তবুও ভালোবাসি পর্ব-১২

0
520

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১২
#রেজওয়ানা_রমা

পার্সেল এ ছিল ৩ টি পুতুল। একটা নতুন বউ তার পাশে একটা বরের সাজে একটা পুতুল একে অপরের হাত ধরে আছে। আর বরের সাজে পুতুলের বুকে চাকু দেওয়া আর চাকুর ওপর প্রান্ত ধরে আছে আরেকটি পুতুল।

মেহুলের বুঝতে বাকি রইল না যে রিয়ান কে মারার হুমকি দিয়েছে কেউ। কিন্তু কে দিয়েছে? আর কেনই বা দিয়েছে। আর এই ব্যক্তি টা কে যে রিয়ান কে মারতে চায়। মেহুল তারাতারি সব গুছিয়ে রেখে কাকে যেন কল দেয়,
– হ্যালো
-জ্বী ম্যাম
-ভাইয়া আজকে যে পার্সেল টা নিয়েছি এই পার্সল টা কোথা থেকে পাঠিয়েছে আর কে পাঠিয়েছে?
-ম্যাম আমাদের গাড়ি টা ঢাকা থেকে আসে কিন্তু কে পাঠিয়েছে সেটা তো বলতে পারব না।
-ঢাকা থেকে গাড়ি টা আসে না? তাহলে যে পাঠিয়েছছে সেও ঢাকা তেই থাকে।
– হয়তো।
-ওকে থ্যাংক ইউ ভাইয়া

বলে কল কেটে দেয় মেহুল। তার পর ভাবতে থাকে কে পাঠিয়েছে। রিয়ান কে কি জানাবে? নাকি না। আর কোনো কিছু না ভেবেই রিয়ান কে ফোন দেয় কাপা কাপা গলায় বলে,
– হ্যা হ্যালো
-কি ব্যাপার এতক্ষণে মনে পড়েছে আমার কথা?
-আপনি ঠিক আছেন?
-কি হয়েছে
-আপনি ঠিক আছেন? আচ্ছা আপনি যেখানে আছে সেটা তো সেফ তাই না?
-নীড় কি হয়েছে বলবে আমায়?
– আহ বলুন না
– হ্যাঁ নীড় আমি ঠিক আছি। আর আমি সেফ আছি এখন বলো কি হয়েছে।

মেহুল সব টা বলে দেয় কাদতে কাদতে। মেহুলের কথা শুনে রিয়ান কথা বলার ভাষা হারিয়েছে তবুও শান্ত্বনা দিয়ে বলে।

-আমার কিচ্ছু হবে না নীড় আমি একদম ঠিক আছি। তুমি চিন্তা করো না।
– (ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে)
-নীড় প্লিজ কান্না থামাও। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না নীড়। প্লিজ
-আপনি প্রতিদিন আমার সাথে কমপক্ষে ১০ বার ফোনে কথা বলবেন ( আদুরেস্বরে কাদতে কাদতে)
– কিহ!!! আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কান্না বন্ধ করো প্লিইইইইইইইজ
-(নিশ্চুপ)
– আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও কেমন। টেনশনের কিছু নেই। ঠিক আছে
-হুম।সাবধানে থাকবেন।

মেহুল কে বিদায় জানিয়ে রিয়ান ভাবছে কে পাঠাতে পারে এটা। তাকে তো খুজে বের করতেই হবে। আমার কলিজার চোখের পানির মূল্য তাকে দিতেই হবে।

আর এদিকে মেহুলের চোখে ঘুম নেই। দুশ্চিন্তায় সারারাত ঘুম হয় নি। মেহুল চায় না রিয়ানের কোনো ক্ষতি হোক। যতই রিয়ান মেহুল আর ঈশানের মাঝে বাধা হোক না কেন তবুও চায় না রিয়ানের কিছু হোক। তাও আবার তার জন্য।
আর ওদিকে রিয়ান সব কিছু জেনে যায় ঈশান আর মিরা দুজন মিলে মেহুল কে কি কি বলেছে সব কিছু রিয়ান জানতে পেরে রাগে ফুসতে থাকে। প্রচন্ড রেগে যায়। ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন কল দিয়ে বলে,
-আমি কাল আসছি। সব রেডি রেখো
– জ্বী স্যার
– আর খোঁজ নাও কে এই পার্সেল পাঠিয়েছে
-ওকে স্যার। আমি আজকে রাতের মধ্যেই আপনাকে জানাবো
-ওকে

আজ শুক্রবার। রিয়ানের ছুটি আছে। তাই সে বেরিয়ে পড়েছে। উদ্দেশ্য আগে তার প্রেয়সীর কাছে যাওয়ার। গাড়ি উঠেই ফোনে কাউ কে বলে,
-যেমন টা বলেছি তেমন ভাবেই কাজ করবি। ভুল যেন না হয়
– আরে বাবা হবে না হবে না। তুমি নিশ্চিত থাকো হিহিহি
-হুম সময় মত পৌঁছে যাবি। লেট করিস না কিন্তু।
-ওকে ওকে ওকে। এত ভাবছো কেন। সারপ্রাইজ টা নষ্ট হবে না। চিল
-হুম। রাখছি বাই
-বাই

আর এদিকে রিফা সেই সকাল থেকে বায়না ধরেছে আজকে লাঞ্চ বাইরে করবে। মেহুল কোনো মতেই রাজি না। মেহুল কাজ করছে আর রিফা মেহুলের আঁচল ধরে মেহুলে ঘুরে বেরাচ্ছে
-ভাবি চলো না যাই প্লিজ প্লিজ প্লিজ
-গেলে সবাই একসাথেই যাবো মা বাবা কে নিয়েই।
-ধুরু আব্বু আজকে কোথাও যাবে না। একদিনই সময় পায়। রাজিই হবে না। আর আব্বু না গেলে আম্মুও যাবে না।
-আমরাও যাবো না। এখন সরো আমার অনেক কাজ আছে রিফু মনি (গাল টেনে)
-যাও না মা মেয়ে টা এত করে বলছে( মেহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে মা বললেন)
-কিন্তু মা তুমি আর বাবা না গেলে আমিও যাব না।
-আজকে তোর বাবা কে রুম থেকেই বের করা যাবে না। সপ্তাহে একটা দিন ছুটি পায়। আর আমরা গেলে তো তাদের কে নেব না। আমরা একাই যাব😏
– কিহ😳
-দেখেছো ভাবি দেখেছো। হ্যাঁ হ্যাঁ আমাদের কেন নেবে আমাদের নিলে উনাদের ডিস্টার্ব হয়ে যাবে না। বুঝি তো😤(রিফা)
-হ্যাঁ তাই ই তো। তোরা যা আজকে। দুই ননদ ভাবি ঘুরে আয় যা।
– কিন্তু মাআ
-আর কোনো কথা হবে না। যা বলেছি তাই। তোদের জন্য আজকে দুপুরে বাড়িতে খাবার রান্না হবে না
-ইয়াহুউউউউউউউউউ। চলো চলো চলো ভাবী চলো (হাত ধরে টানতে টানতে)

মেহুল আর কোনো কথা বলে না। চুপচাপ নিজের ঘরে যায়। সাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নেয়। আজকে মেহুল স্কাই ব্লু কালারের একটা নেটের ওপর এমব্রয়ডারি করা শাড়ী পরেছে। ম্যাচিং ব্লাউজ। হালকা কাজল আর একটা হালকা কালার লিপস্টিক কপালে একটা ছোট্ট স্টোনের টিপ চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। মেহুলের চুল গুলো স্ট্রেট হওয়ার কারনে তাকে আরো দ্বিগুন সুন্দর লাগে। আজকেও তার বিপরীত কিছু নয়। মেহুল দুই এক হাতে ঘড়ি আর অন্য হাতে সিলভার কালারের চুড়ি পরেছে কানে সিলভার স্টোনের দুল। ব্যাস মেহুল রেডি। আজকে মেহুল অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
আর ওদিকে রিফা সাদা চুড়িদার পরেছে। কানে ছোট্ট দুল,ডান হাতে এক ডজন সাদা কাচের চুড়ি, বাম হাতে সাদা ফিতার ঘড়ি, মুখে হালকা মেকআপ। রিফা কে ও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মেহুল পার্স নিয়ে বের হবে এই মুহূর্তে রিফা চিল্লাচিল্লি করতে করতে রুমে এসে মেহুল কে দেখে থমকে যায়,

-আয় হায় ভাবী এটা তুমি কি পরেছো। আজকে রেস্টুরেন্টে তোমাকে দেখে সবার মাথা ঘুরে যাবে। সবাই হাআআআআআআআ করে তাকিয়ে থাকবে
– আরে কি যে বলো না তুমি। আমাকে দেখে নয় তোমাকে দেখে আজকে কয় জনের মাথা ঘুরে সেটাই দেখো।
-😏😏😏 তুমি থাকতে আমাকে কেউ দেখবেই না।
-আচ্ছা তাই বুঝি। ঠিক আছে চলো এখন
-হ্যাঁ হ্যাঁ চলো

এর পর দুইজনই বেরিয়ে পড়ে। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামে। এই রেস্টুরেন্টের কথা রিফাই বলেছে তাই এখানে এসেছে। এটা শহর থেকে বেশ দূরে। খুব সাধারণত একটা রেস্টুরেন্টে। তবে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আর পরিবেশ টাও মনোমুগ্ধকর। মেহুলের বেশ পছন্দ হয়েছে।

অপর দিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যায় রিয়ান। মৃদু বাতাস বইছে ওপরে খোলা আকাশ। চেয়ারে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।এই পাশ টা একদম ফাকা। কেউ নেই। আসলে আজকে এই পাশ টা পুরা টা বুকিং করেছে সে।

আর এমন একটা পরিবেশ দেখেই রিয়ানের কথা মনে পড়ে মেহুলের। মনে মনে ভাবে,

ইসস উনি যদি থাকত। এমন একটা পরিবেশ। রিয়ান আর আমি যুগ যুগ কাটিয়ে দিতাম। এমন টা ভাবতেই মেহুলের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
পরোক্ষনেই মনে পড়ে ঈশানের দেখানো ভিডিওর কথা। মূহুর্তেই হাসি টা মিলিয়ে যায় বিষণ্নতায়। মেহুলের ধ্যান ভাঙে রিফার কথায়,

– ভাবিইইইই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে যাবে?
– এ‍্যা। হ্যাঁ চলো

মেহুল আর রিফা দুইজনই হাটতে থাকে। রাস্তার দুই পাশে ফুলের গাছ আর হালকা বাতাস। বাতাসে মেহুলের চুল গুলো উড়ছে। ভিতরে ঢুকবে এমন মূহুর্তে রিফা বলে,

– দাড়াও ভাবি।

মেহুল দাড়িয়ে যায়।
-কি হলো?
.
.
.
.
#চলবে…