গ্যাংস্টার লাভ পর্ব-৪৩ এবং শেষ পর্ব

0
1263

#গ্যাংস্টার_লাভ
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
#লাস্ট_পার্ট

রিহা ছেলেটাকে ইচ্ছা মত মরছে আর বলছে

রিহা : আমাকে মারতে চাইছিলি তাই না দেখ কে কাকে মারে তোর জন্য আমার লাইফ থেকে এক বছর চলে গেছে তোর জন্য রেহান আমায় দূরে রাখছো তোকে তো আমি শেষ করে দেবো

রুহি : ভাগ্য ভালো রেহান ভাইয়ার হাতে পড়েনি নাহলে তো এর অবস্থা একদম শেষ
রিহা : আমি কম কিসে

রিহা ইচ্ছা মত মেরে হ্যাফিয়ে বলে

রিহা : পুলিশ এর কাছে ফোন দে আর ওর শিখার করা রেকর্ড দে
রুমা : কল করছি একটু পর চলে আসবে

ছেলেটাকে নড়তে দেখে রিহা বলে

রিহা : এখনও তেজ আছে এই শালার জন্য প্রথম দিন রেহান আমাকে চর মেরে ছিল (গালে হাত দিয়ে)
রুমা : কিন্ত তুই জানলি কি করে এ তোকে মেরে ফেলতে চাইছিল

রুমা কথায় রিহার সকালের কথা মনে পড়ে যায় ।

আজ সকালে রিহা গোসল করে বের হতেই রেহান এর ফোনে বাজে । রেহান কে অনেক বার ডাকে কিন্ত উঠে না তাই রিহা ধরতেই ওপাশ থেকে জন বলে

জন : স্যার আমরা রিহা ম্যাম এর খুনি কে খুজে পাইছি এখন সে ঢাকায় আছে ছেলেটা হলো আপনি যাকে রিহা ম্যাডাম কে প্রোপজ করার জন্য হাত ভেংগে দিয়েছিলেন সে । প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করছে এত দিন গা ঢাকা দিয়ে ছিল আজ খুজে পাইছি আমি জায়গা টেক্সট করছি

রিহা আর কিছু না শুনে ফনে কেটে দেয় একটু পর রেহান এর ফোনে টেক্সট আছে ।

রিহা টেক্সট এর জায়গা অনুযায়ী রেডী হয়ে বেরিয়ে পড়ে। সাথে ও বান্ধবী দের ও ফোন করে জানিয়ে দেয় ।

রুহি : কিরে কি ভাবছিস
রিহা : কিছু না তোরা একে পুলিশ এর হাতে দিস একটু পর আমার সাইকো আসবে (খুশি হয়ে)
রুমা : বাবা সাইকো ভালো তো

সবাই হেসে দেয়।

ওদের কথার মাঝে পুলিশ আসে আর ছেলেটাকে ধরে নিয়ে যায় এমনি ওর আর শক্তি নেই যে মার টা না খেলো

রিহা : আচ্ছা তোরা এখন না ও আসলো বলে
রুমা : কাজ শেষ তো
রিহা : আর না সব ঠিক হয়ে তোদের খালা মনি বানিয়ে ফেলবো
সবাই :😱
রিহা:🙈

রুহি : হইছে রুশ এর তো চলছে এবার তো পালা
রিহা : দোয়া কর
রুমা : আচ্ছা আমরা আসি

ওরা চলে যেতেই রিহা ক্যাম্পাসে একটা গাছের নিচে বসে পড়ে । অপেক্ষা শুধু রেহান এর

১ঘণ্টা পার হলো আসার কোনো নাম নেই

রিহা : এই সাইকো কি আসবে ধুর কতক্ষন বসে আছি (বিরক্তি নিয়ে )

রিহা উঠে যেতেই দেখে রেহান আসছে

রিহা : এসে গেছে সাইকো রিহা গেট রেডী

রেহান এসেই রিহার সামনে দাঁড়ায় আর রিহা রেহান এর গলা জড়িয়ে ধরে

রিহা : আমি জানতাম আপনি আসবেন
রেহান : আচ্ছা টা কি যেনো বলছিলে কাকে বিয়ে করবে
রিহা : হি হি হি
রেহান : মেরে দাত ভেংগে দেবো
রিহা : হ্ন তো আপনার প্রবলেম (ভেংচি কেটে)
রেহান : এত দূর আসলে কেনো ?
রিহা : যেখান থেকে আপনার সাথে আমার দেখা সেখান থেকে আবার সব শুরু করব তাই ভালোবাসি খুব ভালোবাসি

রেহান এর একদম কাছে এসে । রেহান আর রিহা একে অপরের নিশ্বাস শুনছে দুইজনের মধ্যে কোনো কথা নেই

হুট করে রিহা বলে

রিহা : এই আপনি আমার ভালোবাসার উত্তর দিলেন না কেনো নাকি ঐ চাদ ফাঁদ কে বলবেন হুম (ভ্রু কুচকে)
রেহান : বললে তোমার কোনো সমস্যা
রিহা : না তো আপনি থাকেন আমি যাই কোনো ভালো ছেলে পাই কি না

রিহা চলে যেতে নিলেই রেহান কোমর জড়িয়ে ধরে

রেহান : খুব সাহস বেড়েছে তোমার তাই না তোমার সাহস কিভাবে কমাতে হয় আমার জানা আছে (কঠিন কণ্ঠে)
রিহা : আপনি বললে দোষ না আমি বললে দোষ
রেহান : হা দোষ তুমি শুধু আমার আর কারোর না বুঝেছ
রিহা : আমি শুধু আপনার আর আপনি সবার তাই তো আর একবার চাদ চাদ করলে ঠাং ভেংগে ঘরে রেখে দেবো বুঝছেন তখন আপনার ছেলে মেয়েরা আপনাকে লেংড়া আব্বু বলবে
রেহান : ওহ তাই (মুচকি হেসে)
রিহা: ঠিক তাই মেরে ফেলবো তাও দূরে যেতে দেবো না আমার ভালো বর লাগবে না এই পাগল হলেই চলবে
রেহান : তার মানে তুমি #গ্যাংস্টার_ লাভ এ পড়ে গেছ
রিহা : সেটা তো অনেক আগে শুধু আপনি বুঝতে পারেনি হ্ন
রেহান : #মিস্টার_গ্যাংস্টার ত মিসেস গ্যাংস্টার ছেলেটাকে ত খুব মারা মারলেন
রিহা: আপনি কি করে জানলেন (অবাক হয়ে)
রেহান : আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি কে জন আমাকে এখানে সব কিছু দেখিয়েছে
রিহা: হু
রেহান: আর কখনো একা ফেলে যাবে না তো
রিহা: আমার বাচ্চার আব্বু কে ছেড়ে কোথায় যাবো
রেহান : বাহ wait
রিহা: কি

রেহান নিজের পকেট থেকে একটা চেন বের করে রিহার গলায় পরিয়ে দেয়

রেহান : এটা বিয়ের দিন রাতে দিতে চাইছিলাম কিন্তু তুমি তো ঝগড়া করতে ব্যাস্ত
রিহা : ওই ঝগড়া আপনাকে সারাজীবন সহ্য করতে হবে wow কী সুন্দর
রেহান : তোমার ভালো লাগছে
রিহা: খুব আপনার পছন্দ আছে তবে পছন্দ না থাকলে কি আমাকে ভালোবাসতেন
রেহান : তাই না পাটকাঠি
রিহা : এই একদম ওসব বলবেন না
রেহান : ভুল কি বললাম

রিহা: থাকেন আপনি আমি গেলাম

রিহা চলে যেতেই রেহান ওর পাশে হাঁটতে থাকে

রেহান : বাবা কি রাগ নাক তো লাল হইছে ইচ্ছা করছে খেয়ে ফেলি

রিহা রাগী চোখে তাকাতেই রেহান একটা কিস করে । রিহা বাকরুধ

রেহান : আপাতত এই টুকু বাকিটা রাতে

বলে রিহার হাত ধরে । রিহা ও লজ্জা পেয়ে আর কিছু বলে না

পাশাপাশি দুইজন ভালোবাসার মানুষ হাত ধরে হাঁটছে মিষ্টি রোদ এসে ওদের উপর পড়ছে । সত্যি ভালোবাসার মানুষ সাথে থাকলে রোদ ও যেনো ভালো লাগে ।

রোমান্স ওটা না যেটা শরীর কে ছুঁয়ে দেখে রোমান্স ত ওটা যেখানে প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটা যায় বৃষ্টিতে এক সাথে ভিজতে পারা বিকেলে ম্যাচিং ড্রেস পড়ে ঘুরতে বের হওয়া । এক খাবার দুইজন মিলে share করে খাওয়া । কয়জনের ভাগ্যে এমন ভালোবাসা জুটে। ভালোবাসা শরীর কে না মন কে ছুঁয়ে দেখে।

গাড়িতে রিহা রেহান এর কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে আর রেহান এক হাত দিয়ে রিহাকে ধরছে আছে আর ড্রাইভিং করছে

আজ যেনো দুটি মানুষের ভালোবাসার জন্য চারিদিক মেঘলা মেঘলা হয়ে গেছে এই বুঝি বৃষ্টি পড়বে পড়বে ভাব

রিহা: আচ্ছা রেহান চাঁদ আপুর

রিহাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রেহান পকেট থেকে ফোন বের করে রিহার সামনে ধরে

রিহা: মানে সব আপনার প্ল্যান ছিল
রেহান : জি হা
রিহা: আপনি খুব খারাপ
রেহান : কিছু করার নেই সহ্য করতেই হবে
রিহা : হ্ন কিন্ত আমি আপনার সাথে থাকবো না (গাল ফুলিয়ে)
রেহান : আবার কি হলো
রিহা : আপনি আমাকে এখন ও প্রোপজ করলেন না
রেহান : ওহ এই বেপার
রিহা : হ্ন

রেহান মুচকি হাসি দিল । রিহা জানলা দিয়ে বাইরে দেখছে তখন ফুসকার দুকান দেখে

রিহা : আমি ফুসকা খাবো
রেহান : তুমি জানো কি করে বানায়
রিহা : অত বুঝি না খাবো মানে খাবো যদি না দেন তাহলে আপনার মাথা ফাটাবো
রেহান : ফাটা ও তবু ও না

রিহা অনেক জেড ধরে শেষে না পেরে গাড়ি দার করায় আর রিহা সাথে সাথে নেমে যায় রেহান কে না নিয়ে । রেহান ও পিছন পিছন আসে

রিহা ফুসকা নিতে যাবে তার আগেই রেহান নিয়ে রিহার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।

রিহা অবাক হয়ে দেখছে

রেহান : অনেকে রূপ দেখে ভালোবাসে কেউ বা মন থেকে কিন্ত আমি ভালোবাসি তোমার ঐ হাসিতে যেই হাসি প্রথম দেখে ভালোবাসার মানে বুঝেছিলাম

তুমি আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি রাখবে আমার নিজের মতো করে ভালোবাসবে কি আমাকে

রিহার দিকে ফুসকা এগিয়ে দিয়ে ।

রিহা: হুম আমিও ভালোবাসি কিন্তু আগে ফুসকা খেয়ে নিই

বলে ফুসকা নিয়ে নিল। রেহান এর ত নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্চ্ছ করছে

রেহান : উফফ রেহান এই মেয়েকে নিয়ে তুই শান্তি পাবি না (বির বির করে)
রিহা: কি বলছেন জোরে বলেন
রেহান : না কিছু না

রিহা রেহান এর মুখে ফুসকা পুড়ে দেয় । রেহান খাবে না কিন্ত জোর করে খাইয়ে দেয় রেহান ও রিহাকে খাইয়ে দেয় ।

আশেপাশে সবাই ওদের দেখছে আর মুচকি হাসছে ।

খাওয়া শেষে রেহান গাড়ি চালাচ্ছে রিহা রেহান এর গালে একটা কিস করে

রিহা: এই ভাবে সারাজীবন আপনার সাঠে থাকতে চাই কখন বদলাবেন না আমার কাছে #গ্যাংস্টার_রেহান সব থেকে বেশি ভালো লাগে লাভ উ হাব্বি
রেহান : লাভ ইউ টু বাবুর আম্মু

রিহা হেসে দেয় । রেহান ওর ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে নেয়।

৬বছর পর

রিহা: আয়ান দাড়ায় বলছি নাহলে আজ তোমার কপালে দুঃখ আছে

কে শুনে কার কথা আয়ান কি শুনার পাত্র সে ত ছুটে যাচ্ছে

আর রিহা ওর পিছনে ছুটছে ।

আয়ান রিহা আর রেহান এর ছেলে। ৪বছর বয়স কিন্ত সাড়া বাড়ি মাতিতে রাখে কারোর কথা শুনবে না এখন রিহা খাওয়ানোর জন্য পিছনে ছুটছে

আয়ান বেশি দূর যাওয়ার আগেই রেহান কোলে তুলে নেয়

রেহান : কি হইছে আমার আব্বুর এভাবে ছুটছে কেনো হুম
আয়ান: আব্বু আম্মু মালবে (আধো আধো গলায়)
রেহান : কার এত বড় সাহস আমার প্রিন্স কে মারবে

রিহা : বেশি কথা বললে তোমাকে ও মারবো (কোমরে হাত দিয়ে)
আয়ান: আব্বু (রেহান এর গলা জড়িয়ে )
রেহান : কি হইছে রিহা ।
রিহা : সেটা ওকে জিজ্ঞেস করো সকাল থেকে কিছু খাইনি এখন কি করবে

রিহার কথায় রেহান আয়ান কে বলে

রেহান : এটা কিন্ত ঠিক না না খেলে তো দুর্বল হয়ে পড়বে তখন বড়ো হবে কি করে তুমি তো আমার ব্রেভ বয় তাই না তাহলে তো খেতে হবে
আয়ান : আমার খেতে ভালো লাগে না
রিহা : তাহলে বড় হয়ে কি করবি
আয়ান : কেনো গাং ইস্টার হবো (তুটলিয়ে)

রিহা রেহান দুইজনে শকড

রিহা : এসব কথা তুমি শিখলে কোথা থেকে ?
আয়ান : আব্বু তো কাকে বলছিলো আমি দূরে আছি কিন্ত মরিনি এখন ও #গ্যাংস্টার_রেহান আছি । আমিও #গ্যাংস্টার_আয়ান হব

রেহান আয়ান কে নিয়ে সোফায় বসে

রেহান : দেখো বাবা সেটা তোমার কাজের উপর নির্ভর করবে তুমি কি হবে তবে তোমাকে নিয়ে আমাদের কিছু আশা থাকতে পারে তাই না

আয়ান মাথা নাড়ায়

রেহান : তাহলে তুমি যদি কিছু হতে চাও তার আগে তো ভালো করে খেয়ে বড়ো হতে হবে আর আম্মু কে জ্বালালে তো তোমার আম্মু দূরে চলে যাবে সেটা কি তোমার ভালো লাগবে। লাগবে না তো তাই আম্মু যেটা বলে সেটা শুনতে হবে

আয়ান : ইয়েস আমি আম্মুর গুড ছেলে হব
রেহান : এই না হলে আমার প্রিন্স

আয়ান রেহান এর গালে কিস করে রিহার কাছে যায় রিহা খাইয়ে দিল আয়ান ওর দাদুর কাছে যায় ।

রিহা যেতে গেলেই রেহান টেনে কোলে বসায়

রিহা : কি করছেন ?
রেহান : কি আবার বউকে আদর করছি
রিহা : ছাড়ুন ছেলে এসে যাবে
রেহান : আসবে না এখন চুপ করো তো

রেহান রিহার একদম কাছে আসতে গেলে আয়ান এর ডাক শুনে সরে যায় ।

আয়ান : আব্বু মিশা আপুরা কখন আসবে
রিহা : একটু পরে চলে আসবে

বলতে ন বলতে নিচে অনি আর রুশ ডাক দেয় ।

রেহান : ওই তো চলে আসছে

আয়ান ছুটে গিয়ে অনির কোলে উঠে । অনি ও কোলে নিয়ে চুমু তে ভরিয়ে দেয়।

মিশা অনি আর রুশ এর মেয়ে। খুব মিষ্টি ।

রুশ আর অনি আদর করলে আয়ান মিশা এর সাথে খেলতে থাকে ।

রিহা আর রেহান অনির আর রুশ এর সাথে সাক্ষাৎ করে। মাইশা চৌধুরী মিশা আর আয়ান কে নিয়ে মেতে উঠেছে ।

আয়াস আর চাঁদের নিয়ে হয়ে গেছে । ওরা এখন দেশের বাইরে থাকে।

সবাই নিজেদের মতো আনন্দ করছে রুশ আর অনি আসলেই বাড়িটা পরিপুণ্য লাগে। রেহান এক হাত ধরে রিহার জড়িয়ে বলে

রেহান : ভালোবাসি
রিহা : আমিও ভালোবাসি
আয়ান : আমাকে ও বলো

রেহান আর রিহা তাকিয়ে দেখে আয়ান কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।

রেহান আয়ান কে কোলে নিয়ে বলে

রেহান : সব থেকে বেশি ভালো তো আমার প্রিন্স কে বাসি

আয়ান হেসে দেয়
আয়ান : আম্মু চকোলেট দাও মিশা আপুকে দেবো

রিহা চকোলেট ইনে দিতেই আয়ান দৌড়

রিহা : আব্বু আস্তে
রেহান : আস্তে যাও প্রিন্স

রেহান আবার রিহাকে জড়িয়ে ধরে । রিহা ও ওর ভালোবাসার মানুষের বুকে মাথা দেয়।

যেই বুক শুধু রিহার জন্য যেই বুজে মাথা রাখলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায় ।

বেচে থাকুক এমন হাজারো ভালোবাসা । এই দুনিয়ার ভালোবাসার খুব অভাব । আল্লাহ যেনো সব মানুষকে তার সত্যি ভালোবাসা দেন ।

_________________সমাপ্ত________________