটা মন খারাপ করে ঠোঁট উলটে বললো দীবা। এতোক্ষণে প্রাণ খুলে শব্দ তুলে হাসলো আবরার। একটু এগিয়ে দীবার কোলে মাথা রেখে কোমড় জরিয়ে ধরলো। চোখ বন্ধ করে মৃদু গলায় বলল, ‘এইযে আমি আছি না?’
আবরারের প্রত্যুত্তর শুনে মুচকি হাসলো দীবা। কিন্তু তাকে আবারো ঘুমানোর পায়তারা করতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, ‘এই আর ঘুমাবেন না। অনেক বেলা হয়েছে। সেই কখন নাস্তা দিয়ে গেছে। এতোক্ষনে মনে হয় নাস্তা ঠান্ডা হয়ে গেছে। উঠুন নাস্তা করবো। ক্ষিদে পেয়েছে আমার।’
আবরারকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো দীবা। দেরি হওয়ার পরেও শুয়া থেকে উঠতে চায়নি আবরার। কিন্তু দীবার ক্ষিদে পেয়েছে তাই আলসেমি না করে উঠে পরলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে এক সঙ্গে নাস্তা করতে বসলো।
_____________________
গায়ে পাতলা খয়েরি রঙ্গের একটা শাল জড়িয়ে বারান্দা দিয়ে হাঁটছে নুরা। মনোযোগ তার অন্যত্র। মস্তিষ্কে হাজারো চিন্তা, দুশ্চিন্তা ঘিরে রেখেছে তাকে। মাত্র এক রাতেই চোখ দুটো কালচে হয়ে গেছে। চেহারা একদম মলিন। উষ্কখুষ্ক চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে খুব ভয়ানক ভাবে নুরার মন ভেঙ্গেছে। কিন্তু নুরা নিশ্চুপ। মৌনতার সঙ্গে শাল জড়িয়ে ধরে হাঁটছে। তখুনি নিজের কক্ষ থেকে বেরুলো রাজ। শার্টের হাতা হোল্ড করতে করতে নিচে যাবার জন্য পা বাড়াবে তখন নুরার দিকে দৃষ্টি গেলো তার। প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও পরে নুরার চেহারা দেখে থমকে গেলো। কপাল কুঁচকে এলো তার। মনে প্রশ্ন জাগলো হঠাৎ হাস্যউজ্জ্বল থাকা মেয়েটার চেহারার এই অবস্থা কেন? কারণটা জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো রাজ। তাই দাঁড়িয়ে রইলো নুরার সঙ্গে কথা বলার জন্য।
নুরা রাজকে একদম খেয়াল করে নি। প্রথমের মতো হাঁটছে। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটার কারণে হঠাৎ রাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে নিয়েও লাগেনি। হকচকিয়ে গেলো নুরা। বুকে হাত রেখে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ‘সরি স্যার একদম খেয়াল করিনি।’
কাছ থেকে নুরার এই নাজেহাল অবস্থা দেখে আরেক দফা বিস্মিত হলো রাজ। দূর থেকে সন্দেহ করলেও কাছে আসার পর ব্যাপারটা একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো তার। নুরার লাল ও ফোলে থাকা ফরশা মুখশ্রী দেখে অনায়াসে বুঝে গেলো যে নুরা সারারাত কেঁদেছে। কিন্তু কি এমন কারণ এভাবে কাঁদবে মেয়েটা? এই বয়সটায় ছেলেমেয়ে উভয় অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। নুরাও কি তাহলে? মনে সংশয় জাগতেই প্রশ্ন করলো, ‘তুমি কেঁদেছ?’
হঠাৎ-ই এমন প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে গেল নুরা। কম্পিত হলো চোখের দৃষ্টি। এদিক সেদিন তাকিয়ে আড়ালে আনতে চাইলো নিজেকে। মেকআপ করতে ভুলে গেছে নাকি সে? শিট গার্ল! নিজের বোকামোতে নিজেকেই কয়েকটা গালি দিল নুরা প্রত্যুত্তর করার মতো কোনো শব্দ পেলো না সে।
নুরার চোখের দৃষ্টি ও অস্বস্তি দেখেই রাজ বুঝে গেছে। তাই নুরাকে আর বিব্রত করতে চায়নি। কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললে উঠলো, ‘একা কোথায় যাচ্ছো এখন?’
নুরা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল, ‘বাগানে। ভালো লাগছিলো না তাই ভাবছি ওখানে গিয়ে সময় কাটানো যাক।’
রাজ পকেট থেকে হাত বের করে মাথার পিছনে চুলকে বললো, ‘আমিও ওইদিকেই যাচ্ছিলাম। এক সাথে যাই? আসলে আমারও আজ মন ভালো নেই।’
মলিন মুখে স্মিতি হাসলো নুরা। রাজের মন খারাপের কারণ তার অজানা নয়। অসম্মতি প্রকাশ করলো না। মাথা এক পাশে কাত করে ‘হ্যাঁ’ বুঝালো। অনুমতি পেয়ে প্রচ্ছন্ন হাসলো রাজ। হাত দিয়ে সিঁড়ির দিকে ইশারা করলো সে। অতঃপর দুইজন একত্রে চা বাগানের নিরিবিলি নির্জন পরিবেশের উদ্দেশ্যে পা চালালো।
_____________________
বাড়িটা যেমন অদ্ভুত, ঠিক তেমনি অদ্ভুত বাড়ির নিয়মকানুন গুলো। দীবার বুঝে আসলো না বাড়িতে এতো বড় একটা ডাইনিং টেবিল থাকতে রুমে প্রতিদিন খাবার খেতে হয় কেন? সায়েন্স টা কি ভাই? ভেবেছিল সবাই এক সাথে বসে খাবার খাবে। কিন্তু এই বাড়িতে তা হবে না। আশ্চর্য! মনে মনে মহা বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো দীবা। নাস্তার প্লেট গুলো নিয়েও আবার অদ্ভুত নিয়ম। প্রত্যেক রুমের বাহিরে দরজার পাশে একটা টেবিল রাখা আছে,নিজেদের নাস্তা শেষে নাস্তার প্লেট গুলো বাহিরের এই টেবিলের উপর রাখতে হয়। পরে বাড়ির কর্মচারীরা নিজেদের সময় অনুযায়ী এসে প্লেট ভাটি গুলো নিয়ে যায়। এইসব আজগুবি আবার কোন দেশের নিয়ম ভাই? দীবা দুজনের নাস্তার প্লেট গুলো টেবিলটার উপর রেখে বলে উঠলো,
‘মানে পুরো বাড়িটাই অদ্ভুতে ভরপুর।’
কথাটা বলে পিছু ফিরতেই বাড়ির নিচে নজর গেলো তার। ভ্রুঁ জোরা কুঁচকে এলো আপনা আপনি। নুরা ও রাজকে পাশাপাশি হেঁটে বাড়ির দক্ষিণ দিকে বাগানের দিকে যেতে দেখে মুচকি হাসলো। মনে মনে ভাবলো নুরার এই ক্রাশটাই যেন ফাইনাল হয়ে যায়। তাহলে দুই বোন একই বাড়িতে সংসার করবে। কতো কিউট না ব্যাপার টা? দুইজনের দিকে তাকিয়ে প্রসন্নময় হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে গেলো দীবা।
___________________
দুইপাশে সবুজ চা গাছের মাঝে সরু মাটির রাস্তা। ছোট ছোট রংবেরঙের প্রজাবতীদের আনাগোনা চলছে তাদের উপর। খুঁজাখুঁজি করলে বোধহয় ঘাসফড়িং’য়ের দেখা মিলবে। চা বাগানের মাঝে স্থায়ী ছায়া হিসেবে কালশিরিষ, শীলকড়ই ও লোহাশিরিষ গাছ লাগানো। সেই গাছেদের ছায়ার তলে দাঁড়ালো দুজন। নুরা আনমনে সামনে তাকিয়ে আছে এক মনে। মনে মন নানান রকম কল্পনা জল্পনা করতে লাগলো। মুক্ত বাতাসের সংস্পর্শে এসে ফুরফুরে হয়ে গেলো মন। ঠোঁটে স্মিতি হাসি রেখে সামনে তাকিয়ে চা বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করছে।
রাজ তাকিয়ে আছে নুরার দিকে। কান্নায় জর্জরিত হওয়া মলিন মুখখানি দেখে নিজেও দুঃখপ্রকাশ করলো। নুরার চিঠিটা পড়ার কারণেই হয়তো কান্নার কারণ সহজেই ধরতে পেরেছে সে। এক পাক্ষিক ভালোবাসা যে কতো বেদনাদায়ক সেটা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিটাই উপলব্ধি করতে পারে যে ভালোবাসে। দূর থেকে ভালোবাসা, দূর থেকে প্রিয় মানুষটাকে দেখা, কাছে আসার যেই অভিলাষ, ভালোবাসার মানুষের পাশে অন্যজনকে দেখার তীব্র ব্যাথা শুধু মাত্র সেই ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারে যে ভুক্তভোগী। এই ব্যাথার স্বীকারুক্তি রাজ নিজেই। বুকের ভিতর চিনচিন একটা ব্যাথা অনুভব হলো তার। ব্যাথাটায় চাপা আর্তনাদ রয়েছে। শুধু শব্দ করে চিৎকার করা বাকি। কিন্তু রাজ কাঁদবে না। ছেলে মানুষদের কাঁদতে মানা। যে মানুষটা তার না, সেই মানুষটাকে ভালোবেসে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা নিতান্তই অযুক্তিক ব্যাপার। নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। পকেটে দুই হাত গুঁজেই সামনে তাকিয়ে থেকে আলতোভাবে বলে উঠলো,
‘এক পাক্ষিক ভালোবাসা বড্ড পীড়াদায়ক নুরা। যারা এক পাক্ষিক ভালোবাসে তাদের চেয়ে বড় দুঃখি আর কেউ হতে পারে না।’
চট করে চোখ ফিরিয়ে রাজের দিকে তাকালো নুরা। হঠাৎ রাজের থেকে এমন বানী শুনতে পারা তার জন্য বিস্ময়ের চেয়েও কম কিছু নয়।তাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রাজের দিকে।
রাজ আবারো বললো, ‘এক পাক্ষিক ভালোবাসার মাঝে একটা পার্থিব অনুভূতি কাজ করে জানো। অনেকে এটাকে ভালোলাগা বলে। কিন্তু আমি বলবো এই অনুভূতি ভালোলাগার চেয়েও তীব্র। হাজার মাইল দূরে থেকেও সেই মানুষটাকে নিয়ে নিজের হাজারো অনুভূতি অনুভব করা যায়। এই অনুভূতিকে ভালোলাগা নয় ভালোবাসা বলে আখ্যায়িত করতে হবে।”
নিশ্চুপ নুরা! এক মনে রাজের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ সহকারে রাজের বলা প্রতিটা কথা শুনছে। রাজ এখনো সামনে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে রাজ আবারো বলে উঠলো, ‘আমরা যারা এক পাক্ষিক হয়ে ভালোবাসি। তাদের চাওয়ার সীমা অতিসাধারণ। আমরা ততোদিন পর্যন্ত সেই মানুষটাকে চাইতে পারি যতোদিন না সেই মানুষটা অন্য কারোর হবে। যখুনি দেখবে সেই মানুষটা আর তোমার নেই। তখন সেই মানুষটাকে চাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ হাজার সাধনা করলেও সেই মানুষটাকে ফিরে পাওয়া যাবে না। তকদিরে যা আছে তাই হবে।’
নুরা নির্বাক। রাজের কথার মাঝে পালটা প্রত্যুক্তি করার জন্য কোনো শব্দগুচ্ছ খোঁজে পেলো না। রাজের কথা গুলো তাকে ভাবাচ্ছে। তবে নিজেকে নিয়ে না বরং সে ভাবছে দীবাকে নিয়ে। দীবা তো এখন আরব ভাইয়ের স্ত্রী। রাজের কাছে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কি রাজ দীবা ও আবরারের মাঝে বাধা হবে না? চুপচাপ নেমে নিবে সব? কিছুটা চিন্তিত, বিস্ময়যুক্ত চোখে রাজের দিকে তাকালো। সে যা ভাবছে তা রাজের বলা প্রতিটা কথানুযায়ী “কাছের মানুষটার ফিরে আসার সুযোগ না থাকলে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা নিহাত বোকামি। তকদিরে যা আছে তাই হবে।” তাহলে সত্যি যেন তাই হয়। মনে মনে এইসব ভেবেই নিজেকে শান্ত করলো নুরা। মাথা থেকে দুশ্চিন্তা নেমে গেলো।
‘আমি কি বুঝাতে পেরেছি?’
হঠাৎ রাজের কথা ধ্যান ভাঙ্গলো নুরার। চমক চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে জড়তাহীন গলায় প্রশ্ন করে উঠলো, ‘যদি ভালোবাসার মানুষটা ফিরে আসার সুযোগ থাকে? তাহলে কি বলবেন?’
প্রশ্ন শুনে চোখে চোখ রাখলো রাজ। সমগ্র চোখের দৃষ্টি দিয়ে নুরাকে আজ প্রথমবারের মতো অবলোকন করতে লাগলো। ফরশা মুখখানি এক দিনে শুকিয়ে গেছে। চোখে বিন্দুমাত্র জড়তা নেই। নিষ্পাদিত চোখের মায়াবী দৃষ্টি। অযত্নের কারণে চোখের নিচটা কালচে লাগছে। গোলাপি চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া। গাল ও নাকের মধ্যিখানের অংশ বিশেষ স্বতঃস্ফূর্ত হওয়ার কারণে লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। হাজার সৌন্দর্যের অধিকারীনি নুরার পাগলাটে ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কি কোনো পুরুষের আছে? কে সেই হতভাগা যে কিনা ভালোবাসার বৃহৎ সমুদ্র পেয়েও গা ভিজাচ্ছে না? আচ্ছা নুরার জায়গায় যদি দীবা হতো তাহলে কি সে-ও ফিরিয়ে দিতো? দীবা না হোক নুরাকেও পারতো ফিরিয়ে দিতে? এক পাক্ষিক ভালোবাসার পাল্লা যে ঠিক কতোটা ভারি সেটা রাজের চাইতে অন্য কেউ ভালো জানে না। এতো বড় বোকামো তো রাজ করবে না। এইটুকু পিচ্চি মেয়ের এই অসীম ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য তার নেই। আর না কোনো থাকবে।
শব্দ করে একটা লম্বা নিশ্বাস ছুড়লো রাজ। নুরার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি এখনো ছোট নুরা। এইসব নিয়ে ভাবার সময় আরো আছে। এই বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত..’
রাজের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই নুরা তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠলো, ‘আমাকে দেখে সবার চেয়ে বেশি দুষ্টু আর চঞ্চল ভাবতে পারেন। কিন্তু রিমি আর দীবার চেয়েও যথেষ্ট ম্যাচুরিটি আমার মাঝে আছে। সেক্রিফাইজ, কম্প্রোমাইজ, মানিয়ে নেওয়া, মেনে নেওয়া সবই জানি। কখন কি সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটাও জানি। মানুষ চিনতে কখনো ভুল করি না। আম্মু বলে এই গুনটা নামি বড়মার কাছ থেকে পেয়েছি। আমি কখনো হুট করেই সিদ্ধান্ত নেই না স্যার। ভেবে চিন্তে সময় নিয়ে তারপর যা করার করি।’
গম্ভীর্য চোখেমুখে কঠোরতার সঙ্গে কথা গুললো বললো নুরা। আত্মনির্ভরতা প্রবল তার মাঝে। নুরার নিজের প্রতি এই দৃঢ়ভাব দেখে সন্তোষ হলো রাজ। এমনিতেও নুরাকে যথেষ্ট চতুর ও জ্ঞানী ভাবে রাজ। আর আজকে নুরার এমব কঠিন প্রত্যুত্তরের মাধ্যমে তা একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো তার মাঝে।
‘আমি কিন্তু আমার উত্তর পেলাম না স্যার।’
চলমান….
নোট : রিচেক করা হয়নি। ভুলত্রুটি মার্জনীয়, কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ। হ্যাপি রিডিং।