#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ৭…
√-ভাবি শুধু হা হা করে হাসতে লাগলো।
রিতু বেচারী আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে আছে… ?
আর আমি বেচারা চিপায় আটকে গিয়ে দেবদাস হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছি ??
বুঝার চেষ্টা করি, কি হচ্ছে এটা…
আমিঃ ভাবি এটা কি বলছেন আপনি?
ভাবিঃ যা সত্যি তাই বলছি ☺
আমিঃ একদম মিথ্যা বলবেন না কিন্তু ভাবি (কান্না কান্না ভাব নিয়ে)
ভাবিঃ এই পাগল কি হল তোমার, মজা করলাম মাত্র।
আমিঃ আপনার মজার জন্য সে আমায় কত খারাপ ছেলে ভাববে বুঝতে পারছেন (একটু ভাব নিয়ে)
ভাবিঃ আচ্ছা পাগল, আর দুষ্টুমি করবো না…
~ আর আমি মনে মনে বলছি, ভাবি তুমি বেশি বেশি আরো দুষ্টুমি করো, তাহলে আমার প্রেমটা তাড়াতাড়ি হবে। আর রিতু তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে হা করে। আর আমার ছোট বোন লাফাচ্ছে আর চিৎকার করছে ” আজ বাসায় গিয়ে বলে দিবো, মেজো ভাইয়া রিতু আপুর সাথে প্রেম করে, প্রেম করে, কি মজা কি মজা ”
আমি দৌড়ে গিয়ে বোনের মুখ চেপে ধরে বললাম-
আমিঃ এই বুনু, চুপ কর। দেখ তোর রিতু আপু রাগ হচ্ছে কিন্তু এমন কথা বলায়। বলুন আপনি রাগ হচ্ছেন খুব তো? (রিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম)
~ রিতু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কেনো উত্তর নেই ~
আমিঃ কি হল বলুন, আপনি খুব রাগ হচ্ছেন তো ?
রিতুঃ সমস্যা নেই। আমি রাগ হচ্ছি না তো.. ( আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো)
~ আমি বোনের মুখ ছেড়ে দিলাম। বোন আমার চিল্লাতে শুরু করলো এনারা নাকি প্রেম করে, আজ আম্মু কে সব বলে দিবো।
…পৃথিবীর বড় ভাইদের প্রেমের বারটা বাজাতে শত্রুদের প্রয়োজন হয় না, তার একটা ছোট বোন হলেই হল আরকি, তাহলেই প্রেমের বারটা বাজবে মনে হয়।
ভাবি ছোট বোনকে বললো আমার সাথে চলো, চকলেট কিনে দিবো। তারপর ছোট বোনকে নিয়ে ভাবি দোকানে দিকে যাওয়ার সময় আমাদের বললো তোমরা কথা বলো ~
আমিঃ আসুন চলেন বসি… (রিতুর দিকে তাকিয়ে)
রিতুঃ কোথায়?
আমিঃ এই যে ঘাসের উপর।
রিতুঃ আচ্ছা চলুন…
~ ঘাসের উপর গিয়ে বসে পড়লাম আমি। সেও তার জামা গুছিয়ে নিয়ে বসে পড়লো আমার পাশেই। সামনে পদ্মা নদী, প্রচুর বাতাস এসে লাগছে। আমাদের ওই জায়গায় থেকে একটু দূরে দেখলাম একটা ছেলে একটা মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে গল্প করছে। রিতু বার বার ওই দিকে তাকিয়ে দেখছে ~
আমিঃ কি দেখছেন?
রিতুঃ কই, কিছু না তো।
আমিঃ দেখছি বার বার ওই দিকে তাকিয়ে তাদের দেখছেন…
রিতুঃ হুমম ঠিক ওনাদের দেখছি। দেখুন তাদের কত রোমান্টিক জুটি লাগছে।
আমিঃ হুমম। এমন ভাগ্য আর কয়জনের হয় বলুন । আচ্ছা আপনি কখনোই রিলেশন করেন নাই?
রিতুঃ না তো।
আমিঃ কেনো??
রিতুঃ সত্যি বলতে তেমন মনের মত কেউ এখনো জীবনে আসে নাই আমার। তাই এবার বলুন আপনার গার্লফ্রেন্ড কোন ক্লাসে পড়ে?
আমিঃ হা হা,,, আমি তো কখনো রিলেশনই করি নাই। তাই আপনার কেমন ছেলে পছন্দ শুনতে পারি ?
রিতুঃ ওই যে গাড়িতে বললাম। তাই আপনি রিলেশন করেন নাই কেনো?
আমিঃ কি বলবো আমি নিজেও জানি না। অনেক বছর আগে থেকে রিলেশন করতে চাইলেও কেনো যে কেনো মেয়ের সাথে মনের মিল হচ্ছে না কেনো, বুঝতে পারছি না।
রিতুঃ ওহহ।
আমিঃ আচ্ছা, আপনি কখনো রিলেশন করবেন না?
রিতুঃ তেমন কেনো ইচ্ছা নেই।
আমিঃ তারমানে কখনো না?
রিতুঃ যদি কখনো তেমন সময় আছে, তাহলে ভেবে দেখবো। কিন্তু আমার স্বামী কে নিয়ে অনেক কিছু ভেবে রাখছি।
আমিঃ যেমন?
রিতুঃ না থাক, পরে কখনো বলবো।
আমিঃ প্লিজ বলুন?
রিতুঃ যেমন, আমি তাকে অনেক ভালোবাসবো, সে শুধু আমার থাকবে, অন্য কারো না, আমি তাকে আদর করে বাবু বলবো, সে আমায় সোনা পাখি বলবে, এমন আরো অনেক স্বপ্ন।
আমিঃ খুব চমৎকার। আপনি তো খুব রোমান্টিক, আপনাকে দেখে মনে হয় না আপনি এতো রোমান্টিক। সব সময় শুধু লজ্জা পান কেনো এতো? কেউ কিছু জানতে চাইলেও লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখেন..
রিতুঃ হি হি হি…
আমিঃ হাসছেন কেনো?
রিতুঃ হয়তো একটু লজ্জা পাই, কিন্তু লজ্জা পেলে বুঝি রোমান্টিক কিছু ভাবতে পারবো না?
আমিঃ অবশ্যই পারবেন.. কিন্তু…
রিতুঃ জানেন, আমার তো মনে হয়, যারা লাজুক বেশি, তারা রোমান্টিকও আরো বেশি সবার থেকে…
আমিঃ ওহহ তাই, এই জন্য তো লাজুক মেয়ে আমার এতো পছন্দ। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন প্লিজ, যেনো আমার জীবন সঙ্গী খুব লাজুক হয়।
রিতুঃ হুমম অবশ্যই দোয়া করবো।
~ পিছনে তাকিয়ে দেখি ভাবি আসছে বোনের হাত ধরে ~
আমিঃ আপনাকে একটা কথা বলবো, রাগ হবেন না তো..?
রিতুঃ কি কথা?
আমিঃ আগে বলুন রাগ হবেন কিনা? তাড়াতাড়ি বলুন সময় নেই…
রিতুঃ আচ্ছা রাগ হবো না, এবার বলুন প্লিজ…
আমিঃ ভাবি তখন যেটা বলছে, সবই সত্যি বলছে। আমি সত্যি আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলছি.. i love you…
রিতুঃ ওহহ (নরম ভাবে মাথা নিচু করে বললো)
আমিঃ কি হল, আপনি কিন্তু এখনো উত্তর দিলেন না? কিছু একটা তো বলুন…
রিতুঃ না মানে…
~ এর মধ্যে ভাবি পিছনে এসে বললো, কি গল্প করছো তোমরা? আমি উত্তর দিলাম কিছু না ভাবি। ভাবি বললো তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা হতে, নাহলে শাশুড়ী আম্মু বকা দিবে। আমি বললাম, তাহলে গাড়িতে উঠুন। সবাই গাড়িতে উঠে বসলো, আমার আর প্রপোজের উত্তর শুনা হলো না রিতুর থেকে। গাড়ি ডাইভিং করে এনে একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাড়ালাম। ততক্ষনে সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছে ~
আমিঃ এই আমার মিষ্টি ভাবি, কি খাবেন? মোগলাই নাকি নান রুটি-গ্রীল?
ভাবিঃ তাহলে চলো মোগলাই খায়…
রিতুঃ আমি তো মোগলাই খায় না, বমি আসে বুবু (ভাবির দিকে তাকিয়ে)
আমিঃ আচ্ছা, তাহলে নান রুটি হক… কি বলেন সবাই?
ছোট বোন মায়াকে বললা,, তুই কি খাবি বল?
ছোট বোন মায়াঃ আমি সব খাবো ?
~ সবাই হেসে দিলাম মায়ার কথা শুনে । সবাই হোটেল থেকে খেয়ে, মা-বাবা ও বড় ভাইয়া ও ছোট ভাইয়ের জন্য প্যাক করে নিয়ে আসলাম বাসায়। রিতুর থেকে যে প্রপোজের রিপ্লাই নিবো, তার সুযোগ ও হচ্ছে না। কেউ না কেউ রিতুর পাশে আছেই। রিতু যেহেতু তারপরেও আমার উপর রাগে নাই ও যতবার আমার সাথে কথা বলছে, আরো আগের চেয়ে খুব বেশি মায়াবী ভাবে, তাতে মনে মনে হচ্ছে তার রিপ্লাই আমার মনের মতই হবে।
বাসায় আসা মাত্র ছোট বোন চিৎকার শুরু করলো, আম্মু আম্মু জানো, এরা দুই জন প্রেম করে প্রেম (আমাকে আর রিতুকে দেখছি)
আম্মু ছোট বোন কে ধমক দিয়ে বললোঃ- চুপ কর পাজি, তোর রিতু আপু কি ভাববে তুই এগুলো বললে ?
রিতুঃ আন্টি সমস্যা নেই, ও ছোট মানুষ, ভুল করে বলছে। (রিতু তার হাত থেকে খাবারের প্যাক আম্মুর কাছে দিলো, আর বললো)
আম্মুঃ তোমার কথা গুলো তো অনেক মিষ্টি, মনে হয় সারাদিন শুধু শুনি (রিতুর মাথায় হাত দিয়ে বললো আম্মু )
ভাবিঃ আর আম্মু, আমার কথা গুলো কেমন মিষ্টি ? (আম্মুর দিকে তাকিয়ে হি হি করে হেসে দিয়ে)
আম্মুঃ তোমার কথা আর আমরা কয়টাই শুনতে পাই, সব কথাই তো শুধু শুভর সাথে বলো, . কিন্তু জানো তোমার কাজ গুলো অনেক সুন্দর, মনে হয় সারাদিনই কাজ করাই তোমায় দিয়ে (ভাবির দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে)
ভাবিঃ ?? আমার তো কাজই শুধু সুন্দর হবে। একবার শুভর বউ আসুক, তখন সব শুভর বউ করবে (হাসি দিয়ে)
~ তারপর সবাই সবার রুমে চলে গেলো। আমি গিয়ে শুয়ে আছে ঘুমের অপেক্ষায়, কিন্তু আজ তো ঘুমের কেনো নামই নেই। কি করবো এখন বুঝতে পারছি না, চোখ বুঝলে শুধু রিতুর মুখ ভেসে আসছে, কিছু তেই ঘুমাতে পারছি না। মাথায় যন্ত্রণা ও হচ্ছে খুব, এই ভাবে ফেসবুক ও দেখতে মন যাচ্ছে না। হঠাৎ ঘড়িতে দেখি রাত তিন টা বাজে, তখনো চোখে ঘুম নেই। এতো রাত আমি কখনো জাগি না। ঘুম যে কোথায় গেলো বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ করে মোবাইলে মেসেজ এসেছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, এতো রাতেও আবার কি অফার দিচ্ছে সিম কোম্পানি। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার থেকে hi লিখে মেসেজ দিয়েছে ~
আমিঃ hello… Kemon achen? (আমাকে কেউ সিম বা ফেসবুকে মেসেজ দিলে, অচেনা হলেও আমি প্রথমে কেমন আছেন বলি, তাই এখানেও তেমনি বললাম)
অচেনা নাম্বারঃ- Valo… Apni amai cinchen?
আমিঃ Na to… Apni ke?
অচেনা নাম্বারঃ Ami Ritu…
আমিঃ আপনি এখনো জেগে আছেন?
রিতুঃ হুমম। ঘুম আসছে না। আপনার কাছে নাকি ঘুমের ওষুধ আছে, আমায় একটা দিবেন প্লিজ?
আমিঃ কে বললো আমার কাছে ঘুমের ওষুধ আছে? আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
রিতুঃ আজও বুবু আমার কাছে ঘুমিয়েছে, আমি একা ঘুমাতে ভয় পাই তাই। ঘুম আসছিলো না বলে জেগে ছিলাম, কিছু তেই ঘুম না আশায় তখন বুবুকে বলায় বুবু বললো,,, এই নে শুভর নাম্বার, ওকে মেসেজ দে বা কল দে এখুনি, ওর কাছে আছে তোর ঘুমের ওষুধ। বলে ঘুমিয়ে গিয়েছে। প্রথমে সাহস না পেলেও, মাথা খুব ব্যাথা করাই মেসেজ দিতে বাধ্য হলাম। আপনার কাছে নেই ঘুমের ওষুধ?
আমিঃ হা হা হা, আপনি একটা পাগলি…
রিতুঃ আমি পাগলী হবো কোন দুঃখে? আর হাসছেন কেনো?
আমিঃ হাসছি, আপনার কথা শুনে। বাসায় এতো লোক থাকতে আমার কাছে ওষুধ চাইতে বললো কেনো, বুঝতে পারেন নাই?
রিতুঃ না তো। কেনো?
আমিঃ ৫ মিনিট মন দিয়ে ভেবে দেখুন। উত্তর পেয়ে যাবেন।
~ আর মেসেজ দিলাম না। ১৫ মিনিট পর কেনো মেসেজ না পাওয়াতে আবার মেসেজ দিলাম ~
আমিঃ ঘুমিয়ে গিয়েছেন নাকি?
রিতুঃ না তো। আপনি এখনো ঘুমান নাই?
আমিঃ ঘুম আসছেই না। তাই ভেবে বুঝতে পারলেন কারণ?
রিতুঃ হুমমম।
আমিঃ তাই কি কারন?
রিতুঃ থাক আপনাকে শুনতে হবে না।
আমিঃ আচ্ছা শুনবো না। তাই বিকালের ওই কথাটার রিপ্লাই তো দিলেন না?
রিতুঃ কোনটা?
আমিঃ i love you… প্লিজ এখন বলুন। আপনার মনে যেটা আছে, সেটায় বলবেন ওকে।
রিতুঃ সত্যি বলবো? সত্যি টা শুনলে আমায় ভুল বুঝবেন না তো?
~ কথাটা শুনে বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো। তাহলে কি সে আমায় ফিরিয়ে দিবে ভেবে ~
আমিঃ না না, প্লিজ সত্যি টায় বলুন। তাড়াতাড়ি বলুন প্লিজ।
~ সময় চলে যাচ্ছে, আর রিপ্লাই আসছে না। বুকের মধ্যে ধুকপুক করছে। চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসছে, কি উত্তর আসবে ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। প্রায় ২০ মিনিট পর মেসেজের রিপ্লাই আসলো ~…
~ গল্প চলবে ~
বিঃদ্রঃ ২০ মিনিট পর মেসেজে রিতু কি উত্তর দিলো, জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব।