এই মন তোমারি পর্ব-৩৬+৩৭

0
264

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৩৬

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” শফিকুল দেওয়ান মনে মনে বললো,টাকা, গহনার ব্যাপারে তো‌ আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। তাহলে কোথায় গেলো এতো গুলো টাকা? শফিকুল দেওয়ান এর ভাবনার মাঝে রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। শফিকুল ঘাবড়ে গিয়ে বললো, কে আছে রুমে?”

-” ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিষ্টার শফিকুল দেওয়ান।”

-” শাফায়াতের কথা শুনে শফিকুল দেওয়ান ঘামতে শুরু করলেন। তবু ও এমন ভান করলেন যেনো তিনি কিছু করেন নি। তিনি অনেক টা অবাক হ‌ওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, এসব তুই কি বলছিস শাফি। তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না?”

-” তুই নিশ্চয় আমার বেয়াই লাগো না যে তোমার সাথে আমি মজা করবো। তুমি খুব ভালো করে জানো তুমি ঠিক কি কি করেছো। আচ্ছা বাদ দাও।নিচে আম্মি ,খালামনি ,নানা ,নানু সবাই আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু তুমি এই বন্ধ রুমে কি করছো?কি খুঁজতে আসছো এইখানে?”

-“আমি তোকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয় শাফি। ভুলে যাস না আমি তোর বাবা।”

-” বাবা বলে সম্মান করি দেখে এখনো তুমি এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছো।তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে তার মুখ থেকে কিভাবে সত্যি কথা বের করতে হয় সেটা খুব ভালো করে জানা আছে আমার। তুমি একটা অপরাধ লুকোতে গিয়ে আরো অনেক গুলো অপরাধ করে ফেলেছো।আমি তোমাকে ক্ষমা করলেও আইন তোমাকে ক্ষমা করবে না বাবা।”

-” তুই কি বলছিস এসব? তুই কি নেশা টেশা করেছিস নাকি?”

-” তোমার আর বাঁচার কোনো রাস্তা নেই বাবা।তাই শুধু শুধু মিথ্যা নাটক করে কোনো লাভ নেই। অতঃপর শাফায়াত একটা ব্যাগ শফিকুল দেওয়ান এর সামনে ধরে বললো , তুমি এটাই খুঁজছিলে তাই না বাবা? যার মধ্যে সেই রাতে হারিয়ে যাওয়া টাকা, গহনা রয়েছে।যে টাকা , গহনা চুরির অপবাদ তুমি নিষ্পাপ একটা মেয়েকে দিয়েছিলে। অথচ সেই টাকা গহনা এখন আমার হাতে রয়েছে। শুধু মেয়েটা’ই নেই।”

-” তুই এই টাকার খোঁজ কিভাবে পেলি?”

-“তখনি নাজমা দেওয়ান রুমের ভেতর প্রবেশ করে বললো, শাফি নয় আমি পেয়েছি টাকার ‌ব্যাগ।তোমাকে আমি নিচু মনের মানুষ ভাবতাম তাই বলে তুমি এতোটা নিচু কাজ করতে পারো কখনো ভাবতেও পারিনি।তোমার এই গুপ্ত কুঠুরির ব্যাপারে শুধু মাত্র আমি জানতাম।যেটা তুমি জানতে না।শাফি যখন আমাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে তখনি আমার তোমাকে সন্দেহ হয়।কেনো করলে এমন? মেয়েটা কে কেনো চোর অপবাদ দিলে? কেনো তাকে এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে?সে তো বেশি কিছু চেয়েছিলো না। শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছিলো। আমাদের সবার সাথে হাসি খুশি থেকে বাকি জীবন টা পাড় করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু তুমি তার বেঁচে থাকার অধিকার টুকু কেড়ে নিলে।”

-” আমি তাকে এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করি নি।সে সেচ্ছায় এই বাড়ি ছেড়েছে।”

-” মিথ্যা কেনো বলছো বাবা?”

-” মিথ্যা কেনো বলবো আমি?”

-“শাফায়াত তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ফোন বের করে ভিডিও টা প্লে করে শফিকুল দেওয়ান এর সামনে ধরে বললো, তাহলে এসব কি বাবা? তুমি সুরা কে মেন্টালি প্রেশার দিয়েছো এই বাড়ি ছেড়ে চলে ‌যাওয়ার জন্য।এখানেই তোমার অপরাধ শেষ নয়। তুমি নিজের স্বার্থের জন্য সূরার কাকা সেলিম কে ব্যবহার করেছো। মেয়েটা তোমার কাছে কতো আকুতি মিনতি করেছিলো তার কাকার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। কিন্তু তুমি শোন নি।সূরা যখনি আমার কাছাকাছি এসেছে ঠিক তখনি সূরা কে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তুমি সূরার কাকার এক্সিডেন্ট করিয়েছো। মাজেদা খালা তোমার আসল রূপ দেখে ফেলে।তাই তুমি তাকে তার একমাত্র ছেলেকে মে’রে ফেলার ভয় দেখিয়ে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেও। তুমি যে আমার বাবা ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার।যদি পারতাম তোমার মতো অমানুষের মুখে থুথু ছুঁড়ে দিতাম।”

-” আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি শাফি। শফিকুল দেওয়ান এর কথা শুনে নাজমা দেওয়ান এসে তার গালে থা’প্প’ড় দিয়ে বললো , আর একটা কথাও বলবি না তুই। তুই আমার ছেলের ভালো চাস নি। চেয়েছিলি টাকা।লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।এ কথা ভুলে গিয়েছিলি তুই। টাকার লোভ আজ তোকে এই পর্যায়ে ‌নিয়ে এসেছে। তোর মুখ দেখতে ও আমার ঘৃণা হচ্ছে।শাফি তুই এই অমানুষ টা কে আমার সামনে থেকে নিয়ে যা।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে শাফায়াত শফিকুল দেওয়ান এর হাতে হাতকড়া পরিয়ে টানতে টানতে থানায় নিয়ে চলে গেলো।”

___________________________________

-” সূরা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য। হসপিটাল থেকে তাকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে।মনিরা চৌধুরী সূরা কে রেডি করে দিয়ে সবকিছু গোছগাছ করছে এমন সময় ডক্টর শুদ্ধ শিকদার সূরার সাথে দেখা করতে আসে।সূরার পরনে পেশেন্টের পোশাকের পরিবর্তে বেগুনী রঙের একটা থ্রিপিস রয়েছে।লম্বা চুলগুলো সুন্দর করে বেনি করে দিয়েছেন মনিরা চৌধুরী।মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। তবু ও শুদ্ধের কাছে সূরা কে অপরুপ সুন্দরী মনে হচ্ছে। ডক্টর শুদ্ধ ভেতরে প্রবেশ করতেই সূরার সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার।বুক ধুক করে উঠে শুদ্ধের। হার্টবিট দ্রুত থেকে ‌দ্রুততর গতিতে চলতে থাকে।সে কখনো ভাবে নি এই ত্রিশ বছর বয়সে এসে তার গায়ে প্রেমের হাওয়া লাগবে।এক পিচ্চি মেয়ে তার মনের রানী হয়ে যাবে।শুদ্ধ প্রথম যেদিন সূরা কে দেখে সেদিন থেকেই সূরা কে ফিল করতে শুরু করছে।সব জায়গায় শুধু সূরা কে দেখতে থাকে। ঠিক মতো পেশেন্ট দেখতে পারে না।বড্ড পাগল পাগল লাগে তাকে।সে যখনি সুযোগ পেয়েছে সূরা কে একনজর দেখতে দৌড়ে ছুটে এসেছে। আজকের পর থেকে সে আর সূরা কে দেখতে পাবে না ভাবতেই মনটা বিষিয়ে যায় শুদ্ধের।শুদ্ধ এসে সূরার পাশে বসে বললো, এখন কেমন লাগছে তোমার?”

-” ভালো?”

-” শুদ্ধ সূরার নাম জানে তবুও বললো, তোমার নাম টা কি জানি?”

-” সূ বলতে গিয়েও থেমে গেলো সূরা। পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো শানজানা চৌধুরী।”

-” ওয়াও নাইস নেইম।”

-” ধন্যবাদ।”

-” তোমার চুলগুলো কিন্তু অনেক ‌সুন্দর।আই লাইক লং হেয়ার।”

-” ধন্যবাদ।”

-” দেখো শানজানা আমি সবসময় স্ট্রেট ফরোয়ার্ড কথা বলতে পছন্দ করি। সবসময় নিজের মধ্যে কাঠিন্যের ছাপ ফুটিয়ে রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু কেনো জানি আজ তোমার সামনে আমি নিতান্তই একটা বাচ্চা হয়ে গিয়েছি।মনে হচ্ছে আমার বয়স যেনো ত্রিশ দেখে আঠারো হয়ে গিয়েছে। আমার ডক্টর হ‌ওয়ার আগে একটা রিলেশন ছিল।বড্ড ভালোবাসতাম মেয়েটাকে। কিন্তু আমি তখন বেকার ছিলাম বলে আমার ভালোবাসার ‌মানুষ টা আমাকে ছেড়ে সরকারী চাকরিজীবী ছেলে বিয়ে করে নেয়। সেদিন প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ি আমি। এরপর থেকে কখনো আর প্রেম , ভালোবাসা, সংসারের মায়ায় জড়াতে চাই নি। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমার সেই মনোভাব পাল্টে গিয়েছে।আমি নতুন করে সংসার পাতার স্বপ্ন দেখেছি।আমার মম , ড্যাডের ও পছন্দ হয়েছে তোমাকে। তুমি যদি রাজি থাকো আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আমি তোমার অতীত জানতে চাই না।আমি তোমার বর্তমান নিয়ে বাঁচতে চাই।আমার মনের রানী করতে চাই তোমাকে।হবে কি আমার মনের মালকিন?দিবে কি আমাকে তোমার মনের মালিক হ‌ওয়ার সুযোগ?”

-” একজন মানুষের একটাই তো মন থাকে তাই না?আমার সেই মনটা যে অনেক আগেই অন্য কারো নামে লিখে দিয়েছি। আমার মনটা যে আমারি কাছে রেখে যাওয়া তার আমানত।আমি যে চাইলেও আমানতের খিয়ানত করতে পারবো না।।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৩৭
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” সূরা কে হসপিটাল থেকে চৌধুরী ভিলায় নিয়ে আসা হয়েছে।সূরা গাড়ি থেকে নেমে চৌধুরী ভিলার বাইরে থেকে এতো বড়ো বাড়ি দেখে অবাক হয়ে যায়। গাছগাছালি ঘেরা সবুজের আড়ালে পাঁচ তলা বাড়ি। তবে দোতলা বাদে বাকি সব ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। শাহিন চৌধুরী আর মনিরা চৌধুরীর বেশিরভাগ সময় চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে কেটে যায়।একটা সন্তানের জন্য তারা কতো কি করছে অথচ আল্লাহ তায়ালা তাদের কে সন্তান দান করছেন না। এইতো সূরা কে পাওয়ার কয়েকদিন আগে মনিরা চৌধুরী নিজের উপর বিরক্ত হয়ে শাহিন চৌধুরী কে বলেন, তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আবার বিয়ে করো।তোমার বাবা ডাক শোনার অধিকার আছে। আমি চাই না আমার জন্য তুমি সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হ‌ও।প্রতিত্তরে শাহিন চৌধুরী তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন,

-” আমি এমন কোনো সন্তানের ‌বাবা হতে চাই না যে সন্তান তুমি তোমার গর্ভে ধারণ করবে না।এতে যদি আমি সারাজীবন ও নিঃসন্তান থাকি তবুও আমার কোনো আফসোস থাকবে না। তুমি আমার অর্ধাঙ্গীনী ।আমার সুখ দুঃখের সাথী। তোমার সুখের সময় যেমন তোমার পাশে থেকেছি তেমন তোমার দুঃখের সময় ও আমি তোমার পাশে থাকবো।”

-” এমনটা হয় না শাহিন। তুমি তোমার বাবা মায়ের কথা মেনে নাও।ফিরে যাও তাদের কাছে। তাদের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হ‌ও বলতে গিয়ে গলা ভিজে গেলো মনিরা চৌধুরীর।”

-” তোমার মন পড়তে পাড়ি আমি মনিরা। আমি খুব ভালো করে জানি এটা তোমার মনের কথা নয়।”

-” হ্যাঁ আমার মনের কথা নয়। কিন্তু আমি কি করবো বলো তো? আমি সত্যিই কখনো মা হতে পারবো না। আমার উপর যে আমার শ্বাশুড়ি মায়ের অভিশাপ লেগেছে।কারণ আমি যে তোমার বাবার অফিসের সাধারণ একজন কর্মচারীর মেয়ে।আমি তার পছন্দের ব‌উমা না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করো। বিয়ের পর রোজ রোজ মা আমাকে গরীবের মেয়ে বলে খোঁটা দিতো, বাড়ির একজন কাজের মেয়ের যেটুকু সম্মান ছিলো আমাকে সেটুকু সম্মান ও দেওয়া হতো না।এক পর্যায়ে তুমি আমাকে আলাদা ফ্ল্যাটে নিয়ে চলো আসো।আর তখন শ্বাশুড়ি মা আমাকে অভিশাপ দিয়ে বলেন,

-” ফকিরের বাচ্চা তুই আমার বুক থেকে আমার কলিজার টুকরা ছেলে কে কেড়ে নিয়ে আমার কোল খালি করে দিলি। আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তোর কোল ও যেনো সারাজীবন এমন খালি থাকে। আল্লাহ তায়ালা যেনো তোকে কোনদিন মা ডাক শুনতে না দেয়। তুই যাতে সারাজীবন উপলব্ধি করতে পারিস যে একজন মায়ের কোল খালি থাকার যন্ত্রণা কতটুকু?আর দেখো মায়ের কথাটা সত্যি হয়ে গেলো।আমি প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারছি সন্তান না থাকার যন্ত্রণা।”

-” মা তোমাকে অভিশাপ দিয়েছে বলেই যে আমাদের সন্তান হচ্ছে না এটা তোমার ভুল ধারণা মনিরা। আল্লাহ তায়ালা সব পারেন। তুমি দেখো তিনি ঠিকই আমাদের সন্তান ‌দান করবেন।”

-“তাই যেনো হয় শাহিন। আমি যেনো আমার সন্তানের মুখ থেকে মা ডাক শুনে আমার অশান্ত হৃদয় শান্ত করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা যেনো মনিরার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।মনিরা সূরা কে পেয়ে দিন দুনিয়া ভুলে সারাক্ষণ হসপিটালে সূরার পাশে থেকেছেন।সূরাকে বুকে জড়িয়ে তার অশান্ত হৃদয় শান্ত করেছেন।তিনি সূরা কে নিয়ে চৌধুরী ভিলায় প্রবেশ করে দেখেন ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা সবাই ফুল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।তারা সূরা কে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে সূরা কে বরন করে নেন।যদিও সূরা নতুন জায়গা, নতুন মুখ , নতুন পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করছে তবুও সবার মুখে হাসি দেখে সে নিজেও তাদের তালে তাল মেলাতে শুরু করে।সূরার আগমন উপলক্ষ্যে শাহিন চৌধুরী তার ফ্ল্যাটের সব ভাড়াটিয়াদের ডিনারের দাওয়াত দিয়েছেন।সাথে এটাও বলেছেন কিছু দিন পরে তিনি বড়ো করে পার্টির আয়োজন করবেন।আজকের এই ছোট খাটো ডিনার পার্টির জন্য মনিরা চৌধুরীসহ অন্য ভাড়াটিয়া মহিলারা মিলে রান্নার কাজে লেগে পড়েন। সবমিলিয়ে চৌধুরী ভিলায় একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শাহিন চৌধুরী সূরার জন্য অনেক জামা কাপড় সাথে একটা স্মার্ট ফোন নিয়ে এসেছেন। সূরা মোটামুটি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে জানে। শাফায়াত তাকে শিখিয়েছিলো । তবু ও শাহিন চৌধুরী সূরা কে ফোনের ব্যাপারে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে সূরার কপালে চুমু দিয়ে সূরার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।ফোন দেখে সূরার ছটফটানি বেড়ে গেল।মনটা বড্ড অশান্ত হয়ে উঠলো তার সুন্দর ব্যাডা মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে। শাফায়াতের ফোন নাম্বার সূরার মুখস্থ ছিলো। শাফায়াত নিজে সূরা কে তার ফোন নাম্বার মুখস্থ করিয়েছিলো। সূরা কালবিলম্ব না করে ফোনে শাফায়াতের নাম্বার উঠিয়ে কল দিতে গিয়ে রিং হওয়ার আগেই ফোন কেটে দিয়ে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বললো,

-” ছিঃ সূরা ছিঃ। তুই আসলেই একটা নির্লজ্জ , বেহায়া।তোর নিজের আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই।যে মানুষ টা তোর না তাকে কেনো এখনো নিজের ভাবছিস ? সে নিশ্চিত নতুন ব‌উ নিয়ে খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।যার সুখের জন্য তাকে ছেড়ে চলে এসেছিস তার সাথে কথা বলাটা তোর বেমানান সূরা। তুই কল দিবি না পুলিশের নাম্বারে।সূরা নিজেকে নিজে বুঝিয়েও মন কে শান্ত করতে পারলো না।সে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে আবারো শাফায়াতের নাম্বারে কল করলো। কিন্তু রিং হওয়ার আগেই ফোন কেটে দিয়ে ফোন নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। এইভাবে সপ্তম বার করলো। কিন্তু অষ্টম বার এক বুক সাহস সঞ্চার করে শাফায়াতের নাম্বারে কল দিলো সূরা।”

___________________________________

-” শাফায়াতের অবস্থা বেশ শোচনীয়।সে সূরার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে।এমনকি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। একদিকে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর শোক। অন্যদিকে তার বাবা হাজতে হয়েছে। নাজমা দেওয়ান সারাক্ষণ চোখের পানি ফেলেন। নিজের আম্মির কষ্ট সহ্য হয় না শাফায়াতের। সব মিলিয়ে শাফায়াতের অবস্থা পাগলপ্রায়। কিছুতেই সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না। নিজেকে শান্ত করতে সূরার ছবি বুকে নিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে চিৎকার করে বললো, আমি একজন ব্যর্থ পুলিশ।একজন ব্যর্থ স্বামী।আমি কেনো সেদিন সূরার কথা বিশ্বাস করলাম না?কেনো সেদিন সবটা হেসে উড়িয়ে দিলাম? সেদিন যদি আমি সূরার ব্যাপার টা সিরিয়াস ভাবে নিতাম তাহলে আজ সূরা কে হারাতে হতো না।আমার বুকের বাঁ পাশ টা পরিপূর্ণ থাকতো ।আমি কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করবো ? আমি যে অপরাধী। শাফায়াত চোখের পানি মুছে সূরার ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।আর তখনি আননোন নাম্বার থেকে শাফায়াতের ফোনে কল এলো। শাফায়াতের বিরক্তি তে মুখ থেকে চ জাতীয় শব্দ বের হয়ে এলো। শাফায়াত কল কেটে দিতে গিয়েও কি মনে করে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই সূরা হুঁ হুঁ কান্না করে দিলো। গলা ভিজে এলো তার। কতোদিন পরে সে তার সুন্দর ব্যাডা মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো। মূহুর্তের মধ্যে যেনো তার অশান্ত মন শান্ত হয়ে এলো।তার হার্টবিট বেড়ে গেল। সূরা শাফায়াতের নাক টানার আওয়াজ শুনতে পেলো।সূরা কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো, পুলিশ কি কান্না করছে? তার তো তরী আপুকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকার কথা। কিন্তু তার কণ্ঠ ভেজা ছিলো।টান টানার আওয়াজ আসছিলো।কি হয়েছে আমার পুলিশের? সে ঠিক আছে তো?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।