এক শ্রাবণ হাওয়ায়-২ পর্ব-২৪+২৫

0
765

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২৪
নিজেকে কারও শক্ত বাহুবন্ধন এ অনুভূত করাতে ঘুমটা আমায় ছেড়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। টের পাচ্ছি কারও নিবিড় অনুপস্থিতি। আমি চোখজোড়া খুলে নিজের মস্তিষ্ককে সচল করি ধীরে ধীরে। প্রথমেই চোখ পড়ে জানালার ওপর। সাদা রঙের পর্দা। সেটাও জানালা ঘিরে রেখেছে বলে বাইরের কিছু দেখা গেলো না। তবে আলো পর্দার ওপর প্রতিফলিত হওয়াতে রুমটা নিতান্তই লাগছে ঘোরগ্রস্থ। আমি নড়েচড়ে ওঠতেই টের পেলাম যে আমি নড়তে পাচ্ছিনা। একজোড়া আগ্রাসী হাত জাপ্টে ধরে রেখেছে আমায়। আমি নড়লেই সেই বন্ধন যেন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে লাগলো।

ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলাম আনভীরকে। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন উনি। আমার কোমড় পেচিয়ে রেখেছেন হুলস্থূলভাবে। আমি অকেঁজো হয়ে রইলাম উনাকে এভাবে দেখে। মিহি আলোতে শান্তিময় লাগছে উনাকে দেখতে। উজ্জল গড়নে পাতলা ঠোঁটগুলো কেঁপে উঠতে ব্যস্ত মাঝে মধ্যে। আমি উনার বদ্ধ চোখ পানে মনোনিবেশ করলাম। চশমা না পড়লেই একমাত্র উনার চোখের পাপড়িগুলো খেয়াল করা যায় যে এগুলো অত্যন্ত বিন্যস্ত। কেনো যে এগুলো সকলের চক্ষু গোচর করে রাখেন কে জানে!

আমার কোমড় থেকে উনার হাত সরানোর প্রচেষ্টা চালালাম ধীরভাবে। কিন্ত উনি নড়ে উঠলেন। আমায় নিজের কাছে আরও টেনে নিয়ে চাপা কন্ঠে বললেন,

‘ কি করছো আহি?’

কয়েক পলকের জন্য এভাবেই অনড় হয়ে ছিলাম আমি। এর প্রথম কারন হঠাৎ আমাকে উনার এতটা কাছে টানা আর দ্বিতীয় কারন সেই ভরাট চাপা কন্ঠ। উনার ঘুমু ঘুমু কন্ঠে অন্যরকমের এক বাসনা কাজ করে। মেঘের মতো সরু অথচ কতটা নির্বান সেগুলোর গভীরত্ব। কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে তাই বললাম,

‘ ছাড়ুন আমায় আনভীর। উঠতে হবে আমাকে।’

উনি ছাড়লেন না। আমার কথা উনার কর্ন কুহরে প্রতিফলিত হওয়ার পরও অটল হয়ে রইলেন সেভাবে। ছোট করে দম নিলাম আমি। বললাম,

‘ কি হলো ছাড়ুন আমায়?’

‘ ইচ্ছে করছেনা তো।’

বলে আবারও ঘুমে তলিয়ে গেলেন উনি। আমি কিয়ৎপল বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকলাম এই ঘুমু ঘুমু মুখপানে। এই লোকের এত ঘুম হলো কবে থেকে? কি সহজ অকৃত্রিম মনোভাব। বললেন, ‘ইচ্ছে করছে না তো!’

আমি জোরাজুরি করতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করতে থাকলাম এবার। কিন্ত খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি। শেষমেষ প্রচন্ড বিরক্ত হলেন আনভীর। আমায় বিছানায় চেপে উপুড় হলেন আমার দিকে। এতক্ষণ চাতক পাখির মতো ছটফট করতে থাকা আমি মুহূর্তেই বিলীন হয়ে গেলাম উনার এরূপ ক্রিয়া কলাপে। আনভীর ঝুঁকে আছেন আমার দিকে। চোখ দুটো নিশ্চল। বিরক্তির সহিত বললেন,

‘ এত ছাড়ো ছাড়ো করো কেনো তুমি? ছাড়ার জন্য কি সবসময় তোমায় নিজের কাছে রাখি? আবার নেকামি করে এই ওয়ার্ডটা আমার সামনে উচ্চারণ করলে সারাদিন আমার সাথে এভাবেই মিশিয়ে রাখবো। তখন আমিও দেখবো কি করবে তুমি।’

উনার কথা শুনে আমি চুপসে রইলাম। এই লোকটা সবসময়ই এমন। ভালোমতো কথা তো বলতেই পারেনা উল্টো নিজে দোষ করলেও আমায় ধমক মারে। আমায় এভাবে মোমের পুতুলের মতো দেখে আনভীর মনে মনে যেন আনন্দ পেলেন। বললেন,

‘ এভাবেই যেন তোমায় দেখি। এখন উঠো মহারাণী। আর কানের কাছে ‘ছাড়ুন না’ ‘ছাড়ুন না’ বলে কা কা করবে না। নাহলে কি সাংঘাতিক হবে না ব্যাপারটা যে এআরকে’র ওয়াইফ অল্পতেই কা কা করে কাকের মতো?’

আমি ভ্রু কুচকালাম। বলে উঠলাম,

‘ ফালতু কথা হয়েছে? এখন সরুন। উঠবো আমি।’

আনভীর সরে পড়তেই আমি উঠে বসলাম। আনভীর বিছানায় শুয়েই দেখে যাচ্ছিলেন আমাকে। অতঃপর বললেন,

‘ আহি?’

‘ কি হলো আবার?’

আমি এবার প্রতিউত্তর দিলাম কপট রাগ দেখিয়ে। উনি সরু কন্ঠে বললেন,

‘ ওড়না ছাড়াই ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যান না থাকলে ওড়নাটা নাহয় গায়ে জড়িয়ে নাও?’

তৎক্ষণাৎ নিজেকে দেখে লজ্জায় যেন আবিষ্ট হয়ে গেলাম আমি। এতক্ষণের কপট রাগের মুখটা কেমন যেন পাংশুটে হয়ে গিয়েছে। খাট থেকে তৎক্ষণাৎ ওড়না নিয়ে আমি তাই গায়ে জড়িয়ে নিলাম। উনি নির্বিকার ভাবভঙ্গি আমায় যেন আরও লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। আমি মনে মনেভাবলাম, পালাতে হবে আয়ি। এই লোক নিজেরনির্লজ্জ কথা স্টার্ট করার স্টার্ট করার আগেই কেটে পড়তে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি তাই তৎক্ষণাৎই দ্রুত পা বাড়ালাম ওয়াশরুমের দিকে।

___________________

বিগত কিছুদিন যাবৎ এ বাড়িতে আনভীরের পরিবারের সাথেই থাকা হচ্ছে আমার। এর কারন আনভীরের উদ্বিগন্নতা। কোনো একটা কারনে উনি ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন আমায় নিয়ে। জানিনা কেন। তবে মুখশ্রীতে স্পষ্ট এর বহিঃপ্রকাশ ফুটে ওঠেছে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করলেই উনি সঙ্গত কারনে এড়িয়ে চলছেন আমায়। যার স্পষ্ট মানে, আমায় এর উত্তর দিতে উনি অনিচ্ছুক। তবে হসপিটালে যেহেতু ছুটি নেওয়া যাবেনা তাই উনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে দিচ্ছেন আমায়। আমি মাঝে মাঝে অবাক না পারিনা উনার আমার সবক্ষেত্রে এতটা নজর দেখে। এমন নয় যে আমি ছোট বাচ্চা, বা এমন নয় যে একা চলাফেরা করা আমার অভ্যাসে নেই, তবুও উনি প্রতিটা ক্ষেত্রে যত্নের ক্রুটি রাখেন না আমার। গত দু’দিন আগে এক কনসার্টের উদ্দেশ্যে চিটাগাং যেতে হয়েছিলো আনভীরকে। আমি হসপিটালে ছিলাম বলে বিদায় জানাতে পারেননি। তাছাড়া যাওয়ার সময় উনার পার্সোনাল গার্ড থাকলেও ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিছু প্রফেশনাল গার্ড প্রেরণ করা হয়েছিলো যার জন্য উনি দেখা করেননি আমার সাথে। এতে তথ্য প্রচারের একটি সম্ভাবণা থাকতে পারে।

আমার অজান্তেই সেদিন মন খারাপ হয়েছিলো খুব। শিউলি ভাবির সাথে গল্প করে রুমে আনমনা হয়ে ল্যাপটপে কাজ করলেও ধ্যান ছিলো অন্যত্র। তখনই কল এসেছিলো আনভীরের। সে কত কথা! বললেন, ফ্লাইট নেমে নেমে সবেমাত্র হোটেলে এসেই কল দিয়েছেন আময়া। এখনও ফ্রেস হননি। আমি তাড়া করে ফ্রেস হতে বললাম উনাকে কিন্ত উনি শুনেনি আমার কথা। প্রথমেই গাইডবুকের মতো একগাদা উপদেশ দিলেন কি কি করতে হবে। আমি আনমনে হেসেছিলাম সেরাতে উনার পাগলামো দেখে।
.
.
আজ আবারও আমায় নিতে এসেছেন আনভীর। কালো হুডি, গ্রে জিন্স আর মাস্ক পরিহিত মানবটাকে দূর থেকে দেখলে বোঝাই যাবেনা যে ইনিই এআরকে। তবে গহীন চোখের কামনীয় দৃষ্টি হসজেই সবার হৃদয় নড়বড়ে করে তুলতে পারবে। হোয়াটস এপ এ উনার ছোট মেসেজ পেতেই স্তব্ধ দৃষ্টিতে স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। সেখানে সংক্ষেপিত ভাষায় লিখা,

‘ হসপিটালের ক্যান্টিনে আছি। ডিউটি শেষ করে জলদি আসো।’

আমি দ্রুতপদেই লিফ্টের বাটন চেপে থার্ড ফ্লোরে চলে গেলাম তাই। হসপিটালে একটামাত্র ক্যান্টিন বৃহৎ হলেও মানুষের সমাগম নেহাত কম ছিলোনা এখানে। পার্থক্য একটাই, এটা নীরব। আমি হন্য দৃষ্টিতে খুজে চললাম উনাকে। অবশেষে পেয়ে গেলাম একেবারে কোণায়। হেয়ার কাট চেন্জ করাতে আধা চুল কপালেই পড়ে আছে। চোখে সানগ্লাস পড়তে ভুলেননি সকলের নজর উপেক্ষা করার জন্য। স্থির দৃষ্টি আবদ্ধ হাতে বন্দী মুঠোফোনের পর্দায়। আমি সম্ভ্রান্ত কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম সে পানে। অন্য সবার কাছে এই মুহূর্তে উনাকে চেনা অসম্ভব হলেও আমি শরীরের গঠনেই ধরতে পেরেছি উনাকে।

পা চালিয়ে উনার কাছে গেলাম তাই। উনি টের পেলেন আমার উপস্থিতি। তবে তা প্রকাশ করলেন না। আমি অস্ফুটস্বরে ব্যাক্ত করলাম,

‘ এখানে এলেন যে? খুব শখ হয়েছে সবাইকে দেখানোর যে এআরকে এখানে আছে?’

‘ সবাইকে দেখানোর জন্য আসিনি। এসেছি তোমায় দেখার জন্য।’

ভারী কন্ঠস্বর উনার। মাথা উঠিয়ে দেখে নিলেন উনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাপ্রোন পরিহিতা আহিকে। আমি ইতস্তত বোধ করলাম। কথা শূণ্যের কোঠায় চলে যাওয়াতে স্বতন্ত্র অবস্থায়ই দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে। আনভীর হাতে মোবাইলের পাওয়ার অফ করে পকেটে গুঁজলেন। হাতঘড়ি দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ ডিউটি শেষ তাহলে?’

‘ হ্যাঁ।’
আমার প্রতিউত্তর।

‘ তাহলে এখানে আর কাজ কি? বাসায় চলো।’

বলেই উঠে দাঁড়ালেন আনভীর।হাত ধরে পদচারণা করলেন exit গেটের উদ্দেশ্যে। আমি হকচকিয়ে গেলান। বিভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক দেখলাম যে কেউ কিছু বুঝোলো কি-না। সৌভাগ্যবশত আমার কলিগ কেউই এখানে নেই। তাছাড়া কাউন্টারে বা ক্যান্টিনে অথবা অন্য যারা ওয়ার্কাররা আছে ওরা এত খেয়াল করলোনা নিজ কাজের ব্যস্ততায়। নাহলে দেখলে ঘটনা ঘটে যেত। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এতে।

___________

গাড়ি বাড়ির রাস্তা দিয়ে না যেয়ে অন্যরাস্তা দিয়ে যাওয়াতে আমি ছটাক অবাক হলাম। এর একটি কারন কৌতুহলতা। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখন পৌনে সাতটা বাজে প্রায়। একেতো হসপিটালে কাজের ক্লান্তি আর এখন আনভীরের অন্য গন্তব্য আমার মনে প্রশ্নের পাহাড় করে তুললো। আমি তাকালাম আনভীরের দিকে। উনি এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছেন আর অন্যদিক দিয়ে ব্লুটুথ কানেক্ট করে কারও সঙ্গে কথা বলতে মগ্ন। বলছেন,

‘ আজ আসতে পারছিনা তো আমি।’

অপরপাশে কেউ কিছু বলাতে বিরক্তির ছাপ পড়লো আনভীরের মুখে। বললেন,

‘ আমি না সকালেই বললাম যে রাতে একটা পার্সোনাল কাজের জন্য ব্যস্ত থাকবো? তাহলে তুমি কিভাবে মি.জাহিল কে বলতে ভুলে গেলে যে নেক্সট প্রেস কনফারেন্সের জন্য কাজ আমি কিছুদিন পরে করবো? আমি কিছু শুনতে চাই না। দোষ তোমার, এখন মি.জাহিলকে কি বলবে তুমি জানো। কল রাখি।’

অতঃপর ব্লুটুথে টাচ করে কল কাট করে দিলেন উনি। আমি কিছুক্ষণ অপ্রসন্ন অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করি চারপাশের সবকিছুৃ। তারপর জিজ্ঞেস করি,

‘ এটা তো বাড়ির ওয়ে না আনভীর। আপনি কোথায় যাচ্ছি?’

আনভীর নিরুত্তর। তথারুপি পুনরায় প্রশ্ন করলাম,

‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?’

‘ কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছিনা তোমায়। ধৈর্য ধরো। গিয়েই নাহয় দেখতে পারবে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। ‘

আমি পিটপিট করে কিছুক্ষণ মনোনিবেশ করলাম উনার দিকে। তারপর চুপ করে থাকবো বলে মনস্থির করলাম। গাড়ি অবশেষে থাকলো একটি গেটের সামনে। আনভীর বের হলেন গাড়ি থেকে। দরজা খুলে ইশারায় আমাকেও বললেন বের হতে। আমি তাই বের হলাম। দেখি গাড়িটা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা শহরের অন্য চার পাঁচটা গড়নের রেস্টুরেন্ট না। ছিমছাম ধরনের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আশপাশের ভিউ বলতে বাধ্য যে অনেক সুন্দর। কিন্ত আমার কাছে আজব লাগলো যে এখানে একেতো কোনো মানুষ নেই, আর দ্বিতীয়ত অনেক অন্ধকার।

আমি আনভীরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার পূর্বেই হাওয়ার বেগে উধাও হয়ে গেলেন উনি। আমি রীতিমতো ভড়কে গেলাম। সেই সাথে ভয়ও পেলাম একটু। পা চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখি যে জায়গাটি একটু বললে ভুল হবে, মোটামুটি ধরনের আধাঁর। দূর থেকে ভুতুড়ে আস্তানা থেকে কম কিছু মনে হবে না।

আমি ভয় পেয়ে আনভীরকে ডাকালাম কয়েকবার। কিন্ত কোনো সাড়া নেই। অবশেষে বললাম,

‘ দ..দেখুন। মজা করবেন না। আ.আমি কিন্ত ভয় পাচ্ছি।’

তবুও কোনো প্রতিউত্তর নেই। এদিকে দুনিয়ার সব ভুতুড়ে গল্প যেগুলো ছোটবেলায় শুনতাম সেগুলো মনে পড়ছে। ভয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়াতেই হঠাৎ পেছন থেকে কেউ হাত চেপে ধরাতে দাঁড়ালাম আমি। প্রথমে ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরলেও মানুষটাকে দেখে সব নিমিষেই দূর হয়ে গেলো। আনভীর দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে কেক আর তার ওপর সাজানো গোছানো কয়েকটি ক্যান্ডেল। এই আলো আধারের খেলায় উনার মুখে ক্যান্ডেলের আলোর প্রতিফলন নিতান্তই ঘোরগ্রস্থ বানিয়ে তুলছে। চোখের নিষ্প্রভ দৃষ্টি আমার মুখের দিকে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

‘ হ্যাপি বার্থডে আহি!’

সেই সাথেই সবগুলো লাইট জ্বলে উঠলো। পাশ থেকে কয়েকদল চিৎকার করে বলে উঠলো,

‘ হ্যাপি বার্থডে!’
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ

ভুলক্রুটি মার্জনীয়।

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২৫ (বার্থডে স্পেশাল)

হঠাৎ এভাবে সারপ্রাইজ পাওয়াতে কিছুক্ষণ থ হয়ে রইলাম আমি। ভাবতে পারিনি এমন কিছু পেয়ে যাবো। আনভীরের দৃষ্টি বিচরণ করে চলছ আমার কম্পনরত ঠোঁটে, চোখে, গলার ভাঁজে আর চিবুকে। বিস্ময়ে শুকনো ঢোক গিলছি আমি, ঠোঁট কাঁপছে অল্প বিস্তর ভাবে, চিবুক ক্রমান্বয়ে পরিণত হলো রক্তিম আভায়। আমি অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম সেভাবেই। মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম শিউলি ভাবি, আজরান ভাইয়া, নাহিদ ভাইয়া, মামুন, রিফাত আর রিমি আপুও এসেছে। সবার চোখে মুখে আত্নআনন্দের বহিঃপ্রকাশ। আমায় এভাবে বিস্ময় পানে উনাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আজরান ভাইয়া বললেন,

‘ আনভীর তোমায় ইমোশনলেস করার জন্য বুঝি বার্থডে প্ল্যান করেছে? এসব ভাবনা উড়াও আহি! ইন্জয় দিস। এন্ড ওয়ান্স এগেই হ্যাপি বার্থডে।’

আমি তথারুপি পুনরায় তাকাই আনভীরের দিকে। উনার হাতে এখনও কেক আছে। সেখানে সুসজ্জিত ক্যান্ডেলের আলো উনার রূপে প্রতিফলিত হওয়াতে করে তুলছে মোহগ্রস্থ। আনভীরের ঠোঁট কোলে পরিতৃপ্তির হাসি। চকচক করা ঘোলাটে চোখ জোড়া জানান দিচ্ছে আমার প্রতি পাহাড় সমান তীব্র অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘ এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে? ক্যান্ডেলে ফুঁ দাও!’

মাথা নাড়াই আমি স্বাচ্ছন্দ্যে। মোমবাতিতে ফু দেওয়ার আগে আনভীর আবিষ্ট কন্ঠে বলেন,

‘ উইশ করবে না?’

ওহ হ্যাঁ। উত্তেজনায় আচ্ছন্ন হয়ে বেমালুম ভুলেই বসেছিলাম ব্যাপারটা। তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করি আমি। পূর্বে এমন ঘটনা হলে সহস্রবার ভাবতাম যে কি উইশ করা যায়। কিন্ত আজ ভাবিনি একদন্ড। উইশ করে ক্যান্ডেলে ফু দিলাম আমি। সবাই পেছনে বড়সড় করে হাততালি দিলো। পুনর্বার চিৎকার করে বললো,

‘ হ্যাপি বার্থডে।’

খুশিতে আত্নহারা সবাই। রিমি আপু বললো,

‘কেট কাটো এবার ভাবি?’

নাহিদ ভাইয়ার কাছ থেকে নাইফ নিয়ে আমি কেক কাটলাম এবার। প্রথম পিসটা শিউলি ভাবির উদ্দেশ্যে এগিয়ে দিতেই আনভীর যেন ক্ষেপে গেলেন। আগবাড়িয়ে বললেন,

‘ আগে আমাকে দাও।’

আনভীরের তথারূপ কথা শুনে মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো সবাই। আমিও অপ্রসন্ন অবস্থায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। সামান্য একটা কেকই তো! এ নিয়ে বাচ্চাদের মতো বলার কি হলো? শিউলি ভাবি বিদ্রুপ করে বললেন,

‘ আমার দেবরটা আচ্ছা হিংসুটে হয়েছে তো! বউয়ের হাতের কেকের প্রথম পিসটা পর্যন্ত আমায় খেতে দিলো না।’

আনভীর পাত্তা দিলেন না শিউলি ভাবির কথায়। ব্যক্ত করলেন,

‘ আহির কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি হবো আমি। দ্যান তোমরা একে একে আসবে। সেটা কেকের বেলাতেই হোক আর অন্য কিছুর বেলাতেই হোক!’

আমি মাথা নুয়ে ফেললাম লজ্জায়। পরপর উনার বলা দুটো কথা এই শীতেও আমায় উষ্ণ রাঙায় আবৃত করছে। রিমি আপু বললেন,

‘ ভাবি গো, আনভীর ভাইকে জলদি কেকটা খাইয়ে দাও।’

‘ কি হলো বউ! ওয়েট করছি তো!’

উনার মুখে ‘ বউ’ শুনে বরাবরের মতো এবারও আমার শরীরে এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করলো। ধীরগ্রস্থে তাকালাম উনার দিকে। উনি অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ঠোঁট প্রান্তে বিদ্যমান আবছা দুষ্টু হাসি। ভ্রু নাচিয়ে দেখছেন আমার কার্যকলাপ। সে ব্যাপারটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো না। কেকের পিসটা খাইয়ে দিতেই পেছন থেকে সবাই ‘ওহহো!’ করে ওঠাতে আমি যেন আরও বেপরোয়া বনে গেলাম। এর মধ্যেই একটা ভয়ঙ্কর কাজ করেছিলেন আনভীর।
সকলের দৃষ্টি উপেক্ষা করে কেক খাওয়ার সময়েই ফট করে ঠোঁট ছোয়ালেন আমার আঙুলে। আমার শিরদাঁড়া দিয়ে এক অন্যরকম শীতল প্রবাহ অতিবাহিত হলো হঠাৎ এমন কিছু হওয়াতে। আসলে আনভীর যে আচমকা এরকম একটা কাজ করে বসবেন সেই আশা আমি বিন্দুমাত্র করিনি। এভাবেই কেক কাটা, কেক খাওয়া, ভাগাভাগির পর্ব অল্প সময়ের মধ্যেই। আমার কাছে সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো লাগছিলো। মনে হচ্ছিল যে আমি উড়ে বেড়াচ্ছি দূর পাল্লার মেঘের ভেলায়।
জীবনের এতগুলো জন্মদিন পার হলো কিন্ত এতটা আনন্দ করেছি এই প্রথম। এতটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এর সাক্ষাৎ পেয়েছি এই প্রথম।
আনভীরের বাবা ছোট একটা নেকলেস গিফ্ট করেছেন আমায়। মাথায় হাত দিয়ে বিনয়ীর সহিত বললেন,

‘ আরও বড় হও মা। তোমায় আমি কিন্ত বড্ড আদর করি। এজন্য না যে তুমি আনভীরের স্ত্রী বা আমার বন্ধুর মেয়ে বলে। তুমি মেয়েটা আপাদমস্তক মিষ্টি গড়নের মেয়ে। যাকে স্নেহ না করে পারা যায় না। তোমার ঠোঁটের হাসি দেখলে আমার সবসময়ই তোমার মায়ের কথা মনে পড়ে। কেননা তোমার মা’ও এভাবে হাসতো মিষ্টি করে৷’

আনভীরের বাবাই প্রথম এবং একমাত্র মানুষ, যার কাছে আমি শুনেছি নিজের মায়ের এত গল্প। আমার আব্বু আর আম্মুর লাভ ম্যারিজ ছিলো। দু’জনেরই বন্ধু ছিলেন বাবা। আমার আব্বুর আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না থাকাতে নানু বাড়ির কেউই তাদের সম্পর্কে রাজি ছিলো না। পরন্ত বাবাই হেল্প করে উনাদের। কিন্ত আমি ভেবে পাই না এটা কেমন ভালোবাসা যেখানে স্ত্রীর মৃত্যুর পর একজন পিতা তার মেয়েকে অন্য একজনের কাছে সপে দেয়? বস্তুতঃ আমি আমার আম্মুর প্রতি কখনোই দেখিনি আব্বুর ভালোবাসা। আমার মনে এক বিদ্বেষ জেগেছিলো যে ভালোবাসা এমনই, মৃত্যুর পর কেউ তার জন্য পরোয়া করে না। মনে হয় যে আনভীরের এরূপ পাগলামিও চলে যাবে আমায় একা রেখে।

আমার ভাবনার সুতা কাটলো রিমি আপুর ডাক পড়াতে। তারপর আমি সেসব ভুলিয়ে সবার সাথে সময় কাটানোর জন্য মশগুল হয়ে পড়লাম। মা আসেনি এখানে। তার কারন উনার অসুস্থতা। তাই বাবাকে অগত্যাই পূর্বে বেড়িয়ে পড়তে হলো যেহেতু উনি বাড়িতে একা আছেন। আমি এক এক করে গিফ্ট খুলতে থাকলাম সবার। শিউলি ভাবি সুন্দর কারুকাজ করা একটি ড্রেস গিফ্ট করেছেন গিফ্ট করেছেন আমায়। ড্রেসটি আসলেই খুব সুন্দর। রিমি আপু দিয়েছে ঘড়ি। মামুন ভাইয়া একটা গিফ্ট র ্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে আর বলেছে এখন না খুলতে। সারপ্রাইজ আছে এখানে। এ নিয়ে সবাই হুলস্থূল কান্ড শুরু করলো৷ বিশেষত রিমি আপু। বললো, সবাই গিফ্ট দেখিয়েছে তাহলে এটা দেখাবে না কেন। পরন্ত হার মেনে নিলো সবাই মামুন ভাইয়ার কীর্তিকলাপের জন্য। এবার সবার সন্দিহান দৃষ্টি আছড়ে পড়লো ওয়ান এন্ড অনলি নাহিদ ভাইয়ার ওপর। নাহিদ ভাইয়া ভড়কে গিয়েছে এমন দৃষ্টিতে। বললো,

‘ কি হলো, এমন ভুতুমপেচার মতো আমারে দেখছো কেনো সবাই?’

‘ শালা সবাই গিফ্ট দিলো তুই দিবি না।’

মামুন ভাইয়ার কথায় সে ভাব নিয়ে বললো,

‘ আরে আমি তো ভাবির স্পেশাল মানুষ। জন্ম জন্মান্তরের পরিচয় আমাদের৷ শুভদৃষ্টি থেকেই আমরা চেষ্টা করি কিভাবে একে অপরকে ল্যাং মেরে নিচে ফেলতে পারবো৷ এখন এখানে কি গিফ্ট দেওয়া দেওয়ি চলে?’

‘ তারমানে তুই গিফ্ট আনিস নি!’

‘ আরে এনেছি তো! যতই হোক, আহি আনভীর ভাইয়ের বউ। আর তার বউ মানেই তো আমার বউ!’

এতক্ষণ নাহিদ ভাইয়া ভাব নিয়ে থাকলেও শেষ কথাটি যে ভাবের চোটে এভাবে বলে ফেলবে তা হয়তো আমাদের বা নাহিদ ভাইয়ার সবারই কল্পনার বাইরে ছিলো। নাহিদ ভাইয়া শুকনো ঢোক গিলে তাকালো আনভীরের দিকে। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন। দাঁতে দাঁত চেপে নাহিদ ভাইয়াকে বললেন,

‘ সবার সামনে চড় থাপ্পড় খাওয়ার শখ জেগেছে তোর?’

‘ আরে মাফ করেন ভাই, আমি অমনে বলতে চাইনি।’

দুজনের এমন অবস্থা দেখে আমাদের হাসির কোলাহলে চারপাশ মেতে উঠলো। রেস্টুরেন্টে যারা ম্যানেজার বা ওয়েটার ওয়েট্রেস ছিলো ওরাও হাসছে সবাই। শিউলি ভাবি বললো,

‘ আচ্ছা এবার গিফ্ট দে আহিকে।’

নাহিদ ভাইয়া দাঁত কেলানি দিয়ে একটা প্যাকেট দিলো আমায়। আমি সেটা খুলে থতমত খেয়ে গেলাম মোটামুটি। কেননা সেখানে নাহিদ ভাইয়ার সুন্দর একটা ছবি ছিলো। অবশ্যই সুন্দর বলা চলে, মনে হয় যেন হাজার খুঁজে নিজের বেস্ট পোজ এর এই ছবি বের করেছে। আমি বললাম,

‘ এটা কি?’

‘ আরে ভাবি তুমি সেদিন বলেছিলে না যে আর কত সিঙ্গেল থাকবো, আপনারও একজন ভাবি দরকার। তাই মানে..’

লজ্জার ভঙ্গি করলেন নাহিদ ভাইয়া। বললেন,

‘ আমার এই ছবি দিয়ে মেয়ে খুঁজে আপনার ভাবি বানিয়ে নিন। এটাই আপনার গিফ্ট হবে৷ দারুন না!’

বলেই নাহিদ ভাইয়ার সর্বাঙ্গে দুষ্টুমির পরিতৃপ্তি বহিঃপ্রকাশ ভেসে উঠলো। আমি বুঝেছিলাম, আমি আগেই বুঝেছিলাম এই শয়তান ব্যাটায় এমন কিছুই করবে। রাগমিশ্রিত নয়নে পলকহীন ভাবে সেই রাগের আভাস ফুটিয়ে উঠলো মেকি হাসি ফুটে উঠলো আমার চোখে। বললাম,

‘ প্রবলেম নট ব্রাদার। আমার আগের বাসায় একজন আপা কাজ করতো। আমরা তাকে ডাকতাম সকিনা বিবি বলে। সকিনা আর নাহিদ! দারুন মানাবে।’

আমার কথা শুনে আরও একপ্রকার হাসিতে মশগুলো হয়ে উঠলো সবাই। এভাবেই অনেকক্ষণ আড্ডা মাস্তি চললো আমাদের। সবকিছুর মধ্যে আনভীর শুধু নির্বিকার। পলকহীন ভাবেই উনি দেখে চলছিলেন আমায় সারাটা সময়। শেষে অবশিষ্ট যে কেক গুলো ছিলো ওগুলোও ছাড়েননি নাহিদ ভাইয়া আর রিমি আপু। সবার ওপর ক্রিমের বর্ষণ ফেলে গোলমেলে কান্ড বাধিয়ে ফেলেছেন। আমিও ছিলাম এই ক্রিম বর্ষণের ভিক্টিম। কিন্ত সবকিছুর মধ্যে কেউ আনভীরের গায়ে ক্রিম লাগানোর মতো দুদন্ড সাহস করলো না।
রিমি আপু অদ্ভুত হাসি হেসে বললো,

‘ ভ..ভাই ক্রিম লাগাবো।’

আনভীর প্রতিউত্তর করলেন না রিমি আপুর কথায়। আমি তখন মুখের ক্রিম টিস্যু দিয়ে মুছতে মগ্ন। আনভীর এবার আচমকা চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার কাছে এলেন। আমায় চরম অবাক করে দিয়ে দুহাত ধরে কাছে টেনে নিলেন আমায়। তারপর নিজের গাল আমার গালের সাথে সন্তর্পনে ঘষে দিতেই আমি বিমূঢ় হয়ে রইলাম। ঘটনাটি ঘটেছিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। আনভীর তারপর বললেন,

‘ ক্রিম লাগিয়ে নিয়েছি মিসেস এর গার্ল থেকে। এখন প্রোপার বার্থডে পার্টি লাগছে তো?’

‘ প্রোপার মানে? সুপার ডুপার লাগছে ভাই!’

রিমি আপুর টিটকারী মূলক কথা আমায় যেন লজ্জায় আবিষ্ট করে ফেললো। কিছুক্ষণ মূর্তমানের মতো তাকিয়ে ছিলাম নিচের দিকে।

শিউলি ভাবি বললো,

‘ আনভীর তুমি গিফ্ট দিলে না আহিকে?’

‘ কি গিফ্ট দিবো আবার। বার্থডে পার্টি না অর্গানাইজ করলাম? আরও কিছু দিতে হবে?’

‘ বলে কি ছেলেটা! বার্থডে পার্টি অর্গানাইজ আর গিফ্ট দেওয়া এক হলো?’

আনভীর হাসলেন কিছুক্ষণ। অতঃপর বললেন,

‘ দেখা যাক!’

কথাটি অজান্তেই মন খারাপ করে দিলো। সত্যি কথা বলতে গিফ্ট আমার কাছে ভেল্যু করে না, ভেল্যু করে গিফ্ট দেওয়ার মতো সুন্দর সুন্দর মানুষগুলো। আমি সত্যি বলতে আনভীরের গিফ্টের জন্যই বেশি আশা করছিলাম। পরন্ত ভাবনাটি উড়িয়ে দিলাম আমি। সবাই তো একরকম নাও হতে পারে।

তারপর সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ি আমরা। আজরান ভাইয়া ঘুমুঘুম কন্ঠে বললো,

‘ নাহিদ তুই ড্রাইভ কর। আমি ঘুমের ঠেলায় ড্রাইভ করতে পারবো না।’

তারপর একে একে দুই গাড়িতে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সবাই। আমার হাতে একগাদা গিফ্ট আর চুলে বার্থডে স্প্রে দিয়ে মাখামাখি। আনভীর গাড়িতে বসলেন। সেই সাথে বসলাম আমিও। মুখে মলিনতার ছাপ। আনভীর হঠাৎ ইন্জিন স্টাট করেও অফ করে দিলেন। তাকালেন আমার দিকে। বললেন,

‘ তুমি হ্যাপি হও নি!’

‘ কি বলছেন? অবশ্যই আমি হ্যাপি হয়েছি। এমন সারপ্রাইজের অভিজ্ঞতা এই প্রথম আমার। কেই বা না হ্যাপি হবে যদি আপনার মতো এত কেয়ারিং কাউকে পায়?’

আমি কথাটি বলে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। আনভীর বললেন,

‘ তবুও তো মুখটা ভালো দেখাচ্ছে না।’

বলে আমার একটু কাছে এলেন উনি।বললেন,

‘ গিফ্ট দেইনি বলে মন খারাপ।’

আমি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে যাই এতে। ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠলাম,

‘ আরে না না। এমন কিছুই না। আসলে…’

আমায় কিছু বলতে না দিয়ে আনভীর হঠাৎ কোমড় চেপে নিজের কাছে টেনে নিলেন আমায়৷ আমায় গালের কাছে ঠোঁট নিয়ে বেশ সময় নিয়ে একটা কোমল স্পর্শ করলেন। আমার শরীর নড়ে উঠলো এ এক নতুন অনুভূতিতে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। আনভীর সরে আসলেন এবার। বললেন,

‘ আনভীর মানেই স্পেশাল। তাই তোমার বার্থডে গিফ্টটাও নাহয় স্পেশাল করে দিবো নে?’

আমি কথা বলতে পারলাম না। মাথা নত করে বসে রইলাম সেভাবেই। উনি মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলেন। বললেন,

‘ ক্রিমটা ভালোমতো মুছোনি। তাই কিস করার সময় ওটারও টেস্ট পেলাম। ইয়াম্মি!’

ব্লাশ করছি আমি লোকটার নির্লজ্জ কথাবার্তায়। কিন্ত তাকানোর সাহস পেলাম না। হে আল্লাহ! তোমার এই বিশাল ধরনীতে আমার লজ্জা লুকানোর জন্য একটু জায়গা খুঁজে বের করো। আমি সেখানে ঢুকে যাই।
.
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ