ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-০৮

0
148

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ৮
লেখক ঃ অভ্র নীল

সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর কী যেন ভেবে আবারও শুয়ে পড়লাম।
তার একটু পর উঠে ব্রাশ হাতে বাহিরে আসলাম। চারিপাশ দেখছি আর ব্রাশ করছি। তখন আঙ্কেলের গাড়ির উপর আমার চোখ পড়লো। গাড়িতে অনেক ধুলোবালি জ্বমে আছে। তাই ভাবলাম সেটা একটু পরিষ্কার করি। যেই ভাবা সেই কাজ।
আমি গাড়িটা ধুতে শুরু করলাম।

আমি গাড়ি ধুচ্ছি। গাড়ি ধোয়া প্রায় শেষের দিকে, তখন পিছন থেকে আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– আরে বাবা কী করছো? তোমাকে এসব করতে কে বলেছে?

অভ্র– না আঙ্কেল কেও বলে নি। এমনি গাড়িতে অনেক ধুলোবালি জ্বমে ছিল। সেটা দেখতে আমার কেমন জানি লাগতাছিল তাই আর কী পরিষ্কার করতে শুরু করলাম।

আঙ্কেল– আচ্ছা তুমি যখন এটা নিজ ইচ্ছায় করছো তাহলে আমি কিছু বলবো না! তোমার গারি পরিষ্কার করা শেষ হলে খাবার খেতে চলে এসো৷ ঠিক আছে!

অভ্র– আচ্ছা আঙ্কেল!

আঙ্কেল চলে গেলেন। আমি গাড়ি পরিষ্কার করা শেষ করে। সেখানেই গোসল করে নিলাম। তারপর রুমে এসে চেন্জ করে খাবার খেতে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে আঙ্কেলের সাথে কিছুক্ষণ বসে থেকে গল্প করে তারপর খাবার খেয়ে আমি আমার রুমে চলে আসি।

আমি বসে থেকে বই পরছি। তখন সানজিদা আমার রুমে আসলো। আর বলল–

সানজিদা– এই রেডি হয়ে নাও আমরা শপিংয়ে যাবো। কাল তোমাকে বলেছিলাম তুমি কী ভুলে গেছো?

অভ্র– আচ্ছা তুমি যাও আমি রেডি হচ্ছি।

সানজিদা– আচ্ছা!

এটা বলে সানজিদা চলে গেল। আমি বই বন্ধ করে রেডি হতে শুরু করলাম। আমি রেডি হয়ে নিলাম তারপর আমি ড্রইংরুমে গিয়ে বসে রইলাম।

একটু পর সানজিদা আর জান্নাত দুজন নেমে আসছে। সানজিদা কে আজ দেখতে অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু আমি তারদিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। সানজিদা নিচে আসতেই আমি বললাম–

অভ্র– জান্নাত ও আমাদের সাথে যাবে?

সানজিদা তখন তার ভ্রু কুচকে বলল–

সানজিদা– কেন সে গেলে কী কোনো সমস্যা?

অভ্র– আরে না আমি সেইভাবে কথাটা বলি নি! আচ্ছা এখন চলো!

বাইরে আসতেই সানজিদা বলল–

সানজিদা– এই তুমি ড্রাইভ করতে পারো?

অভ্র– নাহ!

সানজিদা– আচ্ছা চলো তোমায় শিখিয়ে দিবো!

এটা বলে সানজিদা তার বাবার গাড়ি বের করে নিল। আমি জান্নাত কে পিছনে বসিয়ে দিলাম। আর আমি গিয়ে সানজিদার পাশের সিটে বসে পড়লাম। সানজিদা তখন আমাকে ড্রাইভিং সিটে বসতে বলল৷ আমি বললাম–

অভ্র– এই না না এটা আমার দ্বারা হবে না! আমার ভয় করছে।

সানজিদা– আরে ভয় কিসের? আমি তোমার পাশে আছি। আমি তেমায় সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছি! তুমি বসো!

আমি তখন ভয়ে ভয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লাম। সানজিদা আমাকে সবকিছু শিখিয়ে দিতে শুরু করলো। আমি তার কথা অনুযায়ী সবকিছু করতে লাগলাম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি শিখে গেলাম। আসলে আমি এটা যতটা কঠিন ভেবেছিলাম ঠিল ততটা কঠিন না! আসলে সব জিনিসই যদি আপনি মন দিয়ে করেন। তাহলে সেটা আপনি সহজেই শিখে যাবেন।

আমি ড্রাইভ করছি আর সানজিদা আমাকে রাস্তা বলে দিচ্ছে সাথে নানা বিষয়ে গল্পও করছে।

একটু পর আমরা বিশাল এক শপিং মলের সামনে এসে দাড়ালাম। সানজিদা আর জান্নাত কে শপিং মলের গেটের সামনে নামিয়ে আমি গাড়ি পার্কিং করতে চলে গেলাম।
গাড়ি পার্কিং করে এসে আমি তাদের নিয়ে শপিং মলের ভেতরে ঢুকলাম।

আমরা শপিং করছি। তখন আমি লিজাকে দেখতে পেলাম। তাই আমি সানজিদা কে বললাম–

অভ্র– এই সানজিদা দেখো, লিজা!

সানজিদা– কই?

অভ্র– ওই যে!

সে আমার ইশারা অনুযায়ী তাকালো। আরে সেও লিজাকে দেখতে পেল। তাই আমরা তার দিকে এগিয়ে গেলাম। সানজিদা লিজাকে গিয়ে বলল–

সানজিদা– এই লিজা তুই এখানে কী করিস?

লিজা তখন পিছনে তাকিয়ে বলল–

লিজা– এইতো শপিং করি। তোরা এখানে কী করিস। আর এই ছোট্টো মেয়েটা কে?

তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– আমরাও শপিং করতে আসছি। আর এ হচ্ছে অভ্রর ছোট বোন। এর নাম জান্নাত।

লিজা তখন জান্নাত কে কোলে তুলে নিল। আর বলল–

লিজা– জান্নাত তুমি কেমন আছো?

তখন জান্নাত বলল–

জান্নাত– ভালো! তুমি কেমন আছো আপু!

লিজা– এইতো আপু ভালো। তা তোমার গোমড়া মুখো ভাই কী কিছু বলবে না?

লিজা আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল।
আমি এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিলাম। লিজা ভালো আছে না মন্দ আছে এটা আমার শুনতেই মনে নাই। তাই আমিও তাড়াতাড়ি করে বললাম–

অভ্র– সরি সরি! কেমন আছো লিজা?

লিজা– যাক তোমার তাহলে মুখটা খুললো। আমিতে ভেবেছিলাম তুমি হয়তো বোবা হয়ে গেছো।

অভ্র– আরে না! আমার মনে ছিল না!

লিজা– আচ্ছা বাদ দাও। আর এইনাও আমার বিয়ের কার্ড। আগামী মাসে আমার বিয়ে। তোমরা আসবে কিন্তু!

তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– এইটা কিন্তু তুই ঠিক করলি না! আমাকে না জানিয়ে তুই বিয়ে করতেছিস। তা পাত্র কী আগের থেকেই ঠিক করা ছিল?

লিজা তখন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। আর বলল–

লিজা– হুম ঠিক ধরেছিস!

সানজিদা– হায় হায় এটা আমি কী শুনতাছি। তুই আমার বেস্টু হয়েও তুই এ কথা আমার থেকে লুকালি। যাহ তোর সাথে আমার কথা নাই!

লিজা– আরে রাগ করিস না। আমি তোকে বলতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু সুযোগে হয়ে উঠে নি। আচ্ছা তোরা থাক আমি তোদের সাথে পড়ে কথা বলব। ভালো থাকিস!

সানজিদা– আচ্ছা যা তাহলে। আর পারলে দুলাভাইয়ের একটা পিক দিস!

লিজা– আচ্ছা,!

এটা বলে লিজা চলে গেল। আমরা আরও কিছু শপিং শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমি বললাম–

অভ্র– এখন কই যাবা বাসায়?

সানজিদা– নাহ! খুব খিদা পাইছে চলো একটা রেস্টুরেন্টে যাই।

তারপর আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। খাওয়া দাওয়া করে আমরা বাইরে চলে আসলাম। তখন আমি বললাম–

অভ্র– এইবার তো বাসায় যাবা?

সানজিদা– নাহ! চলো নদীর ধারে যাবো। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

অভ্র– কী কথা এখানেই বলো!

সানজিদা– নাহ এখানে বলা যাবে না!

আমি আর কিছু বললাম না। আমি গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।

একটু পর আমরা নদীর ধারে চলে আসি। তখন সানজিদা জান্নাত কে বলল–

সানজিদা– জান্নাত তুমি এখানে বসে থাকো। আর এই নাও আমার ফোন থেকে কার্টুন দেখো!

এটা বলে সানজিদা তার ফোনটা জান্নাত কে দিল। আর আমাকে নিয়ে সে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে আসলো। আমরা দুজনেই নিশ্চুপ। সানজিদা তখন নিরবতা ভাঙে বলল–

সানজিদা– আচ্ছা অভ্র তোমার কী রকম মেয়ে পছন্দ?

আমি থতমত খেয়ে বললাম–

অভ্র– কেন? তুমি যেনে কী করবে?

সানজিদা– আরে বলো না!

আমি তখন আর উপায় না পেয়ে বললাম–

অভ্র– আচ্ছা বলছি শুনো! আমার তো আর বাবা-মা কেও নেই। তাই আমি এমন মেয়েকে বিয়ে বা ভালোবাসবো, যে আমার ছোট বোনটাকে তার নিজের বোন মনে করে রাখবে। আর সাথে পর্দা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে এবং বিপদে আপদে সে সবসময় আমার পাশে থাকবে। ব্যস এতটুকু হলেই চলবে।

সানজিদা– বাহ তোমার চয়েস আছে ভালো।

তারপর সানজিদা কিছু একটা ভাবতে লাগলো। তার ভাবনা মাখা চেহারা দেখে আমি বললাম–

অভ্র– কী হলো? কী ভাবতাছো এমন?

সানজিদা– আচ্ছা অভ্র! আমি এখন যদি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলি, তাহলে কী তুমি আমার একসেপ্ট করবে?

আমি তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। আমি কী বলব বুঝতাছি না! আমি মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে বললাম—

অভ্র– তুমি মজা করছো তাই না?

সানজিদা– নাহ আমি সিরিয়াস। বলো তুমি কী আমায় ফিরিয়ে দিবে?

অভ্র– সানজিদা তুমি নিজে একটু বোঝো তোমার সাথে আমার যাই না। তুমি কই আর আমি কই? তুমি যেটা বলছো সেটা কখনই সম্ভব নাই।

সানজিদা– কেন সম্ভব নয়?

অভ্র– এটার উত্তর হয়তো আমি জানি না৷ কিন্তু একটা সম্ভব না সেটা আমি জানি!

সানজিদা– আচ্ছা তুমি কী আমাকে ভালেবাসো না?

আমি তখন একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম।তাই আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম।
সানজিদা আমার আরও কাছে আসলো। আর বলল–

সানজিদা– কী হলো বলো? তুমি কী আমায় ভালোবাসো না?

অভ্র– এটা আমি জানি না!

সানজিদা– আচ্ছা যাও আমি তোমায় ১ দিনের সময় দিলাম। আর হে উত্তর কিন্তু আমি হ্যাঁ চাই। যদি উত্তর না হয়, তাহলে আমি কিন্তু উল্টা পাল্টা কিছু একটা করে ফেলবো বলে দিলাম। এখন চলে বাসায় যাবো।

আমি সানজিদার কোনো কথারই উত্তর দিতে পারলাম না।
আমি সানজিদার পিছন পিছন গেলাম। আমি গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলাম। কিন্তু সানজিদা এবার আমার সাথে আর বসলো না, সে গিয়ে জান্নাতের সাথে পিছনে গিয়ে বসলো।

আমরা বাসায় চলে আসলাম,,,,,,,,,,,,

চলবে……?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।