আড়ালে আবডালে পর্ব-৩২+৩৩

0
4240

#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৩২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________________

স্রোতের বিপরীতে চলা কিছু মানুষ থাকে।মূলত এই মানুষগুলো খুব একটা সহজ প্রকৃতির নয়। কারণ স্রোতের বিপরীতে চলাটাও অনেক কঠিন। আর এই ধরণের মানুষের মাঝে অনল একজন। নিহিকে অনলের ভালো লেগেছে। আগের নিহি আর এখনকার নিহির মাঝে বিস্তর তফাৎ। রাগ, জেদ, তেজী রূপ আগের চেয়েও দ্বিগুণ হয়েছে। অনলকে আকৃষ্ট করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু নিহি যে ক্ষমা করছে না! করবে না কেন? এত রাগ কীভাবে পুষে রাখে সে?

“অনল।”
ভাবনায় ছেদ পড়ে বাবার ডাকে। সম্মুখ দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন আজমল আহমেদ। অনল ঠোঁটের হাসি চওড়া করে বলল,
“ঘরে এসো আব্বু।”
তিনি ঘরে গিয়ে তার পাশে বসলেন। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলেন,
“লেখাপড়া কেমন চলছে?”
“হুম। ভালো।”
“শুধু ভালো?”
“না, অনেক ভালো।” শব্দ করে হেসে বলল সে। তার হাসির সঙ্গে তাল মেলালেন তিনিও। এরপর বললেন,
“তারপর পড়াশোনা শেষ করে অফিসের দায়িত্ব নেবে তো?”
“না আব্বু! আমার দ্বারা অফিস করা সম্ভব নয়। আমার যেই রাগ! কোনো এমপ্লয়িই টিকতে পারবে না। অফিসের দায়িত্ব ভাইয়ারই থাকুক।”
“তা বললে হবে? যখন তোমাদের দুই ভাইয়ের বিয়েশাদী হবে, আলাদা সংসার হবে তখন তো নিজেদেরটা বুঝে নিতে হবে। তাই না?”
“আগে আসুক তো সেই সময়!”
“আগে থেকেই প্রিপায়ার থাকা ভালো।”
“যদি কখনো প্রয়োজন পড়ে তখন দেখে নেবো। আচ্ছা বাদ দাও এখন এসব। তোমার শরীর কেমন এখন বলো?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো।”
“তাহলে চলো বাইরে থেকে হেঁটে আসি। যাবে?”
“হুম, অনেকদিন হয়েছে হাঁটতে বের হওয়া হয় না। চলো আজ যাওয়া যাক।”
“চলো।”

বাপ-ছেলে মিলে গল্প করতে করতে হাঁটতে বের হয়।
.
.
ট্যারেসের ফ্লোরে হাঁটু ভাঁজ করে শুয়ে আছে আমান। নিহিকে ছাড়া বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এখানে বসেও কত-শত গল্প করেছে দুজন। বেশিরভাগ সময়টাই নিহি রাগ দেখাতো। রাগী মুখটার কথা ভেবে সে হেসে ফেলে। নিহির স্মৃতি হাতড়িয়ে ইচ্ছে হলো ফোনে কথা বলতে। তাই পকেট থেকে ফোনটা বের করে তাকে ফোন করল। ফোন সুইচডঅফ! কয়েকবার চেষ্টা করেও একই কথা। একটু চিন্তা অবশ্য হলো। পরক্ষণেই মনে হলো ফোনে হয়তো চার্জ নেই। অথবা ফোন অফ করে পড়তে বসেছে। হতেই পারে।

শোয়া থেকে উঠে বসল সে। রাত দশটা বাজে। অফিস থেকে এসেই এখানে এসে শুয়েছে। নিহির কথা খুব মনে পড়ছিল তাই। ঘরে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর খেয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। সকাল হলেই আবার অফিস। শুয়ে পড়লেও মনটা পড়ে আছে ফোনের দিকে। আশায় প্রহর গুনছে যদি নিহির ফোন আসে! ফোন আসেনি আর। এক সময়ে ক্লান্তিতে তার চোখে ঘুম চলে আসে।

____________________

রাত ২ঃ২০ মিনিট

পুরো রাস্তাঘাট ফাঁকা। অনেক কষ্টে একটা সিএনজি জোগাড় করেছিল নিহি, তরু আর উপমা। সিএনজি এসে থেমেছে আমানের বাড়ির সামনে। মনে প্রশ্ন হচ্ছে না, ওরা এত রাতে তাও ঢাকায় কীভাবে? বলছি!
আজ সকালেই নিহি আর তরুকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে নীলম। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে দু’দিন বাবা-মায়ের কাছে থাকার বায়না করেছে সে। শুধু মেয়ের বায়না বলেই তারা রাজি হয়নি। নিজেদেরও ইচ্ছে ছিল মেয়েটাকে একটু কাছে রাখার। তাই তো নীলম গিয়ে নিয়ে আসলো। রাতে রওনা দেওয়ায় সকাল সকালই ঢাকায় পৌঁছে গেছিল। উপমা বিকেলে গিয়েছিল নিহিদের বাসায়। নিহি তখন তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল কী কী বলতে হবে। এতদিন পর নিহি ঢাকায় আসায় উপমা বায়না করেছে আজ রাতটা উপমার বাসায় থাকতে দিতে হবে। বাড়ির সবাই জানে উপমা নিহির কতটা কাছের ফ্রেন্ড। তাছাড়া এর মাঝে দুই পরিবারের সাক্ষাৎও হয়েছিল। নিহিরও ইচ্ছে ছিল বলে কেউ আর বারণ করেনি। বিকেলেই নিহি তরুকে নিয়ে উপমার সঙ্গে ওর বাড়িতে গিয়েছে। আর রাতে পালিয়ে এসেছে আমানের বাসায়। আমানকে সারপ্রাইজ করার জন্য।

দারোয়ান ভেতরে বসে ঝিমুচ্ছিল। এই গেইট টপকে ভেতরে যাওয়া অসম্ভব। দারোয়ানকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনটে ডাক দেওয়ার পর দারোয়ানের ঘুম ভাঙল। এত রাতে বোরকা পরা আদিঅন্ত ঢাকা তিনজনকে দেখে দারোয়ান চমকে যায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনারা কারা?”
নিহি বলে,
“শসসস! আস্তে কথা বলেন।”
তারপর নিজের পরিচয় দিয়ে বলে,
“আমি নিহি। ওরা আমার বোন।”
“আল্লাহ্! ম্যাডাম আপনি এত রাইতে?”
“পরে সব বলব চাচা। এখন গেইট খুলে দেন।”

সময় বিলম্ব করলেন না আর তিনি। দরজা খুলে দিলেন। ভেতরে যাওয়ার আগে নিহি তাকে বলল,
“আমার আপু, দুলাভাইকে আমার আসার কথা বইলেন না চাচা।”
তিনি হেসে বললেন,
“আচ্ছা কমু না।”

নিহি ওদের নিয়ে ভেতরে গেল। দোতলায় গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। তরু ফিসফিস করে বলে,
“এখন কী করবি? ডাকবি? দরজা তো ভেতর থেকে লক করা।”
নিহি মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বলে,
“আরে রাখ! এত কাঁচা কাজ নিহি করে না। এক্সট্রা একটা চাবি দিয়েছিল আমায়। এখনো আছে আমার কাছে।”
“ঠিকই আছে রে ভাই! এমন প্রেমিক হাজবেন্ডের মতো তোর মতোই প্রেমিকা বউ দরকার।” কপালে হাত রেখে বলল উপমা।

ওর কথা শুনে নিহি আর তরু হাসতে গিয়ে নিজেদের সামলে নিলো। তারপর চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে গেল। সাবধানে দরজা লক করে আগে নিহি যেই রুমে থাকত সেই রুম তরু আর উপমাকে দেখিয়ে নিজে আমানের ঘরের সামনে গেল। দরজা ভিড়িয়ে রাখা আছে। এক দৌঁড়ে ওদের রুমে চলে এলো নিহি। তরু জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো? চলে এলি কেন?”
“আমার না ভয় করছে তরু! বুক ঢিপঢিপ করছে। তোরাও চল!”
উপমা ভেংচি কেটে বলে,
“ইশ! ঢং। পারব না। আমরা একটু ঘুমাব। তুই যা।”
তরুও উপমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলে,
“হ্যাঁ রে ঘুম পেয়েছে খুব। একটু ঘুমিয়ে নিই আমরা।”

তারপর হাই তুলতে তুলতে বিছানায় গিয়ে বসল। কনফিউশনময় মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল নিহি। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই নার্ভাস হয়ে আছে। উপমা ধমক দিয়ে বলে,
“মুখটা ওমন করে আছিস কেন? যা।”

ঢেলে নিহিকে ঘর থেকে বের করে দিতে গিয়ে আবার টেনে ঘরে আনে। আমানের জন্য নিহি শাড়ি পরেছিল। কিন্তু নার্ভাস থাকায় নিহি বোরকা খুলতে চাইছিল না। তরু আর উপমা জোর করে বোরকা খুলিয়ে ওকে পাঠিয়ে দিলো। ড্রয়িংরুমে গিয়ে নিহি এক পা বাড়ায় আবার আরেক পা পিছায়। নিজেই নিজের উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করে বলে,
“তুই কী ভীতু রে নিহি! সে যখন তোকে সারপ্রাইজ দেয় তখন তার মুখটা দেখেসনি? কী সুন্দর হাসি হাসি মুখ! তবে তুই কেন নার্ভাস হচ্ছির গাধি একটা। হাস! হাসতে হাসতে তুইও গিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দে। যা। এক্ষুণী যাবি।”

নিজের সাথে বাকবিতণ্ডা শেষ হলে বড় বড় করে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল। তারপর আঁচল, কুচি, চুল সব ঠিকঠাক করে দরজা আস্তে করে ঢেলে ভেতরে ঢুকল। নিহির বুকটা ধ্বক করে উঠল। নীল ডিম লাইটের মৃদু আলো পুরো ঘরময়। আমানের মুখেও নীল আলোর ছায়া। কী সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। ফ্যান চলছে। পাওয়ার কমানো। অল্প বাতাসেই আমানের ছোট ছোট চুলগুলো উড়ে তার কপালে পড়ছে। নিহি মোহময় দৃষ্টিতে পা টিপে টিপে সামনে এগিয়ে যায়। ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে বসে খাটের ওপর হাত রাখল। দু’হাত নিজের গালে রেখে কিছুক্ষণ আমানকে দেখছিল। তারপর আস্তে করে মুখে ফুঁ দিতেই আমানের ঘুম ভেঙে যায়। মৃদু মৃদু দৃষ্টিতে চোখ মেলে তাকায় সে। সামনে কারো অবয়ব দেখে চোখগুলো বড় হয়ে যায়। আবছা আলোতেও নিহির চেহারা স্পষ্ট। সে লাফিয়ে বসে পড়ে। নিহি নিজেও হকচকিয়ে যায়। ঠায় কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে থাকে। নিহি উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের লাইট জ্বালায়। আমানের রিয়াকশন দেখে হাসিতে ফেঁটে পড়ার মতন অবস্থা। হাসতে হাসতে নিহি বলে,
“কী? বিশ্বাস হচ্ছে না?”
তারপর হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“বিশ্বাস না হলে একটা চিমটি কেটে দেখুন।”

আমান চিমটি দিলো না। বরং নিহির হাতটা ছুঁয়ে দিলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কীভাবে সম্ভব?”
“সারপ্রাইজ!”
সে ‘থ’ মেরে বসেই রইল। নিহি খাটের ওপর গিয়ে বসল। নিজের হালকা ঠান্ডা হাতগুলো তার গালে রেখে বলল,
“আজ সকালেই ঢাকায় এসেছি। সারপ্রাইজ দেবো তাই বলিনি।”
“এত্ত সাহস!”
“খুব সাহস।”

কিছুক্ষণ নিরবতা চলল। জোরে গানের শব্দ ভেসে আসছে ঘরে।
“Mujhko de tu mit jaane
abb khud se dil mil jaane
Kyun hai itana faasala…
Lamahe yeh phir na aane
inko tu na de jaane
Tu mujhpe khud ko de luta.

Tujhe tujhse tod loon kahin khud
se jod loon
Meri jismo jaan pe aa teri khushbu odh loon..
Jo bhi saansein main bharu unhe tere sang bharu
Chaahe jo ho raasta use tere sang chalu.

Dil ibaadat kar raha hai dhadakane meri sun
Tujhako main kar loon haasil lagi hai yahin dhun.”

আমান জিজ্ঞেস করল,
“বাইরে গান শুনতে পাচ্ছেন?”
“পাচ্ছি। উপমা আর তরু শুনছে হয়তো।”
“তারাও এসেছে?”
“নয়তো কি আমি একা এসেছি?”
“তিনটা মেয়ে এভাবে একা আসা ঠিক হয়নি।”
“মানে কী? খুশি হননি?”
“না। যদি কিছু হতো? দেশের অবস্থা কি ভালো?”
“ধ্যাত!”
রাগ করে বিড়বিড় করতে করতে বলল,
“ভুল হয়েছে আমার! মাফ চাইছি। আর কখনোই আসব না।”

ড্রয়িংরুম পর্যন্ত চলে গেছে নিহি। বক্সে গান ছেড়েছে বলে নিহির ডাক তরু বা উপমার কান পর্যন্ত যায়নি। রাগে নিহির শরীর জ্বলছে। বিষয়টা এমন হয়ে গেল যে, যার জন্য করলাম চুরি, সেই বলে চোর! আমান তার হাত টেনে নিজের বুকে এনে ফেলে। নিহি থমকে যায়। এতক্ষণ যে বিড়বিড় করছিল তার একটা শব্দও মুখে আসছে না। তবুও অতি সন্তর্পণে কোনোরকমে বলল,
“ছেড়ে দেন। আমি চলে যাব।”

আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল আমান। বলল,
“সেচ্ছায় হোক বা ভুল করে। এসেছেন যখন তখন আমি আর যেতে দেবো না।”
“আমি যাবই!”
“তাই নাকি? আগে তো নিজেকে ছাড়িয়ে দেখান।”
নিহি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হলো। আমানকে তার জায়গা থেকে এক চুল পরিমাণও সরানো যায়নি। আর নিহিকেও ছাড়েনি। আমান হেসে বলল,
“পারেননি। এখন চলেন।”
“কোথায়?”
“ঘরে।”
“যাব না আমি।”
“যাবেন না?”
“না।”
“সত্যিই যাবেন না?”
“না।”
“চুমু দেবো?”
“যাব আমি!”

আমান হেসে ফেলল। বলল,
“চলেন।”
“এভাবে যাব না।”
“তবে? কোলে নেব?”
“না।”
“তাহলে?”
“আপনার পায়ের ওপর পা রেখে দাঁড়াবো। আপনি আমায় নিয়ে যাবেন।”
“যেই মোটা আপনি! পারব তো?”
“কী বললেন?” চোখ পাকিয়ে বলে নিহি।
আমান হেসে বলে,
“মজা করেছি নিহুপাখি।”

নিহি তার পায়ের ওপর পা রেখে দাঁড়ায়। আমান নিহির কোমর জড়িয়ে হেঁটে হেঁটে ঘরে যায়। নিহি মুচকি মুচকি হাসে। যাওয়ার সময় হাত বাড়িয়ে লাইটও অফ করে দেয় সে। শুধু ডিম লাইট জ্বলছে। আমানও নিহির কাজে হাসছে। নিহি জিজ্ঞেস করে,
“হাসেন কেন?”
“এমনি।”
ভেতরে আসার পর আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিহি তার মুখে হাত রেখে বলে,
“এখন যে কথাই বলেন না কেন, খবরদার! আপনি করে বলবেন না।”

নিহির হাতে চুমু খেল আমান। হাত সরিয়ে নিয়ে লজ্জায় মাথা নত করে দাঁড়ায় নিহি।
“তাহলে কী বলব?” জিজ্ঞেস করে আমান।
“আপনি আর তুই’র মাঝে সুন্দর একটা ডাক আছে।”
“সেটা কি আমি একাই ডাকব?”
“হ্যাঁ, একাই।”
“তাহলে হবে না। তাকেও ডাকতে হবে।”

নিহি এক পলক আমানের দিকে তাকায়। তারপর তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
“ওকে ডান।”
নিহির কপালে চুমু খায় আমান। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। ঠোঁটের কোণে সলজ্জিত হাসি। নিহিকে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমান। নিহির কাঁধে থুঁতনি রেখে বলে,
“এমন সারপ্রাইজ আরো আরো আসুক!”

নিহি হেসে ফেলে। কানের লতিতে আলতো করে চুমু খেয়ে আমান বলে,
“আমার জীবনের পূর্ণতা তুমি নিহু।”

চলবে…

#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৩৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________

আকাশে আজ পূর্ণ চাঁদ। হাজার তারাদের মাঝে ঐ একটি চাঁদই যথেষ্ট দৃষ্টি কাড়তে। নিকষকালো কুচকুচে রাতের অন্ধকারে রূপালি চাঁদের আলোয় দৃষ্টি স্থির রেখেছে অনল। রাত পার হয়ে যাচ্ছে। অথচ তার চোখে ঘুম নেই। জানালার কার্ণিশ ঘেষে বসে চাঁদের সৌন্দর্য অবলোকন করছিল। নিহিকেও এখন চাঁদের মতোই লাগছে তার কাছে। তার কারণ, চাঁদের চারপাশে যেমন সহস্র তারা,নক্ষত্র আছে তেমনই নিহির চারপাশেও অসংখ্য মেয়েরা রয়েছে। অথচ অনল আটকে গেছে ঐ চাঁদে। অর্থাৎ নিহিতে! সেই মেয়ের মাঝেই যাকে এক সময় খারাপ করেছিল পুরো কলেজের কাছে। শুধু কলেজই নয়, ছোট করেছিল নিজ পরিবারের কাছেও। একমাত্র তার জন্যই নিহি আজ এতদূরে। অভিনয় করেছিল ভালোবাসার। নিহির অনুভূতি নিয়ে খেলেছিল। এত সংশয় মনের মাঝে ঘেটে অস্থির হয়ে পড়ছে অনল।

বসা থেকে উঠে ঘরের মাঝে ফাঁকা জায়গায় পায়চারি করতে থাকে। মনে পড়ে যায় নিহিকে দেখা প্রথম দিনের কথা। কালো একটা জামা পরেছিল সেদিন। চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করা ছিল। দু’কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চারদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে এগিয়ে যাচ্ছিল। ফর্সা অঙ্গে কালো চুল, কালো জামা মুগ্ধ করেছিল অনলকে। সেই মুগ্ধতা সেদিন সে বোঝেনি। বোঝেনি চুলগুলো খোলার পর বুকের ভেতর ধ্বক করে ওঠার মানে। সেদিন যদি বুঝতে পারত তবে আজ হয়তো এমন নিহিকে আবিষ্কার করতে হতো না তার।

এরপর আসে সেদিনের কথা। সিলেটে যেদিন শেষ কথা হয়েছিল নিহির সঙ্গে। নিহির কথার প্রতিধ্বনি এখনো কানে বাজছে। ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল ক্ষমা করা যায়। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভুল নয়।’ আচ্ছা একটা ভুল না হয় হয়েই গেছে তাই বলে এত পরিবর্তন? এই পরিবর্তনটা কি হওয়ারই ছিল? সেদিন নিহির ঐ কথাটা বলার পর অনল আর কথা খুঁজে পায়নি। পাবে কী করে? নিহি তো ভুল কিছু বলেনি। যা বলেছে তা সব সত্য। আর কিছু সত্য কাঁটার মতোই শরীরে বিঁধে। নিহির কথাগুলোও অনলের ভেতরকার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর রক্তক্ষরণ দৃশ্যমান হয়নি ঠিক। তবে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিল। নিহির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস হয়নি আর তার। সেই মুহূর্তেই নিহিকে যাওয়ার জায়গা করে দিয়ে ভেতরে চলে যায় সে। নিহি বাড়িতে আসার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বন্ধুদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়। নিহিকে ভোলার উদ্দেশ্য নিয়ে সিলেট আসলেও, অনলকে ফিরতে হয় নিহির কঠিন কঠিন কিছু কথার স্মৃতি নিয়ে। ঢাকায় ফিরেও গত তিনদিন ধরে চেষ্টা করেছিল নিহিকে, তার কথাগুলো পুরোপুরি ভুলে যেতে। ভুলে যেতে চেয়েই আরো বেশি করে মনে করে ফেলেছে। তারপরের দশদিন আর কোনোরকম চেষ্টা করেনি নিহিকে ভোলার। জীবন যেভাবে চলছে চলুক। বৈঠাবিহীন নৌকার মতো কতদূর এগিয়ে যাওয়া যায় সেটাও সে দেখতে চায়।

অস্থিরতা আর টিকিয়ে রাখতে পারছে না সে। পুরনো কথা মনে করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কী করলে শান্তি পাবে তাও তার জানা নেই। টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে যায়। সার্চলিস্টের প্রথমেই নিহির আইডি। আইডিতে শুধু প্রোফাইলেই একটা ছবি। তাও অনলি মি করে রাখা। এছাড়া আর কোনো ছবি নেই। দুম করে অনলের মনে এক অদ্ভুত ইচ্ছের উদয় হলো। ইচ্ছে করল, নিহিকেও সে তার জন্য অনলি মি করে রাখবে। কী অদ্ভুত চিন্তা তাই না?

সে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। নিহির হাসিমাখা মুখখানা দেখে বিড়বিড় করল কিছুক্ষণ। হয়তো অজান্তেই ভালোবাসার কিছু প্রলাপ বকছে! ফোনটা নিয়ে বিছানায় বসে। কিছুক্ষণ আইডি ঘাটাঘাটি করে। এক ছবির দিকে আর কতকক্ষণই বা তাকিয়ে থাকা যায়? তবুও সে তাকিয়ে রইল ঘুম না আসা পর্যন্ত। আর যখন ঘুম চোখে এসেই গেল তখন সেও সুবোধ বালকের মতো শুয়ে পড়ল।
.
.
দমকা হাওয়া বারান্দায় অবস্থানরত আমান ও নিহিকে শিহরিত করে তুলছে। নিহির চুল খোঁপা করা ছিল। আলতো করে সেই খোঁপা খুলে দিল আমান। নিহি কিছু বলল না। এতবেশি লজ্জারা তাকে জেঁকে ধরেছে যে মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এক ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। আমানের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জাবোধ হচ্ছে তার। তার অস্থিরতা আমান বুঝতে পারে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“লজ্জা লাগছে?”

এতক্ষণ সামান্য লজ্জাবোধ নিহিকে জেঁকে ধরলেও আমানের এই প্রশ্নে সে এবার লজ্জায় সংকুচিত হয়ে পড়ে। আমানের মজাই লাগছে। লজ্জা পেলে আরো বেশিই সুন্দর লাগে তাকে। নিহির নিরবতার মানে বুঝতে পেরেও আবারও একই প্রশ্ন করে। এদিকে নিহির মুখ দিয়ে কোনো কথাও তো বের হচ্ছে না। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করার পর বাকশক্তি বোধ হয় ফিরে আসে। সংকুচিত হয়েই বলে,
“ইচ্ছে করেই লজ্জা দেওয়ার জন্য এমন করছেন তাই না?”

আমান ফিক করে হেসে ফেলে। নিহিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“লজ্জা পেলে নিহুপাখিকে যে আরো বেশি সুন্দর লাগে তা কি নিহু জানে?”
“আপনি একটা বদ লোক!”
“আরো বদ হব।”
“কেন?”
“কথা ছিল কিন্তু দুজনই দুজনকে তুমি করে বলার। তাও তুমি আমায় আপনি করে বলছো।”
“হুট করেই কি আর মুখ দিয়ে তুমি আসে নাকি? আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”
“তাই? তাহলে আমিও আপনি করেই বলব।”
“এইটা কোনো কথা?”
“এটাই কথা।”
“আমি যা করব আপনি তাই করবেন?”
“প্রয়োজন হলে তাই করব।”
“না! তা হবে না।”
“আচ্ছা হবে না।”

নিহি হেসে ফেলে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি আমায় ভালো কেন বাসেন?”
“তার আগে তুমি এটা বলো আকাশে চাঁদ কেন ওঠে?”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন হলো? চাঁদ, সূ্র্য দুনিয়ার সবকিছুই তো আল্লাহ্ তাআলার তত্ত্বাবধানে চলে। এরকম যুক্তিহীন প্রশ্ন করার কোনো মানে হয়?”
“আমার প্রশ্নটা যেমন যুক্তিহীন এবং এর কোনো উত্তর নেই ঠিক তেমনই তোমার প্রশ্নটাও উত্তর ও যুক্তিহীন।”
“বাবারে! কীরকম প্যাঁচিয়ে বললেন। আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্রশ্ন উল্টো আমাকেই করবেন।”
“করতাম। যদি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর থাকত।”
“কোনো উত্তর নেই?”
“না। শুধু জানি, ভালোবাসার জন্যই ভালোবাসি। এবং তুমি ছাড়া আমি অপূর্ণ।”

নিহির মন ভরে যায় মুগ্ধতায়। একরাশ ভালোবাসারা দুলে দুলে মনের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমানের বাহুবন্ধনে থেকেই হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।

দুজনের অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রাত জেগে গল্প করার। মুঠোফোনে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে আজ হয়েছে। দুজনেরই ধৈর্যের ফল। এজন্যই বোধ হয় বলা হয় সবুরে মেওয়া ফলে। তাই তো ভালোবাসার মানুষটির সাথে থেকেই সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। এতটা সময়ে গল্প করেও কারো চোখে বিন্দু পরিমাণ ঘুম আসেনি। আসবেই বা কী করে! অনেক প্রতীক্ষার পর সামনে আসা তো!

মসজিদ থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। ফজরের আজান দিচ্ছে। নিহি তখন তাড়া দিয়ে বলে,
“এবার আমাদের যেতে হবে।”
আমানের মন খারাপ হয়। নিহিকে দূরে যেতে দিতে ইচ্ছে করে না। তবুও ঠোটে হাসি রেখে প্রশ্ন করে,
“যেতেই হবে?”
“হ্যাঁ। আর সেটা ভোরের আলো ফোঁটার আগেই।”
“আচ্ছা আমি পৌঁছে দেবো। আগে দুজনে একসাথে নামাজ পড়ে নিই?”

ঠোঁটের হাসি চওড়া হয় নিহির।
“অবশ্যই।”
অজু করে এসে দুজনে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষ হতেই নিহি যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। আমান হাত টেনে ধরে। নিহির মুখে তখনো অজুর বিন্দু বিন্দু পানি। মাথায় ঘোমটা দেওয়া। কী স্নিগ্ধ আর পবিত্র লাগছে! আলতো করে হাত ছুঁয়ে দেয় নিহির গালে। সে আবারও লজ্জায় নুইয়ে গিয়ে অস্পষ্টভাবে বলে,
“দেরি হয়ে যাচ্ছে!”

তার কথা আমলে নেয় না আমান। দু’গালে হাত রেখে নিহির কপালে পবিত্র ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। নিহি চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমান বলে,
“তুমি আমার নিহু। সারাজীবন এভাবেই তোমাকে আমার পাশে চাই। সাথে চাই। কখনো দূরে চলে যেও না।”

নিহির চোখে পানি টলমল করছে। কান্না পাচ্ছে খুব। আমানের বুকে মাথা রেখে ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে,
“তোমার ভালোবাসার কাছে যেখানে হেরে গিয়েছি, সেখানে তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারব এই চিন্তা আমার কাছে মৃত্যুসম।”

নিহির চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আমান। গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
“আমার নিহু! যাও রেডি হয়ে নাও। আর তাদেরও ডেকে তোলো। আমি নিচে গিয়ে গাড়ি বের করছি।”
“আচ্ছা।”
আমান নিচে চলে যাওয়ার পর নিহি ওদের রুমে যায়। দরজা চাপিয়ে রাখা। রুমের লাইট অন করে দেখে দুজনে একত্রে ঘুমিয়ে আছে। উপমা আর তরুর কালই প্রথম দেখা এবং কথা হয়েছিল। কিন্তু একসঙ্গে দেখলে মনে হবে অনেক বছরের পরিচিত। সে দ্রুত পায়ে ওদের কাছে গিয়ে ডাকে।
“এই উপু! তরু! ওঠ। যেতে হবে আমাদের।”

একটু নড়েচড়ে ওরা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে দুইটাকে ঘুম থেকে তোলে নিহি। ওদের অবস্থা ঘুমে ঢুলুঢুলু। বোরকা পরতে পরতে নিহি বলে,
“চোখে-মুখে পানি দিয়ে আয়।”

তরু আর উপমার রেডি হওয়া হলে তিনজনে একসাথে নিচে নামে। আমান তখন ড্রাইভিং সিটেই বসা ছিল। নিহি গিয়ে আমানের পাশের সিটে বসে। আর পেছনে বসে ওরা দুজন। সারা রাস্তা কেউই তেমন কথা বলল না। উপমা আর তরুর ঘুম তখনো ছাড়েনি। নিহি আড়চোখে আমানকে দেখছিল। আমান তখন জিজ্ঞেস করে,
“আবার কবে দেখা হবে?”
“জানি না।”

আমান নিহির দিকে ফিরে তাকায়। তখন নিহিও তাকায়। আমানের ভ্রু কুঁচকানো। নিহি হেসে ফেলে। বলে,
“যাওয়ার আগে মিহি আপুর বাসায় একদিন নয়তো দু’দিন থাকব। তখন দেখা হবে।”
“আছো কয়দিন এখানে?”
“আছি কয়েকদিন!”
“আবুল আর টুকটুকি কিন্তু সবসময়ই তোমার কথা জিজ্ঞেস করে। তেমন সময় হয় না আমার তাই তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেওয়া হয় না। আর হ্যাঁ, ক্যাবলাকান্তও তোমায় মিস করে।”

নিহি এবার শব্দ করে হেসে বলল,
“এবার সবার সাথেই দেখা করে যাব। তাছাড়া আমি নিজেও সবাইকে খুব মিস করি।”
টুকটাক কথা বলতে বলতেই নিহির বলা ঠিকানায় আমান পৌঁছে যায়। সাবধানে গাড়ি থেকে নেমে ওরা বাড়ির ভেতর যায়। নিহি হাত নাড়িয়ে বিদায় দিতেই আমানও হাত নাড়িয়ে বিদায় দেয়। ওরা বাসার ভেতর যাওয়ার পর আমানও বাড়িতে চলে আসে।
.
বাড়িতে গিয়ে তিনজনে আবার শুয়ে পড়ে। নিহির চোখেও এখন প্রচুর ঘুম। সারারাত জেগে থাকার জন্যই এখন এত ঘুম আসছে। ঘুমে তলিয়ে গেলেও চলবে না। দশটার মধ্যে বাসায় যেতে হবে। আটটার দিকে উঠে তিনজনে ফ্রেশ হয়ে বাড়ির সবার সঙ্গে নাস্তা করে। নিহির বাড়ির সামনে এসে তরু আর নিহি নেমে যায়। উপমা চলে যায় কলেজে। বাড়িতে গিয়ে নিহি বোরকা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তরু শিশিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। দুপুরের দিকে তমা ডেকে তোলে নিহিকে। ঘুমজড়ানো নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে সে বলে,
“ডাকছো কেন ভাবি?”
“আরে ওঠো। ঐ ছেলেটা এসেছে।”
“কোন ছেলেটা?”
“ঐযে চিঠি দিয়ে যায়।”

নিহির চোখ থেকে এবার ঘুম উধাও হয়ে যায়। চিঠির রহস্যটা বের করতেই হবে এবার। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে সে ড্রয়িংরুমে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আই গ্লাসে দেখে দেখতে পায় ঐ ছেলেটাকেই। দরজা খুলে দিতেই ছেলেটা অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
“আপু! আপনি? কবে এসেছেন?”
“চিঠি নিয়ে এসেছ?” উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে নিহি।

ছেলেটা পকেট থেকে চিঠি বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ।”
নিহি চিঠিটা নিলো। এরপর জিজ্ঞেস করল,
“এই চিঠিগুলো কে পাঠায়। নাম কী তার?”
“বলা যাবে না।” বলেই ছেলেটা দৌঁড়ে নিচে নামতে থাকে। নিহিও এবার পিছু নেয়। হাতছাড়া করা যাবে না ওকে। একমাত্র এই ছেলেই বলতে পারবে কে এই চিঠির মালিক! ভরা রাস্তায় মানুষজন দেখছে এসব চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে না। শাড়ির কুঁচি শক্ত করে ধরে নিহিও দৌঁড়াচ্ছে। শাড়ি পরার কারণে ঠিকমতো দৌঁড়াতেও পারছে না। নিজের প্রতি রাগ লাগছে তার। কে জানতো এই ছেলে আজ আসবে! তাহলে তো বাড়িতে এসেই পোশাক পাল্টে নিতো। গলির মুখে যেতেই একটা গাড়ি এগিয়ে আসে গলি থেকে তখন। ছেলেটা চলে যেতে পারলেও নিহি গলির মুখেই থেমে যায়। হুট করে গাড়ি আসতে দেখে পা-ও আর চলছে না। মুখের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। আজ তো এক্সিডেন্ট নিশ্চিত!

“নিহু!”
নিহি চকিতে হাত সরিয়ে চোখ মেলে তাকায়। আমানকে দেখে চমকে যায়। পরক্ষণেই আশেপাশে তাকিয়ে ছেলেটাকে খোঁজে। আমান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ঠিক আছো তুমি? এভাবে দৌঁড়াচ্ছো কেন রাস্তায়?”
কী বলবে বুঝতে পারছে না নিহি। বোকার মতো তাকিয়ে আছে। নিহিকে সরু চোখে পর্যবেক্ষণ করছে নিহিকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে উঠে এসেছে। পায়ে জুতাও নেই। খালি পায়ে রাস্তায় দৌঁড়াচ্ছে! রাস্তাঘাটে কত ইট, কাঁচের টুকরো থাকে মেয়েটা জানে না? রাগ হচ্ছে আমানের। হঠাৎ করে নিহির হাতের দিকে চোখ আটকে যায় আমানের। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই নিহি ঢোক গিলতে শুরু হবে। কী হবে এখন? চিঠির মালিক কে তা জানতে চেয়ে এখন স্বামীর কাছে ধরা! কী বিচ্ছিরি কাহিনী! নিহি আমানকে চেনে। সবটা শুনে সে কখনোই নিহিকে ভুল বুঝবে না। তবুও বিষয়টা কীভাবে নেবে আমান?

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]