কাব্য কথা পর্ব-০৩

0
357

#কাব্য_কথা
#পর্ব‌_৩
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

আধা ঘণ্টা হলো আমি কাব্য ভাইয়ার অফিস রুমে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বেটা হনুমান, হাতি, গরু, মহিষ, ছাগল একটা, দেখিস তোর কপালে বউ জুটবো না আর যদি জোটে দেখবি তোর বউ অন্য কেউ রে ভালোবাসে হুমম মিলাইয়া নিস বেটা খাটাস শয়তানের বোনজামাই! কিছুক্ষন আগে,,,,,,,,,,,,

সালাম স্যার : ডিয়ার স্টুডেন্ট….. আজ থেকে তোমাদের নতুন ইংলিশ লেকচারার হলো তোমাদের সবার প্রিয় এবং আমদের ভার্সিটির গর্ব কাব্য। আশা করছি তোমরা কাব্যর কাছে অনেক নতুন নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারবে।

কথাটা শুনে তো আমার চোখে সর্ষে ফুল ফুটে উঠলো আর আমি ধপ করে বসে পড়লাম। সবাই দাড়িয়ে ছিলো বলে আমার বসে পড়ার বিষয়টা কারো নজরে না পড়লেও কাব্য ভাইয়ার চোখ এড়ায়নি।

সালাম স্যার চলে গেছে কাব্য ক্লাস নিচ্ছে,,,,,,, ক্লাস প্রায় শেষ তাই উনি সবার উদ্দেশ্যে বললো……………… কারো কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা থাকলে আমাকে বলো।

আমিও হুট করেই বলে ফেলাম…………….. আমার একটু সমস্যা আছে ভাইয়া। আর ওমনি তার ক্লাসের সময় শেষ। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি তার ঠোঁটের কোণে দুষ্টু মিষ্টি হাসি বিরাজ করছে,,,,,,, উনি আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলো…………

এখন তো সময় শেষ তুমি আমার সাথে আমার অফিস রুমে আসো আমি বুঝিয়ে দিছি!

আমি ও হাদারাম গাঁধার মতো রাজি হয়ে গেলাম। আর তারপর আমি এখন এই পরিস্থতিতে 😭😭😭😭😭😭😭😭। আমার ভুল হলো আমি তাকে ভাইয়া ডাকছি আর সবাই দাড়িয়ে ছিলো কিন্ত আমি বসে পড়লাম কেনো? তাই শাস্তি স্বরূপ কানধরে দাড়িয়ে আছি।
বর্তমান………..
মনে মনে কাব্য ভাইয়ার গুষ্টি উদ্ধার করছি আর অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু বেটা খাটাসের বিন্দু পরিমাণ হেলদোল নেই তার তো মনেও নেই যে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি। ইতিমধ্যে আমার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে আর বলছে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আশা করি আজকের এই শাস্তি তোমার মনে থাকবে,, আর কখনও ভুল করেও আমাকে ভাইয়া ডাকার দুঃসাহস দেখাবে না ঠিক আছে! এখন তুমি যেতে পারো।

ওনার এমন বয়ান শুনে রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠলাম………..

ঠিক আছে ভাইয়া,,,,,,,,, অপস সরি! মিষ্টার আবরার কাব্য স্যার।

আমার কথা শুনে উনি আস্তে আস্তে আমার দিকে আসছে আর আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে পিছতে লাগলাম পিছতে পিছতে আমার পিঠ দেয়ালের সাথে লেগে গেলো। এদিকে কাব্য তার বাঁ হাত দেয়ালের এক পাশ আটকে দাড়িয়ে আছে আর অন্য হাতে তার চুলগুলো ঠিক করছে আর বলছে তোমার এই রাগ আর বাচ্ছামির জন্য তোমাকে আধা ঘণ্টা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হইসে এতে আমার কোনো দোষ নেই,,,,,,,,, আর এতক্ষন যে তুমি মনে মনে আমার গুষ্টি উদ্ধার করছো এটার জন্য তোমাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে তোমাকে যেতে দিচ্ছি সেই জন্য তুমি আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে আবার মুখে মুখে তর্ক করছো।

এইরে আমি যে মনে মনে উনাকে ঝারছি এটা কি করে বুঝলো?

কি হলো কথার মুখে কথা নেই কেনো?

সরি ভাইয়াআআআআআ,,,, সরি সরি! আর কোনো দিন ভাইয়া বলবো না স্যার। এইবারের মতো মাফ করেদেন প্লিজ,,,,,,, আর এমন ভুল করবো না প্লিজ ( করুণ সুরে) ।

আচ্ছা ঠিক আছে মাফ করবো কিন্তু একটা শর্ত আছে!

আমি তার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,,, কি শর্ত?

তুমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে আমাকে কল করবা আর সুন্দর করে বলবা গুড মর্নিং কাব্য,,,, যদি রাজি থাকো তাহলে এখন যেতে পারো।

আমি কোনো কিছুই না ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো এখান থেকে বের হওয়া।

জ্বি ঠিক আছে রাজি।

ওকে যাও এখন শুধু শুধু আমার এতটা সময় নষ্ট করলে।

তার এই কথা শুনে মন চাইছিল এই হনুমানের সব কয়টা চুল ছিঁড়ে দিতে কিন্তু সবার সব চাওয়া যেমন পুরন হয়না তেমন আমারও চাওয়া টা চাওয়া রয়ে গেল। এখন বুদ্ধিমান এর কাজ হলো এখান থেকে চলে যাওয়া।

কথা বের হওয়ার সাথে সাথে কাব্য দরজা লাগিয়ে দিয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগলো আর বলতে লাগলো শাস্তি তো একটা বাহানা আসল কথা হলো তোমাকে আমার চোখের সামনে রাখা আর তৃপ্তি করে তোমাকে দেখা কারণ তুমি হলে আমর শুধু আমার প্রিয়সী কাব্যের কথা ( মুচকি মুচকি হেসে)

কেন্টিনে বসে আছি সবাই গল্প করছে কিন্তু আমার মাথায় একটা কথা বার বার ঘুরছে আর সেটা হলো আমি কাব্যকে ভাইয়া ডাকলে তার মেজাজ একদম আগ্নেয়গিরি হয়ে যায় কেনো? আমর ভাবনার ইতি টেনে ইতি বললো……… কিরে কি ভাবিস?

কিছু না।

তাহলে মুখটা এমন চিন্তাবীদের মতো করে রাখছিস কেনো?

আচ্ছা তুই ওই হনুমানের সম্পর্কে এতো কিছু কেমনে জানস? কারণ যেদিন তুই কাব্য ভাইয়ার সম্পর্কে এতো কথা বললি ওইদিনই তুই দ্বিতীয় বারের মতো ভার্সিটিতে ঢুকলি তাহলে তুই কিভাবে উনার সম্পর্কে এতো কিছু জানস।( সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি ইতির দিকে)

কারণ আমার একমাত্র খালার একমাত্র গুণধর ছেলে হলো কাব্য ভাইয়া আমার একমাত্র বড় ভাই।

ইতির কথা শুনে আমি আবারও বিদ্যুৎ বিহীন তারখাম্বায় পরিণত হলাম।

কিরে কি হইসে তোর এমন হেং মাইরা রইলি কেন ? কি হইসে তোর?

ওই হনুমান যে তোর ভাই এটা আমকে তুই আগে কসনাই কেন?( বিস্ফোরিত কণ্ঠে) ।

আমি তো তোরে অনেক বার আমর ভাইয়ার কথা বলসি।

হম কিন্তু তুই তোর ভাইয়ের কথা বলছিলি এই হনুমান টার কথা তো বলোস নাই।

আরে দোস্ত আমার আপন কোনো বড় ভাই নাই কাব্য ভাইয়া আমার জন্মের আগে থেকেই আমাদের বাড়িতে থাকে আর আমার আম্মু আমাকে সবসময় বলে কাব্য ভাইয়া আমার বড় ভাই তাকে যেনো আপন ভাই মনে করি।

তাহলে আমি যে তোদের বাসায় এতো যাই কখনো তোর ভাইরে দেখি নাই কেনো?

তুই যখন আমাদের বাসায় আসতি তখন ভাইয়া তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাসায় চলে যেতো আর নয়তো কোনো কাজে বাইরে থাকতো,আর যেদিন ভাইয়াতার বন্ধুর বাসায় না যাইতো ওইদিন ভাইয়া নিজের রুমের মধ্যে থাকতো বুঝলি উড়নচণ্ডী।

হম বুঝলাম,,,,,,, কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছাগলটা তোদের বাসায় কেনো থাকতো তার নিজের বাড়ি নাই? আর ওই দিন গাধাটাকে দেখে তোর হার্ট বিট কেনো বাড়লো, লজ্জা করে না নিজের ভাইয়ের ওপর ক্রাশ খাইতে?(একটু হিংসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে)।

আসলে কি………………..( ইতি আরো কিছু বলবে তার আগেই কাব্য আসে)

বাসায় যেতে হবে চল।

আরে ভাইয়া তুমি এতো তাড়াতাড়ি আচ্ছা আসছো ভালো হইছে বসো গল্প করি।

আমাকে কি তোর পিচ্ছি মনে হয়?

না ভাইয়া।

তাহলে গল্প করবি বললি কেনো?

পিচ্ছি কথাটা শুনে কথার রাগ উঠে গেলো আর বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলে উঠলো…….. এই আপনি পিচ্ছি কাকে বলেন?

কাব্য কথার কাছে এগিয়ে যায় আর কথার মুখের দিকে ঝুঁকে দাড়ায়………….

#চলবে