কৃষ্ণডাহুক পর্ব-১৯+২০

0
307

#কৃষ্ণডাহুক – ১৯
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

মানুষটার পাশাপাশি নিরবে হাঁটছে মীরা। প্রত্যেকটা পা ফেলছে ধীর,স্থির গতিতে। চোখের জলগুলো আপন মনে খেলা করছে তাতে নজর নেই মীরার। সে ব্যস্ত, মেদিনীর বুকের দিকে তাকিয়ে হিসাব মিলাতে। অপরপাশের মানুষটি এ নিরবতা সহ্য কর‍তে পারলো না। নিরবতা,নির্জনতা ভেঙ্গে রাশভারী কণ্ঠে শুধালো,’ আগের চেয়ে অনেক শান্ত হয়ে গিয়েছো তুমি মীরা! ‘

মীরা হাসলো,চুলের ভাজে সে হাসি খেয়াল করলো না কেউ। মীরা জবাবে বলল,’ অস্থির আমিকে শান্ত করতে পরিস্থিতিটাই কি যথেষ্ট ছিলো না? ‘

অপরপাশের মানুষ কথার পিঠে জবাব দেওয়ার জন্য শব্দ সাজাতে পারলো না। কথা এড়িয়ে বলল,’ দিনকাল খুব সুখে যাচ্ছে? ‘

‘ আগের চেয়ে বেশ সুখেই যাচ্ছে। আপনার কি অবস্থা? আপনার স্ত্রী? সে কেমন আছে? ‘

মানুষটা মীরার দিকে তাকালো। মীরার শরীরের গঠন বদলেছে, চেহেরা-তেও উজ্জ্বলতা এসেছে! তাহলে কি মীরা বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছে? তার চেয়েও বেশি?

‘ আছি কোনোরকম আর আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। ‘

‘ অনেক দ্রুতই বাচ্চা নিয়ে নিলেন যে? আপনার তো আবার ক্যারিয়ার! বাচ্চা নিলে আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে! টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাবে! বাচ্চা তো আপনার অন্ন ধ্বংস করবে। ‘

কথাটা ঠাট্টার সুরেই বলল মীরা। মানুষটা মাথা নত করে নিলো! তড়তড় করে বুঝে নিলো মীরা, এতো দ্রুত বাচ্চা নেওয়ার কারণটা! আবারও তাচ্ছিল্য হাসলো সে, আড়ালে, মনে মনে।

‘ মীরা? তুমি এখানে কি করছো? তোমার চিন্তায় আমি তো পাগলই হয়ে যাচ্ছিলাম! ‘

আকস্মিক ভাবে আদ্রিকের আগমণ! মীরা ও মানুষটি চমকালো। আদ্রিকের ব্যস্ত কণ্ঠস্বর, মীরা শান্ত স্বরে বলল,’ পাগল কেনো হচ্ছিলেন? আমি কি বাচ্চা? যে বাহিরে বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না, হারিয়ে যাবো? ‘

আদ্রিক ভ্রুকুঁচকালো পাশের মানুষটিকে দেখে। সেমূহুর্তেই কোনো প্রশ্ন করলো না, মীরাকে একাকি ধরবে সে!

মীরার পাশের মানুষটা আদ্রিককে দেখে অবাক হলো! তারচেয়েও বেশি অবাক হলো আদ্রিকের এতো ব্যস্ততা, অস্থিরতা মীরার প্রতি দেখে! এটাই কি মীরার একমাত্র সুখের কারণ? নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিকের পানে। আদ্রিক বিব্রতবোধ করলো, গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে। কিছুক্ষণ নিরবতা চললো। আদ্রিক বলল,’ মীরা, বাড়ি চলো আমার সাথে। ‘

‘ আপনি এখানে কি করছিলেন? ‘

‘ এই মূহুর্তে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না। বাড়ি চলো। ‘

আদ্রিকের কথায় মীরা বলল,’ তাহলে আমিও আপনার সাথে বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না! আমি একাই যেতে পারবো। ‘

আদ্রিকের এবার রাগ হলো বেশ! মেয়েটা এতো ঘাড়ত্যাড়া কেনো? একটু তার কথা শুনলে কি হবে? পৃথিবী ধ্বংস?

মীরা বাকি দুজনকে রেখেই হাঁটা ধরলো। পিছু ঘুরার প্রয়োজনবোধও করলো না। আদ্রিক একবার ওই মানুষটির দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে মীরার পিছে গেলো! কেনো সে এতো এমন ভালোবাসার কাঙাল হচ্ছে? মীরা তো তাকে চায় না! তার উচিত না মীরার পিছন যাওয়া কিন্তু তারপরও গেলো!

তাদের দুজনের যেতেই মানুষটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও উলটো পথে চলে গেলো।

_

ব্যবসার কাজে ইয়ামিন ঢাকা শহরে এসেছিলো, তখনো জানে না মীরা যে ঢাকাতেই অবস্থান করছে। আপন মনে ঢাকার ব্যস্ত বুকে হাঁটছিলো তাতে চলাচল শত গাড়ির। হাঁটতে হাঁটতে থামলো কিছুটা নিরব,নির্জন জায়গার সামনে, আশেপাশে শুধু একটি মাত্র দোকান তাও আবার টং এর! যেখানে চা, সিগারেট আর দুটো বিস্কুট বাদে কিছু পাওয়া যাবে না। সিগারেট খাওয়ার আশায় সামনে গেলো দেখলো একটি মেয়ে দুজন ছেলেকে আঙুল উঁচিয়ে শাসাচ্ছে! কারণটা না বুঝলেও কথাবার্তা শুনে কিছুটা আঁচ করতে পারলো। মেয়েটার চেহেরা তখনো আবছা আবছা, অস্পষ্ট লাগছিলো। এতোক্ষণ ব্যাপারটায় আগ্রহী না হলেও মেয়েটার হাতের ব্যাগ আর চুড়ি দেখে আগ্রহ জেনো বেড়ে গেলো! তারচেয়েও দ্বিগুণ বাড়লো কণ্ঠস্বর শুনে! সেই পুরনো, চেনা পরিচিত কণ্ঠস্বর! কতদিন হলো এই কণ্ঠস্বরটা শোনে না! কেউ মিষ্টি সুরে তাকে ডাকে না! আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার চেহেরা দেখার আশায়! দেখেও ফেললো যখন মেয়েটা পিছু ঘুরলো! মেয়েটাকে দেখে তার মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটলো। কেনো ফুটলো? অতি প্রিয় মানুষকে দেখলে সবার মুখেই হাসি ফুটে! তবে কি মীরা আসলেই তার প্রিয় ছিলো কোনোদিন? নাকি মীরা তার মোহ ছিলো?

সে মীরাকে দেখে বিন্দুমাত্র না চমকালেও মীরা তাকে দেখে চমকেছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলো ইয়ামিন! চমকানোরই কথা! হঠাৎ অতি প্রিয় বা অপ্রিয় কাউকে দেখলে চমকাবেই! মীরাও চমকেছে।

মীরা ইয়ামিনকে দেখলে অবাক হলেও মূহুর্তেই নিজের চোখমুখ শক্ত করে নিলো। ছেলে দুটোকে শাসিয়ে এমনেই মেজাজ তুঙ্গে! তারউপর অপ্রিয় কাউকে দেখে তো আরো মেজাজ খারাপ হলো! পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইয়ামিন নিজেই বলল,’ মীরা? থামো! ‘

থামলো মীরা! কেনো থামলো জানে না! শুধু জানে এই মূহুর্তে সে নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মেয়ে হিসেবে উপস্থাপন করবে ইয়ামিনের সামনে! এতেই ইয়ামিনের পরাণ জ্বলবে,পুড়বে! ভাববে সে মীরাকে ঠকিয়ে, প্রতারণা করে তার কিছুই করতে পারেনি! উলটো তাকে পৃথিবী চিনিয়েছে! একা একা বাঁচতে শিখিয়েছে। আর যদি ইয়ামিনের সামনে নরম মুখ, চোখের জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ইয়ামিন তবে জিতে যাবে! ভাববে সে প্রতারণা করে জিতে গিয়েছে। যা মীরা কিছুতেই হতে দিবে না! চোখে পানি এলেও নিজেকে সামলে নিলো মীরা।

ইয়ামিন মীরার কাছে এসে বলল,’ আমাকে প্রথমে চিনো নি? নাকি চিনেও না চেনার ভাণ করলে? ‘

মীরা শক্ত মুখে বলল,’ চিনেও না চিনার ভাণ করলাম! অভিনয়, ভাণ করা কি খালি আপনারাই পারেন? আমিও পারি! কিন্তু আপনার অভিনয়টা আমার চেয়ে ভালো ছিলো। ‘

তাচ্ছিল্য মিশে আছে মীরার কণ্ঠস্বরে! গায়ে সূঁচের নেয় কথাটা চুবলো ইয়ামিনের, মৌন রইলো সে কারণ মীরাকে জবাব দেওয়ার মতো কিছুই বলার নেই তার। মীরাই চলে যেতে নিলো তখনই আবারো ইয়ামিন বলল,’ আমিও এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছি, চলো আমিও সাথে যাই, একাকিত্ববোধ হচ্ছে আমার। পূর্বের সম্পর্ক, অতীত ভুলে যদি মেনে নাও! ‘

মীরা জবাবে কিছুই বলল না! না করলে হয়তো ইয়ামিন ভাবতে পারে মীরা কোনোভাবে সুখে নেই! তাই মীরা কিছু না বলেই নিঃশব্দ পায়ে হাঁটা ধরলো। মীরার মৌনতাকেই সম্মতি হিসেবে ধরে ইয়ামিনও হাঁটলো মীরার পিছে।

#চলবে?

#কৃষ্ণডাহুক – ২০
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

থমথমে আদ্রিকের মুখশ্রী। মীরার কঠিন মুখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মীরা চোখদুটো আদ্রিকের চোখের দিকে তাকিয়ে। আদ্রিক থমথমে গলায় প্রশ্ন করল,’ ছেলেটা কি তোমার প্রাক্তন প্রেমিক? আই মিন স্বামী? ‘

মীরা ভ্রুকুঁচকালো! এই সামান্য কথাটা বলতে যেনো মানুষটার কতো হেঁচকিচানি! কত দখল! বলতে যেয়েও কেনো কণ্ঠনালী বারবার কেঁপে উঠছিলো। মীরা আচমকাই হেসে দিলো। মীরার হাসির শব্দে চমকালো আদ্রিক, বলল,’ ভুতে পেয়েছে তোমায়? ‘

‘ হ্যাঁ তা তো পেয়েছেই! আপনার অবস্থা দেখে। ‘

আদ্রিক তাকালো মীরার দিকে। মুখে হাসি লেগে আছে! এমনিতে তো মুখটা ঠিকই প্যাচার মতো করে রাখে! আজ হাসছে কেনো? আদ্রিক বলল,’ আমার কথার জবাবটা এখনো পেলাম না মীরা! এড়িয়ে যাচ্ছো? ‘

হাসি হাসি মুখ থেকে মূহুর্তেই গম্ভিরে রূপান্তরিত হলো মীরা, বলল,’ হ্যাঁ আমার প্রাক্তন স্বামী ইয়ামিন ছিলো। ‘

‘ এই ছেলেটা তোমাকে ধোঁকা দিলো আর তারই সাথে ঘুরছিলে তুমি? ‘

‘ ঘুরছিলাম কোথায়? শুধু হাঁটছিলামই তো! ‘

‘ তাও, কেনো হাঁটছিলে? সে তো তোমার প্রাক্তন! তোমার কষ্টের কারণ! ‘

‘ কোথাও না কোথাও তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ! এইযে দেখুন সে আমার সাথে প্রতারণা না করলে আপনাদের মতো পরিবার পেতাম না, দুনিয়া চিনতাম না! সব কিছুই তো তার জন্য সম্ভব হয়েছে! ‘

‘ আমার পরিবার তোমার কাছে খুব প্রিয় মীরা? ‘

আদ্রিকের শান্ত প্রশ্নে মীরা তাকালো তার দিকে। আদ্রিকের শিথীল দৃষ্টি, মনে মনে আনন্দিত করে তুললো মীরাকে। মুচকি হেসে আদ্রিকের প্রশ্নের প্রতুত্তরে বলল,’ খুব প্রিয়! ‘

‘ কেবল প্রিয় নই আমি! ‘ আদ্রিকের তাচ্ছিল্য, আক্ষেপের কণ্ঠস্বর! মীরার গা শিরশির করে উঠলো! থমকে যাওয়া চাহনিতে তাকালো আদ্রিকের দিকে। আক্ষেপের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে মুখে অসহায়ত্ব ছেয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে! মীরার একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সে কাঙাল!

‘ হতেও পারে, আপনি প্রিয় কিন্তু আপনার স্থান হৃদয়ের একপাশে! ‘ মীরার মন বলে উঠলো কথাটি! কিন্তু তা শুনতে পেলো না আদ্রিক! মনের কথা কি কেউ শুনতে পারে? নাহ পারে না! তাই মীরার মনের কথা তার মনের মাঝেই রয়ে গেলো! খুব করে মন চাচ্ছিলো কথাটা আদ্রিককে বলতে! কিন্তু কোথাও গিয়ে যেনো আটকে গেলো! বিবেকের কাছে! হ্যাঁ বিবেকের কাছে গিয়েই আটকে গেলো! বিবেক চায়নি কথাটা আদ্রিক শুনুক! কারণটা অরিন! তার মন, হৃদয় যেমন ভেঙেছে একজন নারীর কারণে, সে চায় না আবারো কারো মন ভাঙুক আরেক নারীর কারণে!

_

বাড়ির পরিবেশ একদম শিথীল! সবার চোখে মুখে মনমরা ভাব! থাকবেই বা না কেনো? বাড়ির আদরের মেয়ে এভাবে পালিয়ে বিয়ে করেছে তা কেউ মানতে পারছে না! যে মেয়েটাকে নিয়ে সবার গর্ব সে মেয়েটাই পালিয়ে আজ সবার মাথা নত করে দিয়েছে। আদ্রিক আর আদ্রিকার বাবা আদিল যে একবার ঘরে ঢুকেছেন গতকাল থেকেও তার বের হওয়ার নামগন্ধ নেই! খাবারটাও খাননি কাল থেকে! মার্জিয়া বেগম তো ক্ষণে ক্ষণে কাঁদছেন! আদ্রিকাকে চাইলেও অভিশাপ দিতে পারছেন না! মেয়ে তো! মায়ের অভিশাপ লেগে গেলে আবার তারই ক্ষতি! অনন্ত হুমায়ূন বাড়ির পরিস্থিতি দেখে স্কুল যেতে পারেন নি কিন্তু মীরাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের বাড়ির ঝামেলার জন্য মীরাকে আটক করে রাখার মানে নেই! মীরা বাড়ির পরিস্থিতির কারণে যেতে চায়নি প্রথমে অনন্ত হুমায়ূন অনেক অনুনয়, অনুরোধ করে মীরাকে স্কুল পাঠিয়েছে।

মীরা আর আদ্রিক বাড়ি ফিরলো যখন তখন বিকাল। সবাই হলরুমে বসে ছিলো মনমরা হয়ে! বৈঠক বসেছে কিভাবে আদিলকে আবারো ঘর থেকে বের করবেন এবং গ্রামের মানুষের সমালোচনার মুখ থেকে বাঁচবেন! এভাবে বিয়ে না হয়েই পালিয়ে আসা গ্রামের মানুষের চোখে শোভাজনক না কিন্তু না পালিয়ে উপায়? এভাবে গ্রামে বসে থেকেও তো মানুষের অপমান সহ্য করার মতো না!

বাড়ির সবার মুখে থমথমে ভাব। মীরা আর আদ্রিক প্রবেশ করে তাই দেখলো! বাড়িটা আগে কেমন আনন্দে মেতে থাকতো! কাল থেকে মৃ-ত হয়ে গেলো বাড়িটা! কেউ হাসেনা, কেউ ঠিকভাবে খায়ও না। মীরার তাদের জন্য মন কিঞ্চিৎ খারাপ হলো। মার্জিয়া সোফায় বসে ছিলেন উপস্থিত হওয়া আদ্রিক ও মীরার দিকে আড়চোখে তাকালেন। মীরাকে আদ্রিকের পাশে দেখে রাগ হলো তার! সে রাগ আকাশ ছুঁই ছুঁই সমান! তিনি সোজা মীরাকে কিছু না বলে প্রথমে আদ্রিককে বললেন,’ আদ্রিক এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? আসতে এতো সময় লাগে? ‘

আদ্রিক ভ্রুকুঁচকে তাকালো। তার মা তার কাছে কখনোই কৈফিয়ত চায়নি! আজ কেন চাচ্ছে? আদ্রিক বলল,’ হারিয়ে যাইনি! কাজ ছিলো তাই দেরী হয়েছে। ‘

কৈফিয়ত দেওয়া আদ্রিকের পছন্দ ছিল না কখনোই! তাই জবাবটা খিটখিটে হলো যা মার্জিয়ার পছন্দ হলো না, তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,’ মীরা কোথায় ছিলা? তোমার স্কুল তো অনেক আগেই শেষ। ‘

মীরা চমকালো মার্জিয়ার কথায়। উত্তর প্রস্তুত করতে বেশি সময় লাগলো না, বলতে নিলে আদ্রিক বলল,’ মীরা আমার সাথে ছিলো। আশা করি আর কোনো কৈফিয়তের দরকার নেই তোমার মা। ‘

আদ্রিকের সোজাসাপ্টা কথায় অবাক হলেন মার্জিয়া! আদ্রিক তার উপর কেনো চেতে আছে? কারণটা কি মীরা? যদি তাই হয় তাহলে তিনিও বেশ চেতবেন ছেলের উপর! বাহিরের মেয়ের জন্য ছেলের রাগ একদমই মেনে নিবেন না! উল্টোদিকে মার্জিয়ার তার প্রতি এতো উদাসীনতা দেখে খারাপ লাগলো মীরার। মার্জিয়া বেগম তাকে আগে কতো ভালোবাসতো! কিন্তু এখন তিনি ভীষণ বদলে গিয়েছেন! সন্দেহ করেন তাকে! ব্যাপারটা মীরাকে আঘাত দেয় ভীষণ! সে তো কোনো অপরাধ করেনি! আর অপরাধ যাতে না করে তাই সে নিজের মনের অনুভূতিটাও চাপা রেখেছে! সে এই পরিবারের উপর কৃতজ্ঞ! চায়না এই পরিবারকে কষ্ট দিতে! পরিবারের সুখ কখনো পায়নি কিন্তু এখানে আসার পর তা একটু হলেও মিটেছে।

_
‘ মীরা এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দাও। ‘

আদ্রিকের কথায় মীরা বলল,’ কেনো? ‘

‘ ভার্সিটিতে পড়তে চাওনা? তাছাড়া আদ্রিকা চেয়েছিলো তোমাকে ভার্সিটিতে পড়াবে তার স্বপ্নটা নাহয় আমিই পূরণ করলাম। ‘

‘ বাড়ির এই পরিস্থিতির মধ্যে কিভাবে পড়া সম্ভব? সবাই কি ভাববে? ‘

আদ্রিক কপট রাগ দেখিহে বলল,’ চড়িয়ে তোমার গাল লাল করে দেওয়া দরকার! একসপ্তাহ পর পরীক্ষা আর তুমি কিনা এখন বাড়ির কথা বলছো! শুনো ভালো চাকরী পেতে চাইলে, ভার্সিটিতে পড়তে হবে তোমার। অনার্স শেষ করলেও মোটামুটি স্টাবলিশড হয়ে যাবা! সারাজীবন তো স্কুলে পড়িয়েই যেতে পারবা না। ‘

‘ এতো দ্রুত কিভাবে সম্ভব হবে আপনিই বলুন? আমার এসবে ধারণা খুব কম। ‘

মীরার কথায় আদ্রিক গম্ভির কণ্ঠে বলল,’ চিন্তা করো না, আমি আছি তোমার পাশে। আমি সব শিখিয়ে দিবো তোমাকে। ‘
এরপর আর আদ্রিকের কোনো কথাই মীরার কানে ঢুকলো না! একটা কথাই বারবার বাজতে লাগলো,’ আমি আছি তোমার পাশে ‘

দূর থেকে এইসব দেখলেন সাহিল! আদ্রিক আর মীরা দুজনেরই মনের ভাব তিনি বুঝতে পেরেছেন কেউ না বুঝলেও!

#চলবে?