আসক্তিময়_ভালবাসা পর্ব-২৪

0
3561

#আসক্তিময়_ভালবাসা
#Part_24
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

আমি আবার উপরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলেই তাদের কথা শুনে থমকে যাই। নড়ার বিন্দু মাত্র শক্তি অবশিষ্ট থাকে না গায়ে৷ আমি সেখানেই দেয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে শুরু করি। তারা নিজেদের মধ্যে বলছে,

— অবশেষে এই মেডিসিনটা হাতে পেলাম। কতটা যে অপেক্ষা করেছি এর জন্য।

— কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এক মাত্র এই মেডিসিনের জন্য এত দিন অপেক্ষা কেন করেছেন? এই মেডিসিন কি এমন কাজ করে যে আপনি এইটা হাসিল করার জন্য এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন? অনেকবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও আপনি আমাদের বলেন নি। আজ তো বলেন।

— এইটা শুধু মাত্র মেডিসিন না। পুরো মানবজাতিকে ধ্বংস করার হাতিয়ার এইটা।

— মানে?

— এইটা মেডিসিনটা যখন গ্যাসে পরিনত করে তা যদি ভিন্ন জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হবে তখন গ্যাসটি সেই জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। এরপর যখন সেখানে উপস্থিত মানুষেরা নিশ্বাস নিবে এবং এই গ্যাসটা তাদের ভিতরে প্রবেশ করবে তখন থেকেই এর কাজ শুরু হয়ে যাবে। প্রথমে এইটি ধীরে ধীরে শরীরের সকল কার্যকরী স্নায়ু-কলা, নিউরন ক্ষয় করে দিবে। একজন মানুষের সকল সক্রিয়তা বিনষ্ট করে দিবে। ধীরে ধীরে তাকে প্যারালাইজড করে দিবে। আর এমনটা হবে মাত্র ১৫ দিনে।

— কিন্তু এদের আমাদেরই বা লাভ কি?

— আছে আছে। অনেক লাভ আছে। যেমন সব রোগের অ্যান্টিডোট আছে তেমন এইটারও আছে। যখন এই রোগটা সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাবে আর একদম আহামরি অবস্থা হবে তখনই আমরা একটা মাধ্যম খুঁজে এর অ্যান্টিডোট বাজারে ছেড়ে দিব। বুঝতেই পারছো তখন এর ডিমান্ড কতটা হাই হবে। তারপর তারপর….

এই বলে লোকটা অট্টহাসিতে মেতে উঠে। এরপর একজন বলে উঠে,

— এই রিককে যতটা না বোকা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বেশি এ বোকা প্রমাণিত হলো। সামান্য টাকার লোভে এই মেডিসিনটা আমাদের দিয়ে দিল।

— এইটা শুধু একটা মেডিসিন না বরং আস্ত এক জ্যাকপট। তুই বুঝতে পারছিস এর দ্বারা কত টাকা আয় করা যাবে? সারাজীবন যদি পায়ের উপর পা তুলে খাই তাও এর অর্ধেক শেষ করা যাবে না।

এর মাঝে একজন বলে উঠে,

— কিন্তু এই অ্যান্টিডোট তো আমাদের কাছের মাত্র একটি শিশি। এইটা দিয়ে কিভাবে কি হবে?

— এইখানে একটা পেন্ড্রাইভ আছে। এই ফাইলে মেডিসিন আর অ্যান্টিডোটটি বানানোর পুরো
প্রক্রিয়া আছে। কোন এক মেডিসিন গবেষককে নিজের দলে নিয়ে নিলেই এর অজস্র কপি বানিয়ে দিবে।

[ এইখানে কাল,সংলাপ ও মেডিসিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তাই দয়া করে কেউ একে বাস্তব জীবনের সাথে মিলাতে যাবেন না৷]

তাদের পুরো কথাটা শুনে আমি জমে গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম মানুষ এতটা নিকৃষ্ট কিভাবে হতে পারে। আমি তখন মনে মনে ভেবে নিলাম যত যাই হোক তাদের এই পরিকল্পনা আমি কখনো সাধন হতে দিব না। যেভাবেই হোক আমি ওই মেডিসিন, অ্যান্টিডোট আর পেনড্রাইভ সরিয়ে ফেলবো। হঠাৎ এতটা সাহস আমার মধ্যে কোথ থেকে আসলো জানি না। আমি চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যক্রম লক্ষ্য করছিলাম। অতঃপর দেখতে পেলাম তারা সবকিছু একটা সুটকেসে রেখে দিচ্ছে। সুটকেসটা একটা পুরানো স্টিলের আলমারিতে রেখে তারা সিড়ির দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখার সাথে সাথে আমি উপরে উঠে যাই আর কিছু বক্সের পিছে লুকিয়ে যাই। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে দেওয়ার পর যখন কোন সারাশব্দ পেলাম না তখন বেড়িয়ে আসলাম। উপর থেকেই নিচের দিকে উঁকি ঝুঁকি করলাম। কিন্তু কিছু দেখতে পেলাম না। সাহস করে দুই এক পা এগিয়ে আসলাম সিড়ির দিকে। আস্তে আস্তে করে নিচে নামতে থাকলাম। সেকেন্ড ফ্লোরে এসে আমি থেমে যাই। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে চারদিক দেখতে থাকি। না কেউ নেই। গেল কোথায় তারা। বেশ ভেবে-চিন্তে আমি সেকেন্ড ফ্লোরে নেমে পড়ি। হঠাৎ কানে মৃদু পরিমাণে শব্দ আসে৷ সাথে সাথে আমি ভয়ে জমে যাই। এই বুঝি ধরা খেয়ে গেলাম। কিন্তু আওয়াজগুলো প্রখর না হওয়ায় ভয়টা একটু কমলো। আমি চারদিকে ভালো মত তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। এই সুযোগে আমি আলমারির দিকে চলে যাই। অতি সাবধানতা অবলম্বন করে আলমারিটা খুলি। এমন ভাবে খুলি যাতে কোন আওয়াজ না হয়। আলমারি লক করা ছিল না বিধায় আমার সুবিধা হয়েছে। সুটকেসটা বের করে তা মাটিতে রাখি। অতঃপর নিচে বসে সেটা খুলি। খুলে দেখতে পাই তার মধ্যে দুইটা ছোট সাইজের শিশি রাখা আছে। আর তার গায়ে কি যেন লিখা। এর পাশেই পেনড্রাইভটা রাখা। আমি দ্রুত সেগুলো হাতে নিয়ে আমার সাইড ব্যাগে ঢুকিয়ে নেই। পুনরায় সুটকেসটা অফ করে আলমারির ভিতরে রেখে দেই। আর আলমারিটা লাগিয়ে দেই। দ্রুত পায়ে উপরে উঠে পড়ি। উপরে উঠে জাহাজের রেলিং এর ঘেষ ঘেষে দাঁড়াই। তারপর খুব সাবধানে আগের ন্যায় অন্য জাহাজে উঠে পড়ি। সেই জাহাজ উঠে নিচের দিকে নেমে আসি। বুঝতে পারছিলাম আমি এখন কোথায়। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে এইসব চিন্তা করাও সুবিধার ছিল না। অতঃপর কি যেন ভেবে আমি ওড়নাটা হিজাবের মত নিয়ে নেই। মুখও বেঁধে ফেলি যাতে আমার চেহেরা কেউ দেখতে না পারে। অতঃপর উত্তর দিকে হাঁটা শুরু করি। বেশ খানিকটা দূর এসে পৌঁছাতেই বুঝতে পারি আমি কোথায়। এইখান থেকে বাবার অফিস খুব দূরে নয়। আমি আর কিছু না ভেবে রওনা দেই বাবার অফিসের দিকে যাওয়ার জন্য। বেশ সময় পেরুতেই আমি এসে হাজির হই বাবার অফিসে। সেখানে হাতে গনা চার-পাঁচজন বাদে কেউ ছিল না। আমি ভিতরে যেতেই সকলে আমাকে চিনে ফেলে। আমাকে চিনার সাথে সাথে মেনেজার আঙ্কেল এগিয়ে আসে। আমি তাকে দেখে দ্রুত বাবাকে ইনফর্ম করতে বলি যে আমি এইখানে আছি। সে আমার কথা মতই কাজ করলো।

আধাঘন্টা পেরুতেই বাবা এসে হাজির হয় অফিসে। এসে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে আমার অবস্থা জানার জন্য। সাথেই আমার দিকে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে। কিন্তু তখন আমি কোন কিছুর উত্তরই দেওয়ার মত অবস্থায় ছিলাম না। আমি কোনমতে বাবাকে বলি আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে। বাবা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সেখান থেকে নিয়ে আসে। বাসায় এসেই আমি দ্রুত গতিতে নিজের রুমে চলে যাই। ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি। সমানে হাত পা কাঁপছে। এমন সময় বাসায় একগ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে রুমে নিয়ে আসে। আমার সামনে সেটা ধরতেই আমি তা খেয়ে নেই। বাবা আমার পাশে বসে সব জানতে চায়। আসলে কি হয়েছে। কিন্তু আমি কিছু বলছিলাম না। বেশ কিছুক্ষণ লাগে আমার শান্ত হতে। অতঃপর আমি নিজেকে শান্ত করে বাবাকে শুরু থেকে সব বলি। কিভাবে কি হয়েছে না হয়েছে। সব বলা শেষে আমি বাবাকে সেই জিনিসগুলো বের করে দেখাই। সব শুনে আর দেখে বাবা বললেন কালকেই পুলিশের কাছে যাবে আর সব বুঝিয়ে জিনিসগুলো তাদের হাতে দিয়ে আসবে। আমিও তাতে সম্মতি জানালাম। মা সেইদিন বাসায় ছিল না। কোন এক কাজে তাকে খুলনা যেতে হয়েছিল। যার জন্য তিনি এইসবের কিছুই জানলেন না।

পরেরদিন আমি আর বাবা যাই পুলিশ স্টেশন। বাবা এইখানের ডিসির সাথে দেখা করবেন বলে ঠিক করেন। কনস্টেবলের সাথে কথা বললে তিনি আমাদের এইখানের বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করতে বললেন। আমি আর বাবা তাই করলাম।বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হতেই দেখি ডিসির রুম থেকে ডিসি আর একজন লোক বেরিয়ে আসছে। লোকটিকে দেখার সাথে সাথে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। হাত-পা সমানে কাঁপতে থাকে। কেন না ডিসির সাথে যে লোক দাঁড়িয়ে আছে সে ওই দলেরই একজন। আমি তাদের সকলের স্পষ্ট দেখিছিলাম যার জন্য এদের চিনতে আমার বেগ পেতে হয়নি। আমি অনবরত দুই হাত একসাথে কচলাতে থাকলাম। বাবা তা দেখে বার বার জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে। আমি কোন উত্তর দেই নি। কিছু না বলে উঠে দাঁড়াই আমি। বাবার হাত ধরে টানাটানি শুরু করি এইখান থেকে যাওয়ার জন্য। বাবা তখন হতভম্ব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। অতঃপর আমার জোড়াজুড়িতে তিনি সেই জায়গা প্রস্থান করতে বাধ্য হন। আর আমায় বাসায় নিয়ে আসেন। বাসায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আমি সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে বাবা স্তব্ধ হয়ে যায়। তিনি সোফায় বসে পড়েন। অতঃপর আমায় জিজ্ঞেস করেন,

— এখন কি করতে চাস তুই?

আমি সোজাসাপটা ভাবেই উত্তর দেই,
— এইগুলো আমি আমার কাছেই রাখবো। এতে যদি আমার জান যায় তাহলে যাবে। কিন্তু আমি কিছুতেই এইগুলো তাদের হাতে বা অন্য কাউরো হাতে তুলে দিব না।

— ভেবে-চিন্তে বলছিস তো? এর পরিনতি কিন্তু খুব বাজে হবে।

— হলে হবে। একজনের জানের বদলে যদি এতটি মানুষের জান বেঁচে যায় তাহলে তাই হোক। আর এইভাবেও যদি তাদের হাতে এইগুলো পড়ে তাহলে তো আমাদের অবস্থাও সেইরকম এই হবে। এর চেয়ে আমার একার জান যাওয়া কি শ্রেয় নয়?

— বড্ড বড় হয়ে গিয়েছিস তাই না? তাই তো এত বড় বড় কথা বলছিস। জানিস আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। কেন না আমি আজ চেয়েও তোকে বলতে পারছি না যে তুই সেই জিনিসগুলো ফেলে দে বা ওই পুলিশদের হাতে দিয়ে দেয়। যা হওয়ার হবে। তোর জীবন মৃত্যুর মুখে আমি ঠেলে দিতে পারি না। কেন পারছি না জানিস? বাবাকে ওয়াদা করেছিলাম কখনো অসৎ পথে চলবো না। সৎ পথে চলতে গিয়ে যদি নিজের প্রাণও দিতে হয় দিব। সব কিছুর উর্ধ্বে দেশেকে সবার আগে রাখবো।

আজ প্রথমবার মনে হচ্ছে, বাবাকে এই ওয়াদা করেই আজ আমি ঠকে যাচ্ছি। সৎ পথে চলতে গিয়েই আজ আমার এত শত্রু হয়ে গিয়েছে। আমার সাথে শত্রুতা দেখাতেই কাল ওরা তোকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আর সেখান থেকে এইসব হয়ে গেল। দোষ আসলে আমার। আমার জন্যই আজ তোর এই অবস্থা।

আমি বাবার সামনে হাটু গেড়ে বসি বলি,

— এইখানে তোমার কোন দোষ নেই বাবা। যা হয়েছে সব নিয়তির খেলা। তাই নিজেকে দোষ দিও না। যা হচ্ছে তা হতে দাও। যদি আমার ভাগ্যে মরণ থাকে তাহলে ঠিক তাই।

বাবা আমার দিকে ছলছল চোখে তাকায়। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বলি,

— এই কথা যেন দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি না জানতে পারে। এমনকি আম্মুকেও এইসবের কিছু বলবে না তুমি বুঝেছ। কথা দাও আমায়!

বাবা সেইদিন বাধ্য হয়েছিল আমায় কথা দিতে।

_________________________________________

হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে আমার ধ্যান ভেঙে যায়। আমি অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসি। চোখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাই। সেখানে কাউরো ছায়া মূর্তি দেখতে পাই। সাথে সাথে আমি আতকে উঠি। সেই ব্যক্তি লাইট জ্বালিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কৃত্রিম আলোর রশ্মি আমার চোখে পড়তেই আমি চোখ দুটো সাথে সাথে বন্ধ করে ফেলি। এতক্ষণ আধারে থাকায় আধারটাই সয়ে গিয়েছিল চোখে। হুট করে তীব্র আলোক রশ্মি চোখে পড়তে প্রচন্ড জ্বালা করছে। বেশ কিছুক্ষণ লাগে আমার স্বাভাবিক হতে। আদো আদো করে চোখ খুলে সামনে কাউরো প্রতিবিম্ব দেখতে পাই। আবছা চোখে তাকে দেখতে থাকি। ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে আসে আমার কাছে। একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। পড়নে কালো লং কোর্ট আর পেন্ট। ভিতরে কালো শার্ট। মুখে এক বিদঘুটে ধরনের মাস্ক। মাস্কটি বিদঘুটে হলেও তাতে ফুটে উঠেছে এক রাশ হিংস্রতা। পুরো মুখমন্ডলটি মাস্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও তার নয়ন দুইটি স্পষ্ট আমার কাছে। ডান হাতে তার ধারালো এক ছুরি। তা দেখে আমি ভয়ে জড়োসড়ো আছি। সে কিছুক্ষণ আমার মুখ পানে তাকিয়ে থেকে আমার পায়ের কাছে চলে যায়। আমার পায়ে হাত দিতে নিলে আমি সাথে সাথে আমার পা সরিয়ে নেই। তা দেখে সে আমার দিকে ঘুরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়৷ অতঃপর আমার পা ধরে টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসে। আর আমার পায়ের বাঁধনের মাঝে সেই ছুরিটা দেয় আর একটানে ছিঁড়ে ফেলে। সাথে সাথে আমি ভয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠি। সে পায়ের বাঁধন খুলে সে উঠে যায়। হাতের বাঁধন আর খুলে না। সে উঠে যেতেই আমি কোন মতে উঠে বসি। আমায় উঠে বসতে দেখেই সে আমার দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখে আমি পিছে সরে যাই। সে আমার সামনে এসে শান্ত কন্ঠে বলে,

— মেডিসিনটা কোথায়?

আমি অস্পষ্ট সুরে জিজ্ঞেস করি,

— কিসের মেডিসিন?

— একদম ন্যাকামি করবে না। মেডিসিন আর পেনড্রাইভ যে তোমার কাছে তা আমি ভালো করেই জানি। তাই এই ড্রামা করে লাভ নেই।

— আমি সত্যি বলছি। আমি জানি আপনি কিসের কথা বলছেন।

এই কথাটা বলতেই তিনি জ্বলে উঠে। বা হাত দিয়ে আমার চুলে মুঠি ধরে তিনি একদম তার কাছে নিয়ে আসে। তীব্র গলায় বলে,

— আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইছি না। তাই বলছি ভালোয় ভালোয় বলে দাও সেগুলো কোথায় রেখেছ। তা না হলে তোমার সাথে কি হবে তা তুমি ভাবতেও পারবে না।

আমি রাগান্বিত কন্ঠে বলি,

— আমি জানি না বলেছি না একবার।

কথাটি বলার সাথে সাথে আমার গালে থাপ্পড় পড়ে। সাথে সাথে আমি মাথা নিচু করে ফেলি। সে হুংকার দিয়ে বলে,

— এখনো সময় আছে বলে দাও কোথায় সেগুলো। বল!!!

আমি ভয়ে চুপসে যাই। সে আবারও হুংকার দিয়ে উঠে। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলি,

— আমি বলবো না।

সে গর্জে উঠে বলে,

— মরতে না চাইলে বলে দাও বলছি।

— আমাকে মেরে ফেললেও আমি বলবো না। আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন।

সে আমার সামনে এসে আমার গাল দুটো চেপে ধরে। আমি ছলছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার চোখ দুইটি দেখে নিশ্চুপ হয়ে যায়। ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার অশ্রু ভরা নয়ন দুটির দিকে। আমিও তার চোখে দিকে তাকাই। তার চোখের দৃষ্টির দিকে তাকাতেই মনে হলো এই চোখ দুইটি আমি চিনি। খুব ভালো করে চিনি। এই হাতের স্পর্শও আমি চিনি। এমনকি তার শরীর থেকে আসা আবছা মিষ্টি গন্ধটাও যেন আমার চেনা। মস্তিষ্ক বার বার এই অচেনা ব্যক্তিকে আমার অতিপ্রিয় এক ব্যক্তির সাথে গুলিয়ে দিচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে তা আমার জানা নেই। আমি স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রই। মূহুর্তেই সে আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আমি তাল সামলাতে না পেরে একটু পিছে ঝুঁকে যাই। সে কিছুটা দূরে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে থাকে। আমার কি হলো জানি না। আমি ইতস্তত স্বরে বলে উঠি,

— রিয়ান!!

#চলবে