#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৭
#Writer_Liza_moni
এই যে মিস যাবেন না?
অনু হকচকিয়ে গেল।রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো তুমি ও চলো।
এই না। আমি যাবো না। তুমি যাও।আর সন্ধ্যার আগেই ফিরে এসো। আমি আসছি টা টা। বলেই রিয়ানা হাঁটতে থাকে।অনু তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো চলুন।
তূর্য বাইকে উঠে হেলমেট পরে অনুর উদ্দেশ্যে বললো উঠে বসুন।
অনু ও চুপ চাপ বাইকের পিছনে উঠে বসে। জুঁই আর মাকে ছাড়া এই প্রথম অন্য কোনো মেয়ে তূর্যর বাইকে উঠার সুযোগ পেয়েছে।অনু উঠে বসতেই তূর্য বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়।যার ফলে অনু একটু অপ্রস্তুত হয়ে তূর্যর পিঠের জ্যাকেট টা খামচে ধরে।
তূর্য গলার স্বর নরম করে শান্ত কন্ঠে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,এই ভাবে ধরবেন না পরমানু।
তূর্যর কথা শুনে অনু চোখ ছোট ছোট করে মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বললো,শখে তো আর ধরি নাই।
গনে গনে দশ মিনিট এর মধ্যে তূর্যদের বাড়ির গেটের সামনে এসে বাইক থামায় তূর্য। তূর্যদের বাড়ির গেটের দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেল অনু। মাধবীলতা ফুল দিয়ে কী সুন্দর করে সাজানো গেট।থোকা থোকা মাধবী ফুল ফুটে আছে।
তূর্য মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে এলোমেলো চুল গুলো কে হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে অনুর উদ্দেশ্যে বললো, পছন্দ হয়েছে?
খুব সুন্দর। পছন্দ না হওয়ার মতো কিছু না। তূর্য মুচকি হেসে বললো, আসুন ভেতরে আসুন।
কথাটা বলে তূর্য গেটের ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় কিছু একটা মাথায় আসতে থেমে যায়।অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্যর দিকে।
ওহ শিট।এখনি সব গড়বড় হয়ে যেতো।
তূর্যর কথা অনু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,মানে?কী গড়বড় হতো?
আপনাকে যে কারণে মায়ের সাথে দেখা করাতে আনলাম। সেই কারন টাই বলতে ভুলে গেছি।
ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলুন।
তূর্য অনু কে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললে অনু তাজ্জব বনে গেল।
এখন আমাকে আপনার আম্মুর সামনে অভিনয় করতে হবে? আমি আপনাকে পছন্দ করি, আমি আপনার জন্য পাগল, আমি সুইসাইড করতে গেছিলাম ব্লা ব্লা ব্লা
এই গুলো সবই তো ফেক কথা বার্তা।
তূর্য মুখ বাঁকিয়ে বললো,হ্যাঁ এই গুলো যে সব ফেক কথা বার্তা সেটা আমি ও জানি। কথার মাঝে হঠাৎ তূর্যর চোখ পড়লো অনুর হাতের দিকে।ব্যান্ডেজ করতে হবে।কারন সে তো মাকে বলেছে যে মেয়েটা হাত কেটে সুইসাইড করতে গেছিলো।
তূর্য বাইকে উঠে অনুর উদ্দেশ্যে বললো উঠে বসুন আবার।
অনু অবাক হয়ে বললো কেন?
আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
কিন্তু আমার হাত তো কাটে নাই। তাহলে ব্যান্ডেজ করবো কেন?
অনুর কথা শুনে তূর্য বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বললো,
গাঁধা থুরি না গাঁধী একটা।
এই আপনি আমাকে গাঁধী বলছেন কেন?
শুনে নিয়েছেন এত আস্তে বলার পর ও?ভালোই হয়েছে। আপনি আসলেই গাঁধী।এত সময় ধরে কী বললাম?যে এনি মানে ঐ মেয়েটা সুইসাইড করতে গেছিলো।হাত কাটছে।হাত যেহেতু কাটছে সেহেতু নিশ্চয়ই হাতে ব্যান্ডেজ করা থাকবে?আর আমার আম্মু এত বোকা না যে প্যাচ কষতে পারবে না। সেই লেভেলের চালাক মহিলা। এখন বেশি কথা না বলে উঠে বসুন। সামনের ফার্মেসি থেকে না কাটা হাত ব্যান্ডেজ করে আনি।
অনু আর কিছু না বলে উঠে বসলো। ফার্মেসি তে এসে বাঁধল আরেক ঝামেলা।না কাটা হাত ডাক্তার ব্যান্ডেজ করবে না।
ভাই আপনার জন্য কী এখন আমি উনার হাত কাটবো?
এই মিয়া কী বলেন এই সব? আমি হাত কাটতে যাবো কেন? এমনিতেই শরীরে রক্ত নাই। আবার হাত কাটবো।শখ কত,,,
তূর্য অনুকে শান্ত কন্ঠে ধমক দিয়ে বললো, মেয়ে মানুষ এত প্যাক প্যাক করেন কেন বলুন তো? আমি কথা বলছি তো নাকি? আপনি চুপ করে থাকতে পারেন না?
অনু তূর্য কে ভেংচি কেটে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল।
দেখুন ভাই শুধু ব্যান্ডেজটাই করিয়ে দেন।টাকা দিবো বিনে পয়সায় না। আমার বাড়িতে ও ব্যান্ডেজের অভাব নেই। শুধু মাত্র আমার ঈগল চোখা মায়ের জন্য এত নাটক করতে হচ্ছে। কপাল পোড়া হত ভাগা আমি।
অবশেষে অনেক সাধনার পর না কাটা হাতে ব্যান্ডেজ করে আবারো তূর্যদের বাড়ির পথে রওনা দেয় অনু আর তূর্য। এইসব কান্ডে অনুর খুব হাসি পাচ্ছে। তূর্যর মা যে খুব চালাক চতুর মহিলা তা ভালোই বুঝতে পারছে অনু।
তূর্যর সাথে ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনু। দুই বার কলিং বেল বাজাতেই ১৭ বছর বয়সী এক টা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে উঁচু গলায় বললো,
আম্মু তোমার ছোট ছেলে আসছে। জুঁই অনু কে খেয়াল করেনি। তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো আমার চকলেট কই? তোকে না আম্মু টাকা দিয়ে ছিল আমার জন্য চকলেট আনতে।আনিসনি কেন?
তূর্য ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,টাকা গুলো দিয়ে বন্ধুদের ট্রিট দিয়ে দিয়েছি।তোকে এত চকলেট খেতে হবে না। তুই আর পিচ্চি বাচ্চা না।
জুঁই তূর্যর পিঠে একটা কিল মেরে সরে আসতেই ওর চোখ গেলো অনুর দিকে। জুঁই একবার অনুর দিকে তাকিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে তূর্যর উদ্দেশ্যে বললো কে এই আপু টা?আগে কখনো তো দেখিনি।
তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,ওহ সরি। আসুন ভেতরে আসুন।এই মেয়ে আসার পর থেকেই মাথা খারাপ করে দিয়েছে।অনু মুচকি হাসলো। জুঁই অনুর কাছে গিয়ে বললো, ভাইয়ার ফ্রেন্ড?
অনু ছোট্ট করে জবাব দিলো হুম।
মিসেস তৃনা রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে এসে অনু কে দেখে মুচকি হেসে অনুর কাছে এগিয়ে গেল।অনু মিসেস তৃনাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো। মহিলার চাল চলনে আভিজাত্যের ছোঁয়া।গায়ে কলা পাতা রং এর শাড়ি। চুল গুলো খোঁপা করা।চোখে চশমা।হাতে স্বর্নের দুটো চিকন চুড়ি।বেশ ফর্সা আর গলুমলু দেখতে।সব মিলিয়ে কেমন টিচার টিচার ভাব।
অনু মুচকি হেসে মিসেস তৃনা কে সালাম দিলো।
আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি।
মিসেস তৃনা ও মুচকি হেসে সালামের জবাব দিলো।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
বসো মা।
জী আন্টি। তূর্য সোফায় বসে মা আর অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।সে দেখছে বসে বসে যে,অনু কেমন অভিনয় করতে পারে। এখন যদি এখানে অনুর জায়গায় এনি থাকতো তাহলে এতক্ষণে ন্যাকামির ঠেলায় এখানে থাকা যেতো না।
মিসেস তৃনা ও অনুর পাশে গিয়ে বসলেন।তার পর জুঁই এর উদ্দেশ্যে বললেন,
রান্না ঘরে ট্রে তে নাস্তা সাজানো আছে।নিয়ে আয়।
জুঁই আচ্ছা বলে রান্না ঘরে চলে গেল।সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।তাই চুপ চাপ মায়ের কথা শুনে যাচ্ছে।
মিসেস তৃনা মুচকি হেসে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,
তোমার নাম কী মা?
জী অনুমেঘা রাজমিম।
মাশাআল্লাহ। বেশ সুন্দর নাম। বাড়ির সবাই কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
যাক ভালো।কীসে পড়ছো তুমি?
অর্নাস তৃতীয় বর্ষে।
বাহ বেশ ভালো।দেখতে তো মাশাআল্লাহ। মুখখানি তে মায়ায় ভরা।তা আমার এই বাঁদর ছেলের জন্য সুইসাইড কেন করতে গিয়েছিলে?এরে তোমার কী দেখে পছন্দ হলো?তাল গাছ একটা।
আম্মু তুমি আমাকে অপমান করতেছো কেন? আমি কী তোমার কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে?
তোরে তো রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পাইছে।ম্যা ম্যা করে কানতে ছিলি। আমার আব্বু আম্মু অনেক দয়াবান তো তাই নিয়ে আসছে। নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে বললো জুঁই।
জুঁই ফুলের বাচ্চা। আমি তোর আগে পৃথিবীতে আসছি না তুই আমার আগে পৃথিবীতে আসছোস?
জুঁই নাস্তার ট্রে টা রেখে শয়তানি হেসে বললো, তোর আগে পৃথিবীতে আমি আসছি।বড় আপু হই বুঝলি সম্মান কর।
কানের নিচে একটা মেরে সম্মান করবো দাঁড়া। তূর্য বসা থেকে উঠতে যাবে এমন সময় জুঁই হাসতে হাসতে ভৌ দৌড় দিল।
তূর্য আর জুঁই এর কান্ড দেখে অনুর খুব হাসি পাচ্ছে। আবার তেমনি খুব আফসোস হচ্ছে।একটা বড় ভাই নেই দেখে। তাহলে সে ও ভাইয়ের সাথে এমন কত শত দুষ্টুমি করে বেড়াতো।
মিসেস তৃনা অনুর ব্যান্ডেজ করা হাত ধরে দেখতে দেখতে বললো, ওদের কান্ড দেখে কিছু মনে করো না মা।ওরা এমনই।যতক্ষন বাড়িতে থাকবে ততক্ষণ
ওদের এমন খুনসুটি চলবেই।
অনু মুচকি হেসে বললো,না আন্টি কিছু মনে করবো কেন?ভাই বোনের সম্পর্ক গুলো হয়তো এমনি হয়। আমার তো বড় কোনো ভাই নেই।তাই বুঝি ভাই থাকা কতটা দরকার। আমার কিউট একটা বড় বোন আছে।যার কাছে আমার কদর সবার আগে।
চলবে,,, 🍁