#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৬
#Writer_Liza_moni
হসপিটাল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনু আর রিফা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে।রিফা হঠাৎ অনুর ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
তুই এমন কেন রে অনু? নিজের একটু যত্ন নিতে পারিস না?
অনু রিফার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তিড়িং বিড়িং করেই তো নিজের জীবনের সময় গুলো কেটে যাচ্ছে।এত যত্ন নেওয়ার কী আছে?
ঢং করোস?
রিফা মুখ বাঁকিয়ে অনুর কথা রিপিট করে বললো,
যত্ন নেওয়ার কী আছে? আমি মানুষ দেখছি। কিন্তু তোর মতো মানুষ দেখলাম না।
থাক আর জ্ঞান দিস না। রিকশায় উঠে বোস।
রিফা অনুর দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রিকশায় উঠে বসে।তা দেখে অনু আপন মনেই হাসে।
“তোমার কী ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করতেই হবে আম্মু?”
এই খুন্তিটা দেখেছিস? একটা কথা এক বার বললে কানে যায় না?একশো বার বলতে হয়?
আরে আম্মু,
তুমি কখন থেকে এমন রনচন্ডি রুপ ধারণ করছো বলো তো? কথায় কথায় শুধু রেগে গিয়ে খুন্তি উঁচু করে ভয় দেখাচ্ছো।
তুই আজ বিকেলেই মেয়েটার সাথে আমাকে দেখা করাবি। আমি ও একটু দেখতে চাই কোন মেয়ে তোর মতো এই বাঁদর ছেলের জন্য মরতে গেছিলো।
আম্মু তুমি তোমার এই কিউট ছেলে কে বাঁদর বলতে পারলা? একটু ও কী কলিজায় লাগেনি তোমার? তুমি এমন ভিলেন চরিত্রে আসলা কোন দিন থেকে?
মিসেস তৃনা তূর্যর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বললেন,
যদি তুই মেয়েটার সাথে আমার দেখা না করিয়েছিস। তাহলে তোর পিঠে আমি এই খুন্তি ভাঙ্গবো এই আমি বলে দিলাম।
বলেই মিসেস তৃনা তূর্যর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
মায়ের চলে যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে তূর্য বলে উঠলো রিনা খান কে হার মানাবে আমার মা। নাম্বার ওয়ান ভিলেন মিসেস তৃনা। কাভার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল তূর্য। গোসল করে এখন একটা মেয়ে খুঁজতে হবে।এনির সাথে এই জীবনে ও দেখা করাবো না।ন্যাকামিতে গলে গেলে পড়ে আমার গলায় ফাঁসির দড়ি থুরি এনি নামের দড়ি ঝুলবে।যা আমি একদম চাই না।
আমি ফাইসা গেছি মাইনকা চিপায়,
গানটা গাইতে গাইতে ওয়াস রুমে ঢুকে ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দিলো তূর্য।
ম্যাসে এসে অনুর মুখটা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল।রিয়ানা এসে গেছে।অনু খুশিতে গদগদ হয়ে রিয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো।তার এত খুশি হবার কারন হলো,
এখন আর তাকে সব কাজ করতে হবে না।রিয়ানা আর সে মিলে সব কিছু অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারবে। রান্নার মতো এত ঝামেলার কাজ অনু কে আর তেমন একটা করতে হবে না বলে আনন্দে লাফাতে মন চাচ্ছে তার।
বাপরে এত খুশি হইছো কেন অনু?
আমাকে আর একা একা থাকতে হবে না। তুমি চলে আসছো না।একা একা বোর হতাম খুব।
আচ্ছা।রিয়ানা অনুর হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
তোমার হাতে এটা কিসের রিপোর্ট অনু?
অনু বিছানায় ব্যাগ আর হাতের রিপোর্ট টা রেখে চুলে খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে রিয়ানার উদ্দেশ্যে বললো,
আর বইলো না। গতকাল মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম।তাও কোথায়? লাইব্রেরীতে। শরীর প্রচন্ড দুর্বল ছিল। আমার একজন পরিচিত মানুষ আবার সম্পূর্ণ পরিচিত নয় এমন একজন মানুষ আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।আর সেখানে টেস্ট করায়।আজ রিপোর্ট দিয়ে দিলো। রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে।শরীরে রক্তের পয়েন্ট কম।
অনুর কথা শুনে রিয়ানা অনুর পাশে গিয়ে বসে বললো,সেকি অনু। তোমার খুব তাড়াতাড়ি রক্ত নেওয়া দরকার। আমার এক কাজিন ছিল তার ও রক্ত শূন্যতা ছিল।এই তো তিন মাস আগে তার বাচ্চা হওয়ার সময় রক্তের জন্য মারা যায়।
তার এক সপ্তাহ পর সেই বাচ্চা টা ও মারা যায়।
রিয়ানার কথা শুনে অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। নিজের অজান্তেই কেমন ভয় হতে লাগলো তার।
রিয়ানা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে অনুর ডান হাতের উপর নিজের হাত রেখে হালকা চেপে ধরে অভয় দিয়ে বললো,
ভয় পাওয়ার মত কিছু না। তুমি ঠিক মতো নিজের যত্ন নাও।আর ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলো। ইনশাআল্লাহ তোমার কোনো সমস্যা হবে না।
অনু রিয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক মুচকি হেসে উপর নিচ মাথা নাড়ল।
গলির পথের সরু একটা রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তূর্য।বিকেল সাড়ে চারটা বাজে। তূর্যর বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ক কে সেই কখন কল করে জানিয়ে দিয়েছে ওর সাথে দেখা করতে। আধঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু অর্কর আসার এখনো খবর নেই।
তূর্য দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষে বিরক্ত হয়ে বললো হারামিটার আসার এখনো খবর নেই।মেয়ে মানুষের থেকে ও দেখছি বেশি দেরি করে। কুত্তাডারে পাইলে আজ কানের নিচে দিবো দুই টা।
টিউশনি পড়া শেষ করেই অনু আর রিয়ানা ম্যাসে ফিরছিল। গলির পথে তূর্য কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো অনু। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলতে যায়নি সে।
এদিক সেদিক তাকানোর সময় তূর্যর চোখ পড়লো অনুর দিকে।এই সময় অনু কে দেখে একটা টেডি স্মাইল দেয় তূর্য।মেঘ না চাইতেই জল।
অনু আর রিয়ানা কথা বলতে বলতে তূর্য কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তূর্য বলে উঠলো,
এই পরমাণু দাঁড়ান।
রিয়ানা অনুর কানে ফিসফিস করে বললো
পরমাণু কে?
আমাকে বলছে। একটু দাঁড়াও। কেন ডাকছে শুনে আছি।
রিয়ানা মাথা নেড়ে সায় দিল।
এই আপনাকে বলছি না যে আমাকে পরমানু বলে ডাকবেন না।তার পর ও আপনি কেন ডাকলেন?
তূর্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
আমার ভালো লাগে তাই।
কেন ডাকলেন?সেই কারন টা বলুন।
আপনার শরীরের কী অবস্থা এখন? রিপোর্ট এনেছেন? আমি তো একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার মনে ছিল তো রিপোর্ট এর কথা?নাকি আমার মতো ভুলে বসে আছেন?
একটু কমিয়ে কথা বলতে পারেন না? শরীর ভালো আগে থেকে। রিপোর্ট নিয়ে এসেছি।
তূর্য আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো,
কী এসেছে রিপোর্ট এ?
রক্ত শূন্যতা।
অনুর কথা শুনে তূর্য কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তার পর ধীর গলায় বললো, রক্ত নিলে তো সব ঠিক হয়ে যাবে তাই না?ডাক্তার কী বলেছে?
ডাক্তার ও রক্ত নিতে বলেছেন।আর ফল খেতে বলেছেন।যে সব ফল খেলে রক্ত হয় সেই ফল গুলো।
তূর্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক তেমন কিছু না হলেই ভালো। এমন সময় তূর্যর মোবাইলে কল আসে।প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখে মায়ের নাম্বার থেকে কল এসেছে। তূর্যর বুঝতে অসুবিধা হলো না মা কেন কল করেছে।
কল রিসিভ করেই মাকে কিছু বলতে না দিয়ে তূর্য বলে উঠলো,
দশ মিনিট অপেক্ষা করো। আমি আমার সাথে করে নিয়ে আসতেছি।
বলেই কল কেটে দিল। তারপর অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ?
করবো না কেন? গতকাল আপনি আমাকে হেল্প করে ছিলেন।আজ আপনা কে হেল্প করবো না তা কী করে হয়?কি করতে হবে বলুন?
তূর্যর এক কথায় যে অনু রাজি হয়ে যাবে তা ভাবতেই পারেনি সে।ভালোই হলো। তূর্য মুচকি হেসে বললো, আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে আপনাকে। আমার মায়ের সাথে দেখা করেই আবার ফিরে আসবেন। না মানে আমি নিজেই পৌঁছে দিবো।
অনু ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক রিয়ানার দিকে তাকালো।রিয়ানা ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।অনু এবার তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
হঠাৎ আপনার মায়ের সাথে দেখা করতে হবে কেন?আসলে এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুকে এনি আর তার মায়ের সম্পূর্ণ ঘটনা বললো।অনু তাজ্জব বনে গেছে।হা করে তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ে যে কিনা এই লোকটার জন্য সুইসাইড করে মরতে মরতে বেঁচে গেছে সেই মেয়ের জন্য এই লোকের কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে না। এমন ও মানুষ আছে দুনিয়ায়?
চলবে,,,, 🍁