#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৫
#Writer_Liza_moni
ভাই রেপ ভাই এত আবেগ কই পায় এই লোক? তবে যাই হোক,কথাটা কিন্তু সুন্দর ছিল।কবি কবি ভাব।অনু রিপ্লাই না করে মোবাইল ব্যাগে রেখে দিলো। ম্যাসেজ এর রিপ্লাই কি দেওয়া উচিত সেটাই মাথায় আসলো না অনুর।
রেস্টুরেন্টে বসে মিসেস তৃনা মেয়ে কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যাস্ত। তোমার নাম টা কী?
জেমি চৌধুরী।
মাশাআল্লাহ সুন্দর। মেয়ে টা কে দেখে বেশ মর্ডান মনে হচ্ছে। ঘাড় থেকে একটু নিচু অব্দি চুল।তা ও কালার করা।পরনে জর্জেট এর কালো শাড়ি। ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙের সাথে কালো শাড়িটা বেশ ফুটে উঠেছে। মুখে ভারি আস্তরনের মেকআপ করা। কপালে টিপ পড়া। লম্বায় ৫.৩ হবে। কিন্তু হিল পড়ায় আরো বেশি লম্বা লাগছিল।
মেয়ের পরিবারের লোকজন ও বেশ আধুনিক। তাদের সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আছে। অবশ্য থাকার কথাই কারন তারা তো লন্ডনে থাকে।
ছোট থেকেই জেমির বাংলাদেশ এর প্রতি ঝোঁক ছিল।নিলার জন্ম লন্ডনে হওয়ার পর ও এই দেশের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা ছিল তার। বিয়ের জন্য সেখান কার ছেলে তার পছন্দ নয়।সে চেয়েছে এখানকারই কোনো এক বাঙালি ছেলে কে বিয়ে করে বাংলাদেশেই থেকে যাবে।আর মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ব্যাক করেন নিলার মা বাবা।
প্রথম দেখাতেই তিয়াস কে ভালো লেগে যায় জেমির। কিন্তু জেমি কে দেখে নাক চিটকায় তিয়াস।মেয়ে টা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী।যে কোনো ছেলে প্রথম দেখাতেই বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু তিয়াসের কেন জানি নিলা কে তেমন ভালো লাগে নি।এত মর্ডান মেয়ে তার পছন্দ নয়।শাড়ি পড়েছে যে ভাবে পেটের বেশ খানিকটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে। মুখে এত ময়দা মাখার কী দরকার ছিল?হাত পা দেখেই তো সুন্দরী মনে হচ্ছে। তাহলে এত ময়দা মাখার কী প্রয়োজন? বিয়ের পর আমার টাকা নষ্ট করার ধান্দায় আছে মনে হয়।বিড় বিড় করে বললো তিয়াস। মেয়েটার ভাগ্য ভালো যে তূর্য আসে নি। না হলে সবার সামনে এই সব কিছু তুলে ধরে বলতো, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়নি।সো বিয়ে টিয়ে ও হচ্ছে না। আমরা গেলাম।
আমাদের একটা মাত্র মেয়ে। খুব আদরের সাথে ছোট থেকে বড় হয়েছে। তার ইচ্ছে সে বাংলাদেশে সেটেল হবে।এত সুন্দর দেশ রেখে সে বিদেশে থাকতে চায় না। অথচ আমাদের সব কিছু বিদেশেই। মেয়ের জেদের জন্য দেশে ফিরতে হলো।
জেমির বাবার কথার উত্তরে মিসেস তৃনা বললেন,
ঠিক চিন্তাই করেছে জেমি মা। আমি ওকে সমর্থন করছি।
জেমি মুচকি হেসে বললো,
Thank you uncle.
পাপা তো প্রথমে রাজিই হচ্ছিলো না। অনেক কষ্টে পাপা কে আমি আর মাম্মি বুঝিয়ে এখানে আসতে রাজি করিয়েছি। ছোট থেকেই তো লন্ডনে ছিলাম।এই দেশের মাটির ঘ্রাণ পেলাম কই? এখন প্রান ভরে শ্বাস নিতে পারছি।
নিজ দেশের প্রতি জেমির এই টান এই ভালোবাসা টা দেখে তিয়াস এর খুব ভালো লাগলো। পোশাক দেখে আসলেই কাউকে বিবেচনা করা উচিত নয়। আমার বুঝতে একটু ভুল হয়েছে।মেয়েটা তো লন্ডনে থেকে বড় হয়েছে।সেখান কার পোশাক, সংস্কৃতি সব কিছুই ভিন্ন। বিয়ে তো এই মেয়ে কেই করবো। এবং নিজের হাতে নিজের মতো করেই গড়ে তুলবো।এই দেশের মেয়েদের মতো।এই দেশের সংস্কৃতিতে।
এই সব কথা ভেবে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে আবার ঠিক করতে লাগলো তিয়াস। জুঁই কোল্ড কফি খাচ্ছে আর নিরব দর্শকের মতো সবার কথা শুনছে এবং জেমি কে দেখছে।ভাবি হিসেবে মেয়েটা ঠিক কেমন হতে পারে সে বিষয়টা খুব গভীর ভাবে চিন্তা করছে জুঁই।
মিসেস তৃনার তেমন একটা জেমি কে মনে ধরেনি। মেয়েটা একটু বেশিই আধুনিক।সব কিছু ঠিক থাকলে ও শাড়ি পড়াটা ঠিক ভালো লাগেনি মিসেস তৃনার।এত আধুনিক আর রূপসী মেয়ে দিয়ে সংসার করতে পারবে তো তার ছেলে?এই সব হাবি জাবি চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার।
মেয়ে মানুষ উজ্জ্বল শ্যামলা হবে। বেশি ফর্সা হলে মেয়ে কম, কল্পনার রুপসী মনে হয় বেশি।আর অতি রুপসী মেয়ের সাথে সংসার করা যায় না।
.
.
কই খাওয়া,কই কী? মরার মতো বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে তূর্য। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। গতকাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে দেয় নি অনু। চোখ বন্ধ করলেই অনুর খিল খিল করে হেসে উঠা সেই মায়াবী মুখ টা এসে ঘুমের ১২টা বাজিয়ে দিয়ে চলে যেতো।এতে অবশ্য অনুর কোনো দোষ নেই।সব দোষ তূর্যর নিজের।কারন সে অনু কে নিয়েই বেশি ভেবেছে। অতিরিক্ত ভেবেছে সে অনু কে নিয়ে।আর অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।
ভার্সিটি থেকে ফুফুর বাড়িতে না যেয়ে ম্যাসে ফিরে অনু। ফুফুর বাড়িতে গেলে মা আর বিকেলে বের হতে দিবে না।যার ফলে তূর্যর সাথে দেখা ও করতে পারবে না এবং তূর্য তাকে কেন বিকেলে দেখা করতে বলেছে সেই বিষয়ে ও কিছু জানতে পারবে না।এত কিছু মিস করা যায় নাকি? উঁহু একদমই যায় না।তাই তো অনু ভার্সিটি থেকে সোজা ম্যাসে ফিরে আসে।আর মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় তার আগামীকাল পরীক্ষা আছে একটা।তাই পড়তে হবে,যার জন্য আজ সে ম্যাসেই থাকবে।
বিকেল সাড়ে তিনটায় তূর্যর ঘুম ভেঙ্গে যায়।তাও কারেন্ট চলে যাওয়ার জন্য।এই গরমে কারেন্ট চলে গেলে কি আর শান্তি তে ঘুমানো সম্ভব?মোটে ও না। কিছুক্ষণ আগেই রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়িতে ফিরে আসে সবাই। জেমি দের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয় নি। বাড়িতে এসে সবার মতামত শোনার পর সব কিছু বিবেচনা করে তার পর জাননো হবে।বিয়ে বলে কথা।একটা মানুষের সাথে সারা জীবনের সঙ্গী হিসেবে থাকার জন্য একটু তো দেখে শুনে ধীর স্থির ভাবে সব কিছু সামাল দিতে হবে।বিয়েই তো কোনো ছেলে খেলা তো নয়। জীবনের সবচেয়ে বড় একটা অধ্যায়।
আলসেমির কারণে চোখ টা ও মেলে তাকাচ্ছে না তূর্য।হাত দিয়ে খুঁজে মোবাইল নিয়ে আস্তে আস্তে এক চোখ মেলে সময় দেখে ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে সে।
ওহ শীট।৩ টা ৪৮ বাজে। অথচ আমি এখন ও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি? তুই শালা আসলেই স্টুপিড।রাম ছাগল একটা। নিজেকে নিজে বকতে বকতে ওয়াস রুমে চলে গেল তূর্য।
রক্ত নেওয়ার পর থেকে শরীরটা কেমন অল্প ধকলেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে অনুর। ভার্সিটি থেকে ম্যাসে এসে গোসল করে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।এত সবের মধ্যে তূর্য যে তার জন্য অপেক্ষা করবে বলে ছিল সেই কথাটা এক বারের জন্য ও কেন জানি ভুলতে পারেনি।তাই তো ঘুমানোর আগে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছে।যেনো তূর্য কে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে না হয়।
ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে শার্টটা গায়ে দিয়ে, চুল আঁচড়ে,ঘড়ি পড়ে নিজেকে একদম পরিপাটি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল তূর্য। মিসেস তৃনা সোফায় বসে বসে ছেলের কর্ম কান্ড দেখছিলেন। ছেলে যে খুব করে অনুর প্রেমে ফেঁসে গেছে তা তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন।
তিনি মুচকি হেসে বললেন,
“আমার সাথে ও একটু কথা বলার সময় নেই তার।কত তাড়া আমার ছেলের।”
আম্মু একটা কাজ করো।
কীসের কাজ?
বড় ভাইয়ার বিয়ের সাথে ছোট ভাইয়ার বিয়ে টা ও দিয়ে দাও।এক সাথে দুই জোড়া বিয়ে হলে তোমাদের ও খরচ কম হবে।
এত পাকনামি করতে বলি নাই তোকে। বেশি পাকনামি করতে আসলে দুই জোড়া না একেবারে তিন জোড়া বিয়েই এক সাথে দিয়ে দিবো।
যাহ, কী যে বলো না তুমি আম্মু। আমার কী এখন ও বিয়ের বয়স হইছে নাকি? আমার যখন বিয়ের বয়স হবে তখন তোমাকে কানে কানে এসে বলে যাবো,
আম্মু আমাকে বিয়ে দেও।
জুঁইয়ের কথায় মিসেস তৃনা চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
দিন দিন শয়তানের নানি হচ্ছিস তুই? দাঁড়া আজ তূর্য আসুক।
আমি এখানে নাই বাবা তুমি কই?
চলবে,,,