কাঞ্চাসোনা_২ পর্ব-০৪

0
176

#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

সকাল ধ্রুবর রুম থেকে কোনোমতে বেরিয়ে এসেছে।ধ্রুব কিছু বলেনি শুধু তাকিয়ে থেকেছে।সকাল মিতুর সাথে তার রুমেই থাকে।এসে দেখলো মিতু ঘুমিয়ে গিয়েছে সে পাশে শুয়ে পড়ে।কম্বলের নিচে মুখ লুকিয়ে বুকে হাত রাখে।বুকটা এখনো ধুকপুক করছে।তার এমন লাগছে কেনো?ধ্রুবর কাছে গেলে সকালের এমন ধম বন্ধ লাগে কেনো?হাজারো প্রজাপতি তলপেটের ডানা ঝাপটে উঁড়ে যাচ্ছে।সকাল চোখ বন্ধ করে রাখে।ইশ ধ্রুব এমন করে তাকায়!সকাল তো এতেই শেষ।

ধ্রুবর মাথা ব্যা/থা ভালো হলেও মনের ব্যা/থা শুরু হলো।মনে যে কি অসহনীয় ব্যা/থা হচ্ছে তা একমাত্র সেই জানে।মাথায় সকাল ছাড়া আর কিছুই আসেনা।ধ্রুব চোখ বন্ধ করে নাক টেনে শ্বাস নেয় কিছুক্ষণ আগেও সকাল নিজের গায়ের ঘ্রাণ দিয়ে রুমটা ভরিয়ে রেখেছিলো এখনো তার কিছুটা রেশ লেগে আছে।সে নিজের হাত দিয়ে তার গাল আর কপাল ছুঁয়ে দেয়।মুখে বিরবির করে বললো,”সকাল তুমি কি জলো/চ্ছ্বাস?তা না হলে তুমি কাছে আসলে আমার বুকে এতো উত্তাল পাতাল ঢেউ হয় কেনো?”ধ্রুব ক্লান্ত থাকা অবস্থায়ও ঘুমাতে পারে না সকাল সকাল নাম ঝপে গভীর রাতে ঘুমায়।

মিতু ঘুমায়নি ঘুমাবে কি করে সামির তো তাকে সেই সুখ দেয়না।সে দেয় য/ন্ত্রণা।মিতু ভেবে পায় না সামিরের কাছে মনটা এমন বি/শ্রীভাবে কিভাবে দিয়ে দিলো।এতো এতো ছেলে থাকতে বেছে বেছে এই সামিরকেই কেনো ভালোবাসতে হবে?এমনও না মিতু আর কোনো প্রেমের প্রস্তাব পায়নি সে অনেক প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে কিন্তু তার অবুজ মন সামিরের ভালোবাসা পেতে চায়।অথচ সামির নিরুত্তর।তার নিজেকে বারবার কলাপাতার মতো বিছিয়ে দিতে লজ্জা করে তবুও সামির বুঝে না।মিতুর ঠোঁট কেঁপে উঠে,না পাওয়ার যন্ত্র/নায় বুকটা জ্ব/লেপুড়ে যায়।পাশেই সকাল ঘুমিয়ে আছে তার কান্নার শব্দে যদি ঘুম ভেঙে যায় সেই আ/শংকায় মুখে হাত চেপে ধরে।তখনি মোবাইলের মেসেজ টোন বাজে।মিতু চেক করে দেখে সামিরের ম্যাসেজ।সে অবাক হয়।সামির তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে?অবিশ্বাস চোখে মেসেজটি দেখে।
“ঘুমিয়ে গিয়েছো মিতু?মন কি ভালো হলো?”

ব্যাস এতোটুকু কথাই মিতু কেঁদে দেয়।কেঁদে ভাসিয়ে দেয় বালিশের কাভার।সামিরের নাম্বারের উপরেই ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বিরবির করে বললো,
“আপনি কথা না বললে আমার মন ভালো হবে কিভাবে?কেনো বুঝেন না?”
মিতুকে দ্বিতীয়বারের মতো আশ্চর্য করে সামির তার মোবাইলে ফোন দিলো।মিতু উঠে দৌড়ে বেলকনিতে যায়।সামিরের দেয়া ফোনটা কেঁটে নিজে ফোন দেয়।
সামিরের মন বলছিলো মিতু রাতে কাদবে।মেয়েটার মন ভীষন খারাপ থাকবে।অদ্ভুত হলেও তার ইচ্ছে করছে মিতুর মন ভালো করে দিতে।সামির জানে সে ফোন দিলেই মিতুর মন ভালো হবে তাও মেয়েটা কাঁদবে সুখে।মিতু ফোন কেটে নিজে ব্যাক করায় সামির হাসে।
“ফোন কাটলে কেনো মিতু?”

মিতু জানে সামিরের কাছে টাকা সীমিত।সামিরকে সত্যিটা বলে বিব্রত করতে ইচ্ছে হলো না তাই মিথ্যে করেই বললো,
“রিসিভ করতে গিয়ে কেটে গেছে সামির ভাই।”

সামির হাসে।মিতুর মিথ্যা কথাটা সে খুব বুঝতে পেরেছে।
“এতোকিছু বুঝেও কেনো পা/গলামি করো মিতু?”

মিতু চোখ বন্ধ করে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।সামির তার চালাকি বুঝে গেছে।
“আমার ইচ্ছে।”

“তুমি খুব বুঝধার ইচ্ছেগুলোকেও একটু বুঝধার বানাও।”

“ইচ্ছেগুলো আমার হলেও বুঝধার বানানোর দায়িত্ব তো আমার না যার দায়িত্ব সে বানাবে।”

সামির চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।বুকটা জ্ব/লছে।এই মুহূর্তে তার ভ/য়ংকর সব ইচ্ছে হচ্ছে অথচ সে নিজেও জানে এইসব ইচ্ছা কখনো পূরণ হবার না।মিতুর কথার উত্তর না দিয়ে সামির বললো,
“কাঁদছিলে কেনো?”

“কাঁদছিলাম না তো।”

“আমি জানি।”

“ভু/ল জানেন।”

সামির হাসে।মিতুকে জানতে তার বেশী সময় লাগে না।
“ভু/ল!আচ্ছা আমি বোধহয় ভু/লভাল আরো অনেক কিছুই জানি।”

মিতু চোখ বন্ধ করে সামিরের গলার স্বর শুনে।সামিরের গলার স্বরেও মিতুর প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।কি যা/দু আছে এই ছেলের মাঝে?
“কি জানেন?”

সামির উপুর হয়ে শুয়।আস্তে করে বললো,
“যা জানি তা যদি ধ্রুব জানতে পারে তাহলে আমার তোমাদের বাসায় যাওয়া বন্ধ হবে।”

মিতু শ্বাস আটকে আসে।তার তীব্র অনুভূতি সামির বুঝে গেছে।আর না বুঝার কি আছে সামির তো ছোট না পূর্ণবয়স্ক যুবক।সে থেমে থেমে বললো,
“ভাইয়াকে জানাবো না।”

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে সামির খিলখিল করে হেসে উঠে।মিতু আশ্চর্য হয়ে বললো,
“আশ্চর্য!আপনি হাসছেন কেনো?”

সামির বললো,
“তুমি ধ্রুবকে এখনো চিনতেই পারোনি।তোমার সাথে আমি কানেক্টেড হলে সবার আগে ধ্রুব বুঝে যাবে।হি ইজ টু মাচ ইন্টিলিজেট।”

সামির কি তাহলে ধ্রুবর ভ/য়ে তার ডাকে সাড়া দিচ্ছেনা?মিতু যেনো আশার আলো দেখতে পেলো।কাতর গলায় বললো,
“আমি ভাইয়াকে কিচ্ছু জানাবো না।এখন যেভাবে চলছে পরবর্তীতেও এভাবেই চলবে ভাইয়া মোটেই টের পাবেনা।”

মিতুর গলার কাতরতা সামিরের মন ছুঁয়ে যায়।কি আকুলতা মেয়েটার প্রেম সাগরে ঝাপ দেয়ার!কিন্তু সামির ঝাপ দেয় না।চোখ বন্ধ করে বললো,
“পাগলামি করেনা মিতু।”

মিতু বুঝলো সে ব্যর্থ।কান্নায় গলা বুজে আসে।ধরা গলায় বললো,
“আপনি এমন কেনো সামির ভাই?আমাকে একটুও বুঝলেন না।”

সামির চুপ করে অপরপ্রান্তের মানুষটার কান্নার চাপা শব্দ শুনে।কিছুক্ষণ পরে মিহি গলায় ডাকলো,
“মিতু!”

মিতু সারা দেয় না।সামির আবার ডাকে,
“এই মিতু!”

মিতুর শ্বাস ঘন হয়।সামিরের মুখে মিতু ডাকটা তার কলিজা ছুঁয়ে যায়।এভাবে ডাকে কেনো ছেলেটা?মিতুর উত্তর না পেয়ে সামির আবারো বললো,
“মিতু!”

মিতু আস্তে করে বললো,
“হুম।”

“কথা বলবেনা?”

“বলছি তো।”

“চুপ করে আছো।ফোন রেখে দেই?”

মিতুর গলা আবারো ধরে আসে।
“না।”

“কান্না থামাও।কান্নাকাটি ভালো লাগেনা।”

“আপনি আমার হয়ে যাচ্ছেন না কেনো সামির ভাই?”

সামির কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর কান থেকে ফোনটা নামিয়ে বালিশে নাক গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে শ্বাস নেয়।পুরো ঠোঁটগুলো কাঁপে।তার মনের কষ্ট বলার মতো কেউ নেই।এই যে বুকটা পু/ড়ছে এই পু/ড়ার গন্ধ শুকে ক্ষত স্থানের যত্ন নেয়ার কেউ নেই।সে এই দুনিয়াতে কেনো এতো একা?মিতুকে নিয়ে সামিরের ভ/য়ংকর সব ইচ্ছা হচ্ছে।মিতুর কথার তালে নিজের গা ভাসাতে মন চাইছে কিন্তু সে ভাসাবে না।কাউকে দুঃখী বানানোর কোনো ইচ্ছা তার নেই।আর না নিজের সাথে কাউকে জড়ানোর ইচ্ছা আছে।

কিছুদিন ধরে শাহীনের চলাফেরা সবার চোখে পড়ছে।রোজ সকালে সবার সাথে নাস্তা করা সাহেব সেজে অফিসে যাওয়া আবার সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসা এই সব কাজ সবাইকে অবাক করে দিচ্ছে।আগে অফিস শেষ করে গভীর রাতে বাসায় আসতো মাঝেমধ্যে এর ওর বাসায় থাকার কথাও শুনা যেতো কিন্তু আজকাল সে বেশ ভালো ছেলে হয়ে গেছে।শাহীনের বাবা আনোয়ার মির্জা আর তার মা তাছলিমা ছেলের পরিবর্তনের ব্যাপারে বেশ খুশী।নুরজাহান আনোয়ারকে বললো,
“বলছিলাম না আমার নাতী ভালোই।এমন ছেলে লাখে একটা।তুই খালি আমার নাতীরে স/ন্দেহ করিস।”

আনোয়ার মির্জা কথা বলেনা।শাহীনের হঠাৎ এতো ভালো হয়ে যাওয়াটা হজম হচ্ছে না।শাহীন এর এই ভালো ছেলে হবার পিছনে কারণটা হলো সকাল।সকালকে একটু দেখতে সে তার এতোদিনের অভ্যাস বদলে ফেলেছে।সকালের চোখে ভালো ছেলে সাজতেই তো এই নতুন বেশে এসেছে।এই যে এখনো ডাইনিংএর অপরপাশে মিতুর পাশে বসা সকালকে দেখছে।সকাল চুপচাপ খাবার খাচ্ছে।কতো মেয়ের সাথে শাহীনের উঠাবসা কতো মেয়েকে কাছে থেকে দেখেছে কিন্তু এমন উচাটন তো লাগেনি।যেমনটা এই সতেরো বছর বয়সী সকালকে দেখলে লাগে।দেখলে দেখতেই ইচ্ছা করে।তুবার সাথেও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না আসলে শাহীন সকালকে ছাড়া আর কাউকে নিয়েই ভাবতে পারছেনা তাইতো তুবার সাথে অকারণেই ঝগড়া হচ্ছে।শাহীন মাথা তুলে আবার সকালকে দেখে।এতো পিচ্ছি একটা মেয়ের মাঝে এতো আকর্ষণ!শাহীন তার আর সকালের বয়স নিয়ে ভাবে তার বয়স ত্রিশ আর সকালের সতেরো।খুব বেশী গ্যাপ?না শাহীন মানিয়ে নিতে পারবে।যেকোনো মূল্যেই হোক সকালকে তার চাই।

সকাল মাথা নিচু করেই বুঝতে পারে একজোড়া চোখ তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।তার ভালো লাগেনা।মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে নিজেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করে।এরমধ্যেই ধ্রুব গলায় তাওয়াল ঝুলিয়ে হেলেদুলে ডাইনিং এ আসে।খালি চেয়ার টেনে বসে পরে।চোখ মেলে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে সকালের উপরে গিয়ে চোখ থামে।রুটি প্লেটে নিতে নিতে সকালকে দেখে।ধ্রুব মনে মনে ভাবে এই পিচ্ছিই সারাটারাত তাকে ঘুমাতে দেয়নি।ধ্রুব মুচকি হেসে নাস্তা খায় আর আড়চোখে সকালকে দেখে।সকালের বুক ভার হয়ে আসে।মুখের খাবার চিবোয় ঠিক কিন্তু গিলতে পারছেনা।এতোক্ষণ শাহীনের চোখের দৃষ্টি অ/সহ্য লাগলেও এখন ধ্রুবর চোখের দৃষ্টি অ/সহ্য লাগছেনা বরং মন ফুরফুরে হয়ে যাচ্ছে।জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।ধ্রুব সকালের দিকেই তাকিয়ে ছিলো এই দৃশ্য দেখে বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকে নেয় সকাল কি জানে না ছেলেদের সামনে এভাবে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাতে নেই এতে অ/মঙ্গল হয় ঘোর অ/মঙ্গল।ধ্রুবর মনের ভাবনায় সে নিজেই হাসে।সকাল আড়চোখে ধ্রুবর দিকে তাকায় ধ্রুব তাকেই দেখছিলো সকাল তাকাতে এক ভ্রু উঁচু করে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো ‘কি’।ধ্রুবর কাজে সকাল লজ্জায় হতভম্ব হয়ে তড়িঘড়ি করে মাথা নিচু করে ফেললো।এই ছেলে এমন কেনো?তাকে সব কিছুতেই লজ্জা দিতে চায়।ধ্রুব সকালের লজ্জামাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসে।এতো লজ্জা পেতে হবে কেনো?আস্ত একটা লজ্জাবতী।
নাস্তা শেষ সকাল মিতুর রুমে গেলে পিছনে কারো শব্দ শুনে সকাল ভাবে মিতু তাই পিছনে না ফিরেই বলে,
“আপু!”

শাহীন সকালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।এই মেয়ে তার সামনেই আসে না।কিন্তু তাকে যে চুম্বকের মতো টানে তাইতো বাহানা খুঁজে এখানে আসা।শাহীনকে দেখে সকাল ভ/য় পায়।মাথায় ঘোমটা দিয়ে তাকায়।শাহীন সকালের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মিতু কই?”

সকাল পিছনে তাকিয়ে দেখে।
“দাদীর রুমে গিয়েছে।”

শাহীন মাথা নেড়ে বললো,
“অহ।তোমার কি খবর?”

“ভালো।”

“বাসায় থাকো দেখাই যায় না।আমাকে কে কি ভাই মনে হয় না নাকি?”

“না না তা কেনো?ব্যাপারটা তেমন না।”

শাহীন বললো,
“সকাল।তুমি কি আমার সাথে ঘুরতে যাবে?”

সকাল সাথে সাথেই বলে,
“না।”

শাহীন মাথা নেড়ে বললো,
“চাইলে যেতে পারো।আচ্ছা থাকো।”

শাহীন চলে গেলে সকাল বুকে হাত দিয়ে শ্বাস ফেলে।এই ছেলে কি তাকে পছন্দ করে?চোখের ভাষা আর কথার ভঙ্গিমায় তো তাই প্রকাশ পেলো।শাহীনের চোখের দৃষ্টিতে সকাল লোলুপ একটা ভাব দেখেছে যেটা তার গা ঘি/ন/ঘি/ন করতে বাধ্য করেছে।

মনোয়ারা ধ্রুবকে বললো সকাল আর মিতুকে নিয়ে আশেপাশে ঘুরে আসতে।সকাল এসেছে এতোদিন হয়ে গেছে কিন্তু বাহিরেই যাওয়া হয়নি।ধ্রুব প্রস্তাবটা সাচ্ছন্দ্যর সাথেই গ্রহণ করে।সকাল মনে ভ/য় ভ/য় মিশ্রিত লজ্জা নিয়েই রেডী হয়।শাহীন যেতে বলেছে তার মোটেই যেতে ইচ্ছা করেনি কিন্তু ধ্রুবর সাথে যেতে মন চাইছে।মিতু রেডি হয়ে আসলে তিনজন বেরিয়ে পড়ে।সামনে মেইন রোড।অবস্থ মিতু পার্স হাতে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে যায় ধ্রুবও মাঝপথে চলে গেছে কিন্তু সকালের ঢাকায় এই প্রথম আসা কখনো এতো বড়ো রাস্তা সে পারাপার হয়নি সবার মতো সে যেতে পারছেনা চুপ করে দাঁড়িয়ে পরে।ধ্রুব পেছনে তাকিয়ে সকালকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে।আবার পেছনে ফিরে যায় সকালের সামনে গিয়ে বলে,
“কি ব্যাপার ম্যাডাম?ফুলস্টপ হলেন যে?”

সকাল ধ্রুবর দিলে তাকায়।আর উপলব্ধি করে তার সামনে ভ/য়ংকর এক শ্যামসুন্দর পুরুষ।সকাল মিষ্টি করে হেসে বললো,
“ভ/য় লাগছে।”

ধ্রুব হাসে।সকালের চোখে কেমন কোমল ভাব।সে তার হাতটা সকালের দিকে দিয়ে বললো,
“হাত ধরে আসো।”

সকাল কাঁপা কাঁপা হাতে ধ্রুবর হাতটা ধরে।সকালের নরম ছোট হাতটা ধ্রুব পরম যত্নে বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় পুরে রাস্তা পার হয়।সকালের বুক কাঁপছে ধ্রুবর স্পর্শ পেয়েই কিনা সকালের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।এই অনুভূতির সাথে তার এই প্রথম পরিচয় আর পরিচয় করাচ্ছে স্বয়ং ধ্রুব।রাস্তার এই পাশে এসে মিতুকে পাওয়া গেলো না ধ্রুব ফোন করে জানতে পারলো সে তার ফ্রেন্ডকে পেয়ে একটু অন্যপাশে গিয়েছে।ধ্রুব সকালের হাতটা ছাড়ে না হাতে ধরেই হাটে।দুজনের হাতের উত্তাপ দুজনেই টের পাচ্ছে।ধ্রুব সকালের দিকে তাকায়।সকাল তার কাধে পড়ে।একটু ছোটখাটো কিন্তু সমস্যা নেই ধ্রুব মানিয়ে নেবে।ধ্রুব সকালকে কি খেতে চায় জানতে চাইলে সে ফুসকার নাম বলে তারপর সকাল আর সে ফুসকা খায়।সারাটাক্ষন ধ্রুব সকালকে দেখেছে।সকালের লজ্জায় নাক,ঠোঁট কেমন মৃদু কাঁপছে।ধ্রুব সকালকে আরেকটু লজ্জা দিতে বললো,
“এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো?”

সকাল আরো লজ্জা পায়।কিন্তু প্রতিবাদী গলায় বললো,
“না।”

ধ্রুব সকালের হাত ধরে নেয়।আঙুলের ভাজে আঙুল গুজে বললো,
“না কি?”

সকাল দুটো মিলিতো হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“লজ্জা পাচ্ছি না।”

“তোমার ঠোঁট কাঁপছে কেনো?”

সকাল হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে।ধ্রুব এতোকিছু খেয়াল করে?সকালের বুকের কাঁপন বাড়ে।এই প্রথম নিজ থেকে ধ্রুবর হাত চেপে ধরে।ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“আমার হাত একবার ধরলে আর ছাড়া যাবেনা কিন্তু।”

সকাল মুচকি হেসে বললো,
“হাতে কি সুপারগ্লো আছে নাকি?”

“তার চেয়েও ভ/য়ংকর কিছু আছে।”

“মানে?”

ধ্রুব উত্তর না দিয়ে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে সকালের গাল টেনে বললো,
“পিচ্ছি পাখি।”

সকাল লজ্জায় মাথা নিচু করে।তারপর হাটা অবস্থায়ই আবার ধ্রুবর দিকে তাকায়।ইশ!ছেলেটা এতো সুন্দর কেনো?সকাল মাথা উঁচু করে ধ্রুবকে দেখতে দেখতে ইটের সাথে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নেয়।ধ্রুব পড়তে দেয় না ঠিক সামলে নেয়।সকালকে সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,
“আমিতো বাড়িতেই যাচ্ছি।আমাকে বাড়িতে গিয়েই দেখো।নাকি এখনি দেখার তৃষ্ণা পেয়েছে?পিচ্ছি পাখি।”

সকাল লজ্জায় পারেনা গাড়ির নিচে চলে যায়।এই ছেলে এতো লজ্জা দিতে যানে।একটু দেখেছেই তো আর তাতেই এতো লজ্জা দিচ্ছে।সে ছোট মানুষ বলেই এতো কথা বলার সাহস পাচ্ছে।আবার তাকে পিচ্ছি বা হয়!পিচ্ছির হাত এমন আঁকড়ে ধরে আছে কেনো?সকাল ধ্রুব হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চায়।ধ্রুব ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“বললে না সুপারগ্লো।একদক সেট হয়ে গেছে।”

“ছাড়ুন।”

“তোমার হাতটা এতো নরম কেনো সকাল?তুলতুলে বাচ্চা।”

সকাল ফুসে উঠে।
“আমি বাচ্চা না।”

“হ্যাঁ।তা তো দেখাই যায়।”

“কি দেখা যায়?”

“যা আছে?”

সকাল মনে মনে আস্তাগফিরোল্লাহ পরে।ছি ছি।সকালের মুখ ভঙ্গিমা দেখে ধ্রুব হাসে।এভাবে লজ্জামাখা মুখ দেখার জন্য হলেও এমন একটা পিচ্ছি চাই।খুব চাই।

চলবে…..