তুই আমার কাব্য পর্ব-০৭

0
2071

#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 07
.
🍁
.
মেঘলা এখনো ভেবে যাচ্ছে লাইব্রেরির ঘটনাটা। কিছুতেই সরছে না ব্যাপারটা। আর না সরাটাই স্বাভাবিক। হাঁটতে হাঁটতে ভেবে যাচ্ছে কে হতে পারে? কাউকেউ যেনো সন্দেহের তালিকায় আশেপাশেও ফেলতে পারছে না। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা জোড়ে চিৎকার শুনে ছিটকে ওঠলো। পেছন ফিরে দেখলো তনু। মেজাজটাই যেনো বিগড়ে গেলো। একেই তো টেনশন তার মধ্যে ভয় পাইয়ে দিল। তনুকে ঝারি মেরে বলে,

– ওই তাল গাছের পেত্নী। সমস্যা কি তোর? এইভাবে কেউ চিৎকার করে? আমার দুটো কানই আছে এবং সেগুলো সম্পূর্ণ সুস্থ। আস্তে ডাকলে কি শুনতাম না?

– শুনতি না কি? শুনিস নি বলেই চিৎকার করেছে। সেই কখন থেকে তোকে ডাকছি। সাড়া দেয়ার নাম গন্ধই নেই। আর আমার সমস্যার কথা বললি? সমস্যা আমার না তোর।

– আমার? আমার আবার কি সমস্যা হবে?

– সমস্যা না হলে উধাও হয়েছিলি কই হ্যা? কত্ত খুঁজেছি আমি তোকে। আর ওভাবে কোথায় চলে গেছিলি?

মেঘলা কিছু বলতে যাবে তখনই আবার থেমে গেলো। নিজেই ঘটনাটা নিয়ে টেনশনে আছে। তনুকে বলে কোনো লাভ হবে না। সমাধান তো করবেই না বরং পকপক করে সব আরো জটিল করে দেবে। যা নয় তাও বিশ্বাস করিয়ে ছাড়বে। তাই মেঘলা আর কিছু না বলে চুপ করে রইল। তনু ধাক্কা দিয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করে,

– কিরে আবার কি হলো? চুপ করে আছিস কেনো? কথা বলতে ভুলে গেছিস নাকি তোর মুখ প্যারালাইসিস হয়ে গেছে?

– আশ্চর্য! তুই এতো আজিব আজিব কথা কিভাবে বলিস বুঝি না।

– বুঝবিও না। বাচ্চা তো তুই। বড় হ তাহলেই বুঝবি।

– আচ্ছা মেরি দাদি। এবার চল ওদিকটায় বসি।

– নাহ্! যাবো না। দাদি বললি কেনো? ( মুখ ফুলিয়ে)

– দাদিকে দাদি বলবো না তো কি বলবো? চল চল আর নেকামি করিস না।

মেঘলা তনুকে এক প্রকার টেনেই নিয়ে যাচ্ছিলো তখনই একটা ছেলে এসে মেঘলাকে বলে,

– আপু আপনাকে ডাকছে।

ছেলেটার আকস্মিক এই কথায় মেঘলা আর তনু খানিকটা অবাক হলো। মেঘলা ছেলেটাকে প্রশ্ন করে,

– কে ডাকছে?

– তা বলা যাবে না। ওই যে ওই হলের বাম পাশ থেকে যে রাস্তাটা শুরু হয়েছে ওখানে গেলেই বুঝতে পারবেন।

মেঘলা কিছুটা কপাল কুচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলে,

– যাবো না। কে ডাকছে না বললে আমি যাবো কেনো?

– ওকে। আমার কোনো দোষ নেই। এরপর কিছু হলে আমার দায় না। আমার কাজ শেষ।

– দোষ? দায় মানে? কিসের দোষ, কিসের দায়? এই ছেলে শোনো।

মেঘলার কোনো কথা না শুনেই ছেলেটা দৌড়ে চলে যায়. মেঘরা আর তনু একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ব্যপারটাকে পাত্তা না দিয়ে ওরা ওদের মতো চলতে থাকে। মেঘলার বেশ ভালো লাগছে। মো মো করছে চারিদিক নতুন ভ্রমের আগমনে। বেশকিছুক্ষণ হাটাহাটির পর স্টেজ থেকে সামান্য দূরে বট গাছের নিচে এসে বসতে যাবে তখনই চারপাশ থেকে কলরব ওঠে কিছু কথার।

– এই যে কৃষ্ণচূড়া। হ্যা তোমাকেই বলছি। ওই যে বটগাছের নিচে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া। অনুগ্রহ পূর্বক একটু আগে তোমাকে যেখানে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে পৌঁছাও। দ্রুত।

সবাই চুপ হয়ে আছে। কে এবং কাকে বলছে কেউ বুঝতে পারছে না। আর এদিকে তো মেঘলার মাথায় যেনো বাজ ভেঙ্গে পড়লে। এরকমভাবে মাইকে কেউ ডাকে? তাও আবার সবার সামনে। মেঘলা আর কোনো কথা না বলে দৌড় লাগালো। কে জানে আবার কি বলে সবার সামনে। ভাগ্যিস নাম বলে নি। বললে তো মান সম্মান কিছু থাকতো না। আরোও কিছু কথা হওয়ার আগেই মেঘলা ছুঁটে গেলো। ওখানে যেতেই খেয়াল করলো পরিবেশ চেঞ্জ হয়ে গেলো। গান বাজনা শুরু হলো। প্রচুর হইহুল্লো। এ যেনো মনোযোগ পরিবর্তনের কৌশল। মেঘলা রাস্তার মোরে আসতেই দেখে এক গুচ্ছো গোলাপ। গোলাপের উপরে লেখা ” টেক মি প্লিজ “। এতোগুলো গোলাপ একসাথে দেখে মেঘলার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে ওঠে। ফুলগুরোর মাঝে একটা চিলকুট। তাতে লেখা,

– সোজা ছয় কদম হাঁটো

মেঘলা কিছু বুঝতে পারছে না। তবুও বাধ্য মেয়ের মতো শুনে যাচ্ছে সব। ছয় কদম শেষে ছোট্ট একটা বক্স চোখে পড়লো। সেইটা ওঠিয়ে খুলে দেখে দুটো ক্যাটবেরি আর আরেকটা চিরকুট আর তাতে লেখা,

– দশ সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করো।

মেঘলা আশেপাশে তাকিতুকি করে কিছুটা ভীত হয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে কাউন্ট করতে লাগল। আট সেকেন্ডের সময় অনুভব করলো চোখ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। মেঘলা এবার ছুটোছুটির চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু পারলো না। একটু পরেই বুঝতে পারলো সে যেনো হাওয়ায় ভাসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পায়ের নিচে মাটির অস্তিত্ব খুঁজে পায়। মেঘলা একদম নির্জীব হয়ে আছে। কি হচ্ছে, কে করছে বুঝতে না পেরে যেনো মুর্তি হয়ে আছে। ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাসের উপস্থিতি টের পেলো। কানে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পায়,

– ওয়েলকাম টু ইউর ড্রিম মেঘবতি।

মেঘলা একদম ফ্রিজড হয়ে আছে। শরীরের রক্তগুলো অবাধে ছুটে চলছে রক্তশিরা দিয়ে। বুকের ধুকপুকানি যেনো নিশ্বাসের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চোখের বাঁধন কেউ খুলে দিতেই চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু সারাঘর অন্ধকারের জন্য কিছুই দেখতে পারছে না। মুহুর্তেই আলো জ্বলে ওঠলো। সামনে তাকাতেই চোখ অনঢ়। সামনে ফ্লোরে বড় বড় করে স্বাগতম মেঘবতি লেখা। সারাটা রুম অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। উপর থেকে এক ঝাক ফুলের পাপড়ি এসে ওর উপরে পড়লো। মেঘলা খেয়ার সেগুলোর মাঝে আরও একটা চিরকুট। চিরকুট টাতে লেখা,

– স্পেশাল মানুষের জন্য স্পেশাল কিছু বরাদ্দ থাকবে না তা কি হয়?

চিরকুটটা পড়ে নিজের অজান্তেই হেঁসে দিলো মেঘলা। আর দূর থেকে এক জোড়া চোখ ওকে মেঘলাকে অপলক দেখে যাচ্ছে।

🍁

মেঘলা আর তনু ক্যাফেতে বসে আছে। মেঘলার হাতে সেই এক গুচ্ছ ফুল। দুজনেই বেশ মগ্ন এই ঘটনা নিয়ে। লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিকে নিয়ে। মেঘলার এবার কেনো জানি রাগ রাগছে বুঝতে না কেনো বলে। তাই রাগ করেই চেয়ার থেকে ওঠে বলে,

– ধ্যাততেরিকা ছাতা । ভালো লাগে না আর। আর ভাবতে পারবো না। ভেবে ভেবে মাথার ভেতরের মগজগুলা যেনো ভুনা হয়ে গেলো। এই তুই যাবি বাসায়?

– হুম যাবো তো বটেই তবে

– কোনো তবে টবে না। চল ওঠ। ভালো লাগছে না।

মেঘলা তনুকে টেনে যাচ্ছে তখনই আবিরও যাচ্ছিলো কয়েকজনের সাথে কথা বলতে বলতে। মেঘলাকে দেখে থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

– আরে মেঘলা। কোথায় ছিলে আজ? তোমাকে তো দেখলামই না।

– এখানেই ছিলাম ভাইয়া।

– ওহ্ আচ্ছা। তো বাসায় চলে যাচ্ছো নাকি?

– হ্যা।

– আচ্ছা দাঁড়াও। আমিও যাবো।

মেঘলা আবিরের কথায় বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

– আপনিও যাবেন মানে? কোথায় যাবেন?

– না মানে বাসায় যাবো। চলো তোমাকে এগিয়ে দেই।

– না না ভাইয়া তার দরকার নেই। আমি পারবো একা যেতে।

– পারবে জানি। তবে এগিয়ে দিলে খুব সমস্যা হবে কি? তনুও তো আর তোমার সাথে যায় না। তুমিও একাই যাবে আমিও একাই যাবো আজ। সো আমাদের কোম্পানিও দেওয়া হয়ে যাবে একে অপরকে।

মেঘলা আর আপত্তি না করে রাজি হয়ে গেলো। আবির মেঘলাকে দাঁড় করিয়ে একটু বাইক পার্ক করতে গেলো। বাইক বাহিরে দাঁড় করিয়ে মেঘলাকে নিতে আসে। আবির মেঘলাকে নিয়ে ওর বাইকে নিয়ে বসিয়ে স্টার্ট দিতেই দেখে স্টার্ট নিচ্ছে না। কয়েকবার চেষ্টা করার পরও অবশেষে চেক করে দেখে প্রবলেম হয়েছে। কিন্তু বাইক তো ঠিকই ছিলো। হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না আবির। উপায় না পেয়ে আবির মেঘলাকে আগে ছেড়ে দেয়। বাসায় পৌঁছিয়ে রুমে ঢুকেই মেঘলা আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে বলে,

– খালামনিইইইইইইইইই। তুমি এখনই? তোমার না রাতে আসার কথা?

– রাতে আসার কথা বলে কি রাতেই আসবো? আগে এসে কি তোর প্রবলেম করলাম? ওকে তাহলে চলে যাচ্ছি। ( রাগের ভঙ্গিতে)

মেঘলা খালামনিকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– ও মেরি পেয়ারি সাসু মা। এতো রাগ করতে হয় নাকি? আমি না তোমার সেই কতো ছোট্ট বেলার ছেলের বউ? আমার সাথে রাগ করা কি মানায় তোমায়?

– হুম হয়েছে হয়েছে। গলাটা ছাড় এবার।

মেঘলা গলা ছেড়ে পাশে এসে বসে বলে,

– খালামনি জানো আমি ভাবি কি তুমি আম্মুর বেষ্টফ্রেন্ড না হয়ে আমার বেষ্টফ্রেন্ড হলে কতো ভালো হতো বলতো?

– কিভাবে ভালো হতো? তোর ফ্রেন্ড হলে তো তোর মতো এরকম পাকনা, কিউট ছেলের বউ পেতাম না আমি। আচ্ছা শোন আজকে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

– সারপ্রাইজ?? ( উত্তেজিত হয়ে)

– হ্যা।

– কি গো? বলো না।

– বলবো না। দেখাবো। অপেক্ষা কর একটু। আছসে তোর সারপ্রাইজ।

দরজায় আওয়াজ পড়তেই খালামনি মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– নে চলে এসেছে তোর সারপ্রাইজ। খুল যা।

মেঘলা খুবই উত্তেজিত হয়ে দরজা খোলেই থ….

চলবে…… ❤

ভুল ক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।