তুই যে আমারই পর্ব-১৮+১৯

0
3901

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 18

আয়াজ দৌড়ে আঁখির কাছে এলো। আর এসেই দেখলো আঁখি সেন্সলেস। অনেক রক্ত বেরিয়েছে। আয়াজ যেনো প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে অনবরত ডাকতে থাকে। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। শেষে আয়াজ পানি নিয়ে আঁখির চোখে মুখে ছিটাতে থাকে। বাট এতেও কোনো রেসপন্স করছে না। আয়াজ আর কোনো উপায় না পেয়ে আঁখিকে হসপিটালে নিয়ে যেতে থাকে। হসপিটালাইস্ট করার পর আয়াজ একদিকে বসে আছে। আর চোখের পানি ফেলছে। কারণ সে নিজেও বুঝতে পারছে না এটা কি করছে। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে । আর একধারে কেঁদেয় যাচ্ছে। কিভাবে সে এতোটা জানোয়ার হতে পারলো। কিভাবে ভালোবাসার মানুষটাকে এতটা আঘাত করলাম বলেই পাশেই দেয়ালটায় অনবরত ঘুষি দিতে থাকে। আর নিজেকে বারবার ধিক্কার দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে দেখলো আয়াজের এই কন্ডিশন
-মিঃ আয়াজ একি আপনার এই সিচুয়েশন কেন? হাতের কি অবস্থা করেছেন?
-আপনি আমার কথা বাদ দিন। আঁখি কেমন আছে তাই বলেন?
–খুব একটা ভালো না। বাট এটা আমরা যথাযথ ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। খুব শীঘ্রই সুস্থ যাবে।
-আমি কি দেখা করতে পারি?
–হুমম শিওর।! বাট পেশেন্টের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। সো কোনোরকম সাউন্ড না করাটায় বেটার।
-ওকে বলেই আয়াজ আঁখির কেবিনে প্রবেশ করলো। আর ভিতরে ঢুকেই আঁখির মাথার কাছে বসে এক নজরে তাকিয়ে আছে। বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছে এভাবে দেখে। বিশ্বাস কর আমি এমন কিছুই করতে চাইনি। কিন্তু আমি ওই ভিডিও আর পিক গুলো দেখে এক মূহুর্তের জন্য আমি ভুলেই গেছিলাম যে আমি কি করতে যাচ্ছিলাম। হিতাহিত জ্ঞান টুকুও যে হারিয়ে ফেলেছিলাম। জানি আজকের এই ঘটনার পর তুই কোনোদিন ও ক্ষমা করতে পারবি না। তুই কেন আমিই নিজেই নিজেকে যে ক্ষমা করতে পারছি না। বলছে আর নিরবে চোখের জল ফেলছে।

সকালে আঁখির জ্ঞান ফিরতেই ভিষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই পাশের জগ থেকে পানি নিতে যাচ্ছে কিন্তু পারছে না। টুকটাক আওয়াজে আয়াজের চোখ ছুটে যায়। আসলে শেষ রাতের দিকে আয়াজের চোখ লেগে এসেছিলো। চোখ খুলেই দেখলো আঁখি জগ থেকে পানি নেওয়ার চেষ্টা করছে। আয়াজ দ্রুত পানি নিয়ে আঁখিকে খাইয়ে দেয়।
-আঁখি পানি খেয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
-আয়াজ বেশ বুঝতেই পারে যে আঁখি ইচ্ছে করেই চোখ অফ করে আছে। আয়াজ কে যেনো অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ডক্টর এসেই চেকআপ করে গেলো। আয়াজ খাবার এনে খাইয়ে দিলো। আঁখি না কোনো কথা বলছে না কোনোদিকে তাকাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে একমনেই খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়া শেষ করতেই আয়াজ মেডিসিন নিলো। দেখলো কোনো ঝামেলা না করেই চুপচাপ খেয়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। আয়াজ বুঝতে পারলো তার প্রিয়তমা তার থেকে কতটা দূরে সরে গিয়েছে। আয়াজ আর সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে উঠে চলে যায়। আয়াজ চলে যেতেই আঁখি চোখ খুলে দরজার দিকে তাকালো। আর মনে মনে বলচে
—-আমি কিছুতেই ক্ষমা করবো না আয়াজ ভাইয়া কিছুতেই না। কারণ আপনি ক্ষমার যোগ্য না। একতরফা কখনো বিচার করা যায় না। আর আপনি কালকে যেটা করলেন সেটা সম্পূর্ণ একতরফা। একটিবারতো জিজ্ঞেস করতে পারতেন, কিন্তু আপনি তা করেননি। আসলে আপনি আমাকে বিশ্বাসই করেননা। যদি বিশ্বাস করতেন তাইলে এমন কাজ কখনো করতেই পারতেন নাহ।

আয়াজ বাইরে যেতেই নিরব সামনে এসে দাঁড়ালো। আর বলল আসলে আয়াজ ভাই একটা কথা বলার ছিলো।
-কি?
–আসলে আয়াজ ভাই কালকে একটা ভুল হয়ে গেছে।
–কি হয়েছে সেটাই বল। নয়তো যা এখান থেকে।
–আসলে আয়াজ ভাই কালকে যে ভিডিও আর পিকচার্স গুলো পাঠিয়েছিলাম সেগুলো সত্য কিন্তু কিছু একটা ভুল আছে।
–ভুল? কিসের ভুল?
–আসলে কালকে আঁখির সাথে যে ফ্রেন্ডসটা ছিলো সেই ছেলেটাকে কালকে আমরা আপনার কথা মতো শায়েস্তা করতে যায় তখন ছেলেটি যা খুলে বলল আমরা যা দেখছি তা সত্যি ঠিকি কিন্তু কিছুটা মিসটেক আছে। এরপর আয়াজকের গতকালের সব ঘটনা খুলে বলে।
–সব শুনেই আয়াজ রাগের বসে নিরবের গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ইউ ইডিয়ট তোর এই ছোট্ট ভুলটা আমার কতোবড়ো ক্ষতি করেছে তুই জানিস। তোকেতো বলেই ওখান থেকে রেগেমেগে চলে যায়।

আর হসপিটালে গিয়ে আঁখির কেবিনে গেলো। আর গিয়ে দেখলো আঁখি একমনে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াজ আস্তে আস্তে আঁখির কাছে বসে। তারপর আঁখির হাতটা নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করলো।
-আঁখি হাতে কারো স্পর্শ পেতেই তাকিয়ে দেখলো আয়াজ। তাই মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
–জানি অনেক রেগে আছিস? ভুল করেছি। জানি হয়তো এটা ক্ষমার যোগ্য না। যা করেছি তা কখনো কেউ ক্ষমা করতে পারবে না। তোর জায়গায় হয়তো আমি থাকলে আমিও করতাম না। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এটা করতে চাই না। ভিডিও গুলো দেখে আমি এক মূহুর্তের জন্য সবকিছু ভুলে গিয়েছি। হিতাহিত জ্ঞান টুকুও হারিয়ে ফেলেছি। কি করবো বল বড্ড ভালোবাসি যে তোকে।
___ভালোবাসার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আয়াজ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আয়াজ ভাইয়া হয়তো আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বলল
–হুম তোকে অনেক ভালোবাসি । তারপর আয়াজ সে ছোটবেলা সবকথা বলতে থাকে। এমনকি বিয়ের কথা সহ।
-আঁখি যেনো স্তব্ধ! এসব কি শুনছে। বিয়ে? এতবড় সত্যি পরিবারের সবাই তাকে বলেনি। সে নাহয় জানতো না তার না হয় মনে ছিলো না কিন্তু বাকিরাতো আর আমার মতো ছোট ছিলো নাহ। কেন সবাই আমার কাছ থেকে এতবড় কথা লুকালো। কাউকে ক্ষমা করবো না। কাউকে নাহ।
–আয়াজ বলল বিশ্বাস কর আমরা তোকে বলতাম। কিন্তু তুইতো এখনো ছোট। হয়তো কথাটা শুনলে তুই বুঝেউঠতে পারবি না। তুই বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলো। স্কুল লাইফ শেষ হলেই তোকে সব বলতাম।

আঁখি কোনো কথায় বলছে না। চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। কোনো রেসপন্স করছে না। আয়াজ বুঝতে পারছে আঁখি এতবড় শক নিতে পারছে না।
-প্লিজ আমাকে ক্ষমা দে। আমি ইচ্ছে করে এমন করতে চাই নি। কিন্তু____
আর কিছু বলতে পারলো না আয়াজ। কার আঁখি হাতটা আয়াজের মুষ্টিবদ্ধ থেকে নিয়ে আর সে আগের মতোই জানালার পানে চেয়ে থাকে। আর কোনো কথায় বলছে না। আয়াজ ভালোই বুঝতে পারছে আঁখি কতোটা অভিমান হয়ে আছে।

পরেরদিন রোজিনা চৌধুরী আজিফা সবাই বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু বাড়ি এসে যা শুনে সব শুনে যেনো স্তব্ধ। আর বলতে থাকে
–ছিহ আয়াজ তুই এতোটা অমানবিক কবে থেকে হয়েছিস? এভাবে গায়ে হাত উঠানোর আগে একটুও হাত কাঁপলো না। কিভাবে এতো জানোয়ার হয়েছিস। বলেই রোজিনা চৌধুরী আঁখির কাছে গেলো।

আর গিয়ে বলল, আম্মু কেমন আছিস এখন?
–ভালো
–রাগ করে আছিস খালামনির উপর?
–চুপ করে আছি কোনো কথায় বলছি না। কারণ আমার কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না। কি করে সবাই আমার কাছ থেকে এতবড় কথা এতোদিন লুকিয়ে এসেছে।
-কি হলো?
–আমি এবার খালামনিকে বললাম, খালামনি একটা কথা বলবো রাখবে?
-কি কথা?
–আগে রাখবে কিনা তাই বলো?
–আচ্ছা রাখবো বল এবার?
–খালামনি আমি যতদিন পর্যন্ত এসএসসি পাস করছি ততদিন অবধি একটা হোস্টেলে উঠতে চাই। এসএসসি শেষ হওয়ার পর যখন যেটা ভাবতে হয় সেটা ভাববো।
-এটা কেমন কথা।
-হুমম।
–হঠাৎ এই কথা কেন?
–আমি যা বলছি তাই সত্যি যেতে হবে আমাকে। সো আমাকে আর কোনো জোর করবে না খালামনি। সুস্থ হওয়ার পরপরই আমি হোস্টেলে উঠবো।
–খালামনি চলচল চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি কোনো কথা না বলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
–রোজিনা আর কিছু না বলে চলে যান। আর যেতেই দেখলো আয়াজ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। একনজর আয়াজের দিকে তাকিয়ে নিচে চলে যেতে লাগলো।

এরপর আয়াজ আমার রুমে ঢুকে আমার কাছে আসলো। আয়াজ ভাইয়াকে আসতে দেখে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
–আয়াজ আমাকে বলল, এ কেমন কথা। তোর রাগ হয়েছে আমার সাথে তুই কেন বাড়ি ছেড়ে যাবি। এমন করছিস কেন? কেনো এভাবে আমাকে শাস্তি দিচ্ছিস। তুই কি বুঝিসনা আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। প্লিজ কলিজাটা।
–আমি কিছুই বলছি না। একদম চুপ হয়ে আছি।
-কি হলো?
……
-কথা বলবিনা?
…….
-আয়াজ আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়
চলবে

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 19
এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে যায়। এর মধ্যে আঁখি আয়াজের সাথে একটা কথাও বলেনি। আয়াজ অনেক চেষ্টা করেছে আঁখির সাথে কথা বলা জন্য। বাট কোনো লাভ হয়নি। আঁখি সুস্থ হওয়ার পর ব্যাগ গোছাচ্ছ। কারণ হোস্টেল ঠিক হয়ে গিয়েছে। পরেরদিন সকালে বের হবে। তখনই আয়াজ ওর রুমে প্রবেশ করেছে। আর ঢুকেই আঁখিকে বলতে
-প্লিজ এমন করিস না। আমি কিভাবে তোকে ছাড়া থাকবো। বড্ড ভালোবাসি যে… প্লিজ কলিজাটা এমন করিস না। বিনিময়ে তুই আমাকে যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নিবো কিন্তু ছেড়ে যাসনা।

আঁখি কোনো কথায় বলছে না। একমনে ব্যাগ প্যাক করেই যাচ্ছে। আয়াজ এবার আঁখিকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগলো। কি হয়েছে কথা বলছিস কেন? বলছিনা কোথাও যাবিনা।
এবার আঁখি শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে আয়াজকে ধাক্কা মেরে রোজিনা চৌধুরী কে ডাকতে থাকে। রোজিনা চৌধুরী আসতেই দৌড়ে রোজিনা চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরলো। আর হুঁ হুঁ কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে –খালামনি এই লোকটাকে বলো, এখান থেকে বেরিয়ে যেতে। এখনি বলো এখান থেকে দূর হতে। আমি আর এই লোকটাকে সহ্য করতে পারছিনা।
-রোজিনা চৌধুরী চোখ গরম করে আয়াজের দিকে তাকালো। আর বলল এখানে কেন এসেছিস? মেয়েটাকে কুত্তার মতো পিটিয়েও তোর কলিজা ঠান্ডা হয়নি। এটাই তো চেয়েছিলি। তো আবার আটকাচ্ছিস কেন? যা বের হো এখান থেকে।
–আম্মু!
–সাট আপ! ওই মুখে একদম আমাকে আম্মু বলে ডাকবিনা।
-এরপর আয়াজ হতাশ হয়ে বের হয়ে যায়।

পরেরদিনই
আঁখি রেডি হয়ে চলে যেতে লাগে। আর আয়াজ বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে আঁখির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। চোখ দুটো ছলছল করছে। আর ভাবছে যাকে না দেখে একটা মূহুর্ত কাটে না। তাকে কিভাবে দিনের পর দিন না দেখে থাকবো।

এদিকে আঁখি হোস্টেলে উঠার পর ভিষণ কান্না পাচ্ছে। কারণ কখনো এভাবে পরিবারের কারো কাছ থেকে একা থাকেনি। সবার জন্য খুব মন পুড়ছে। তবুও তাকে থাকতে হবে। মাঝে দুদিন কেটে যায়। এরমধ্যে আঁখি আর স্কুলে যায়নি। সবার সাথে ফোনে কথা হয়েছে। কারণ হোস্টেলে আসার আগে রোজিনা চৌধুরী তাকে একটা বাটান সেট নিয়ে দেয় সবার সাথে কথা বলার জন্য।
সকালে আঁখি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে স্কুলের গেইটে নামতে আয়াজকে দেখতে পেলো। দেখলো গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আঁখি দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কেটে চলে যেতে নিতেই আয়াজ আঁখির হাত ধরে ফেললো। আঁখি হাতটা ছাড়া পাওয়ার জন্য ভিষণ মোচড়ামুচড়ি করছে। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো সাউন্ড করছে না। শেষে না ফেরে স্থির হয়ে যায়।

আয়াজ এবার বলতে লাগে প্লিজ বাড়ি চল, ওখানে গিয়ে যা পানিশমেন্ট দিতে মন চায় দিস। তাও এভাবে দূরে থাকিস না। আঁখি কোনো কথায় বলছে। চুপটি করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
-প্লিজ কথা বল
——
-আর কতো এভাবে চুপ করে তাকবি।
স্কুলের ঘন্টা বাজতেই আঁখি আয়াজের হাতের মুঠো থেকে নিজের ছাড়িয়ে ভিতরে চলে যায়। আর আয়াজ আঁখির যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে। মনে মনে বলে
–দেখি কতোদিন কথা না বলে থাকতে পারিস। আমিও আয়াজ তোর রাগের পাহাড় আমি ভাঙ্গিয়েই ছাড়বো। বলেই একটা হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

এদিকে রোজিনা চৌধুরী একদিকে মন খারাপ করে বসে আছে। আয়াজ এসে এই অবস্থায় দেখে এগিয়ে গেলো
-আম্মু!
ছেলের ডাক শুনে রোজিনা চৌধুরী চোখের কোণে পানিগুলো লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে একটু হেসে ছেলের দিকে তাকালো।
–কিরে এই সময় তুই এখানে? আজকে অফিস যাসনি?
-কাঁদছো কেন?
–কই নাতো
-মিথ্যে বলছো? তাও আবার নিজের ছেলেকে?
এবার যেনো আবেগ আর চেপে রাখতে পারলো না। হুঁ হুঁ করে কেঁদে দিলো ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো আর বলছে
-কেন মেয়েটাকে এভাবে মারতে গেলি। আজকে যদি এমন কিছু না করতি তাহলে আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকতো। পুরো বাসাটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে।
-আম্মু তুমি কান্না করোনা। আমার জন্য এসব হয়েছে আমিই ঠিক করবো সবকিছু। ফিরিয়ে আনবো আমার ভালোসাকে।
–হুমম তাই যেনো হয়।

এরপর আয়াজ ওখান থেকে উঠে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে আঁখির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে একটি বার কি ক্ষমা করা যায় না। এতো অভিমান আমার উপর? খালি আমার রাগটা দেখলি আমার ভালোবাসাটা দেখলি না। তোকে ভালোবাসি বলেইতো উল্টা পাল্টা কোনোকিছু সহ্য করতে পারিনা। হিতাহিত জ্ঞান টুকুও হারিয়ে ফেলি। কারণ #তুই_যে_আমারই শুধুই আমার আর কারো না। সবকিছু দিতে রাজি আছি কিন্তু তোকে না। নিজের জীবনের বিনিময়েও নাহ। তোর ভাগ যে কাউকে দিতে পারবো নারে পাগলি। কেন বুঝিস না। আমি যে আর তোকে ছাড়া এভাবে থাকতে পারছি না। বড্ড কষ্ট হচ্ছে যে। জানিস গত দুইদিন আমি একটা মিনিটের জন্যও দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। প্রত্যেক রাতে যে তোকে এ নজর দেখা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আই লাভ ইউ। আই রেলি লাভিও। চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে উঠে।

দুপুরে যখন খেতে বসে, গত দুইদিনের মতো সবাই খাবার নাড়াচাড়া করেই উঠে যায়। কারণ আঁখির কথা সবার মনে পরছে। খেতে বসলেই কতো বায়নায় না করতো। সবজি খাবো না, শাক খাবো না, এটা গন্ধ ওটা মজা নেই, এতো ভাত কেন দিছ, এতো কম কেন দিছ, আজকে আমি সবার আগে ফাস্ট হবো দেখে নিও কতো দুষ্টুমিনা করতো। মেয়েটা নেই যে টেবিলটা যেনো ফাঁকা হয়ে আছে। কি খাচ্ছে না খাচ্ছে ওখানে?

আঁখি স্কুল থেকে ফিরে এসে যখন খেতে বসলো, খাবার গুলো দেখে যেনো চোখের কোণে আপনাআপনি পানি জমে গেলো। কারণ ডালগুলো যেনো ডাল না। হাত ধোয়া পানি। মুরগির মাংস দেখে মনে হচ্ছে মরিচ মসলা কিছুর সাথে কিছু লাগছে না। কিন্তু কি করবো তাও তো খেতে হবে। চোখের পানি গুলো মুছে কোনোরকম দুই একটা মুখে দিয়ে উঠে গেলো।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাড়ির সবার কথা ভাবছে। আর আয়াজের কথা যেনো ভিষণ মনে পরছে। কারণ গত দুইদিন ধরে কেউ জিজ্ঞেস করছে না। এটা করেছো কিনা ওটা করছো কিনা। আয়াজ যেনো আঁখির একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
–আচ্ছা আমি যতটা উনাকে মিস করছি ততটা কি উনি আমাকে করছেন? এখন আমার কথা ভাবছেন? কেন এতো মারা বকার পরও তাকে আমার মনে পরছে। কেন উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।

বিকেলে উঠে নামায আদায় করে পরতে বসলাম। কারণ নেক্সট উইক থেকে হাফ ইয়ার্লি এক্সাম। পরতে হবে মনোযোগ দিয়ে। আর তাছাড়া এখন এখানে আয়াজ ভাইয়াও নেই যে বিকেলে পড়ার টাইমে ঘুমোলেও আয়াজ ভাইয়া এসে ঝাড়ি মেরে ডেকে তুলে পড়তে আসাবে সেই ভেবে একটা নিশ্চিন্তে ঘুম দিবো। পুরো উইক না পরলেও কেউ বলার নাই। নিজের ধাপে পড়া ছাড়া আর কোনো গতি দেখতে পাচ্ছি না। তাই আর কিছু না ভেবে পরতে বসে পরলাম।

রাতে আর খেলাম না। কারণ হোস্টেলের এসব খাবার রুচিতে বিঁধছে না। অবশ্য খালামনি ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে খেয়েছি কিনা। আমি মিথ্যে বললাম নয়তো অস্থির হয়ে পরবে। রাতে যখন শুতে আসলাম প্রতিদিনের মতো আবার আজকেও ঘুমানোর আগে আয়াজ ভাইয়ার জোর করে দুধ খায়ানোর কথাটা মনে পরে গেলো। অবশ্য এখন সেই প্যারাটা আর নেই। কজ গত দুইদিন যাবত দুধ নামক পানিওটা আমার আর খেতে হচ্ছে না। আর সাতপাঁচ না ভেবে ঘুমোতে চলে গেলাম। কিন্তু ঘুম যে আসছে না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি। আর না পেরে উঠে বেলকনিতে চলে গেলাম। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। ভিষণ ঠান্ডা লাগছে কিন্তু সোয়েটার পরতে মন চাইছে না। অথচ এই সময় যদি এভাবে সোয়েটার ছাড়া খালামনির বাসায় এভাবে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতাম, তাহলে হয়তো এতক্ষণে আয়াজ ভাইয়া এসে ধমক দিয়ে বলতো,
“এতো রাতে না ঘুমিয়ে বেলকনিতে কি? আর তোর সোয়েটার কই, মারবো ঠাডিয়ে এক চড়। যা ভিতরে যা” ভেবেই হেসে উঠলাম। আচ্ছা আমি কেন মানুষটাকে নিয়ে এতো ভাবছি। আমার হয়েছেটা কি। দূর…

এদিকে আয়াজও ভিষণ ছটপট করছে। মনে হচ্ছে তার প্রিয়তমা ভালো নেই। আচ্ছা আমার কলিজাটাকি খেয়েছে। এখনকি ঘুমুচ্ছে নাকি জেগে আছে। এসব ভাবছে আর এদিক ওদিক হাঁটছে।

দুটো মানুষ দুই প্রান্তে কিন্তু কারো চোখেয় যেনো ঘুম নেই।
চলবে