চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-১৮+১৯

0
321

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ১৮
লিখাঃসামিয়া খান

আসরের নামায পড়ে সবেমাত্র বিছানায় এসে বসেছিলো আফিয়া।বসে বসে হাতের কড়গুণে দরুদপাঠ করছিলো।পাশে ফোন অনবরত বেজে চলেছে।দরুদ পড়া শেষ করে ফোনটা রিসিভ করলো আফিয়া।ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কান্নায় ভেঙে পরলো সুবাহ।কাঁদতে কাঁদতে মাকে মায়ার এক্সিডেন্টের বিষয়টা খুলে বলল।কোনো জবাব দিলোনা সে।বরং বিষয়টা খুব স্বাভাবিকভাবে নিলো মনে হয়।আবার অস্বাভাবিকভাবে চুপ হয়ে গেলো।ডান হাতের বৃদ্ধা অঙুলির আগা এখনো কনিষ্ঠ আঙুলের গোড়াতে ঠেকে হয়েছে।আঙুলগুলো যেনো অসার হয়ে গিয়েছে তাই নড়াতে পারছেনা।

আফিয়া শূন্য দৃষ্টিতে তার থেকে একটু দূরে বসে থাকা মাসুদ সাহেবের দিকে তাঁকালো।মাসুদ সাহেব আসরের নামায পড়ে কুরআান তিলাওয়াত করছে।পাঁচ ওয়াক্ত নামায কখনো কাযা করেনা সে।আচ্ছা নামায কি মন থেকে পড়ে নাকী কপালের মাঝেখানে কালো দাগ বানানোর জন্য?যদি মন থেকে আল্লাহের ইবাদত করতো তাহলে কি আদৌ আজকে মানুষ খুন করার মতো জঘন্যতম কাজ করতে পারতো?প্রশ্নটার কোনো উত্তর পেলো না সে।খুবই আস্তেধীরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো আফিয়া।টলতে টলতে মাসুদ সাহেবের সামনে গিয়ে ক্ষীণগলায় বলল,

“তোমার সাথে একটু কথা আছে মাসুদ।”

তিলাওয়াত করতে করতে মাসুদ সাহেব একবার আফিয়ার দিকে তাঁকালো।সূরার মাঝপথে আছে সে।তা শেষ করে খুব যত্নসহকারে কুরআন শরীফটা পাশে রেখে দিলো।

“বলো কি বলবে।”

“এতো নামায-কালাম,রোযা, আল্লাহের জিকির করে কি লাভ যদি কালব পঁচে গিয়ে থাকে?”

“কী বলতে চাও তা যদি পরিষ্কার করে বলতে ভালো হতো।”

“মায়ার আজকে এক্সিডেন্ট হয়েছে।আশা করি বলতে হবেনা কে করিয়েছে।”

“তা বলতে হবে কেনো?সত্যি তুমিও জানো এবং আমিও জানি।”

“বিষয়টা কি না করলে চলতো না?আমার ছেলে তোমার কি ক্ষতি করেছে?”

“শুনো আফিয়া রাজনীতির মধ্যে কেউ আপন হয়না।আপন বাবা-ছেলেও না।সেখানে দিহান তো আমার ভাইয়ের ছেলে।”

কথাটা শুনে মনে হয় আফিয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।হিংস্রতার সহিত মাসুদের উপর চড়াও হয়ে সে বলল,

“আমি তোমাকে এবার জেলের ভাত খাওয়াবো মাসুদ।এখুনি পুলিশকে কল করে দিবো।”

“প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”

“এখন নেই কিন্তু একদিন তো হবে মাসুদ।আমি সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।মনে রেখো পাপ তার আপন বাপকেও রেহাই দেয়না।”

দানব হাসি হাসতে হাসতে মাসুদ জবাব দিলো,

“সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম আফিয়া।”
,
,
,

ইদানীং সবুজের মেয়ে মেঘকে বেশ ভালো লাগে দিহার কাছে।যতক্ষণ দিহা ওদের বাড়ীতে থাকে তার আশেপাশে থাকে মেয়েটা।মা ছাড়া সন্তান বাঁকল ছাড়া গাছের মতো হয়।মেঘ সবসময় দিহার কথা শুনে।এই যেমন দিহা যেখানে বসে থাকতে বলবে সেখানেই বসে থাকে।বিষয়টাতে সবুজও খুব খুশী।তার মায়ের কাছে এখন আর খুব বেশী যেতে দেয়না মেঘকে।নিজের কাছে রাখে।

“মেঘতো আপনার খুব ভক্ত দেখছি।”

“হয়ে গেলো।”

“তা এখন তো সম্পর্কে আপনি আমার বেয়াইন লাগেন।”

“এটা তো ভেবে দেখিনি মি.সবুজ।”

“এখন ভেবে দেখেন।মায়া খুশী তো আপনার ভাইয়ের সাথে?”

একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো দিহা।গমগমে কণ্ঠে বলল,

“জানেন আমার বড় বোনের হাজবেন্ড কে?”

“আরিয়ান।”

“হুম।ভয় লাগে এগুলো যদি কখনো বের হয় তখন কী হবে।”

“আশা করি আপনার ভাই সবকিছু জানার পর আমার বোনের ক্ল্যারিফিকেশনটা শুনবে।”

“আমার ভাই যথেষ্ট ম্যাচিওর।আর ভাই জানে যে প্রেমিক ছিলো।বাট ব্যক্তিটা কে তা জানেনা।”

“যখন জানবে তখন অবশ্য খুশী হবেনা।”

“তা বৈকি।ভাইয়ার সাথে কথা বলবেন?”

“ইচ্ছা আছে।”

“ওয়েট দাঁড়ান দিহান ভাইকে কল করি।”
,
,
,

আইসিইউ থেকে অনেকক্ষণ আগে বের হয়ে এসেছে দিহান।খুব বেশী সময় থাকার পারমিশন ছিলোনা।ইতোমধ্যে হসপিটালে অনেকে এসেছে।আফিয়া,আরিয়ানের পরিবারের লোক সকলে এমনকি দিহাও।দিহান একদম ভেঙে পরেছে।ছেলেকে কি বলে স্বান্তনা দিবে তা আফিয়ার জানা নেই।হসপিটাল থেকে বের হয়ে আসলো দিহান।তাকে কেউ বাঁধা দিলোনা।আসলে দিহানই তার সাথে আসতে মানা করেছে।ঢাকা শহরে এখন রাত।কালকে রাতে ঠিক এসময় সকলে মিলে কতো প্রাণোচ্ছল ছিলো।আর আজকে সকলের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে।হসপিটালের সামনে থাকা টং দোকানের বেঞ্চে এসে বসলো দিহান।বুকে মনে হয় কেউ এসিড ঢালছে ক্ষণে ক্ষণে।সেরকমভাবে পুড়ে যাচ্ছে।প্রেমিক পুরুষের বুকে এক বিশেষ জায়গা থাকে।যা সম্পূর্ণরুপে তার প্রেয়সীর জন্য।প্রেয়সীর কিছু হলে সে জায়গায় খরা নেমে আসে।তীব্র খরা!

সুবাহার বেশ মায়া লাগছে আরিয়ানের জন্য।মানুষটাকে সকলে দোষ দিচ্ছে।অথচ তার সেরকম কোনো অভিপ্রায় ছিলোনা যার জন্য মায়ার কষ্ট হবে।ক্যান্টিন থেকে এক কাপ গরম চা আনিয়েছে সুবাহ।আরিয়ান তার চেম্বারে সোফার মধ্যে হাত-পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।চেহারার বেহাল দশা।চোখদুটো লাল হয়ে আছে যেনো খুব কান্না করেছে।কফি কাপটা টেবিলের উপর রেখে সুবাহ গিয়ে আরিয়ানের এক হাঁটুতে গিয়ে বসলো।যদিও এটা এসময় ঠিক হলো কীনা তা জানেনা সে।তার স্পর্শে এসে আরিয়ান যেনো একদম গলে গেলো।তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে একদম বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে।আরিয়ানের চুলে আঙুল বুলিয়ে তার শান্ত হওয়ার অপেক্ষা করছে সুবাহ।তার কাছে একটা জিনিস বেশ অবাক লাগলো আর তা হলো মায়ার জন্য আরিয়ানের ভেঙে পরা।একদিনের পরিচয়ে এতো আবেগ কাম্য হতে পারেনা।পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো অনুশোচনা থেকে এরকম।

আরিয়ান কাঁদতে কাঁদতে সুবাহকে বলল,

“আমি খুব খারাপ সুবাহ।খুব খারাপ।একটা জঘন্য প্রকৃতির লোক।”

“হুশ।এটা আপনাকে কে বললো?কিছু হবেনা ভাবীর দেখবেন।আপনি তো আর সব জানতেন না।তাই বাবাকে বলেছেন।”

“মায়ার যদি কিছু হয় তাহলে আমি আত্নহত্যা করবো।দেখিও।”

“আরিয়ান!কী বলেন এগুলো?”

সুবাহকে নিজের হাঁটু থেকে উঠিয়ে দিলো আরিয়ান।দরজার দিকে এগুতো এগুতো বলল

“তোমার বাবাকে আমি খুন করবো সুবাহ।তোমার বাবা তো আমার থেকেও খারাপ।এসব জঘন্য লোকদের বেঁচে থাকার দরকার নেই।”

এক এক করে প্যাকেটে থাকা সবগুলো সিগারেট ভাঙছে দিহান।কালকে রাতে মায়া বকেছিলো সিগারেট খাওয়ার জন্য।বার বার দিহানের এখন ভোরের স্মৃতিগুলোর কথা মনে হচ্ছে।মায়ার সেই বাবুর জন্য করা বায়নাগুলো মাথাচাড়া দিচ্ছে।

“ভাই কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।”

দিহান চোখতুলে তাঁকিয়ে দেখে আরিয়ান দাড়িয়ে আছে।আরিয়ানের শার্টে এখনো মায়ার রক্ত লেগে রয়েছে।

চোখের ইশারায় আরিয়ানকে পাশে বসতে বললো দিহান।বেঞ্চের অপরপাশে বসে আরিয়ান কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাঁকিয়ে রইলো।মনে হচ্ছে সেখানে কিছু খুঁজছে সে।হয়তো ভেতরের কথাগুলো।একটুপর মুখ খুললো আরিয়ান,

“মায়া কখনো নাচতে পারবেনা।পায়ে মেজর ইনজুরি পাওয়ার জন্য।ভালোভাবে হাঁটতেও সমস্যা হবে।শরীরের অনেক জায়গায় ব্যাথার পাওয়ার কারণে দাগ থাকবে।মুখের ডানপাশে বেশ থেতলে গিয়েছে।যার কারণে মুখে একটা ভয়ংকর দাগ সৃষ্টি হবে।কিন্তু তা সাময়িক।একসময় ঠিক হয়ে যাবে।”

কথাগুলো শুনে যন্ত্রমানবের মতো দিহান বলল,

“যদি বলো শুধু একদলা মাংসপিণ্ড হয়ে বেঁচে থাকবে তাও মানতে রাজি।শুধু জীবনের শেষ বয়স পর্যন্ত ওকে নিজের বধূ হিসেবে চাই।”

দিহানের কথায় আরিয়ানের কান্না উপচে আসলো।ভালোবাসা খুব দূর্লভ বস্তু।যা সহজে প্রাপ্তি হয়না।দিহান অনেক সৌভাগ্যবান যে সেই ভালোবাসাকে নিজের করে পেয়েছে।চোখের কার্নিশে জমে থাকা পানি মুছে নিয়ে আরিয়ান খুব দ্রুত বলল,

“মায়া আর আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো ভাই।আমরা একে-অপরকে ভালোবাসতাম।”

চলবে,,

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ১৯
লিখাঃসামিয়া খান

পিচঢালা রাস্তায় দৃষ্টিবন্দী দিহানের।ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে রাস্তায় প্রতিফলিত হওয়ার দরুণ রাস্তাটা বালিকণার ন্যায় চিকচিক করছে।বৃষ্টি যেহেতু হয়েছে তাই সম্পূর্ণ পানি এখনো শুষে নেয়নি রাস্তা।কিছু জল অবশিষ্ট থাকার কারণে কাঁচের মতো মনে হচ্ছে রাস্তাটা।
আরিয়ান আর দিহান এখনো বেঞ্চের মধ্যে বসে রয়েছে।মায়া আর তার সম্পর্কের সকল কথা আরিয়ান দিহানকে জানিয়েছে।এক্ষেত্রে দিহান একটা টু শব্দ করেনি।চুপচাপ শুধু কথা শুনে গিয়েছে।বার বার উচ্চ শব্দে ত্যাগ করা নিশ্বাস জানান দিচ্ছে দিহানের বুকের সীমাহীন কষ্টগুলো।দীর্ঘশ্বাস মানবদেহের ভিতরে প্রবেশ করার সময় যতোটুকু সময় নেয়, দেহ থেকে নির্গমনে ততটুকু বিলম্ব করেনা।

যদি এ পৃথিবীতে দীর্ঘশ্বাস পরিমাপ করার কোন যন্ত্র থাকতো তাহলে বায়ুতে দীর্ঘশ্বাস মিশ্রিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকে বেশী আর কিছুর পরিমাণ হতো না।হাতে থাকা রোলাক্স ওয়াচটা খুলে রাস্তার দিকে ছুড়ে মারলো দিহান।রাস্তায় পরার সাথে সাথে একটা গাড়ীর নিচে পিষ্ট হয়ে গেলো।

“জানো ডাক্তারসাহেব সময়টা বড্ড বেশী খারাপ যাচ্ছে।তাই ঘরি রেখে কি করবো বলো?এজন্য ফেলে দিলাম।”

“ভাই,আমার যা বলার তা আমি বলে দিয়েছি।এতে যদি আপনি মায়াকে মেনে নিতে না পারেন তাহলে ওর দায়িত্ব আমি নিবো।”

“কোন মুখে একথা তুমি বলো আরিয়ান?আদৌ কি লজ্জানামক কোন বস্তু আছে তোমার ভেতরে?”

“সে যাই বলেন ভাই।কিন্তু মায়া আমার ভালোবাসা ছিলো আছে থাকবে।”

আরিয়ানের দৃঢ় কণ্ঠে বলা এইকথাগুলো শুনে পা দিয়ে একটা আঘাত করলো মাটিতে দিহান।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তোমার মধ্যে লজ্জা বলতে কিছুই নেই।তোমাকে এখানেই পুঁতে রাখতাম।শুধু আমার বোনটার জন্য বেঁচে গেলে।”

“হয়ত ভাই।”

“হয়ত না সত্যি।কালকে রাতেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো।অথচ মায়া!কি সুন্দর মিথ্যা কথা বলল।হাউ ক্রুল!”

আরিয়ান কোন জবাব দিলনা।শুধু উঠে দাড়ালো বেঞ্চ থেকে।মাথা প্রচন্ড ধরেছে।এ মূর্হুতে কড়া ঘুমের ঔষধ দরকার।দিহানের দিকে আর না তাকিয়ে সে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।বেশ হাল্কা লাগছে এখন তার।দিহানকে বিষয়টা বলে এক হিসেবে ভালোই হয়েছে।এখন যদি মায়াকে ছেড়ে দেয় দিহান সেও সুবাহকে ডিভোর্স দিবে।যদি শেষমেশ মায়াকে পাওয়া যায় এতে। তাহলে বলে লাভই হয়েছে ক্ষতি হওয়া থেকে।
,
,
,

একসময় আজমল খানের সুখী পরিবার ছিলো।স্ত্রী, পুত্র,কন্যাসন্তান সহ বেশ ভালো ছিল।বড় ছেলের নাম সবুজ,বড় মেয়ের নাম মায়া আর ছোট মেয়ের নাম ওয়াফা।সবুজ বিবাহিত ছিল।এবং বেশ সুখী পরিবার ছিল তার।কিন্তু হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।যে খাবারের টেবিলটা পূর্বে খাওয়ার সময় সর্বক্ষণ কোলাহলে মুখরিত থাকতো তা এখন নিস্তব্ধতায় মুড়ানো।আজমল খানের পাশে বসে চুপচাপ সকলে খেয়ে নিচ্ছে।টেবিলের এক প্রান্তে বসে মেয়ে মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছে সবুজ।ছোট ছোট করে মেঘের মুখে তুলে দিচ্ছে খাবার।

একবার সেদিকে তাঁকিয়ে সবুজের উদ্দেশ্য আজমল খান বলল,

“সবুজ তুমি খেয়ে নেও মেঘের সাথে সাথে।”

মেঘকে খাওয়াতে খাওয়াতে সবুজ উত্তর দিলো,

“না বাবা খাবো না আমি।”

“কেন?তোমার তো ঔষধ আছে।”

“হুম আছে।কিন্তু যার বোন আইসিইউ তে জন্ম-মৃত্যু নিয়ে লড়ছে ভাই হিসেবে অবশ্যই মুখরোচক খাবার গুলো মুখে জুটবেনা।”

খাওয়া অফ হয়ে গেল সবার।আশ্চর্য হয়ে হুসনে আরা জিজ্ঞেস করলো,

“মানে?মায়ার কি হয়েছে?”

সবুজ প্রশ্নটার উত্তর দিলো না।ওয়াফার দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সবুজ,

“ওয়াফা একটা নিউস পেয়েছিস?”

“কোনটা ভাই?”

“অভিনেতা দিহান আহসান এর বিয়ের খবর?”

“হ্যাঁ শুনেছি তো।কিন্তু আমার মনে হয় ফলস নিউস।”

“না ফলস নয়।তিনদিন আগে মায়া আর দিহানের বিয়ে হয়েছে।এবং তা আমার সামনে ভিডিও কলে।”

টেবিলে মনে হয় বর্জ্যপাতের মতো অবস্থা হলে সবাই।ওয়াফা তো একটা চিল্লানো দিয়েছে।কারণ ওর প্রিয় নায়ক দিহান।উত্তেজিত হয়ে সবুজকে বলল,

“ভাই সত্যি!আমি আপুর কাছে যাবো।”

কথাটা শুনে আজমল খান ওয়াফাকে একটা ধমক দিলেন।

“কীসের আপু?বিয়ে করেছে একবার জানালোও না।মরলেও তো যাবো না।”

“তোমার দোয়া কবুল হয়েছে বাবা।তুমি বলেছিলে মায়াও যেন মেঘের মায়ের মতো অপঘাতে মরে।বিশ্বাস করো মায়া এখন মৃত্যু পথযাত্রী।আজকে দুপুরে ওর মারাত্বক এক্সিডেন্ট হয়েছে।”

,
,
,
মায়ার জ্ঞান এসেছে।দূর্ঘটনার মোট চব্বিশ ঘন্টা পরে।জ্ঞান এসেছে প্রায় সাত ঘন্টা।এখন একটু আধটু চোখ তুলে তাকিয়ে সবাইকে দেখতে পারছে।আইসিইউ থেকে শিফট করা হয়েছে।বেশ আশঙ্কামুক্ত এখন।মায়ার জ্ঞান ফিরার পরবর্তী সময় থেকে ওকে এক দন্ডও ছাড়েনি দিহান।মেয়েটার উপর রাগ আছে আবার ভালোবাসাও আসে।এই ভালোবাসার জন্য রাগ দেখাতে পারেনা।

দিহানকে দেখে বেশ অবাক লাগলো আরিয়ানের। সব জানার পর কীভাবে শান্ত? মায়ার পরিবারের সবাই এসেছে সেই রাতে।এমনকি তার বাবাও।হাজার হোক বাবা তো।মেয়েকে দেখে বেশ ভেঙে পরেছে ভদ্রলোক।

মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দিহান।ঠিকমত ঘুম না হওয়ার কারণে চোখ-মুখ বিদ্ধস্থ তার।একটু মুখ নামিয়ে মায়ার শুস্ক অধরে চুম্বন প্রদান করলো দিহান।আলতো করে।এমনভাবে যেন তার শরীরের সব বিষকে টোঁকা মেয়ে ফেলে দিল।ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে তা রিসিভ করে বাহিরে চলে গেলো।

ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তির ভাষ্যমতে মাসুদ সাহেব মায়ার এক্সিডেন্ট করায়নি।এটা মাসুদ সাহেব নিজে বলেছে তাকে। আর মিথ্যা বলেছে যাতে ভয় পায় দিহান তাকে দেখে।অথচ এটা যে হত্যার চেষ্টা তা স্পষ্টত।যদি মায়াকে মাসুদ সাহেব না মারতে চায় তাহলে কে সেই ব্যক্তি যে মায়ার জীবন প্রদীপটাই নিভাতে চায়?

চলবে,,