খড়কুটোর বাসা পর্ব-১১+১২

0
189

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam

মাঝে মধ্যে কান্না করতে হয়। নিজের বোকামির জন্য। অন্যের জন্য না। নিজের মানুষ চিনতে না পারা ভুলের জন্য। নিজের নরম মনের জন্য। কান্না করলে হালকা লাগে। শান্তি লাগে,তাই মাঝেমধ্যে ই কান্না করা উচিত!

ইরহান যতই নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুক না কেনো সে আসলে ভিতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। সেটা সে বাহিরে প্রকাশ করতে পারছে না।

রাতে দুইজনের একজনের ও খাওয়া হয়নি। চুপচাপ শুয়ে পরেছিলো।ইরহান সারারাত ভালো করে ঘুমোতে পারেনি।ছটফট করেছে সেটা যুথির ন’জর এড়ায়নি। সে সব টা লক্ষ করেছে।

ইরহানের চোখের কোণের পানিও যুথির ন’জর এড়ায়নি। সে দেখেছে।কিন্তু এগিয়ে যায় নি ইরহানের কাছে।মাঝে মাঝে মন খারাপ কষ্ট পাওয়া লোকটাকে একা ছেড়ে দিতে হয়।যেনো সে নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজের কষ্ট টা কে সামলে নিতে পারে।

কিছু মুহূর্ত আছে যেই সময় নিজের প্রিয় মানুষ টা স্বান্তনা দিলেও ভালো লাগে না। যুথি ইরহান কে আটকায় নি।নিজের মতো করে কিছু সময় থাকুক।যুথির ও কান্না পাচ্ছে। কিন্তু তার কাঁদা যাবে না।লোকটা নয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবে।

যুথি চুপচাপ ঘুমের ভা’ন ধরে পরে ছিলো।ইরহান কে বুঝতে দেয়নি যে তার কষ্টে যুথির ও ঘুম আসছে না।

অনেক সময় চুপচাপ শুয়ে নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতেই যুথি একসময় ঘুমিয়ে যায়। তখন ভোর হতে হয়তো দুই এক ঘন্টা বাকি।

জানালার ফাঁক গলিয়ে আসা মিষ্টি রোদের আলোয় ঘুম ভেঙে যায় যুথির।চোখ পিটপিট করে তাকায়।আলোটা সরাসরি তার মুখে এসে পরছে। ভালো করে ঘুম হয়নি।

পাশ ফিরে ইরহানের দিকে তাকিয়ে দেখে ইরহান ঘুমুচেছ। উল্টো দিকে ফিরে শোয়ায় রোদের আলো থেকে বেঁচে গেছে।

যুথি বিছানা থেকে নেমে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপর ঘরের পাশের কলপাড় আছে একটা ঐখান থেকেই হাতমুখ ধুয়ে নেয়।

অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে সে। কিছু টা দূরেই পুকুর পাড় রয়েছে দেখা যাচ্ছে। ঘরের বাম সাইডে চোখ যেতেই দেখতে পেলো বকুল গাছ। বেশ বড় গাছটা।ফুল পরে আছে নিচে। কাল ইরহান এখান থেকে ফুল নিয়েছে বুঝতে আর বাকি নেই।যুথি গাছের কাছে এগিয়ে গিয়ে ফুল গুলো কুড়াতে থাকে আর ওড়নায় নিতে থাকে। এগুলো দিয়ে সে মালা গাঁথবে। প্রায় অনেক গুলো ফুল নিয়ে উঠে ঘরের দিকে হাঁটা দেয়।

ঘরে এসে দেখতে পায় ইরহান উঠে গেছে বসে বসে চোখ কচলাচ্ছে। হাতে যুথির মোবাইল।

–কই গিয়েছিলে যুথি?

— ঐতো বাইরে বের হয়ে এই দিকটা একটু দেখতেছিলাম।

— ওহ! নাও তোমার মোবাইল তোমার দাদি সেই কখন থেকে কল দিচ্ছে।

— দাদি এতো সকাল সকাল?

— হুম,,, জিজ্ঞেস করেছিলাম শরীর ঠিক আছে কি না বলল সব ঠিক আছে। তবে তোমার সাথে যেনো কি জরুরি কথা আছে বলছে তোমাকে কল দিতে।

— দেখি, বলেই যুথি ইরহানের হাত থেকে ফোন নিয়ে কল লাগায় তার দাদিকে।

তুমি কথা বলো আমি কলপাড় থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসছি।
যুথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় ইরহান উঠে চলে যায়।

ঐপাশ থেকে কল রিসিভ করে যুথির দাদি যুথিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠে,,,, ওওও বু কেমন আছস তুই?

ভালা আছস? এই বুড়িরে তো ভুইলাই গেলি।

— ভুলি নাই দাদি।তোমারে কি ভুলা যায় নাকি?
কেমন আছো তুমি দাদি?

— আমি বহুত ভালা আছি বু।শোন যেই কারণে ফোন দিছি।

— হুম বলো।

— নাত জামাইরে নিয়া এই বাড়িতে তারাতাড়ি আয় দেখি।এখনই বের হ। এইখানে আইসা সকালের নাস্তা করবি।

— এতো সকাল সকাল যাইতে বলতেছো।কিছু কি হইছে বুড়ি?

— আসলেই দেখতে পাবি।তুই নাত জামাইরে নিয়া আয়।খুব জরুরি কাম আছে। খাওয়া দাওয়া করে সময় নষ্ট করিস না। এইখানে আইসা খাবি।

আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি।

দেখছি না। আসতেই হবে।

আচ্ছা।

যুথি কল কেটে ভাবতে লাগলো কি এমন হলো যে দাদি এতো তারা দিচ্ছে যাওয়ার জন্য।

তারপর চুপচাপ বিছানায় বসে ইরহানের আসার অপেক্ষা করতে লাগে।

কিছু সময়ের মাঝেই ইরহান ঘরে ঢুকে। হাতে তার একটা পলিথিনের ব্যাগ।

ইরহান ব্যাগটা যুথির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,,, বের করো এতে কিছু খাবার আছে। কাল থেকে দুইজনেরই কিছু খাওয়া হয়নি।খেয়ে তারপর বাজারে যাবো।তুমি একটু লিস্ট করে দিওতো কি কি লাগবে।

যুথি মাথা নাড়িয়ে খাবার গুলো বের করে,, পরোটা,ভাজি, বিস্কুট,, কলা রয়েছে।

তারপর দুইজন এক সাথে খেতে বসে। ইরহান পরোটা ছিরে মুখে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে,, তোমার দাদি কি বললো?

জরুরি কিছু নাকি?

কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে জরুরি কিছুই।

কিছু হয়েছে?

জানিনা।বলছে আপনাকে নিয়ে এখনই ঐ বাড়ি তে যেতে। ঐখানে গিয়েই যেনো খাবার খাই।যেনো দেরি না করি।

কি হয়েছে বলোতো? এসব কিছু জানতে পেরেছে নাকি?

মনে হয় না। এসব কে বলবে? অন্য কিছু একটা বিষয় আছে। আপনি যাবেন?

আমার তো মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছুর জন্যই এতো জরুরি তলব। খেয়ে তৈরি হয়ে নাও।গিয়ে দেখি কি হয়েছে। উনি বু’ড়ো মানুষ যদি কোনো অসুবিধা তে পরে।ঐখান থেকে আসার সময় না হয় আমাদের যা যা দরকার সব বাজার সদাই করে নিয়ে আসবো।

আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর খেয়ে দেয়ে দুইজন ই ঘরে তালা মেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় যুথিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

——————————————

সকালে ঘুম থেকে উঠে তাছলিমা বানু রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে কাল যে সেই শুয়েছে সেই শুয়ায়ই রাত পার হয়ে গেছে। খাওয়া আর হয়নি।কেউ তাকে ডাকেও নি খাওয়ার জন্য।

রান্না ঘরে ঢাকনা দিয়ে রাখা পাতিল গুলো খুলে চোখ মুখ কোচকে ফেলেন। কালকের রান্না করা বা’ষি খাবার ছাড়া কিছুই নেই।

তারমানে এতো বেলা হয়ে গেছে একটাও উঠে নাই।এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে। রা’গে শরীর কাঁপতে থাকে তাছলিমা বানুর।একেই তো খিদে একদম সহ্য হয় না উনার।পেটে খিদে থাকলে এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে থাকে।

ঐ জ’মিদারের বেটিরা তোদের কি মাইক এনে ঘুম থেকে উঠার জন্য বলতে হবে?

বাড়ির রান্না কি তোর মায়েরা এসে করে দিয়ে যাবে? তোদের কে আজাইরা খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে আনছি?

এখনো বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বালাস নি কেউ।আমার ছেলেদের বোকা পেয়ে ঘারে বসে বসে খাচ্ছিস।

প্রায় পনেরো মিনিটের মতো বকে হাঁপিয়ে ওঠে। বসার রুমে গিয়ে বসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।

এরমধ্যে দিনা,আর লিমা তারাহুরো করে বেরিয়ে আসে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে মাত্র উঠেই দৌড়ে বেরিয়ে এসেছে।

ঘুম ভাঙলো নবাবের বেটিদের?

আম্মা ভুল হয়ে গেছে। আসলে কাল একটু দেরিতে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই।

ঠিক সময় আমার খাবার আমার সামনে চাই বুঝেছো? নয়তো ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।বাপের বাড়ি গিয়ে জমিদারি চলা চইলো।

দুইজন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে।

যেতে যেতে দিনা বলে,,, এসব আর ভালো লাগে না ভাবি।

— আমার কি ভালো লাগে?

— ইচ্ছে করে বু’ড়ির চুল গুলো টেনে ছিড়ে দেই।

— লিমার কথা শুনে দিনা হেসে দেয়।

— হাসিস না। শুধু সময়ের অপেক্ষাতে আছি।একবার সব কিছু ঠিক হক পরে দেখে নিবো।সব মনে রাখছি।

তারপর দুই জা মিলে রান্না করতে লেগে পরে।

—————————————-

যুথি আর ইরহান খুব তারাতাড়ি ই এসে পরে যুথিদের বাড়ি।গাড়ি নিয়ে এসেছে। যুথি অবশ্য চায় নি গাড়ি নিতে ইরহান যুথির কথা শুনেনি।সাথে আরো ফল আর মিষ্টি নিয়ে নিয়েছে।যুথি বলেছে এতো লাগবে না।ইরহান একটা কথা ও শুনেনি।বলেছে তুমি চুপ থাকো।এই প্রথম বার নিজের শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি খালি হাতে যাবো কেন?

যুথি আর কিছু বলেনি।যা করার করুক।

যুথি ঘরের কাছে আসতেই দেখে তার দাদি বের হয়ে আসছে। যুথি কে দেখেই একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,,, ও বু তুই আইছস?

হুম।

আরে নাত জামাই কেমন আছো?

ইরহান সালাম দিয়ে বলে জ্বি দাদি ভালো।আপনি কেমন আছেন?

এইতো ভালো এসো এসো ভিতরে এসো। যুথি আর ইরহান এক সাথে ভিতরে ঢুকে।

ভিতরে ঢুকে দুইজন ই বেশ অবাক হয়।

যুথি তার দাদিকে বলে উঠে,,, দাদি এসব কি?

#চলবে,,,,,,,

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam

রুমের ভিতর আশেপাশের কয়েকজন মানুষ রয়েছে। সাথে একটা হুজুর ও রয়েছে।

যুথি সবার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। তারপর দাদির দিকে তাকিয়ে কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দাদি এসব কি?

উনারা সকলে এখানে যে হঠাৎ? তুমি তো ভেঙে কিছুই বলছো না কিছু কি হয়েছে?

তোকে সব পরে বলছি।তুই আগে নাত জামাইরে নিয়া তোর রুমে একটু বসা। ইরহান যুথির পিছনে দাড়িয়ে আছে। যুথি ইরহান কে বলে,,আসুন আমার সাথে একটু বসে জিরিয়ে নিন। ইরহান ও যুথির পিছনে পিছনে যুথির ছোট্ট রুমের ভিতর গিয়ে বসে পরে।

যুথি নিজের বোরখা টা খুলে রেখে ইরহান কে একটু বসতে বলে নিজের দাদির কাছে চলে যায় জানার জন্য কি হবে।

দাদি এই দাদি কি করবে তুমি বলোতে? আর এতো মানুষ জন কেনো ঘরে?

আমায় তো ঠিক করে বলতেছো ও না হয়েছে টা কি।

–তোর বিয়ে দিবো আবার!

— মানে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? কি বলছো এগুলো তুমি। পা’গলের মতো একটা বললেই হলো? আমার বিয়ে হয়ে গেছে আবার কিসের বিয়ে?

— তো বিয়ে হয়ে গেছে দেখে কি আর করা যাবে না?

— শুনো দাদি মজা করে থাকলে এসব মজা বাদ দাও।আমার এসব একদম ভালো লাগছে না। তোমার নাত জামাই কিন্তু এই বাড়িতে ভুলে যেও না।আমার কিন্তু রা’গ উঠতেছে।

— এতো রে’গে যাচ্ছিস কেন বু? আগে আমার কথা শোন।

— যুথি ইতিমধ্যে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে রা’গ প্রায় উঠে গেছে তার দাদির কথা শুনে। নিজেকে শান্ত করে বলে,, ঠিক আছে বলো শুনছি।

— আমি কি অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলছি নাকি তোরে? আমার নাত জামাইরে ই আবার বিয়ে করবি এখন।

— এসবের মানে কি দাদি?

— আসলে তোদের তো ফোনে বিয়ে হয়েছে। সামনাসামনি হয়নি।আমার যেনো মনটা কেমন করছে বিয়ে টা নিয়ে। কয়েকজন বলতেছে ঐ ভাবে বিয়ে হলেও আবার পরানো লাগে। তাই আমি চাইনা আমার বু এর সংসারের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু বলুক।

কে বলছে এসব কথা তোমায় দাদি? এসবের কোনো মানে হয়?

এটাতো বড় কোনো ব্যাপার না বু।তোদের তো আগে বিয়ে হয়েছেই।এখন করে নিলে কিছু হবে না। কয়েক মিনিটের ব্যাপার শুধু। রাজি হয়ে যা বু।

কিন্তু দাদি,,,, উনি কি ভাববেন বলেন তো? কেমন কেমন না বিষয় টা?

তুই একটু নাত জামাইকে বল। নিশ্চয় রাজি হবে কিছু বলবে না।

যুথির দাদির কথাই ঠিক হলো।ইরহান কোনো অসম্মতি জানায় নি। যুথির মুখে শুনে রাজি হয়ে গেছে।

বলেছে দাদির যা মনে হয় করুক আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। মুরুব্বি মানুষ ভেবে চিন্তেই বলেছে।

যুথি ইরহানের কথায় অবাক হয়। অন্য কেউ হলে এতোক্ষন রাগারাগি করে চলে যেতো।শ্বশুর বাড়ি প্রথম দিন এলো তাও আপ্যায়ন না করে এসব বলছে।

সকলের সামনে ইরহান আর যুথি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।সকলেই বিয়ে পরিয়ে বিদায় নেয়।

যুথির দাদি এবার নাত জামাইর আপ্যায়ন করতে লেগে পরে। গরিব হতে পারে মনটা তো আর গরিব না। নিজের নাত জামাইকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করে।

ইরহান শত বলেও যুথির দাদি কে থামাতে পারে নি। কিছু সময় পর পর এটা ওটা এনে দিচ্ছে।

যুথি ইরহানের জন্য নিজের হাতে রান্না করে। যুথির দাদি রান্না করে নি যদি খারাপ হয়।নাত জামাই তাহলে খেতে পারবে না।

যুথি বলেছে রান্না করতে. দাদি বলে,,চুপচাপ তুই রান্না কর।আমার চান্দের লাহান নাত জামাই খাইবো।আমার এসব রান্না যদি না খেতে পারে। তখনতো উপোস থাকতে হবে। আমার বয়স হয়েছে এখনতো আর আমি আগের মতো কিছু রান্না করতে পারি না।

———————————-
বিকেলে তাছলিমা বানু উঠোনে মোড়া পেতে বসেছিলো।
এমন সময় পাশের বাড়ির এক মহিলা আসে।৷ নাম আছমা।তাছলিমা বানুর সাথে তার খুবই ভাব গলায় গলায় সম্পর্ক।

কিন্তু একজন আরেকজন কে এটা ওটা নিয়ে নিচু করতে ছাড়ে না।দুই জনের কেউই এই বিষয়ে কম যায় না। এমন সম্পর্ক আজ কাল দেখা যায় না।এতো খোঁচাখোঁচি করার পর ও আবার দুইজনের মিল।

আজ খালি হাতে আসেনি।হাতে একটা মিষ্টির পেকেট। তারাতাড়ি করে এসেই তাছলিমা বানুর পাশে রাখা আরেকটা মোড়ায় বসে পরে। তারপর বলে উঠে,,, ও ভাবি গো।

কেমন আছেন ভাবি? তাছলিমা বানু জিজ্ঞেস করে আছমা কে।

— কি আর বলবো ভাবি আপনারে,,আমার মতো সুখি কেউ আছেনি? এমনিতেই আমি অনেক সুখী।এখন আরো সুখী হয়ে গেলাম।

— কি নিয়ে এতো খুশি ভাবি?

— আমি দাদি হতে চলেছি গো ভাবি।তারপর তাছলিমা বানুর দিকে মিষ্টির পেকেট টা এগিয়ে দিয়ে বলে,, এই যে এই নেন আপনার জন্য মিষ্টি আনছি।আপনি তো আমার কতো আপন! তাই আপনার জন্যই প্রথম মিষ্টি নিয়ে আসলাম।আর সবার আগে খবর টা আপনাকেই জানাতে আসলাম।

— ওহ ভালো তো ভাবি।

— ভালো তো হতেই হবে।আজকাল যা দিন পরলো এখন ছেলে মেয়েরা বাচ্চা নিতেই চায় না।পরে কতো সমস্যা হয় জানেন ভাবি? মাঝে মাঝে তো হয়ই না। তাইতো বিয়ের এক বছর না ঘুরতেই আমার বউমারে বলে দিছি সুখবর যেনো পাই।

আমার বউ মা আবার আমার কথায় উঠে বসে। দেখলেন কেমন করে আমার কথার মান রাখলো?

আপনার বড় ছেলে তো অনেক দিন হলো বিয়ে করছে ভাবি।আপনার ছোটো ছেলেও আমার ছেলের আগে বিয়ে করেছে।এখনো তো আপনাকে একটা সুখবর দিতে পারলো না।

কোনো সমস্যা আছেনি ভাবি?

তাছলিমা বানু আছমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ফুঁসছে। ঠিক জানতো এই কথাটা শুনাবে তাকে। কিন্তু কথাটা তো ঠিকই বলছে। আজকেই দুই ছেলের বউ কে কড়া করে কয়েকটা কথা শুনাতে হবে। এদের জন্য সে কেন কথা শুনবে?

এসব ভাবতে ভাবতেই তাছলিমা বানু ঘরের দিকে হাটা দেয় আছমা কে বিদায় দিয়ে।

—————————————

ইরহান বিকেলে যুথি কে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলো যুথির দাদি দেয়নি।যুথিও চায় থেকে যেতে।নিজের বাপের বাড়ি আসলে প্রতিটা মেয়েরই মন চায় থাকতে।আবার কবে না কবে আসতে পারে।যদিও যুথি গেছে মাত্র একদিন হয়েছে। তাও এটাই এক বছর মনে হচ্ছে যুথির কাছে।

ইরহান যখন থেকে যেতে রাজি না হয় তখন যুথি ইরহানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,,, এইই বোকা পুরুষ থেকে যাইনা।শুধু তো একটা দিন।এমন করেন কেন?

ইরহান দুষ্টু হেসে যুথির কোমড় ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর কানের পিছনে চুল গুলো গুজে দিতে দিতে বলে উঠে,, তুমি এখনো বুঝনি কেনো চলে যেতে চাচ্ছি?

— না তো কেন? বাজার না হয় কাল দুইজনে একসাথে করে নিয়ে বাড়িতে ফিরবো সমস্যা নেই তো।

— আমি তো তোমায় অনেক চা’লাক ভেবে ছিলাম যুথি।তুমি আমাকে বোকা বলো? আসল বোকা তো তুমি নিজে।

“বোকা পুরুষের বোকা বউ।”

মোটেও আমি বোকা নই।

ইশশ তুমি বললেই হলো?

হুম।

এতোদিন হয়ে গেলো এখনো বাসর টাই করা হলো না। দ্বিতীয় বারের মতো আবার বিয়ে করলাম।এই সুযোগ টা কে হাত ছাড়া করে? আমিতো একদম হাত ছাড়া করছি না।

যুথি ইরহানের কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। ইরহানের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না।

ইরহান যুথির লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, হায় হায় আমার বা’ঘিনী বউ দেখি লজ্জা ও পায়।

ধ্যা’ত ছাড়েন না।

কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

বোকা পুরুষ কি শুরু করলেন বলেন তো?

আমার বউকে দেখাচ্ছি,,,,,

“তার বোকা পুরুষ শুধু ধো’কা খেতে না ভালোবাসতে ও জানে!”

#চলবে,,,,,,,