#তুমি_আমারই
#পর্ব_২১
#Sumaia_Jahan
—– ভাবিমনি ইউ আর গ্রেট! তোমার কোনো তুলনা হয় না।তুমি এই পৃথিবীর সবথেকে ভালো মানুষ। তোমাকে তো নোভেল উচিৎ। আমি বুঝতে পারছি না এখনো তোমায় কেন নোবেল দেওয়া হলো না ? ওরা মনে হয় তোমাকে এখনো দেখেনি তাই নোবেল দিতে এতো দেরি হচ্ছে। সে যাইহোক তোমার নাম কিন্তু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এটা আমি বলে দিলাম।
সেই সকাল থেকে রাহাত আমার পাশে বসে বসে আমার এমন ফালতু মার্কা প্রশংসা করেই যাচ্ছে। আর আমার কান বেচারা দুটোর অবস্থা বেহাল। তাই সুযোগ বুঝতে কানে তুলো গুঁজে গল্পের বইতে মুখ ডুবিয়ে আছি।কিন্তু রাহাত বুঝতেই পারেনি আমার আমার কানে যে তুলো গুঁজা।ও তো ওর মতো কি আবোল তাবোল বকবক করেই চলেছে।আমি বুঝতে পারছি না ওর আজ হলোটা কি?এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেন?কাল রাতেই রুহি আর আকাশ ভাইয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। সামনের সাপ্তাহে ওদের বিয়ে। বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে এতে তো বড়ো ভাই হিসেবে রাহাতের খুশি হওয়ার কথা।ও কি তবে বেশি খুশিতে পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি!তাহলে খুব চিন্তার !তাহলে তো বাড়ির সবাইকে জানাতে হবে।আমি বইয়ে মুখ গুঁজে এসব ভাবছি রাহাতের জোর চিৎকারে আমার হুস আসলো।আসলে কানে তুলো গুঁজে থাকার কারনে ভুলেই গেছিলাম এই রাহাত বাবু আমার পাশেই বসে আছেন।বাধ্য হয়ে কান থেকে তুলো গুলো খুলে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—– বলো কি হয়েছে?
রাহাত আমার কান্ডে চোখ বড়ো বড়ো করে অবাক কন্ঠে বললো,
—– তারমানে তুমি এতোক্ষণ কিছুই শোনোনি।আমি সেই সকাল থেকে ইয়া বড়ো বড়ো কতো প্রশংসা করলাম।দেখ আমি কতোটা ক্লান্ত হয়ে গেছি এতো বড়ো বড়ো প্রশংসা করতে করতে।আর তুমি কিছুই৷ শোনোনি।আমার সব পরিশ্রম বৃথা গেলো?
এগুলো নাকি কোনো পরিশ্রম?আল্লাহ আমারে বাঁচাও!আমি এবার একশো তে একশো সিউর এই ছেলে পাগল হয়ে গেছে। একে এভাবে রাখলে নিজে তো পাগল হয়েছেই বাকি দেরও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আমি মুখে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে বললাম,
—- রাহাত তোমার মনে হয় শরীরটা একটু খারাপ। তুমি বরং নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নেও।শরীরটা একটু ভালো লাগবো।
রাহাত আমার কথায় ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে বললো,
—- ভাবিমনি আমার শরীরের কিছুই হয়নি।শরীর একদম ফিট আছে।যা হয়েছে তা তো মনের হয়েছে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—- মনে কিছু হয়েছে মানে?
—- তুমি তো জানো সামনের সাপ্তাহে রুহির বিয়ে ঠিক হয়েছে।
—- হুম এটা তো ভালোই খবর এতে তোমার মনের কি প্রবলেম? তুমি কি রুহির এই বিয়েতে খুশি না?
—- আরে না না আমি ওর বিয়েতে খুশি হবো না কেন?আমি খুব খুশি আমার ছোট্ট বোনটার বিয়ে হবে।
—- তাহলে প্রবলেম কি?
রাহাত আমার প্রশ্নে হতাস হলো আর হতাস কন্ঠে বললো,
—- তুমি বুঝতে পারছো না ভাবিমনি!রুহি আমার ছোট্ট। ওর বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি ওর থেকে বড়ো হয়েও আইবুড়ো হয়ে থাকবো!একবার ভাবো আমার কোনো প্রেস্টিজ থাকবে?আমি মেজো দেখে আমার কথা কেউ ভাবেই না।
এইবার বুঝতে পারলাম বাবুর মাথায় বিয়ের ভুত ডুকেছে তাই তিনি এমন অদ্ভুত বিহেভ করছেন।যার চিকিৎসা মেন্টাল হসপিটালে না কাজী অফিসে হয়।
কিন্তু আমি তো এর মজা নিবো।তাই মুখ টা কে গম্ভীর করে বললাম,
—- ভাই আমার তোমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি যখন হবে তোমাকে নিয়েও ভাবা হবে চিন্তা করো না।
রাহাত মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- ভাবিমনি আমি কিন্তু রুহির অনেক বড়ো। রুহির যেহেতু এখন বিয়ে হচ্ছে তো আমার টাও এখনই হতে হবে হুম।
রাহাত কথা গুলো বলেই আমার হাত ধরে করুন শুরে বললো,
—- ভাবিমনি জানো নিহার বাড়ির লোকেরা ওর বিয়ে ঠিক করতেছে।আর তুমি তো জানো আমি নিহাকে কতোটা ভালোবাসি।এখন যদি আমার আর নিহার বিয়ে না হয় তাহলে ওর বাড়ির লোক ওকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।প্লিজ ভাবিমনি কিছু একটা করো।
ওর কথা গুলো আমার বুকে বাঁধলো। আমি তো জানি ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কাকে বলে!আমি তো আদি না চিনতে পেরে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।না আমি অন্য কারো ভালোবাসা হারিয়ে যেতে দিবো না।রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ও এখনো মন খারাপ করে আছে।ওর হাতের উপর হাত রেখে বললাম,
—- তোমার ভালোবাসা হারিয়ে যাবে না।আমি তোমাদের ভালোবাসা এক করবো ইনশাআল্লাহ।তোমার এই ভাবিমনির উপর একটু ভরসা করো!
মুহূর্তেই রাহাতে ফেঁকাসে মুখটা খুশির জ্বলক নেমে এলো।ওকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো খুশি ও পেয়ে গেছে।খুশিতে গদোগদো হয়ে বললো,
—- ভাবিমনি ইউ আর বেস্ট! তোমার মতো ভাবিমনি যেন ঘরে ঘরে জন্ম হয় উফ সরি তোমার মতো ভাবিমনি যেন প্রত্যেকটা দেবর পায়।
কথা গুলো বলেই দৌড়ে ঘর থেকে চলে গেলো।আমি ওর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
রোদ্দুর ঘরে আসতে ছিলো ঘরে ঢোকার আগেই রাহাতের সাথে ধাক্কা লাগলো।রাহাতের সে দিকে খেয়াল নেই। ও তো আজ প্রচুর খুশি। খুশিতে আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এখন আকাশে উড়া যাবে না।এখন তো নিহা কে খবরটা দিতে হবে।তাই ওর কোনো দিকেই খেয়াল নেই। কিন্তু এদিকে রোদ্দুর অবাক কারন রাহাত রোদ্দুরকে অনেক মান্য করে চলে।একদম বড়ো ভাইয়ের বাধ্যগত ছোট ভাই। কিন্তু সেই রাহাতই ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।একবারও দাড়িয়ে সরি টুকুও বললো না।ব্যপার টা রোদ্দুরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ধাক্কা লাগার কারনে হাতে একটু ব্যথা লেগেছে। তাই হাত ডলতে ডলতে ঘরে ঢুকলো।
—- আয়সু রাহাতের কি হয়েছে রে ওভাবে দৌড়াচ্ছে কেন?তুই কিছু জানিস?
রোদ্দুর কথাটা হাত ডলতে ডলতেই বললো।আর আমি এতোক্ষণ রাহাতের কান্ড নিয়ে হাসতে ছিলাম তাই কিছু খেয়াল করিনি।রোদ্দুর কথায় ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও এক হাত দিয়ে আরেক হাতের কনুই ধরে দাড়িয়ে আছে। ওকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে৷ দেখে ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—- তোমার আবার কি হয়েছে? এভাবে হাত ধরে দাড়িয়ে আছো কেনো?
—- আর বলিস না আমার গুনোদ্বর ভাই আমাকে ধাক্কা মেরে চলে গেছে।একবার সরিও বললো না।…..কিন্তু ও তো এমন করে না।ও তো সবসময় আমাকে মান্য করে চলে তবে আজ কি হলো ওর?
আমি হাসতে হাসতে বললাম,
—- বিয়ের খুশিতে এমন করেছে বুজেছো!
তারপর আমি রোদ্দুর কে সব বললাম।
রোদ্দুরও সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
—- লাইক সিরিয়াসলি!ও এতো এতো পরিশ্রম করে এতো সুন্দর সুন্দর প্রশংসা করেছে!
কথাটা বলেই রোদ্দুর আবার হাসতে শুরু করলো।এবার আমার রাগ হচ্ছে।
—- হাসো হাসো তোমার তো হাসিই পাবে। আমার তো তখন খুব ভয় লাগছিলো রাহাত আবার পাগল টাগল হয়ে যায়নি তো।কতোটা ভয় পেয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না।
রোদ্দুর হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো,
—- ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই বিকজ ও রোদ্দুর খানের ভাই।
—- তাই তো ভয় টা আরো বেশি পাচ্ছিলাম। বলা তো যায় না তুমি যা মানুষ তোমার ভাই পাগল টাগল হয়ে যেতেই পারে।
রোদ্দুর অপমান টা দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে শান্ত গলায় বললো,
—- তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো।আমি কিন্তু এখন ঝগড়া করার মডে নেই।
—- তুমি আমায় ঝগড়ুটে বললে?
—- সারাক্ষণ ঝগড়া করতে চাইলে তো সে ঝগড়ুটে হবেই সেটা আবার বলার কি আছে।
বেস হয়ে গেলো আমাদের ঝগড়া শুরু। সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা এখনো সেই সাপে নেউলেই রয়ে গেলো।আমরা একসাথে থাকলেই ঝগড়া করতে শুরু করি।মনে হয় ঝগড়া কাকি আমাদের কে ছাড়তে চাইছে না তাই উনি আমাদের সাথে লেগেই আছেন।
ওইদিকে আকাশ আজকে রুহি কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।একটা নদীর পারে ওরা দুজন বসে আছে।
জায়গাটা একদম নিরিবিলি আর শান্ত। কোনো লোকজন নেই।চারিদিকে সবুজ গেঁড়া। নদীর কুলকুল ধ্বনি। আর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে তার শোঁশোঁ শব্দ।এক কথায় অসাধারণ একটা পরিবেশ।
এতো কিছুর মধ্যেও রুহির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।ও তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আকাশ ওর সাথে আছে।ওর মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে যে স্বপ্ন ঘুম ভাঙ্গলেই শেষ হয়ে যাবে।আকাশ ওর অবস্থা টা বুঝতে পারছে তাই ওকে এখানে এনেছে স্বাভাবিক করার জন্য। রুহি নিজের হাতে থাকা আংটি বার বার হাত দিয়ে ধরে ধরে দেখতেছে।আর আকাশ ওর পাশে বসে ওকে দেখছে।
—- আকাশ ভাইয়া আমি কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে চাই না চিরকাল এই স্বপ্ন দেখে যেতে চাই।আমাকে কিন্ত একদাম ডাকবেন না।
রুহি আংটি দেখতো দেখতেই কথাটা বললো।আর আকাশের মনটাই ভেঙে গেলো।ও বেচারা ভেবেছিলো রুহি কে এমন একটা পরিবেশে আনলে ও হয়তো স্বাভাবিক হবে।কিন্তু রুহিতো এখনো ভাবছে ও স্বপ্নই দেখছে।কি আর করার! আকাশ রুহির হাত হেঁচকা টান দিয়ে এনে একটা চিমটি কাটলো।একটু জোরেই চিমটি টা কাটলো তাই রুহি “আহ” করে উঠলো।আর চোখ বড়ো বড়ো করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- এবার বলোতো রুহি স্বপ্নের ভিতর কাউকে চিমটি কাটলে কেউ ব্যথা পায়?
রুহি মাথা নেরে বললো “না”।আকাশের মুখে এবার হাসি ফুটলো আবার বললো,
—- তাহলে কি তুমি কিভাবে স্বপ্ন দেখছো?রুহি আমি সত্যি তোমার সামনে বসে আছি। আর কালকে আমাদের এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে।আমি যে কাজের জন্য বিদেশ গিয়েছিলাম সেটা শেষ হয়ে গেছে তাই দু বছর আগেই ফিরে আসতে পেরেছি।আর তোমাকে কিছু জানতে দেইনি কারন তোমায় সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আর তুমি সব কিছুকে স্বপ্ন ভাবছো!
চলবে,,,,,