#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৩১
‘ অপূর্ব ভ-ভাইয়া ত-তুমি?’
আমার আতঙ্কে জড়ানো মুখ দেখে অপূর্ব ভাইয়ার চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। এটা নতুন নয়। আমার মুখে ভয় দেখলেই সে একটা অদ্ভুত শান্তি খুঁজে পায়। এক পা এগিয়ে আমার দিকে এগোতেই আমার হাত পা যেন শীতল হয়ে এলো। কথা বলতে ভুলে গিয়েছি যেন আমি। ‘অপূর্ব হাসান’, জীবনের একুশটা বছরে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছি আমি তাকে। ছোটবেলার এক একটা হৃদয় বিদীর্ন স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে চোখের সামনে। মনে পড়ছে তার সেই নির্মম ব্যবহারগুলো। আমি চিৎকার করতে চেষ্টা করলাম কিন্ত আফসোস! ভয় এতটাই কাবু করে ফেলেছে যে চিৎকারও বেরিয়ে এলো না। অপূর্ব ভাইয়া ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো,
‘ ভয় পাচ্ছিস কেনো তুই? আমি কি তোর পর কেউ? আজক কতদিন পর তোকে দেখলাম কই তুই খুশিতে আমায় জড়িয়ে ধরবি তা না করে কাঁপছিস কেন?’
ঠান্ডা কন্ঠ অপূর্ব ভাইয়ার। এমন ভাব করেছে যে আসলে কিছুই হয়নি। কিন্ত এই শীতল ব্যবহারই আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিলো। তাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি আমি। তাই জানি যে সে আমার আপন চাচার ছেলে হওয়া সত্বেও একজন মানুষ ঠিক কতটা অমানুষ হতে পারে। আমি আস্তে করে সরে আসার চেষ্টা করতেই অপূর্ব ভাইয়া বললো,
‘ আর পালাতে পারবি না তুই আহি। রিসেপশনে আমার লোক সব ঠেসে বসে আছে। তাছাড়া এটা হসপিটাল। পালিয়েই বা যাবি কোথায়?’
আমি এবার সত্যিই কেঁদে দিলাম ভয়ে। আতঙ্কে বলে উঠলাম,
‘ কেন এসেছো তুমি?’
আমার এমন কথায় সে কদাচিৎ বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ ও এম জি। ওই এআরকে আমার ফিওন্সে কে নিজের ভোগবস্তু বানিয়ে রেখেছে আর তুইও ড্যাং ড্যাং করে ওদিকে পা বাড়িয়েছিস , কি ভেবেছিলি এভাবেই ছাড় পেয়ে যাবি?’
অপূর্ব ভাইয়া এবার সজোরে হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো আমায়। চুল চেপে ধরলো সর্বশক্তি দিয়ে। এখন এই মুহূর্তে সকল ডক্টররাই ডিউটিতে আছে নতুবা কেউ ওয়ার্ডে রাউন্ড দিচ্ছে। লিফটের ফিফথ ফ্লোরে কোণায় পড়ে থাকা প্রাইভেট হসপিটালের এই রুমে কারও খেয়াল থাকার তাই প্রশ্নই উঠে না। আমি ব্যথায় কাকিয়ে উঠলাম। অপূর্ব ভাইয়া যেন প্রচন্ড শান্তি পাচ্ছিলো আমায় এভাবে দেখে। এতটুকু সে বুঝতে পেরেছে সেদিন আনভীর উনাকে একঝলক ভয় দেখালেও আমি এখনও ভয় পাই অপূর্ব ভাইয়াকে। সেই আগের মতো। আমার হাতের দিকে তাকালো এবার সে। হঠাৎ কিছু একটা দেখে মুখ বিবর্ণ করে ফেললো। থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ এনগেইজমেন্ট রিং কোথায় তোর?’
আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুলো না। কেননা আনভীর সেটা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলে বহু আগেই। উনার সেই ব্যবহারে আমি দ্বিধা শেষে বলেই ফেলেছিলাম এমন না করতে। কেননা অপূর্ব ভাইয়া জানতে পারলে অবস্থা খারাপ করে ফেলতো। আনভীর তখন একটা কথাই বলেছিলেন,
‘ এমন এনগেইজমেন্টের কোনো দাম নেই যেখানে সবকিছুই হয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তুমি আমার ওয়াইফ আহি। অপূর্বের কোনো কিছুই আমি তোমার পরিচয় হিসেবে রাখতে দিতে পারবো না।’
অপূর্ব ভাইয়ার পুনরায় ডাকাতে আমার ধ্যান ভাঙলো। সে চোখের দৃষ্টি প্রখর করলো আমার দিকে। খানিকবাদে বলে উঠলো,
‘ ফেলে দিয়েছে ওই রকস্টার!’
উত্তর দেইনি আমি। আমার এই নীরবতায় সব কিছু বুঝে গিয়েছিলো অপূর্ব ভাইয়া৷ অতঃএব হাসলো সে। আমার হাতের অনামিকা আঙুল টা তীব্রভাবে চেপে ধরলো৷ ব্যাথায় ‘আহ’ করে শব্দ বেরিয়ে এলো আমার মুখ দিয়ে তাই। বলে ফেললাম,
‘ ব-ব্যাথা প-পাচ্ছি?’
‘ ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তোর আঙুল চেপে ধরেছি আহি!’
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছিলো আমার। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এতটুকু টের পেয়েছি যে এবার ছাড় পাবোনা আমি। আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি গুটিশুটি মেরে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়লাম। ভয়ে এখনও কেদে চলছি সমানতালে। হাটু গেঁড়ে বসলো অপূর্ব ভাইয়া। আহত সুরে বললো,
‘ বিশ্বাস কর আহি, তোকে ব্যাথা দেওয়ার কোনো ইনটেনশনই আমার ছিলো না। তুই জানিস না যে আমি তোকে কত ভালোবাসি। যেদিকে তোর নিজের বাপ তোকে মেরে ফেলতে চায় তোর মায়ের প্রোপার্টি হাসিল করার জন্য সেদিকে আমার জন্য বেঁচে আছিস তুই। বাবার প্রত্যেকটা কথা অমান্য করে জেদ করে নিজের কাছে রেখেছি তোকে। তারপরও তুই পালিয়ে গিয়েছিলি। তখন নাহয় ছোট ছিলি। ১৬ বছর বয়সে একটা মেয়ে যদি আমায় দুটো জ্যান্ত মানুষকে খু ন করতে দেখে এটাই স্বাভাবিক। তাই তখন পর পর দুবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য তোকে ব্লেইম করবো না। কিন্ত এবার? তখন পরপর দুটা ভয়াবহ শাস্তির দেওয়ার পর আবার পালানোর দুঃসাহস কিভাবে করতে পারলি তুই? ‘
আমার গাল চেপে ধরলো অপূর্ব ভাইয়া। চোখজোড়া লাল হয়ে উঠেছে তার৷ আমার আজ থেকে ৫ বছর পূর্বের কথা মনে পড়লো যখন অপূর্ব ভাইয়া জঘণ্যভাবে তার দুজন লোককে মেরেছিলো। তাদের দোষ ছিলো এটাই যে তারা আমায় নিয়ে বাজে কথা বলেছে৷ আমি একটা শাড়ি পড়েছিলাম সেটা নিয়ে বাজে কমপ্লিমেন্ট দিয়েছে৷ এর জন্য সেদিন রাগে আলমারি থেকে সকল শাড়ি নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিলো সে। চিৎকার করে বলেছিলো পরবর্তীতে কোনো নাগরের সামনে শাড়ি পড়লে ওই শাড়িই আমার গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলবে। সেবারই ভয়ে প্রথম পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম আমি।
আমি পিটপিট করে তাকালাম তার দিকে। আনভীরকে ভীষণ ভীষণ মনে পড়ছে এখন। অপূর্ব ভাইয়া হেসে দিয়ে বললেন,
‘ তোর রকস্টার আসবে না আহি৷ ওকে আমি আগেই সাবধান করেছিলাম আমার জিনিসে হাত না বাড়াতে কিন্ত ও শুনলোনা৷ বরং বললো, আমি তোকে যতটা কষ্ট দিয়েছি সবগুলোর শোধ ও নেবে.।’
বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম আমি ভাইয়ার পানে। আনভীর যে অপূর্ব ভাইয়ার সাথে এত বড় একটা আলাপ চালিয়েছেন সেটা ছিলো একেবারেই আমার ধারনার বাইরে। আমায় এভাবে দেখল সে বলে উঠলো,
‘ উফ! তোর রকস্টার তোকে কিছু বলেনি বুঝি? সে তো দেখছি পুরাই কেয়ারিং। বাট একটা কথা কি জানিস! তোর প্রতি ওর এই এট্রাকশনটা আমার জাস্ট ভাল্লাগছে না।’
আমি ক্ষণে ক্ষণে কেপে উঠছি আতঙ্কে। অপূর্ব ভাইয়া তা দেখে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আমার মুখের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো আস্তে করে সরিয়ে বলো উঠলো,
‘ ভয় পাচ্ছিস কেন তুই আহি? বি রিল্যাক্স। আমি না তোর হবু বর? হবু বরকে কেউ এত ভয় পায়? নাকি নাটক করছিস ভয় পাওয়ার? তুই যদি আমাকে এতটাই ভয় পাতি তাইলে ওই রকস্টারের সাথে পালানোর সাহস পেলি কিভাবে? ‘
‘ ছেড়ে দাও ভাইয়া প্লিজ!’
পেছনে থাকা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো অপূ্র্ব ভাইয়া। বললো,
‘ সাহস যে তোর সীমানা ছাড়িয়ে ফেলেছে তা দেখতেই পারছি। একটা কথা বল তো! ওই রকস্টারকে পটালি কিভাবে?’
‘ কি সব বলছো তুমি?’
‘ ভুল কিছু বললাম? তোর যে রূপের দেমাগ আছে তা আগেই জানি রে আহি। তোর জন্য কতগুলো ছেলেকে যে উপরে পাঠিয়েছি তার হিসাব নাই৷ ছেলেদের সাথে খোলামেলা মেলামেশা করতি, ঘুরে বেড়াতি। শেষমেষ শরীর দিয়ে একটা রকস্টারকে পটিয়ে ফেললি, তুই কি মনে করিস, আমি কিছু বুঝিনা? একটা জোয়ান ছেলের সাথে তুই রাতের পর রাত একসাথে কাটিয়েছিস আহি! সে কি এমনেই তোকে ছেড়ে দিবে? ভালোই তো দিন কাটাচ্ছিলি ওই এআরকের প্রোস্টিটিউট হয়ে। তাই না?’
লজ্জা ঘৃণা আর আতঙ্ক আমার মুখ ক্রমশ লাল করে ফেললো। তাই বললাম,
‘ আমি তোমার মতো না ভাইয়া যে মুখে হাজার বার ‘ভালেবাসি’ বললেও রাতে একজন মেয়ে ভোগ করার জন্য নাইট ক্লাবে পড়ে থাকে। তোমাদের কাছেই বেড়ে ওঠা আমার। আগেই থেকেই দেখেছি তুমি কি করতে। আমায় ছেলের ধারে কাছে ঘেঁষতে দাওনি। তবে ঠিকই রাতে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করেছো। শার্টে লিপস্টিকের শেড, গলায়-ঘাড়ে বাইট এগুলো কি আমি দেখিনি? সবাইকে নিজের মতো ভেবো না ভাইয়া।’
রাগে ক্রোধে আমার গাল চেপে ধরলো ভাইয়া। চোখজোড়া টকটকে লাল দেখাচ্ছে। ক্রোধ নিয়ে সে বলে উঠলো,
‘ মুখে ভালোই বুলি ফুটেছে তোর। সব তোর ‘আনভীর রেজওয়ান খান’ এর জন্যই তো, তাই না? আচ্ছা, ওর চ্যাপ্টার যদি ক্লোজ করে দেই তাইলে ভালো হবে না আহি?’
মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো আমার। কি বললো মাত্র সে?
______________
হাজারে মানুষের সমাগমে মুখরিত প্রেসক্লাব। একদিকে ক্যামেরার শাটারের সাউন্ড আর অন্যত্র লাইটের ইফেক্টে সবকিছুকে মনে হচ্ছে আলোর বন্যা। জার্নালিস্ট আর ক্যামরাম্যান দের ব্যস্ততা প্রথমেই পড়ছে নজরে। আনভীর সবেমাত্র এই আয়োজনের ইতি দেখে পা বাড়ালো করিডোরের দিকে। একদিকে হাজারো ভক্তদের সমারোহ অন্যদিকে জার্নালিস্টদের প্রশ্নের বাহার। একদল মেয়েরা চিৎকার করে চিয়ার আপ করছে এআরকের৷ হাতে বিশাল ফেস্টুন আর ফ্যানব্যাজ তো আছেই। পেছনেই রয়েছে নাহিদ। ইশারায় গার্ডদের বললো ফ্যানস আর মিডিয়ার লোকদের একটু কন্ট্রোলে রাখতে। তারপর নাহিদই আনভীরের পক্ষ হয়ে বলে উঠলো,
‘ নো মোর কোয়েশন প্লিজ। নেক্সট বার কথা বলবেন।’
তখনই এক সাংবাদিক বলে উঠলো,
‘ এক্সকিউজ মি এইআরকে। আমাদের কাছে একটা নিউজ আছে যে আপনি একজনের সাথে লিভ টুগেদারে আছেন। ইজ ইট ট্রু?’
পা থামালো আনভীর। একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাই সে তাকালো জার্নালিস্ট এর দিকে।
#চলবে
#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা- কায়ানাত আফরিন
#পর্ব- ৩২+৩৩
‘ এক্সকিউজ মি এআরকে। আমাদের কাছে একটা নিউজ আছে যে আপনি একজনের সাথে লিভ টুগেদারে আছেন। ইজ ইট ট্রু?’
পা থামালো আনভীর। একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাই সে তাকালো জার্নালিস্ট এর দিকে। এত হৈ চৈ এর মাঝে কদাচিৎ এমন প্রশ্ন শুনে কয়েক মুহূর্ত নিস্তব্ধতা ছাড়িয়ে গেলো। যদিও একজন সেলিব্রেটিকে কমবেশি এধরনের বাজে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলেও আনভীরের ক্ষেত্রে তা ছিলো ব্যাতিক্রম। ওর সিঙ্গিং ক্যারিয়ার নিয়ে আঙ্গুল তুললেও আজ পর্যন্ত মেয়ে ঘটিত কোনো ব্যাপারে জড়িয়ে পড়তে দেখেনি স্টার হিট এর এই প্রখ্যাত ভোকাল আর্টিস্টকে। নাহিদ প্রথমে স্থির দৃষ্টি নিরূপন করেছিলো তথাকথিত সেই জার্নালিস্ট এর ওপর। আহির ব্যাপারে এদের জানা অসম্ভব। এটা যে একটা উদ্ভট প্রশ্ন ছাড়া আর কিছুই না সেটা ধরতে পেরে প্রখর গলায় বলে উঠলো,
‘ আপনি কি জানেন মিস্টার যে আপনি কি জিজ্ঞেস করছেন?’
‘ আমরা জাস্ট আমাদের কাজ করছি স্যার এর বেশি কিছুনা। আমাদের কাছে একটা তথ্য এসেছে উনার লিভ টুগেদারের ব্যাপারে। সেটা আদৌ সত্য কিনা তাই জানতে চাচ্ছে তার ভক্তরা।’
নাহিদের কিয়ৎপল মনে হচ্ছিলো সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে আচ্ছামতো পিটাতে। এক অজানা কারনেই মিডিয়ার এই জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টকে দু চোখে সহ্য হয়না ওর। যার বড় কারন হচ্ছে যত উদ্ভট প্রশ্নের বাহার নিয়ে আসা আর পার্সোনাল লাইফে দখল করা। নিজেকে ধাতস্থ করে নাহিদ আনভীরের পক্ষপাতিত্বে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দিলো আনভীর। ইশারায় বললো চুপ থাকতে।
যথাআজ্ঞা পালন করলো নাহিদ। এআরকে’র সেক্রেটারি হিসেবে এর বেশি আর কিছু করতেও চাইলো না সে। আনভীর এবার সানগ্লাসটা বুকপকেটে রেখে তীব্র দৃষ্টি ছুড়লো সাংবাদিকের দিকে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা সকলের হাতে মাইক্রোফোন আর ভেড়ীপালের মতো উৎসুখ দৃষ্টি বিদ্যমান আনভীরের দিকে। আনভীরের আবার বলে উঠলো,
‘ আই ফরগট দা কোয়েশন? কি বলেছিলেন?’
‘ আপনার লিভ টুগেদারের থাকা নিউজটা কি সত্যি?’
হাসলো আনভীর। ভ্রু নাচিয়ে বললো,
‘ সত্য বলবো না-কি মিথ্যে?’
উপস্থিত সকল মানুষরা হতবাক। দূরে অবস্থানরত আনভীরের ভক্তরা এমনকি স্টার হিট এর সি ই ও, মিউজিক ডাইরেক্টর সহ। সাংবাদিকমহল ভড়কে গিয়েছে সামনে উপস্থিত এই বহুল জনপ্রিয় সুপুরুষটির সামনে। এআরকে কি ফান করার মুডে আছে নাকি? এমন প্রশ্ন সাংবাদিকদের চোখে মুখে আবির্ভাব হলেও অল্পবয়সী একজন নিউজ রিপোর্টার সাহস করে বলেই ফেললো,
‘ স্যার সত্যিটাই বলুন।’
‘ বেশ।’
অস্ফুটস্বরে বললো আনভীর। অতঃপর একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে পুনরায় বলে উঠলো,
‘ তথাকথিত সেলিব্রিটিদের মতো লিভ টুগেদারর অভিজ্ঞতা আমার নেই। এই কথা আপনারা কিভাবে জেনেছেন সেটা আমি জানিনা। শুধু বলবো, এটা পাশ্চাত্যের কোনো দেশ না যেখানে লিভ টুগেদারের মতো কাজ আমার দ্বারা হবে।’
‘ তার মানে আপনার লাইফে এমন কেউই জড়িত নই এআরকে? ‘
‘ তা তো বলি নি।’
আরও একদফা ভড়কে গেলো মহল। সাংবাদিকগণ অপ্রস্তুত হয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ তার মানে কেউ আছে?’
এদের বিভ্রান্তে ফেলে এক অদ্ভুত আনন্দ পায় আনভীর। আর একটু বিভ্রান্ত করার জন্য সে বলে ফেললো
‘ তোলা রইলো প্রশ্নটা। শুধু বলবো ইটস নট এ পার্ফেক্ট টাইম টু শেয়ার মাই পার্সোনাল ইস্যু। আমার গার্লফ্রেন্ড বা লাভার আছে কি-না বা সেটা কতদূর এগিয়েছি সময় হলেই বলবো। আপাতত আমি একটি ডুয়েট সং নিয়ে ব্যস্ত আছি। নেক্সট উইকে একটা হিউজ শো হবে রেডিসন এ। এটাতেই বলবো কনসানট্রেট করতে। থ্যাংক ইউ!’
বলেই এখান থেকে বাইরের দিকে পা বাড়ালো আনভীর। জনসমাগম তার পিছু নিতেই কয়েকদল গারয়ড সেটাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। আনভীর ইশারায় নাহিদকে বললো,
‘ আসিফ (বডিগার্ড) কই?’
‘ ওকে আমি আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ভাবির ওদিকে। এতক্ষণে চলে গিয়েছে বোধহয়।’
‘ ওকে। গাড়ি তুই ড্রাইভ কর।’
হঠাৎ মোবাইলে আসিফের কল আসাতে ভড়কে গেলো আনভীর। গাড়ি ইতিমধ্যে স্টার্ট করেছে নাহিদ। গন্তব্য অদূরেই বিদ্যমান ফাইভ স্টার হোটেলে সেই গ্র্যান্ড ডিনার পার্টির দিকে। আনভীর কল রিসিভ করে বললো,
‘ বলো আসিফ।’
‘ স্যার আমার এখানে কিছু একটা ঠিক লাগছে না।’
চোখে সন্দেহের আভাস ছড়ালো আনভীরের। বলে উঠলো,
‘ মানে?’
‘ স্যার মিসেস আহির হসপিটালের পার্কিং সাইটে আমি সেই গাড়িটা দেখেছিলাম যেটা সেই রাতে হাইওয়ের সাইডে ছিলো। যেখানকার এক স্ট্রেন্জার শ্যুট করতে চেয়েছিলো আপনাকে।’
প্রথমে আসিফের কথা বোধগম্য না হলেও হঠাৎই আনভীরের মনে পড়লো অপূর্বের কথা। সেরাতে হাইওয়ের কোণায় অপূর্ব আর রাহির সাথে দেখা করার সময় অপূর্ব যে রাগবশত আনভীরের কপালে রিভলবার চেপে ধরেছিলো তার কথাই বলছে আসিফ। ও যেহেতু অপূর্বকে চিনে না তাই কেন ওকে স্ট্রেন্জার কেনো বললো সেটাও মুহূর্তে পরিষ্কার হয়ে গেলো। তাই চমকে বলে ফেললো,
‘ কি? আর ইউ শিউর যে ওটা ওই গাড়ি?’
‘ ১৫ বছরের এক্সপিরিয়েন্স আমার স্যার। এভাবেই আপনার বাবা আমাকে আপনার পার্সোনাল গার্ড হিসেবে নিয়োগ দেননি। আই এম হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর।’
‘ ওকে আসছি আমি। তুমি ওখানেই থাকো। নাহিদ , গাড়ি ঘুরা।’
কল কাটলো আনভীর। চোখে মুখে এখন ত্রাস রাজত্ব করছে। নাহিদ জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি হয়েছে ভাই?’
‘ মেবি অপূর্ব খোঁজ পেয়েছে আহির।’
কন্ঠস্বর ক্রমশ শীতল হয়ে এলো আনভীরের। নাহিদ এবার শশব্যস্ত হয়ে বললো,
‘ তাহলে আসিফকে বললেননা কেন ভাবির কাছে যেতে?’
‘ তুই কি পাগল? অলরেডি কিছুক্ষণ আগে আহির ব্যাপারটা ফাঁস হতে হতে ফাঁস হলো না। এর মধ্যে আমার গার্ড যদি ওখানে যায় কি মনে হয় একটা প্রাইভেট হসপিটালে সেটা চোখে পড়বেনা?’
‘ আপনি তাহলে ভাবির কথা লুকিয়ে রেখেছেন কেনো?’
‘ ওই বা*র্ড অপূর্বের জন্য। তোর কি মনে হয় ও যদি জানে যে আহি আমার ওয়াইফ এভাবেই ছেড়ে দিবে ওকে? আহির প্রোপার্টির সমস্ত কাগজপত্র ওর কাছে আছে নাহিদ। তাই ওই লোকটাকে আমি সহ্য করছি। আহির মাকে মৃত্যুর পূর্বে কথা দিয়েছিলাম যে উনার মেয়ে আর উনার সেসব সম্পত্তি একটাও খারাপ হাতে আমি পড়তে দিবো না। তাই চুপ করেছিলাম। না জানিয়েছি আহিকে আর না অন্য কাউক।’
চুপ করে গেলো আনভীর। নাহিদ এসব আংশিক জানতো কিন্ত আজ স্পষ্ট হলো সবটা। দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে সে। আনভীর অস্থির হয়ে কল করতে থাকলো আহিকে। অবশেষে বলেই ফেললো,
‘ পিক আপ দা কল আহি!’
____
‘ মুখে ভালোই বুলি ফুটেছে তোর। সব তোর ‘আনভীর রেজওয়ান খান’ এর জন্যই তো, তাই না? আচ্ছা, ওর চ্যাপ্টার যদি ক্লোজ করে দেই তাইলে ভালো হবে না আহি?’
মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো আমার। কি বললো মাত্র সে? নিজেকে সামলে নিয়ে অস্ফুটস্বরে বললাম,
‘ কি সব আবোল তাবোল বলছো তুমি?’
‘ কেন তোর কি বিশ্বাস হয়না যে ওকে আমি টপকাতে পারবো? দেখাবো নাকি?’
‘ না!’
অনেকটা চিৎকার করেই বলে উঠি আমি। হঠাৎ পাশে ভাইব্রেট মোডে কেপে ওঠা ফোনের দিকে নজর গেলো আমার। সেটা ক্ষণে ক্ষণে বদ্ধ শব্দ তৈরি করছে। স্ক্রীনে পরিমিত জায়গায় ভেসে উঠছে ‘Anvir’ নামক শব্দটি। তা দেখে বাকা হাসি দিলো অপূর্ব। বলে ফেললো,
‘ বাহ্! নাম নিলাম আর হাজির। রকস্টারের প্রশংসা না করে পারলাম না।’
আমি তৎক্ষণাৎ হাতিয়ে ফোন রিসিভ করার চেষ্টা করতেই অপূর্ব থমথমে গলায় বললো,
‘ ডোন্ট রিসিভ দ্যা কল।’
থেমে গেলাম আমি। কেননা এখন সামনে বসা মানুষটার কথা শোনা ছাড়া আমার আর কোনো ওয়ে নেই। ভাইয়া হাঁটু গেড়ে বসলো আমার সামনে। বললো,
‘ আমি যে কতটা নিচে নামতে পারি তা তো তুই জানিসই আহি। তাই না!’
বলে বিশ্রিভাবে গাল থেকে হাত আমার গলার কাছে নামিয়ে দিতেই আমি গুটিসুটি হয়ে পেছনে চলে গেলাম। এর আগেও এমন করেছিলেন উনি। বেশ কিছুবছর আগে মেডিক্যাল এডমিশন টেস্টের জন্য রাত জেগে পড়তে হতো আমার। এমনই এক রাতে পড়ছিলাম আর অপূর্ব ভাইয়া হুট করে পারয়মিশন ছাড়াই আমার রুমে এসেছিলো। ড্রাংক ছিলো সে। ভয়াবহ রকমের ড্রাংক। সমানতালে আবোল তাবোল খিস্তি করে চলেছিলো। সেবার তাই সেই রূপ দেখে ভয়ে শূণ্য হয়ে পড়েছিলাম আমি। হুট করে আমায় নিজের কাছে টেনে নিতেই বুঝতে পেরেছিলাম যে নেশার ঘোরে সে কি করতে চাচ্ছে। সেবার অনেকটা বাধ্য হয়েই আমি পেছন থেকে ফ্লাওয়ার ভ্যাস নিয়ে সেটা ঠিক ভাইয়ার কপাল বরাবর ছুঁড়ে মেরেছিলাম। অবিরাম রক্ত পড়ছিলো তার কপাল বেয়ে। অপূর্ব ভাইয়ার ডাকে আমি বর্তমানে এসে পড়তেই সে বললো,
‘ মনে পড়েছে সে রাতের কথা?’
আমি নিশ্চুপ।
নিজের কপালের কাছটার চুল সরিয়ে আমায় দেখালো সে। বললো,
‘ দাগটা এখনও কিন্ত আছে। মনে আছে এর জন্য আমিও পরে তোর কপালে একটা ওয়াইনের বোতল ছুঁড়ে মেরেছিলাম।’
মনে আছে। ভালো মতোই মনে আছে। এই মানুষ যে পশুর চেয়ে অধম সেটা খুব কাছ থেকে দেখেছি আমি। তাই কিছু বললাম না। অপূর্ব ভাইয়া আবার বললো,
‘ তোর কপালের দাগটা চলে গিয়েছে কারন তুই নিয়মিত ওখানে ওয়েনমেন্ট লাগিয়েছিলি। কিন্ত আমি লাগাইনি। কেনো জানিস? কারন ওটা যে তোর দেওয়া প্রথম আঘাত ছিলো!’
আমি চুপ করে বসি আছি তখনও নিষ্প্রভ অবস্থায়। অপূর্ব ভাইয়া আমার এ অবস্থা দেখে হাসলো। পুনরায় আনভীরের কল আসতেই তা কেটে দিলো ফট করে। অতঃপর আমায় চরম অবাক করে দিয়ে বললো,
‘ কি ভাবছিস তোকে তুলে নিয়ে যাবো এবার? নো ওয়ে জানেমান!’
কথাটি মনে অদ্ভুতভাবে ছাপ ফেললো। বড় বড় চোখ করে তার দিয়ে তাকাতেই সে বললো,
‘ কয়েকটা কথা বলছি। মনোযোগ দিয়ে শোন। আমি যে কতটা নীচে নামতে পারি সেটার এক্সপ্লেইনেশন তোর কাছে আর করবো না। তাই চুপচাপ আমি যা বলবো সেটা শুনবি। আই ওয়ান্ট টু নো দ্যাট হু ইজ এআরকে? আর আমার মাধ্যম হবি তুই।’
‘ মানে?’
হাসলো অপূর্ব ভাইয়া। বলে উঠলো,
‘ এআরকে আমার চেয়েও ধুরন্দর আহি। ও একটা বড় সত্য সবার কাছ থেকে লুকিয়েছে। আইএম ড্যাম শিউর। কোনো না কোনোভাবে ও তোর পাস্টের সাথে কানেক্টেড। এন্ড আমি সেটা জানতে চাই। এখন কথা হলো। তোকে আমি কিছুদিন সময় দিবো আহি। এর মধ্যে তুই জানবি যে ওর ইনটেনশনটা আসলে কি। এন্ড এর মধ্যেই ওকে ছেড়ে ফিরে আসবি আমার কাছে। আদারওয়াইজ…….’
‘ আদারওয়াইজ কি!’
ফিচেল হাসি দিয়ে এবার বললো,
‘ আমি সাউথ ইন্ডিয়ান মুভির কোনো ভিলেন বা সাইড হিরো টাইপ না জানেমান। যে মুভির মতো তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। আমি চাই তুই স্বেচ্ছায় আমায় কাছে আসবি যদি ওই এআরকে’র ভালো চাস।’
শেষ কথাটাতে অন্য ধরনের একটা ভয়াবহতা ছিলো। ভয় নিয়ে বললাম,
‘ কি করবে উনার সাথে?’
‘ কিছুই করবো না। যদি আমার কথা অমান্য করিস তবে বাধ্য হবো। তুই ভালো মতোই জানিস যে আমার এক ইশারায় ওকে টপকে দেওয়ার অথবা ওর ক্যারিয়ার নষ্ট করার পাওয়ার আমার আছে। তাই না?’
কথাটি সত্যি। একটি ইলিগ্যাল প্রফেসনে থাকাতে হাজারো পলিটিশিয়ানের সাথে উঠাবসা অপূর্বের। নাহলে একটা মানুষ হাজারো খুন খারাবি করলেও কেন উপরমহল গ্রেফতার করলোনা তাকে? যেখানে স্বয়ং রাহি আপুই আন্ডারকভারের এজেন্ট হয়ে এসবের সাথে যুক্ত আছে সেখানে ক্ষমতাশীল পলিটিশিয়ান বা অফিসারদের এসব ব্ল্যাক বিজনেসে যুক্ত হওয়া তো অস্বাভাবিক কিছুনা। আমি করুন চোখে তাকালাম ভাইয়ের দিকে। মায়ের পর আমার একমাত্র শেষ অবলম্বন হয়েছিলো আনভীর। আমি বলে উঠলাম,
‘ আমি নিজে উনাকে ছেড়ে দিবো ভাইয়া। তুমি যা বলবে তা-ই করবো। উনার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবো। কিন্ত প্লিজ উনার কোনো ক্ষতি করবে না।’
‘ এভাবে বলো না আহি! আমার সামনে ওর জন্য এত দরদ, বুকটা ফেটে যাচ্ছে তো!’
আমি নিঃশব্দে বসে রইলাম। গলা ছেড়ে কাদতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি অপূর্ব ভাইয়ার কাছে আমি এখন সবচেয়ে নোংরা চরিত্রের মেয়ে। কিন্ত আমার কিছুই করার নেই। অপূর্ব ভাইয়া এবার বললো,
‘ এসব ঢং আমার সামনে করে লাভ নেই আহি। যাই করিস না কেনো, আমার কাছে তুই একজন প্রোস্টিটিউট ছাড়া আর কিছুই না। এত কিছুর পরেও তোকে আমি বিয়ে করবো ভাবছিস? উহু! তোকে নিঃশেষ করবো। ওই এআরকের সাথে প্রতি রাতে যতটা ফূর্তি করেছিস সেগুলোর প্রত্যেকটা…..’
আর বলতে পারলো না অপূর্ব ভাইয়া। হঠাৎ কলারে হেচকা টান পড়াতে সে মুখ থুবরে পড়ে গেলো অন্যসাইডে। আনভীরকে আচমকা এখানে দেখে আশ্চর্যের চরম সীমানায় চলে গেলাম আমি। আনভীর ভাইয়াকে টেনে লকার রুম থেকে বাইরে নিয়ে গেলেন। করিডোরের সামনে সমানতালে মারতে থাকলেন তাকে। নাকমুখ থেকে অনর্গল রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ভাইয়ার। আমি কয়েকমুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইলাম এ দৃশ্য দেখে। বুঝে উঠতে সময় লাগলো অনেক। মাস্ক পড়েননি আনভীর। এভাবেই একটা হসপিটালে একজন মানুষকে নির্বিকারে মারতে দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো। যেন বিশ্বাস করতে পারছে না এটা আর কেউ না, স্টার হিটের সেই গ্রেট ভোকালস্টার এ আর কে ওরফে আনভীর রেজওয়ান খান। লোকজন ইতিমধে ভিডিও করা শুরু করে দিয়েছে এমন অপ্রকাশ্য দৃশ্যের। আনভীর চেচিয়ে বলে উঠলো,
‘ তোকে মেরেই ফেলবো আজ। সাহস কি করে হলো, সাহস কি করে হলো তোর ওকে জঘণ্য কথা বলার? ‘
অপূর্ব ভাইয়াও এবার পাল্টা আঘাত করলো আনভীরকে। তবে তার জোর ছিলো আনভীরের তুলনায় কম। হসপিটালে এমন ভয়াবহ দৃশ্যের জন্য বাধ্য হয়ে অথরিটিকে আসতে হলো এখানে। সাধারন মানুষদের সরিয়ে ফেলে কোনোমতে গার্ড এলো ওদের থামাতে। আনভীর চিৎকার করে বলে উঠলো,
‘ স্টে আওয়ে ফ্রম মাই গার্ল ইউ বাস্টার্ড। আদারওয়াইজ আই উইল কিল ইউ।’
অপূর্বের মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে একটা অদ্ভুত চাহিনী দিয়ে নাকের রক্ত মুছে পা বাড়ালো এখান থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আনভীর আচমকা হাত টেনে ধরলো আমার। গম্ভীরস্বরে বলে উঠলো,
‘ চলো এখান থেকে।’
বলেই এখান থেকে অনেকটা টেনে হেচড়েই আমায় নিয়ে গেলেন উনি। গাড়িটা দ্রুতগতিতে চলছে। এতক্ষণ হসপিটালে নাহিদ ভাইয়া থাকলেও এখন মহাশয় কোথায় উধাও হয়েছেন তা আমার অজানা। এখনও আতঙ্কে কাঁপছি আমি। মনে পড়ছিলো অপূর্ব ভাইয়ার বলা সেই নোংরা কথাগুলো। কাল সকালেই হয়তো আনভীরের সব কীর্তিকলাপগুলো নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। হয়তো প্রকাশ পেয়ে যাবে আমাদের সুপ্ত সম্পর্কটি। আমি আচমকা বলে উঠলাম,
‘ একদিন বাকি সবাইও আমাকে প্রোস্টিটিউট বলবে আনভীর, তাই না?’
‘ আজে বাজে বলা স্টপ করো।’
‘ ভুল কিছু বললাম? ভাইয়া তো ঠিকই বলেছিলো। আমি আসলেই জঘণ্য মেয়ে। নাহলে কিভাবে ফাসালাম আপনার মতো একজন মানুষকে? আপনার সামনাসামনি দাঁড়ানোর মতো ছিঁটে ফোটা যোগ্যতা নেই আমার। আমি সবার কাছে জাস্ট একটা পেইন আনভীর। আমি…….’
হুট করে গাড়ি রাস্তার এককোণে চাপালেন আনভীর। সময়ব্যায় না করে হুট করে সিটবেল্ট খুলে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললেন আমায়। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম উনার এমন কাজে। আনভীর অস্থির হয়ে বলে ফেললেন,
‘ আই লাভ ইউ আহি, আই লাভ ইউ ভেরি মাচ। যতবার বলতে বলবে এখন থেকে ততবারই বলবো এ কথা। হাজার বার বলতে বললে হাজার বার বলবো। তবুও এসব বলোনা আহি।’
অস্থির লাগছে আনভীরকে। উনার অনর্গল বলতে থাকা কথাগুলো যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো অন্য এক জগতে।
.
.
.
.
#চলবে ইনশাআল্লাহ