#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-৭
আঁধার কাব্যর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
আঁধার, আমার কিছুদিন সময় লাগবে মিস্টার খান সবটা অ্যাডজাস্ট করতে। সেই সময় টা কি আমি পাবো??
কাব্য, ( আঁধার সময় চাচ্ছে তারমানে ও আমাকে মাফ করে দিয়েছে।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মাফ করার মেয়ে তো আঁধার না। ওর মাথায় কি চলছে )
অবশ্যই পাবে কিন্তু মিস্টার খান না কাব্য বলো।কেউ নিজের হাবি কে এভাবে ডাকে।
আঁধার, বললামই তো সময় লাগবে।আপনি আমাকে সাতদিন সময় দিন তারমধ্যে আমি অ্যাডজাস্ট করে নিবো।
কাব্য, আচ্ছা তুমি যেমনটা চাইবে ঠিক তেমনটাই হবে।তুমি সময় নাও আমি জোর করবো না।তুমি কি জানো আমি কোন হসপিটালে জয়েন করব??
আঁধার, জয়েন করবেন আপনি, আমি কি করে জানব??আমাকে জানাতে হবে তো নাকি। তো বলেন কোন হসপিটালে জয়েন করবেন??
কাব্য, আমি আল কারিমে জয়েন করব।
আঁধার অবাক হয়ে বলে,
আঁধার, মানে আমার কলেজে??
কাব্য, হুম….
আঁধার, আচ্ছা ঠিকাছে আপনি এখন যান গিয়ে ড্রইং রুমে বসেন।আমি ঘরটা গুছিয়ে আসছি।
কাব্য, আচ্ছা….
কাব্য বেরিয়ে যেতেই আঁধার মনে মনে বলে,
আঁধার, ( আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন মিস্টার খান।আমি আপনাকে কক্ষনোই ক্ষমা করবো না।আপনার কষ্ট সহ্য করে নেওয়ার মতো কষ্ট আপনি দেন নি, তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট আপনি আমাকে দিয়েছেন। আমার ভালোবাসার মানুষ হয়ে আমাকেই কষ্ট দিয়েছেন শুধুমাত্র ওই স্টুপিড নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এক্সকিউজ দিয়ে।আপনি আমাকে স্টুপিড এক্সকিউজ দেখান।আপনি কি মনে করেছেন আমি বুঝিনা তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।আপনি আঁধার কে কষ্ট দিয়েছেন।আঁধার মানে অন্ধকার, যা শুধু কষ্টই দেয় সেখানে আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছেন আর সেই কষ্ট আমি ফেরাবো না তা কি হয়?? আপনাকে কষ্ট দিবো ঠিকই কিন্তু আপনার মত তড়পে তড়পে দিবো না। একেবারে দিবো আর তার জন্য রেডি থাকুন মিষ্টার কাব্য আহমেদ খান বলেই জল ভরা চোখে বাকা হাসি দেয় ).
কাব্য নিচে নেমে আসতেই সবাই ওর দিকে সন্দেহ পূর্ণ চোখে তাকায় আর সেটা দেখে কাব্য বলে,
কাব্য, এখন আমাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে সেটা জানতে চেও না কারণ এটা আমাদের পার্সোনাল কথা। আর আমাদের পার্সোনাল কথা আমি তোমাদের বলবো না।আর চিন্তা করো না আমার আর আধারের মধ্যে সব ঠিক আছে।সবকিছু সট আউট হয়ে গেছে।
শাওন তো এই কথা শুনে বলে,
শাওন, ভাইয়া তুমি শিওর তো?? কারণ তুমি আঁধারের সাথে যা করেছ তারপর আঁধার তোমাকে এত সহজে ছেড়ে দিবে তা আমার বিশ্বাস হয়না।এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার মানুষ আঁধার না।তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে এর পিছনের নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে। ভাইয়া তোমাকে আবারো সাবধান করছি তুমি আঁধারের সাথে যা করেছ তারপরও যে তোমাকে এত সহজে ছেড়ে দিয়েছে এটা কিন্তু পসিবল না। ওর মাথায় কিছু একটা চলছে আর তাই ও তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে। দেখা গেল তোমাকে কোন ভাবে ও কষ্ট দিবে।
আজ কলেজে একটা ছেলে ওকে প্রপোজ করেছিল আর সেই ছেলেটি তার উত্তর ও অনেক খারাপ ভাবে দিয়েছে। হাজারটা গালি দিয়েছে হাজারটা কথা শুনিয়েছে। তাই বলছি সাবধানে থাকো। ও কি করছে না করছে সেই দিকে চোখ রাখ । এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী ও না। তুমি ওর উপর একটু নজর রেখো।
কাব্য, ( সেটা জে আমি ভাবিনি তানা কিন্তু এখন এটা শাওন কে বলা যাবে না। শাওন এমনিতেই আমাদের দুজনের মাঝে দাড়িয়ে আছে তার উপর যদি এখন বলি যে আমিও এটাই ভাবছি তখন ও থার্ড পারসন হয়ে আধারের কাছে লাগিয়ে দিলে।না না সেই ভুল করা যাবে না। ) তোকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে মা শাওন।আমার বউ আমি ভেবে নিবো আর কার এত বড় সাহস আমার বউ কে প্রপোজ করে তুই just আমাকে বল আমি সেই ছেলেকে সোজা করে রেখে আসবো।আমার বউয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো ওই ছেলেটার আমি বের করবো।
শাওন, আব…..
আঁধার, আমি আমার পার্সোনাল আর প্রফেসনাল লাইফ উল্টাপাল্টা করি না মিস্টার খান।আপনি আমাদের কলেজে এজ এ প্রফেসর আর টিচার হিসেবে জয়েন করছেন সেটা ভালো কথা কিন্তু আমার কলেজ লাইফে কোনো ইন্টারফেয়ার করবেন না সেটাই আমি আপনার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করছি কিন্তু সেটা যদি আপনি না করেন তাহলে আমাকে কলেজ ছাড়তে হবে কারণ আমি চাই না আমরা husband Wife বলে সবাই ভাবুক আমি আপনাকে ইউজ করে ভালো রেজাল্ট করেছি। আর আপনি এত বছর হয়তো জানেন না আমার কাছে আমার আত্মসম্মান সবার আগে।
কাব্য, সরি আমি বুঝতে পারিনি।
আঁধার কাব্যর কথা পাত্তা না দিয়ে শাওন কে বলে,
আঁধার, শাওন তুই আমাকে রান্নাঘরে হেল্প করবো আয়।আমি এখন পিঠাগুলো বানাবো তুইও বানাবি।
শাওন, আচ্ছা ঠিক আছে চল। কিন্তু প্রমিস কর আমাকেও কিন্তু দিবি। আমাকে না দিলে আমি তোকে হেল্প করব। তুই ভালো করে জানিস কিন্তু আধার চৌধুরী বর্ষা তার প্রমিস যে করেই হোক রাখে। তুই যদি না যাস তখন তোর ডিগনিটির উপর প্রশ্ন উঠবে সেটা তুই একদম পছন্দ করিস না।
আঁধার, আমি কি একবারও বলছি যে তোকে দিবো না?? তুই নিজেই বললি তারমানে তুই চাসনা।ঠিকাছে আমি তোকে জোর করব না কারণ তুই তো জানিস আমি কাউকে জোর করি না আর যাকে করার তাকে ঠিকই করি।তোকে জোর করার রাইট নেই তাই জোর করবো না। তোর ইচ্ছা তুই খাবি কিনা, আমি বলার কে বলেই যেতে নাই কিন্তু শাওন ওকে ধরে বসিয়ে দেয় আর ওর পায়ের কাছে হাঁটু মুরে বসে বলে,
শাওন, তোর এই কথায় কথায় মুখ শোনানো অভ্যাস টা গেলো না। তুই আর কত পচাবিড়ে আমাকে?? তোর এই পচানি আর সহ্য করতে পারছি না।
আঁধার, ঠিক আছে তাহলে বন্ধুত্ব ভেঙে দে। তোর কাছে যখন আমি এতই অসহ্য তখন আর আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার কোন দরকারই পড়ে না। তুই আমার সঙ্গে তোর বন্ধুত্বটা ভেঙে দেয় তাহলে তুইও মুক্ত আমিও মুক্ত। তোর তো কতই বন্ধু আছে। আমি একজন কমে গেলে তোর কিছু যাবে আসবে না। ফিহা অর্পা, রায়হান ওরা তো আছেই। ওরা তোর সঙ্গ দিবে।
শাওন, তোর কি মনে হয় তোর সাথে বন্ধুত্ব ভেঙে দিলে ওরা আমার সাথে থাকবে?? তুই দিন দিন বোকা হচ্ছিস, আগে কত বুদ্ধি খাটাতে এসব ব্যাপারে আর এখন দিন দিন হাঁদারাম হচ্ছিস। তোর থেকে এটা আমি আশা করিনি। আচ্ছা যাই হোক যেটা বলছিলাম যে আমি মজা করছিলাম সিরিয়াসলি নিস কেন?? সবকিছু কি সিরিয়াসলি নেওয়ার ঠিক না। তুই এরকম করলে সত্যি সত্যি একদিন আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে যাবে। আর আশা করি তখন তুই খুব খুশি হবে তাই না??
শাওনের কথা শুনে আঁধার রেগে ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,
আঁধার, তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে বন্ধুত্ব ভাঙার কথা বলিস । তুই যদি বন্ধুত্ব ভাঙ্গার কথা ভাবিস তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন। তোকে আস্ত রাখব না মেরে গুর গুর করে ফেলব। তোর শরীরের সবকটা হাড্ডি ভেঙ্গে ফেলব। তখন নিশ্চয় খুব ভালো লাগবে। আর আমার হাতে মার খেতে যেত খুব ভাল লাগে তাই না কারণ আমার এই খসখসে হাতের মাইর গুলো অনেক ব্যথা লাগে তাইনা।
আধারের কথা শুনে শাওন পিছতে পিছতে বলে,
শাওন, না আঁধার তুই এটা করতে পারিস না। তুই এভাবে আমাকে মারতে পারিস না…মারবি না আমাকে…এই আমি তোকে বলে দিলাম।
To be continued….