তার শহরের মায়া পর্ব-১২

0
964

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১২
#Writer_Liza_moni

অনু রিফার নাম্বার টা দাও তো।

সরি ভাইয়া।ওর নাম্বার আমার মুখস্থ নেই।আর আমি মোবাইল রুমে রেখে আসছি। আপনি এক কাজ করেন আগামী কাল ১০ টার দিকে ভার্সিটিতে এসে রিফার সাথে সামনাসামনি দেখা করেন।আর আমাকে আপনাদের বিষয়ে জড়াবেন না।

আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাকো।আজ আমি আসি।

আপনি ও আল্লাহ হাফেজ।

তূর্য একবার অনুর মুখের দিকে আর একবার রিশাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।সে যে পাশে আছে তাকে কে ও পাত্তাই দিচ্ছে না।

রিশাদ চলে গেলেই অনু চোখ গরম করে তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
এই আপনার সমস্যা কি বলুন তো?এই সময় আপনি এখানে কী করেন?কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই সে আমার বয় ফ্রেন্ড লাগে?

আরে রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো এমনিতেই বললাম।হতেও তো পারে আপনার বয় ফ্রেন্ড।

হ দুনিয়ার সব পোলাই আমার বয় ফ্রেন্ড।তার সাথে কথা কমু সেই আমার বয় ফ্রেন্ড লাগে।

আরেব্বাহ তাহলে তো আমি ও আপনার বয় ফ্রেন্ড লাগি।কী ভাগ্যবান আমি এতো দিনে একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাইছি। লজ্জা লাগতেছে আমার 🙈

খবিস 😾
ইডিয়েট
অভদ্র পোলা।
অনু রাগে গজগজ করতে করতে মেসের ভেতরে চলে গেল। তূর্য সেখানে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে শেষ।
কী সুন্দর গালি দিয়ে গেলো।

তূর্য চলে যাবার সময় মাথা হেলিয়ে আরেক বার অনুর মেসের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।

.
আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল অনুর। চুপ করে বিছানায় শুইয়ে আজান শুনতে লাগলো। আজানের ধ্বনিতে মুখরিত চার পাশ। আজান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর অনু উঠে বসে।হাই তুলে আড়মোরা ভেঙ্গে ওয়াস রুমের দিকে চলে গেল।ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
ওয়াস রুম থেকে একে বারেই অযু করে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো।

নামাজ পড়ে রুমের জানালা খুলে দিয়ে জানলার গ্রিল ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।আলো ছড়াচ্ছে চার দিকে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এমন কতশত সকালে মে অনু মাহিরের ঘুম ভাঙ্গিয়ে ছিল।অনু কে ইমপ্রেস করার জন্য মাহির এমন সকালে ও অনুর মেসের রুমের জানালা বরাবর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো।অনু নামাজ পড়ে জানালা মেলে দিলে মাহির কে চোখে পড়তো‌। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলে ও পরে মাহিরের এই সব কান্ড দেখে শুধু মুচকি হাসতো।

মানুষ কত সুন্দর করে অভিনয় করতে পারে।এই সব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনু।
জানালার পাশ থেকে সরে এসে আবার পড়তে বসলো। পড়ালেখায় নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে হবে। অনেক ভালো রেজাল্ট করে দেখিয়ে দিতে হবে যে যারা প্রতারনা করে দিন শেষে তারাই কষ্ট পায়।তার সাথে প্রতারণা করে সে প্রথমে কষ্ট পেলেও দিন শেষে সেই সুখি হতে পারে।জীবনে কিছু আঘাতের খুব দরকার।

না হয় জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো যায় না।
.
তূর্য সারা রাত জেগে অফিসের কাজ করে এখন ঘুমের জন্য চোখ মেলে তাকাতেই পারছে না। রাতে আলসেমির জন্য কিছু রান্না ও করে নি।

ঘুম ও আসছেনা গাঢ় করে। হালকা ঘুম যাকে বলে। ঘুমাচ্ছে ঠিকই কিন্তু কানের মধ্যে যানবাহনের হর্নের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।

বিরক্ত হয়ে ঘুমে ভরা চোখ নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ওয়াস রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। বাহিরের খাবার তূর্য তেমন পছন্দ করে না।তাই এখন নিজেকেই রান্না করতে হবে।
ব্যাচেলারের জীবন বলে কথা। মাঝে মাঝে নিজের মা বাবার উপর রাগ হয় ওর। বিয়ের বয়স হওয়ার পর ও বিয়ে করায় না।তার সাথের ফ্রেন্ড গুলোর বিয়ে হয়ে বাচ্চা কাচ্চা ও হয়ে গেছে।আর সে এখন ও সিঙ্গেল রয়ে গেল।হায় কপাল।

তূর্য ডিম ভাজি আর পরোটা বানাতে বানাতে বিড়বিড় করছে।আজ যদি একটা বউ থাকতো তাহলে কি আমার এই অবস্থা হতো? নিজের সব কাজ নিজেকে করতে হয়।আর ভাল্লাগে না।

.
সকাল ৮ টা বাজে।অনু বই পত্র গুছিয়ে রেখে চলে গেল কিছু একটা তৈরি করতে। ক্ষুধা লাগছে খুব।
রান্না ঘরে গিয়ে চা বসিয়ে দিল চুলায়। এখন আপাতত চা আর বিস্কুট খেলেই হবে। ভার্সিটি যাওয়ার সময় গরম ভাত খেয়ে নিবে।

চা বানিয়ে কাপে ঢেলে টেবিলের উপর রেখে ভাত বসিয়ে দিল চুলায়।
তারপর চা বিস্কুট খেয়ে তরকারি রান্না করার জন্য পেঁয়াজ,মরিচ, কুচি করে করে নিলো।

.
তনু নাস্তা বানিয়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। মাহির ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল।

তনু রুমে এসে মাহিরের দিকে এক নজর তাকিয়ে বিছানা গোছানোতে মন দিল।

মাহির ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তনু কে দেখে মুচকি হাসলো। তনুর পেটের উপর থেকে শাড়ি সরে গেছে অনেক টা। মাহির দুষ্টু হেসে আস্তে আস্তে তনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে তনুর পেটে হাত রাখতেই তনু কেঁপে উঠে। মাহির তনুকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

আ_প_নি
চুপ। কয়েক দিন তুমি বলে ডেকে আবার আপনি করে ডাকছো কেন?

আচ্ছা সরি। ছাড়ুন।

উহু ছাড়বো না।

ছাড়ো।

এই তো আমার বউ টা বুঝতে পেরেছে।

এখন তো ছাড়ো। তোমার না অফিসে মিটিং আছে তারাতাড়ি যেতে হবে। নাস্তা করতে চলো।

মাহির তনু কে একদম কাছে নিয়ে আসলো। দুজনের নিঃশ্বাস দুজনের মুখে আছড়ে পড়ছে।
মাহির মুখটা কে তনুর কানের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো
আজ ঘুরতে নিয়ে যাবো তোমাকে। বিকেলে ৪ টার দিকে তৈরি হয়ে থেকো।

এই কথা এতো কাছে এসে বলতে হয়?হার্ট বিট মিস করি তো।

ওরে বাবা তাই নাকি। তাহলে জীবনে আর ও অনেক হার্ট বিট মিস করার জন্য তৈরি থাকো।

আসো তো নাস্তা করে নাও।

বউ যখন বলছে তখন যেতে তো হবেই।
.
তূর্য পরোটা আর ডিম ভাজি করে খেয়ে নিল।পেট যেন এখন শান্ত হইছে। এতক্ষণ জ্বালিয়ে মারছিলো খাওয়ার জন্য।

তূর্য রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে জামাল উদ্দিন চৌধুরীর নাম্বারে ফোন করে বলে দিলো শরীর ভালো নেই।আজ অফিসে যেতে পারবে না।

আজকের জন্য ছুটি চায় সে।জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও ওরে ছুটি দিয়ে দিলো।
তূর্য মোবাইল পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। দরজা জানালা সব বন্ধ করে।যেন যানবাহনের বিরক্তিকর শব্দ না আসে।আসলে ও একটু কম আসুক।

.
অনু রান্না শেষ করে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল গোসল করার জন্য।গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। গোসল করে বের হয়ে চুল মুছে নিল।তার পর বিছানায় শুয়ে পড়লো। কত্ত কাজ করছে । এখন একটু জিরিয়ে নিলে হবে।

মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবলো মায়ের সাথে একটু কথা বলবে। মায়ের নাম্বারে কল দিতেই কিছুক্ষণ পর মা ফোন রিসিভ করে অনুর সাথে কথা বলতে থাকেন।

কেমন আছো আম্মু?

আলহামদুলিল্লাহ তুই?

আলহামদুলিল্লাহ। আব্বু কেমন আছে?

ভালো আছে। তনুর সাথে কথা হয়েছে তোর?

হুম গতকাল হয়েছিল।

আচ্ছা ঠিক আছে। বোনের সাথে শুধু শুধু রাগ করার কিছু নেই।

হুম। আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু রাখি । ভার্সিটিতে যেতে হবে।
আচ্ছা।
অনু কল কেটে দিয়ে মোবাইল বিছানায় রেখে ভাত খাওয়ার জন্য চলে গেল।ভ
ভাত খেয়ে রুমে এসে তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলো।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে অনু। একটা সি এন জি আসলে সেটাকে হাতের ইশারায় থামতে বললো।সি এন জি থামার পর অনু উঠতে গেলে সেই সিএনজি এর ভেতরে কোনো এক জন কে দেখে থমকে যায়। সিএনজি এর কাছ থেকে কিছু টা দূরে সরে এসে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো
আপনি যেতে পারেন। আমি অন্য কিছু করে চলে যাবো।

মাহির কে সেই সিএনজিতে দেখে রাগ হলো অনুর। আজকের সারাটা দিন তার নিশ্চয়ই খারাপ যাবে। শালা কুফা।

মাহির অনুকে দেখে মুখটা মলিন করে নিয়েছিল।অনু কে দেখলেই এখন তার তনু কে হারানোর ভয় জাগে মনের মাঝে।

চলবে,,,,, 🍁