#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২৪
লিখাঃসামিয়া খান
রাস্তা দিয়ে এলোমেলো ভাবে হেঁটে চলেছে মায়া।এখনও স্ট্রেচার নিয়ে হাঁটতে হয়।যার কারণে খুব কষ্ট হয় হাঁটতে।তবুও দিহান এর থেকে বাঁচতে তাকে হাঁটতে হচ্ছে।ভিনেজ এ লতাপাতার মতো ক্যানেল থাকায় কোন গাড়ী চলাচল করেনা।এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোট্ট নৌকা ব্যবহার করা হয়।তারাহুরো করে তখন মায়া নৌকা থেকে নেমে এসে পড়েছে।কিন্তু এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে।এভাবে আর হাঁটতে পারছেনা সে।ছোট ছোট কদমে মায়া এগিয়ে চলেছে আর তার পাশে দিহান শান্ত চোখে হাঁটছে।
“বিবিজান হাঁটতে তো কষ্ট হচ্ছে।”
মায়া হিংস্র হয়ে উঠলো হুট করে।দিহান কে দেখার পর থেকে একটা কথাও বলেনি সে।কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারলো।দিহান এর সামনে দাড়িয়ে আঙুল নাচাতে নাচাতে বলল,
“তোর বিবিজানের গুষ্টির ষষ্ঠী কিলাই।আর একবার যদি আমার পিছনে আসতে দেখি তো তোকে একটা বিড়াল এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
মায়ার কথায় দিহান বেশ হতভম্ব হয়ে গেলো।হাসবে না কাঁদবে তা বুঝতে পারছেনা।
“আচ্ছা অলরেডি তো আমার একটা বিড়ালের সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তাহলে আবার কেন?”
“শিক্ষিতকে বুঝানো যায় ইশারায়, অশিক্ষিত বুঝানো যায়না ঘাড়ে গুঁতিয়ে।আপনার হয়েছে ওই অবস্থা।”
“ম্যাডাম, আমি অশিক্ষিত নই।বাট আপনার কথার মর্মাথ হলো এই যে আমি যেন আপনার পিছনে না যাই।অথচ আমি তো তোমার পাশে পাশে চলছি।”
“আপনি ডিম চিনেন?ইয়া বড় ডিম?”
“ডিম চিনি।কিন্তু ইয়া বড় ডিমটা কি হাতির?”
“না আপনার।”
“এই হ্যালো বিড়াল!আমি ছেলে।তো ডিম দেওয়া আমার দ্বারা হবেনা।”
“তো মুরগীর কাছ থেকে চুরি করে ডিমকে তা দেন।তাও আমার মাথা চিবাবেন না দয়া করে।”
কথাটা বলে মায়া দেখতে পেলে তার পাশে কেউ নেই।এবং সম্পূর্ণ ফাঁকা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে সে।তাও একা।বেশ খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক উুঁকি ঝুঁকি দিয়ে মায়া আবার চলতে শুরু করলো।মাথা কাজ করছেনা তার।তাহলে কি এতসময় সে দিহানকে কল্পণা করছিল?কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব?তখনকার ওই অধর স্পর্শ তো ভুল হতে পারেনা আর।
,
,
জীবনে আরো একবার নিজের দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারবে এটা কখনো ভাবেনি সবুজ।এক্সিডেন্টের পর সমস্ত আশা স্বপ্ন মিটে গিয়েছিল।সেই আশা স্বপ্নকে পুনরায় রংতুলি দিয়ে রাঙিয়ে নিয়েছে দিহা।ইদানীং এক আলাদা অনুভূতি হয় দিহার প্রতি তার।ভালোলাগা, ভালোবাসা সকল কিছুর সংমিশ্রণ।মানুষের ধারণা ভালোবাসা ও ভালোলাগা এক নয়।অথচ যেখানে ভালোলাগা তৈরী হইনি।সেখানে ভালোবাসা কি তৈরী হওয়া সম্ভব?বড় কঠিন প্রশ্ন এটা।যা সবুজের মতো যান্ত্রিক ব্যবসায়ীর বোধগম্য হবেনা।
“কি ভাবছেন আপনি?”
দিহার কথায় চেতনা ফিরে আসলো সবুজের।দিহার দিকে তাঁকিয়ে সামান্য হেসে বলল,
“ভাবছিলাম অনেক কিছু নিয়ে।”
“তা অনেক কিছু সেটা কি?”
“তা নাহয় অজানা থাক।”
“আপনি বললে থাক।অনেকসময় কিছু কথা নিজের ভিতরে রাখতে হয়।তা নয় মানুষের কাছে নিজের মূল্যবোধ কমে যায়।”
“আপনি কি সাহিত্যিক হয়ে গেলেন দিহা?”
“মোটেও না।সাহিত্য অনেক কঠিন একটা জিনিস।অনেক মানুষ সারাজীবন চেষ্টা করেও সাহিত্যের আসল রস আস্বাদন করতে পারেনা।আবার অনেকে ছোট্ট বয়সে সাহিত্য সম্পর্কে গভীর ধারণা উপোলব্ধি করতে পারে।”
“তা অবশ্য ঠিক।”
“কিছু মানুষের ধারণা তারা দুই -চার লাইন লিখলে বা শব্দ সঠিকভাবে বিন্যস্ত করতে পারলেই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুণী ব্যক্তি হয়ে গিয়েছে।আদৌ কি আসলে তারা হতে পেরেছে?”
“এই টপিকটাতে অনেকটা তর্ক-বিতর্কের পর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।তার আগে বলা মুশকিল।”
“হুম।”
“দিহান পৌঁছেছে ভেনিসে?”
“হ্যাঁ।আর মায়ার সাথে দেখাও হয়েছে বলল।”
“মায়া কিন্তু অনেকটা জেদী।সহজে মানানো যায়না।”
“আচ্ছা ওই মহিলাটা কি সত্যিই মায়ার মা?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে এতদিন কই ছিল সে?”
“দিহা!আপনাকে একটা ঘটনা বলব।শুনবেন?”
“জ্বী বলেন।”
“নবাব আলিবর্দি খানের বড় কন্যা ঘসেটি বেগম কিন্তু ইনফার্টেল ছিলেন।তার কোন সন্তান ছিলনা।এজন্য ছোট বোন আমিনা বেগম মানে নবাব সিরাজউদৌল্লার ভাই একরামউদ্দোলাকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।তার ইচ্ছা ছিল একরামউদ্দৌলা নবাব হবে।অথচ নিয়তি খারাপ হলে যা হয়।বসন্ত রোগে একরামউদ্দৌলা মৃত্যুবরণ করেন।আর রাজা হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলা।”
“এ কারণে ঘসেটি বেগম এতো ক্ষুব্ধ ছিলেন নবাবের উপর?”
“কিছুটা।কিন্তু আরো কারণ আছে।তা অন্য একদিন বলবো।”
“মনে করে বলবেন কিন্তু।”
“ঠিক আছে।”
“হঠাৎ এ ইতিহাস কেন বললেন?”
“কারণ মায়ার কাহিনির সাথে এ কাহিনির কিছুটা মিল আছে।বাবা আমাকে এটুকুই বলেছে।আমি এটা বুঝতে পারছিনা বাবা-মা আসল ঘটনা কেন বলছেনা?”
“আমিও না।”
“হোপ সো দিহান আসল ঘটনাটা কি তা খুঁজে বের করতে পারে।তা নয় মায়ার পরিণতি করুণ হয়ে যাবে।”
,
,
,
মায়ার এরকম নিরবতা বেশ ভাবাচ্ছে লিরাকে।সন্ধ্যায় বাহিরে থেকে আসার পর কীরকম যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে সে।খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে রয়েছে।লিরার যেন কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছে মায়ার উপর।নিজের সন্দেহকে কিছুটা দূরে রেখে মায়ার পাশে গিয়ে বসলো লিরা।
কফির মগ এগিয়ে দিলো তার দিকে।
“মায়াবতী!কিছু কথা বলি তোমাকে?”
“জ্বী বলেন।”
কিছুটা কেশে নিলো লিরা।
“আরিয়ানের সাথে তোমার পরিচয় কোথায় হয়েছে?”
“হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
“বলো না।এমনি করলাম।”
“ইন্সটা থেকে।”
“আচ্ছা।তারপর প্রেম।তাহলে এটা ভাঙলো কেন?আর কীভাবে?”
“জানা কি খুব প্রয়োজন?”
“ধরে নেও তাই।”
“আমাকে যখন বাবা বের করে দিল বাসা থেকে তখন আরিয়ান নিজে একটা ফ্ল্যাটে রাখে আমাকে।আমার সমস্ত খরচ সে দিতো।এমনকি বিয়ের জন্য প্রোপজও করেছিল।কিন্তু হঠাৎ করে আরিয়ান পাল্টে যেতে শুরু করে।এজন্য প্রচুর কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হতো।শেষে আরিয়ান সব শেষ করে দেয়।যার ফলস্বরূপ কিছু মাস পর সুবাহ আপুকে বিয়ে করে।”
“কেন করলো আরিয়ান?”
“জানিনা।”
“আমি জানি।”
“ওহ।”
“শুনবে?”
“বলেন।”
“তোমার ভবিষ্যতের জন্য।তোমাকে যাতে সর্বোচ্চ সুখ দিতে পারে তাই।”
“ওহ এটা আমি আগেও শুনেছিলাম।”
“অথচ তাও তুমি দিহানকে বিয়ে করলে?দিহান একটা ভেজালযুক্ত ছেলে।আর আরিয়ান ভেজালমুক্ত।”
“মানুষের উচিত না বর্তমান কষ্ট দিলে অতীতকে মনে রাখা এবং অতীতের ভুলগুলো ভুলে যাওয়া।”
“বাট মায়া তুমি একবার…”
ডোরবেল বাজাতে কথাগুলো অসম্পুর্ন থেকে গেল।সার্ভেন্ট দরজা খুলে দিলে ভেতরে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলো দিহান।লিরা বাকরুদ্ধ দিহানকে দেখে।মুখটা হা হয়ে গিয়েছে তার।
“শাশ্বড়ী আম্মাজান মুখ বন্ধ করুন তা নয় ডায়নাসোর ঢুকবে।”
লিরার দিকে আর না তাঁকিয়ে দিহান সোজা গিয়ে মায়ার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।মায়া মোটেও দিহানের এই কান্ডে অবাক হইনি।দুই হাত দিয়ে মায়ার গাল টেনে মায়ার পেটে মুখ গুজলো দিহান।
“জানো বিলাইবউ খুব তাড়াতাড়ি আমার একটা ছোট্ট বিড়ালছানা জন্ম নিবে এখান থেকে।”
“আপনি কীভাবে জানলেন?”
“স্ত্রীর সন্তান হবে আর স্বামী তা জানবেনা?আর এটাও জানি তোমার দেড়মাস রানিং।তো এখন একটু আমার বিড়াল ছানাকে আদর করতে দেও।”
দিহান আর মায়ার কথোপকথনে লিরার পায়ের নিচে মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম।যদি সত্যিই মায়া কনসিভ করে থাকে তাহলে সে যা চায় তা কখনো বাস্তবায়ন হবেনা।
চলবে,,,
#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২৫
লিখাঃসামিয়া খান
রাগে গা কাঁপছে সুবাহার।থরথর করে কাঁপছে সে।তীব্র হিমের কারণে মানুষ যেরকম ঠকঠক করে কাঁপে ঠিক সেরকম।সুবাহার এই কম্পণের কারণ শীত নয় রাগে থরথর করে কাঁপছে সে।প্রচন্ড কম্পণের ফলে এখন বারংবার ঢোক গিলছে।তার সামনে এক চেয়ার এর উপর বসে আছে স্বাধীন।চোখদুটো রক্তজবার মতো লাল।প্রাচীনকালে কিছু সাধু বা অঘোরী ছিল যারা সিদ্ধি খেতো।যার দরুণ তাদের চোখ সবসময় টকটকে লালবর্ণ ধারণ করে থাকতো।যদিও তারা এখনো বিদ্যমান ভারতের কিছু অঞ্চলে।
স্বাধীনের চোখগুলো ঠিক সেরকম ঠেকছে সুবাহার কাছে।পুরাদস্তর ড্রাগ এডিকটেড হয়ে গিয়েছে স্বাধীন।ইউভার্সিটির সেই টপ করা ছেলেটা আজকে নেশায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছে।এখনও পুরো নেশায় স্বাধীন।তা বেশ বুঝতে পারছে সুবাহ।সুবাহকে নিয়ে একটা ক্লাস রুমে দরজা আঁটকে বসে আছে স্বাধীন।হাতে একটা হকি স্টিক।যার মাথা মেঝের সাথে লাগিয়ে ঠক ঠক একটা আওয়াজ তৈরী করছে।পুরো রুমে সেই আওয়াজটা অদ্ভুত গাম্ভীর্যের সৃষ্টি করছে।
“স্বাধীন আমাকে যেতে দেও।”
সুবাহার কথায় কোন উত্তর দিলনা স্বাধীন।জবাবে হাসলো।দানবীয় হাসি।যে হাসির শব্দ বাতাসে কম্পণ সৃষ্টি করে দেওয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়ছে।এতে আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো সুবাহ।পূর্ণ তেজে বলল,
“তুমি কি আমাকে যেতে দিবে স্বাধীন?আমি অন্তঃসত্ত্বা।আমার সাফোকেটেড ফিল হচ্ছে।”
ঠকঠক আওয়াজটা থেমে গেল।সুবাহার উপর নেশাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো স্বাধীন।যা বরাবরের মতো সুবাহ উপেক্ষা করলো।ভাঙা ভাঙা গলায় শব্দ ছুড়ে দিল স্বাধীন,
“কেন করলেন ম্যাডাম আপনি?”
“আমি কি করেছি?”
“জানেন ম্যাডাম!আপনাকে আমি ভালোবাসি।গভীর থেকে গভীরে এই ভালোবাসার স্থান।”
“তাতে আমি কি করবো স্বাধীন?আমি বিবাহিত।এবং আমার সন্তান আসতে চলেছে।তার থেকে বড় কথা আমি তোমার থেকে বড়।তোমার শিক্ষিকা।এত হীন চিন্তাধারা করতে পারো কীভাবে তুমি?”
“ভালোবাসা করতে কি বয়স লাগে ম্যাডাম?”
“ডায়লগ দেওয়া বন্ধ করো স্বাধীন।এবং আমাকে যেতে দেও।”
“দিবো না।কেন জানেন?”
“কেন?”
“আপনি যদি এখানে দুই ঘন্টা আমার সাথে বন্ধী থাকেন তাহলে বাহিরে একটা রটনা রটবে।”
“কীরকম?”
“প্রফেসরের সাথে ছাত্রের ইটিস পিটিস চলছে।”
কথাটা বলে আবার সেই দানবীয় হাসি শুরু করলো স্বাধীন।হাসতে হাসতে চোখের কোণায় পানি এসে গিয়েছে।ডান হাতের তালুর কীনারা দিয়ে চোখ মুছে নিলো।
“তারপর!তারপর শুরু হবে আসল খেলা।আপনার সো কল্ড ডক্টর স্বামীটা বলবে বাচ্চাটা আমার নয়।আমি গিয়ে বীরের মতো বাচ্চাকে নিজের নাম দিবো।ব্যাস হয়ে গেলেন আপনি আমার।”
কথাগুলো বেশ স্থির হয়ে শুনলো সুবাহ।চুপচাপ কোন নড়াচড়া করছেনা।তর্জনী আর বৃদ্ধা অঙুলি নিয়ে হাতের বালাটা খুঁটে চলেছে।সেদিকে একবার তাঁকিয়ে একটা সিগারেট ধরালো স্বাধীন।মুখ থেকে ধোঁয়া ছেড়ে বলল,
“তো কেমন হয়েছে ম্যাডাম প্ল্যানটা?”
“হুম।আমার বাচ্চার বাবা স্বাধীন।আরিয়ান নয়।”
“হুম,এটাই ভবিতব্য।”
সুবাহ কিছু বলল না।চুপ করে বসে থাকতে থাকতে থাকতে শুধু ঢলে পড়ে যাচ্ছে তা দেখে দ্রুত গতিতে স্বাধীন তাকে বাহুডোরে আকড়ে ধরলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ মেলে তাঁকালো সুবাহ।সর্বশক্তি দিয়ে স্বাধীনকে ধাক্কা মারলো।ছিটকে পড়লো স্বাধীন।হাতের কাছে হকি স্টিক পেয়ে ইচ্ছামতো আঘাত করলো স্বাধীনের উপর সুবাহ।
এমনিতে নেশায় ডুবে ছিল স্বাধীন।সেজন্য সুবাহকে তেমন একটা বাঁধা দিতে পারলো না।শুধু ব্যাথায় ককিয়ে উঠছে বারংবার।বেশ কিছুক্ষণ ইচ্ছামতো মেরে থামলো সুবাহ।উঠার মতো পরিস্থিতে নেই এখন স্বাধীন।হাতের হকি স্টিকটা ফেলে দিয়ে জঘন্য এক গালি দিলো স্বাধীনকে উদ্দেশ্য করে।পাশে পড়ে থাকা ব্যাগটা উঠিয়ে ক্লাসরুম থেকে চলে গেলো।ওখানে ধূলোতে এখনও পড়ে আছে স্বাধীন।কপালে ও নাকে রক্ত।সুবাহার যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ দৃষ্টিবন্ধ করে রাখলো। হুট করে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।পরক্ষণে শুরু করলো কান্না।আহাজারি কান্না!
,
,
,
ভেনিসের থাকার জন্য অন্যতম আবাস হোটেলের নাম “হোটেল ড্যানেয়েলি”। সেখানে উঠেছে রিশা ও দিহান।দিহানের সাথে রিশাও এসেছে ভেনিসে।হোটেল ড্যানেয়েলির পাশে রয়েছে বিখ্যাত এবং প্রাচীনতম ক্যাফে ” ক্যাফে ক্লোরেন”।ক্যাফেটি ১৭২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এ ক্যাফের আউটডোরে বসে অক্রেস্টার বেজে চলেছে।তার সাথে গরম গরম এসপ্রেসো খেতে বেশ ভালো লাগছে রিশার।
সামনে বসে আছে দিহান।সদ্য গোসল করে এসেছে।চুলগুলো এখনো কিছুটা আদ্র।গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে সে।
“কী ভাবছো দিহান?”
“ভাবছি কিছু।”
“কি?”
“মায়ার প্রতি কোন ভালোবাসা নেই লিরার।”
“তা কীভাবে বুঝলে?”
“বিহেভিয়ার দেখে বরং রয়েছে চরম ঘৃণা।”
“কীভাবে বুঝলে?”
“বললাম তো চোখ মুখ দেখে।”
“ঘৃণাটা কীরকম?”
“হিটলারের সহযোগী ছিলেন আইখম্যান।
তিনি ছিলেন গ্যাস চেম্বারে ডুকিয়ে ইহুদীদের হত্যা করার রুপকার।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে হিটলারের পরাজয় হলে তিনি ব্রাজিলে পালিয়ে যান এবং ছদ্মবেশে একটি কৃষি ফার্মে কাজ করেন।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি,
অনেক বছর পর তিনি ধরা পড়েন ইহুদীদের হাতে। ইহুদীরা তার প্রতি খুব রেগে ছিল।তাকে হত্যা করার সব প্রস্তুতি শেষ করল।মৃত্যুর পুর্বে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি মৃত্যুর পুর্বে ইহুদী ধর্ম গ্রহন করার কথা বলেন। তার এমন ইচ্ছার কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিল। বলল, বাছাধন, তুমি মনে করেছ, ইহুদী ধর্ম গ্রহন করলেই ইহুদীরা তোমায় মাফ করে দেবে! তা হবে না। মরতে তোমায় হবেই।
কয়েকজন কৌতুহলী জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা তোমার এই ইচ্ছা কেন হলো?
বলো তো?
আইখম্যান নির্ভিকার চিত্তে বললো, ” তোমরা যে আমায় ছাড়বে না, এটা আমি নিশ্চিত। তাই মারা যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই, আরেকটা ইহুদী মারা গেল।”ইহুদীদের প্রতি কতটুকু ঘৃনা থাকলে মৃত্যুর আগেও আরেকটি ইহুদীর মৃত্যু দেখতে চায়!”
“এই ঘটনা বলার কারণ হলো লিরা ঠিক এতটুকু ঘৃণা করে মায়াকে।”
“জ্বী।ওকে মারতেও চায়না আবার ভালোভাবে বাঁচতেও দিতে চায়না।”
“তুমি এত শিওর কীভাবে এগুলো?”
“শিওর না।ধারণা থেকে বললাম।”
হুট করে অনেক জোড়ে একটা চাটি পড়লো দিহানের মাথায়।তার মাথাটা কিছুটা ঝুঁকে গেল।হতবিহ্বল হয়ে গেলো সে।অনেক রাগে ঘুরে গিয়ে ঘুষি দিতে যাবে দিহান তখন দেখতে পেলে তার সামনে মায়া দাড়িয়ে রয়েছে।চোখ ভর্তি পানি।
“কি হলো মার আমাকে দিহানের বাচ্চা।”
হাত নামিয়ে দিহান জবাব দিল,
“আমার বাচ্চা এখনো আসেনি।”
“এখন বুঝলাম তুই আমার জন্য আসিসনি।এসেছিস প্রি-হানিমুন করতে তোর রিশার সাথে।শালা খচ্চর।”
মায়া অনেক জোড়ে জোড়ে স্ট্রেচার নিয়ে চলে গেলো।কিছুক্ষণ সেদিকে তাঁকিয়ে থেকে দিহান ছুট লাগাবে তার আগে রিশাকে বলল,
“প্লিজ রিশা বিলটা পে করে দিও।আপাতত আগ্নেগিরি বউকে সামলাতে যাচ্ছি।দোয়া করো জ্বলে না যাই।”
চলবে,
#ছবিয়াল_মানসি