#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam
তাছলিমা বানু ঘরে ঢুকেই ইমনের বউ লিমা কে ডাকতে থাকে।লিমা তখন খাটের উপর বসে বসে মোবাইলে তার বান্ধবীদের সাথে আলাপচারিতা করতে ব্যস্ত।
তাছলিমা বানুর ডাক শুনে খুবই বিরক্ত হয়।এই মহিলার জন্য একটু বসেও শান্তি পাওয়া যায় না।
একটু আরাম করে বসলেই ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। আরে বাড়িতে কি শুধু লিমাই একমাত্র বউ নাকি? আরো তো আছে দিনা কে ডাক গিয়ে যত্তসব।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়ায় লিমা।এখন না গেলে আবার গোষ্ঠী উদ্ধার করা শুরু করবে।কবে যে এই মহিলার থেকে মুক্তি পাবে।
রুম থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করে,, কি হয়েছে আম্মা?
তাছলিমা বানু তখন বসার রুমে বসেছে।
এই দিকে আসো তোমার সাথে কথা আছে আমার।
লিমা গিয়ে তাছলিমা বানুর পাশে দাঁড়ায়।
তোমাদের বিয়ের কতো বছর হলো?
লিমা চোখ মুখ কোঁচকায় শ্বাশুড়ির এমন কথা শুনে। হঠাৎ করে বিয়ের কতো বছর হলো তা কেনো জানতে চাইছে?
বিয়ের বয়স দিয়ে কি করবেন আম্মা?
যেটা জিজ্ঞেস করতেছি সেটার উত্তর দাও।পাল্টা প্রশ্ন করতে বলিনি।
জ্বি মানে সাড়ে চার বছর মনে হয়।
তো এতো বছর হয়ে গেছে। এখনো একটা সুখবর দিতে পারলানা।তোমাদের জন্য বাড়িতে এসে আমায় আছমা কথা শুনিয়ে গেলো। আজ আছমা শুনিয়ে গেছে কাল অন্য জন এসে শোনাবে।পরে পুরো গ্রামের লোক এসে শুনাবে।
পরের মেয়ের জন্য আমি কেনো কথা শুনবো?
লিমা কথা গুলো শুনে হাতগুলো শক্ত করে মুঠো করে ধরে রাখে। এই কথা গুলো যেনো কানে বি’ষ ঢালার মতো লেগেছে।
লিমা আর ইমনের বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে হলেও ওদের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো।লিমার কিছু সমস্যার কারণে ও কখনো মা হতে পারবেনা জানতে পারে।ইমন কে সরাসরি না বললে ও অনেক ভাবে কথাটা বুঝাতে চেয়েছে কিন্তু সে বুঝেনি।তাই লিমা ও আর ঘাটায় নি। তাছলিমা বানু যে লিমার বাবার টাকা দেখে লিমা কে নিজের বউ করতে রাজি হয়েছে সেটা লিমা ভালো করেই জানে।
এই মহিলা বাচ্চা নিয়ে পরেছে এখন সে বাচ্চা কোথা থেকে এনে দিবে? এখন যদি জানতে পারে লিমা কখনো মা হতে পারবেনা তখন তো মনে হয় সব কিছু ধ্বংস করে দিবে।
লিমার ভাবনার মাঝেই তাছলিমা বানু বলে উঠে,, আজই ইমনের সাথে কথা বলবে।কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব আমাকে খুশির খবর দিবে।আমি খুব তারাতাড়ি সেই সংবাদ টা পেতে চাই।
মাথায় ঢুকেছে আমার কথা?
লিমা মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ রুমের দিকে হাঁটা দেয়। ইমনের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। ইমন তো লিমা বলতে পা’গল।শুধু টাকা,পয়সার জন্য মায়ের কথায় সায় জানায়।
মা ছেলে সব গুলো টাকার লোভী। টাকা পেলে এদের আর কিছু লাগে না। দরকার পরলে ইমনকে নিজের বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দিবে।পরে আলাদা হয়ে যাবে। এমনিতেই এই মহিলা এই বাড়িতে পা রাখার পর থেকে হুকুম চালিয়ে যাচ্ছে।
————————————–
।পরের দিন সকালে যুথি আর ইরহান নাস্তা করে যুথির দাদির থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে। যুথি অবশ্য তার দাদি কে সব খুলে বলেছে ঐ বাড়ির বিষয়ে।
সব শুনে সে কি কান্না তার।ইরহানের জন্য ইরহানের কথা ভেবে আহাজারি করে কান্না করেছে।ইরহান কে অবশ্য শুনায়নি।ছেলেটা তাহলে কষ্ট পাবে নিজেকে ছোট মনে হবে।
যুথির দাদি বলেছিলো এখানেই থেকে যেতে একেবারের জন্য। ঐ বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। যুথি তখন দাদি কে বুঝিয়েছে।
ইরহান একটা রিকশা ভাড়া করে নিয়ে আসে। যুথি কে নিয়ে একেবারে প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র, বাজার,সদাই করে নিয়ে বাড়িতে যাবে।
যুথি এই বাড়ি থেকে অনেক কিছু নিয়ে নেয়,,যেমন রান্না করার জন্য মাটির চুলা,থালা,বাসন দুইজনের জন্য। আরো নানান কিছু নেয়।যুথি জানে ইরহানের হাতে বেশি টাকা নেই।তাই শুধু শুধু যখন এই বাড়িতে এসব আছে তাহলে কিনবে কেন? আর এমনিতেও দাদি এসব যুথির জন্যই কিনেছে।
যুথি কে এতো কিছু রিকসায় তুলতে দেখে ইরহান বেশ অবাক হয়। যুথি এসব তুমি কি করছো? এসব কেন নিচ্ছো?
তো কি হয়েছে? এগুলো পরে আছে সব ঘরে।আর দাদি সব আমার জন্যই কিনেছে।
কি ভাববে মানুষ?
মানুষের ভাবনা দিয়ে আমার কি কাজ? চুপ থাকেন আপনি। বলেই সব কিছু রিকশায় তুলে রিকশায় উঠে বসে।
ইরহান আর কি বলবে, সেও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে বসে।
তারপর দাদির থেকে বিদায় নিয়ে দুজন ই বেরিয়ে পরে।
গ্রামের রাস্তা এতোটা ও ভালো না অনেক উঁচু নিচু জায়গা রয়েছে সেখানে গিয়ে রিকশা বারবার উপরে উঠছে তো একবার নিচে নামছে। যুথি কয়েকবার সামনের দিকে ঝুঁকে পরে ও নিজেকে সামলে নেয়।
এইবার একটু জোরেই ঝাঁকি মারে যার দরুন যুথি গিয়ে ইরহানের উপর পরে।
ইরহান জোরে হেসে দেয় তারপর যুথির কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে আরেকটু কাছে এনে জড়িয়ে ধরে।
বাহ্ আমার বউয়ের শরীরে কি জোর।সামান্য রিকশার ঝাঁকুনি তে তার নাজেহাল অবস্থা। এতোক্ষন আমাকে জড়িয়ে ধরলেই পারতা।
এতো সব মাথায় আসে এটা আসে না? যে পাশে আমার বর থাকতে আমি কেন ঝাঁকুনিতে হেলে দুলে পরবো।
এখন আমায় বলছেন? আপনিও তো ধরেন নি আমায়।
আমি তো দেখতেছিলাম তুমি কি করো!
হুহ দেখছে ঢং!
ছেলেরা কি ঢং করতে পারে নাকি?
অবশ্যই পারে।
বাদ দাও তোমার সাথে কথায় পারবো না।
বাজারে গিয়ে যুথি কে রিকশাতে বসিয়ে রেখেই ইরহান কেনা কাটা করতে যায়।যুথি যেতে চেয়েছিলো তবে ইরহান এতো মানুষের ভিড়ে নিয়ে যায়নি।
যুথি বলে দিয়েছে কি কি লাগবে সে অনুযায়ী সব কিনে ইরহান ফিরে আসে।
ইরহান এসে রিকশায় বসতেই যুথি প্রশ্ন করে একি জিনিস পত্র কোথায়? আপনি দেখি খালি হাতেই ফিরে আসলেন।
সব কেনা কাটা করে আরেকজনের হাতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এতো জিনিস পত্র এখানে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না তাই।আমাদের বাড়ির পাশেই ঐ রিকশা চালক কাকার বাড়ি।সমস্যা নেই পৌঁছে দিবে সব।
ওহ আচ্ছা।
তারপর আবার দুইজন বাড়ি চলে আসে। বাড়ি এসে দেখে ঐ রিকশা চালক আগেই জিনিস পত্র নিয়ে বসে আছে গেইটের সামনে।
যুথি ঐ রিকশাতে অনেকগুলো টিন ও দেখতে পায়। তাই ইরহান কে যুথি জিজ্ঞেস করে,, এইই এতো টিন দিয়ে কি করবেন?
পরে বলছি তুমি যেগুলো পারো নিয়ে যাও।আর ভারি গুলো নিতে হবে না ঐগুলা আমিই নিতে পারবো।
সমস্যা নেই তো আমি একটা একটা করে নিতে পারবো।
চুপচাপ যা বলছি তা৷ করো।আমি থাকতে আমার বউ এসব করে তার শক্তি ক্ষয় করবো এটা আমি হতেই দিবো না। জমায় রাখো অন্য সময় কাজে লাগবে বলেই ইরহান চোখ টিপ মারে।
যুথি রিকশা চালকের দিকে একবার তাইকি তারপর ইরহানের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আস্তে করে অস’ভ্য বলে চলে যায়।
ইরহান সব কিছু নামিয়ে রিকশা চালকদের ভাড়া মিটিয়ে সব এক এক করে ঘরে নেয়। টিন গুলো দরজার সামনে রাখে।
এবার বলুনতো এই টিন দিয়ে কি করবেন?
কলপাড়ের চারপাশে বেড়া দিবো।টয়লেট টা ও বেশ পুরোনো টিন গুলো বদলাবো।
এতোদিকে আপনার ন’জর?
তো থাকবেনা।আমার রানীর সুবিধা অসুবিধা সবই তো দেখতে হবে।
আমি আপনাকে যত দেখি ততো মুগ্ধ হই জানেন?
আমায় এতো দেখো কেন যুথি রানী? যদি ন’জর লেগে কালো হয়ে যাই?
হবেন না তো।কাজল দেওয়া চোখ দিয়ে দেখি।আর নিজের জিনিসের উপর কি কেউ নিজে ন’জর দেয়?
এসব তো পরেও করতে পারতেন।এখন টাকা গুলো নষ্ট করেছেন শুধু শুধু।
বো’কা মেয়ে এটাই সবচেয়ে আগে জরুরি।
আমার বউ আমার ঘরের সম্মান। তার ভালো মন্দ তো আমাকেই দেখতে হবে নাকি?
#চলবে,,,,,,,,
#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৪
#Jhorna_Islam
ইরহান নিত্য প্রয়োজনীয় সংসারের জন্য যা যা লাগে বাজার থেকে সবই এনেছে।যুথি সব ঠিক ঠাক করে ঘরে গুছিয়ে রাখছে।
চাল,ডাল,তেল,লবন,মরিচ, হলুূদ আরো নানান জিনিস। রান্না করার জন্য লা’কড়িটাও এনেছে। এসব আনতে গিয়ে মনে হয় হাতে যতো টাকা ছিলো তার বেশির ভাগ ই খরচ হয়ে গেছে।
সবকিছু সুন্দর করে গোছগাছ করে রেখে তারপর দুপুর ও রাতের খাবার রান্না করার ব্যবস্থা করে যুথি।
মাটির চুলায় ইরহানের কিনে আনা লা’কড়ি দিয়ে প্রথমে ভাত বসায়। তারপর ভাতে জ্বাল দিতে থাকে আর বসে বসে তরকারি কাটতে থাকে।
ইরহান পাশেই নতুন কিনে আনা টিন দিয়ে সুন্দর করে কল পাড়ের সাইড ও টয়লেটের চারপাশে সুন্দর করে বেড়া লাগিয়ে দিচ্ছে। এসব কাজ ইরহানের জানা আছে সেজন্য আর লোক লাগেনি এসব করার জন্য। ইরহান নিজেই পারছে করতে।
যুথি রান্না করতে করতে ঠিক করে নিলো আর লা’কড়ি কিনে আনবে না। চারপাশে অনেক গাছ পালা রয়েছে। গাছের নিচে শুকনো পাতা রয়েছে এসব সুন্দর করে রান্না করার জন্য উপযোগী করে নিবে।গাছের ডাল পালা কেটে শুকিয়ে নিবে রান্না করার জন্য। তাতে অনেকটা খরচ বেচে যাবে।
যুথি মাঝে মাঝে রান্না করতে করতে ইরহানের দিকে তাকাচ্ছে। ইরহান ও কাজ করতে করতে যুথির দিকে তাকায়। মাঝে মাঝে দুইজনের ই চোখাচোখি হয়ে যায়। বিনিময়ে একে অপরকে হাসি উপহার দিতে ভুলে না।
প্রায় অনেক সময় পর যুথির রান্না শেষ হয়।সবকিছু গোছগাছ করে ঘরে নিয়ে রাখে।কলপাড় থেকে জগ ভরে পানি নিয়ে রাখে।
ইরহানের কাজ ও বেশি বাকি নেই। যুথি সব ঠিক করে রেখে ইরহান কে এসে ডাক দেয় আগে খেয়ে নিতে তারপর অন্য সব কাজ।
এই খেতে আসুন।রান্না শেষ সব গুছিয়ে রেখে এসেছি।
আরেকটু কাজ বাকি আছে যুথি শেষ করে নেই তারপর খাবো।
পরে করবেন রাখেন কাজ।আগে খেয়ে নিন সেই কখন খেয়েছেন।এসেই কাজে লেগে পরেছেন।রাখুন এসব এখন।
— তোমার খিদে পেলে তুমি খাও যুথি রানী।আমাকে একটু কাজ টা শেষ করে আসতে দাও।
— চুপচাপ খেতে আসেন বলছি।আর আপনাকে ছাড়া আমি মোটেও খাবো না। শাক,পাতা- মাছ,মাংস সে যাই খাই না কেনো দুইজনে এক সাথে খাবো।
— তাহলে একটু অপেক্ষা করো আসতেছি।
— কোনো অপেক্ষা করতে পারবো না।এখন আসতে বলতেছি আপনাকে।
— ঠিক আছে যুথি রানী আসছি।তুমি গিয়ে বাড়ো।
যুথি মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢুকে যায়। ইরহান কাজ রেখে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকে। যুথি একমনে খাবার সাজাচ্ছে। কাজ করার সময় যুথির ওড়না টা কোমড়ে গুজে নিলেও এখন তা নাই।স্বাভাবিক ভাবেই গলায় সুন্দর ভাবে রাখা।এখন অবশ্য মাথায় ঘুমটা নেই। পিছনের দুই পাশ দিয়ে ঝুলে আছে ওড়না টা। ইরহান গিয়ে ওড়নার এক পাশ হাতে নিয়ে নেয় মুখ মোছার জন্য। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। যুথি মাথা ঘুরিয়ে ইরহানের দিকে তাকায়। তারপর নিজেই সুন্দর করে ইরহানের মুখ মোছিয়ে দেওয়া।
ঘরের মেঝেতে একটা পাটি বিছিয়ে ইরহান কে ইশারা করে বসার জন্য। ইরহান ও বসে পরে। যুথি যত্ন করে ইরহানের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। তারপর নিজেও ইরহানের পাশে বসে পরে খাবার খাওয়ার জন্য।
দুইজন পাশাপাশি বসে খাবার খাচ্ছে। ইরহান আজ ইলিশ মাছ এনেছে।যুথি সেটা খুব সুন্দর করে রান্না করেছে। ইরহান মাছের কাটা বেছে খেতে পারে না। তার কাছে বিরক্ত লাগে তাই শুধু তরকারি নিয়েছে মাছ নেয়নি।
যুথি ইরহানের দিকে একবার তো ইরহানের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে। ঐদিন ও যখন মাছের লেজ দিয়েছিলো ইরহান খায়নি।যুথি খাইয়ে দিয়েছিলো বেছে। যুথির আর বুঝতে বাকি নেই লোকটা এখন মাছ বেছে খেতে পছন্দ করে না। তাও বোঝার জন্য বলল,, কি হলো আপনি মাছ নিচ্ছেন না কেনো?
খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি খাও।
যুথি বাটি থেকে আরেকটা মাছের টুকরো নিজের প্লেটে তুলে নেয়। তারপর মাছ বেছে বেছে ইরহানের প্লেটে দিতে থাকে ।
ইরহান যুথির কাজে অবাক হয়। তারপর বলে, তুমি মাছ বাছতে বাছতে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তো খাবে কখন?
কিছুই হবে না এতো সময় ও লাগবে না। আপনি খান চুপচাপ।
নিজের ভালো মন্দ সুবিধা,অসুবিধা আমি যেমন আপনাকে বলবো।আপনি ও আমায় বলতে শিখুন। আমরা একে অপরের পরিপূরক।
জীবনে যতো বিপদ আপদ,সুখ-দুঃখ আছে সব একসাথে থেকে উপভোগ করবো ও সামলাবো।
এই যে আপনি বললেন আমাকে খেয়ে নিতে আপনি বাড়িতে থাকা সত্যেও এটা কখনো বলবেন না।কাজে বাইরে থাকলে অন্য হিসাব। কিন্তু বাড়িতে থাকলে সব সময় এক সাথে খাবার খাবো। কি খাবার সেটা বড় কথা না।
একসাথে খাবার খেলে,,,পান্তা ভাত আর লবন মরিচ ও মাছ,মাংসের চেয়ে সুস্বাদু মনে হবে। আমি আমার স্বামীর পাশে বসে দুমুঠো ভাত লবন দিয়ে খেতে পারলেও অনেক খুশি।
ইরহান খেতে খেতে যুথির দিকে অবাক চোখে তাকায়। তার বউটা কি সুন্দর কথা বলল।
— তুমি জানো যুথি আমি কতো ভাগ্যবান?
— যুথি প্রশ্নাত্তক দৃষ্টিতে তাকায় ইরহানের দিকে।
— ইরহান নিজের হাতের ভাতের লোকমা যুথির মুখে দিতে দিতে বলে,,,আল্লাহ আমাকে তোমার মতো বউ দিয়েছে। আমি জানি না আমি কি ভালো কাজ করেছিলাম যার জন্য তোমাকে পেয়েছি।
ইরহান আর যুথিকে আলাদা প্লেটে খাবার খেতে দিলই না।যুথির প্লেটের খাবার ও নিজের প্লেটে নিয়ে নেয়।তারপর যুথি কেও খাইয়ে দেয় নিজেও খায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে যুথি সব ঠিক ঠাক করে রাখে।আর ইরহান একটু বিশ্রাম নিয়ে বাকি কাজ টুকু করে ফেলে।
সন্ধায় যুথি ঘরে বসে বসে বকুল ফুলের মালা গাঁথথে থাকে।বিকেলে কুড়িয়ে এনেছে। ইরহান একটু বাইরে গেছে।
মালা গাঁথা শেষ হলে,, টিনের দেওয়ালে রাখা ছোট্ট একটা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর চুল গুলো খোঁপা করে চুলে ফুলের মালাটা বাঁধার চেষ্টা করে।
অনেক বার চেষ্টা করার পর ও লাগাতে পারে না। বরং পিছনে হাত নিয়ে লাগানোর চেষ্টা করায় হাত ধরে যায়।মালাটা পরে যেতে নেয়।
ঠিক তখনই যুথির হাত থেকে কেউ মালা টা নিয়ে নেয়। যুথি ছোট্ট আয়নায় পিছনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। এযে আর কেউ না তার বোকা পুরুষ।
ইরহান যত্ন করে যুথির খোপায় মালাটা পরিয়ে দেয়।
——————————–
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একসাথে দু’জনে। এখন ও ইরহান যুথিকে খাইয়ে দিয়েছে।
বিছানা গুছিয়ে শুতে যাবে,,,এমন সময় ইরহান বলে উঠে,
“যুথি রানী চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।সুন্দর জোছনা উঠেছে। ”
যুথি ইরহানের কথায় সায় জানায়। ঘরে তালা মেরে দুইজন ই জোছনা বিলাস করতে বেরিয়ে পরে।
রাতে তেমন কোনো মানুষ নেই।মাঝে মাঝে কয়েকজন লোকের চলাচল।
যুথি আর ইরহান হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে। জোছনার আলোয় চারদিক আলোকিত। কি মনোরম শান্ত পরিবেশ।
এতোসময় হাত ধরে হাটলেও এখন যুথি দুই হাত দিয়ে ইরহানের হাতটা জড়িয়ে ধরে ইরহানের কাঁধের কাছে মাথা ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছে।
ইরহান কতো শতো গল্প করছে।মাঝে মাঝে যুথিও বলছে।
নিজের একজন মানুষ দরকার যার কাঁধে মাথা রেখে হাতে হাত ধরে কতো শতো পথ পাড়ি দেওয়া যায় ক্লান্তি এসে গ্রা’স করতে পারে না। পথে শতো কাটা থাকলেও দুইজন মিলে সে পথ অতিক্রম করা যায়। মানুষ কখনোই একা বাস করতে পারে না।তার একটা নিজস্ব মানুষ দরকার।যে সুখে দুঃখে সব সময় ছায়ার মতো পাশে থাকবে।বিপদে ভরসা দিবে।
এখন প্রায় অনেক রাত।দোকান পাট সবই বন্ধ। দুইজন গল্প করতে করতে অনেক টা দূরে চলে আসে। সামনে একটা টং দোকান দেখতে পায়।দোকান টা এখনো খোলা।দুইজন বৃদ্ধ বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
ইরহান যুথি কে বলে যুথি রানী চলো চা খেয়ে আসি।
এখন অনেক রাত হয়ে গেছে চলেন বাড়ি চলে যাই।চা খেতে হবে না।
তোমার সবকিছু তে শুধু না।চলো দেখবে মজাই আলাদা।
তারপর ইরহান দোকানি কে বলে চাচা দুই কাপ চা দিন তো।দোকানি এক পলক ইরহানের দিকে তাকিয়ে বসতে বলে চা বানাতে থাকে।
চা বানাতে বানাতে ঐ বৃদ্ধ লোক দুটো চলে গেছে। এখন শুধু ইরহান আর যুথি। ইরহানের হাতে লোকটা চায়ের কাপ দিতে দিতে বলে,,,, এতো বছর আমি দোকান চালাই কখনো কাউকে দেখি নাই তার বউ কে নিয়ে এসে চা খেতে।
আপনাদের দুইজন কে দেখে চোখটা জুড়িয়ে গেলো।দোয়া করি অনেক অনেক সুখি হোন।
ইরহান মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানায়।তারপর কিছু সময় দুইজন গল্প করতে করতে চা খায়। দোকানি কে চায়ের দাম দিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয়।
#চলবে,,,,,,,