#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩০
—‘আনজানা….’
আনজানাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে যেয়ে মেয়েকে বক্ষ পিঞ্জরে আবদ্ধ করে নেন আয়না। চোখ থেকে টপাটপ জলগুলো বেয়ে পড়ছে। আনজানাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
–‘ওহ মা, এভাবে কাঁদছো কেনো? আমার কিছু হয় নি তো। এই যে আমি সম্পূর্ণরূপে ঠিক আছি’
আনজানা বুঝ দিলেও শান্ত হচ্ছে না আয়না। ইয়ানা চটজলদি এক গ্লাস পানি এনে দেয়। অস্থির কন্ঠে বলে,
–‘মা নিন, এটা শেষ করুন। এভাবে কাঁদলে আপনার শরীর খারাপ করবে তো!’
–‘এই মেয়ে কই ছিলি তুই?’
থমথমে গলায় আয়না বলতেই বিষম খায় আনজানা। ভয়ার্ত চাহনিতে আনাজের দিকে তাকায়। হার্টবিটরাও যেনো দৌড়চ্ছে!
–‘কই ছিলো মা জানতে চাও?’
আনজানার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে আনাজ বলে। আনজানার ঘর্মাক্ত কপাল চিকচিক করছে। সবাই উৎসুক চাহনি দিয়ে আনাজের উত্তরের প্রহর গুণছে।
–‘তার ফ্রেন্ডের সাথে পার্কে ছিলো’
চোয়াল শক্ত করে আনাজ বলে। চোখদুটো চিকচিক করে ওঠে আনজানার। মুখের এক চিলেতে ফুটে ওঠে হাসির রেখা। যাক, বাঁচা গেছে! তার মায়ের দিকে তাকিয়েই মুখটা আবার ভার হয়ে যায়। তার মা অসহায়ের মতো তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
–‘ তোর ফ্রেন্ডের সাথে ছিলিস সেটা জানাতে কি অসুবিধে ছিলো? ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলিস কেন?’
আনজানা কি বলবে ভেবে কুলাতে পারছে না।
–‘মেয়েটা এতোটাই খুশিতে জমে গিয়েছিলো যে মনেই ছিলো না তার ফোন অফ’
আনজানাকে উত্তর দিতে না দিয়েই বলে ফেলে আনাজ।আয়না সন্দেহের নজরে আনাজ আর আনজানার দিকে তাকান।
–‘লাইক সিরিয়াসলি? একটা ফোন নিজে নিজে পাওয়ার অফ হয়ে যাবে? আমার মনে হয় তোমরা কিছু লুকোচ্ছ!’
–‘আ..না না মা। ব্যাটারি ডাউন ছিলো সো অফ হয়ে গেছে।’
চটজলদি প্রস্থান করে আনজানা। এখানে থাকলে অপপাত হাজারো জেরার সম্মুখীন হতে হবে তাকে।
সবার দিকে চুপচাপ তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে চলছে ইয়ানা। তাকেও ভেজাল লাগছে ব্যাপারটা। আনজানা তো এরকম করে কোনোদিনই কথা বলে নি তবে আজকে কি….
–‘ইয়ানা মা বাবা খেয়েছে?’
আনাজের কথায় চিন্তা পাল্টে যায় ইয়ানার।
–‘বাবা খেয়েছে। তাকে মেডিসিন নিতে হয়…
তবে মা না খেয়ে বসে আছে।’
আনাজ আয়নার দিকে সুক্ষ্ণ চাহনি দেয়।
-‘তোমাদেরকে আগেই বলেছিলাম না খেয়ে নিতে? যাও যাও দুজনে খেতে বসো।’
দুজনের হাত টেনে টেবিলে এনে বসায় আনাজ। ইয়ানার শতবার বলার পরেও সেই বেড়ে দেয়।
–‘আপনি খেয়েছেন? ‘ ইয়ানার কথার তেমন গুরুত্ব না দিয়ে আনাজ বলে,
–‘আমি আছি সমস্যা নেই আগে তোমরা খাও। দুজনেই উইক হয়ে পড়েছো’
চেয়ার টেনে তাদের পাশে এসে বসে পড়ে আনাজ। মুগ্ধ নয়নে তার প্রিয়তমাগুলোর খাওয়া অবলোকন করে চলে!
—————-
দমকা হাওয়ার ছাদে দাড়িয়ে রয়েছে আনজানা। নিষ্পলক চাহনিতে। চারপাশটা ছায়াচ্ছন্ন রকমের। বৃষ্টি হওয়ার আগে বাতাস বইলে বাতাসে বাতাসে একটা বিশেষ গন্ধ ছড়ায় । সেই গন্ধেই মৌ মৌ করছে সর্বত্র। দু’হাতের কনুই ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে আনাজানা। বুকটা হালকা করতে। কতো কিছুই ঘটে গেলো আজকে। সব ক্ষেত্রেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে! তার তো কোনো দোষ ছিলো না। প্রতিদিনের ন্যায় আজও বাড়ি ফিরছিল। কিন্তু সে কি আর জানতো তার জন্য নিয়তি এমন খেলা প্রস্তুত রাখছে!এগুলো ভাবতেই মুখটা কেমন অন্ধকার-বিষন্নতায় ভরে যায়। মূর্তি লাগছে নিজেকে। কারো ছাদে আসার আওয়াজ পেতেই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে সে। কিছু বাদেই ছাদে ওঠে আসে আনাজ। দু হাতে দুকাপ কফি নিয়ে। আনজানার হাতে ধরিয়ে দিয়েই সামনে তাকায় সে। চোখযুগল কাপে লাগিয়ে চুমুক দেয়। আনজানা হাতে নিয়ে দেখছে আনাজকে। হাজারো অনুভুতির সঞ্চারণ ঘটছে তার ভেতরে।
–‘মাকে মিথ্যে কেন বললি ভাইয়া? ‘
আনজানার প্রশ্নে থমকে যায় আনাজ। তবে, নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে আনাজ।
–‘কেন জানিস? এতে করে….
চলবে,
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩১
–‘মা’কে মিথ্যে কেন বললি ভাইয়া?’
জোড়ালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে আনজানা।
–‘কেন জানিস? আমি চাইনি এতে করে তুই ফাঁসিস! একটা জিনিসের শিওরিটি তোকে দিচ্ছি আম্মু-আব্বু তোর এই প্রেম কোনোদিনই মেনে নিবে না। প্রেম করার আগে একবার অন্তত জিজ্ঞেস করতে পারতি তাই না?’
স্তব্ধ হয়ে শুনে রয়েছে আনজানা। ভেতরটা যেনো দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে বারবার। তার তো এসবের প্রতি কোনোদিনই ইনটেনশান ছিলো না। এসব কি তার ভাই ভাবলো না? কেমন মেয়ে সে! অবশ্য ভাবার কথাও না। কেননা আদ্র যেভাবে জান বলে চেঁচিয়েছে তাতে সবাই সেটাই ভাববে। আনজানাকে স্তব্ধ দেখে বড় করে শ্বাস ফেলে আনাজ। তাকেও বিষয়টা ভাবাচ্ছে, ব্যাপকভাবে। তার বোন তো এরকম ধরনের ছিলো না। চঞ্চল প্রকৃতির হলেও এসবের দিকে বিশেষ আকর্ষণ নেই।
–‘আনজু? চুপ করে আছিস কেন? আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। আচ্ছা তুই আমাকে এটার উত্তর দে, তুই কি ওকে ভালোবাসিস? ওকে বিয়ে করতে চাস? ‘
রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় চোখ করে আনজানা। কিছু বলতে নিবে তৎক্ষনাৎ আনাজের ফোন বেজে ওঠে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আনজানা। আনজানার দিকে একবার পরখ করে অন্যদিকে চলে যায় আনজ। আবারও টুপটাপ বৃষ্টিফোঁটা পরতে শুরু করেছে। আনাজের মাগটা নিয়ে নিচে চলে যায় আনজানা। রুমে যেয়ে বেশ শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। হাত পা ছিটিয়ে খানিকক্ষণ কান্নাকাটি করলে তবেই প্রশান্তি মিলবে। বেডে ধুপ করে বসে পড়ে সে। বারবার তার চোখের সামনে ভাসছে আদ্র তার কাছে এসে ঢলে পড়েছিলো, রক্তাক্ত মুহূর্তটা। বারবারই শিউরে উঠছে সে। ফলাফল শূণ্য !
ফোনের স্ক্রিনে আলোর সঞ্চার ঘটলেই সেদিকে তাকায় আনজানা। ভ্রুক্ষেপ করে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে দৃশ্যমান হয় ২৮+ মিসড্ কল। অবাক হয় আনজানা। সবগুলো নম্বরই আননোন। একটা আননোন নম্বর থেকে এতোগুলা মিসড্ কল এসেছে মানে নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার আছে। কল ব্যাক করল আনজানা। অধির আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে সে। কিছু বাদেই কেউ ফোনটা রিসিভ করে।
কারো গোঙানির মতো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আনজানা মরিয়া হয়ে অস্থির কন্ঠে বলে,
–‘কে আপনি? এতো মিস কল কেন দিয়েছেন? ‘
–‘আদ্র!….
বলে আবার গোঙাতে শুরু করে আগন্তুকটা। আদ্রর কথা শুনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আনজানা।
–‘আদ্র!কি কি হয়েছে তার? ঠিক আছে সে?’
লোকটা গোঙাতে গোঙাতে বলে,
–‘আদ্র শেষ….
কথা সম্পূর্ণ না করেই ফের গোঙানির সুর তুলেন লোকটা।
—————————-
রুমের ভেতরে মন ভার করে বসে রয়েছে ইয়ানা। বিকেল থেকেই বাসায় বিষন্নতা বিরাজিত। সবারই মুড কেমন অফ হয়ে রয়েছে। সাথে ইয়ানারও। হাতে একটা বই নিয়ে মিছেমিছি পড়ার ভান করছে। তবে ভেতরে ভেতরে অন্য চিন্তা ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। রুমে প্রবেশ করে আনাজ। হাতে একটা প্লেট। ইয়ানার কাছে এসে তার পাশে বসে আনাজ।
–‘সবাই তো খেয়েছে, তুমি খেয়েছো? ‘
–‘খাওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।’
কড়া গলায় বলে ইয়ানা। রাগ হচ্ছে তার আনাজের উপর। তাকে পানি ঢেলে জাগিয়ে দিয়েছে, সেটার প্রতিশোধ না নিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না সে।
–‘রেগে আছো আমার উপর? ‘
–‘নাহ! মোটেও না। আপনার উপর রাগার কোনো কারণ আছে? আপনি তো খুব ইনোসেন্ট!’
মুখে মিথ্যে হসি ফুটিয়ে বলে ইয়ানা। ইয়ানা দারুনভাবে রেগে আছে বুঝতে কষ্ট হয় নি আনজের।
–‘আমি কি কোনো ভুল করেছি? শাস্তি দিতে চাও? ওকে ফাইন। আমি তোমার কাছে স্যারেন্ডার করলাম।তবে শাস্তি দেওয়ার আগে এনার্জি গেইন করো। না খেয়ে আছো তুমি।’
বলে বলতে ইয়ানার মুখে এক লোকমা ভাত পুরে আনাজ। অন্যদিকে তাকিয়ে খেতে থাকে ইয়ানা। দু মুঠ খেয়েই ইয়ানার পেট ভরে যায় বরাবরের মতো। এবারও তাই হলো। আনাজের থামার নাম নেই। ইচ্ছে মতো ইয়ানার মুখে ভাতের লোকমা দিয়ে যাচ্ছে। থামানোর জন্য হাত দেখায় ইয়ানা।
–‘উহু, দু’গাস খেয়ে উনার পেট ভরে গেছে না? সব শেষ করো!’
বেশিক্ষণ জোড় খাটাতে পারে না আনাজ। ইয়ানা চিল্লনিতে থেমে যায় সে। আনাজের মুখে ডেভিল হাসি ফুটে ওঠে।
–‘সো ফাইন। তুমি যেহেতু আর খেতে চাচ্ছো না। তাই আমি আর জোড় করবো না। তবে, এগুলো তো আর নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। এক কাজ করো আমাকে খাওয়িয়ে দাও’
ভ্রুক্ষেপ করে তাকায় ইয়ানা। না খাওয়ার জন্য এই মাশুল গুনতে হবে?
–‘না না, আমি কেন আপনাকে খাওয়িয়ে দিতে যাবো? আমারও হাত মাখাবো নাকি? ‘
আবারও শয়তানি হাসি দেয় আনাজ। তাহলে না খাওয়িয়ে দিলে কাতুকুতু দিবো। হাসতে থাকে আনাজ। কাতুকুতু ইয়ানার মোটেও পছন্দ নয়। তবে সুযোগ পেলেই তাকে কাতুকুতু দেয় আনাজ।
—‘এই নাআআআ! এমন করবেন না। দেন আমি খাওয়িয়ে দিচ্ছি।’
আনাজ ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে হাসতে হাসতে ইয়ানার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দেয়। আনাজকে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দেয় ইয়ানা। আনাজের দিকে তাকাতেই দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে আনাজ। নিষ্পলক মোহকারী দৃষ্টিতে। অস্বস্তি বোধ করে ইয়ানা।
–‘চোখের পলকটা দয়া করে ফেলুন মহাশয়! আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।’
ইয়ানার কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় আনাজের। বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করে। ইয়ানা ছুটে যেয়ে পানি নিয়ে আসে। নিজ হাতে খাওয়িয়ে দেয় তাকে।
–‘কেমন ডাক্তার আপনি? খাবার খাওয়ার সময় এভাবে উন্মাদের মতো হাসেন!’
আবারও হেসে ওঠে আনাজ। তার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
–‘বউরা কাছে থাকলে কিছু মনে থাকে না’
আনাজের গরম নিঃশ্বাস কানে আছড়ে পড়তেই শিউরে ওঠে সে।
চলবে,
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩২
—‘ভাইয়া! আদ্রর অবস্থা একদমই ভালো না, জলদি হসপিটালে যা…’
হঠাৎ আনাজের রুমে কড়া পড়ায় খুলতেই দেখে আনজানার বিধ্বস্ত রূপ। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আনজানা তাকে জানান দেয় আদ্রর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। বড় বড় দম ছাড়ছে আনজানা। আনাজ কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁটযুগল প্রসারিত করতেই ফোনটা ভো ভো করে নেচে উঠে। রাতে বেলা ফোনটা ভাইব্রেটই রাখতে হয়। নতুবা ফোনের রিংটোনে ইয়ানার সমস্যা হয়ে যায়।
আনাজ সন্তপর্ণে ফোনটা রিসিভ করে নেয়।
–‘হ্যালো, ডক্টর আনাজ স্পিকিং…. ‘
–‘ হ্যালো স্যার, একটা পেশেন্টের অবস্থা ভালো না। ওই যে রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাতে স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন। পরে তার ভালোবাসার মানুষটাকে খুঁজে না পেয়ে স্যালাইনটা টেনে ছিড়ে ফেললো। এখন প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছিলো। ‘
–‘তা তোমরা ড্রেসিং করাও নি?'[অস্থিরতার সাথে]
–‘জ্বি স্যার। আমরা করে দিয়েছি। তবে তার অবস্থা ভালো না। রক্ত লাগবে এবি পজিটিভ। তার চেনা পরিচিতরা খোঁজ করেও রক্ত খুঁজে পায়নি!’
–‘হোয়াট? এবি পজিটিভ রক্ত? আচ্ছা তোমরাও চেষ্টা করো কাউকে পাও কি না। আর একটু চেক করো আমাদের স্টকে রক্তটা মিলবে নাকি। বলা যায় না থাকতেও পারে। আর আমি আসছি।’
ফোনের লাইন কেটে যায়। একটা শার্ট পরে চটজলদি তার উপর সাদা এপ্রনটা জড়িয়ে নেয় আনাজ।
বেডে বসে বসে দেখছিলো ইয়ানা। মুখে কৌতুহলের ছাপটা বিদ্যমান। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আনজানা বলে,
–‘ভাইয়া ব্লাড গ্রুপ এবি পজিটিভ হতে হবে? ‘
–‘হ্যা কিন্তু তোকে ওই থার্ড ক্লাসটার জন্য অভারপ্রটেকটিভ না হলেও চলবে। আই নো তোর রক্ত এবি প্লাস। কিন্তু এসবে মত দিচ্ছি না।’
ফটাফট হাতের ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে আনাজ।
তেতিয়ে যায় আনজানা। আবারও জোড়ালো গলায় বলতে চেষ্টা করে,
–‘ এই তোর ডাক্তারির দৌড় ভাইয়া? একটা পেশেন্ট যদি ব্লাডের অভাবে মারাও যায় তাও তোর আফসোস হবে না, ফর শিওর।’
–‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ আনজু’
–‘ইউ মাইন্ড ইওর ন্যাচার ভাইয়া!’
মুখে মুখে জবাব দেয় আনজানা। হাতের ঘড়িটা বাধতে বাঁধতে আনজানার কাছে এগিয়ে আসে আনাজ।
–‘তাহলে তোর প্রেমিকের জন্য আমাদের খারাপও বানিয়ে দিলি? এই দিন দেখানোর জন্য বড় হয়েছিস? ‘ (আনাজ)
–‘সেটা নয় ভাইয়া তুমি বুঝছো না। আমি দেখেছি তার কেমন ব্লিডিং হয়েছে। এখন যদি রক্ত না পাওয়া যায়, তবে নির্ঘাত আদ্র মারা যাবে।’
–‘কি বোঝাতে চাচ্ছিস তুই? স্ট্রেটকাট বল!’
–‘আমি আদ্রকে রক্ত দিতে চাই’
–‘তার মানে এতো রাতে তোকে নিয়ে যেয়ে আমি রক্ত দেওয়াবো? ইম্পসিবল টাস্ক হেহ!’
চলে যেতে ধরে আনাজ। মুহূর্তের মধ্যেই আনজানার বাজখাঁই কন্ঠ তার কর্ণকুহরে বাড়ি খায়।
–‘ভাইয়া, তুই যদি আমাকে রক্ত না দিতে দিস তাহলে আমার ডেডবডি পাবি! ‘
আনজানার কথায় থমকে যায় আনাজ। নিজেকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না আর। চোয়াল শক্ত করে কঠোর গলায় বলে,
–‘তুই কি কথা বলার লাইসেন্স পেয়ে গেছিস? কি যাতা বলছিস ‘
–‘আমি কোনো ইয়ার্কি করিনি ভাইয়া। আদ্র মারা যাক সেটা আমি চাইনা। ও মরে গেলে আমি নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে থাকবো, তারচেয়ে বরং মরে যাওয়াই শ্রেয়!’
আনাজ আর বাঁধ সাধতে চাইলো না। থমথমে গলায় বলে,
–‘তাহলে তুই রক্ত দিবি? মা ববা যদি জানতে পারে? ‘
–‘এক ব্যাগ রক্ত দিলে আমি ফিট হয়ে যাবো না। চিন্তা করিও না। ‘
–‘আচ্ছা চল’। ইয়ানার দিকে একবার অসহায় দৃষ্টি দেয় আনাজ। ইয়ানার ইয়ানার বুকে কৌতূহলের মাদল বাজছে। ভাবনার রেশ কাটিয়ে বলে,
–‘কি হয়েছে তোমাদের ভাইবোনের? ‘
‘এসে বলবো’ একসাথে গলা মিলিয়ে বলে তারা। বেড়িয়ে পড়ে মাঝরাতের স্যাতস্যাতে চৌরাস্তায়। রাস্তাগুলোয় কেমন আঁধারের ছড়াছড়ি। তারই মধ্যে টিমটিমে ড্রিম লাইটগুলো জ্বলছে।
দ্রুত ড্রাইভিং করছে আনাজ। মনে ভীতির সঞ্চারণ ঘটছে তার। ভয়ার্ত কন্ঠে আনজানার দিকে তাকায়। আনজানা নির্বিঘ্নে বসে রয়েছে। বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
–‘আমার ভয় করছে তোর কোনো সমস্যা হবে না তো? ‘
–‘উহু হবে না। ব্লাড দেওয়ার পর তুই আমাকে পানি, ডাব এসব ড্রিংক দিস ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর টেনশান নিস না।’
শুকনো ঢোক গিলে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দেয় আনাজ।
চলবে,,,