তুই যে আমারই পর্ব-১০+১১

0
6143

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 10

সকালে সবাই খুব আর্লি রওনা হচ্ছে। তখন সকাল ৬:০০টা বাজে। ভোর বেলা হওয়ায় বাইরে অনেক শীত। কুয়াশায় যেনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমি একটা ধুতি টপ পরে নিলাম। চুলগুলো একটা হেয়ার স্টিক দিয়ে খোপা করে নিলাম। চোখে মোটা করে কাজল দিলাম। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগালাম। বাম হাতে একটা ব্লেক ওয়াচ আর ডান হাতে খুবই চিকন একটা ব্লেক স্টোনের ব্রেসলেট পরে নিলাম। কানে ছোট ছোট টপ পরে নিলাম ড্রেসের সাথে মেচিং করে। চোখে একটা ব্লেক ফ্রেমের চশমা পরে নিলাম। উঁচু বাক্স সুজ পরে নিলাম। সবশেষে ওরনাটা কাঁধের একপাশে পিন আপ করে সেট করে নিলাম। এবার আয়না দেখতে লাগলাম সব ঠিকঠাক আছে কিনা?
–হুমম ওকে! সোয়েটারটা নিলাম গায়ে দিবো বলে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম, ধুর বেড়াতে যাচ্ছি সুয়েটার পরলে কেমন লাগবে? তাই আর সোয়েটার পরলাম না। ব্যাগের ভিতর গুছিয়ে রেখে দিলাম। পরে ওখানে গেলে পরবো।

এদিকে রোজিনা চৌধুরী সবাইকে চেঁচাচ্ছে। কি হলো? ছেলেমেয়েরা তোদের হলো কী? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
নিচে খালামনির আওয়াজ শুনে আমি ব্যাগ নিয়ে নামতে লাগলাম। করিডর থেকে দেখলাম সবাই নিচে নেমে গেছে।

এদিকে আয়াজ দেখলো, আঁখি উপর থেকে নামছে। খুবই সুন্দর লাগছে। হালকা সাজেই যেনো মেয়েটিকে অমায়িক লাগছে। এক নজরে আমি তাকিয়ে আছি। যেনো ছোট্ট একটা পরী।
-আরিফা বলল, বাহ্ আমার বোনটাকেতো আজকে অনেক কিউট লাগছে।
-তখনই দিহান বলল, হুম দেখতে হবে না শালিকাটা কার।
-আজিফা মুখ ফুলিয়ে বলে আমি বুঝি কিছুনা?
-পিছন থেকে ইফাজ পিঞ্চ মেরে ফিসফিসিয়ে বলে, তুইতো আমার বউ।
-দিহান বলে উঠে কে বলল তুমি কেউ না। তুমি আঁখি, ইফতি তিনজনই আমার শালিকা মানে আধিঘরওয়ালি। আমার এই তিন তিনটা শালিকা থাকতে আর কিছু লাগে নাকি।
-অনিলা বলল অনেক কথা হয়েছে। চলো সবাই।
আঁখি নোটিশ করলো আজকে আয়াজ ভাইয়া কে অন্য দিনের থেকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। ব্লাক কোর্টটা যেনো হেব্বি মানিয়েছে। না চাইতেও চোখ যেনো বারবার আয়াজ ভাইয়ার দিকেই যাচ্ছে।

এরপর সবাই বাইরে এসে গাড়িতে উঠতে লাগলাম। কিন্তু বাইরে তো অনেক শীত। এতক্ষণ বাসায় থাকায় খবর হয়নি। কিন্তু এখনতো মনে হয় জমে যাচ্ছি। শিট কেনো যে সোয়েটারটা পরলাম না।
-এদিকে আয়াজের মেজাজ যেনো সপ্তম আকাশে উঠে গিয়েছে। কারণ এই শীতের মধ্যে মেয়েটা সোয়েটার গায়ে দেয়নি।
-আঁখি! ধমকে ডেকে উঠলাম।
-জ জ্বী আআয়াজ ভভভাইয়া।
-তোর সোয়েটার কই? চোখ লাল করে বলে উঠলাম।
-লললাগেজে।
-সোয়েটার কি লাগেজে রাখার জন্য। বাইরে যে কুয়াশা পরছে জানিসনা। যা এখনই বাসায় গিয়ে গরম জামা পরে আয় ধমক দিয়ে বলে উঠলাম।
-আলতাফ চৌধুরী বলল আহহা এমন করছিস কেন? আজকের দিনেও মেয়েটাকে ধমকের উপর রাখবে নাকি? আম্মু যাও তুমি গাড়িতে ওঠো। কিন্তু ওই গাড়িতে জায়গা নেই।

–তখন আয়াজ বলল আব্বু ও আমার সাথে পরের গাড়িতে যাবে। তোমরা যাও। আমি ছলছল চোখে আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। যার অর্থ আমি এই যমরাজের সাথে যাবো না। তোমাদের সাথে নিয়ে যাও।
-আলতাফ চৌধুরী আর কিবা করবেন। যার বউ সে নিয়ে যাবে বলছে। চাইলেও যে আর বাঁধা দিতে পারছি না। তাই চুপচাপ গাড়িতে উঠে চলে গেলাম।

তারপর পরের গাড়িতে আমি আয়াজ ভাইয়া, ইফাজ ভাইয়া আর আজিফা আপু।

আয়াজ ভাইয়া সামনে ড্রাইভিং সিটে বসলো। পিছনে আজিফা আপু আর ইফাজ ভাইয়া বসেছে। আমি পিছনে বসতে যেতেই আয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো, সামনে একসিট খালি রেখে পিছনে ওদের সাথে ঠেলাঠেলি করতে যাচ্ছিস? সামনে আয় ধমক দিয়ে বলে উঠলো।
-আমিও ভয়ে ভয়ে সামনে গিয়ে বসলাম।
-সামনে বসতেই আয়াজ সিটবেল্টটা লাগিয়ে দিলো।
-কিছু দূর যেতে গাড়ির ঠান্ডা বাতাসে ভিষণ শীত করছে। তাও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে আছি। কারণ পাশে আয়াজ ভাইয়া আছে। যদি মাইর দেয়।
-কিন্তু আয়াজ ঠিকই সবকিছু বুঝতে পারছে। আর তাই গাড়ির কাঁচ সব অফ করে দিলো। এবার ঠান্ডা কিছুটা কম লাগছে।

ঘন্টা কানিক পার হতেই একটা খোলা মার্কেটের সামনে গাড়ি পার্কিং করলো।
-ইফাজ বলল কিরে গাড়ি থামালি কেনো?
-তোরা একটু বস। আমি আসছি বলেই চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম আয়াজ একটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে গাড়িতে ঢুকলো।
-আয়াজ ব্যাগটি থেকে একটি শীতের চাদর বের করলো। আর ওটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো। এরপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

এদিকে ইফাজ আয়াজের চোখ ফাঁকি দিয়ে আস্তে করে হাতটা আজিফার পিছনে দিকে দিয়ে কোমর চেপে ধরলো। আর পেটে আলতো আলতো চাপ দিতে লাগলো। কিন্তু আজিফা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। কারণ সামনে আয়াজ ভাইয়া বসে আছে।
-আজিফার এই ব্যাপারটা যেনো ইফাজ অনেক এনজয় করছে।

কিছু দূর যেতেই মনে অনেক সাহস জুগিয়ে আয়াজ ভাইয়া কে বললাম…
-আআয়াজজ ভভভাইয়া?
-হুম?
-ববলছিলাম কি, জজানালাটা এএএকটু ওওপেন করে দদদেন? বলেই আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম।
-আয়াজ গাড়ি চালানো অবস্থায় গাড়ির কাঁচ গুলো অপেন করে দিলো।
আর এদিকে আমি মনে মনে নিজেকে সাবাশ দিচ্ছি। আরে বাহ্ আঁখি তুই এতো সাহসী কবে হলি? মিঃ আজরাইলের সাথে তুই নিজে থেকে কথা বলছিস? বা বা বাহ্।

গাড়ি চলতে চলতে একসময় একটি গ্রামের দিকে এগোলো। খুবই সুন্দর একটি পরিবেশ। আমি আস্তে করে হাতটা আর মাথাটা বের করে দিলাম।
-আয়াজ বলল হাত ভিতরে ঢুকা।
-একটু বাইরে রাখি না। আসলে আমি ভুলেই গেছিলাম এটা আর কেউ নয়, স্বয়ং আয়াজ আমাকে সাবধান করেছে। তাই হাতটা আরো বেশি বের করে দিয়ে রাস্তার পাশে বড় বড় গাছগুলো আছে ওগুলো ধরার ট্রাই করছি।
-মুহূর্তেয় আয়াজ এক ধমক দিলো। যার ফলে আমি কেঁপে উঠি। কি হলো কথা একবার বললে শুনিস না। হুমম? কোন সাহসে হাত বাইরে রাখিস। ধুম করে পাশ দিয়ে গাড়ি একটা গেলে তখন হাত আর হাত থাকবে না।

-ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। কার কথা শুনলাম না আমি। এরপর চুপচাপ আর কোনো কথা না বলে বসে থাকলাম।।

দুপুরের মধ্যে সবাই গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেছি।
এরপর সবাই যে যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করতে চলে আসলাম। লাঞ্চ করার পর সবাই রেস্ট করতে চলে যায়।
রুমে এসে রিসোর্টটা দেখতে লাগলাম। রিসোর্টটি খুব সুন্দর। মেঘগুলো খুব সুন্দর ভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিকেলে সবাই বের হবো। আজকে আর ঘুৃম আসবে না।

-তাই ভাবলাম একটু রিসোর্ট এর আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করলে ক্ষতি কি।
নিচে নেমে এদিক ওদিক দেখছি আর আর হাঁটছি।
-উপর থেকে আয়াজ দেখলো আঁখি একা-একা এদিক ওদিক ঘুরছে। তাই ডাক দিলাম। আঁখি!
-আয়াজ ভাইয়ার আওয়াজ শুনতে দেখলাম উপর থেকে আয়াজ ভাইয়া আমাকে ইশারায় বলছে উপরে যেতে। আমিও ভয়ে ভয়ে উপরে গেলাম।
-আঁখি আসতেই বললাম ওখানে একা একা কি করিস। ডোর লক করে এখানে আয়। মাথাটা ভিষণ ধরেছে। একটু টিপে দে।
-আমি আস্তে আস্তে গিয়ে ডিভানের উপর বসলাম। আর আয়াজ ভাইয়ার মাথা টিপে দিতে লাগলাম। এভাবে টিপতে খেয়াল করলাম আয়াজ ভাইয়া ঘুমিয়ে পরেছে। আমিও আর কি করবো খাটের একপাশে শুয়ে পরলাম।

কিন্তু ঘুমতো আসছে না। হঠাৎ দেখি আয়াজ ভাইয়া আমাকে টান দিয়ে তার বুকে নিয়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-ওহ মাগো! নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাবে। ধাক্কাচ্ছি কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। একচুল পরিমাণ ও নড়াতে পারছি না। আমি আর না পেরে এবার হাল ছেড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর নিজের ঘারে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম। আর গরম নিশ্বাসের। আসলে আমি আয়াজ ভাইয়ার বুকে পরার কারণে তার মুখটা একদম আমার ঘারে এসে ঘেঁষে আছে। আর নড়াচড়ার কারণে তার ঠোঁট আমার গলায় ঘারে পড়ছে। আমার ভিষণ সুড়সুড়ি লাগছে। কিন্তু কি করবো? কিছুতেই ভাইয়াকে সরাতে পারছি না এভাবে প্রায় ঘন্টা খানিক পার হয়ে যায়।

আয়াজ যখন ঘুম থেকে উঠে, তখন একটা মিষ্টি গন্ধ অনুভব করে।চোখ মেলে তার উপর কেউ শুয়ে আছে। আর তাকে খুব শক্ত করে সে জড়িয়ে ধরে আছে। বুঝতে বাকি রইল না যে, এটা তার অক্সিজেন। তাই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-কিন্তু এদিকেতো আঁখির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আর তাই আঁখি বার বার আয়াজকে ধাক্কা মারতে থাকে। আঁখি ভেবেছে আয়াজ তাকে ঘুমের ঘোরে চেপে ধরে আছে। অথচ আয়াজ যে সে কবেই জেগে গেছে তারতো জানায় নেই।
-আর তাই আমি আয়াজ ভাইয়া কে ঘুম ইচ্ছে মতো বকতে থাকি। এইতো সুযোগ।
-গন্ডার কোথাকার ছার আমাকে। ঘুমের মধ্যে ও এতো কেমনে শক্তি। কি খাস তুই। শালা কুত্তা, খবিশের বাচ্চা খবিশ, রাক্ষসের দানব। তোর জীবনেও বিয়ে হবে না। আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তুই জীবনেও বউ বাচ্চার মুখ দেখবি না। সারাজীবন কুমার থাকবি।
–আর আমি বিয়ে করে ১০ বাচ্চার মা হবো। আর তুই তাকাই তাকাই দেখবি। আসিস তখন আমাকে কথায় কথায় ধমক দিতে। আমার হাসবেন্ড তোকে মেরে হাত গুটিয়ে দিবে। শালা মাদারবোর্ড।

আহা সুখ সুখ সুখরে। গালিতে যে এতো সুখ আছে কি বলবো। মনে হচ্ছে আজকে অনেক বছরের পুরোনো জমানো প্রতিশোধ নিচ্ছি। মনে মনে এসব বলছি আর আনন্দের নিশ্বাস ফেলছি।

কিন্তু কেউ একজন যে আমার কথা গুলো শুনে রাগে বোম হয়ে আছে আমারতো জানায় ছিলো না।
আয়াজ মনে মনে বলছে, তাইনা আমি খবিশ, গন্ডার, রাক্ষস…অন্য কাউকে বিয়ে করবি। করাচ্ছি বিয়ে তোকে।
তারপর….
চলবে

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 11
এরপর আয়াজ আঁখিকে বুক থেকে নামিয়ে নিচে ফেলে ওর উপর উঠে যায়। আর চোখ লাল করে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে, কি যেনো বলছিলি? আবার বল?
-আয়াজ ভাইয়াকে এভাবে আমার উঠে এসব বলায় ভয়ে আমার স্ট্রোক করার সিচুয়েশন।
–আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ক ক কী বববলছিলাম?
-কেনো মনে পরছে নাহ?
-মনে মনে বললাম তাহলে কি আয়াজ ভাইয়া বকাগুলো শুনে ফেললো? আমি ভয়ে চোখ পিটপিট করে ওনার দিকে তাকালাম।
-কি হলো রিপিট কর? কি বলছিস আমাকে?
–কককই ককিছু ববলিনি তো।
-কিছু বলিস নি তাই না? আমি খবিশ, দানব, গন্ডার মাদারবোর্ড। ছিহ! এই জঘন্য ভাষার গালি কই থেকে শিখেছিস? স্কুল থেকে এসব শিখিস? ধমক দিয়ে বলে উঠলাম।
-ভয়ে আমার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
-আর কি যেনো বললি, বিয়ে করবি? এই বয়সে বিয়ে করার এতো শখ? ১০ বাচ্চার মা হবি? বাচ্চা কিভাবে হয় জানিস? এতো বাল পাকনা কবে থেকে হয়েছিস? কী হলো চুপ করে আছিস কেন? চিল্লিয়ে বলে উঠলাম।
-এদিকে আমার ভয়ে ঘাম ঝরছে শরীর থেকে।
-কী হয়েছে? বিয়ে করার খুব শখ তাই না? বলেই আঁখির ঘারের উপর জোরে একটা কামড় দিলাম।
-আআহহহ
-বিয়ে করবিনা?
-নননাহ।
-নাহ কেন? বলেই ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম।
-এটা কি হলো? আমি জাস্ট শক। কি হচ্ছে এটা? ছাড়া পাওয়ার জন্য অসম্ভব ছুটাছুটি করছি। বাট পারছি না। পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর ছাড়া পেলাম। আর বলল নেক্সট টাইম থেকে অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা বলবিতো এর থেকে বেশি কিছু হবে? মনে থাকবে?
-হুমমমম
-যা এবার। এরপর আয়াজ তাকে ছেড়ে দিলো।
আর আঁখিও ভয়ে কোনোরকম উঠে চলে গেছে। আসলে সে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে।

এরপর দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। আর ভাবলাম কি হলো এটা? আয়াজ ভাইয়া আমাকে এটা কি করলো। চুমু খেলো? কিন্তু কেনো? আমিতো জানি যারা প্রেম করে তাদেরকে তাদের বফ চুমু খাই। আয়াজ ভাইয়া তো আমার বফ না। আর তাছাড়া এই ঠোঁটের ছোঁয়াটা আমার চেনা চেনা লাগছে কেন? পরক্ষণেই মনে পরলো আরে এটাতো মাঝে মাঝে রাতের বেলা ফিল করতাম। আর গত রাতেও তো…তাহলে কি আয়াজ ভাইয়া? না না এসব কি ভাবছি আমি। আয়াজ ভাইয়া কেন চুমু খাবে। কিন্তু যদি আয়াজ ভাইয়া নাইবা খাই তাহলে কিছুক্ষন আগে তো আয়াজ ভাইয়াই চুমু খেয়েছে। উফফ নাহ! আর ভাবতে পারছি না আমি?

তখনই ইফতি রুমে এসে বলল, আঁখি কি করছো?
-এইতো আপু। বসে আছি। কিছু বলবে?
-হুম। সবাই বের হচ্ছি। তোমাকে রেডি হওয়ার জন্য বলতে আসলাম।
-আচ্ছা আপু আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।
-ওকে তুমি রেডি হও তাহলে আমি গেলাম।

এরপর আমি রেডি হয়ে নিলাম। আর সোয়েটার ও গায়ে দিয়ে নিলাম। নয়তো আবার সকাল বেলার মতো বকা খাবো।
নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই আস্তে আস্তে আসছে। এরপর সবাই ঘুরতে চলে গেলাম। আর ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম একটা ডাব বিক্রেতা ডাব বিক্রি করছে। আসলে ওই ডাবের পানিগুলো নাকি অনেক মজা। সবাই দাড়িয়ে পানি খেতে লাগলাম।
ইফাজ আর আজিফা ওরা সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো টাইম স্পেন্ড করছে। এভাবে সবাই যে যার যার মতো আলাদা হয়ে গেলো।

এদিকে আমি হাঁটতে হাঁটতে কই যেনো চলে আসছি নিজেরও জানা নেই। পরিবেশটা কেমন নিরব নিরব। এই কোথায় আসলাম। কিছুতো চিন্তেই পারছি না। যতই এদিকওদিক রাস্তা খুঁজছি ততই যেনো গভীরে চলে যাচ্ছি।
যেতে যেতে দেখলাম কিছু ছেলে একটা ঝোপের ভিতর গোল বেঁধে বসে আছে আর কি যেনো করছে। পোষাক আষাক দেখে মনে হচ্ছে সবকটা বকাটে। তাই মনে মনে ভাবলাম ওইদিকে না যাওয়াটাই ভালো।
-তাই আমি আস্তে আস্তে পিছন ফিরে চলে যেতে লাগলাম। কিন্তু নিচে পাতার আওয়াজে লোকগুলো পিছন ফিরে তাকালো। আর আমাকে দেখলো।

আর বলল আরে কেরে পাখিটা। বলেই আমার সামনে এসে দাড়ালো। আর লোকগুলো আমাকে আগা থেকে গোড়া অবধি কেমন বিশ্রী চোখে তাকাতে লাগলো।
আর একটা লোক বলল আরে একেবারে খাসা মাল। আজকে রাতটা ভালোই কাটবে। বলেই আমাকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।
-ছারুন আমাকে। কে আপনারা? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্লিজ আমাকে মা বাবার কাছে যেতে দিন আপনাদের দুটো পায়ে পরি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম।

এদিকে আয়াজ দেখলো আঁখি কোথাও নেই।
-একি মেয়েটা গেলো কোথায়? এখানেই তো ছিলো। আঁখি! আঁখি! ডাকতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও নেই মেয়েটা। ইফতি,আজিফা সবাইকে ফোন দিয়ে আস্ক করতে লাগলাম। কিন্তু সবার মুখে একটাই কথা কারো সাথেই নেই।
-অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো আয়াজের। তবে কি সেদিনের মতো? নাহহহহ। এসব কি ঘুরছে আমার মাথায়। এরপর আয়াজ চারদিকে খুঁজতে তাকে।

——-
লোকগুলো আঁখি কে তাদের আস্তায় নিয়ে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিলো, আর আঁখির শরীর থেকে ওরনাটা টান দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।
-আঁখি যথেষ্ট চেষ্টা করছে ওদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু পারছে না। লোকটি তার জামার হাতা টান দিয়ে ছিড়ে ফেললো। আঁখি কোনোরকম লোকটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে ওঠে যেতেই লোকটি আঁখিকে ধরে ফেলে। আর ঠাসস করে চড় মেরে দেয়। চড় খেয়ে আঁখির ঠোঁটের কোণে ছিড়ে রক্ত পরতে থাকে। লোকটা যখন আঁখির বুকের উপর হাত দিতে যাবে, অমনি কেউ একজন এসে লোকটার হাতটা মুচড়ে ধরে।

-এটা আর কেউ নয়। স্বয়ং আয়াজ। আয়াজকে দেখে যেনো আঁখির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠলো।
-আয়াজ লোকটার মুচড়ে ধরা হাতটা ঘুরিয়ে এমন মোচড় দেয় মনে হচ্ছে হাতটা আর এই জন্মে কোনোদিন ঠিক হবে না।
-তারপরে আয়াজ আঁখিকে দাঁড় করাই। আর আঁখি আয়াজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আয়াজ নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলে আঁখিকে পরিয়ে দেয়। আর আঁখিকে একদিকে দাঁড় করিয়ে লোকগুলোকে ইচ্ছে মতো পিটাতে থাকে।

-এভাবে মারতে থাকলে তো লোকগুলো মরে যাবে। আর তাই আমি উঠে আয়াজ ভাইয়া কে থামাতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। আর না পেরে আয়াজ ভাইয়া কে আমি পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আয়াজ যেনো কিছুটা শান্ত হয়। আয়াজ পিছনে ফিরে অস্তির গলায় বলতে লাগে তুই ঠিক আছিস তো। কোথাও লাগেনিতো। এদিকে আয়াজ আমার দিকে এটেনশন দেওয়ায় লোকগুলো ওই সুযোগে কোনোরকমে উঠে পালিয়েছে।

-আমি আয়াজ ভাইয়া কে কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। আর হেঁচকি তুলে কান্না করতে লাগলাম। কারণ আমার ভিষণ ভয় লাগছে। আজকে যদি আয়াজ ভাইয়া না আসতো তাহলে আমার কি হতো।
-এবার আয়াজ আমাকে ছাড়িয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলো কে বলেছে তোকে একা আসতে? চিনিস কিছু? আজকে যদি আমি সময় মতো না আসতাম তাহলে কি হয়ে যেতো। আর ইউ মেড? এমন স্টুপিড কাজ কিভাবে করেছিস। যেইনা একটু ছেড়ে রেখেছি অমনি আকাশে উড়াউড়ি শুরু করেছিস।
-আমি কোনো কথায় বলছি না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছি।
-হঠাৎ আয়াজ আঁখিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর নরম গলায় বলল কেন বুঝিস না তোর কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে। আমি চুপ করে আছি।
এরপর আয়াজ আমাকে গাড়িতে করে রিসোর্ট এ নিয়ে গেলো।

ইফতি, আরিফা, আজিফা আঁখি কে দেখে তাড়াতাড়ি করে আঁখির কাছে গেলো। আর দেখলো আঁখির এই অবস্থা।
-আয়াজ বলে উঠলো, যা হয়েছে তা আম্মু আন্টি এদের কাউকে বলার দরকার নেই। শুধু টেনশন করবে। তখন বেড়াতে এসে ওদের খুশিটা মাটি করতে চাই না।
-আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না। কি হয়েছে আর কোথায় পেয়েছিস ওকে? বলে উঠলো আরিফা।
-এরপর আয়াজ সবকিছু খুলে বলল।
-সব শুনে যেনো ওরা অবাক। এতো কিছু হয়ে গেছে।
-ইফাজ বলল, কি বলছিস এসব তুই? মাই গড। আঁখি তুমি সাবধান থেকো।
-আরিফা বলল হয়েছে। তোরা যা আমরা আছি। এভাবে এক রুমে এতোজনের ভির দেখলে আব্বু আম্মু চলে আসবে। তারপর সবাই চলে গেলো।

পরের দিন থেকে আয়াজ আর আঁখিকে এক মুহূর্তের জন্য ও একা ছাড়ে নি। আয়াজ যেখানে যেখানে যাচ্ছে সেখানে সেখানে আঁখিকেও নিয়ে যাচ্ছে। হাতটা শক্ত ধরে রেখেছে। এক ন্যানো সেকেন্ডের জন্যেও ছারেনি।
-এদিকে আঁখি আয়াজের এমন কান্ডে ভিষণ বিরক্ত। উফফ এভাবে ধরে রাখতে হয় নাকি? কাল না হয় এমন ভুল করে ফেলেছি। তাই বলে আজকেও করবো এমন তো কোনো কথা নেই।

এদিকে ইফাজ আজিফা একটা বড় গাছের নিচে বসে আছে। আর গল্প করছে।
–ইফাজ বলল জানো আমার কিন্তু পুরো একটা ফুটবল টিম চাই।
-কিহ? ফুটবল টিম মানে? এতো বাচ্চা কে লালন পালন করবে? বাবাগো বাবা আমি এতো বেবি নিতে পারবো না?
-কেন পারবে না? তুমিতো শুধু জন্ম দিবা। লালনপালন তো আমি করবো। এই শোননা আমার কিন্তু প্রিন্সেস চাই। একদম তোমার মতো গুলুমুলু।
-প্রিন্সেস না আমারতো প্রিন্স চাই।
-নো প্রিন্সেস
-বললাম না প্রিন্স
তাদের এই ঝগড়াঝাটি যে পিছন থেকে কেউ একজন শুনছে তাদের কোনো খবরই নেই।

সে আর কেউ নয়। আয়াজ…..
আসলে আয়াজ আঁখিকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ওদের পিছনে গিয়ে দাড়িয়েছে তাদের হুঁশই নেই।
হঠাৎ পিছনে ফিরে আজিফা দেখে আয়াজ ভাইয়া দাঁড়িয়ে। ভয়ে আজিফা যেনো শেষ
-ভভভাইয়া তততুই?
চলবে