#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
ভয়ে ভয়ে বাসায় ঢুকছি। না জানি আজ কপালে কোন দুঃখ আছে। যেই না চুপিচুপি লিভিং রুম ক্রস করে সিঁড়িতে পা দিব, অমনি পিছন থেকে ডাক পরলো,”আঁখি” মুহূর্তেই যেন থমকে গেলাম। ভয়ে রীতিমতো হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল। বুকে ফুঁ দিয়ে পিছনে ফিরলাম। অমনি গালের উপর ঠাসসসসস। ভভভাইয়া মমারলে কেন? অমনি আবার ডান গালে আরেকটা চড় পরলো। আয়াজ ভাইয়া রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো কোন সাহসে আজকে তুই আবার স্কুল ভাং করেছিস? স্কুলে যাওয়ার নাম দিয়ে এসব করতে যাস? তুই কী ভেবেছিস তোর কোনো খবর আমার কাছে আসবে না। যেইনা দুইদিন সিঙ্গাপুর ছিলাম অমনি পাখনা গজিয়েছে। আয়াজ ভাইয়ার ধমকানো আর চিল্লনিতে আমার রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। কী হলো কথা বলছিস না কেন? আমার দুই বাহু ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে থাকে। ব্যাথায় আমি এবার জোরে জোরে কান্না করে দিলাম। কিন্তু এতে আয়াজ ভাইয়ার কোনো হুস নেই। হঠাৎ আয়াজ ভাইয়া আমার গাল চেপে ধরে আর চিল্লিয়ে দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলতে থাকে তোর নিশ্বাসটুকুও আমার নখ দর্পনে। নেক্সট টাইম যদি এধরণের কাজ করেছিসতো, মনে রাখিস আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। বলেই আমাকে ধাক্কা মেরে উপরে চলে গেল। ভাবছেন এসব কি হচ্ছে। চলুন একটু পিছন থেকে ঘুরে আসি। আমি আঁখি আজমীর নুরা। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আমরা এক ভাই এক বোন। আমার ভাই আমার থেকে তেরো মাসের ছোট। আমার ভাইয়ের নাম আদিফ রহমান। বাবা মোঃ হাসান রহমান। মা মিসেস নুরী রহমান। কিন্তু আমি ছোটো বেলা থেকেই খালামনির বাসায় থাকছি। বিকজ আমি যে স্কুলে পড়াশোনা করি, ওঠা আমাদের বাসা থেকে অনেকটা দূরে, কিন্তু খালামনির বাসার একদম কাছে। হেঁটে গেলে সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় লাগে। আর সেই সুবাদে আমার খালামনির বাসায় থাকছি। আমি এবার ক্লাস নাইনে পড়ি। আর এতক্ষণ যে আয়াজ নামক ঘূর্ণিঝড় আমার উপর দিয়ে গেলো, তিনি হচ্ছেন মিঃ আলতাফ চৌধুরী আর মিসেস রোজিনা চৌধুরীর দ্বিতীয় সন্তান আরহাম চৌধুরী আয়াজ। চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র উত্তরাধিকার। উচ্চতায় ৬ফুট। দেখতে মাশাল্লাহ, যাকে বলে হাজারো মেয়েদের ক্রাশ। বড় মেয়ে আরিফা চৌধুরী। সে এখন বিবাহিত। আর ছোটো মেয়ে আজিফা চৌধুরী এবার অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী।
আজকে যখন স্কুলে যাচ্ছিলাম, তখনই মাঝপথে দেখি আমার সব ফ্রেন্ডসরা স্কুলের উল্টো দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা পাঁচ ফ্রেন্ডস। সাদিয়া, আরোহী, বৃষ্টি, রিয়া আর আমি। তো আমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে তোরা সব কটা এইদিকে কই যাচ্ছিস, স্কুল তো ঐদিকে, এদিকে কী? তখনই বৃষ্টি বলে উঠলো মেলায় যাচ্ছি। কীহ মেলায় যাচ্ছিস😳😳 তাও আবার স্কুল ভাং করে? বোইনরে তোগো বুকে ফাটা আছে বলতেই হয়। তখনই আরোহী বলে উঠে কেনরে আঁখি এমনভাবে বলছিস মনে হচ্ছে তুই যাবি না। জ্বি যাব না আমি। তোরা যা। কেন যাবি না🤨🤨? এমন ভান করছিস মনে হয় কিছুই জানিস না। আমার প্রাণ ভোমরা যে কার হাতে জানিসনা নাকি? যদি আয়াজ ভাইয়া শুনে আমি স্কুল ভাং করে মেলায় গেছি, বুঝতে পারছিস আমার কি হাল হবে। তৎক্ষনাৎ রিয়া বলে উঠলো কেনরে আঁখি তুই না বললি তোর ভাইয়া বিসনেজের কাজে সিঙ্গাপুর গিয়েছে। তাহলে কিসের ভয়। হাহ সে না হয় বাইরে গেছে কিন্তু আমার পিছনে লাগিয়ে দেওয়া সিসিক্যামেরা গুলোতো আর বিদেশ যায়নি। দেখবি ঠিকি কানে আমার মেলায় যাওয়ার কথা পৌঁছে গেছে। আর ভাইয়া আজকেই ফিরবে। বাবাগো বাবা আমি এতো রিস্ক নিতে পারবো না। তোরাই যা। আমি গেলাম। অমনি সাদিয়া আামার হাত চেপে ধরলো, আর বলল আরে ধুর কিছুই হবে না চলতো আমাদের সাথে। বলতে গেলেই এক প্রকার আমাকে জোর করেই নিয়ে যেতে লাগলো। আসলে মনে মনে আমারও ভিষণ যেতে ইচ্ছে করছিল। কারণ বছরে একবারই মেলাটা বসে, আমাদের স্কুলের পাশে। সবাই যায়। এর পরের ঘটানাতো আপনারা জানেনই।
বর্তমানে,
খালামনি দৌড়ে আমার কাছে আসলো, আসলে এতক্ষণ আসার সাহস পাচ্ছিল না। কারণ আয়াজ ভাইয়ার রাগ সম্পর্কে সবার জানা আছে। আর বিষয়টা আমাকে নিয়ে হলেতো আর কোনো কথায় নেই। আমি খালামনিকে ছাড়িয়ে কান্না করতে করতে উপরে চলে গেলাম। দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো টেরই পাই নি। আর ভাবতে থাকি, আয়াজ নামক প্যারা যেদিন থেকে আমার লাইফে এসেছে, সেদিন থেকেই জীবনটা ত্যানাত্যানা হয়ে গেছে। চব্বিশ ঘণ্টা আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। কখন কোন সময় আমার উপর এট্যাক হয় নিজেও বলতে পারি না। মাঝে মাঝে নিজেকে মনে হয় আমি একটা রোবট। আয়াজ ভাইয়া আমাকে যেভাবে নাচাচ্ছে আমি সেভাবেই নাচ্ছি। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ওভাবেই স্কুল ইউনিফর্মে বিছনায় ঘুমিয়ে পরি।
রাতে, সবাই যখন ডিনার করতে যায়, তখন আয়াজ ভাইয়া খেয়াল করে সবাই আছে শুধু আমি নেই। আম্মু টেবিলে সবাইকে দেখছি আঁখি কোথায়, ওকে দেখছি না যে! দেখবি কিভাবে সে চোখ কি তোর আছে। হঠাৎ বিকেলের কথা মনে পরে যায়। ওহ শিট! মনে মনে…কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো, না যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। নয়তো ছেড়ে দিলে একি কাজ আবারো করতে গেলে আজকের দিনের কথাটা ভাববে। কারণ যে যুগ এসেছে কিভাবে একা মেলায় যায়? যদি কিছু হয়ে যেতো? আর কিছুই ভাবতেই পারলো না। চুপচাপ খাবার শেষ করে, এক প্লেট খাবার বেড়ে নিয়ে উপরে চলে গেল।
পিছন থেকে রোজিনা চৌধুরী মুচকি হাসলো, পাগল একটা!
উপরে উঠে দেখলাম ভিতর থেকে দরজা আটকানো। আমি কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কালাম। কিন্তু না কোনো আওয়াজই আসছে না। আঁখি আঁখি জোরে জোরে ডাকতে লাগলাম, কিন্তু কোনো সারাশব্দ নেই। কি হলো মেয়েটার! পরক্ষণেই মনে পরলো ওরতো ডুপ্লিকেট চাবি আছে। সে রুম থেকে চাবি এনে রুমে ডুকে দেখে, রুমটা অন্দকারে চেয়ে আছে। আলো জ্বালিয়ে দেখলো খাটের উপর ছোট্ট একটা পরি গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
আয়াজ হাতের খাবারের প্লেটি টেবিলের উপর রেখে খাটের পাশে বসল। দেখলো গাল দুটো লাল হয়ে ফুলে টমেটো হয়ে আছে। চোখের কোণে পানি জমে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অনেকক্ষণ কেঁদেছে। আয়াজ আঁখি গালের উপর ছোট্ট একটা চুমু একে দিলো।
মাথার উপর হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো, আঁখি! এই আঁখি….. আমি চোখ খুলে দেখি আয়াজ ভাইয়া, ভয়ে এক লাফে উঠে বসি।
আয়াজ ভাইয়া চোখ লাল করে বলে উঠলো কি হলো এভাবে ইউনিফর্ম চেঞ্জ না করে ঘুমচ্ছিস কেন? যা উঠ এখনই ফ্রেশ হয়ে আয়। আমিও ভয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বুকে ফুঁ দিতে লাগলাম। পিছনে তাকালে হয়তো দেখতে পেতাম, কেউ একজন আমার ব্যাঙ লাফ দৌড়ানো দেখে মিটিমিটি হাসছে।
আমি ফ্রেস হয়ে ভয়ে ভয়ে আয়াজ ভাইয়ার সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। আয়াজ ভাইয়া ব্রু কুঁচকে আমাকে বলল ওভাবে কি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি এখানে খাটে এসে বসবি?
আমি ধীরে ধীরে খাটের উপর গিয়ে বসলাম। ভাইয়াকে দেখলাম টেবিল থেকে প্লেটটি নিয়ে ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো। আমি চুপটি করে আছি দেখে আয়াজ ভাইয়া দিলো এক ধমক। আমিও ধমক খেয়ে মুখে খাবার তুলে নিলাম। আয়াজ ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিয়ে, ডেস্ক থেকে অয়েন্টমেন্ট নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দিল।আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে, গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমিও আরামে চোখ বন্ধ করে নিলাম। এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম। আমাকে ঘুমিয়ে পরতে দেখে কপালে চুমু দিয়ে লাইটটা অফ করে দিয়ে, দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
সকাল….
চলবে