ইঁচড়েপাকা এবং সে পর্ব-৫০+৫১+৫২ এবং শেষ পর্ব

0
1360

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫০

খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। ওরিন জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ড বাতাস তার খুব ভালো লাগে।
কিছুক্ষণ আগে রুমে কয়েক টা মেয়ে বসে বসে হাসি ঠাট্টা করছিলো। সারা দিনের ক্লান্তিতে ওরিনের ভীষণ টায়ার্ড লাগছে তার ওপর আবার ভারী গয়না শাড়ি।

ওরিন ফরিদের জন্য অপেক্ষা করছে, ঘড়িতে বারো টা পয়তাল্লিশ বাজে। ওরিন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবে নাকি , ভাবছে। ওরিনের ভাবনায় ছেদ পড়লো দরজা খোলার শব্দে। ফরিদ দরজা আটকে দিলো, শেরোয়ানীর বোতাম খুলতে খুলতে বললো, ” এখনো ফ্রেশ হওনি? যাও ফ্রশ হয়ে ওযু করে এসো। ”

ওরিন ব্যাগ থেকে জামা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এলো। ফরিদ দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছে, ওরিন ফরিদ এক সাথে নামাজ আদায় করলো। নামাজ পড়া শেষ হতেই ফরিদ বাইরে চলে গেলো। ওরিন বিছানায় বসে আছে, তাজা গোলাপের গন্ধে ঘর টা মম করছে। বিছানায় পাপড়ি ছিটানো।

ফরিদ ঘরে ঢুকলো, হাতের পেছনে কিছু একটা লুকোনো। ফরিদ শিউলি ফুলের মালা বের করলো। ওরিন কে বললো ” আমি জানি তুমি শিউলি ফুল ভীষণ পছন্দ করো। ”

” হুম। করি। ”

” এই ফুল গুলো তোমার বাবার বাগানের থেকে চুড়ি করিয়েছি মারিয়াকে দিয়ে। তোমার জন্য মালা গেঁথে এনেছি। ” বলেই ফরিদ ওরিনের চুলে বেধে দিলো। ওরিন স্মিথ হাসলো। ফরিদ ওরিনের হাতের পিঠে চুমু দিলো। আগে ফরিদের দিকে তাকালে, রাগ লাগতো নানা রকম ফন্দি আটতো আর আজ ফরিদ কে দেখে ওরিনের ভীষণ লজ্জা লাগছে।

——————————–
সকাল আটটা কি সারে আটটা বাজে। কেউ এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। খালামনি আংকেল নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছে। নানা ভাইও ঘুমে। আয়শা এবং সহকারী মহিলা নাস্তা বানাচ্ছে। আয়শা চা কাপে ঢেলে নানা ভাইয়ের রুমে গেলো। নানা ভাইয়ের দরজার টোকা দিতে নানা ভাই দরজা খুলে দিলো। আয়শা নানা ভাই কে চা দিয়ে। বাবার রুমে গেলো, বাইর থেকে দরজা খোলা আয়শা রুমের ভেতরে ঢুকে অবাক হলো, বাবা বুকে দু হাত চেপে ঘুমিয়ে আছেন।

আয়শা পাশের টি টেবিলে,চায়ের কাপ রেখে বাবা কে ডাক দিলো। আফজাল সাহেব নড়লেন না। আয়শা এবার একটু অবাক হলো, বাবা তো এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না। ফজরের নামাজ আদায় করে বারান্দায় বসে থাকেন আর না হয় ছাদের যায়। আয়শা আফজাল সাহেবের হাত ধরে বললো…

” বাবা ওঠো। বেলা হয়েছে তো। ”

আয়শা লক্ষ্য করলো আফজাল সাহেবের হাত ঠান্ডা হয়ে আছে। ঠোট দুটো শুকনো। আয়শা হাতের পার্লস চেক করে চমকে গেলো। আয়শা বাবার বুকে মাথা রাখলো, আফজাল সাহেবের পুরো শরীর স্মিথ হয়ে গেছে। আয়শা জোরে বাবা বলে, চিতকার দিলো…

আয়শার চিতকার শুনে সহকারী মহিলা দ্রুত রুমে প্রবেশ করলো। আয়শা কান্না করতে করতে বললো ” খালা নানা ভাই কে ডাক দাও। ডাক্তার কে ফোন করো বাবার হার্ড ব্রিড বন্ধ হয়ে গেছে। ” সহকারী মহিলা দ্রুতো ডাক্তার কে কল দিলেন। ততক্ষণে বাসার সবাই আফজাল সাহেবের রুমে চলে গেছে।

আয়শার নানা ভাই আফজাল সাহেবে বুকে মাথা রেখে, হার্ডের শব্দ শোনার চেষ্টা করলেন চুপ করে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়শা কান্না করেই যাচ্ছে। ” নানা ভাই বাবার কি হলো? আমার বাবা কে উঠতে বলো না?”

কালাম সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। চোখ দুটো ভার হয়ে আসছে। কি ভাবে বলবে আফজাল আর নেই। মেয়েটা তো পাগল হয়ে যাবে। কালাম সাহেবে খুব কষ্ট হচ্ছে, এক বার যদি আফজাল কে বুকে জরিয়ে বলতে পারতেন,’বাবা তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আমার মেয়ে তোমাকে বিয়ে করে সবচেয়ে ঠিক কাজ করেছে। ‘

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সাহেব এলেন। আফজাল সাহেবের পার্লস হার্ট চেক করে বললেন…
” উনি সম্ভবত গতকাল রাতেই মারা গেছেন। তাই বড়ি টেম্পারেচার ঠান্ডা হয়ে গেছে।”

কালাম হাসেব ভাঙ্গা কন্ঠে বললেন “কি হয়ে ছিলো আফজালের?”

” ঘুমের মধ্যেই হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। তাই বুকে হাত দিয়ে ছিলেন।”

আয়শা এক কোনে বসে, ফুপিয়ে কান্না করছে। ওরিন ঘরে ছুটে ঢুকলো, কিছুক্ষণ আগেই সহকারী মহিলা ওরিন কে ফোন করে সব কিছু বলেছে। ওরিন আফজাল সাহেব কে দেখে কান্নায় ভেঙে পরলো। গত কালই তো বাবা হাসি মুখে তাকে বিদায় দিলো।কে জানতো সে হাসি ওরিনের দেখা বাবার শেষ হাসি হবে।

ফরিদ ওরিন কে জরিয়ে ধরে রেখেছে। সে খুব ভালো করেই ওরিনের কষ্ট বুঝতে পারছে৷ সে ও যে অনাথ। বাবা মা হারা একটা ছেলে। এই বেদনার সাথে সে তো খুব আগে থেকেই পরিচিত। ফরিদ বাম হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছলো। নাছিম রুমের এক কোনার দাঁড়িয়ে আছে, এইতো সে দিন এক টেবিলে বসে দুজন খাবার খেলো আজ সে মানুষ টা নেই। ভাবতেই নাছিমের খারাপ লাগছে। এই মূহুর্তে কি বলে সে আয়শাকে শান্তনা দিবে। বাবা মা হারালে এর কোন স্বান্তনা হয় না। যে এতিম হয় সে বুঝে কষ্ট টা।

আফজাল সাহেবের দাফন কাজ শেষ করে মাগরিবের পরে সবাই বাসায় এলো। আয়শা দাদীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ওরিন খাটের এক কোনে বসে আছে। ওরিন রুগ্ন কন্ঠে বললো ” মা চলে গেলো। মায়ের পরে যাকে বাবা আর মায়ের স্থান দুটোই দিয়েছি তাকেও আল্লাহ নিয়ে গেলো। আমরা তো এখন অনাথ।”

শেহতাজ বেগম ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” শান্ত হও ওরিন। আমি বুঝি তোমাদের কষ্ট টা। আল্লাহ তোমাদের সহায় হবেন। ”
আয়শার চোখের পানি দাদীর কাপরে পড়ছে। এই মূহুর্তে মেয়ে দুটো কে কি ভাবে সামলাবে সেটাই শেহতাজ বেগম ভাবছেন।

ডাইনিং টেবিলের পাশে কালাম সাহেব ফরিদ নাছিম এবং তুষার আরো লোকজন বসে আছে। কালাম সাহেবের ভেতরে ভেতরে নিজেকে গিলটি ফিল হচ্ছে। নিজেই সম্পর্কের মাঝে একটা বেড়া-জাল সৃষ্টি করেছিলেন, যদি আফজাল কে আপন মনে করে নিতেন তাহলে হয়তো আরেকটু ছেলেটাকে স্নেহ করা যেতো।

আমরা মানুষেরাই এমন “__বেঁচে থাকতে কেউ কাউকে আপন করে নেই না। মরার পরে আপন করতে চাই। কিন্তু তখন মানুষটাই কাছে থাকে না__”

–রুহি জাহান (মায়া)

রাত দশ টা কি সারে দশটা বাজে দাদী প্লেটে ভাত নিয়ে বসে আছেন। আয়শা ওরিন সারাদিন কিছু খায় নি। খুব কষ্টে ওরিনে কে একটু খাবার খাওয়াতে পারলেও আয়শ কে পারে নি। আয়শা বাবার রুমের বারান্দায় গিয়ে বাবার চেয়ারের পাশে বসে আছে। নাছিম দাদীর কাছে গিয়ে বললো।
” তোমার কথা মতো, ফরিদ কে বাসায় পাঠিয়েছি তোমার কিছু জিনিসপত্র আনতে। তুমি এখনে কতো দিন থাকবে? ”

শেহতাজ বেগম বললেন
” শুধু আমি কেনো? তোরাও থাকবি। নিকট আত্নীয় মারা গেলে কম পক্ষে তিন দিন থাকতে হয়। এটা আমাদের দ্বায়িত্বর মধ্য পড়ে নাছিম। ”

” ঠিক আছে দাদী। তুমি যা বলবে তা-ই হবে। ”

” আয়শার খালার কেমন যেনো গাঁ ছাড়া ভাব। এই পরিস্থিতিতে মানুষিক সাপোর্ট খুব প্রয়োজন বুঝলি।”

” হ্যাঁ। আমিও লক্ষ করেছি, তিন দিন আগে থেকে। ”

” তুই একটু দেখ না খাওয়াতে পারিস নাকি।” বলেই শেহতাজ বেগম স্যুপের বাটিটা নাছিমের হাতে দিলো। নাছিম আয়শার কাছে গেলো। আয়শার পাশে গিয়ে বসলো। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আয়শা নাছিমের দিকে তাকালো।

” সারা দিন কিছু খাননি শরীর দূর্বল হতে পারে। প্লিজ একটু হলেও খান। ”

বলেই নাছিম চামুচ টা এগিয়ে দিলো, আয়শা স্যুপ টা মুখে নিলো। কোনমতে গিলে বললো ” প্লিজ আর না। ভালো লাগছে না আমার। ” নাছিম খাওয়ার জন্য জোর করলো না। এই পরিস্থিতিতে খাবার ভেতরে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। নাছিম আয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

আয়শা আগের মতোই বাবার চেয়ারের পাশে হেলান দিয়ে বসে রইলো। আয়শার চোখের কোনে নোনা পানি জমছে।


চলবে।

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫১

কাঁচের দেয়াল ভেদ করে সূর্যের কিরণ রুমে প্রবেশ করছে। হালকা শীত পড়েছে, টেবিলে রাখা পেপার গুলো মৃদু উড়ছে। সে দিনের পর এক মাস হয়েছে, আয়শার বাবা মারা গেছেন। সে দিনের পর থেকে আয়শা ও একটু একটু করে বদলেছে। ওরিন ও এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। ওরিন বেশি ভাগ সময় আয়শার কাছে থাকতে চাইলে ও আয়শা ওরিন কে নিজের সাংসারিক কর্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। তার জন্য তা বোন কেনো, তার স্বামী কে সময় দেবে না।

আয়শার ও অফিসে যাওয়া হয় নি আর। নাছিম তাকে খুব একটা জোর করেনি। তবে সবচেয়ে অবাকে বিষয় হলো, এক মাসে আয়শা কখনো নাছিম কে দেখার জন্য ছটফট করেনি। নাছিমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। বিষয় টা নাছিমের খারাপ লাগলেও আয়শার মেন্টাল সিচুয়েশনে কথা ভেবে চুপ করে রয়ে গেছে।

ওরিন এক ধ্যানে টেবিলে রাখা পেপার ম্যাটার দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্যের এক ফালি রোদ কাঁচের ম্যাট টা চিক চিক করছে। ফরিদ রান্না ঘরে ঢুকলো। ওরিন কে আন মনে ভাবতে দেখে বললো…

” কি ভাবছো ওরিন?”

ওরিনের ধ্যান ভাংতেই, ওরিন এদিক সেদিক তাকালো। ছুড়ি দিয়ে সবজি কাটতে কাটতে বললো, ” কিছু না। তোমার কিছু লাগবে? ”

” না। আমি তো মিষ্টি চেহারা দেখতে এসেছি। ”

ওরিন স্মিথ হেসে বললো ” ও তাই নাকি জনাব? ”

” জ্বী বেগম সাহেবা। ”

” আপনি এখন যান। আপনার বেগম কাজ করছে। ”

” আমার বেগমের কি আমার জন্য সময় হবে না?”

বলেও ওরিনের ওরনার আঁচল ধরে ঘ্রান নিলো। ওরিন ওড়না টা ছাড়িয়ে, বললো। ” তুমি এখন যাবে কি না? হুট করে কেউ চলে এলে কি মনে করবে? অফিসে ও তো যেতে হবে যাও রেডি হয়ে আসো।”
ফরিদ কাচু মাচু মুখ করে চলে গেলো। বিয়ের আগে ওরিন ফরিদ কে ভয় পেতো এখন ফরিদ ওরিন কে ভয় পায়, ওরিনের ধমকের প্রতি উত্তর দেওয়ার সাহস পায় না। ব্যাপার টা ওরিনের খুব মজা লাগে।

নাছিম রেডি হয়ে, টেবিলে বসেছে মাত্র। ওরিন নাস্তা নিয়ে নাছিম কে বেরে দিলো। নাছিম ওরিন কে ধন্যবাদ জানিয়ে খাওয়া শুরু করলো। ওরিন প্রশ্ন করবে কি না বুঝতে পারছে না। ওরিন ক্ষানিক ক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বললো, ” ভাইয়া একটা প্রশ্ন ছিলো। ”

নাছিম খাওয়া থামিয়ে ওরিনের দিকে তাকালো। গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো ” হুম বলো ওরিন। ”

” আপু কি আপনার সাথে স্বাভাবিক ভাবে মেশে? আমি বলতে চাচ্ছি যে বাবা মারা যাবার পর আগের মতো তো আপা সবার সাথে কথা বলে না। ”

” বুঝতে পেরেছি, তুমি কি বলতে চাচ্ছো। আসলে আয়শা অনেকটাই বদলে গেছে। আজকের আয়শা এবং আগের আয়শার মাঝে আকাশ সমান পার্থক্য। আয়শা আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলেনা, আগে মতো দুষ্টুমি করে না। চুপ হয়ে গেছে।”

ওরিন ফট করে বললে ফেললো ” আপনি কি আয়শা আপু কে ভালোবাসেন?”

” ঠিক কতটা ভালোবাসি তা ব্যাক্ত করতে পারবো না। আয়শা আমার জীবনের প্রথম নারী যাকে আমি চাই খুব চাই। ”

ওরিন চুপ করে রইলো। এই মূহুর্তে তার করনীয় টা কি সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। নাছিম আবার বললো ” ঠিক কি করলে আগের আয়শা কে ফিরে পাবো? বলতে পারো ওরিন?”

ওরিন কিছু বললো না। নাছিম উঠে গেলো, যে করেই হোক আগের আপুকে ফিরে আনতে হবে৷ এভাবে চললে তো আয়শা আপুর মেন্টালি সিক হয়ে যাবে। তখন হয়তো আয়শাকে স্বাভাবিক করা টা আরো মুশকিল হয়ে যাবে।
ফরিদ দ্রুত নাস্তার টেবিলে বসলো, ওরিনের উদ্দেশ্য বললো ” আজ তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে আকাশ ভাই আসবে। ”

” আকাশ কে?”

” আকাশ ভাইয়া কে তুমি চেনো না। উনি টপ মডেল দের মধ্য একজন। ”

ওরিন ঠোঁট উল্টিয়ে না ইশারা করলো। ফরিদ হেসে ফোনটা বের করলো। মারিয়ার বিয়ের ভিডিও খানিকটা অংশ ওরিন কে দেখালো। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আকাশ আয়শার সাথে কথা বলছে, তার মাঝেই নাছিম চলে আসে,ক্ষানিকটা জোর করেই নাছিম আকাশ কে সরিয়ে নিয়ে গেলো। ফরিদ ভিডিও স্টপ করে,” দেখিয়ে বললো উনি আকাশ ভাইয়া।”

ওরিনের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো।সে দিন নাছিম ভাইয়া ও বলেছিলো লেডি স্টাফ ওনাকে টাচ করেছে সে জন্য আয়শা আপু অনেক অভিমান করেছিলো। ওরিন জোরে নিশ্বাস নিলো, আয়শা আপুকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে যে কোন রিস্ক নিতে ওরিন রাজি।

” কি ভাবছো ওরিন? ”

” ভাবছি কিছু একটা। এখন বলা যাবে না। ”

” তাহলে না হয় পরে বলো। দাদী এবং তুমি নাস্তা করে নিও আমি আসছি এখন।”

” আরে ঠিক মতো তো নাস্তা করলে না?”

ফরিদ ওরিনের কপালে চুমু দিয়ে বললো ” রাতে ডিনার এক সাথে করবো। ” বলেই ফরিদ চলে গেলো। ওরিন আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে কপালে স্পর্শ করে হাসলো। প্রিয় মানুষ টাকে আপন করে পাওয়া যে বড্ড সুখের, ফরিদ কে পেয়ে তা ভালো ভাবে বুঝতে পারছে ওরিন। ভালো থাকুক ভালোবাসার ব্যক্তিটা।

দাদী হালকা কেঁশে রুম থেকে বের হলো। ওরিন দাদীর কাছে গেলো। দাদী বললেন, “জাহুরা ( সহকারী মহিলা) কি আজ আসে নি?”

” নাহ দাদী ওনার ছেলে৷ নাকি অসুস্থ। আমি আসতে বারন করেছি, বাচ্চা ছেলেটার এখন মায়ের দরকার। ”

দাদী স্মিথ হাসলো, “তোমরা দুটো বোন এতো সহনশীল। আল্লাহ পাক তোমাদের সব সময় ভালো করবে। ”

ওরিন বললো ” চলুন দাদী নাস্তা করি।”

ওরিন শেহতাজ বেগম কে নাস্তা দিলো। দাদী খেতে খেতে বললেন ” আয়শার সাথে তোমার কথা হয়েছে?”

” গত কাল রাতে কথা হয়ে ছিলো। দাদী আমি নানা ভাইকে এ বাসায় ডাকতে চাই। কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। ”

” রাতে ডিনারে ডাকো। কিন্তু কি প্লান আমাকে বলা যায়?”

” হ্যাঁ বলবো দাদী রাতে। সবাই এক সাথে হলে তখন।”

ওরিনের পরিকল্পনা মতো রাতে নানা ভাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো। সন্ধ্যা হতেই ওরিন রান্না করে নিলো, দাদীর ছোট বেলায় গল্প ও শুনলো, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো দাদী যখন টিন এজের ছিলো তখন নাকি সে প্রেম করেছিলো। পঞ্চাশ বছর পর নাকি তার সে প্রেমিকের দেখা হয়েছে। ওরিন উত্তেজিত কন্ঠে বললো ” ওয়াও দাদী পঞ্চাশ বছর পর তাকে দেখে আপনি চিনিতেও পেরেছেন?”

—-“আমরা যাদের প্রকৃত পক্ষে ভালোবাসি, শত চেষ্টা করেও তাদের ভুলতে পারি না।ভুলা এতো সহজ না। যুগ যুগ পার হয়ে গেলেও সেই চেনা মুখ খানা আমাদের সামনে ভাস্যমান!”—-

~ রুহি জাহান মায়া!

ওরিন আহ্লাদী কন্ঠে বললো,” দাদী আপনার প্রেমিক কে আমি একটি বার হলেও দেখতে চাই। কে সেই সৌভাগ্যবান মানুষ টি।”

শেহতাজ বেগম কিছু বললেন না। চুপ করে বসে রইলেন। পিচ্চি মেয়েটা যদি জানতে পারে সে সৌভাগ্যবান লোকটা ওর নানা কি না কি ভাববে।

ওরিন শেহতাজ বেগমেকে জরিয়ে ধরে বললো ” আচ্ছা দাদী তার কি বউ আছে?”

” ছিলো। মারা গেছে কিছু বছর আগে। ”

” তাহলে আপনি সিংগেল সেও সিংগেল। আপনাদের ডবল করে দিলে মন্দ হয় না?”

” ধুর পাগলী মেয়ে কি বলছিস এসব? বুড়ো বয়সে লোকে কি বলবে। ”

” উফফ দাদী লোকেতো বলবেই লোকের কাজই তো বলা। আমাদের এই ছোট জীনবটাকে উপভোগ করা উচিত না হলে হুট করে মরে গেলে আফসোস রয়ে যাবে। আয়শা আপুকে সেটিং করি তার পর তোমার পালা।”

বলেই ওরিন চোখ টিপুনি দিলো। শেহতাজ বেগম হাসলেন। পরক্ষণেই ওরিনের কথা গুলো ভাবলেন, আসলেই তো জীবন টা খুব ছোট, আমাদের শখ আল্লাদ অনেক, বয়স বেড়ে যায়। আর এই সংখ্যা মাত্র বয়সে কথা চিন্তা করে, সমাজের কথা চিন্তা করে আমরা কত ইচ্ছা কে দমিয়ে রেখে দেই। যা অপূর্ণই রয়ে যায়।

রাত আটটা নাগাদ ফরিদ নাছিম বাড়ি ফিরলো। কিছুক্ষণ পর নানা ভাই আসলো। ওরিন নানা ভাই কে দেখে খুশি হলো, কালাম সাহেব নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ভেতরে যতেই উনি সোফায় শেহতাজ বেগম কে দেখতে পেলেন। ওরিন নানা ভাইয়ের উদ্দেশ্য বললো,

” নানা ভাই তুমি বসো। আমি নাস্তা নিয়ে আসি। ”

কালাম সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন, শেহতাজ বেগম বললো ” বসছো না কেনো? পঞ্চাশ বছর পর প্রেমিকার পাশের সোফায় বসতে কি খুব লজ্জা লাগছে। ”

” লজ্জা লাগবে কেনো? তুমি কেমন আছো? ”

” ভালো আছি। আয়শা এখন কেমন আছে?”

” খুব একটা ভালো না। বড্ড চিন্তা হয় মেয়েটা কে নিয়ে।”

” চিন্তা করো না। ওরিন উপায় বের করেছে। ”

ফরিদ নাছিম ড্রইংরুমে এসে দাদীর কথা শুনে চমকে গিয়ে বললো ” উপায়?”

নাস্তার ট্রে টেবিলে রেখে ওরিন বললো ” হ্যাঁ উপায়। আমার প্লান যদি সাকসেসফুল হয়। আয়শা আপু স্বাভাবিক হবে আমার ধারনা। ”

ওরিন তার পরিকল্পনা কথা বললো।


চলবে

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫২/শেষ পর্ব

ভর দুপুরে জানালা দরজা আটকে রুমে একা বসে আছে, বারান্দার গ্রীলের সাথে ঝোলানো, একটা টব বাতাসের সাথে টব টা দুলছে এবং টবে রাখা ফুল গুলোও। আয়শা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। টবে সতেজ লাল টক টকে ফুল দুটোর নাম আয়শা জানে না। দু মাস আগেই বাবা টবে গাছটা বুনেছিলো।

দরজায় ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে আয়শা উঠে গিয়ে, দরজা টা খুললো। নানা ভাই দাঁড়িয়ে আছে, আয়শা দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। নানা ভাই ভেতরে এলেন সোফায় বসতে বসতে বললেন,
” কেমন আছো দিদি ভাই। ”

আয়শা ক্ষানিক ক্ষন তাকিয়ে, থেকে বললো “ভালো আছি। ”

” তুমি ভালো থাকলেই আমি খুশি। তোমাকে একটা সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছি।”

আয়শা কালাম সাহেবের দিকে তাকালো। শুকনো গলায় ঢোক গিলে,বললো ” কি সিদ্ধান্ত নানা ভাই?”

” পনেরো দিন পর তুমি আমার সাথে ইউরোপ যাবে। সে খানে স্থায়ী নাগরিক হওয়ার ব্যাবস্থা করবো আমি। ও দেশেই তোমার ভবিষ্যতে বিয়ে হবে। ”

” কি বলছো তুমি? এই বাসায় কে থাকবে? বাবার এতো স্মৃতি রেখে আমি যেতে পারবো না। তাছাড়া…”

” থামলে কেনো? তাছাড়া কি?”

” কিছু না। আমি যাবো না। ”

” অনেক টাকা খাইয়ে, দ্রুত তোমার কাগজ পত্র রেডির ব্যাবস্থা করেছি। ”

আয়শা চুপ করে রইলো। নিজের জন্ম স্থান ছেড়ে কি ভাবে যাবে সে। বাবার এতো স্মৃতি, আর নাছিম কে ছাড়া কি ভাবে থাকবে। আয়শার ভেতর টা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। কালাম সাহেব আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ” আশা করি তুমি আমার কথার অবাধ্য হবে না। যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দাও। ”

আয়াশা ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসছে। আয়শা চেয়ারে থ হয়ে বসে রইলো, আয়শার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, সব কিছু কেমন উল্টে পালটে যাচ্ছে। আয়শা চুল গুলের গোড়া শক্ত করে চেপে বসে রইলো। যে ভাবেই হোক নাছিমের সাথে তাকে দেখা করতে হবে, আয়শা ফোনটা হাতে নিলো। নাছিমের নম্বরে ডায়েল করলো, রিং হওয়ার পরও নাছিম কল টা তুললো না। আয়শা হতাশা হয়ে আরো কান্না কাটি করা শুরু করে দিলো।

আয়শা হেচকি তুলে কান্না করছে, ঠিক তখনি আয়শার কাধে কেউ একজন হাত রাখলো। আয়শা পেছন ঘুরে দেখলো ওরিন এসেছে। আয়শা চোখ দুটো মুছলো, নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো ” তুই এখানে?”

” হ্যাঁ। নানাভাই আসতে বললো, তুমি কান্না করছো কেনো?”

” কান্না করছি না। চোখে কিছু একটা পড়েছে জ্বলছে খুব। ”

ওরিন আয়শার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” এভাবে মিথ্যা কথা কেনো বলছো? তুমি যে সত্যি কান্না করছো তা আমি বুঝতে পারছি।”

আয়শা নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো, ঢুকরে কান্না করতে করতে বললো ” নানা ভাই বলেছে, পনেরো দিন পর আমাকে নিয়ে ইউরোপ চলে যাবে।”

” তাতে কি হয়েছে। তুমি সুন্দর একটা দেশে যাবে, আধুনিক লাইফস্টাইল হবে। তুমি কান্না করছো কেনো?”

” আমি কি ভাবে থাকবো, এই বাড়ি ছেড়ে তোকে ছেড়ে নাছ…”

” কি হলো থামলে কেনো? বলো?”

আয়শা চোখ মুছতে মুছতে বললো, ” কিছু না। তুই নানা ভাই কে বুঝা আমি যাবো না।”

” তোমার কাগজ পত্র আলরেডি রেডি হয়ে গেছে আপু। প্লিজ তুমি কেঁদো না। ”

আয়াশা ওরিনের কথা কানে, নিলো না। উঠে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, আয়শা একটা রিক্সা নিয়ে ধানমন্ডি তার অফিসে গেলো নাছিমের খোঁজ নেয়ারর জন্য। আয়শা অফিসে পৌছানো মাত্রই আয়শা অফিসে ঢুকবে এমন সময়, ফরিদ বললো, “আয়শা আপু আপনি? ”

” হ্যাঁ ফরিদ। না না নাছিম স্যার কোথায়? ”

” ভাইয়া তো কিছুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে মিটিংয়ে। আই ডোন্ট নো, কোথায় । উনি কবে আসবে, আমি সঠিক জানি না। সম্ভবত চোদ্দো পনেরো দিন পর। ”

” কিহ। আমি তো পনেরো দিন পর চলে যাবো। এক বার কি দেখতেও পারবো না লোকটাকে। ”

” কোথায় যাবেন আপু? ”

” এখন বলার সময় নেই তুমি ওরিনের কাছ থেকে জেনে নিও। আচ্ছা নাছিম স্যার আমার কল কেনো তুলছেন না?”

” সেটা ভাইয়া সঠিক জানে। আমার লেট হচ্ছে আমি যাচ্ছি আপু। ”

বলেই ফরিদ চলে গেলো। আয়শার ভীষণ অভিমান হচ্ছে তার নিজের ওপর নাছিমে ওপর। এই ভয়ংকর লোকটা কি ডিলের আর সময় পেলো না। এখনি কেনো ওনার যেতে হলো। আয়শা এখন কি করবে। ক্লান্ত শরীর টাকে নিয়ে আয়শা হাটতে শুরু করলো।

————————————
” আমার অভিনয় টা কেমন ছিলো?”

” দূর থেকে দেখে যা বুঝলাম, ভালোই ছিলো। আমার সাথে কথা বলার সময় ও আয়শা আপু নাছিম ভাইয়ার নাম নিতে গিয়ে থেমে গেছিলো। ”

” হ্যাঁ হ্যাঁ ওরিন ঠিক বলেছিস। আমাকেও কিছু একটা বলছিলো।”

” আপু ভাংবে তবুও মচকাবে না। দুজেন মধ্য কাউকে আমি কষ্টে দেখতে পারছি না। ”

বলেই ওরিন নিঃশ্বাস নিলো,ওরিনের ফোনে কল এলো ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফরিদ বললো,
” হ্যালো ওরিন, আয়শা আপু অফিসে এসেছিলো।কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেলো। ”

” তুমি শিওর? ”

” ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট। আমার সাথে কথাও হয়েছে।”

” নাছিম ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছে। ”

” হ্যাঁ। এবার প্লেন ‘বি’ অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। আই আম শিওর টা সাকসেসফুল হবে।”

” ইনশাআল্লাহ। ” বলেই ওরিন ফোনটা কেটে দিলো।

আয়শা বাড়ি ফিরতেই ওরিন কে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি। ওরিন আয়শার কান্নার কারণ টা জানলেও কিছু বলতে পারছে না। আয়শার ভেতর টা পুরে যাচ্ছে। কেনো এই লোকটা আয়শা কে এতো কষ্ট দেয়, একটি বার ফোন তুললে কি এমন ক্ষতি হতো?

—————- পনেরো দিন পর————-

দেখতে দেখতে কেটে গেলো পনেরোটা দিন। আজ রাতের ফ্লাইটে আয়শা এবং নানা ভাই ইউরোপ চলে,যাবে। বিকেলের কড়া রোদে আয়শা বারান্দায় বসে আছে, ওরিন রুমে আয়শার জামা কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে এবং আপন মনে কথা বলেই যাচ্ছে । রোদের আলোতে আয়শার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে।

আয়শার কোন কথা উত্তর না পেয়ে ওরিন বারান্দায় এলো,” কি করছো আপু? আমি তো সেই কখন থেকে বক বক করেই যাচ্ছি। ”

” কিছু করছি না। এমনি বসে আছি। ”

ওরিন আয়শার পাশে বসলো, আয়শার কাধে ওরিন মাথা রাখলো,আয়শার চোখ দুটো ছল ছল করছে আয়শা জরানো কন্ঠে বললো,
” আমার কিছু ভালো লাগছে না। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ”

” কেঁদো না আপু। আচ্ছা চলো আমার একটু ঘুরতে যাই। ”

” এখন?”

” হুম। তোমার ব্যাগ প্যাকিং কমপ্লিট। আর যাবে তো রাতের ফ্লাইটে অনেক সময় আছে। ”

আয়শা আর কিছু বললো না, ছোট বোনের আবদার কি ভাবে অপূর্ণ রাখে। নাছিমের মুখ খানা আয়শার চোখের সামনে ভাসছে, পনেরো টা দিন এই লোকটা আয়শাকে একটি বার ফোন করে নি আয়শার খোঁজ নেয় নি, আয়শার এই অনূভুতির পরিনাম কি হবে?

ওরিন এবং আয়শা রমনা পার্কের দিকে রিক্সা দিয়ে যাচ্ছে , আয়শা হঠাৎ দেখলো নাছিম একটা মেয়ে কে নিয়ে হোটেলে ভেতরে ঢুকছে৷ আয়শা মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো। রাগে দুঃখে ক্ষোভে আয়শার গাঁ শির শির করছে। আয়শা রিক্সা থামাতে বললো,

” কি হলো আপু রিক্সা থামাতে বললে কেনো?”

” আমি এই মাত্র নাছিম স্যার কে হোটেলের ভেতরে যেতে দেখলাম।”

” তুমি ভুল দেখেছো আপু।”
বলেই ওরিন ঠোঁট টিপে হাসলো। আয়শা ওরিনের কথায় কান দিলো না। দ্রুত হোটেলের ভেতরে ঢুকলো। নাছিম মেয়েটা কে নিয়ে দশ তালায় উঠলো আয়শা অন্য লিফটে উঠলো, আয়শার সব কিছু এলোমেলো লাগছে। সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।

লিফটা থামলো দশ তলায় নাছিম একটা রুমে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে দিলো। আয়শা দরজায় কলিং বেল বাজালো। মেয়েটা এসে দরজা খুলতেই আয়শা চুলের মুঠি চেপে বললো,
” কে তুই? আমার নাছিম স্যারের সাথে কি সম্পর্ক তোর। ”

মেয়েটা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, আয়শা আরো জোরে চুলে মুঠি চেপে ধরলো, নাছিম অবাক হওয়ার ভান ধরে বললো, ” আপনি ওকে মারছেন কেনো?”

” বেশ করেছি মেরেছি। আপনি পনেরো দিন ধরে এই মিটিং করছেন তাই না। ”

নাছিম পকেটে হাত দিয়ে বললো, “তাতে আপনার কি?”

আয়শা নাছিমের শার্টের কলার চেপে ধরে, কান্না করতে করতে বললো ” তুই সবচেয়ে বেশি খারাপ। লম্পট দুঃশ্চিত লোক ।”

বলেই আয়শা কান্নায় ভেংয়ে পড়লো। নাছিম আয়শা কে চেপে ধরলো। আয়শা নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করছে নাছিম আয়শার মাথা তার বুকের মাঝে চেপে ধরলো। আয়শা ছট ফট করছে, গলার কন্ঠে ভেংগে গেছে আয়শার।
” ছার আমাকে লম্পট দুঃশ্চিতা একটা। ”

নাছিম হাসতে হাসতে বললো, ” প্লিজ কেঁদো না। এটা প্লান ছিলো। তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না তার প্রমাণ করার জন্য। ”

” কিহহ! এই মেয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক নেই?”

” আরে ও তো ফরিদের ফ্রেন্ড বাধনের বোন। তোমাকে পরিক্ষা করার জন্য এনেছি। বেঁচারি মার খেলো। ”

” আপনার সাথে যদি ভবিষ্যতে আর কোন মেয়েকে দেখি তাহলে আছড়ে আছড়ে মারবো। মাইন্ড ইট। ”

” ইশশ আমার রাগী বউ টা। ”

” আমি কারো বউ না। কিছুক্ষণ পর বিদেশ চলে যাচ্ছি।”

নাছিম আয়শা কে জরিয়ে ধরে বললো, “আমার থেকে দূরে সরলে ঠ্যাং ভেংগে দিবো। ” বলেই নাছিম আয়শার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।

কিছুক্ষণ পর………………

” একটা কান্ড ঘটেছে।”

নাছিম চোখ বড় বড় করে বললো ” কি?”

” আজ রাতে আমার ফ্লাইট। এখন কি হবে?”

” একটা উপায় আছে। আমরা এখনি কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নেই। ”

” এখনি?”

” হুম৷ ”

অতঃপর আয়শা এবং নাছিমের বিয়ে সম্পন্ন হলো। আয়শা নাছিম কাজি অফিস থেকে বের হলো, নাছিম এবং আয়শা হাত ধরে হাটছে আয়শার ঠোঁটের কোনে হাসি। নাছিম আয়শার হাতের পিঠে চুমু দিলো।

বাসায় যেতেই ঘটলো আরেক বিপত্তি, ওরিন ফরিদ চুপ করে বসে আছে ওরিন আয়শার হাতে একটা চিঠি দিলো। আয়শা জোড়ে পড়তে শুরু করলো,

‘ প্রিয় নাতী ও নাত বউয়েরা ‘

আজ আমার বেশ বিশ্বাস হচ্ছে ভালোবাসা সত্য হলে, মানুষটার সাথে মিল হবেই, আয়শা এবং নাছিমের মতো তাড়াতাড়ি আর না হয়, পাঞ্চাশ বছর পর আমার আর কালামের মতো। হ্যা, আমি তোমার নানার সাথে ইউরোপ চলে যাচ্ছি। নাছিম আয়শার মতো, আমার ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে, শেষ বয়সে কটা দিন না হয়, তার হাত ধরে কাটাই৷
আয়শা নাছিম এবং ওরিন ফরিদ শুখে সংসার করো। আল্লাহ হাফিজ। “—

চিঠি পড়া শেষে সবাই সবার দিকে তাকিয়ে কয়েক মূহুর্ত পরে সবাই প্রান খুলে হাসলো।
পূর্নতা পাক সব ভালোবাসা। এখন না হয় পঞ্চাশ বছর পর। ভলো থাকুক ইঁচড়েপাকা গুলো ❤️

———–❤️শুভ সমাপ্তি❤️———