তুমি আমি দুজনে পর্ব-৪৭+৪৮

0
705

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব -৪৭

ধরণী জুড়ে নিকষ অন্ধকার চিড়ে হালকা কমলা রঙের আলো ফুটেছে, নিস্তব্ধতায় ঝিঁঝি পোকার ডাক অতিক্রম করে পাখির কিচিরমিচির কলরবে মুখরিত হচ্ছে পরিবেশ। সূর্যটা উঁকিঝুঁকি দিয়ে গগণে বুক ফুলিয়ে প্রকট হবার প্রচেষ্টায় মত্ত।

আহান উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে,বারান্দার পর্দা ভেদ করে বৃষ্টির পরের হিম অনল তিরতির করে মৃদু আন্দোলন তুলে ছড়াচ্ছে ঘরের ভেতর। কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে উঠলো আহান,পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো, পিঠের উপর কোনো কিছুর ভার অনুভূত হতে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো দুটো হাত ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শরীরে সাথে লেপ্টে আছে। ছোট ছোট উষ্ণ নিঃশ্বাস আঁছড়ে পরছে পিঠের উপর।
মুচকি হাসলো আহান, এক হাতে আলতো ভাবে তুরার মাথাটা ধরে সোজা হয়ে শুয়ে তুরার মাথাটা রাখলো নিজের বুকের উপর
সারারাত ঝড় বৃষ্টির দাপটে সৃষ্ট ঠান্ডা বাতাসের মৃদুমন্দ সমীরণে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো তুরা, আহানের বুকের ভেতর মিশে গেলো। আহান কাঁথা টা টেনে জড়িয়ে দিলো তুরার গায়ে, উষ্ণতা পেয়ে তুরা বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে গেলো, ঘুমের মাঝেই মুখ ঘষে দিলো বুকের মাঝে।
কিন্তু নড়চড় করার ফলে পেটে যন্ত্রণাভুত হলো, সারা গায়ের ভোতা ব্যথার প্রকপ অনুভূত হতেই গুঙিয়ে উঠলো।
টিপটিপ করে চোখ খুলতেই আহানকে খালি গায়ে এতটা নৈকট্যে দেখে ভড়কে গেলো। ছিটকে সরে আসতে গেলে পেটে তীব্র যন্ত্রণায় মুখ খিঁচিয়ে নিলো। আহান তুরার অবস্থা বুঝে রয়ে সয়ে তুরাকে এক হাতে টেনে নিজের কাছে আনলো। বুকের মাঝে জড়িয়ে কাঁথাটা শরীরে মুড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শ্লথ গলায় বলল

-সরি

আহানের আদর মিশ্রিত গলায় তুরা আরও মিইয়ে গেলো। যেনো এই আদুরে গলায় শুনতে চেয়েছিলো। আহানের নরম কণ্ঠে তুরার চোখ ভরে এলো, বুকের ভেতর মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আহান হাত বুলিয়ে দিয়ে সশব্দে চুমু খেলো মাথায়। আহ্লাদী গলায় বলল

-কাঁদে না তো,ঠিক হয়ে যাবে। আজকেই সেরে যাবে ব্যথা।

তুরার মনে অভিমান হলো,কেনো এমন করলো আহান! সে ভালোবাসা চেয়েছিলো, তার ভালোবাসায় এতটা যন্ত্রণা কেনো?ভালোবাসা নামক পীড়া দিয়ে এখন শান্তনা দিচ্ছে?
মনোক্ষুণ্ণ চোখে মুখ তুলে তাকালো আহানের দিকে,যার দৃষ্টি স্থির তার মুখের পানেই।
চিকচিক করা সুগভীর চোখ ফর্সা গাল জুড়ে স্নিগ্ধতা। একরাশ মায়া আর আদরভরা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আহান,যার দৃষ্টি অগ্রাহ্য করা অসম্ভব। আহান পুরু ঠোঁট এলিয়ে হাসলো মৃদু, তুরাকে আরও সুগভীভাবে জড়িয়ে কপালে বেশ সময় নিয়ে চুমু খেলো। ব্যথাতুর হাসি ফুটে উঠলো তুরার অধর জুড়ে। সাথে হতবাক ও হলো। এখন আর মান অভিমান হচ্ছে নাহ! বরং আহানের দেওয়া যন্ত্রণা গুলোতেই সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। দু’হাতে খামচে ধরলো আহানের উন্মুক্ত পিঠ। শক্তপোক্ত বাহুডোরের পিষ্টনে সারা শরীরে জমাট বাঁধা ব্যথা গুলো বারংবার মনে করিয়ে দিলো আহানের ভালোবাসার, তীব্র স্পর্শের গভীরতা, প্রখরতা!

চোখ বন্ধ করে বেশ খানিকক্ষণ আহানের বুকে মিশে থাকার পর বাহুবন্ধনী ঢিলা হলো আহানের, ক্ষীণ স্বরে বলল

-উঠতে পারবে তুরা? একটু কষ্ট করে ওঠো,ফ্রেশ হয়ে নাও

তুরা উঠলো নাহ,নড়লো না পর্যন্ত, আহান ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, গায়ের উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে দিলো, তুরাকে কোলে নিয়ে উঠে দাড়ালো, জ্বলন ধরলো তুরার শরীরে। অস্পষ্ট শব্দে আর্তনাদ করলো ক্ষীণ। আহান অসহায় চোখে তুরার দিকে তাকালো, ধীর পায়ে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে নামালো কোল থেকে, গিজার টা অন করে দিলে তুরা শার্ট আঁকড়ে ধরে অস্পষ্ট গলায় বলল

-আ আপনি যান প্লিজ

ধিমে শ্বাস ফেলে আহান, তুরাকে আস্তে করে আগলে ধরে শাওয়ার অন করে দিলে ফোঁটা ফোঁটা জল ছুঁয়ে গেলো সারা দেহে।জ্বলে উঠলো তুরার সারা শরীর। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করলেও বাধ ভেঙে কুঁকড়ে গুঙিয়ে উঠলো। আহান বেশ কিছুক্ষণ পর শাওয়ার বন্ধ করে দিয়ে তোয়ালে টা এনে তুরার দিকে এগোলেই তুরা গলার শার্ট খামচে অন্যদিকে ঘুরে বলল

-আপনি চলে যান,প্লিজ

আহান কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত তাকিয়ে তুরার গায়ের উপর তোয়ালে টা রেখে বেরিয়ে গেলো। তুরা গোসল সেরে গা মুছে তোয়ালে টা পেচিয়েই বেরিয়ে আসলো।
ঘরে আহান নেই,খাটের উপর ওর একটা শার্ট রাখা। আহানই রেখে গেছে শার্ট টা। এগিয়ে গিয়ে দরজা টা লাগালো,পুনরায় আহানের আরেকটা শার্ট পরে নিলো তুরা। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ভেতর টা অদ্ভুত শিহরণ দিলো। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে, গলা বুক ঘাড়ে ছোট ছোট লাল দাগগুলি দেখে লজ্জায় নতজানু হয়ে গেলো তুরা। দাগ হওয়া জায়গাতেই হাত বুলিয়ে আহানের কথা গুলো মনে পরে গেলো, গত রাতে প্রচন্ড উন্মাদনায় মত্ত হয়ে আহান যখন তুরার সারা শরীরে নিজের প্রবল স্পর্শের প্রখরতা গেঁথে দিচ্ছিলো, তুরা অসাড় হওয়া হাতে বাঁধা দিতে গেলে আহান ওর হাতটা চেপে ধরে বলেছিলো

-আজ আর বাঁধা দিওনা প্লিজ। তোমার ভেতর বাহিরের অন্তঃস্থল জুড়ে আমায় মিশে যেতে দাও,এক চুল ফাঁক রাখতে চাইনা আমি

পরনের শার্ট খামচে চোখ মুখ মুদে ফেলল তুরা। লজ্জা, ব্যথা,সংকোচে ভেতরটা তোলপাড় করে উঠলো। আহানের বলা প্রতিটি কথা কানের ভেতর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বারংবার।
এর মাঝেই দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে ঘোর ভাংলো তুরার, তবে আরও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো, আহান এসেছে অবশ্যই! কিন্তু ওর সামনে দাঁড়াবে কি করে। আহানের চেহারা দেখলেও কাল রাতের প্রতিটি দৃশ্য পর্দার মতো ভেসে উঠছে সামনে।
চোখ মুখ কুচকে এগিয়ে গেলে দরজার ওপাশ থেকে মন্থর গলার আওয়াজ শোনা গেলো

-দরজা খোলো তুরা, খাবার এনেছি। কাল রাত থেকে কিছুই খাওনি তুমি

অপ্রতিভ হলো তুরা, অস্বস্তি বিমূঢ়তা জেঁকে ধরলো। বার কয়েক শুকনো ঢক গিললো। দলা পাকানো কন্ঠে কিছু বলবে তখন আবারও আহান বলল

-তুরা? কিছু হয়েছে? ঠিক আছো তুমি?

-হ্ হ্যাঁ ঠিক আছি আমি

তুরার গলা শুনে শান্ত হলো আহান। নরম গলায় আবারও বলল

-তোমার হয়ে গেলে দরজাটা খোলো

-আ আমি খাবো না। আপনি চলে যান

আহান থমকালো। সে জানতো তুরা এমন কিছুই করবে। শান্তস্বরে বলল

-তুরা, দরজাটা খোলো। কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবে ঘরে?

-না আমি খুলবো না আপনি যান,আমি ঘুমাবো, ঘুম পাচ্ছে আমার

আহান ফোস করে শ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে থেকে নরম গলায় বলল

-আচ্ছা ঠিকাছে, আমার একটু কাজ আছে আমি বাইরে যাচ্ছি। টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিও

বলেই চলে গেলো। তুরা দরজায় কান পেতে আহানের যাওয়ার শব্দ শুনলো। তাও দরজা খুললো নাহ। কয়েক মুহূর্ত বাদে সদর দরজা লাগানোর শব্দ হলে আস্তে ধীরে দরজা খুললো। মাথা বের করে আশেপাশে কাওকে দেখতে পেলো নাহ। এগিয়ে গিয়ে বাইরে যাওয়ার দরজা টাও লাগানো, যাক আহান চলে গেছে,,
মন্থর পায়ে হেঁটে এগিয়ে আসলো তুরা,হুট করেই তুরাকে কেও পেছন থেকে এক হাতে কোমর ঝাপটে কাঁধে তুলে নিলে তুরা হতচকিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো

-বাঁচাও,বাঁচাও ভূত। আল্লাহ্ আমাকে তুলে নিয়ে গেলো

-শাট আপ,পুরো এলাকা জাহির করবে নাকি তুমি

বলেই ধুপধাপ পা ফেলে রুমে এসে তুরাকে কাধ থেকে নামিয়ে খাটের উপর ঠাস করে বসিয়ে দিলো। তুরা এখনো বাকরুদ্ধ হতবিহ্বলিত,এটা কি হলো! উনি না চলে গেলেন, ভূতের মতো এসে কাঁধে তুলে নিলো কি করে?
আহান এক হাতের খাবারের প্লেট টা তুরার সামনে রেখে বলল

-অনেক হয়েছে এখন খেয়ে নাও,বেলা হয়েছে

তুরা কিছুক্ষণ থ মেরে বসে থেকে মাথা চুলকে বলল

-কিন্তু আপনি না চলে গেলেন?

-হু

ছোট্ট জবাব আহানের। তুরা কিছুক্ষণ হতভম্বিত চেয়ে ভ্রু কুচকালো, ললাটে গাঢ় ভাঁজ ফেলে বলল

-ধোঁকা, সরাসরি ধোঁকা দেয়া হয়েছে আমাকে,এতো বড় গাদ্দারি!

আহান শান্ত চোখে তাকালো,কাটা চামচে নুডলস পেঁচিয়ে তুরার মুখের সামনে ধরে বলল

-এরকম বিচ্ছু বউ থাকলে ধোঁকা করা জায়েজ আছে

তুরা চোখ ছোট করে চেয়ে থাকলো আহানের দিকে,আহান এক হাত দিয়ে তুরার মুখ টিপে হা করিয়ে নুডলস পুরে দিলো মুখে, তুরা এতগুলো মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে কিছু বলবে তার আগেই আহান বলল

-পাঁচ মিনিটে নুডলস ছাড়া অন্য কিছু মাথায় আসেনি, রান্না করার অভ্যাস নেই তাই কেমন হয়েছে জানি নাহ

তুরা অনিমেষ তাকিয়ে রইলো আহানের চেহারার পানে,আহান আবারও মুখের সামনে ধরলে বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো। এক হাতে ফোন চাপছে আর এক হাতে তুরাকে খাইয়ে দিচ্ছে, তুরার ইচ্ছে করলো ছুটে ঝাপটে ধরতে আহানকে,মনে পরে গেলো প্রথম দিকের কথা যখন তুরাকে চোখের সামনেও দেখতে চাইতো না আহান, দু চোক্ষের শূল ছিলো যেনো,অথচ আজ! আজ দেখো সেই আহান যত্ন করে নিজে রেঁধে খাইয়ে দিচ্ছে তুরাকে।
তুরা তো বরাবর এটাই চেয়েছিলো আহান নিজে তার কাছে আসুক তাকে ভালোবাসুক,একটু যত্ন করুক। এই তো! আর কি চাই তার, আনন্দে সুখানুভূতিতে আপ্লূত হয়ে চোখ ভরে এলো তুরার, আহান ফোন থেকে মুখ তুলে তুরার দিকে তাকালে ওর চোখে পানি দেখেই স্তম্ভিত হয়ে বলল

-তুরা? কি হয়েছে, কাঁদছো কেনো? খেতে ভালো হয়নি?

ঘনঘন মাথা নাড়ালো তুরা, না সূচক সম্মতি দিয়ে আবারও হা করলো। আহান কিছুটা বিস্ময় আর বিচলিত হয়ে তুরার মুখে নুডলস তুলে দিলে তুরা খেতে খেতে বলল

-ঝাল হয়েছে তো তাই চোখে পানি এসে গেছে। তাছাড়া মনেও হচ্ছে না প্রথম রান্না করেছেন। সত্যি করে বলুন তো এর আগেও কাকে কাকে খাইয়েছেন নিজে বানিয়ে

আহান হাসলো বিস্তর, সুনিপুণ চেহারা আর পুরু অধর বিস্তৃত হলো,হাতের আঙুলে তুরার মুখে লেগে থাকা খাবার মুছিয়ে দিলো।
প্লেট টা নিয়ে বেরিয়ে গেলে তুরা অপলক চেয়ে রইলো, আসলেই কি এটা সত্য! সে স্বপ্ন দেখছে না তো? এতো সুখ সুখ কেনো লাগছে! ঘোর নয়তো? নাকি স্বপ্ন? সত্যিই কি স্বামী নামক মানুষ টার ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে নাকি বিভীষিকা ভালোবাসার!!

•••••

গোধুলীর আলোয় রাঙা দিগন্ত। শরতের আকাশের তুলতুলে মেঘ, গগনে ক্ষণে ক্ষণে পুঞ্জীভূত মেঘেদের ছোটাছুটির দৃশ্যটা দেখতে ভীষণ মনোরম লাগছে,,মেঘেদের কতো শান্তি! তাদের জীবিকা, পরিবারের দায় নেই,কোনো নির্দিষ্ট ঠাঁই নেই গন্তব্য নেই। যখন যেখানে খুশি উদয় হয় আবার মিলিয়ে যায়,আচ্ছা মানুষের জীবন ও যদি মেঘেদের মতো হতো? কত ভালো হতো তাইনা? ওদের কোনো বাধা বিপত্তি থাকতো না,আফসোস, হতাশা থাকতো না!

-কার কথা ভাবছেন স্যার?

কিশোরী চিকন কণ্ঠে ঘোর ভাংলো সাদমানের,জানালার বাইরে আকাশের খোলামেলা দৃশ্য থেকে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো রিমঝিমের দিকে, নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় বলল

-কিছু না

-স্যার একটা প্রশ্ন করবো?

সাদমানের জবাবের অনতিবিলম্বে প্রশ্ন ছুড়ল রিমঝিম, সাদমান ললাটের ভাঁজ প্রগাঢ় করে তাকালো, এই মেয়ে যতবারই তাকে প্রশ্ন করেছে কোনো না কোনো উদ্ভট কথাই বলেছে,যা সাদমান আজ অব্দি শোনেনি।এবারও নিশ্চয় সেরকম ই বলবে।নড়েচড়ে বসলো সাদমান, রিমঝিম কে উদ্দেশ্য করে কিছু বলবে তার আগে সেই প্রশ্ন করে বসলো

-আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে স্যার?

হকচকিয়ে উঠলো সাদমান, এই জন্যে এই মেয়ের সামনে বেশিক্ষণ থাকতে তার অস্বস্তি লাগে,কখন কি প্রশ্ন করে ফেলবে নিজেও জানে নাহ। চোখে মুখে বিরক্ত আর রাগিত ভাব জমলো সাদমানের, গলা ঝেড়ে বলল

-টিচারকে কেও এ ধরনের প্রশ্ন করে? মাথার ভেতর কি সবসময় উল্টা পালটা চিন্তাভাবনাই ঘোরে তোমার?

ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হলো খানিক,তবুও চোখে মুখে কৌতুহল, যেনো খুব রহস্যময় কিছু জিজ্ঞাসা করেছে জানতে না পারলে মন ক্ষান্ত হবে নাহ।হাতের কলম টা রেখে গালে হাত দিয়ে বলল

-মানুষ প্রেমে পরলে উদাসীন থাকে,রাত দিন গভীর ধ্যানে মত্ত থাকে,আশেপাশের হুস থাকে নাহ। কখনো আকাশ কখনো মাটিতে তাকিয়ে আনমনেই কিসব ভাবে, আপনাকে এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার মনে হলো আপনিও প্রেমে পরেছেন তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আর গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড থাকা স্বাভাবিক এতে উলটা পালটা কেনো ভাবতে যাবো

ছোট বাচ্চাদের বুঝ দেওয়ার মত করে বলল রিমঝিম,সাদমান কিরকম অভিব্যক্তি দিবে বুঝে পেলো নাহ। এই মেয়েটা বয়সের তুলনায় বেশি বোঝে, যাকে বলে ইঁচড়েপাকা। গাম্ভীর্যতা উপচে পরলো চেহায়ার,কাঠ কাঠ গলায় বলল

-একটু বেশিই বোঝো তুমি,,তোমাকে তো এমসিকিউ সলভ করতে দিয়েছিলাম। করেছো?

বলেই কড়া চোখে চেয়ে রিমঝিমের সামনে থেকে খাতা টা হাতে নিলে দেখলো এক লাইন ও তো করেই নি বরং আঁকিবুঁকি করে রেখেছে পৃষ্ঠা ভরে। মেজাজ গরম হলো সাদমানের এই মেয়ের মাঝে পড়াশোনার নুন্যতম আগ্রহ নেই। পড়তে বসলে নানান কথা আর আজগুবি প্রশ্ন জুড়ে বসে।

-সমস্যা কি,একটা ম্যাথ ও করোনি,আমি করাতে গেলাম বললে পারবে,করতে দিলাম তাও না করে পৃষ্ঠা ভরে ড্রয়িং করেছো৷ আমি কি ইয়ারকি করতে এসেছি এখানে?

চটে গিয়ে বেশ গমগমে গলায় বলল সাদমান, সচরাচর তার মেজাজ এতোটা খারাপ হয়না,কিন্তু মেয়েটা এসে থেকেই জালিয়ে মারছে ওকে। রিমঝিমের উত্তর না পেয়ে আবারও বলল

-পড়াশোনার ইচ্ছে যদি নাই থাকে তাহলে বাড়িতে বলে দাও,আমারও টাইম নষ্ট হবে নাহ আর তাদের ও টাকা গুলো জলে যাবে না

-আমি তো বিয়েই করে নিতে চাই কিন্তু ওই যে আমার ঘাড়ের উপর বসে আছে এক আপদ। ওর বিয়ে না হলে তো আমারটা হবে না, ততদিন না চাইতেও আমাকে এই রসকষহীন কাঠখোট্টা লেখা গুলো পড়তে হবে

হতবিহ্বলতায় চোয়াল আলগা হয়ে গেলো সাদমানের,ভেবেছিলো বকে দিলে নিশ্চয় দুষ্টুমি কমিয়ে পড়াশোনা করবে,কিন্তু এ তো সোজা বিয়ের কথা তুলে নিলো। সাংঘাতিক মেয়ে!

-আগা লাউ যেদিকে যাবে গোড়া লাউ ও সেদিকে যাওয়াই স্বাভাবিক

দম ছেড়ে বিড়বিড়িয়ে বলল সাদমান। যার অর্থ ফারিহা যেমন তার বোন ও ঠিক তেমনই।এই মেয়ে যে তার নাভিশ্বাস উঠার জো করবে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সাদমান। রিমঝিমের সামনে থেকে বই টা নিয়ে সিলেবাস বের করে দাগিয়ে দিলো,পড়া গুলো ভালো মতো বুঝিয়ে দিয়ে বলল

-শোনো ঝুমঝুম

-ঝুমঝুম না রিমঝিম

সাদমানের কথার মাঝে টুসকি দিয়ে বলল রিমঝিম। তপ্ত একটা প্রশ্বাস ফেলল সাদমান,বচন ভঙ্গি আবারও গম্ভীর করে বলল

-আমি তোমাকে আরও একবার বলছি, দুষ্টুমি আর আজগুবি কথা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হও,না তো এভাবেই চলতে থাকলে আমি তোমার আব্বু আম্মুকে জানাতে বাধ্য হবো। তারা আমাকে এখানে পড়ানোর জন্যে এনেছে।শুধু শুধু গল্প গুজব করে আমার রিজিক হারাম করতে চাইনা আমি। আশা করি বুঝতে পেরেছো।

বলেই উঠে দাঁড়ালো। ফোনটা পকেটে ভরে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। সাদমান বেরিয়ে গেলে দরজার পাশ থেকে বেরিয়ে এলো ফিরোজ ইসলাম, চোখের চশমা টা ঠিক করে পেছনে দু হাত বাধা রাখা ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো বারান্দায়, সাদমান বাড়ি থেকে বেরিয়ে দ্রুতগতিতে হেঁটে মিলিয়ে গেলো রাস্তার মাঝে, কাঠিন্য আর গাম্ভীর্যে বুদ মুখাবয়বে তাকিয়ে রইলো ফিরোজ ইসলাম নির্লিপ্ত, নিস্ক্রিয়ভাবে।

~

সন্ধ্যার আজান দিতেই ঝিঁঝি পোকারা তাদের উপস্থিত জানান দিতে একসাথে তাল মিলিয়ে নিশাচরী গান ধরেছে, তার সাথে তাল মিলিয়েছে ব্যাঙের ডাক ও। বর্ষাকাল পার হওয়ার পরেও এমন হুটহাট ঝড় বৃষ্টি একেবারেই ভাল্লাগছে না তুরার।
মাগরিবের নামাজ পরে বসেছে টেবিলে,বই মেলেই ঝিমুচ্ছে। একটা অংক কিছুতেই পেরে উঠছে নাহ। যতবারই করছে মাঝখানে এসেই আটকে যাচ্ছে। এর মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খোলার খট করে শব্দ হলো, তুরা পেছনে তাকাতে গিয়েও তাকালো নাহ। আহানের দিকে তাকাতে এখনো ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর, সকালে তুরাকে খাইয়ে আহান বেরিয়েছিলো কিছু কাজে,ফিরেছে খানিক আগেই। রুবি আর আমেনা কাল সকালে ফিরবে বলে জানিয়েছে।
তুরা কাটাকাটি করে আবারও একই অংক টা শুরু করলো,কিন্তু আবারও সেই মাঝে এসেই আটকে গেলো, কলমের হেড টা ঠোঁটে ঘষছে আর বারবার খাতার দিকে তাকাচ্ছে, কিছুতেই মিলাতে পারছে না।
হঠাৎ নিজের ঘাড়ে পিঠে পানির ছিটা পরতেই চমকে উঠলো। ডান পাশে ঠান্ডা হাওয়ার উপস্থিতি পেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো,এক হাতে তোয়ালে টা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে তুরার খাতার দিকে তাকালো স্থির দৃষ্টিতে, তড়িৎ চোখ ফিরিয়ে নিলো তুরা।
হাতের তোয়ালে টা গলার দুপাশে ঝুলিয়ে তুরার হাত থেকে কলম টা নিলো। বা পাশে এক হাত রেখে আরেক হাতে কলম টা নিয়ে ঝুঁকে এলো তুরার একদম কাছাকাছি, চুল থেকে পানির বিন্দু গুলো টপকে একটা দুইটা করে পরছে তুরার খাতায়,হাতে, ঘাড়ে। কেঁপে কেঁপে উঠছে তুরা তবুও পুনশ্চ সলজ্জ চোখে তাকালো আহানের দিকে, কলমের ঘসাঘস শব্দ করে দুই লাইনে অংক টা শেষ করে দিয়ে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ালো আহান। তুরা ঘাড় ঘুরিয়ে সোজা হয়ে বসলো চুপচাপ,ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সটান দাঁড়ালো

-গোসলে যাওয়ার আগে দেখলাম এই ম্যাথ টা নিয়েই বসে আছো,এখন পর্যন্ত অন্যটা অব্দি পৌঁছাতে পারলে নাহ

নিস্ক্রিয় ভঙ্গিতে গাঢ় গলায় বলল আহান,তুরা উত্তর করলো নাহ। কিই বা বলবে পারছিলই তো নাহ। তুরাকে চুপ থাকতে দেখে আহান কণ্ঠের খাদে আরও গাম্ভীর্য এনে বলল

-আই আস্কড ইউ সামথিং

-পারছিলাম নাহ

ভীষণ আস্তে মিনমিনিয়ে বলল তুরা, ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ছাড়লো আহান, প্রশস্ত আঁখি মেলে তাকায় তুরার দিকে,তুরা বিব্রত হয়। লজ্জায় নতজানু হয়। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে আহান চেয়ার টেনে বসলো তুরার পাশে,ওর সামনে থেকে বই কলম নিজের কাছে নিয়ে,চাপা গলায় বলে

-আর মাস খানেক পর ইয়ার ফাইনাল অথচ এখনো বইয়ের মিডল চ্যাপ্টারেই পরে আছো,ফেইল করার চিন্তাভাবনা আছে?

তুরা মুঝ কাঁচুমাচু করে, ডাগরডোগর আঁখিযুগল মেলে অসহায় ভঙ্গিতে তাকায় আহানের দিকে যে আপাতত বই দাগাতে ব্যস্ত। বৃহৎ একটা ঢোক গিলে নড়েচড়ে বসে, কালো মেঘে ঢাকা পরলো মুখখানা, এখন কি না আহান দ্যা গ্রেট মাস্টার মশাই এর কাছে পড়তে হবে?
তুরা তুই শেষ তোর মগজের আজ ভর্তা,হালুয়া, ফালুদা সব হবে!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪৮

পিচ ঢালা রাস্তায় ছোট ছোট পা ফেলে এগোচ্ছে তুরা, তাপমাত্রা খুব বেশি না হলেও বেশ অনেকক্ষণ হাঁটার ফলে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে, রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টো পিঠে ঘাম মুছে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে গিলে আবারও হাঁটা ধরলো।
হাত ঘড়িতে সময় সকাল আটটা বেজে ছত্রিশ, এখনো অনেকখানি সময় আছে ক্লাস শুরু হতে,তুরা আনমনা হয়েই ধীরে সুস্থে হাঁটতে থাকে।
সকালে আহানের ঘুম ভাঙার আগেই উঠে বেরিয়ে পরেছে,তবে তুরা বের হওয়ার আগেই রুবি আর আমেনা খাতুন ফিরেছে, সঙ্গে রাইমা কেও সাথে এনেছে।
ওদের সাথে কথা বলেই বেরিয়েছে তুরা। কাল অর্ধেক রাত পর্যন্ত টেবিলে বসে একের পর এক ম্যাথ সলভ করেছে, আহানের কড়া নির্দেশ..ক্লাসে দেওয়া সাজেশন শেষ না হওয়া অব্দি ওর ছুটি নেই। বিষন্ন মনে বসে ম্যাথ করতে করতে টেবিলেই কখন ঘুমিয়ে গেছিলো খেয়াল ই হয়নি, সকালে ঘুম ভাংলে দেখলো খাটের উপর আর আহানের শরীরে ঘেষে শুয়ে আছে, আহানের ঘুমন্ত চেহারা টা দেখলেই তুরার অপ্রতিভ মন গহীনে বারবার উঁকি দিচ্ছে সেদিনের দৃশ্য, আহানের স্পর্শ। তাই লজ্জা ঢাকতে এক প্রকার আহানকে এড়িয়েই চলে এসেছে তাড়াতাড়ি।
আরও বেশ কিছুদূর হাঁটার পরে হুট করেই মার্কেটের ভেতরের রেস্টুরেন্টের কাঁচের ফাঁকে চোখ যেতে ভ্রু কুচকে এলো তুরার। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠাওর করার চেষ্টা করলো

-ওটা ইয়াজ ভাই না!

আপনমনেই বিড়বিড়ালো তুরা,ললাটে অসংখ্য ভাঁজ পরলো আনজানেই। তুরার ঠিক সামনে রাস্তার ওপাশে রেস্টুরেন্টে সামনাসামনি বসে মাহিদ আর একটা মেয়ে৷ মাহিদের চেহারা স্পষ্ট দেখা গেলেও মেয়েটা তুরার দিকে পিঠ করে বসে থাকায় একেবারেই দেখা যাচ্ছে নাহ। তুরা বেশ কিছুক্ষণ লক্ষ্য করার প্রচেষ্টা করেও মেয়েটাকে দেখতে পেলো না। ঘাড়ে থাকা ব্যাগের হাতা টা এক হাতে আঁকড়ে ধরে রাস্তার দুপাশে তাকিয়ে এগোতে নিলেই খপ করে বাহু চেপে টেনে নিলো একটা শক্তপোক্ত হাত।
তুরা হকচকিয়ে তাকালেই এক জোড়া রেষপূর্ণ গম্ভীর চোখ দু’টো খুব কাছে আবিষ্কার করলো
সরে যেতে গেলে প্রশস্থ হাতের বন্ধন আরও দৃঢ় হলো, তীক্ষ্ণ গলায় বলল

-কি করছিলে তুমি,রাস্তা পার সময় ধ্যান থাকে না যে গাড়ি চলে আসতে পারে? এক ধাক্কা লাগলেই তো বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পরবা

ছ্যাৎ করে উঠলো বুকের ভেতর, তুরাকে সরিয়ে আনার সাথে সাথেই ওদিক দিয়ে একটা দ্রুতগামী ট্রাক চলে গেলো। ভাগ্যিস আহান হাত টেনে ধরেছিলো! শ্রবণযন্ত্রে আবারও আসলো একই কাঠ কাঠ কণ্ঠস্বর

-ঠিকঠাক চলা ফেরাও তো করতে পারো না, তাও পাকনামি কমেনা,কতবার বলেছি একা একা আসবে নাহ। এতো কিসের পারা তোমার ভার্সিটিতে আসার?

নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো তুরা, অন্য সময় হলে হয়তো সেও ফটাফট কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতো। কিন্তু এখন তো দোষটা তারই। কি উত্তর দিবে,আর তাছাড়াও আহানের মুখের দিকে তাকানোর নূন্যতম হিম্মত নেই তুরার।
নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই হঠাৎ মাহিদের কথাটা মনে পরতেই চকিত নজর ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো মাহিদ যেখানে বসে ছিলো যায়গা টা ফাঁকা এদিক ওদিক জহুরি নজর বুলাতেই চোখে পরলো ধূসর বর্ণের গাড়িটার ধুলো উড়িয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য।

-ধ্যাতত্

হাত ঝামটা দিয়ে বলল তুরা,একটুর জন্যে দেখতে পারলো নাহ মেয়েটাকে। মাহিদ তো এ দেশে ফিরেছে বেশিদিন হয়নি আর কারো সাথে খুব একটা মিশতেও দেখা যায়না। তাহলে মেয়েটা কে? পেছন থেকে খুব চেনা চেনা লাগছিলো তুরার!

-কাকে খুঁজছো তুমি?

অকস্মাৎ গম্ভীর কণ্ঠেস্বরের তীক্ষ্ণ প্রশ্নে সচকিত হয়ে তাকালো তুরা,আহান যে এখানেই আছে কথাটা নেহাৎ ভুলেই বসেছিলো। নিজের বোকামির উপর এখন নিজেই চড়াও হচ্ছে, নিজেই মনে মনে ভাবছে ‘এই লোকটা ঠিক ই বলে আমি আসলেই ষ্টুপিড’
কথাটা মনে মনে বললেও মুখ ঝুকিয়ে রেখেই মন্থর গলায় বলল

-না আমার মনে হলো ওখানে ফারিহা আছে তাই আর কি..

বিরক্তি সুলভ চাহনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আহান, কালো রঙের প্যান্টের পকেটে গুঁজে রাখা হাতটা বের করতে করতে ধীমি গলায় বলল

-গাড়িতে বসো

বলেই চাবি বের করে গাড়িতে উঠে বসলে তুরাও ধীর পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসলে চলতে শুরু করলো চার চাকার গাড়িটা।
পাঁচ মিনিটের মাথায় ভার্সিটির গেইটের কাছে এসে দাঁড়ালে তুরা আহানের দিকে না তাকিয়েই নেমে গেলো গাড়ি থেকে, তুরার চলে যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আহান,বিড়বিড়িয়ে বলল

-যখন চাইতাম না তখন চোখের সামনেই ঘুরে নেচে বাড়াতো, এখন যখন ছেড়ে থাকতে পারিনা তাই পালাই পালাই করে।যে যন্ত্রণা টা দিচ্ছ তো…তুরা রাণী!

ফোস ফাস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আহান, মেয়েটাকে ধরলেই লজ্জায় মিইয়ে যায়।গত পরশুর পর থেকে তো তাকিয়ে কথা অব্দি বলছে না ঠিক করে,আহান যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও তুরার সবসময় দূরে পালানোর চিন্তায়। কিন্তু আহান তো এখন একটুও থাকতে পারেনা আদুরে চেহারা টা দেখতে না পারলে,,এখন নিজেরই আফসোস মনে হচ্ছে, সেদিনই ওর সবটা ধরা দেওয়া উচিত হয়নি।এর চেয়ে আগেই ভালো ছিলো অন্তত ছটফট করে সবসময় আহানের আশেপাশেই তো থাকতো। ক্লান্ত ভঙ্গিমায় ঘাড় দুদিকে নাড়িয়ে গাড়িটা পার্ক করে আহানও ভেতরে প্রবেশ করলো।

~

-তা নয়তো কি। ও নিজে তো ইঁচড়েপাকা হয়েছেই,সাথে ওর বোনকেও একই পথে টেনেছে,ক্লাস সেভেনে পড়া একটা পিচ্চি মেয়ের মাথায় কিনা বিয়ের চিন্তা ঘোরে,ভাবা যায়!

-কেনো ভাবা যাবে নাহ,ভাবলেই ভাবা যায়। সবাই তো তোর মতো ইন্ট্রিগেশন আর ফাংশন নিয়ে পরে থাকবে না সারাদিন, লেখাপড়ার বাইরেও কিছু আছে

সদা সর্বদার মতো দায়সারা ভাবেই বলল ফারিহা। সাদমান এসে থেকে তুরাকে রিমঝিমের কার্যকলাপ শোনাচ্ছিলো,ওর কথার মাঝেই বা হাত ঢুকিয়ে বলে আবারও চুইংগাম চিবাতে ব্যস্ত হয়ে পরে ফারিহা। তুরা গাল টিপে হাসলো,আগ্রহ দেখিয়ে সাদমানকে জিজ্ঞাসা করলো

-শুধু এসব আজগুবি কথা বলেই সময় পার করে দেয় নাকি পড়াশোনাও করে?

তুরার প্রশ্নে যেনো আরেকটু চকিত হলো সাদমান। সোজা হয়ে বইটা হাত থেকে রেখে বলল

-পড়াশোনা? ওকে হোমওয়ার্ক করতে দিলে বলে ঘুমিয়ে ছিলাম,মন ভালো ছিলো না,অমুক সিরিয়ালে নায়িকার সাথে নায়কের ঝগড়া হয়েছে, অমুক বান্ধবীর সাথে শপিং করতে গেছিলো।
আর যদি আমি সামনে বসেও করতে দি তাহলে খাতা ভরে আঁকিবুঁকি করে রাখে। আমি ভাবতেও পারিনা ওর মাথায় কিসব চলে। সাথে বড় বোন ও তো একটা জুটিয়েছে।কই শাসন করবে তা না আগের টিউটর বেশি পড়া দেয় বলে ওকে ভূতের মিথ্যে ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দিয়েছে

হাহা করে হেসে উঠলো তুরা সাদমানের বলার ভঙ্গি দেখে, বেচারা বিশাল বিপাকে পরেছে বোঝাই যাচ্ছে। এদিক ফারিহা আবার ক্ষেপে বলল

-তো ও পড়াশোনা করে নাহ ওকে বক।তোর স্টুডেন্ট তুই যা মন বল,আমায় টানছিস কেনো? আমি কি বলেছি ওকে যে তুই বিয়ের চিন্তাভাবনা কর

-বড় বোন বিয়ের জন্য দিনরাত নাচানাচি করলে ছোট বোন ও তো তাই করবে

আড়চোখে চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলল সাদমান, ফারিহা ওর দিকে তীক্ষ্ণ ক্ষ্যাপা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

-হ্যাঁ অবশ্যই করবো,নাচবো গাইবো যা খুশি করবো। বিয়েই তো করতে চেয়েছি রুম ডে’ট না, এতে এতো রিয়েক্ট করার কিছু নেই। বিয়ে না করলে বংশবৃদ্ধি করবে কি করে।

চোখ মুদে ধরলো সাদমান,তুরা ফারিহার মুখ চেপে ধরলো। এই মেয়ের মুখে কোনো দিন ও লাগাম হবে নশ,যা মন বলে দেয়।

সাদমান বিড়বিড় হিপোক্রিয়েট বলে আবার কলম দিয়ে বই দাগিয়ে পড়া শুরু করলো,তুরা প্রশ্ন গুলো দাগাচ্ছে আর একটু পরপর খুচিয়ে যাচ্ছে ফারিহাকে পড়ার জন্য, কিন্তু সেসবকে পুরোদমে অগ্রাহ্য করে আরামে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
খানিক বাদেই আগমন ঘটলো আহানের। এসেই ডেস্কে দাঁড়িয়ে লেকচার শুরু করলো। লেকচারের মাঝে মাঝে বোর্ডে লিখছে আর বুঝাচ্ছে। আড়চোখে একবার আহানের দিকে তাকিয়ে নোট করায় মনোনিবেশ করলো তুরা,কিন্তু নিজের অজান্তেই পূনর্বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আহানের দিকে, শরীর জুড়ে ঠান্ডা রক্তের স্রোত বয়ে গেলো, অন্তঃস্থল দ্রিমদ্রিম শব্দে কেঁপে উঠলো, সম্পূর্ণ দৃষ্টি মেলে স্থির তাকিয়ে আছে আহানের ঘাড়ে তিনটা আঁচড়ের দাগে,ফর্সা ঘাড়ে তিনটা নখের আঁচড়ের গাঢ় দাগ অত্যাধিক তাজা দেখাচ্ছে। মাঝখানে একদিন কেটে গেছে অথচ দাগ টা এখনও তাজা দেখাচ্ছে,এতো জোরে খামচে ধরেছিলো সে? কই আহান তো টু শব্দ পর্যন্ত করেনি!
লজ্জা শরমে কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরচ্ছে তুরার,শুকনো ঢোক গিলে ফারিহার দিকে তাকালো একবার, এই মেয়ে যদি একবার লক্ষ্য করেছে ওকে পচাতে পচাতে ঘেটে ফেলবে।
পুনশ্চ তাকালো সামনে,ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে হা করে চেয়েই রইলো আহানের দিকে। আহান লেকচারের মাঝেই তাকালো একবার তুরার দিকে,পুনরায় তাকালে চোখাচোখি হলো দুজনের,আহান বিব্রত হলো খানেক,
তুরা এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে তার দিকে? সেসব অগ্রাহ্য করে আবারও লেকচারে মনোযোগী হলেও তুরার স্থির দৃষ্টি বারবার তার চিত্তবিক্ষেপ ঘটাচ্ছে।
ঝাঁঝালো দৃষ্টিতে তুরার দিকে তাকালো সকলের অগোচরেই, তুরা লজ্জায় মূর্ছা গেলেও দাঁতে দাঁত চেপে আলতো ভাবে নিজের ঘাড়ে হাত ইশারা করলো আহানকে।সেদিকে লক্ষ্য করে নিজের ঘাড়ে হাত দিলে আহান এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। তবুও সে বিজড়ন গায়ে না মেখে বরং তুরার ত্রপার পাল্লা আরও ভারি করে কিঞ্চিৎ হাসলো।
ক্লাসে উপস্থিত অনেকেই লক্ষ্য করলো আহানের মুখের ছোট হাসির আভাস টুকু। সকলেই যেনো স্তম্ভিত, বিস্মিত। আহানের হাসিটা যেনো ডুমুর ফুল দেখার মতই,,ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে গম্ভীর মুখচোরা স্যারকে আনমনেই হাসতে দেখে সবার মাঝে ফুসুরফাসুর লেগে গেলো। তুরা আশেপাশের সকলের গুঞ্জনে কান না দিলেও আহানের হাসি দেখে বিমূর্ত হয়, অবিন্যস্ত চোখে এদিক ওদিক তাকায় যেনো কেও দেখে ফেলল কি না।
সারা টা ক্লাস এভাবেই কেটে গেলো। তুরা কুণ্ঠিত লজ্জিত হয়ে মুখশ্রী আনত করে রাখলেও আহান দিব্যি ক্লাস নিয়েছে, আর তুরাকে ওর দুষ্টুমিপূর্ণ চোখে বিব্রত করেছে।
ক্লাসের পাঠ চুকিয়ে বেরিয়ে এলো তুরা,সাদমান আর ফারিহা ঝগড়া করে দুজন দু রিকশা নিয়ে চলে গেছে। ভার্সিটি থেকে তহমিনার ফ্লাটের দূরত্ব কিঞ্চিৎ কয়েক মিনিটের পথ,জামা কাপড় গুলোও আনতে হবে। তাই অনতিবিলম্বে আহানের নাম্বারে দু লাইনের মেসেজ টুকে ফুফুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল তুরা। মিনিট দশেক বাদে পৌঁছেও গেলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দুবার বেল চাপতেই একটি গোলগাল সুশ্রী মুখ খুলে দিল দুয়ার, তহমিনাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো তুরা,দু’হাতে ঝাপটে ভদ্রমহিলা আদর ভরা গলায় বলল

-দুদিন বাদে তাহলে মনে পরলো মামনীর কথা?

-তোমাকে রোজ ই মনে পরেছে মামনী শুধু আসার সুযোগ হয়নি।

মুখ তুলে তুরা বলল,তহমিনা তুরাকে এক হাতে আগলে ধরে বলল

-এখন তো হয়েছে, আই ভেতরে আই। তোর পছন্দের বিরিয়ানি করেছি। খেয়ে যাবি কিন্তু

-তোমার হাতের বিরিয়ানি মিস করবো এমনটা তো হতেই পারেনা মামনী। তুমি দাঁড়াও আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বলে ব্যাগ টা রেখে ফ্রেশ হয়ে আসলো। তহমিনা খাবার বেড়ে প্লেট নিয়ে আসলো তুরার সামনে, ওকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল

-রাজিয়ার সাথে কি আর দেখা বা কথা হয়েছিলো তোর?

তুরার মুখে ভাতের লোকমা তুলে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তহমিনা, তুরা ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ নাড়িয়ে খানিক জড়তা ভরা চেহারায় না জানালো। খাবার চিবাতে চিবাতে বলল

-না তো,কেনো কিছু হয়েছে?

-কাল রাতে ফোন করেছিলো আমাকে, ইমতিয়াজের শরীরের অবস্থা নাকি আরও খারাপ করেছে,যত দ্রুত সম্ভব হৃদপিণ্ডের সার্জারী করাতে বলেছে ডাক্তার, চিকিৎসার জন্য লাখ খানেক টাকার প্রয়োজন।

শান্তসুলভ ভঙ্গিতে বললেও চোখ মুখ জুড়ে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট দেখতে পেলো তুরা,গ্লাস তুলে পানি গলাধঃকরণ করে বলল

-তুমি কি বলেছো?

-আমি রাজিয়াকে তেমন কিছু বলিনি, কিন্তু না বললেও ইমতিয়াজ তো আমারই ভাই। ওর এই বিপদের দিনে তো মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারিনা। তাই আমার নিজের কাছে বেশ কিছু টাকা আছে জমানো। সেটা নিয়ে কাল আমি যাবো।

তুরা দমলো,খানিক ক্ষণ নিশ্চুপ থেকে নিরবতা ভেঙে বলল

-মামনী তুমিতো জানো বাবার ব্যাবসার বাইরে যা কিছু ছিল সব আমার জন্যেই রেখে গেছে, বাবা প্রয়াত হওয়ার কিছুদিন আগেও আমার নামে লাখ খানেকের বেশি টাকা ব্যাংকে ডিপজিট রেখেছিলো। তাই আমি চাচ্ছি তুমি চাচাকে সেই টাকা টাই দাও

-একদম নাহ, ভাই তোর জন্যে যা রেখেছে ওটা তোরই থাক। এতো কিছুর পরেও ওকে কেনো দিতে চাচ্ছিস। আর আমিতো দেব বলেছিই

তুরা জানতো তহমিনার অভিব্যক্তি ঠিক এমনটাই হবে, তাই বিচলিত হলোনা। শান্ত ভাবেই তাকালো, অতঃপর তহমিনার হাত ধরে বলল

-মামনী,বাবা তো কত কিছুই রেখে গেছে। আর তার মাঝে সবচেয়ে বড় উপহার হিসেবে তুমি আর তার এত ভালো বন্ধুকে রেখে গেছে যে আর যার পরিবার কখনো আমাকে নূন্যতম অভাব বোধ টুকু বুঝতে দেয়না। আমার প্রয়োজনের আগেই সবটা দিয়ে ভরিয়ে দেয়। এত গুলো মানুষের দোয়া, ভালোবাসা, ছায়া, আদর পাওয়ার পর আর কি লাগে বলো। আর চাচা অথবা চাচীর উপর আমার কোনো আক্ষেপ বা অভিযোগ নেই, মানুষ মাত্রই ভুল। এখন তার বিপদের সময় টাকা গুলো উনাকে দিয়ে আমি সন্তান ধর্ম টুকুই পালন করতে চাই মামনী। বাবা থাকলেও তো ঠিক এমনটাই করতো তাই না? তাই উনার সন্তান হিসেবে এটা আমার দ্বায়িত্ব, কর্তব্য

তুরার সমস্ত কথা টুকু শুনে তহমিনার চোখ ছাপিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো, এক হাতে তুরার মুখ খানা বুলিয়ে আদর ভরা ধরা গলায় বলল

-ভাই চলে গেছে তো কি, নিজের প্রতিচ্ছবিটা ঠিকই তোর মাঝে রেখে গেছে মা,ও থাকলেও ঠিক এমনটাই করতো।

তুরা হাসলো বিস্তর,আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললে তহমিনা রাজি হলো। খাওয়া শেষে জামা কাপড় গোছাতে গোছাতে তহমিনা কে জিজ্ঞাসা করলো

-ইয়াজ ভাই কোথায় মামনী, এসে থেকেই তো দেখছি না?

-ও তো সকালেই বেড়িয়েছে কোনো কাজ আছে বলে

চিন্তিত হলো তুরা,ললাটে ভাঁজ ফেলে ভাবলো কি এমন কাজ যে মামনী কেও বলে যায়নি? আজকে ভার্সিটিতেও দেখেনি মাহিদকে, সকালে রেস্টুরেন্টে যে ওটা মাহিদ ছিল এব্যাপারটাতেও তুরা সুনিশ্চিত। বেশ খানিক কিছু একটা ভাবার পর ললাট প্রসারিত করলো, ঠোঁটে বাকা হেসে আবারও জামা কাপড় গোছানোতে ব্যস্ত হলে টুং করে দরজার বেল বেজে উঠলো।

-তুরা মা দেখ মাহিদ এসেছে হয়তো,আমি থাল গুলো ধুচ্ছি খুলে দে তো

তুরা জামা কাপড় রেখে চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই হাস্যজ্বল চেহারা মিলিয়ে গেলো, অনাকাঙ্ক্ষিত মুখ দেখে তটস্থ হয়ে হা করেই রইলো

-এভাবেই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি?

পলক ঝাপটালেও হেলদোল হলো না,এই লোকটা এখানে কেনো এসেছে? তুরা তো মেসেজ ও করে দিলো সে বিকেলের আগেই বাড়ি ফিরে যাবে।

-আপনি? এখানে

বোকা বোকা মুখ করে প্রশ্ন করলো তুরা,আহান পকেট থেকে এক হাত বের করে কপাল চুলকালো, এক ভ্রু উচিয়ে দায়সারা ভাবে বলল

-বউ যেখানে আমিও সেখানে।

খুকখুক করে কেশে উঠলো তুরা, দরজার হাতলে হাত রেখেই কিঞ্চিৎ সরে দাঁড়াতে গেলে পেছন থেকে তহমিনার গলা শুনতে পেলো

-আরে আহান যে, এসো এসো ভেতরে এসো বাবা। দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

তুরার ধ্যান ভাঙলে সরে দাঁড়ালো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েই।আহান প্রশস্ত হেসে সালাম দিলো। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল

-ঢুকতে দিলে তবে তো ঢুকবো।

তহমিনা ভ্রু জড়ো করলো, খানিক শাসানির গলায় তুরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

-এ কেমন কথা তুরা, তুই জামাইকে এভাবে দরজায় দাঁড় করিয়ে কেনো রেখেছিলি

তুরাকে জবাব না দিতে দিয়ে আহান নিজেই বলল

-ও বাড়িতেই তো দরজা আটকে বসে থাকে,আমার ঘরে আমাকেই ঢুকতে দেয়না, আর এটা তো ওরই ফুফুর বাড়ি।

যেনো অভিযোগ দিল তুরার নামে,তহমিনার মুখ দেখেই স্পষ্টত বোঝা গেলো সে অসন্তুষ্ট হয়েছে এরূপ কথা শুনে, দুঃখবোধক গলায় বলল

-এসব কেমন কথা শুনছি। দিন দিন সব সহবত ভুলতে বসেছিস তুই?

তুরা অতিকায় অবাক হলো। চমকপ্রদ চাহনি নিক্ষেপ করলো আহানের দিকে, তুরা তাকাতেই আহান টুস করে চোখ টিপে দিলো। তুরা স্থির নেত্রেই তাকিয়ে থাকলো। অবাক বিহ্বলতার চূড়ান্তে গিয়ে অভিব্যক্তি হারিয়ে ফেলেছে,
লোকটা পাগল টাগল হলো না তো? এমন ছিচকেপনা করছে কেনো। নজর সরিয়ে নিলো তুরা,দরজা আটকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসলে তহমিনা বলল

-আহানকে ঘরে নিয়ে যা, ওর কি লাগবে দেখ

বলে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা ধরলো। আহান তুরাকে ইশারায় ঘরে আসতে বলে নিজে ঘরের দিকে গেলো। তুরা ধীরস্থির ভঙ্গিতে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো। গরম গরম নিঃশ্বাস ফেলে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো।

-ওখানে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আসো। স্বামী সেবা করো

পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেলো সুঠাম সৌষ্ঠব গড়নের মানুষ টার দিকে, আহান খাটের উপর বসে আছে দুহাত পেছনে রেখে ভর করে। তুরা এগোতেই মেরুদণ্ড সোজা করে বসে বলল

-পানি দাও

পাশে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে নিলো তুরা,তটস্থ পায়ে এগিয়ে গেলো আহানের কাছে।ভীষণ জড়তা কাজ করছে,কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না আহানের সামনে।
তার উপর আহান যেসব আচরণ শুরু করেছে। মাঝখানে কিঞ্চিৎ দূরত্ব বজায় রেখে হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা ধরলো আহানের সামনে, হাতের কম্পনের সাথে তাল মিলিয়ে গ্লাসটাও সমানতালে কেঁপে উঠছে। আহান স্থৈর্য দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুরার হাতসহ গ্লাসটা ধরে বলল

-সামান্য পানি দিতে এতো কাঁপা-কাঁপির কি আছে? আমি তো কিছুই করিনি? নাকি চাচ্ছো এমন কিছু করি যাতে কেঁপে ওঠো?

বড্ড রসাত্মক শোনালো কণ্ঠটা, কানে ঝংকার তুলল তুরার,লজ্জায় নেতিয়ে গেল তুরা। তবুও অস্পষ্ট মিহি স্বরে প্রতিবাদ করতে বলল

-আমি তো..

-তুমি তো কি? ভরা ক্লাসে ভুলভাল ইশারা করে কিসের ইঙ্গিত দিতে চাও তুমি?
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ