#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৪৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
সকালের পত্রিকা বাড়িতে এসেছে পাঁচ মিনিটের মতো হবে। তবে এখন নিজাম ইসলামের পত্রিকা পড়তে ইচ্ছে করছে না। নিহি আজ বাড়িতে ফিরবে তাই তিনি বড্ড খুশি। বেশি দেরি করে বাজারে গেলে তাজা শাকসবজি পাওয়া যাবে না। বড়ো বড়ো মাছও আনবেন আজ। আর আমানের কোনো বাহানা তিনি আজ শুনবেন না। প্রয়োজনে টেনে নিয়ে আসবেন বাড়িতে। জামাই আর মেয়েকে সামনে বসিয়ে খাওয়াবেন। তাই পত্রিকা বিছানার ওপর রেখেই তিনি সালেহা বেগমকে ডাকলেন। রান্নাঘর থেকে ডাকের উত্তর নিতে নিতে ঘরে এসে উপস্থিত হন সাহেলা বেগম। জিজ্ঞেস করেন,
“কী হয়েছে?”
“কিছু হয়নি। বাজারের ব্যাগ দাও। বাজারে যাব।”
“এত সকালে?”
“হ্যাঁ, দরকার আছে।”
“আচ্ছা যাও সমস্যা নেই। নাস্তা তো করে যাও।”
“না, না। বাজার করে আমি দোকানেই খেয়ে নেব।”
“বাসি মুখে বাইরে কেন যাবে?”
“আহা! কথা বাড়াচ্ছো শুধু। বাসি মুখে বাইরে না গেলে আমার মেয়েকে বাসি তরকারি খেতে হবে। শোনো,আজ সব নিহির পছন্দের খাবার রান্না করবে।”
মেয়ের জন্য নিজাম ইসলামের পাগলামি দেখে হেসে ফেললেন সাহেলা বেগম। বাজারের ব্যাগ এনে হাতে দিয়ে বললেন,
“বাইরে থেকে খেয়ে নিও কিছু।”
“আচ্ছা। যাই তাহলে।”
“সাবধানে যাবে।”
ঘর থেকে বের হতেই নীলম ডাইনিং রুম থেকে ডাকে।
“আব্বু? কোথায় যাচ্ছো?”
“আরে, সবাই এত দেরি করাচ্ছিস কেন তোরা? বাজারে যাচ্ছি।”
“দাঁড়াও। আমি তো অফিসে যাব। বাজারে নামিয়ে দিবোনি।”
“তুই তো খাচ্ছিস।”
“খাওয়া শেষ আমার।” হাত ধুয়ে তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে আসে। তমা তখন বলে,
“আব্বু আসার সময় জলপাইর আচার নিয়ে আসিয়েন। নিহির তো খুব পছন্দ।”
নীলম তখন হাস্যরসাত্মকভাবে বলে,
“নিহির একার নাকি তোমারও? নাকি নিহির নাম আর তোমার কাম!”
তমা চোখ পাকিয়ে তাকায়। নিজাম ইসলাম,নীলম আর সালেহা বেগম হেসে ফেলেন।
বাইকে করে নীলম বাবাকে বাজারে পৌঁছে দিয়ে অফিসে চলে যায়। বাজারের ভেতর গিয়ে সব তাজা তাজা সবজি কিনেন তিনি। নিহির ইলিশ মাছ খুব পছন্দ। বড়ো দেখে তিনটে ইলিশ মাছ নেন। আমান যেহেতু আজ প্রথম শ্বশুরবাড়িতে খাবে সেহেতু ভালো ভালো রান্নাবান্না তো ওর জন্যও করতে হবে। তাই গরুর মাংস, মুরগিও কিনেন। সব বাজার শেষ হলে আসার সময় লাউশাক দেখে আবার দাঁড়িয়ে যান। শাকের মধ্যে একমাত্র লাউ শাকটাই বেশি পছন্দ নিহির। তাজা শাক দেখে মন বলল নিয়ে যেতে। তাই শাকও নিয়ে নিলেন। সব তাজা জিনিস নিয়ে মনটা এখন ফ্রেশ লাগছে তার।
বাজার করা শেষ হলে পাশের চায়ের দোকানে বসেন। চাওয়ালা উনার পরিচিত। বাজার করতে এলে এই দোকানে অন্তত এক কাপ চা খাওয়া হয়ই। চা পান করা শেষ হলে তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে উঠে পড়েন। রাস্তা পার হয়ে গাড়িতে উঠতে হবে। রাস্তা পার হতে গিয়েই ঘটে গেল দূর্ঘটনা। ঝড়ের গতিতে একটা গাড়ি রাস্তার সাথে তাকে পিষে দিয়ে চলে গেল। এত দ্রুত পুরো ঘটনাটা ঘটল যে কেউ কিছু করতেও পারেনি। গাড়িটাকেও আটকাতে পারেনি। এক্সিডেন্ট করে কোনো ড্রাইভার নিশ্চয়ই চাইবে না পাবলিকের গণপিটুনি খেতে! তাই ড্রাইভারও আর গাড়ি থামায়নি। জানের ভয়ে চলে গেছে।
রাস্তায় পড়ে তখনো দপরাচ্ছিল নিজাম ইসলাম। শরীরে প্রাণ ছিল তখনো। রক্ততে রাস্তা ভেসে যাওয়ার মতো অবস্থা। চাওয়ালাসহ আরো পথচারীরা দৌঁড়ে এসে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে চাওয়ালা নিহিদের বাসায় গিয়ে খবর দেয়। এরপরের ঘটনা আপনাদের জানা!
.
.
ড্রয়িংরুমের এক কোণে সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে নিহি। লম্বা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ফ্লোর ছুঁয়েছে। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে বেজে চলেছে। পাঁচটা প্রায় বাজতে চলল। সালেহা বেগম এবং নিজাম ইসলামের শোবার ঘর থেকে সালেহা বেগমের চিৎকার করা আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। পাগলের মতো কাঁদছেন তিনি। সঙ্গে মিহিরও কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেশী মহিলাদের গলা শোনা যাচ্ছে। শান্তনা দিচ্ছেন সবাই। নিহির থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তরু কাঁদছে। ছেলেরা সবাই গেছে জানাজার নামাজ পড়তে। নিহি আর সবার মতো এখন আর চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। গলার স্বর ডেবে গেছে। গলায় ব্যথা করে শব্দ করে কাঁদতে গেলে। বুকের ভেতর চাপা আর্তনাদ নিয়ে নিশ্চুপে চোখের পানি ফেলছে। আগের খুনসুটিগুলোর কথা মনে পড়ছে। কিছুক্ষণ আগে ভাবি কাঁদতে কাঁদতে বলল কত খুশি নিয়ে বাবা বাজার করতে গিয়েছিলেন।
মেইন দরজায় ঢকঢক আওয়াজ হচ্ছে। যে কাজটা করছে সে নিশ্চয়ই এখন হতবুদ্ধি অবস্থায় আছে। নয়তো কলিংবেল রেখে কেন দরজায় করাঘাত করে, ধাক্কা দিয়ে ডাকবে?
তরু গিয়ে দরজা খুলে দিতেই উপমার বাবা-মা হুড়মুড় করে ভেতরে ঢোকে। উপমার মায়ের পাগলের মতো দশা। নিহি চোখের পানি মুছে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার সামনে দাঁড়াতেই তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“নিহি!”
“কী হয়েছে আন্টি? কাঁদছেন কেন আপনি?” অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে নিহি।
কান্নার গতি বাড়িয়ে তিনি বলেন,
“উপমাকে খুঁজে পাচ্ছি না নিহি! কাল রাত থেকে ওর কোনো খবর নেই।”
“মানে? কীভাবে কী হলো?”
“কাল রাতে ওর বাবার ওষুধ আনতে গিয়েছিল। এরপর থেকেই নিখোঁজ। পুলিশের কাছে গিয়েছি তারা বলেছে ২৪ ঘণ্টার আগে কোনো কেস নিবে না। আমরা কী করব বুঝতে পারছি না মা!”
“অবিশ্বাস্য!”
পরক্ষণেই নিহির মনে হলো যারা উপমাকে থ্রেট করেছিল তারা কিডন্যাপ করেনি তো আবার? এত কঠিন সিচুয়েশনে কেন পড়তে হয় নিহিকেই! একদিকে বাবা মারা যাওয়ার কষ্ট অন্যদিকে উপমা নিখোঁজ হওয়ার চিন্তা। উপমার তো কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। উপমা যেরকম মেয়ে সে কখনোই পালিয়ে যাওয়ার মতো কাজ করবে না। ওর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে যারা আছে তারা উপমার নয় বরং নিহিরই শত্রু। শুধুমাত্র নিজের জন্য নির্দোষ কারো ক্ষতি কী করে হতে দেবে! বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা সাথে নিয়েই উপমার জন্য কিছু একটা করতে হবে।
নিহি জিজ্ঞেস করে,
“কখন গিয়েছিলেন পুলিশের কাছে?”
“কাল রাতেই।”
“এখন চলেন। আমিও যাচ্ছি।”
তরুকে বলে তাদেরকে নিয়ে নিহি পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্য বের হয়। বাড়ি থেকে বের হতেই নিরবের সঙ্গে দেখা হয়। আমানই নিরবকে পাঠিয়েছে। কারণ বাড়িতে কোনো ছেলে মানুষ নেই। এদিকে নীলমকে রেখে আগে আগে আসাও যাবে না। আমান এবং সৈকত নীলমকে সামলাচ্ছে। সঙ্গে লিমনও আছে।
নিরব জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম?”
“পুলিশ স্টেশন।” তাড়াতাড়ি করে উত্তর দেয় নিহি।
নিরব পাল্টা আর প্রশ্ন না করে বলল,
“চলুন৷ আমিও যাব।”
নিহি বাঁধা দিলো না। চারজনে একটা সিএনজিতে উঠে বসলো। জানাজায় গিয়েছিল বলে সাথে কেউই ফোন নেয়নি। তাড়াহুড়োয় নিহিও নেয়নি ফোন। উপমার মায়ের কান্না আর আহাজারি শুনেই নিরব বুঝে গেছে উপমার কিছু একটা হয়েছে। খবরটা আমানকে দেওয়া দরকার। কিন্তু ফোন সাথে নেই। তাছাড়া আমানের কাছেও তো এখন ফোন নেই। পুলিশ স্টেশন গিয়ে পরে কারো ফোন থেকে ফোন করে জানিয়ে দিলেই হবে।
_______________
আবছা আবছা দৃষ্টিতে উপমা চোখ মেলে তাকায়। কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করে। শোয়া থেকে উঠে বসতে গেলেই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। অন্ধকার লাগছে সবকিছু। মনে পড়ে যায় কাল রাতের ঘটনার কথা।
.
ফ্লাশব্যাক
গাড়ির সিটের সাথে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে উপমা। গলা শুকিয়ে কাঠ। শরীরে শক্তি নেই একবিন্দুও। সামনের সিট থেকে লোকটা পানির বোতল এগিয়ে দেয়। অন্ধকার বলে মুখটা দেখা যাচ্ছে না। উপমা পানি পান করল।
গাড়িটা কিছুদূর গিয়ে থেমে গল। গাড়ির হেডলাইট অন রাখল লোকটি। ভড়কে তাকায় উপমা। ছেলেটি পিছন দিকে ঘুরে বসল। জিজ্ঞেস করল,
“খুব অসুস্থ লাগছে?”
গলার স্বর শুনে চিনতে অসুিধা হলো না উপমার। অনলের গলার স্বর! অস্পষ্টভাবে উপমা বলে,
“অনল ভাইয়া!”
অনল একটু যেন হাসলো। আবছা আবছা বোঝা গেল হাসির রেখা। হাসিটা আরো চওড়া করে মৃদু হেসে বলল,
“ঠিকই চিনেছ।”
উত্তেজিত হয়ে উঠল উপমা। মনের মাঝে অসংখ্য প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। সামিয়া কিডন্যাপ করালো। ঐ ছেলেটা ছেড়ে দিলো। আর এখন এখানে অনল। কী রহস্য লুকিয়ে আছে এর মাঝে? অস্তিরতা কাজ করছে উপমার মাঝে। অস্থিরতা আটকিয়ে রাখতে না পেরে অনর্গল প্রশ্ন করা শুরু করে।
“এসবের মানে কী? আপনি এখানে কীভাবে? আমায় কি আপনিই কিডন্যাপ করিয়েছেন? ঐ সামিয়া…সামিয়া মেয়েটা আপনার কী হয়? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। আমায় বলেন প্লিজ!”
অনল রহস্যজনকভাবে মৃদু হাসলো। উপমার চোখ ছোটো ছোটো হয়ে যাচ্ছে। ঘুমেরা জেঁকে বসেছে চোখে। অনল চুপচাপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। উপমা বিড়বিড় করে পূণরায় প্রশ্নগুলো আওড়াচ্ছে। তখন অনল বলে,
“অস্থির হয়ো না। সব বলব। আগে তোমার ঘুম প্রয়োজন। পানিটুকু তোমায় ঘুম পাড়িয়ে দেবে। ঘুমাও।”
এতক্ষণে উপমা সিটে শুয়ে পড়েছে। বিড়বিড় করাও কমে আসছে। অনল আবারও রহস্যজনক হাসি দিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করে।
————–
পুলিশ স্টেশনে গিয়ে উপমার বাবা-মা মিসিং ডায়েরি করে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলল নিরব। সব কথাবার্তা শেষ করে পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে অনেকভাবে বুঝায় ও শান্তনা দেয় নিরব এবং নিহি। তারপর উনাদের বাড়ির রাস্তার ঐ পাড়ে গিয়ে রিক্সায় উঠিয়ে দেয় নিরব।
সন্ধ্যার অন্ধকার আচ্ছন্ন চারদিক। আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিহি। বাবার কথা মনে পড়ছে অনেক। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। নিরব এসে বলে,
“ম্যাম বাড়িতে চলুন।”
চোখের পানি লুকিয়ে নিহি বলল,
“হ্যাঁ, চলুন।”
সামনেই একটা সিএনজি ছিল। ঐ সিএনজিতেই ওরা উঠে পড়ে। আকাশের অবস্থা ভালো নয়। বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। বাতাস হচ্ছে খুব। নিরব প্রশ্ন করে,
“স্যারের নাম্বার কি মুখস্থ আছে ম্যাম?”
নিহি উপরনিচ মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ‘হ্যাঁ’। নিরব এবার ড্রাইভারকে বলল,
“ভাই আপনার ফোন থেকে একটা ফোন করা যাবে?”
“আমার মোবাইলে চার্জ নাই ভাইজান। বন্ধ হইয়া গেছে।” ড্রাইভারের উত্তর।
নিরব একটু হতাশ হলো। ড্রাইভার অন্য রাস্তায় যাচ্ছে দেখে নিরব বলে,
“ভাই এদিক দিয়ে যাচ্ছেন কেন?”
“বৃষ্টি হইতাছে ভাইজান। ঐ রাস্তায় অনেক পানি জমব। গাড়ি নিয়া যাওন যাইব না।”
“যাওয়া না গেলে আপনি গাড়ি থামান। আমরা অন্য গাড়িতে যাব।”
ড্রাইভার সিএনজি থামালো না। উল্টো গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো। নিরব বারবার গাড়ি থামানোর কথা বলা সত্ত্বেও সে গাড়ি থামায়নি। অজানা ভয়ে মনের ভেতর দানা বাঁধছে নিরবের। কোনদিক থেকে কোনদিকে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থামায় সে সেটা বোঝা গেল না। জায়গাটা অনেকটা জঙ্গলের মতো। রেইনকোট পরা কয়েকজন লোক ঘিরে ধরে। নিরব নিহির হাত শক্ত করে ধরে অন্যপাশ দিয়ে নেমে দৌঁড়াতে থাকে। কিন্তু সফল হতে পারে না। আরো কয়েকজন সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। নিরবের হাত থেকে নিহির হাত ছাড়ানোর জন্য জোড়াজুড়ি করে। অন্য একজন কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয় নিরবকে। তবুও নিরব হাত ছাড়ে না। নিহি পুরো ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আছে। কান্না চলে আসছে। আকুতি করে বলে,
“আপনারা ওকে মারছেন কেন? ছাড়েন প্লিজ!”
নিহি অন্য হাত দিয়ে লোকটার পিঠে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। পাশের থেকে আরেকজন বলে,
“ঐ ছেলেটা ছাড়বে না সহজে। কেউ বাঁধা দিতে আসলে তাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বলেছে। বসের আদেশ!”
ছেলেটা এবার ছুরি বের করতেই নিহি চিৎকার দিয়ে বলে,
“না, না। কিছু করবেন না! যেখানে নিয়ে যাবেন আমি যাব।”
নিহির কথা আমলে নিলো না তারা। নিরবের পেটের ভেতর চকচক করা ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো। গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। নিহি জোরে চিৎকার করে। সাহায্যর জন্য আর্তনাদ করে। প্রবল বৃষ্টির শব্দে নিহির শব্দ মিলিয়ে যায়। কেউ আসে না সাহায্যর জন্য। নিহি আর্তনাদ করে কাঁদে। নিরবের রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটির ঢাল বেয়ে নামা পানিতে। নিরবের চোখের পানি মিলিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। ঝাপসা হয়ে আসে দু’চোখ!
চলবে…
#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৪৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
দরজা খোলার শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে উপমা। উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় দরজার দিকে। অনল এসেছে। দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে উপমার সামনা-সামনি বসে। কেন জানি উপমার এখন একটুও ভয় করছে না। সবকিছু জানার কৌতুহল ভয়কে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে। আগের মতোই মৃদু মুচকি হাসি অনলের ঠোঁটে। ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে আছে উপমা।
“ঘুম কেমন হলো?” প্রশ্ন করল অনল।
এতকিছু করেও কত স্বাভাবিক প্রশ্ন! যেনো কিছুই হয়নি। অনলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করল,
“এই নাটকের মানে কী? কেন করছেন এসব? আর কী করতে চলেছেন?”
অনল ডান হাত তুলে বলে,
“রিল্যাক্স! বলব। তুমি খাবে এখন কিছু?”
“আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?”
“নাহ্ তো! শুধুমাত্র নিহির ফ্রেন্ড বলে এক্সট্রা কেয়ার নিচ্ছি।”
“কোনো প্রয়োজন নেই এসবের। আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”
অনল লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
“আচ্ছা শোনো তাহলে।”
.
ঘনকালো মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ। এই বুঝি বৃষ্টি নামবে! কলেজ ছুটি হয়েছে বিশ মিনিটের মতো হবে। উপমা আর দীপ্ত লেকের পাশে হাঁটছে। দুশ্চিন্তায় কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছিল না উপমা৷ নিহিকে মারার হুমকি উপমাকে দিশেহারা বানিয়ে দিয়েছিল। কাউকে বলার জন্য মনটা ছটফট করছিল। দীপ্তর কাছেই কথাগুলো শেয়ার করেছিল উপমা। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে দেখে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে।
দীপ্ত দুটো কফির অর্ডার দিয়ে উপমাকে বলল,
“মাথা ঠান্ডা রাখ। এভাবে ঘাবড়ে যাস না।”
“কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“আমান ভাইয়া আছে তো ওর সাথে। ভয়ের কিছু নেই।”
“তবুও! মন তো বোঝে না।”
এর মাঝেই কফি এসে পড়ে। উপমাকে রিল্যাক্স করার চেষ্টা করে দীপ্ত। নানান রকম মজার কথা বলে হাসায়। আরো কিছুক্ষণ বসে ওরা রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে।
ওদের টেবিলের ঠিক পেছনের টেবিলে উল্টো দিক করে বসে ছিল অনল। থাই গ্লাস ভেদ করে বৃষ্টির ছলাৎ ছলাৎ করা অমায়িক দৃশ্য অবলোকন করছিল। বাড়িতে থেকে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি৷ কাউকে কিছু না বলেই একা হাঁটতে বের হয়েছিল। রিফ্রেশ হওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টে এসে নির্জন জায়গায় বসেছিল। উপমা আর দীপ্তর গলার স্বর চিনতে অসুবিধা হয়নি তার। একবারও তাকায়নি পর্যন্ত ওদের দিকে। শুধু চুপচাপ শুনে গেছে ওদের কথোপকথন। নিহিকে খুন করার থ্রেট দিয়েছে শুনে মাথার রগ দপদপ করে কাঁপতে থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। পরক্ষণে নিজেই নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে। এতদিনে এইটা অন্তত একটু হলেও বুঝেছে যে রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। কে এই লোক যে নিহিকে খুন করতে চায় সেটাই আগে বের করতে হবে। ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি খুঁজে বের করে। কল রিসিভ করার পর এপাশ থেকে অনল জানায়,
“হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেয়ের ছবি আর বাড়ির এড্রেস পাঠাচ্ছি। মেয়েটার ওপর টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স নজর রাখবে।”
.
অনল চুপ থেকে একবার বামদিকে, আবরেকবার ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বসল। উপমা এখনো উৎসুক চাহনী দ্বারা নিবদ্ধকরণ করেছে অনলকে। অনলের নিরবতা উপমাকে পীড়া দিচ্ছে। সে নিজেই জিজ্ঞেস করে,
“তার মানে আপনি সেদিনই জেনেছিলেন কেউ নিহিকে মারার থ্রেট করছে?”
“হ্যাঁ।”
“তারপর? তারপর ঐ লোকগুলো কি আমার ওপর নজর রাখছিল?”
“অবশ্যই। তবে তুমি হয়তো জানো না আমার লোক লাগানোর আরো আগে থেকেই অন্য লোক তোমার ওপর নজর রাখতো।”
“মানে? তারা কারা?”
“আমি জানিনা। হতে পারে ভাইয়ার লোকজন। তোমার সেফ্টির জন্যই রেখেছিল। তবে এখানে আমার জন্য একটা ভালো খবর ছিল। ঐ লোকগুলো শুধুমাত্র তোমার বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার সময় এবং কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময়টুকু নজর রাখতো। রাতের বেলায় তারা থাকতো না। তোমার ওপর নজর রেখেও আমি কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না যে কারা নিহিকে মারতে চাচ্ছে। তবুও অপেক্ষা করেছি আমি। খুঁজে বের করতে সক্ষমও হয়েছি সেই কালপ্রিটকে।”
“সেই মেয়েটা? সামিয়া সুমাইয়ার বোন?”
“হ্যাঁ। ওরা টুইন। সামিয়া বাইরে থেকে পড়াশোনা করতো।”
“ঐ ছেলেটা আমায় ছেড়ে কেন দিলো?”
“তোমাকে যারা কিডন্যাপ করেছিল ওরা সামিয়ার লোকজন ছিল। সামিয়ার লোকজনের মাঝে ফাহিম মানে ঐ ছেলের সাথে আমার দলের জামিলের ভালো সম্পর্ক আছে। আমার লোকজন ওদেরকে ফলো করে। সামিয়াসহ বাকিরা চলে যাওয়ার পর জামিল ফাহিমকে ফোন করে। ফাহিমের সঙ্গে ওর কথা হলে আমি বলি আমার সাথে কথা বলিয়ে দিতে। তারপর ফাহিমের সাথে আমি একটা ডিল করি।”
“ডিল? কীসের ডিল?”
“টাকার! ওর দরকার ছিল টাকার আর আমার দরকার ছিল সামিয়ার মৃত্যু!”
“মানে?”
“মানে খুব ইজি৷ ওর চাহিদামতো টাকা আমি ওকে পেমেন্ট করেছি। তার বিনিময়ে ফাহিম সামিয়াকে দিয়েছে মৃত্যু।”
উপমা আৎকে উঠে মুখের ওপর হাত রাখে। শরীর কাঁপছে ভয়ে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“ক…কীভাবে খুন করলেন তাকে?”
“আমি তো খুন করিনি। করিয়েছি। তুমি ওর হাত-পা বেঁধে চলে আসার পর জামিল ভেতরে যায়। ওর নাম্বার থেকে সামিয়াকে ফোন করে জানায়, ‘আমরা উপমাকে নিয়ে যাচ্ছি। পারলে এসে ঠেকিয়ে দেখাও।’ এতটুকু বলেই জামিল সিমটা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে ফেলে চলে আসে। তখনই অত রাতে সামিয়া সেখানে চলে আসে। তোমাকে না দেখে রেগে যায়। আরো ঘাবড়ে যায় ফাহিমকে বাঁধা অবস্থায় দেখে। সে তো আর জানতো না এসব আমাদের প্রি-প্ল্যানিং ছিল! ফাহিমের বাঁধন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে ফ্লোর থেকে লোহার রড দিয়ে মাথায় বারি দেয় সামিয়ার। মাথা ফেঁটে রক্ত বেরিয়ে আসে। নিজের ওপর ভর রাখতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর ফাহিম ওর আধামরা শরীরটা নিয়ে হাইওয়ের রাস্তায় রাখে। চলন্ত গাড়ি তার মধ্যে মাতাল ড্রাইভার! পিষে দিয়ে যায় ওর রক্তাক্ত দেহটাকে৷ ওর ব্যাগে পরিচয় পত্র ছিল বলে খুব সহজেই পুলিশ ওর বাড়িতে জানাতে পেরেছে।”
উপমা নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। অনলের ঠান্ডা মেজাজ যে খুন পর্যন্তও যেতে পারে এটা বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না। কিন্তু যেই মানুষ নিজের মুখেই অপকর্ম স্বীকার করে সেখানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিশ্বাস না করে উপায় নেই! কান্না পাচ্ছে উপমার। অস্বস্তি নাকি ভয়ে তা বুঝতে পারছে না! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“আপনি একজন ঠান্ডা মাথার খুনি!”
অনল রহস্যজনকভাবে মৃদু হেসে বলে,
“নিহির দিকে চোখ তুলে তাকালেও তার চোখ আমি তুলে নেব। সেখানে ঐ মেয়ে নিহিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে!”
“কেন করেছেন আপনি এসব?”
অনল এবার উপমার মুখের কিছুটা কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে বলে,
“কারণ আমি নিহিকে ভালোবাসি!”
তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। তখন উপমা বলে,
“আমায় কেন আটকে রেখেছেন? ছেড়ে দেন আমায়।”
“দেবো। তবে এখন নয়। আরো কয়েকটা দিন এখানেই থাকো।”
উত্তরের অপেক্ষা না করে দরজা লক করে দিয়ে অনল চলে যায়।
______________
বাড়িতে এসে নিহিকে না পেয়ে আমানের অবস্থা পাগলের মতো। পরিচিত অপরিচিত সব জায়গায় খুঁজেছে। কোথাও নিহির দেখা পায়নি। ভয়ে, আশঙ্কায় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে হৃৎপিণ্ড। এদিকে নিরবও নিঁখোজ। ফোনও বাসায়। নিরবকে তো পাঠিয়েছিল নিহির কাছে থাকার জন্য। সব জায়গায় খুঁজে যখন আবারও নিহির বাসায় ফিরে আসে তখন তরু বলে,
“ভাইয়া নিহি তো এখনো আসলো না!”
আমানের মনে হলো তরু জানে, নিহি কোথায় গেছে। বাড়ির মানুষ টেনশন করবে ভেবে কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একাই খুঁজেছে। তরুর কথায় কিছুটা হলেও আশার আলো খুঁজে পেয়েছে। তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন করে,
“তুমি জানো নিহি কোথায়?”
“উপমার বাবা-মা এসেছিল বাড়িতে। উপমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তাদের নিয়ে পুলিশের কাছে গেছিল। আমার খুব ভয় করছে ভাইয়া। নিহি এখনো কেন আসলো না?”
তরুর কতটা ভয় হচ্ছে তা আমান জানে না। কিন্তু ওর নিজের মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে ভয়টা এখন আরো অনেকবেশি গাঢ়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
“ভয় পেয়ো না। আমি নিহিকে খুঁজে আনব। তুমি বাড়ির মানুষকে সামলে রেখো।”
আমান সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়। উপমা, নিহি, নিরব তিনজনেই নিখোঁজ। কীভাবে সম্ভব এটা? প্রথমে উপমার বাড়িতে গিয়ে জানলো তাদেরকে আগে নিরব আর নিহি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। নিরব তাদের সঙ্গেই ছিল। উপমা আগে থেকেই নিখোঁজ। আর আজ নিরব, নিহি নিখোঁজ। তাহলে কি তিনজনের উধাও হওয়ার পেছনে একজনেরই হাত? সেই একজনটা কে? নিহিকে মারার হুমকি যারা দিয়েছিল তারা?
আমানের মাথা কাজ করছে না। হ্যাং ধরে আছে। পুলিশ স্টেশনে গিয়েও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৪ ঘণ্টার আগে তারা কিছু করতেও পারবে না। রাস্তায় বসে পড়ে আমান। নিয়ে নিজের চুল ধরে নিজেই টানতে থাকে। কান্না আটকাতে পারছে না। রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমে আসছে মানুষজনের আনাগোনা।
.
.
স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার একটা জায়গা। চারপাশে মশা-মাছির উপদ্রব। কোথাও কোথাও সারি সারি লাল, কালো পিঁপড়া। নাম না জানা কিছু পোঁকাও আছে। গা ঘিনঘিন করার মতো পরিবেশ। কিন্তু নিহির কোনো ভাবান্তর নেই। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নিরবের খবর জানার জন্য উতলা হয়ে আছে। কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার উপায় নেই। মুখ বেঁধে রাখা। একজন এসে নিহিকে অন্য একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়। এই রুমটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নিভু নিভু আলো ঘরে। রুমটা বেশ বড়োসরো। কোনো আসবাব পত্র নেই। একটা কাঠের চেয়ার এনে সেখানে নিহিকে বসিয়ে আবারও হাত-পা বেঁধে দেয়। কিছু বলতে চাচ্ছে নিহি। কিন্তু বলতে পারছে না।
একজন নিহির পাশে বসে পাহারা দিচ্ছে। তখন তার ফোনটা বেজে ওঠে। লোকটা ফোন রিসিভ করে লাউড দেয়। হয়তো ইচ্ছে করেই নিহিকে কথাগুলো শোনানোর জন্য! নিহি এবার নিশ্চুপ হয়ে যায়। এপাশ থেকে লোকটি জিজ্ঞেস করে,
“ছেলেটা বেঁচে আছে?”
ওপাশ থেকে কথা ভেসে আসে,
“বেঁচে ছিল। কিন্তু বসের অর্ডার ছিল ওকে মেরে ফেলার। কোনে প্রমাণ যেন না থাকে তাই।”
“কী করেছিস? মেরে ফেলেছিস?”
“হ্যাঁ। লাশ গুম করাও শেষ।”
আর কোনো কথা শোনার জন্য সাহস হলো না নিহির। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মুখ বাঁধা অবস্থাতেই চিৎকার করছে৷ গোঙানির মতো শব্দ বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে। চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় থাকায় নিজেকে ছোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে । সামনের লোকটি এসে এবার নিহির মুখের বাঁধন খুলে দেয়। নিহি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“কেন ওকে মেরে ফেললি তোরা কেন! আমাকে নিয়ে তোদের এতো সমস্যা তোরা আমায় মেরে ফেল। কেন মারলি নিরবকে কেন!”
নিহির চিৎকারে আকাশ-পাতাল এক হওয়ার উপক্রম। কিছুতেই নিরবের মৃত্যু মানতে পারছে না। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে যায়। কাশি দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আল্লাহ্ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। নিয়ে যাও আমায় তোমার কাছে। নিয়ে যাও!”
কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিরবের চেহারা। কত সহজ মনের একজন মানুষ! কী নিষ্পাপ হাসি তার। বোকা বোকা চাহনী৷ কথায় কথায় স্যার,ম্যাম ডাকা। নিহির মুখ থেকে ‘ক্যাবলাকান্ত’ শুনতে চাওয়ার আবদার! শুরু থেকে মানুষটা সাথে ছিল। পাশে ছিল। শেষ সময়টাতেও সে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে নিহিকে। মার খেয়েও হাত ছাড়েনি। নিহিকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ! তার রক্তবর্ণ মুখটা! চোখ ছাপিয়ে পানি আসে নিহির। আকাশের দিকে মুখ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আপনার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী ক্যাবলাকান্ত!”
“আ’ম স্যরি ডিয়ার! নিরবকে মারার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না আমার। কিন্তু কী করব বলো? ওকে ছেড়ে দিলে যে আমি ফেঁসে যেতাম। আর জানোই তো, পাগলও নিজের ভালোটা বোঝে।আর সেখানে তো আমি! নিজের ধ্বংসের জন্য তো আর প্রমাণ রেখে দিতে পারি না। তাই না বলো?”
অশ্রুশিক্ত দৃষ্টি মেলে নিহি সামনে তাকিয়ে আছে। ওখান থেকেই তো কথাগুলো ভেসে আসলো। উঁচু জুতার খটখট শব্দ আসছে। হেঁটে আসছে নিহির দিকে। তার শাড়ির আঁচল ফ্লোর ছুঁয়েছে। শরীর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি গন্ধ। অনেকটা কাছে চলে এসেছে সে। ঘরের নিভু নিভু আলোতে তার মুখটা স্পষ্ট। নিহি বাকরুদ্ধ। তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
“চিনতে কষ্ট হচ্ছে? নাকি বিশ্বাস করতে?”
জিজ্ঞেস করল সেই আগন্তুক।
নিহি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,
“অনামিকা ম্যাম!”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]