ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-২৯

0
2586

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_29
Writer::Shaanj Nahar Sanjida


যাক অবশেষে গ্রামের মাটিতে পা রাখলাম।এখন ওই গ্রামের প্রধানকে কে বাঁচায় আমি দেখবো?
বলেই আমি গ্রামের প্রধানের বাড়িতে ঢুকলাম।কিন্তু চুপি চুপি।তবে বাড়িতে ঢুকেই আমি অবাক কারণ সেখানে আর কেউ না রামিন আঙ্কেল রাইসা আন্টি আর তুলি তিশা।সবাই মিলে বসে বসে চা খাচ্ছে আর সাথে সেই ওয়েটার ছেলেটা।তারমানে এইসবের পিছনে তারা জড়িত!এতো বড়ো ষড়যন্ত্র কি করে করতে পারলো তারা! দাড়া এদের সব কথা বরং আমি রেকর্ড করে নেই,,
বলেই ফোনটা ওদের দিকে ধরলাম।

থ্যাংকস।আপনার সাহায্যর জন্য।(রামিন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে)

আরে টাকার কাছে সবই হার মানে।আর কোটি টাকার কাছে তো আরো আগে।(গ্রামের প্রধান)

আপনি আর আপনার ছেলে না থাকলে তো আমরা আভি আর আস্থাকে ফাঁসাতেই পারতাম না।(তুলি)

তা ঠিক।আমার ছেলেকে ওয়েটার বানিয়ে তো ওদের কোল্ড ড্রিংকস এ ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছি।(গ্রামের প্রধান ওয়েটার ছেলেটার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে)

তারমানে এই ওয়েটার গ্রামের প্রধানের ছেলে।আর ও টাকার বিনিময়ে আমাকে আর আভিকে ফাঁসিয়েছে?সাহস তো কম না?তোদেরকে চিবিয়ে খাবো আমি দারা।কিন্তু তার আগে আমাকে এইটা জানতে হবে উনি এইটা করলো কেনো?(আমি রাগে দাত কামড়ে)

কিন্তু রামিন সাহেব আপনি এইটা করলেন কেনো?না মানে আপনি যদি বলতে না চান তাহলে কোনো সমস্যা নেই।টাকা তো মুখ বন্ধ করে দেয়।(গ্রামের প্রধান)

না।রামিন আঙ্কেল বলেন।বলেন কেনো আপনি এমন কেনো করেছেন?(আমি মনে মনে)

আরে আপনার কাছে আর কি লুকাবো?আপনি তো সবই জানেন।
বলেই রামিন সব বললো কেনো ওর আদি আর জিসানের কাছ থেকে বদলা নিতে চায়!আর এই বদলা নেয়ার জন্য কি করে ও আভি আর আস্থাকে ব্যবহার করেছে।

হায় আল্লাহ।এই লোক কি মরার ভয় করে না।কি করে পারলো এতো জঘন্য কাজ করতে!দ্বারা তোকে দেখাচ্ছি মজা।
বলেই আমি বের হতে যাবো তার আগেই কোথা থেকে যেনো বাবা,,মা আদি আঙ্কেল,,সুমাইয়া আন্টি,,আয়ুশ আর ছায়া বেরিয়ে এলো।তার সাথে গ্রামের সবাই আর পুলিশ আসলো।যারা যারা আমাদের অপবাদ দিয়ে,,আমাদের চরিত্রে আঙ্গুল তুলেছে।
ও মা।এই জনগোষ্ঠী কোথা থেকে আসলো।কি হচ্ছে এখানে?(আমি কোনায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি)

তোমরা এখানে আমার ছেলেরা কোথায়?ওরা তোমাদের কি করে ঢুকতে দিলো?(গ্রামের প্রধান)

আপনি ওই রাস্তার ছেলেদের কথা বলছেন।ওরা আমার ট্রেনিং প্রাপ্ত বডিগার্ডদের সামনে টিকতে পারলো না।গিয়ে দেখুন একটা তাদের ভাঙ্গা হাত পা নিয়ে কাদছে।
বলেই হিরোর মতো এন্ট্রি নিলো আভি।

লে হালুয়া।এনার আসাই বাকি ছিল।উনারও এন্ট্রি হয়ে গেলো।(আমি কোনায় বসে বসে)

দেখলেন তো আপনাদের গ্রামের প্রধান এই কাজের সাথে জড়িত।উনিই আমাদের শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে আমার স্ত্রী আর আমার মানহানী করার চেষ্টা করেছে।(আভি গ্রাম বাসীর উদ্দেশ্য ভাষণ দিয়ে)

আমাদের ক্ষমা করে দাও বাবা।আমরা জানতাম না এইসব। আজকের পর থেকে আমরা কখনই না জেনে শুনে কোনো কথা বলবো না।আর উনাকে আমরা আমাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিবো।(গ্রামের লোক)

উনাকে যা করার আমরাই করবো।এখন যেহেতু আপনাদের সামনে সত্যিটা এসে গেছে আপনারা আসতে পারেন।(আভি)

পরেই সবাই চলে গেলো।

তোমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই আমি ওদের সাথে জড়িত।আর ওই অশিক্ষিত গ্রাম বাসীর বয়ান কেউ গ্রহণ করবে না।(গ্রামের প্রধান)

কে বলেছে আপনার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।আপনারা যে ব্যাংকে টাকা আদান প্রদান করেছেন ওইটার রেকর্ড আমার কাছে আছে।কেউ তো আর আপনাকে কোটি টাকা এমনি এমনি দিবে না।আর হা এতো ক্ষন আপনারা যা বলেছেন তা সব রেকর্ড করা হয়েছে।(আভি)

আমি ভাবতেও পারিনি তুই(রাইশা)কোনো দিন এতো নিচে মেনে যাবি!(সুমাইয়া)

রাইসা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমার কাছে বদলা নেয়ার জন্য তুই এত নিচে নেমে গেলি যে আমার মেয়েটাকেও ছাড়লি না।(জিসান)

রামিন চুপ করে আছে।

আমার আস্থা কোথায়?(আভি রামিনের কলার চেপে ধরে)

আমরা জানি না আস্থা কোথায়?(তিশা)

মিথ্যা কথা বলো না।বলো আমার বোন কোথায়?(ছায়া)

মনে হয় সবার লাস্টে আমারই এন্ট্রি লিখেছে লেখিকা।কি আর করার যাই এন্ট্রি মারি।(আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)

((আমি কিছুই করি নাই — লেখিকা😒))

ছায়া আমি এখানে(আমি হাত তুলে)

আভি রামিনকে ছেড়ে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।

আস্থা আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে যাও তুমি হ্যাঁ?তুমি জানো আমি কতো টেনশন করি তোমায় নিয়ে।(আভি আমাকে জড়িয়ে ধরে)

কাউকে কিডন্যাপ করে ঘরে বন্দী করলে সে তো পালাবেই!এইটা তো আর নতুন কথা না।(আমি মুখ ফুলিয়ে)

আভি আমাকে ছেড়ে আমার নাক টেনে বললো
খুব দুষ্টু হয়ে গেছ তাই না?খালি আমাকে ছেড়ে পালাতে চাও।আমি ধরে রাখবো পালাতে দিবো না।

যতই ধরে রাখবো ততই পালাবো যদি ছেড়ে তাহলে আবার ফিরে আসবো।তখন আর পালাবো না।(আমি মুচকি হেসে)

তাই নাকি!(আভিও হেসে)

আদি আর জিসান খুক খুক করে কাশি দিয়ে।

বাবা আভি পুলিশ সেই কখন থেকে এসে দাড়িয়ে আছে। ভিলেনদের একটা ব্যবস্থা করে তার পর না হয় তোমরা রোমান্স করো কিছু বলবো না।আমরাও চোখ কান বন্ধ করে রাখবো।(জিসান)

আভি আর আমি দূরে সরে গেলাম।
ইস কি লজ্জার কথা!(আমি মনে মনে)

সবার সামনে এখন নিজেকে কন্ট্রোল করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।(আভি মনে মনে)

অফিসার ওদের নিয়ে যান।আর সব প্রমাণ তো আপনাদের হাতে দিয়েই দিলাম।(আভি)

ইয়েস মি আভি।
বলেই অফিসার ওদের নিয়ে গেলো।

আমি আর আভি আমাদের এক হয়ে যাওয়ার উপর হাসছি তখনই পিছন থেকে তুলি আমার নাম ধরে ডাকলো

আস্থা।(তুলি)

আমি পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম তুলি ওর হাতে পিস্তল নিয়ে আমার দিকে তাক করে দাড়িয়ে আছে।

আস্থা।(কলি জিসান চিৎকার করে)

তুলি এইসব কি করছো তুমি?(আভি)

কেউ আগে আসবে না আসলেই আমি ওকে শেষ করে দিবো।(তুলি)

সবাই তুলির কথা মত পেছন ফিরে গেলো।

আভিকে আমি অনেক ভালোবাসি।শুধু আমার ভুলের কারণে ও এখন আমার থেকে দূরে।কিন্তু যেহেতু আমি ওকে পাইনি আমি তোমাকেও ওকে পেতে দিবো না।
বলেই তুলি আমার দিকে গুলি করলো।আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে দেখলাম আভি সামনে পড়ে আছে। গুলিটা আভির লেগেছে।আর দেহটা আমার সামনে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।

আমি আভি বলে একটা চিৎকার করে বসে পড়লাম।


ছয় বছর পর
আভা মা তাড়াতাড়ি উঠো তোমাকে রেডি করে আমাকে অফিসে যেতে হবে।(আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আম্মু আরেকটু ঘুমাতে দাও।(আভা আদো আদো করে)

না মা অনেক হয়েছে ঘুম।এখন আমাদের তৈরি হতে হবে।আজ আমার আভা মাটার প্রথম দিন স্কুলে।
বলেই আমি আভাকে তুলে ওকে রেডি করে দিলাম।


খাবারের টেবিলে
আভা খাচ্ছে আর আমি দেখছি আর ভাবছি কোনো একদিন আমাকেও আমার মা বাবা টেনে ঘুম থেকে উঠাতো।এমন একটা দিন ছিলো না ঘুম থেকে আগে উঠার জন্য বাবার কাছ থেকে লেকচার শুনতে হয়েছে।আর এখন আমিই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে হাটাহাটি করে খাবার বানিয়ে মেয়েটাকে খাওয়াচ্ছি।যেই আমি শশুর বাড়িতে পেঁয়াজের সাথে যুদ্ধ করেছি সেই আমি আজ কোনো সুন্দর করে আভার জন্য খাবার বানিয়েছি।সত্যিই আভার সাথে সাথে আমিও বড়ো হয়ে গেছি।(আমি কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আভার মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম)

আম্মু।তুমি কি কিছু ভাবছো?(আভা আদো আদো করে)

না মা।তোমার খাওয়া শেষ এখন চলো আমরা যাই।
বলেই ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
আভা লাফ দিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে আর one two বলে গুনছে। ও যখনই সিড়ি দিয়ে নামে না উঠে এইভাবেই পরে।


গাড়িতে
আমি ড্রাইভ করছি আর আভা পাশে সিটে বসে বসে কয়টা গাড়ি যাচ্ছে গুনছে।

আম্মু হান্ড্রেড গাড়ি গেছে।এখন কি করবো?(আভা মুখে আঙ্গুল দিয়ে)

আবার প্রথম থেকে শুরু করো।(আমি মুচকি হেসে)

ও শুধু হান্ড্রেড পর্যন্তই পারে।

আমি ড্রাইভ করছি তখনই বাবা ফোন করলো।আর ফোনটা দেখেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

আসসালমুআলাইকুম বাবা।(আমি)

তোর মনে আছে যে তোর বাবা আছে!(জিসান রেগে)

হুম।আছে তো।(আমি মুচকি হেসে)

না নেই থাকলে মানুষ অন্তত একটু ফোনটা ধরে।একটু খোঁজ খবর নেয়।(জিসান রেগে বোম হয়ে)

এই যে এখন ফোন ধরলাম।এখন বলো কেমন আছো?(আমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

বাসায় আয় তখন বলবো কেমন আছি!আজ এক্ষুনি আসবি।(জিসান)

এখন আসতে পারবো না।আমি আভাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি ওকে ড্রপ করে আসছি।(আমি)

ওকে।
বলেই জিসান ফোনটা কেটে দিলো।

নানু এমন করে তোমাকে বকে কেনো আম্মু?(আভা)

তুমি আমার কথা না শুনলে আমি যেমন বকি তেমনি আমি নানুর কথা শুনি না বলে নানু আমাকে বকে।(আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

পরেই আভাকে স্কুলে দিয়ে আমি ভাষণ শুনতে আমার বাড়িতে গেলাম।


খান বাড়িতে
আমি সুপি নুডুলস হাতে নিয়ে আগে সুপ খাবো না নুডুলস তা নিয়ে চিন্তায় মগ্ন।কিন্তু এদিকে বাবা একের পর এক ভাষণ দিয়েই যাচ্ছে।আর ওদিকে আমার কোনো মন নেই।
অবশেষে বাবা আমার থেকে নুডুলসের বাটিটা কেড়ে নিয়ে টেবিলে রাখলো।

আরে,,খেতে তো দাও।(আমি নুডুলসের দিকে তাকিয়ে)

আমার কথা শোন আস্থা।(বাবা আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো)

আমি বাবার দিকে অর্থহীন দৃষ্টিতে তাকালাম।

আস্থা,, ছয় বছর হয়ে গেছে।এখন তো তুই মুভ অন কর।(জিসান অনেক আশা নিয়ে)

কী করে মুভ অন করবো?(আমি মুচকি হেসে)

আমরা একটা ছেলে দেখেছি আমরা চাই তোরা ওকে বিয়ে কর।আদি আর সুমাইয়াও এইটাই চায়।আর ওই ছেলে তোর অতীত জেনেই তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।(জিসান আস্থার গালে হাত দিয়ে)

বাবা কোন বইয়ে লেখা আছে বিয়ে করলেই মুভ অন করা যায়?আর আমাকে মুভ অন করতে বলছো নাকি নিজেরা মুভ অন করতে চাইছো?কারণ আমি তো মুভ অন করেই ফেলেছি আভার সাথে।কিন্তু মনে হচ্ছে তোমারই করতে পারছো না।(আমি মুচকি হেসে)

আসু।(কলি)

আমি দাড়িয়ে বললাম,,
মা বাবা।এখন তোমাদের সত্যিটা গ্রহণ করে মুভ অন করা উচিত।আমি স্বামী একজনই আর সে আভি।আমি তার ছিলাম তারই থাকবো।
বলেই বেরিয়ে পড়লাম।


চলবে,,,^_^