তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-১৭+১৮

0
286

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৭

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ। তৃষা ও বন্ধুরা মৃদু ঘাবড়ে রয়েছে। সন্তর্পণে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আর বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানব? সে ভ্রূ কুঁচকে শুধালো,

” কি বললে? দুয়া বিয়ে করেছে? ”

পুষ্পি এখন বোকা বনে গেছে। বুঝতেই পারছে না কি থেকে কি বলবে। শেষমেষ এভাবে ফেঁসে গেল? কি দরকার ছিল মুখ ফসকে সত্যিটা বলার? এবার কি হবে? ওরা যখন অস্থিরতায় চরম বিপর্যস্ত তখনই হঠাৎ সশব্দে হেসে উঠলো রুমান। হকচকিয়ে গেল ওরা সকলে। ক্যান্টিনে উপস্থিত বাকিরাও ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রুমান হাসতে হাসতে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো সাগরেদরা। রুমান হাসতে হাসতে বললো,

” হোয়াট অ্যা জোকস্! হা হা। আমার দুয়া ডার্লিংয়ের কথা ব্যতিত বহুদিন পর অন্য কারোর কথায় হাসলাম। পুষ্পি থ্যাংকস টু ইউ। একটা ক্লেমন ট্রিট দিলাম। মনে করে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিয়ো। ওকে? ”

পুষ্পি দাঁতে দাঁত চেপে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো। ওই শ*তান এর দিকে তাকালেই গা’লমন্দ করতে ইচ্ছে করবে। রুমান এবার ওদের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। উদাসীন কণ্ঠে শুধালো,

” দুয়া ডার্লিং কোথায়? আসেনি? ”

তৃষা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে জবাব দিলো,

” না আসেনি। ”

” কেন? ও ঠিক আছে তো? অসুখ হয়েছে? ”

আলগা পিরিত দেখে বন্ধুদের মেজাজ বেশ গরম!

” রুমান ভাই। দুয়া ঠিক আছে। সময় হলে চলে আসবে। এবার আমরা আসি? আসসালামু আলাইকুম। ”

বিশাল লম্বা এক সালাম দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এলো। হাঁটতে হাঁটতে রাগ প্রকাশ করলো বিন্দু।

” শা লা শ*তান! মেয়ে মানুষ দেখলেই জিভ ল্যাক ল্যাক করে ওঠে! কোন অলক্ষুনে যে ওইটার কুনজর দুয়া’র ওপর পড়লো? মন তো চায় ওর লু* চোখ দুইটা তুলে মার্বেল খেলি। ”

বিশাল গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

” নেহাত ভার্সিটির সিনিয়র ভাই। পাওয়ারফুল লোক। নইলে বুঝিয়ে দিতাম কত ধানে কত চাল। ”

তিয়াশ চোখের চশমা ঠিক করে বললো,

” সবকিছুরই সীমা থাকে। সেই সীমা অতিক্রম করলে অসুবিধা। আপাতত যা হচ্ছে অতিরিক্ত হচ্ছে। ঠিক হচ্ছে না। আদ্রিয়ান স্যারকে কি জানানো উচিত? ”

তৃষা ভাবুক হয়ে বললো,

” উঁহু আপাতত থাক। ভাইয়া এমনিতেই চায় না ভার্সিটির কেউ জানুক ভাইয়া আমাদের আপনজন। যদি ওই রুমান বেশি বাঁদরামি করে তখন নাহয় বলা যাবে। ”

” ঠিক বলছোছ। আপাতত ওইটারে দাঁতে দাঁত চিপা টলারেট করতে থাকি। ”

পুষ্পির কথায় সম্মতি পোষণ করলো বন্ধুরা। হাঁটতে হাঁটতে ওরা যার যার ডিপার্টমেন্টের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।

আদিত্যর কিরণে উজ্জ্বল বসুধা। ফজরের সালাত আদায় করে দুয়া আর ঘুমায়নি। বাগানে হাঁটলো অনেকটা সময় নিয়ে। নিজেকে বিলিয়ে দিলো প্রকৃতির মাঝে। ফুলের সুবাস টেনে নিলো ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়ায় দেহমন জুড়িয়ে গেল। অনেকটা সময় অতিবাহিত হলো বাগানে। অতঃপর দুয়া বাড়িতে প্রবেশ করলো। পুরো বাড়ি এখনো কেমন নীরব! সবাই ঘুম থেকে ওঠেনি বোধহয়। দুয়া বড় শ্বাস ফেলে লিভিংরুম ক্রস করে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো। পথিমধ্যে দেখা হলো তাসলিমার সাথে। দু’জনেই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসলো।

” আসসালামু আলাইকুম খালামণি। গুড মর্নিং! ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। গুড মর্নিং। কিন্তু এসব কি শুনছি দুয়া? ”

ভ্যাবাচ্যাকা খেল দুয়া!

” মানে? আমি কি ভুল কিছু বলেছি? ”

” নিশ্চয়ই বলেছিস। তবে কি আমি ভুল শুনেছি? ”

তাসলিমার কণ্ঠ কিঞ্চিৎ রূঢ়। যাতে ঘাবড়ে গেল মেয়েটা। আমতা আমতা করে বললো,

” খালামণি আ আমি..”

কথাটা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই,

” আবারো? তোর সাহস তো কম না। ”

দুয়া এবার মলিন মুখে খালামণির কাছে গিয়ে তাকে দু হাতে আলিঙ্গন করলো। আদুরে কণ্ঠে বললো,

” খালামণি! ও খালামণি! রাগ করছো কেন? আমি কি ভুল করেছি? তুমি বলো। আমি শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবো। ”

” কচু করবি। যে মেয়ে বিয়ের পর শাশুড়িকে খালামণি ডাকে তার দৌড় কতদূর জানা আছে আমার। ”

জিভ কা’মড়ে হালকা সরে গেল দুয়া। মেকি হেসে বললো,

” হি হি। তুমি শাশুড়ি মা! মনে থাকে না তো। তাই গালতি ছে মিস্টেক হয়ে যায়। ”

তাসলিমা ওর কান মলে দিলো।

” পাঁজি মেয়ে। ভুল করে আবার হিন্দি বলা হচ্ছে? ”

দুয়া মিথ্যা মিথ্যা কঁকিয়ে উঠলো।

” আউচ! লাগছে খালামণি। ”

” আবারো? খালামণি বলে কতকাল ডাকবি? মা বল। ”

দুয়া শাশুড়ির হাতটা কান থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

” উঁহু খালামণি! লাগছে তো। কান ছাড়ো। আমি মা বলছি। উফ্। ”

তাসলিমা দজ্জাল শাশুড়ির ভান ধরে কান ছেড়ে দিলেন। শাসনের স্বরে বললেন,

” মা বলবি কিনা বল। ”

ফিক করে হেসে উঠলো দুয়া। হাসতে হাসতে বললো,

” তোমার কথা শুনে বাংলা সিনেমার নাম মনে পড়ে গেল খালামণি। ভালোবাসা দিবি কিনা বল। শাকিব খানের। হা হা হা। ”

তাসলিমা আর অভিনয় জারি রাখতে পারলেন না। ব্যর্থ হয়ে উনিও হেসে উঠলেন। জড়িয়ে ধরলেন আদুরে ছানাটাকে। দুয়াও ওনার বুকে আদুরে ছানার মতো মিশে গেল‌। তাসলিমা ওর চুলের ভাঁজে চুমু এঁকে বললেন,

” ভার্সিটি যাবি না আজ? ”

” হুঁ যাবো। ”

” আচ্ছা রুমে যা। ধীরে সুস্থে রেডি হ। ”

” হুঁ। ”

খালামণির অধরের ছোঁয়া ললাটে পেয়ে দুয়া তৃপ্তিময় হাসলো। মাথা সরিয়ে নিলো বক্ষস্থল হতে। তাসলিমা ওর এলোমেলো চুল গুছিয়ে দিলেন। বললেন,

” গিয়ে দেখ তূর্ণ উঠেছে কিনা। না উঠলে ডাক দে। ”

” আচ্ছা। আমি যাচ্ছি। ”

মুচকি হেসে লিভিংরুম ত্যাগ করলো দুয়া। সেথায় তাকিয়ে তৃপ্তির আভা ফুটে উঠলো তাসলিমার মুখশ্রীতে। উনি খুশিমনে কিচেনের দিকে অগ্রসর হলেন।
___

দুয়া’র মুখমণ্ডলে খুশির ছাপ। আনমনে মেয়েটা প্রবেশ করলো বেডরুমে। প্রবেশ করেই সম্মুখে দৃষ্টি আবদ্ধ হলো। হকচকিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। মৃদু চিৎকার করে দু হাতে আঁখি যুগল আড়াল করে ঘুরে দাঁড়ালো। ওর চিৎকারে হতবিহ্বল হলো উপস্থিত মানব!

” হোয়াট দ্যা হেক! সকাল সকাল চেঁচামেচি করছিস কেন পুতলা? ”

অপর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েই দুয়া জবাব দিলো,

” চিৎকার করবো না তো কি করবো? এ কি হাল করে দাঁড়িয়ে আছো? ছিঃ। লজ্জা শরম নেই নাকি? ”

তূর্ণ সমতল আরশিতে দুয়া’র অবস্থান লক্ষ্য করে ঘুরে দাঁড়ালো। একবার তাকালো নিজের দিকে। পড়নে তার শুভ্র রঙা তোয়ালে। উদোম দেহে শুধুমাত্র তোয়ালে। যা কোমড় থেকে হাঁটু অবধি। ডান হাতে শুকনো একটি তোয়ালে। যা চালনা করে চলেছে কেশের ভাঁজে ভাঁজে। নিজেকে দেখে তূর্ণ বক্র হাসলো। দুয়া’র পৃষ্ঠদেশে তাকিয়ে বললো,

” লজ্জা নারীর ভূষণ। জন্মগত ভাবেই ছেলেরা বেলাজ। বেশরম। জানিস না বুঝি? ব উ? ”

শেষোক্ত থেমে থেমে বলা ‘ বউ ‘ শব্দটি দুয়া’র কর্ণ গহ্বরে ঝঙ্কার সৃষ্টি করলো। অজান্তেই চক্ষুযুগল হতে দু হাত সরে গেল। অধর কোলে দেখা মিললো সরু রেখার। দু কপোলে লজ্জালু আভা। ওপাশে থাকা মানুষটি কি তা অনুধাবন করতে পারলো? হাতে থাকা তোয়ালেটি বিছানায় ফেলে দিলো তূর্ণ। আস্তে ধীরে অগ্রসর হতে লাগলো তার মাইরা’র পানে। পুরুষালি কদম অনুভব করতে পারলো মেয়েটি। ললাটে দেখা মিললো স্বেদজলের। সেথা হতে সরে যাওয়ার ইচ্ছে সত্ত্বেও এক কদম নড়তে পারলো না দুয়া। পদযুগল যেন মেঝেতে আটকে। ওর খুব সন্নিকটে এসে থামলো তূর্ণ। দাঁড়ালো পৃষ্ঠদেশ ছুঁই ছুঁই করে। এত সন্নিকটে পুরুষালি উপস্থিতিতে মেয়েটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়লো শিহরণ। তড়িৎ সেথা হতে সরে যাওয়ার প্রয়াস চালালো। কিন্তু বাধাপ্রাপ্ত হলো অপ্রত্যাশিতভাবে। ডান কাঁধ আঁকড়ে ধরেছে মানুষটি। না চাইতেও থমকে গেল মেয়েটি। শ্বাস প্রশ্বাস এর গতিবেগ দ্রুততম। কাঁধে হাত রেখেই আরো সন্নিকটে এলো তূর্ণ। কর্ণে উষ্ণ শ্বাস ফেলে ফিসফিসিয়ে শুধালো,

” সে কি বেলাজ পুরুষের সান্নিধ্যে লজ্জা পাচ্ছে? ভেঙ্গে দেবো কি লাজের সমস্ত স্তর? ”

এমন ভ”য়ংকর শব্দমালায় মেয়েটির সারা কায়ায় কম্পন শুরু হলো। আর পারলো না সইতে। কাঁধ হতে হাতটি সরিয়ে দ্রুততম পায়ে কক্ষ ত্যাগ করলো। সেথায় তাকিয়ে নিম্ন অধর কা’মড়ে হাসলো তূর্ণ। সে কি মোহনীয় হাসি!

” দুয়া বেবি! তুই নাকি বিয়ে করে ফেলেছিস? ”

সবে মাত্র বোতলে মুখ লাগিয়েছিল দুয়া। পুষ্পির কণ্ঠে এতটাই স্তব্ধ হলো যে নাকেমুখে বিষম খেলো। ঘাবড়ে গেল ওরা সকলে। তৃষা তাড়াতাড়ি করে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলো মেয়েটা। তৃষা চক্ষু গরম করে পুষ্পির দিকে তাকালো।

” ফ*ন্নি মাইয়া! আরেকটু হলেই তো আমার ভাইয়ের ভবিষ্যত মাইরা দিতি। ”

” স্যারের ভবিষ্যত! মানে কি বুইন! এক্সপ্লেইন মি প্লিজ।”

পুষ্পির নাটুকে কথায় তৃষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” আমার ভাইয়ের বউ এই মাইয়া। অর কিছু হইলে আমার ভাইয়ের কি হইতো? আমার অনাগত ভাতিজা ভাতিজি কোথ থে আইতো? প্লে স্টোর থে? ”

এত ভ’য়াবহ দূরদর্শিতা! হতবিহ্বল বন্ধুরা সকলে! দুয়া তো পারছে না লাজে রাঙা হয়ে মাটির অন্তরালে লুকিয়ে পড়তে। ছিঃ! মেয়েটা এত বেশরম কেন? পুষ্পি দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

” প্লে স্টোর কেন? আমি আছি না? একশো উনপঞ্চাশ তম ক্রাশরে নাহয় শাদী করে তোরে ভাতিজা ভাতিজি গিফট করতাম। ”

” এ্যাহ্! শখ কত মাইয়ার। ” তৃষা বিদ্রুপ করে হাসলো।

তিয়াশ এসব ছেড়ে দুয়া’র পানে তাকালো।

” দুয়া। ”

ডাক শুনে ওর দিকে তাকালো দুয়া।

” হাঁ বল। ”

” তুই কি সত্যিই…। বিয়েটা সত্যি সত্যিই হয়েছে? ”

দুয়া তাকালো তৃষার পানে। তৃষা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। দুয়া এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” হাঁ রে। সত্যি। নাউ আ’ম ম্যারিড। বেটারহাফ অফ আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ। ”

বন্ধুরা চরম আশ্চর্যান্বিত! ভুলে গেল কোনোরূপ বাক্য ব্যয় করতে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল বান্ধবীর দিকে। বিন্দু এবার ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো। দুয়া’র পিঠে ঘু|ষি মে রে বললো,

” কত্ত বড় শ*তান। বন্ধুমহলরে না জানাইয়া তিন কবুল বইল্লা ফেললো! এই তুই এইডা করতে পারলি? একটুও বুক কাঁপলো না? আমগো ভাগের খাবার এমনে মাইরা দিলি? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। তুই তো বন্ধু নামের ক*লঙ্ক। ”

দুয়া রাগ করতে গিয়েও পারলো না। সশব্দে হেসে উঠলো। এতে আরো তেঁতে উঠলো বিন্দু। দুয়া হাসতে হাসতে বললো,

” ডায়লগবাজি শেষ? নাকি আরো আছে? ”

” আছে। কিন্তু এহন বলার মুড নাই। আই অ্যাম তো ক্লান্ত। ”

সকলেই হেসে উঠলো। দুয়া হাসি থামিয়ে এবার গম্ভীর হলো।

” দোস্ত যেখানে আমি নিজেই জানতাম না বিয়ে হবে সেখানে তোদেরকে বলবো কি করে? ”

বন্ধুরা এহেন কথায় চমকালো!

” মানে? ঠিক বুঝলাম না। ”

তিয়াশ জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে রয়েছে। দুয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” বিয়েটা একদম আনএক্সপেক্টেড ছিল। আমরা কেউই জানতাম না। ”

” দেখ দোস্ত আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই একটু ক্লিয়ার করে বলবি! ”

বিশালের কথায় সম্মতি পোষণ করলো বিন্দু।

” হাঁ ক্লিয়ার করে বল। আসলে হয়েছিল টা কি? ”

জবাবের অপেক্ষায় বন্ধুমহল। দুয়া বুঝতে পারছে না সে কি জবাব দেবে। যেখানে সে নিজেই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবগত নয়। এখন বলবে টা কি?

অপরাহ্ন প্রহর। ক্লাসমেটের কাছ থেকে জরুরি নোটস কালেক্ট করে বাড়ি ফিরছে তৃষা। চলন্ত রিকশায় বসে উপভোগ করছে শহরের অপরাহ্ন। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ দৃষ্টি গেল রাস্তার এক পাশে। অবাক হয়ে গেল মেয়েটা! এ কি দেখছে সে! জাবির! হাঁ জাবির ই তো। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে। ক্ষণিকের মধ্যেই মানুষটিকে পেছনে ফেলে অগ্রসর হলো রিকশা। পিছু ঘুরে আরেকবার তাকালো তৃষা। নিশ্চিত হলো ওটা জাবির ই। আস্তে করে সোজা হয়ে বসলো তৃষা।

” জাবির ভাইয়া! উনি এখানে কি করছেন? ওনার মা-বোন না বিয়ের দু’দিন পর ই বগুড়া চলে গেল? তাহলে উনি রয়ে গেলেন কেন? আর উনি যে শহরেই আছেন এটা কি দুয়া জানে? উঁহু জানে না বোধহয়। ও জানলে কোনো না কোনোভাবে আমিও জানতে পারতাম। এর মানে ও জানে না। তাহলে এই মানুষটা শহরে করছে কি? ”

ভাবনায় পড়ে গেল তৃষা। চলন্ত রিকশায় ভাবুক মেয়েটি অপরাহ্নের সৌন্দর্য বাদ দিয়ে ভাবনার সাগরে ডুবে গেল।

” তূর্ণ ভাইয়া! আজ একটা সত্যি জানতে চাই। আমাদের বিয়ের পেছনে লুকায়িত সত্যিটা কি? কেন বিয়ে হলো আমাদের? সে রাতে এক্সাক্টলি কি হয়েছিল? ”

একসাথে এত প্রশ্ন! হতবিহ্বল হলো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ!

চলবে.

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৮

” তূর্ণ ভাইয়া! আজ একটা সত্যি জানতে চাই। আমাদের বিয়ের পেছনে লুকায়িত সত্যিটা কি? কেন বিয়ে হলো আমাদের? সে রাতে এক্সাক্টলি কি হয়েছিল? ”

একসাথে এত প্রশ্ন! হতবিহ্বল হলো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ!
.

আঁধার রজনী। সিঙ্গেল সোফায় বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল তূর্ণ। সেসময় কক্ষে প্রবেশ করলো দুয়া। ওর হাতে প্লেট তাতে ফলমূল। মেয়েটা আপেল খেতে খেতে বিছানায় বসলো। তূর্ণ’র দিকে তাকিয়ে শুধালো,

” ফল খাবে? ”

মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওর দিকে তাকালো তূর্ণ।

” হুঁ? ফল? ”

” হাঁ। খাবে? ”

” দে। ”

দুয়া বসে থেকেই প্লেট বাড়িয়ে দিলো‌। তাতে খ্যাক করে উঠলো তূর্ণ।

” তুই কেমন বউ রে পুতলা? একশো গজ দূরে দাঁড়িয়ে পতিভক্তি দেখাচ্ছিস! কাছে আয়। ”

হাত বাড়িয়ে কাছে আহ্বান জানালো সে। অজানা অনুভূতিতে আবিষ্ট হয়ে মেয়েটি জড়োসড়ো হয়ে গেল। ক্ষীণ স্বরে বললো,

” এখানেই ঠিক আছি। ”

” আবার? স্বামীর মুখে মুখে তর্ক করছিস? আল্লাহ্ পাপ দেবে। আয়। ”

কঠিন বাক্যে মেয়েটা মিইয়ে গেল। আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। গুটিগুটি পায়ে প্লেট হাতে নিয়ে স্বামীর পানে অগ্রসর হলো। কাছে পৌঁছাতেই তূর্ণ বললো,

” বস। ”

সোফার হ্যান্ডেল ইশারা করে বসতে বললো। তাতে বেশ অবাক হলো দুয়া! তূর্ণ এসব কি বলছে! এতটা সন্নিকটে বসতে বলছে। তারা তো অন্য সবার মতো স্বাভাবিক দম্পতি নয়। এখনো দু’জনের মধ্যে যথেষ্ট দ্বিধা বিদ্যমান। তবুও এত কাছে বসতে বলছে! কেন? দ্বিধাদ্বন্দ্ব একপাশে রেখে দুয়া বসলো। সিঙ্গেল সোফার হ্যান্ডেলে। দু’জনার হাত প্রায় ছুঁই ছুঁই। ভেতরে ভেতরে কেমন ভিন্ন অনুভূতি ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। দুয়া আস্তে করে হাতে থাকা প্লেটটা বাড়িয়ে দিলো।

” ফল। ”

তূর্ণ মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই দু’টো শব্দে নিজের ইচ্ছে ব্যক্ত করলো।

” খাইয়ে দে।‌ ”

” হা! ” বিস্ময়ে অভিভূত দুয়া!

” তোর কানে কি আজকাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে? একবার বললে শুনতে পাস না? বললাম খাইয়ে দে। ”

দুয়া আপত্তি পোষণ করতে গিয়েও করলো না। মানুষটা তার অর্ধাঙ্গ। একান্ত আপনজন। ধীরে ধীরে তার সনে স্বাভাবিক হতে হবে। সেটা না হয় এখন এই মুহুর্ত থেকেই আরম্ভ হোক! দুয়া হাতে এক পিস আপেল নিয়ে তূর্ণ’র মুখের কাছে ধরলো। হাতটি কেমন কম্পিত হচ্ছে। স্থির থাকতে নারাজ। তূর্ণ তা লক্ষ্য করে স্মিত হাসলো। মেয়েটির কবজি স্পর্শ করে হাতে থাকা আপেলে কা’মড় বসালো। কবজি ছুঁয়ে পুরুষালি হাত। দুয়া’র অনুভূতির দল আজ প্রজাপতির ন্যায় পাখনা মেলে উড়ে বেড়াতে লাগল। নাম না জানা অনুভূতিতে শিহরিত তনুমন। এ কেমন মন কেমনের অনুভূতি? এমনটি তো ইতঃপূর্বে উপলব্ধি হয়নি! মানুষটি তো তার বড্ড চেনা। তার সঙ্গ লাভে কেটেছে কত বর্ষ! অগণিত মুহূর্ত। কখনো তো এমনটি অনুভূত হয়নি! তবে আজ এ কি হচ্ছে হৃদয়ে! তূর্ণ সময় নিয়ে আস্তে ধীরে আপেল খাচ্ছে। এত ধীরগতিতে খাচ্ছে যেন মাছ খাচ্ছে। মাছে কাঁটা, তাড়াহুড়ো করলে গলায় বিঁধে যাবে। দুয়া তো অস্বস্তিতে কুপোকাত। পারছে না এখান থেকে পলায়ন করতে। হঠাৎ ওর মাথায় বুদ্ধি উদয় হলো। গলা খাঁকারি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো স্বামীর। মিষ্টি মধুর কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

” শুনছো? ”

” ইয়েস। ”

” একটা প্রশ্ন ছিল। করবো? ”

” ইয়েস। ”

খালি ইয়েস ইয়েস করছে। মন তো চাইছে! দুয়া মেজাজ স্বাভাবিক করে বললো,

” তূর্ণ ভাইয়া! আজ একটা সত্যি জানতে চাই। আমাদের বিয়ের পেছনে লুকায়িত সত্যিটা কি? কেন বিয়ে হলো আমাদের? সে রাতে এক্সাক্টলি কি হয়েছিল? ”

হঠাৎ এমন প্রশ্ন! সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল! ভাবতেও পারেনি তূর্ণ। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। চুপচাপ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তা দেখে দুয়া সোফায় প্লেট রেখে উঠে পড়লো। তূর্ণ’র পেছনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,

” কি হলো? চুপ করে আছো কেন? বলো না ভাইয়া। আমি সত্যিটা জানতে চাই। কি হয়েছিল সে রাতে? ”

তূর্ণ গোলাকার টি টেবিলের ওপর মোবাইল রাখলো। তপ্ত শ্বাস ফেলে ঘুরে দাঁড়ালো তার মাইরা’র পানে। দুয়া ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

” বলো। ”

মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো তূর্ণ। আলতো করে দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো মায়াবী মুখখানি। নয়নে মিলিত হলো নয়ন।

” সে রাতে যা হয়েছিল টোটালি আনএক্সপেক্টেড ছিল। অন্যায় ছিল। আমি নিজেও এখনো কনফিউজড। বুঝতে পারছি না কি থেকে কি হলো‌। তবে চিন্তা করিস না পুতুল। ইনশাআল্লাহ্ সত্যিটা সামনে চলে আসবে। উন্মোচন হবে সব রহস্য। ততদিন পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধর। হুঁ? ”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মেয়েটি। তাতে সন্তুষ্ট হলো তূর্ণ। সম্মোহনী চাহনিতে তাকিয়ে রইলো খানিকটা সময় ধরে। দু’জনের চোখে চোখ পড়লো। হলো অব্যক্ত কত আলাপণ! কিয়ৎ বাদে মেয়েটার হুঁশ ফিরল। সম্মোহনী চাহনিতে অপ্রস্তুত হয়ে কপোল হতে হাত সরিয়ে নিলো। নিজেও কয়েক কদম পিছিয়ে গেল। এতে ঘোর কেটে গেল তূর্ণ’র। সে গলা খাঁকারি দিয়ে পরিবেশ স্বাভাবিক করে তোলার প্রয়াস চালালো। হঠাৎ কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিমা করে দুয়া’র দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

” তখন কি বললি? ”

” কি বলেছি? কিসের কথা বলছো? ” জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে দুয়া।

” এরমধ্যেই ভুলে গেলি! কতটা ভুলোমনা রে তুই! তিন কবুল বলে বিয়ে করা পরাণের স্বামীকে শেষমেষ ভাইয়া বলে ডাকছিস! তোর চক্করে পড়ে আমার অনাগত বাবুরা তো জন্মের পর ওয়া ওয়া না করে মামা মামা করবে। স্টুপিড একটা। ”

বিস্ময়ে অভিভূত জাহিরাহ্ দুয়া! কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া করতেও ভুলে গেল! এ কেমনতর কথা!

দিবাবসুর দীপ্তিতে উজ্জ্বল বসুধা। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস। মূল ফটক পেরিয়ে চত্বরে প্রবেশ করলো শুভ্র রঙা গাড়িটি। বেশকিছু মেয়ে স্টুডেন্টের নজরে পড়লো তা। মুহুর্তের মধ্যেই হইচই পড়ে গেল তাদের মধ্যে। শত অপেক্ষার প্রহর শেষে গাড়ির দ্বার উন্মুক্ত করে বেরিয়ে এলো সুঠামদেহী সুশ্রী মানব। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! পড়নে তার কৃষ্ণবর্ণ শার্ট এবং প্যান্ট। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। খরশান চোয়াল মিঠি রৌদ্রে চকচক করছে। অধর কোলে সুক্ষ্ম হাসির রেখা। লালচে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে রাখা। মসৃণ চুলগুলোয় হাত বুলাতে মরিয়া ভার্সিটির ওয়ান অফ দ্যা ব্রিলিয়ান্ট অ্যান্ড বিউটিফুল স্টুডেন্ট নিলাশা। মেয়েটি মোহাচ্ছন্ন চাহনিতে তাকিয়ে স্যারের পানে।

” হায় ম্যায় মা|র যাভা! স্যারকে যা লাগছে না! উফ্! ”

” আমি তো আবারো ক্রাশ খেলাম রে! ”

” একদম আগুন লাগছে! যে আগুনে দ গ্ধ হয়ে চলেছে আমার সারাটা অঙ্গন। ”

” ওই কেউ আদ্রিয়ান স্যারের সঙ্গে আমার সেটিং করিয়ে দে না! প্লিজ। ”

” স্যারকে রোজ ই চকলেট লাগে। একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। ইশ্! চকলেটটার বউ যে কোন ভাগ্যবতী হবে! ”

একঝাঁক ললনা বিমোহিত এক পুরুষে! তাদের মুখে কত কত সুমিষ্ট শব্দমালা! সেসব বরাবরের মতোই উপেক্ষা করে নিজ গন্তব্যে অগ্রসর হতে লাগলো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ। কিন্তু তার অগোচরেই ঈর্ষার অনলে জ্বলেপু’ড়ে ছারখার হলো এক কোমল হৃদয়!

কক্ষ জুড়ে দুরন্ত পায়ে ছুটে চলেছে এক রমণী। যার হৃদয়ের অলিগলিতে জলন্ত অনল! একটুও স্বস্তি মিলছে না। কি করে যে মিলবে স্বস্তি! ভাবনা শেষ হতে না হতেই উদয় মহাশয়। ক্লান্ত বদন। শার্টের স্লিভ বোতাম খুলতে খুলতে কক্ষে প্রবেশ করছে। প্রবেশ করতে না করতেই ইনকাউন্টার! সোজা কোমল দু’টো হাত আঁকড়ে ধরলো শার্টের কলার! হিসহিসিয়ে বললো,

” শা* স্বামী! এত সেজেগুজে ভার্সিটিতে কি? হুঁ? মেয়েদের পড়াতে যাস নাকি হৃদয়হরণ করতে? আস্ত এক লু*চ্চা! মেয়েদের দেখেই রঙধনুর সাত রঙা ঢঙ শুরু হয়ে যায়? ব*জ্জাত ব্যা টা! তোকে তো আমি..! ”

হকচকিয়ে গেল তূর্ণ! আমতা আমতা করে বললো,

” দ দুয়া! কি হয়েছে! ত্ তুই তোকারি করছিস কেন? ”

” তুই তোকারি করছি কেন? জানিস না? জানিস তো শুধু লু*চ্চামি করতে। এইজন্যই প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফুসফুস ভুসভুস করে এক বোতল পারফিউম খরচা করা হয়! চুল সেট করতে লাগে এক ঘন্টা। শার্ট চুজ করতে আরো এক ঘন্টা। তোকে তো আমি.. ”

কলার ছেড়ে দু’টো হাত লালচে চুলগুলো আঁকড়ে ধরলো। টানতে টানতে দিশেহারা অবস্থা। এই বুঝি ছিঁড়ে গেল। উহ্ রে! ব্যথা!

” দুয়া! অ্যাই দুয়া! ”

পুরুষালি কণ্ঠস্বরে আকস্মিক সপ্তম আসমান ভেঙে টুপ করে ধরনীতে অবতীর্ণ হলো জাহিরাহ্ দুয়া! হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো সম্মুখে! তূর্ণ শার্ট খুলে উদোম দেহে দাঁড়িয়ে। আর সে এতটা দূরে! তার মানে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! কি বি শ্রী স্বপ্ন! শেষমেষ বর তুড়ি বাজিয়ে স্বপ্ন হতে ফেরত আনলো! ছিঃ!

” আ আমি! ”

আমতা আমতা করছে মেয়েটা। তূর্ণ ভ্রু কুঁচকে বললো,

” হাঁ তুই। কোন জগতে চলে গেলি? হুঁশ ফিরলো? ”

দুয়া ভ্যাবাচাকা খেয়ে পাশ ফিরে দাঁড়ালো।

” হু হুঁশ ফিরেছে মানে কি? আমি কি বেহুঁশ? ”

” আল্লাহ্ নো’জ ওয়েল। ”

দুয়া ভেংচি কাটলো। বদ লোক একটা! স্বপ্নেই ঠিক ছিল। চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলা উচিত। সে এবার সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফেললো,

” ভার্সিটিতে এত রঙচঙ করে যাওয়াটা কি আবশ্যক? ”

তূর্ণ তোয়ালে হাতে নিচ্ছিল। প্রশ্নটা শুনে থমকে গেল! সে কি ভুলভাল শুনছে! পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ।

” আমায় বললি? ”

” এখানে তুমি ছাড়া কেইবা আছে? ”

তূর্ণ বক্র হেসে শুধালো,

” আমি রঙচঙ করে ভার্সিটি যাই? তা কেমন রঙ? ঠিকমতো দেখেছিস তো? ”

” অ অফকোর্স দেখেছি। ”

মেয়েটার কণ্ঠস্বর কাঁপছে। তূর্ণ হাসিমুখে ওর পানে অগ্রসর হলো। আড়চোখে তা লক্ষ্য করে দুয়া হতবাক! এসব কি কাণ্ড!

” ত্ তুমি এভাবে এগিয়ে আসছো কেন? ”

” বউ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে। ” অধর কোলে বক্র হাসির রেখা।

মেয়েটা এমন অপ্রত্যাশিত কাণ্ডে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেছে। পেছাতে পেছাতে একসময় পৃষ্ঠদেশ ঠেকলো সমতল দেয়ালে। তূর্ণ এসে থামলো সন্নিকটে।‌ খুবই সন্নিকটে। দু’জনার কায়া প্রায় ছুঁই ছুঁই। অস্বস্তিতে ডুবন্ত মেয়েটা বাম পাশ হতে সরে যাওয়ার প্রয়াস চালালো। কিন্তু আফসোস! পুরুষালি শক্তপোক্ত ডান হাতটি ঠেকে দেয়ালে। ওকে বন্দিনী করে ফেলেছে বাহুডোরে। দুয়া ভীত চোখে তাকালো স্বামীর পানে। চোখে চোখ মিলিত হলো। তূর্ণ’র অধরে মোহনীয় হাসি। চোখেমুখে দুষ্টুমির ছাপ। আস্তে করে মাইরা’র পানে আরেকটু ঝুঁকে গেল মানুষটি। ইচ্ছাকৃতভাবে নির্গত তপ্ত শ্বাস আড়ছে পড়ছে কাঁধে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো মেয়েটি। শিহরিত হয়ে আঁকড়ে ধরলো পোশাকের একাংশ। সে মুহূর্তে ওর কর্ণ কুহরে অধর ঠেকিয়ে মানুষটি ফিসফিসিয়ে শুধালো,

” আর ইউ জেলাস মিসেস জাহিরাহ্ দুয়া? ”

কর্ণে পুরুষালি স্বর! আরেকটু গুটিয়ে গেল মেয়েটি। ওকে আরেকদফা নাস্তানাবুদ করতে চোখেমুখে আলতো করে ফুঁ দিলো তূর্ণ। যাতে নাজেহাল দুয়া’র কোমল হৃদয়। নিঃশব্দে হাসলো তূর্ণ। ঘোর লাগানো স্বরে স্বীকারোক্তি পেশ করলো,

” আই লাইক ইট। ”

‘ ছায়াবিথী ‘ এর লিভিং রুমে উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা। সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ নিজাম সাহেবের দিকে। সোফায় উনি এবং তাসলিমা পাশাপাশি বসে। নিজাম সাহেব সকলের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানালেন,

” আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ”

চলবে.