#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১৩
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
ছুটি থাকাতে সবাই আস্তে ধীরে ঘুম থেকে উঠলো।রূপন্তীর ঘুম ভাঙলো সাড়ে দশটার দিকে।সায়নের দিকে তাকিয়ে ভাবলো এই ছেলে এখন জাগনা থাকলে হার্টফেইল করতো।এতদিন রূপন্তী ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে। আজকে সে এসে রূপন্তীকে জাপ্টে ধরে ঘুমুচ্ছে।সে আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে গেলো।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো কেউই উঠে নাই।হুট করে মাথায় আসলো সবার নাস্তার ব্যাবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাসায় কিছুই নেই। সে এই দুই দিন বাজার করবে করবে করেও করা হয় নাই।দেরি করলো না।একট কুর্তা পড়ে গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে পার্স হাতে বের হয়ে গেলো।বাসা থেকে অল্প দূরে ইউনিমার্ট আছে। সেটাই আপাতত তার গন্তব্য। বাজারে সব কিছু এতক্ষনে শেষ হয়ে গেছে।
বাজার করে, নাস্তা কিনে ফেরত আসলো সে বারোটায়।ততক্ষনে সবাই উঠে গিয়েছে। তার শ্বাশুড়ি মা ইতিমধ্যে কাজ কর্ম শুরু করে দিয়েছে। সীমন্তীও সাথে হাত লাগিয়েছে। ওনারা মূলত শোকেস সাজানো শুরু করেছে। রূপন্তী তখন খেয়াল করলো যে শোকেস এ রাখার জন্য প্লেট বাটি ওর শ্বাশুড়ি নিয়ে এসেছে। বেচারি লজ্জা পেয়ে গেলো।
রূপন্তীকে আসতে দেখে সীমন্তী এক গাল হেসে বলল,
– তুমি কই গিয়েছিলে?আমরা তো তোমাকে না পেয়ে অবাক হয়েছি।
রূপন্তী বাজার গুলো গুছাতে গুছাতে বলল,
– আসলে আপু গত কয়দিন ধরে বাজার করি নাই। বাসা পুরো ফাঁকা। তাই বাজার নিয়ে আসলাম।নাস্তা তো আর বানাতে পারলাম না, তাই সেটাও নিয়ে আসলাম।বাবা আর রায়ান ভাই কই?
– ওনারা একটু ছাদে গেছে।একটু হাটাহাটি করে চলে আসবে। বেশিক্ষন হয়নি আমরা উঠেছি।
– আপনারা উঠেই কাজে লেগে পড়লেন?আচ্ছা আগে নাস্তা খেয়ে নিন, তারপর আমি সহ সব গুছাই।
ততক্ষনে তারিফ সাহেব, রায়ান ও চলে আসলো।রূপন্তী টেবিলে সব সার্ভ করে ওদের বসতে বলে রুমে আসলো।সায়ন তখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।ইচ্ছে করেই আর উঠালো না।হাত মুখ ধুয়ে নিজেও নাস্তা খেতে চলে গেলো।সায়নের জন্য খাবার আলাদা করে রাখলো।খাওয়ার মাঝেই রুহি জেগে কাঁদতে শুরু করলো।সীমন্তী একটু ধীর গতিতে খেতে পছন্দ করে।তার খাবারের সবেমাত্র একাংশ শেষ হয়েছে।রায়ান ওকে খেতে বলে যেতে চাইলো কিন্তু তার আগেই রূপন্তী ওকে বসতে বলে নিজ চলে গেছে।
রুমে গিয়ে বাচ্চাটাকে দেখে তার মন খারাপ সব গায়েব হয়ে গেলো।কিভাবে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে!আস্তে করে রুহিকে কোলে নিয়ে নিলো।রুহি প্রথমে কাঁদতে কাঁদতে চেক করলো তাকে কে কোলে নিয়েছে। তারপর মামনিকে দেখে আস্তে আস্তে থেমে গেলো।মুখে আঙুল ঢুকিয়ে আস্তে করে মাথাটা ফেলে দিলো রূপন্তীর কাঁধে।রূপন্তী নীরবে হাসলো।পাশে রাখা টেবিল থেকে একটা ওয়েট টিস্যু নিয়ে রূহির মুখ মুছে দিলো। সীমন্তীকে জিজ্ঞেস করে ডায়পার আর জামা কাপড় বদলে দিলো।এরই মাঝে সীমন্তী চলে আসলো।মাকে দেখে রুহি এবার ছটফট করতে শুরু করলো।মুখ দিয়ে শব্দ করার চেষ্টা করলো।
মাত্র পাঁচ মাসে এত রেস্পন্সিভ বাচ্চা দেখে রূপন্তী একটু অবাকই হলো।মনে মনে বারাকাল্লাহ বলতে ভুললো না।
সীমন্তীর রুম থেকে বের হয়ে দেখলো সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। শ্বশুড় গেছে গোসল করতে।রায়ানও ওকে বলে গোসল করতে চলে গেলো।জয়া ফোনে কথা বলছে।
সে তাই টেবিল পরিষ্কার করতে লাগলো।থালা বাটি সিংকে রেখে ধুয়ে ফেললো।এবার রান্না বসিয়ে দিবে। বৃষ্টির মৌসুম। বাহিরে ইতিমধ্যে আকাশ কালো করছে। তাই আর কোনো কিছু না ভেবে খিচুড়ি রান্না করবে বলে ঠিক করলো।সাথে আলু ভর্তা,ডিম ভাজি, মুরগির ঝোল আর বেগুন ভাজা।সবার আগে আলু সিদ্ধ করতে বসিয়ে দিলো।আরেক পাতিলে মুরগি বসিয়ে দিলো।বাহিরে থেকে কেটে আনাতে আর কাটার ভেজাল হলো না।
এরপর দ্রুত রান্নাঘর ঝাড়ু দিয়ে দিলো।এবার পুরা বাসা ঝাড়ু দিতে হবে।চুলার আগুন কমিয়ে সে বের হয়ে গেলো।
জয়া একবার রান্নাঘরে উঁকি মারলো।চুলায় রান্না, ধোয়া বাসন দেখে এবার রূপন্তীকে খুঁজলো। সে তখন বারান্দা ঝাড়ু দিচ্ছে।জয়া বেশ অবাক হলেন।এই মেয়ের এক হাতে সব করার ভালোই অভ্যাস আছে।অবশ্য বিদেশ একা থেকে এসেছে,এসব পারারই কথা।উনি সাহায্য করতে আসলেন আর রূপন্তী ঠেলে তাকিয়ে পাঠিয়ে দিলো গোসল করতে।সীমন্তী ততক্ষনে রূহিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।তারও একই কথা,
– মা, তুমিই তো সবসময় করে খাওয়াও।আজ আমরা করি।তুমি বসে বসে দেখো।
জয়া হেসে গোসল করতে চলে গেলেন।সীমন্তী তখন রূপন্তীকে জিজ্ঞেস করলো সে কি করতে পারে।রূপন্তী তাকে কিছু করতে হবে না বলে দিলো।সীমন্তী তা মানতে নারাজ। রূপন্তী তখন তাকে বলল বেগুন ভাজাটা করে ফেলতে।রুহিকে সে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।সীমন্তী মানা করতে গেলে বলল,
– ওকে ওর মামার পাশে শুইয়ে দিচ্ছি।সায়ন উঠে বের হতে হতে হতে আম্মুরও গোসল শেষ হয়ে যাবে।তখন উনি রাখবেন।
সীমন্তী আর দ্বিরুক্তি না করে নিজের কাজে চলে গেলো।
.
সায়নের ঘুম ভাঙলো কারো হাতের খামচি খেয়ে।কেও একজন তার নাক খামচে খুলে ফেলতে চাচ্ছে।চোখ খুলে আবিষ্কার করলো সে একজনটা হলো তার আদরের ভাগ্নি,যে কিনা শুয়ে শুয়ে এক হাত মুখে পুড়ে অন্য হাত দিয়ে সায়নের নাক খামচে ধরেছে।
মামাকে তাকাতে দেখে সে নিজের ফোকলা দাঁত দেখিয়ে একটা হাসি দিলো।সায়ন তা দেখে নিজেও হেসে দিলো।উবু হয়ে আদর করলো কিছুক্ষন। এরপর উঠে দাঁড়াতেই রূপন্তী রুমে ঢুকলো।মুখ-টুখ ঘেমে একাকার।হাতে ঝাড়ু।
সায়ন ওকে এই রূপে দেখে হেসে দিলো।খোচা মেরে জিজ্ঞেস করলো,
– শেষমেশ এবার কামওয়ালী হয়ে গেলি?!
রূপন্তী অগ্নি চাহনি নিক্ষেপ করে বলল,
– চুপ থাক!ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখ।
সায়ন সময় অলরেডি জানে।তাই আর ঘড়ির দিকে তাকাতে হলো না।আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল,
– যা একটা ঘুম হয়েছে। তুই মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়াতে আরো ভালো হয়েছে।থ্যাংকস ব্রো!
রূপন্তী পাপশ ঝাড়তে ঝাড়তে জিজ্ঞেস করলো,
– কালকে কি ছেলেটাকে ও.টিতে নিয়েছিলি আবার?
– নাহ।আমরা যাওয়ার আধ ঘন্টা বাদেই মারা গিয়েছিলো।এরপর গোসল করিয়ে এখানে একবার জানাজা পড়িয়েছে।সেটা পড়ে এসেছি বলেই এত দেরি হয়েছে।
– ওহ!আচ্ছা যা গোসল করে আয়।
গোসল করে বের হয়ে বিছানার উপর পাঞ্জাবী পায়জামা আর প্লেটে খাবার রাখা দেখে বেশ অবাক হলো সায়ন।এসব রূপন্তী রেখে গেছে। ও হঠাৎ করে সব মুখের সামনে তুলে ধরা শুরু করেছে কেন?নাহ,নিয়ত তো ভালো ঠেকছে না!
তবুও আপাতত কোনো ভাবাভাবি না করে সে খেয়ে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো।মসজিদে ইতিমধ্যে নামাজ দাঁড়িয়ে গেছে।
.
সব রান্না-বান্না শেষ। রূপন্তী এখন খিচুড়িটা শেষ করেই গোসল করতে চলে যাবে।তার পাশে রুহিকে কোলে নিয়ে সীমন্তী দাঁড়ানো।হঠাৎ করেই সে খুব নরম গলাউ রূপন্তীকে ডাকলো।রূপন্তী ফিরে তাকাতেই জিজ্ঞেস করলো,
– সায়ন আর তুমি কি আলাদা রুমে থাকো?
– কেনো আপু?
– আম্মু বলেছে।
রূপন্তী কিছু বলতে পারলো না।কিন্তু মনে মনে সায়নের গুষ্টি উদ্ধার করে ফেললো।এই গাধার বাচ্চা গাধামি না করলে এখন এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
সীমন্তী নিজেই বলে উঠলো,
– শুনো,আম্মু আমকে জিজ্ঞেস করতে বলে নাই।আমি নিজেই করলাম।সায়ন প্রচন্ড ঘাড় ত্যাড়া।হতেই পারে তাকে না বলে এভাবে বিয়ে করিয়ে দেওয়াতে সেটার শোধ তোমার উপর তুলছে।সেক্ষেত্রে ওকে বোঝাতে হবে।
রূপন্তী মাথা নেড়ে বলল,
– না আপু তেমন কিছু না।সেদিন ঝগড়া হয়েছিলো বলেই ও আলাদা রুমে গিয়ে শুয়েছিলো।
সীমন্তী কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
-তুমিই তো সায়নের সেই ফ্রেন্ড যার সাথে সায়নের সবসময় ঝগড়া লেগে থাকে।
– আপনি কিভাবে জানেন?!
-তোমার শ্বাশুড়িমাকে জিজ্ঞেস করো।
.
দুপুরে খুব সুন্দর ভাবে খাওয়া দাওয়া হলো।সবাই রূপন্তীর রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
এখন যে যার রুমে রেস্ট নিচ্ছে।বাহিরে তুমুল বৃষ্টি।সায়ন চিৎ হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।রূপন্তী তখন গলা ঝেড়ে বলল,
– সায়ন,তোর সাথে আমার জরুরী….
বলতে পারলো না, তার আগেই সায়নের ফোনে কল এলো।সায়ন রিসিভ করে সেটা লাউডস্পিকার দিয়ে বুকের উপর রাখলো।সাথে সাথে ওপাশ থেকে আরাদ্ধার ক্রোধান্বিত গলা শুনা গেলো,
-আরিশার এত বছর পর তোর কথা মনে পড়লো কেন?পাগলের মতো খুঁজছে তোকে।আমি জানিয়ে দিয়েছি তুই কয়দিন আগেই বিয়ে করেছিস। খবরদার তুই ওর সাথে যোগাযোগ করবি না।
#চলবে।