গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-৩৭

0
3003

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৩৭|

সাদিব বাড়িতে এসে তান্ডব শুরু করে দিয়েছি।সাদিবের মা সাদিবের এমন রুপের সাথে পরিচিত নয়।সাদিব বরাবর ঠান্ডা,শান্ত-সৃষ্ট,হাসোজ্জল ছেলে।কখনো কারো সাথে রাগী কন্ঠে কথা বলতে দেখেনি।আর আজ সাদিবকে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ মনে হচ্ছে।যা অবাধ্য হয়ে উঠেছে।
সাদিবের মা সাদিবকে থামাতে না পেরে সাদিবের বাবাকে ফোন করছে।
সাবিহা সাদিবকে জোর করে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো।সাদিব তখনও রাগে ফুসছে।
সাবিহা সাদিবের পিঠে হাত বুলিয়ে বলছে,
—-“ভাইয়া, কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেনো?মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ।পানি দেবো?”

সাবিহা দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।
সাদিবের চোখ মুখ দিয়ে তখনও আগুন বের হচ্ছে।ইচ্ছে করছে সব গুড়িয়ে দিতে।
সাবিহা সাদিবকে বললো,
—-“ভাইয়া,পানিটা খাও।”

সাদিব কড়া গলায় বললো,
—-“পানি-টানি রাখ।আমি খাবোনা।”

অপরদিকে সাদিবের মা সাদিবের বাবাকে ফোন করে দিয়েছে।তিনি রওয়ানা দিয়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।ছেলে তার প্রচন্ড বাড় বেড়েছে।একটা শিক্ষা দিতেই হয়।অবাধ্য হয়ে পড়েছে আজকাল।

সাদিব সোফা থেকে এক ইঞ্চিও নড়েনি।বাবার অপেক্ষায় আছে।সাদিবের বাবা বাড়িতে ঢুকতেই সাদিব সোফা থেকে সরু দৃষ্টিতে বাবার দিকে চেয়ে আছে।সাদিবের মা সাথে সাথে আসছে।সাদিবের বাবা বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো দেখে সাদিবের মাকে বললো,
—-“এটা কি বাড়ি?”

সাদিব সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
—-“না এটা বাড়ি না?বাড়ি হলেও কোনো ভদ্রলোকের বাড়ি নয়।ভদ্রলোকের মুখোশ পড়া একজন হৃদয়হীন,পাষন্ড,
অহংকারী লোকের ইট-পাথরে বানানো মহল।যেখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

সাদিবের বাবা চোখ রাঙিয়ে ধমকে বললো,
—-“সাদিব!! বাবার সঙ্গে কথা বলছো ভুলে যেওনা।”

সাদিবের মাও সাদিবের ব্যবহার দেখে অবাক না হয়ে পারছেনা।
তাই তিনি বললো,
—–“সাদিব বাবার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?”

সাদিব তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—-“বাবা!! ইনি যাইহোক কারো বাবা হতে পারেনা।”
তারপর সাদিব চিতকার করে বললো,
—-“যদি বাবা হতো তবে নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলতোনা।একজন ভদ্রলোককে ফ্ল্যাটের বাইরে দাড়িয়ে অন্য ফ্ল্যাটের মানুষের সামনে অকথ্য ভাষায় অপমান করতো না।যদি নূন্যতম মনুষ্যত্ব বোধ থাকতো তবে একজন সম্মানিত শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতো না।”

সাবিহা আর সাদিবের মা সাদিবের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।তারা দুজনেই নির্বাক দাড়িয়ে আছে।
সাদিবের মা বললো,
—-“কি বলছিস সাদিব তুই?”

—-“হ্যা মা ঠিক বলেছি।বিশ্বাস না হলে যারা ছিলো তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারো।অবশ্য এতে লাভ হবেনা।বাবার ভয়ে কেউ মুখ খুলবে না।যেমনটা এতোদিন খোলেনি।”

সাদিবের বাবা বড় গলায় বললো,
—-“তো? ভুলটা করেছি কি? আমি যে ঘাড় ধাক্কা মেরে বের করে দেইনি তাই বেশী।ও একটা লোভী,ছোটলোক।”

সাদিব চিতকার করে বললো,
—-“বাবা যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট।তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা।তোমার জন্য রীতি আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আমার সাথে ব্রেকাপ করেছে।”
সাবিহা ব্রেকাপের কথা শুনে মুখে হাত দিলো বিস্ময়ে।

সাদিবের বাবা মৃদু হেসে বললো,
—-“সে তো হবারই ছিলো।ও এখন আর তোমাকে দিয়ে কি করবে? নতুন কাউকে জুটিয়ে নিবে।তুমি বোকা তাই এখনো রীতি রীতি করছো।”

সাদিবের মাথায় যেনো আবারো আগুন ধপ করে জ্বলে উঠলো।তাই রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
—–“বাবা রীতিকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবে না।তুমি ওর বাবার কাছে নিজের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইবে।”

—-“ক্ষমা?আমি ক্ষমা চাইবো?কেনো?”

—-“কারণ তুমি অন্যায় করেছো।সন্তানের অন্যায়ের জন্য বাবা-মায়ের মাথা সবার সামনে নিচু হয়ে যায় কিন্তু আজ তোমার অন্যায়ের জন্য আমার মাথা নিচু হয়ে গিয়েছে লজ্জায়।ছিহ!বাবা! আমার ঘৃণা হচ্ছে তুমি আমার বাবা।”

সাদিবের বাবা বিরক্ত বোধ করছেন বেশ।তাই ভ্রু কুচকে বললো,
—-“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।রুমে যাও।”

সাদিবের বাবা নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছেন আর সাদিব পেছনে থেকে চিতকার করছে।

.

রাতের অন্ধকারে রীতি বারান্দায় বসে বসে চা পান করছে।কিছুক্ষণ আগে কড়া লিকার দিয়ে চা বানিয়েছে।গরম চায়ে জিহবা পুড়ে যাচ্ছে।কিন্তু রীতির সেদিকে ধ্যান নেই।রীতি মগ্ন সাদিবের মধ্যে।পুরনো কথা,রাগ-অভিমান,
ঝগড়া,সাদিবের বাইকে ঘুরে বেড়ানো,
এক সাথে ভার্সিটি যাওয়া,সাদিবের গিটার বাজানো,প্রতিদিন বিকেলে চোখে চোখে কথা বলা,রাত জেগে ফোনে কথা বলা।সব মনের মধ্যে এসে জড়ো হচ্ছে।
রীতির ফোন বাজছে ঘরে।রীতির কানে রিংটোনের শব্দ প্রচন্ড ভাবে বিধছে।কিন্তু উঠে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে না।জানতেও ইচ্ছে করছে না কে ফোন করেছে।
বারবার ফোন বাজায় বিরক্তি নিয়ে উঠে দাড়ালো।তারপর ফোন হাতে নিয়ে দেখে দিয়ার নাম ভেসে উঠছে।
রীতি স্বাভাবিক ভাবেই ফোন রিসিভ করলো।

অপর পাশ থেকে দিয়া বললো,
—-“রীতি আপু কি হয়েছে তোমার?তুমি এমনটা কি করে করলে?”

রীতি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,
—-“কি করেছি?”

দিয়া রীতির নির্লিপ্ত ভাব দেখে অবাক হলো।
—-“রীতি আপু তুমি সাদিব ভাইয়ার সাথে ব্রেকাপ করেছো?”

রীতি গ্রিলে হাত দিয়ে বললো,
—-“হ্যা ঠিক শুনেছো।”

দিয়া উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,
—-“রীতি আপু কেনো?তুমি এটা করতে পারোনা।”

রীতি ঠান্ডা গলায় বললো,
—-“কেনো?কেনো পারিনা?”

দিয়া অসহায় ভাবে বললো,
—-“রীতি আপু,কেউ না জানুক আমি তো জানি তুমি সাদিব ভাইয়াকে কতটা ভালোবাসো।তাহলে এমন কেনো করছো?”

রীতি শক্তভাবে বললো,
—-“বাসতাম।সেটা অতীত।”

দিয়া রীতির কথা শুনে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
—-“তুমি এখনো বাসো কিন্তু স্বীকার করতে চাইছোনা।সাদিব ভাইয়াকে তুমি আজীবন ভালোবাসবে।পারবেনা ভুলতে।তবে কেনো সাদিব ভাইয়াকে আর নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো?”

রীতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“পরিস্থিতির কাছে গভীর অনুভূতি গুলোও হার মেনে নেয়।পরিস্থিতির প্রভাবে ভালোবাসারাও ফিকে হয়ে যেতে সময় নেয়না।”

দিয়া রীতিকে আর কোনো প্রশ্ন করতে চায়না।ও রীতি আর সাদিবকে অনেকবার মিলিয়ে দিলেও এইবার হয়তো ওর দ্বারা সম্ভব নয়।
দিয়া ফোন রেখে অসহায় ভাবে সাবিহার দিকে তাকালো।সাবিহা দিয়ার পাশেই বসে ছিলো।ফোনে ওদের কথোপকথন আর দিয়ার ফেস দেখে সাবিহার বুঝতে বাকি নেই কিছু।

সাবিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিষন্ন মনে বললো,
—-“ভালোবাসায় এতো কষ্ট তবুও মানুষ ভালোবাসা ভালোবাসা করে কেনো?প্রতিদিন সকাল থেকে রাত্রী পর্যন্ত মানুষ ভালোবাসার জয়ধ্বনি দেয় কেনো?”

দিয়া সাবিহার দিকে ছলছল চোখে চেয়ে বললো,
—-“জানি না রে।”

.

সাদিব রীতির বাবার স্কুলে রীতির বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছে।
রীতির বাবা নিজের কেবিনে বসে আছে।সাদিব অপর পাশে চেয়ারে বসে আছে।
রীতির বাবা গম্ভীরমুখে বললো,
—-“সাদিব এখানে আমার একটা সম্মান আছে।প্লিজ কোনো তামাশা করোনা।”

সাদিব মাথা নিচু করে আছে অপরাধী ভঙ্গিতে।মাথা তুলে এক পলক রীতির বাবার দিকে চেয়ে বললো,
—-“আংকেল বাবা কি করেছে সেটা গতকাল জেনেছি।আপনারা চলে যাওয়ার কারণটা আমার অজানা ছিলো।বাবা যে আপনার সাথে এতটা দুর্ব্যবহার করেছে জানা ছিলো না।জানার পর থেকে নিজের সাথে নিজের দৃষ্টি মিলাতে পারছিনা।আমি গতকাল বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি।কিন্তু সে মানতে নারাজ সে ভুল করেছে।কিন্তু আমি জানি সে কতবড় অপরাধ করেছে।আমি তাকে “বাবা” বলে সম্ভোধন করতে পারছিনা।আমার বাবার অপরাধের জন্য আপনি আমাকে যে শাস্তি দিবেন আমি মেনে নিবো।বাবার পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমি করবো।রীতি আমার সাথে সমস্ত যোগাযোগ অফ করে দিয়েছে সেটা আমাকে ঘৃণা করে নয় বরং আপনার অপমানের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবছে।নিজেকে নিজের সুখ,ভালোবাসা থেকে আলাদা করতে চাইছে।আংকেল আমি জানি আপনি রীতির সাথে কথা বলেন না।কিন্তু এতে রীতির দোষটা কোথায়? আপনি আমার চেয়ে রীতিকে ভালো বুঝেন।আপনি জানে ও কতটা কষ্ট পাচ্ছে।ভেতরে ভেতরে ঘুমড়ে মরছে।তাই প্লিজ ওকে কষ্ট দিবেন না।ওকে ক্ষমা করে দিন।যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিন।আপনি যদি বলেন আমি আমার বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাবো।আমি ওমন মানুষের সাথে থাকতে পারছিনা।তবুও রীতিকে আর শাস্তি দিবেন না।এই শাস্তি ওর প্রাপ্য নয়।আপনাদের বাবা-মেয়ের ব্যাপারে আমার ঢুকা উচিত না কিন্তু ঢুকে পড়লাম ভালোবাসার খাতিরে।ভুল বললে ক্ষমা করবেন।”(হাতজোর করে)

রীতির বাবা সাদিবকে ভালো করে দেখছে।কয়েকদিনের মধ্যে কতটা বদলে গেছে।চেহারার কি হাল করেছে।চোখ-মুখ শুকনো।শরীরও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

রীতির বাবা শান্ত গলায় বললো,
—-“দেখো সন্তান যেমনই হোক বাবা-মা তাকে ছাড়তে পারেনা।তেমনই সন্তানেরও উচিত তার বাবা-মা ভুল করলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া নয়।তাদের সাথে থেকে তাদের মনোভাব পালটে দেওয়া।তাই যাইহোক বাবাকে ছাড়ার কথা বলোনা।উনার সাথে আমার সমস্যা।কিন্তু উনি তো তোমাকে ভালোবাসেন।তোমার বাবা উনি ভুলে যেওনা।আর রীতির বিষয়,রীতি আমার মেয়ে ওর বিষয়টি আমি দেখে নিবো।সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।আর আরেকটা কথা তোমার আর রীতির আলাদা হয়ে যাওয়াটা দুই পরিবারের জন্যই ভালো।আমি মেনে নিলেও তোমার বাবা কোনো দিন মেনে নিবেনা।আমি আমার মেয়েকে কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে চাইনা।আর ওমন ঘরে একদমই দিতে চাইনা।আমি ওর বাবা।আমি কি করে জেনেশুনে মেয়েকে আগুনে ফেলে দেবো?”

সাদিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“আংকেল আপনার পরে যদি কেউ রীতিকে ভালোবাসে সে আমি।কেউ যদি ওকে ভালো রাখতে পারে সে আমি।কিন্তু আপনার কাছে এটা যথেষ্ট নয়।”

সাদিব উঠে দাড়ালো।তারপর সালাম দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।রীতির বাবা সাদিবের যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।

.

সাদিবের কাছে এখন একটা রাস্তাই খোলা আছে সেটা রীতির ছোট মামা।সাদিব রীতির ছোট মামাকে ফোন করে সব খোলে বললো।
তারপর বললো,
—-“মামা প্লিজ আপনি রীতির সাথে কথা বলুন।ও আমাকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারেনা।কিছু করুন।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।আমি আর পারছিনা।এভাবে চলতে থাকলে আমি মরে যাবো।”

রীতির মামা সাদিবের কথা শুনে অবাক হলো।সাদিবের মতো ম্যাচুয়ুড একটা ছেলে মরার কথা বলছে।ভালোবাসা মানুষকে ইমম্যাচুয়ুর করে দেয়।
রীতির মামা সাদিবকে আশ্বস্ত করে বললো,
—-“রিলেক্স,আমি কথা বলবো রীতির সাথে।তুমি টেনশন করোনা।”

রীতিকে সকাল সকাল মামা ডেকেছে মেসেজ করে।তাও পাশ্ববর্তী কলেজে।রীতিদের বাড়িতে আসতে তার কি সমস্যা সেটা রীতির মাথায় ঢুকছেনা।আর কি এমন কথা যাতে আর্জেন্ট ডেকেছে।
রীতি রেডি হয়ে কলেজে গিয়ে মামাকে খোজে না পেয়ে কল করলো।ওর মামা কল করে যে জায়গার ইন্সট্রাকশন দিলো তাতে রীতি বিস্ময়ের চরম পর্যায়।এমন চিপাচাপা জায়গায় মামা যেতে বলছেন।
রীতি বিরক্তি নিয়ে মামার পাশে গিয়ে বসলো।তিনি বাদাম চিবুচ্ছে আর পা ঝুলাচ্ছে।
রীতি মামাকে পর্যবেক্ষণ করছে অদ্ভুত ভাবে।

রীতির মামা বললো,
—-“দেখা শেষ? আমি তোর মামা কোনো এলিয়েন না।”

—-“তুমি আমাকে এত জায়গা রেখে এখানে ডেকেছো কেনো?”

রীতির মামা ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে বললো,
—-“কারণ কথা বলার এটাই উপযুক্ত জায়গা।”

রীতি কটাক্ষ করে বললো,
—-“কি এমন কথা বলবে যে বাড়ি রেখে বনে এসেছো?”

রীতির নামা রীতির দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,
—-“তুই কি জানিস তুই “ভালোবাসা” শব্দটাকে অপমান করছিস?পবিত্র অনুভূতিগুলো নিয়ে মজা করছিস?”

রীতি মামার কথা শুনে মাথা নামিয়ে নিলো।
—-“যদি ভালোবেসে পাশেই না থাকতে পারিস তবে ভালোবেসেছিলি কেনো?
কঠিন সময়ে পাশে থাকার বদলে স্বার্থপরের মতো হাত ছেড়ে দিবি বলে?”

রীতি ছলছল চোখে মামার দিকে তাকালো।তারপর ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্নাটা আটকে ধরা গলায় বললো,
—-“মামা,এছাড়া কি করার ছিলো? বাবা…”

রীতির মামা রীতিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—-“বাবাকে ভালোবাসিস খুব ভালো কথা।তাই বলে অন্যের অনুভূতি নিয়ে খেলার,তাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো অধিকার তোর নেই যে কিনা তোকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে।তোর জন্য পাগলপ্রায়।পরিবার থেকে অনেক বাধা-বিপত্তি আসে।যদি শক্তভাবে একে অপরের হাত ধরে সকল সমস্যা মোকাবেলা করতে নাই পারিস তবে ভালোবেসেছিলি কেনো?”

রীতি কাদো কাদো হয়ে বললো,
—-“কেউ আমাদের মেনে নিবে না মামা।”

—-“চেষ্টা তো করতে পারিস।”

—-“চেষ্টা করতে আমার আপত্তি নেই।আমি কোনো বিপদকে ভয় পাইনা,আমি সব বাধা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।কিন্তু আমি ভয় পাই সাদিবের কষ্টকে।কারণ পরিস্থিতি যেরুপ তাতে চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।সাদিবের মনে যে আশার বাতি জ্বলে উঠবে তা হুট করেই নিভে যাবে।এতে সাদিবের স্বপ্নভঙ্গ হবে।স্বপ্নভঙ্গের ব্যথা সাদিব সইতে পারবেনা।আমি আমার কষ্টটা মেনে নিতে পারলেও সাদিবের কষ্ট আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা।আমি ওকে হাসিখুশি দেখতে চাই।ভালো থাকতে দেখতে চাই।”

—-“এখন কি সাদিব ভালো আছে?নেই।কারণ ওর ঠোঁটের কোনে হাসির কারণ তুই।তুই নেই তাই সব মিলিয়ে যাচ্ছে।এখন তো মরে যাওয়ার কথা ভাবছে।”

রীতির বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো মরার কথা শুনে।মামার দিকে অসহায় ফেস করে তাকালো।
—-“ভালোবাসা এমনই,শক্ত মানুষকেও ভেঙে ফেলতে পারে এক মুহুর্তে।সাদিবকেও ভালোবাসা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে।একটা চান্স নেওয়া উচিত।যখন সাদিবকে তোর সাপোর্ট করার কথা,ওর মনোবল শক্ত করতে সাহায্য করার কথা সেখানে তুই ওকে শুরুতেই হারিয়ে দিচ্ছিস?দুজনে দুজনের হাত শক্ত করে ধর সব ঠিক হয়ে যাবে।একা একা কষ্ট না পেয়ে লড়াই কর।লড়াই না করলে জিতবি কিভাবে? ”

রীতি মামার কথা শুনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করতে পারছে।রীতির মামা রীতির চোখে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।
রীতির মামা সামনের দিকে আঙুল দিয়ে কিছু দেখাচ্ছে।
রীতি সেদিকে তাকালো।সাদিব দাড়িয়ে আছে।রীতির মামা বেষ্ট লাক বলে উঠে গেলো।সাদিবের সামনে গিয়ে কাধে হাত রেখে কিছু বলছে।সাদিব সেটা মাথা নিচু করে শুনছে।

রীতি মাথা নিচু করে বসে আছে।সাদিব ওর পাশে এসে বসলো।রীতি তবুও চুপচাপ।তাই সাদিব রীতিকে একদম ঘেষে বসলো।
রীতি নীরবে চোখের পানি ফেলছে।সাদিব রীতির মাথা নিজের কাধে ঠেকিয়ে বললো,
—-“আমাকে আর কষ্ট দিওনা,সইতে পারিনা।”

রীতি দুহাতে সাদিবের এক হাত চেপে ধরলো।যার মানে ছাড়বো না,কখনো ছাড়বোনা।
সাদিব রীতির চোখে চোখ রেখে রীতির দুহাত ছাড়িয়ে নিয়ে রীতির এক হাতের পাতার উপর ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
“ভালোবাসি,ভিষণ ভালোবাসি।”

রীতি কান্নার মধ্যেও মুচকি হাসলো।

চলবে….!