গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ৯
লেখক ঃ অভ্র নীল
আমরা বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে আমি আমার রুমে গিয়ে শুয়ে আছি। আর সানজিদার বলা কথা নিয়ে ভাবছি!
তার কী আমার প্রতি এটা ভালোবাসা না ভালো লাগা। না কী সে আমাকে কোনো কাজে ব্যবহার করতে চায়? না কী সে আমার উপর দয়া করছে? নাহ মাথায় কিছু ঢুকছে না! কী করি তাহলে? ধুরর ঘুমায়।
মাথা ভর্তি চিন্তা নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সন্ধায় সাদিয়া এসে ডাকতাছে–
সাদিয়া– স্যার, ও স্যার! উঠেন। আজ কী পড়াবেন না?
আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম–
অভ্র– কে সাদিয়া?
সাদিয়া– জী স্যার! উঠেন সন্ধা হয়ে আসছে।
অভ্র– আচ্ছা তোমরা গিয়ে পড়তে শুরু করো আমি ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি।
সাদিয়া– আচ্ছা স্যার!
সাদিয়া চলে গেল। আমিও আর শুয়ে না থেকে উঠে পড়লাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে তাদের পড়াতে চলে আসলাম।
আমি পড়াচ্ছি। সাদিয়া তখন বলল–
সাদিয়া– আচ্ছা স্যার একটা কথা জিঙ্গেস করি?
অভ্র– হুম করো!
সাদিয়া– স্যার! ধরেন আপনাকে কেও ভালোবাসি কথাটা বলেছে তখন আপনি কী করবেন?
আমি সাদিয়ার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। আমার কাশি হতে শুরু করলো। তখন সানজিদা আমাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। আর আমি সেটা এক নিশ্বাসে খেয়ে নিলাম। আর সাদিয়াকে বললাম–
অভ্র– কী বলছো হে? তোমার এখন পড়াশোনার বয়স এসব নিয়ে ভাবার বয়স না! আর আমার ব্যাপারে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি এখন পড়ো।
সাদিয়া আমার ধমক শুনে, সে মাথা নিচু করে গম্ভীর গলায় বলল–
সাদিয়া– আচ্ছা!
আমি তখন সানজিদার দিকে তাকালাম। দেখি সানজিদা মিটমিট করে হাসছে। এতে আমি কিছুটা আনজাচ করতে পারলাম, যে এই কথাটা হয়তো সানজিদা তাকে বলতে বলেছে। আমি সানজিদা কে আর কিছু বললাম না।
তাদের পড়ানো শেষ করে আমি আমার রুমে চলে আসি।
একটু পর সানজিদা সেখানে আসলো। আমি তাকে বললাম—
অভ্র– এ,,ই,,ই তুমি এখানে কী করো?
সানজিদা– কী হলো স্যার তোতলাচ্ছেন কেন? আর সাদিয়ার কথার উত্তরটা তখন দিলেন না কেন?
অভ্র– আমার ইচ্ছা আমি দেই নি। আপনার এতে সমস্যা আছে না কী?
সানজিদা তখন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আর বলতে লাগল–
সানজিদা– না স্যার আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার যে একটা প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল?
এটা বলে সানজিদা একদম আমার কাছে চলে আসলো। তার মুখের গরম নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে। এতে আমার অবস্থা ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তখন সানজিদা বলল–
সানজিদা– আচ্ছা স্যার! আমি যদি আপনার এই ঠোঁটে কিস করি তাহলে কিছু মনে করবেন না তো?
এটা বলে সে আমাকে কিস করে বসলো। আমাকে কিছু বলতেও দিল না! আমি শুধু
উমমম, উমমম,
শব্দ করছি। আর সানজিদা তো ইচ্ছে মতো কিস করছে। একটা সময় আমি আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। আমিও তার সাথে কিসে যোগ দিয়ে দিলাম।
প্রায় ৬ কিংবা ৭ মিনিট পর, সে আমাকে ছেড়ে দিল। আর বলল–
সানজিদা– স্যার কিছু মনে করেন নি তো! আরে ধুরর আপনি কিছু মনে করলেন তো আমার বয়েই গেল। যাইহোক আম্মু আপনাকে খাবার খেতে যেতে বলল।
এটা বলে সে চলে যেতে লাগল। আমি সেখানে থ মরে বসেই আছি। কী হয়ে গেল আমার সাথে এটা! আমিতো নিজেকে নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখটা আমার শার্টে আটকে থাকা একটা কানের দুলে গিয়ে আটকে পড়লো। আমি সেটা ছাড়িয়ে নিলাম আমার শার্ট থেকে। দেখে মনে হচ্ছে এটা সানজিদার। হয়তোবা একটু আগে আটকে গেছে। কী করতে সেটা তো আপনেরা জানে নিই।
যাইহোক আমি সেটা নিয়ে আমার টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলাম। আর খাবার খেতে চলে আসলাম। দেখি সেখানে সবাই রয়েছে। আমি মাথা নিচু করে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। সানজিদার দিকে আমার তাকাতেই কেমন যানি একটা লজ্জা বোধ কাজ করছে। তারউপর সে আবার আমার সামনে বসে আছে।
আমি মাথা হেলেই খাবার খাচ্ছি আর আঙ্কেল, আন্টির নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
এইভাবে আমি অনেকটা দ্বিধা নিয়েই খাবার খাওয়া শেষ করলাম।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। আর দিলাম লম্বা একটা ঘুম।
সকালে উঠে যথাসময়ে আমি আর সানজিদা চলে গেলাম ভাসিটিতে। সানজিদার প্রতি আমার তখনো লজ্জা বোধটা কাটে নি। তাই আমি তার থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চাচ্ছি,কিন্তু সে আমার ততোই কাছে চলে আসছে। আজকে সে আমার সাথে ক্লাসেও এক বেঞ্চে বসেছে। এতে আমি কিছু আন ইজি মনে করলেও পড়ে মানিয়ে নিলাম৷
ভাসিটি শেষে আমি আর সানজিদা গিয়ে এক রিকশায় উঠলাম। আমি বললাম–
অভ্র– মামা এতো নাম্বার বাসায় নিয়ে চলেন তো!
তখন সানজিদা ফট করে বলে উঠল–
সানজিদা– না মামা! আমি যেখানে নিয়ে যেতে বলবো। সেখানে নিয়ে চলেন।
অভ্র– কিন্তু,,,,,,
সানজিদা তখন আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। এটা দেখে আমি চুপ মেরে গেলাম। আর সানজিদা রিকশাওয়ালা মামাকে রাস্তা বলতে শুরু করলো।
একটু পর আমরা একটা পার্কের সামনে চলে আসলাম।
আমি ভেতরে যেতে না চাইলেও সানজিদা আমাকে জোর করেই নিয়ে গেল।
আমরা গিয়ে একটা জায়গায় বসলাম। তখন সানজিদা বলল–
সানজিদা– নাও এখন বলো। তুমি আমায় ভালোবাসো কী না? আর হে আমি আবারও মনে করে দিচ্ছি আমি কিন্তু না শুনতে চাই না!
আমি চুপ মেরে বসে রইলাম। সানজিদা আবারও বলল–
সানজিদা– আচ্ছা পরে বলিও এখন ওই যে দেখতে পাচ্ছো! বাদামওয়ালা যাও ওইখান থেকে বাদাম নিয়ে আসো।
আমি গেলাম আর সেখান থেকে বিশ টাকার বাদাম নিয়ে আসলাম।
বাদাম এনে আমি সানজিদার হাতে ধরিয়ে দিলাম। তখন সানজিদা বলল–
সানজিদা– আমাকে দিচ্ছো কেন?
অভ্র– তুমিই তো খাইতে চাইলে!
সানজিদা– হুম খাবো তো আমিই। এখন তুমি আমাকে বাদাম ছিলে দিবে আর আমি সেটা খাবো।
অভ্র– কেন আমি কী তোমার bf না কী? যে আমি তোমাকে বাদাম ছিলে দিবো।
সানজিদা– না, তবে হবে। এখন বেশি কথা না বলে দাও ছিলে দাও!
আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বাদাম ছিলে দিলাম। তবে এতে আমার খারাপ লাগলো যে তাও না। আমার বেশ ভালোই লাগলো। মনে এক অন্য রকম ফিলংস কাজ করলো।
খাওয়া শেষে আমি ভাবলাম এবার বাসায় যাবো। কিন্তু সানজিদা আবারও সেই একই প্রশ্ন করলো। আমি তাকে সেইদিনের মতো ঠিক একই উত্তর দিলাম। তখন সানজিদা বলল–
সানজিদা– তাহলে তোমার মতো পরিবর্তন হবে না?
অভ্র– তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমি তোমায় ঠিক কী বোঝাতে চাচ্ছি?
সানজিদা– না আমি কিছু বুঝতে চাই না! আমি জাস্ট বুঝতে চাই যে তুমি আমার ভালোবাসো।
এটা বলে সানজিদা রাগ দেখেয়ি চলে গেল। আমিও তার পিছন পিছন যেতে লাগলাম। সানজিদা একটা রিকশা নিয়ে একাই চলে গেল। আমিও তার পিছন পিছন একটা রিকশা নিয়ে যেতে শুরু করলাম।
বাসায় পৌছে সানজিদা সোজা তার রুমে চলে গেল। আমি আর তার পিছনে না গিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।
আর ভাবতে লাগলাম,, যদি সানজিদা উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলে। আমিও তো তাকে মনের ঘরে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তাকে বলতে পারছি না! কারণ তার বাবা যে আমায় তার বাসায় থাকতে জায়গা দিয়েছে। আমিতো তাকে ধোকা দিতে পারি না।
আমি খাবার না খেয়েই শুয়ে রইলাম,,,,,
চলবে……?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।