গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-২২+২৩

0
3122

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-২২|

রীতি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাদিব নামটা শুনে যেনো হুট করেই পাথরে পরিণত হয়েছে।হৃদয়ে উথাল-পাতাল ঢেউ খেলে যাচ্ছে।
সাদিব রীতিকে চুপ করে থাকতে দেখে রীতির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।রীতি তখনও চুপ করেই আছে।সাদিব পকেট থেকে নিজের মুঠোফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট অন করলো।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হটাৎ চোখে তীক্ষ্ণ আলো পড়তেই রীতি তেতিয়ে উঠে।
রীতি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।সাদিব রীতির বিহেভিয়ারে এটুকু নিশ্চিত হয় যে রীতি চিতকার চেচামেচি কিংবা কোনো প্রকার সিনক্রিয়েট করবেনা।
সাদিব তাই রীতির হাত ছেড়ে দেয়।রীতি নিজেকে সাদিবের হাতের বন্ধী থেকে মুখ পেয়ে নিজেকে সংযত করতে পারছেনা।এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।কেনো জানি মনে হচ্ছে এখান থেকে ছুটে পালাতে হবে।
সাদিব ওর সাথে এমন অদ্ভুত আচরণ কেনো করছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।সাদিব কি চাইছে,কেনো ওকে এই অন্ধকার ঘরে টেনে নিয়ে এসেছে এসবের কোনো উত্তর খোজে পাচ্ছেনা।
সাদিব রীতিকে ছেড়ে দেয়ালের দিকে ফ্ল্যাশলাইট তাক করে সুইচবোর্ড খোজছে।রীতি সাদিবের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে কোনো কিছু না ভেবেই দরজার দিকে দ্রুত পা বাড়ায় আর তখনই সাদিব রীতির হাত ধরে ফেলে।
সাদিব রীতির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,
—–“পালাচ্ছো কেনো?আমি কি তোমাকে কিডন্যাপ করেছি?চুপ করে দাড়াও।সুইচের বোর্ড খোজতে দেও।লাইট অন করবো।”

রীতি কাপা কাপা গলায় বললো,
—–“আমি এখান থেকে যেতে চাই।আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”

সাদিব রীতির দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে রীতির হাত চেপে ধরে রাখা অবস্থায় দেয়ালের দিকে ফ্ল্যাশলাইট তাক করলো আরো একবার।
সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে রীতির হাত ধরা অবস্থায় লাইট অন করলো।

লাইট অন করতেই রীতি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে।
মেঝের মাঝখানে একটা ছোট্ট টেবিল।তার উপর গোলাপের পাপড়ি জড়ানো একটা কেক।আশেপাশে ছোট ছোট বেলুন।
আজ রীতির ২১তম জন্মদিন।সাদিব রীতিকে বার্থডে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এতো সব করেছে।
রীতি তখনও কেকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

সাদিব পেছনে থেকে বললো,
—-“কেমন হয়েছে বলো তো?”

রীতি মুচকি হেসে আমতা আমতা করে বললো,
—–“এসব কি?”

—-“এমা তুমি কেক,মোম,গোলাপ,বেলুন চিনোনা?”

রীতি ঘুরে সাদিবের দিকে তাকালো।সাদিব চোখ পিটপিট করে রীতির দিকে তাকাচ্ছে।
রীতি রাগী ফেস করে দাতে দাত চেপে বললো,
—-“চিনি খুব ভালো করে চিনি।বাট এসব এভাবে এখানে কেনো?”

সাদিব বললো,
—-“কেনো আবার?তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।”

—-“সারপ্রাইজ? এটা সারপ্রাইজ? এটাকে ভয় দেখানো বলে।হাত ধরে হেচকা টান মেরে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে আসাকে সারপ্রাইজ বলে না।আপনি জানেন আমি কত ভয় পেয়েছি?আমি ভেবেছিলাম….। “(কাদো কাদো হয়ে)

সাদিব চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—-“তুমি কি ভেবেছিলে বলো তো?”

রীতি সাদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ভেবেছিলাম….! ”

—-“ভেবেছিলে?”(আগ্রহ নিয়ে)

—-“ভূত!”

সাদিব রীতির কাছ থেকে এমন উত্তর আশা করে নি।রীতি ওকে ভূত ভেবেছে ব্যাপারটা হাস্যকর।
—-“ভূত! তুমি আমাকে ভূত ভেবেছো?লাইক সিরিয়াসলি?”

রীতি সাদিবের কথার উত্তর না দিয়ে বললো,
—-“রাস্তা ছাড়ুন আমি যাবো।”

সাদিব এতক্ষণ সব মেনে নিয়েছে কিন্তু রীতির বারবার চলে যাওয়ার কথা শুনে বিরক্ত বোধ করছে।ওর জন্মদিনের আয়োজন করলো কোথায় একটু ধন্যবাদ জানাবে তা নয়।
—-“তুমি এত যাই যাই করছো কেনো?”

রীতি কাচুমাচু করে বললো,
—-“প্লিজ যেতে দিন।এখানে এভাবে আমাদের কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।আমার বদনাম হবে।”

সাদিব নিশ্চিন্ত মনে বললো,
—-“ডোন্ট ওয়ারি।সাদিব কাচা কাজ করে না।আমি সব ব্যবস্থা করে এসেছি।কেউ আসবেনা।”

রীতি সাদিবের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,
—-“মানে?কি ব্যবস্থা করেছেন?”

—-“আগে কেক কাটো পরে বলবো।”

রীতি কেক কাটবেনা।সাদিবের উপর ওর অনেক অভিমান জমে আছে।সাদিব ওকে সেদিন যথেষ্ট অপমান করেছে।কিন্তু সাদিব কেনো ওকে ওর জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিচ্ছে সেটাই মাথায় ঢুকছেনা।
রীতি অভিমান নিয়ে বললো,
—-“আমি কেক কাটবোনা।ব্যবস্থা করেছেন এর জন্য ধন্যবাদ।আমি যাচ্ছি।”

রীতি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সাদিব রীতির দিকে হাত বাড়ালো।কিন্তু হাত রীতিকে ধরতে সক্ষম হলো না।রীতির চুলে গিয়ে পড়লো।রীতি দু-কদম
আগাতেই রীতির চুলে টান পড়লো।আকস্মিক ভাবে রীতির চুলের হেয়ার রাবার সাদিবের হাতে এসে পড়লো আর রীতির চুলের ঝুটি খোলে গিয়ে চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে পড়লো।সাদিব রীতি দুজনেই আকস্মিক ঘটনায় নির্বাক,হতবাক।
রীতি সাদিবের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালো।সাদিব বাকা হেসে হেয়ার রাবার নিজের বা-হাতে পড়ে নিলো ব্রেসলেট হিসেবে।
রীতির হাত ধরে টেনে কেকের সামনে নিয়ে এলো।
রীতি কি করবে বুঝতে পারছেনা।
—-“দেখুন আমি কিন্তু চিতকার করবো।আমি কেক কাটবোনা।আমি চলে যেতে চাই।যদি যেতে না দিন তবে আমি চিতকার করবো।”

সাদিব আবারো বাকা হেসে রীতিকে বললো,
—-“তাতে কি?আমি তোমার মুখ চেপে ধরবো।”

রীতি রাগে ফেটে যাচ্ছে সাদিবের কথা শুনে।রীতি চিতকার করার জন্য ঠোঁট ফাক করতেই সাদিব রীতির মুখ চেপে ধরে বললো,
—-“এই মেয়ে তুমি দেখছি সত্যি সত্যিই চিতকার করতে শুরু করলে।আমাকে ফাসাবে নাকি?”
রীতি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।আজ সাদিব রীতিকে বারবার টাচ করছে,মুখ চেপে ধরছে।এর আগে সাদিব রীতির ছায়াকেও স্পর্শ করেনি।কিন্তু আজ কি করছে?
রীতির মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—-“এতদিন তোমার অনেক মনমানী সহ্য করেছি আর নয়।আমার কথার অবাধ্য হলে তোমার খবর আছে।এতদিন যা করেছো ভুলে যাও।কেক কাটো।”

রীতি অবাকের পর অবাক হয়ে যাচ্ছে।সাদিব এসব কি বলছে।
সাদিব রীতির দিকে চাকু বাড়িয়ে দিলো কেক কাটার জন্য।রীতি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে ওর হাত থেকে ছুড়িটা নিলো।সাদিব ২১টা মোম জ্বালিয়ে দিলো।
রীতি মোমগুলো সরিয়ে ফেলতে বললো।ও জাস্ট কেক কাটবে।মোমের ফর্মালিটি পূরণ করবেনা।
রীতি কেক কাটতেই সাদিব হা করে বললো,
—-“কেকটা আমার সেই কখন থেকে খেতে ইচ্ছে করছে।একটু দেওনা।”
সাদিবের এহেন কথা শুনে রীতি না চাইতেও হেসে ফেললো।
তারপর সাদিবের মুখের কাছে কেক ধরলো জড়তা নিয়ে।
সাদিব কেক খেয়ে রীতিকেও দিলো।রীতি খেতে না চাইলেও সাদিবের জোরাজোরিতে বাধ্য হলো।

রীতি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতেই সাদিবের কন্ঠেস্বর শুনতে পেলো।রীতি পেছনে ঘুরে থ।সাদিব মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে আছে চোখেমুখে হাজারো আকুতি নিয়ে।
কিসের আকুতি সেটা রীতির বোধগম্য হচ্ছে না।
“রীতি,আমি অদ্ভুৎ কিছু অনুভূতির মাঝে হারিয়ে গেছি।শুধু হারিয়ে নয় অনুভূতির সমুদ্রে ডুবন্ত অবস্থায় আছি।এখন শুধুমাত্র তুমি আমাকে উত্তোলন করতে পারো।
আমি সব গুলিয়ে ফেলছি।কি বলবো সেটা ভেবেচিন্তে এক প্রকার মুখস্থ করে রেখেছিলাম কিন্তু এখন আমি কিছুই মনে করতে পারছিনা।(মাথা চুলকে)
শুধু জানি আমি তোমাকে আমার পাশে চাই।মেঘাচ্ছন্ন কিংবা রৌদ্রময় দিনে সকাল,বিকাল,রাত্রী সবটা জুড়ে থাকতে চাই।ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা – কর্দমাক্ত উঠোনে তোমার সাথে ভিজতে চাই।মাঝরাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে,পুরো পৃথিবী নীরবতায় ছেয়ে যাবে তখন তোমার কোলে মাথা রেখে জ্যোৎস্না বিলাস করতে চাই।তোমার ওই ঝিলের মতো গভীর কাজল কালো চোখের সমুদ্রে হারিয়ে যেতে চাই।তোমার ওই ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির কারণ হতে চাই।এলোমেলো খোলা কালো চুলের ভাজে ভাজে মিশে যেতে চাই।তোমার নাকের ডগায় রাগে লাল হয়ে যাওয়ার কারণ হতে চাই।
গোধূলি বেলায় রক্তিম আকাশের বিশালতায় মিশে ম্লান হয়ে যাওয়া দেখতে চাই তোমার হাতে হাত রেখে।শিশির ভেজা সকালে খালি পায়ে তোমার আঙুলে আঙুল রেখে হাটতে চাই।সকালের সূর্য উঠা দেখে ভালোবাসার আরেকটা নতুন দিনকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।সকাল – সন্ধ্যায়
এক কাপ চায়ে তোমাকে চাই।তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাতে চাই।
পরিশেষে বলতে চাই তোমাকে ভালোবাসতে চাই।”

রীতির চোখ বেয়ে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।সাদিব ওকে প্রপোজ করছে।রীতি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।সবকিছু অবিশ্বাস্য স্বপ্ন মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে দিনে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে।
রীতি কাপা কাপা গলায় বললো,
—–“কি বলছেন আপনি?”

সাদিব উঠে দাড়িয়ে বললো,
—-“আমি ঠিকি বলছি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।যদি জিজ্ঞেস করো কেনো বাসি ডোন্ট নো।বাট বাসি।ভালোবাসায় কোনো কারণ থাকতে হয় কিনা আমার জানা নেই।তবে এটুকু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি আমার বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথার কারণ।প্রথম দেখায় আমি তোমাকে ভালোবেসেছি কিন্তু বুঝতে পারিনি।বাট যখন বুঝতে পেরেছি তোমার কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছি।
যা আমাকে প্রতিনিয়ত আহত করেছে।
তোমার ফোনে বলা কথা….।”

রীতি ফোনের কথা শুনে চমকে মাথা তুলে সাদিবের দিকে তাকায়।সাদিবও থমকে আছে।
—–“ফোন? মানে? আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন?সেই ব্যক্তিটি আপনি?”

সাদিব মাথা নিচু করে বললো,
—-“হু,আমিই তোমাকে ফোন করতাম ভয়েস চেঞ্জ করে।আমিই সে ছিলাম।যাকে তুমি যা-নয় তাই বলেছো।”

রীতি সাদিবের কথা শুনে লজ্জিত হলো।রীতি তো জানতোনা যে সেটা সাদিব ছিলো।রীতি ভেবেছিলো কোনো অভদ্র ছেলে হবে হয়তো।সাদিবের বিষয়টি দু-এক বার মাথায় এলেও ঝেড়ে ফেলেছে।
রীতি লজ্জায় আমতা আমতা করে বললো,
—–“আমি বুঝতে পারিনি সেটা আপনি ছিলেন।আমি ভেবেছিলাম হয়তো অন্যকেউ হবে।”

সাদিব স্মিত হেসে বললো,
—–“রিমনের থেকে তোমার নাম্বার নিয়েছি।এর জন্য ওকে বেশ ঘুষ দিতে হয়েছে।শুধু নাম্বারই না।রিমনের কাছ থেকে তোমার পছন্দ অপছন্দ সবকিছু জেনেছি।তোমার প্রিয় বেলীফুল,প্রিয় রং,তোমার হবি,তোমার পছন্দের কড়া লিকারের চা।সবটাই রিমনের কাছ থেকে জেনেছি।আর বেলী ফুল গাছটা তোমার জন্য লাগিয়েছি।সাধের ঘুম বিসর্জন দিয়ে মালির কাজ করেছি তোমাকে এক নজর দেখার জন্য।”

রীতি সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গার্ডেনে বেলীফুল রীতির জন্য লাগিয়েছে।রিমন যে এতোসব খাবার খেতো সেগুলো সাদিব ঘুষ হিসেবে দিয়েছে ওর সম্পর্কে ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য।
—-“আচ্ছা তাই যদি হবে সেদিন আপনি আমার অগোচরে ওদেরকে আমার সম্পর্কে এসব কথা কেনো বললেন?”

সাদিব বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-“কোন সব কথা?”

রীতি মুখে কাঠিন্য নিয়ে বললো,
—-“আমি চশমা পড়া মেয়ে।আমাকে ভালোবাসা যায়না।আপনার মেয়ের নাকি অভাব নেই।”

সাদিব ভাবতে পারেনি রীতি এসব কথা শুনে নিয়েছে।
—-“রীতি,সবকিছুর একটা কারণ থাকে।আমি এসব বলেছি তারও একটা কারণ আছে।আমার নিজের ভালোবাসা কারো সামনে জাহির করতে সমস্যা নেই।আমি তোমার জন্য এসব করেছি।যাতে কেউ তোমার দিকে আঙুল তুলতে না পারে।আজেবাজে কথা না বলে।আমি তখনো তোমাকে জানাইনি।তাই সিচুয়েশন সামলাতে বলেছি।আর এমন ভাবে বলেছি যাতে ওদের সন্দেহের বিন্দুমাত্র চান্স না থাকে।আর এর জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।”

রীতি আমতা আমতা করছে।সাদিব কি ঠিক বলছে নাকি এর মাঝে কোনো অন্য কারণ আছে।রীতি ভাবছে সাদিবকে জিজ্ঞেস করবে।

এর মধ্যেই হুড়মুড় করে দিয়া আর সাবিহা ঢুকে গেলো।
সাবিহা বললো,
—-“সরি ভাইয়া আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না।তাই চলে এলাম।একি তোমরা তো কেক কেটে ফেলেছো।খেয়েও ফেলেছো।আমি কি ছোট বলে দুধভাত।এতক্ষণ সিড়িতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এর জন্য পাহারা দিয়েছি?”
রীতি চোখের পানি মুছে মুখে হাসি নিয়ে ওদের দিকে ঘুরলো।রীতি প্রথমে দৃষ্টি দিলো দিয়ার দিকে।
দিয়া রীতির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

চলবে….

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-২৩|

দিয়া রীতির কাছে এসে হাসি মুখে বললো,
—-“হ্যাপি বার্থডে রীতি আপু।”
তারপর জড়িয়ে ধরলো।রীতি তখনো বিস্ময় নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আর ভাবছে দিয়া এতোটা নরমাল ব্যবহার কেনো করছে?দিয়া কি তাহলে জানে না সাদিব ওকে প্রপোজ করেছে।কিন্তু কিছুক্ষন আগে তো সাবিহা বললো ওরা পাহারা দিচ্ছিলো।তাহলে তো জানার কথা,সব ওদের প্ল্যান।
তবে কি দিয়া জানেনা?জানলে অন্তত
দিয়াকে এতটা নরমাল লাগতোনা।
আচ্ছা দিয়া সত্যিটা জানলে কি হবে?নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পাবে।
এসব ভাবনার মাঝেই দিয়া রীতিকে ছেড়ে দাড়ালো।

সাবিহা কেক খেতে খেতে সাদিবের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—-“রীতি আপু কি বললো?”

সাদিব দাতে দাত চেপে বললো,
—–“বলতে দিলি কই?তার আগেই তো সব শেষ করে দিলি।আসার আর সময় পেলিনা?আর ১০টা মিনিট পর এলে কি এমন ক্ষতি হতো?নে এবার কেক খা।”

সাবিহা জিহবায় কামড় দিলো।সাবিহা তো ভেবেছিলো এতক্ষণে সব বলা,জানা হয়ে গেছে।সাবিহা বুঝতে পারছেনা এতোক্ষণ তাহলে এরা কি করলো।
সাবিহা কনফিউশন নিয়ে বললো,
—-“প্রপোজ করেছিস তো?”

সাদিব ছোট্ট করে বললো,
—-“হু।”

দিয়া উচ্ছ্বাসিত হয়ে মুখের উপর হাত দিয়ে আস্তে আস্তে রীতিকে বললো,
—-“আপু তুমি হ্যা বলেছো তো?”

রীতি চোখ বড়বড় করে বললো,
—-“কিসের হ্যা?”

দিয়া ভ্রু কুচকে বললো,
—-“সাদিব ভাইয়া তোমাকে প্রপোজ করে নি?”

রীতি দিয়ার কথা শুনে হতভম্ব।রীতি ভাবছে দিয়া তো দেখছি সব জানে।তাহলে ওসব কি ছিলো?আমি কি ভুল ভেবেছিলাম? উহু তা কি করে হয়।
রীতি দিয়ার হাত ধরে একপাশে নিয়ে গিয়ে বললো,
—-“মানে কি?তুমি সব জানো?আজকে যে আমাকে প্রপোজ করবে সেটা তুমি জানতে?”

—-“অবশ্যই জানতাম।এসব তো আমার আর সাবিহার প্ল্যান।ভাইয়া তো সাহসই পাচ্ছিলো না।আমাদের জোরাজুরিতে রাজি হয়েছে তোমাকে প্রপোজ করতে।
এখন বলো প্রপোজ করেছে কিনা,তুমি কি বলেছো?আ’ম সো এক্সসাইটেড।তাড়াতাড়ি বলো।”

রীতি সাবিহার কথা,বিহেভিয়ার দেখে অবাক না হয়ে পারছেনা।রীতি কি বলবে কি করবে মাথায় আসছেনা।
—-“কিন্তু দিয়া আমি তো ভেবেছিলাম….”

দিয়া মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
—-“কি ভেবেছিলে?আমার সাথে সাদিব ভাইয়ের কিছু চলছে?”

রীতি অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।
রীতি আমতা আমতা করে বললো,
—-“আসলে,,মানে হ্যা এটাই ভেবেছিলাম।”

দিয়া নিজের দুগাকে আলতো করে হাত ছুইয়ে বললো,
—-“নাউজুবিল্লাহ কি বলো?আমরা ১২বছর এ বাড়িতে আছি।ছোট থেকে উনাকে ভাই জেনে এসেছি।আর উনি বোন।
তবে এতে অবশ্য তোমার দোষ নেই।আমি পাকা অভিনেত্রী।দিয়া তুই ফিউচারে বড় অভিনেত্রী হতে পারবি।তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।সব অভিনেত্রীরা ভাতে মরবে আমার জন্য।(ভাব নিয়ে)”

রীতি প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে দিয়ার দিকে চেয়ে আছে।
দিয়া রীতির সব প্রশ্নের জবাব ক্লিয়ার করতে বললো,
—-“আসলে আপু সব নাটক ছিলো।আমি তোমার আর সাদিব ভাইয়ার মধ্যে একটা সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলাম।তোমাদের চোখে একে অপরের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছিলাম।যেটা তোমরা দুজনেই সব সময় লুকিয়ে রাখতে।নিজের ফিলিংসকে পাত্তা দিতে না।ভেবেছিলাম তোমরা কিছু বলবে।কিন্তু না কারো দিক থেকে সাড়া পাচ্ছিলাম না।তাই তোমাদের দুজনকে কাছাকাছি আনতে আমি এই নাটক রচনা করেছি।আর এর জন্য আমি সরি বলবোনা।কারণ মাঝেমধ্যে দুজন মানুষের মধ্যে একজন থার্ড পারসন আসলে ক্ষতি হয়না,বরং তাদের সম্পর্ক জোড়ালো হয়।
তুমি কেমন জেলাসি আর ইনসিকিউরড ফিল করছিলে।আমার তো বেশ মজা লাগছিলো।আর সাদিব ভাইয়ার দিক থেকে একটা হতাশা চলে এসেছিলো কারণ তুমি কিছুদিন যাবত ভাইয়াকে কোনো কারণে এভয়েড করে যাচ্ছিলে।
সেসব মিলিয়ে আজ প্রপোজ হয়ে গেলো।
আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে কিভাবে প্রপোজ করেছিলো, কি বলেছিলো?”

রীতি সাবিহার প্রশ্নে সাদিবের দিকে তাকালো।সাদিব দুহাত ভাজ করে রীতির দিকে চেয়ে দাড়িয়ে আছে।সাদিবের চোখে চোখ পড়তেই রীতি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
রীতি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে।

সাবিহা আর ধৈর্য্য ধরতে পারছেনা।রীতির সামনে এসে দাড়ালো।রীতিকে একবার ভালো করে দেখে বললো,
—-“এখন ফটাফট হ্যা বলে দেও তো।আমাদের আর অপেক্ষা করিয়ে রেখোনা।স্পেশালি ভাইয়াকে।”
সাবিহা কথাটা বলেই মিটমিট করে হাসছে।
অপর দিকে সাদিব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রীতির জবাবের।রীতি হ্যা বলবে নাকি না বলবে এসব ভেবে সাদিবের হৃদপিণ্ড হাতুড়ি বাজিয়ে যাচ্ছে।

দিয়া রীতিকে চুপ দেখে বললো,
—-“আপু এমিনিতেই ভাইয়া এই কয়দিন বিরহে কাটিয়েছে।দেখো ভাইয়ার চোখ-মুখের কি অবস্থা? শুকিয়ে কেমন হয়ে গেছে।একটা দেবদাস দেবদাস ভাব এসে গেছে।”

সাদিবের দিকে তাকিয়ে দিয়া হাসতে লাগলো।
সাদিব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,
—-“বেশ মজা লাগছে না?”

—-“প্রচুর।”

রীতি কি বলবে বুঝতে পারছেনা।কেমন আমতা আমতা করছে।সাদিবকে রীতি পছন্দ করে।শুধু পছন্দই না ভালোবাসে কিন্তু আজ কেনো সাদিবকে চিতকার করে বলতে পারছেনা ভালোবাসার কথা।
কেনো জড়তা কাজ করছে?সাদিবের প্রপোজ করাটা রীতির লাইফের বেষ্ট ড্রিম ছিলো।রীতি কল্পনাও করতে পারেনি সাদিব ওকে কোনোদিন প্রপোজ করবে।
গোপনে ভালোবেসেছে কিন্তু নিজেকে কখনো সাদিবের যোগ্য মনে করেনি।সাদিব দেখতে শুনতে রীতির চেয়ে এগিয়ে।বাবার সম্পত্তি বাড়ি-গাড়ির একমাত্র উত্তরাধীকারী।
সাদিবের কাছে রীতির নিজেকে ছোট মনে হতো।
কিন্তু ভালোবাসা ছোট বড় মানেনা।সাদিবের হৃদয়ের সুপ্ত ভালোবাসাটা রীতির জন্যই জেগে উঠেছে।
সাদিবের বুকে রীতিকে দেখে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়েছে।অনুভব হয়েছে অতৃপ্ত কিছুর।

রীতির দিকে সবার দৃষ্টি।রীতি মাথা তুলে
দেখে সবাই ওর দিকেই চেয়ে আছে।
রীতি সবার চাহুনি দেখে হকচকিয়ে যায়।
ঢোক গিলে বললো,
—-“আমি বুঝতে পারছিনা কি রিয়েকশন দেবো?আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।”

রীতির কথা শুনে দিয়া ফিক করে হেসে উঠে।সবার দৃষ্টি দিয়ার দিকে।দিয়া সেটা খেয়াল করে হাসি থামিয়ে সরি বললো।
রীতির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর নার্ভাস টাইমে দিয়া খিলখিলিয়ে কিভাবে হাসছে?

রীতি চট করে বললো,
—-“আই নিড সামটাইম।”

সাবিহা কিছু বলতে যাবে তখনই সাদিব থামিয়ে দিয়ে বললো,
—-“হ্যা টাইম নেও বাট উত্তর যেনো হ্যা হয় সেটা খেয়াল রাখবে।ওকে?”

রীতি সাদিবের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলো।এ ছেলে তো রীতিমতো সুন্দর ভাবে থ্রেট দিচ্ছে।
রীতি আর কথা বাড়াতে চায়না।কাচুমাচু হয়ে বললো,
—-“রাত হয়ে গেছে।মা হয়তো চলে এসেছে।আমাকে খোজবে।আমি কি এখন যেতে পারি?”

দিয়া মুখ চেপে হেসে বললো,
—-“চাইলে থেকে যেতে পারো।ভাইয়ার সাথে জমিয়ে প্রেম করতে পারো।আমরা কথা দিচ্ছি একদম ডিস্টার্ব করবোনা।”

রীতি দিয়ার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে চাইলো।তারপর সাদিবের দিকে তাকাতেই আবারো লজ্জা পেয়ে গেলো।কোনো কথা না বলে দৌড়ে চলে গেলো।
রীতি যেতেই দিয়া জোরে হেসে ফেললো।
সাদিব বুঝতে পারছে এখন ওদের বলি কা বাখড়া ও হতে যাচ্ছে।তাই মানে মানে কেটে পড়াই ভালো।যেই ভাবা সেই কাজ।সাদিবও বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

রীতি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।চোখমুখ চকচক করছে খুশিতে।আজ ওকে সাদিব প্রপোজ করেছে বিষয়টি হজম হচ্ছে না,স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
রীতি বিছানায় গিয়ে পা ছড়িয়ে বসে রইলো।তারপর আবার উঠে দাড়ালো,আবারো বসে পড়লো।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।কি করছে নিজেই জানেনা।অনুভূতিরা হৃদয় জুড়ে আলোড়ন তৈরি করছে।রীতি আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।নিজের চেহারায় চোখ পড়তেই লজ্জায় মুখ সরিয়ে নিলো।
অনেক লজ্জা লাগছে।নিজেকে নববধূ মনে হচ্ছে।
রীতি বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।লাইটের আলোতে বাগানের ওই বেলীফুলের গাছটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।রীতির সাদিবের বলা কথাগুলো মনে বাজছে বারবার।

অপর দিকে সাদিবের নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে।রীতিকে মনের কথাটা এতদিনে জানাতে পেরেছে।আর সাদিবের দৃঢ় বিশ্বাস রীতি ওকে ফিরিয়ে দেবেনা।সময় নিচ্ছে কিন্তু রীতি ওকে খুব শীঘ্রই ভালোবেসে গ্রহণ করবে।

রীতিদের বাসায় ছোট খাটো করে ওর জন্মদিন পালন করা হয়েছে।ওর বাবা,মা,ভাই আর ও।ব্যাস এই কয়জন মিলে বেশ ভালো ভাবেই জন্মদিন উদযাপন করেছে।রীতির মামা রীতিকে ফোনে উইশ করেছে আর কুরিয়ারে গিফট পাঠিয়ে দিয়েছে।তিনি কাজে ব্যস্ত তাই আসতে পারেনি।এ নিয়ে অবশ্য রীতির মন খারাপ হয়নি।

ডিনার শেষ করে রীতি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।ফেসবুকে গিয়ে টু মারতেই একটা পোস্ট ওর চোখে পড়লো।
সাদিব নতুন করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে।সেখানে রিয়েক্ট,কমেন্টের ছড়াছড়ি।
সাদিব সবার কমেন্টের রিপ্লাই দিচ্ছে।
“একজন কমেন্ট করেছে সেই অদৃশ্য মানবী নাকি?”
সাদিব রিপ্লাই করেছে,
“অদৃশ্য মানবী আজ দৃশ্যমান হয়েছে।দোয়া করবেন আমাদের জন্য।”

রীতি সবার কমেন্ট পড়ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।রীতির সাদিবকে আজ অন্যরকম লাগছে।
প্রপোজ করেছে মাত্র আর তাতেই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস।পাগল ছেলে।

সাদিব ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।রীতির ইনবক্স জানান দিচ্ছে রীতি বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে ফেসবুক ত্যাগ করেছে।হয়তো ঘুমিয়ে আছে।
করবেনা করবেনা করেও সাদিব রীতির নাম্বারে ডায়েল করলো।
দুবার বাজার পর ফোন রিসিভ করলো।
সাদিব কান পেতে রেখেছে রীতির কথা শোনার জন্য।
রীতি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
—-“হ্যালো!!”

রীতির ঘুমন্ত কন্ঠ সাদিবের কাছে মোহনীয় লাগছে।কেমন অদ্ভুতভাবে টানছে।

—-“ঘুমাচ্ছো বুঝি?”

রীতির ঘুমে হুশ নেই।ঘুমে ঘুমে ফোন রিসিভ করেছে।
ঘুমে ঘুমেই বললো,
—-“হুম।”

সাদিব মুচকি হাসি দিলো।রীতি যে ঘুমে হুশ হারিয়ে ফেলেছে তা বুঝার বাকি নেই।
—-“আচ্ছা ঘুমাও।”

—-“হুম!”

রীতি হুম হুম করেই যাচ্ছে।সাদিব দুষ্ট হাসি দিয়ে কল রেকর্ড অন করে বললো,
—-“আমি কি তোমার কল্প পুরুষ?”

—-“হুম”

সাদিব মুখ চেপে হাসছে।তারপর আবারো বললো,
—-“তুমি আমকে ভালোবাসো?”

—-“হুম”

সাদিব ফোনটা দূরে সরিয়ে আটকে রাখা হাসিটা হেসে ফোন আবারো কানে নিলো।
—-“আচ্ছা ঘুমাও জানু।”

—-“উমম,হুহ।”

সাদিব ফোন কেটে দিলো।
তারপর রেকর্ড ওপেন করে শুনে নিজের মনেই হেসে উঠলো।

.

সোনা রোদ চোখের উপর পড়তেই রীতির ঘুম ভেঙে গেলো।রীতি আস্তে আস্তে চোখ খোলে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হাই তুলতে তুলতে ফোনটা হাতে নিলো।ফোনের পাওয়ার বাটন চাপতেই একটা ম্যাসেজ দেখতে পেলো সাদিবের নাম্বার থেকে।রীতি তাড়াতাড়ি ম্যাসেজটা ওপেন করে।একটা ভয়েস ম্যাসেজ।
রীতি ভয়েস ম্যাসেজ শুনে কিছুই বুঝতে পারলো না।তারপর একটা ম্যাসেজ দেখলো সেখানে লেখা রীতি-সাদিবের ফোনালাপ।
রীতি এক কথায় টাস্কি খেলো।শুয়া থেকে উঠে বসলো।তারপর আবারো ভয়েস ম্যাসেজটা শুনলো।
শুনে মনে হচ্ছে আসলেই এটা রীতি কিনা।তাই কল লিষ্ট চেক করলো।সেখানে সাদিবের নাম্বার দেখে চোখ কপালে।
রীতি কিছুই মনে করতে পারছেনা।তাই মাথা চুলকাতে লাগলো।

রীতি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই সাদিবের দিকে চোখ গেলো।সাদিব রীতিকে হাত নাড়িয়ে হায় দিচ্ছে।মুখে অদ্ভুত হাসি লেগে আছে।
রীতি সাদিবকে দেখে ভাবছে,
“এই ছেলে রাতারাতি পাগল হয়ে গেছে।”

রীতি বারান্দা থেকে চলে যেতেই সাদিব রীতিকে ম্যাসেজ করলো।
“শুভ সকাল,অবশেষে স্বীকার করেই নিলে তাইনা?তাহলে আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেওয়া স্বার্থক হয়েছে।”
রীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকাচ্ছে ম্যাসেজের দিকে।

রীতি ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপ হাতে আবারো বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।সাদিব চলে গেছে।তখনই হটাৎ সাদা একটা গাড়ি সু করে বেড়িয়ে গেলো গেটের বাইরে।সাদিবের বাবা বাইরে যাচ্ছে।
রীতি চায়ে চুমুক দিয়ে চা টা শেষ করলো।

.

বিকেলে ছাদে যাবে না যাবেনা ভেবেও ছাদে গেলো।কিন্তু একি ছাদে তো এলাহী কান্ড।চেয়ার টেবিল সেট করা হচ্ছে।মনে হচ্ছে কোনো অনুষ্ঠান।
রীতি কিছুই বুঝতে পারছেনা এখানে কিসের অনুষ্ঠান হচ্ছে।লাইটিং হচ্ছে।চেয়ার টেবিল সাজানো হচ্ছে।রীতির কৌতুহল বেড়েই চলেছে।

রীতি একজনকে জিজ্ঞেস করলো,
—–“কিসের অনুষ্ঠান হচ্ছে এখানে?”

—–“পিকনিক হবে আজ।”

—–“পিকনিক!”

—-“হ্যা পিকনিক।বছরে একবার এই বিল্ডিংয়ের সবাই মিলে বড় করে পিকনিক করে ছাদে।নিজেরা মিলে রান্নাবান্না করে,গান-বাজনা করে।আড্ডা দেয়,মজা করে।এইবারো তাই হচ্ছে।কিন্তু তুমি কেনো জানো না?তুমিও তো এই বিল্ডিংয়ের।”

রীতি ভাবছে তাই তো।পিকনিক হবে।আর সেই পিকনিকের লিডার অবশ্যই সাদিব।তাহলে রীতিকে কেনো বলেনি?
আর সাবিহা আর দিয়া?ওরাও তো বলেনি।
রীতির মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কেউ ওকে বলে নি।এমনকি ওর ছোট ভাই রিমন?রিমনকেও বলে নি।

চলবে……,