#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
#১১তম_পর্ব
আমজাদ স্যার কিছুটা সময় সেভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো- তুমি চাচ্ছো আমি ওর হাত খুলে দেই! যদি পালিয়ে যায়! এখানে তুমিও দৌড়াতে পারবে না, আমি হয়তো বা ধরতে পারবো কিন্তু আমিও তো অসুস্থ। পালিয়ে গেলে সেই দায়ভার কে নিবে!
আমি তখন ও মেয়েটির চোখ পড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এদিকে স্যার আমার কোনো উত্তর না পেয়ে আবার আমায় জিজ্ঞেস করলো- কি হলো কিছু বলছো না কেন?
– উনি পালাবেন না স্যার। আপনি চিন্তা মুক্ত থাকতে পারেন।
– তুমি কিভাবে বলতে পারো যে উনি পালাবেন কি না!
– মানুষের চোখের ভাষা বড়ই অদ্ভুত। মানুষের মনের মাঝে থাকা পাপ পূর্ণ সব কিছুই প্রকাশ করে দেয়। উনি কিছু কারণে গভীর অনুশোচনায় জর্জড়িত। উনি পালানোর চেষ্টাও করবেন না। আপনি উনার হাত খুলে দিন। নারী জাতি এমনেই কোমল জাতি তাদের এভাবে শক্ত শিকলে মানায় না।
আমজাদ স্যার মেয়েটির হাত খুলতে খুলতে বললো- ভালোই তো নারীবাদী কথা বলো। ভুলে যে ও না এই নারীই কিন্তু সেখানে ছিলো।
মেয়েটির হাত খোলা পেয়েই দুচোখ আগে ভালো করে মুছে নিলো। এরপর আনমনে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে। ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলাম – আপনার কি খুব বেশি শীত করছে!
কিন্তু আমার প্রশ্নের কোনো উত্তরই দিচ্ছে না।
– এই মেয়ে কি কথা বলতেই ভুলে গেলো! এই মেয়ে শুনেন…
আমজাদ স্যারকে ইশারায় চুপ করিয়ে দিলাম। অটোচালক বেশ কিছু সময় ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনে যাচ্ছে।
– স্যার আমরা বাসায় গিয়ে এসব নিয়ে আলোচনা করি!
– আচ্ছা।
এরপর নিরবতা ছেয়ে গেলো। আমি বার বার শুধু মেয়েটার চোখেই আঁটকে যাচ্ছি। আমার বার বার মনে হতো লাগলো এই মেয়ে এই সব ঘটনার সাথে কিভাবে জড়িত থাকতে পারে! তাদের ভাইবোনের মাঝে কি কোনো দূরত্ব আছে নাকি হাসনাহেনার সাথে তার কোনো গভীর বন্ধুত্ব আছে! থানায় রাইয়ান যেভাবে কথা বলেছিলো তাতে করে তো মনে হয়নি তাদের মাঝে কোনো দুরত্বের গল্প আছে।
কিছুক্ষণ পরেই বাসার সামনে এসে অটো থামলো। স্যার নেমে ভাড়া দিচ্ছে। আমি নিজের চেষ্টায় নামার জন্য এগিয়ে আসতেই অদ্ভুত ভাবে মেয়েটা আমায় সাহায্য করলো। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে পুনরায় তাকালাম। স্যারের পিছনে পিছনে মেয়েটা চলে যাচ্ছে কিন্তু আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
– মামা, মাইয়াডা কে?
আটো চালকের কথায় ভাবনা বিচ্ছেদ হলো।
– কোন মেয়ে?
– ঐ যে থানার স্যার যারে নিয়া গেলো।
– ও আমার কাজিন।
– মানে আপনার মামাতো বইন?
– হ্যাঁ ওটাই।
– হাতে শিকল ক্যা! চুরি টুরি করছে নাকি!
– আসলে ওর মাথায় একটু সমস্যা আছে তো তাই হাত বাঁধা ছিলো। অপরিচিত মানুষকে দেখতে পারে না। আর হাত বাঁধা ছিলো জন্য আপনি এখানে সুস্থ দাঁড়িয়ে আছেন। নয়তো এতক্ষণে হাসপাতালে থাকতেন।
– কি আজব। এমন পাগলীরে নিয়া বাইরে যান কেন! আল্লাহ বাচাইছে।
মধ্য বয়সী অটো চালক মামা কিছুটা ভয়ই পেয়ে গেলো।
– সুমন! এই সুমন।
– হ্যাঁ ভাবী।
– ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? ভিতরে আসো।
– যাচ্ছি ।
ভিতরে যেতে যেতেই ভাবী জিজ্ঞেস করলো- তুমি নাকি তোমার কোনো বন্ধুর বাসায় থাকবে আজ। তাহলে চলে আসলে যে!
– আমি! বন্ধুর বাসায়?
– হ্যাঁ। তোমার স্যার তো সেটাই বললো।
– ওহ হ্যাঁ । একজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো। আসতেই দিচ্ছে না। তাই কিছুটা সময় ওর সাথে আড্ডা দিলাম।
– তোমার এখানে পরিচিত কেউ আছে আগে বলোনি তো।
– আমি নিজেই তো জানলাম একটু আগে।
-মানে!
– ওর সাথে যখন দেখা হলো তখন জানতে পারলাম ওর বাসা এই এলাকায়।
– ওহ আচ্ছা।
বাসার ভিতরে আমজাদ স্যার সোফায় বসে আছে সামনে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। সেই সময় রুম থেকে রুহীও বেরিয়ে আসলো।
– ভাইয়া, এই মেয়ে আবার কে!
স্যার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলো- আপনার কেউ!
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
ভাবী গেইট লাগিয়ে এসে বললো- তোমাদের খাবার দিবো!
স্যার কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো- এখন না, এই মেয়ের সাথে আগে কথা বলে নেই।
স্যার একটা ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো- ঐ বাসায় কি করতে গিয়েছিলেন! আপনার ভাই তো বলছে আপনি দুধে ধোয়া তুলসীপাতা। তাহলে সেখানে পুলিশ গার্ড থাকা সত্বেও কি লুকাচুরি খেলতে গিয়েছিলেন।
স্যারের কর্কশ কন্ঠের প্রতিটি শব্দের তীব্রতায় মেয়েটি কেঁপে উঠছে।
– স্যার কি করছেন! আপনি একটু শান্ত হন। এভাবে জিজ্ঞেস করলে তো কিছুই জানতে পারবো না আমরা।
– তুমি তখন থেকেই ওর পক্ষ নিচ্ছো কিন্তু কেন!
– পক্ষ নিচ্ছি না স্যার। আপনি একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে আছেন তাই আপনাকে সামলাতে হচ্ছে।
ভাবী বললো- আগে খাওয়া করো এরপর যা আলোচনা করার করবা। আর হ্যাঁ বাচ্চা ঘুমাচ্ছে কোনো চিল্লাতে যেন না শুনি। রাসফির একটু ভয়ে আবার জ্বর বাধিয়ে ফেলে। সুমন আসো, রুহী তুমি উনাকে নিয়ে খেতে আসো।
– আমার ক্ষুধা পায় নি। আমি শুধু একটু পানি খাবো।
এই দীর্ঘ সময়ে এই প্রথম মেয়েটি কথা বললো।
– আমাদের সাথে অল্প একটু খাবে আসো।
ভাবী এবং রুহী মেয়েটিকে নিয়ে খেতে আসলো।
খাওয়া শেষ করে রুহী মেয়েটিকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো। ভাবী ফিসফিস করে স্যার কে জিজ্ঞেস করলো- মেয়েটা কে!
– মিঞা বাড়িতে আটক করেছে গার্ড।
– মানে এই মেয়ে এতো দিন এসব কাজকর্ম করেছে!
– এখনো শিউর না। তবে সন্দেহ তালিকায় আছে।
উনাদের কথায় ব্যাঘাত দিয়ে বললো- স্যার একটা কথা বলি!
– হ্যাঁ বলো।
– আজ অনেক রাত হয়েছে। তাছাড়া রাতে শব্দের বেগ এমনিতেই বেশি। আজ আমরা এসব নিয়ে মেয়েটির সাথে আলোচনা না করি। কাল সকালে করি।
– রাতেই যদি পালিয়ে যায় অথবা ঘুমের মাঝে আমাদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে!
রুহীর রুমে উনাকে থাকতে দিন আর বাইরে থেকে লক করে দিলেই তো হয়ে যায়।
স্যার কিছুক্ষণ ভাবলো এরপর বললো- আচ্ছা ঠিক আছে।
গভীর রাত।
সবাই নিজেদের রুমে শুয়ে আছে। সেই সময় ভূত ভূত বলে চিৎকার শুনে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে বিছানা থেকে নিচে পড়ে যাই। এরপরও উঠে রুমের বাইরে আসি। ততক্ষণে স্যার এবং ভাবী রুম থেকে বেরিয়ে মেয়েটির দরজার লক খোলার চেষ্টা করছে।
To be continue….