#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২১
” কাঁদে না দুয়া। সব ঠিক হয়ে গেছে তো। এই যে তুমি আমার কাছে। নিরাপদে আছো তো। বলো নিরাপদে আছো না? ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মেয়েটি। কেমন মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রয়েছে। তূর্ণ মুচকি হেসে বললো,
” এই তো। আমার বউটা আমার কাছেই আছে। আর কোনো ভয় নেই। এখানে কোনো বাজে লোকের ছায়া অবধি নেই। শুধু তুমি আর আমি। তাই না? ”
দুয়া অস্ফুট স্বরে বললো, ” হুঁ। ”
” গুড। এবার চুপটি করে আমার বুকে আসো তো। এখানটায় মাথা রেখে শুয়ে পড়ো। এটি হলো তোমার সবচেয়ে ভরসাযোগ্য স্থান। যখনই ভয় পাবে, খুব কষ্ট হবে, কাঁদতে ইচ্ছে করবে- ব্যাস এখানটায় চলে আসবে। আমি কিচ্ছুটি বলবো না মাইরা। শুধু নীরবে আগলে নেবো তোমায়। এখানে একবার মাথা রেখে দেখোই না! সমস্ত দুঃখকষ্ট-ভয় এক লহমায় ফুরুৎ। ”
দু হাত প্রসারিত করে নিজের বক্ষপটে আসার আহ্বান জানালো তূর্ণ! সম্মোহিতের ন্যায় তাকিয়ে রইল দুয়া। আঁখি পল্লব ঝাপটে বুঝি শুধালো সত্যিই আসবো! চোখের ইশারায় হাঁ সূচক জবাব দিলো মানুষটি। আর বিলম্ব করলো না দুয়া। নিজের সমস্ত অস্থিরতা, জড়তা একপাশে রেখে আস্তে করে এগিয়ে গেল। এতটা ধীরগতি বুঝি মানুষটির পছন্দ হলো না। তাই তো সন্নিকটে পৌঁছাতেই হাত ধরে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো তার মাইরা’কে। প্রিয়তমাকে! প্রথমবারের মতো তার হৃদয়ে লুকানো প্রেম ঠাঁই নিয়েছে বক্ষপটে। আদুরে পাখির ন্যায় লেপ্টে বুকের মাঝে। এতদিনের তৃষ্ণার্ত অন্তঃস্থল স্বস্তিতে ছেয়ে গেল। ভালোলাগা, আবেশে সিক্ত হলো তনুমন। পরম শান্তিতে মুদিত হলো নেত্রপল্লব। পেশিবহুল দু’টো হাতে আগলে নিলো নিজের সনে।
দুয়া’র কোমল গাত্র ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের এতখানি সান্নিধ্যে! সে পুরুষটি কোনো পরপুরুষ নয় কিন্তু। বরং তার একান্ত একজন। তার অর্ধাঙ্গ। মানুষটির দু’টো হাত তার পৃষ্ঠদেশ আঁকড়ে ধরে। প্রগাঢ় রূপে আঁকড়ে রেখেছে। যেন আলগা করে ধরলেই হারিয়ে যাবে ধোঁয়াশায়। মেয়েটির মুখখানি ঠেকে শক্তপোক্ত বক্ষপটে। নাসিকা গ্ৰন্থিতে এসে প্রবল ভাবে প্রবেশ করছে এক মা’দকীয় সুভাস! তার একান্ত মানুষটির নিজস্ব সুভাস যা কোনো মা*দককতার চেয়ে কম নয়। স্বল্প সময়েই তাকে মা’তাল করে তুলছে। হৃদয়ের আঙ্গিনায় ফুটে উঠছে নতুন এক পুষ্প। নাম তার প্রেমপুষ্প। অজান্তেই মেয়েটির অধর কোলে ফুটে উঠলো লজ্জালু আভা। তবে তা গাঢ় হবার পূর্বেই হারিয়ে গেল। নিজের মাথা আবিষ্কার করলো বালিশের বুকে। মুখোমুখি একান্ত আপনজন মানুষটি। তার চোখেমুখে মলিন আভা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওর মুখখানি দেখছে আর চেহারার রঙ পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় আলতো করে স্পর্শ করলো ওর চোয়াল। সেথায় বৃদ্ধাঙ্গুল বুলাতে বুলাতে ক্ষীণ স্বরে শুধালো,
” এখানটায় চেপে ধরেছিল। খুব লেগেছিল তাই না? ব্যথা অনুভূত হয়েছিল? ”
মেয়েটি উত্তর দিতে ভুলে গেল। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রইল মানুষটির পানে। তার চোখেমুখে অনুশোচনা, অজানা এক যাতনা! তা লক্ষ্য করে মেয়েটি না চাইতেও প্রসন্ন হলো। মানুষটির চোখেমুখে ফুটে ওঠা বেদনার ছাপ যেন তাকে স্পষ্ট রূপে বুঝিয়ে দিচ্ছে ‘ আমি যে কে তোমার! ‘ সহসা দুয়া’র পানে ঝুঁকে গেল তূর্ণ। ওর দু পাশে দুই হাত ঠেকিয়ে মুখ নামিয়ে আনলো সন্নিকটে। আলতো করে অধর স্পর্শ করলো চোয়ালের ডান পার্শ্বে। সেথায় অধরের কিছু ছোঁয়া অঙ্কন করে চোয়ালের বাম পার্শ্বে ছুঁয়ে দিলো। সে যেন তার অধরের পবিত্র ছোঁয়ায় মুছে দিচ্ছে রুমান নামক নোং রা মানুষটির অপবিত্র ছোঁয়া। আবেশে মুদিত হলো দুয়া’র মায়াবী আঁখি পল্লব। নেত্রকোণ গড়িয়ে পড়লো সুখময় দু ফোঁটা অশ্রু। মায়াময়ীর দু চোখের পাতায় অধর ছুঁয়ে দিলো তূর্ণ। অবাধ্য দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো অর্ধাঙ্গিনীর ওষ্ঠাধরে। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত ওষ্ঠাধর প্রেমিক পুরুষটির হৃদয়ে তুফান সৃষ্টি করলো। প্রিয়তমার একান্ত সান্নিধ্যে পুরুষালি চিত্তে যেন তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে। বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে দুয়া’র বাম পাশে শয্যা গ্রহণ করলো সে। ওকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে ললাটে চুমু এঁকে দিলো। মৃদু স্বরে বললো,
” ঘুমিয়ে পড়ো। ”
•
তমসায় আচ্ছাদিত যামিনী। মেঘের অন্তরালে লুকিয়ে চন্দ্র। শুনশান বাস্কেটবল কোর্টে গোলাকার বলটির ধুপধাপ আলোড়ন। নীরবতা ভেদ করে মেঝেতে বলটির আঘাতের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে। বাস্কেটবল কোর্টের ঠিক মধ্যিখানে একটা কাঠের চেয়ার। তাতে মোটা রশির আলিঙ্গনে আবদ্ধ এক মানব। আহত সে মানবটির নাম রুমান শিকদার। সারা মুখে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন। হাত-পা বাঁধা মোটা রশি দিয়ে। আঘাতে জর্জরিত দেহটি বারংবার এলিয়ে পড়ছে চেয়ারে। নিভু নিভু চোখখানা নিবদ্ধ সম্মুখে। ধূসর বর্ণের স্লিভলেস গেঞ্জি এবং ট্রাউজার পড়নে মানুষটির। স্বেদজল গড়িয়ে পড়ছে কপোল ছুঁয়ে। লালচে চুলগুলো ঘামে এলোমেলো হয়ে লেপ্টে মাথার তালুতে। মানুষটি জোরে জোরে কোর্টে বল আঘাত করে বাস্কেট করছে আহত রুমানের মুখ বরাবর। বুক-পেট বরাবর। শক্তপোক্ত গোলাকার বলের আঘাতে একটু পরপর কঁকিয়ে উঠছে রুমান। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তূর্ণ’র। সে তো নোং*রা কীটের দেহে বল বাস্কেট করতে ব্যস্ত। আহত দেহে পুনরায় বলের আঘাত। যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো রুমান। তার বাম পার্শ্বে দন্ডায়মান রাজীব এবং নিশাদ তা লক্ষ্য করেও বেশ নির্লিপ্ত। যেন কিছুই হয়নি। অল ওকে। সর্বশেষ রুমানের মুখ বরাবর বল আঘাত করে থামলো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ। তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকালো আহত মানুষটির পানে। রাগে ক্ষো’ভে লোহিত কণিকা টগবগ টগবগ করছে। মুষ্ঠিমেয় হয়ে যাচ্ছে হাত। ধীর কদম ফেলে রুমানের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো তূর্ণ। রুমান তা দেখতে পেয়ে ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু মুখ দিয়ে টু শব্দটিও করতে পারলো না। স্কচটেপ দিয়ে মুখ যে বন্ধ।
তূর্ণ এসে দাঁড়ালো রুমান বরাবর। ডান হাতটি বাড়িয়ে দিতেই রাজীব এগিয়ে এলো। ওর হাতে তুলে দিলো লৌহ লম্বাকার লাঠি। ডান হাতে লাঠিটি শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো তূর্ণ। রাজীব পিছিয়ে পূর্বের জায়গায় চলে গেল। তূর্ণ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রুমানের দিকে। ভীতসন্ত্রস্ত রুমান বারবার আপত্তি জানাচ্ছে। ছলছল করছে আঁখি যুগল। তূর্ণ অত্যন্ত শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,
” মাইরা! প্রিয়তমা সে। আমার হৃদয়ে সযতনে লুকায়িত প্রেম। ওর থেকে কয়েকশো গজ দূরে থাকতে আদেশ দিয়েছিলাম। মনে পড়ে? ”
রুমান মাথা নাড়িয়ে কিছু বোঝাতে চাইলো। কিন্তু তার পূর্বেই যন্ত্রণায় কাতরে উঠলো। ওর বাম বাহু বরাবর আঘাত হেনেছে লৌহ লাঠিটি।
” বলেছিলাম কি না? ”
রুমান যন্ত্রণায় তটস্থ হয়ে হাঁ সূচক মাথা নাড়ল। পুনরায় ওর ডান বাহুতে লাঠির আঘাত করলো তূর্ণ। রুমানের বদ্ধ আঁখি চুয়ে অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়লো। তূর্ণ হাতে লাঠিটি ঘুরাতে ঘুরাতে আহত রুমানকে কেন্দ্র করে চক্রাকারে হাঁটতে লাগলো। গম্ভীর স্বরে করতে লাগলো একের পর এক প্রশ্ন।
” তবে কেন এত স্পর্ধা দেখালি? তোর ভেতরে কি ভয়ডর নেই? কাকে তুই নোং রা বাক্যে জর্জরিত করেছিস? সে মাইরা আমার। আমার হালাল প্রিয়তমা।”
বলতে না বলতেই রুমানের হাত-পা বরাবর একের পর এক আঘাত। আঘাতে আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ দশা। আর সইতে পারছে না রুমান শিকদার। চিৎকার করতে না পারায় অবশ কণ্ঠনালী। প্রিয় বন্ধুর হিং স্র রূপ প্রদর্শন করে রাজীব ও নিশাদ বেশ ভীত। আস্তে করে তারা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। এই বদ্ধ উ’ন্মাদ প্রেমিকের উ’ন্মাদনা দেখে তারা অকালে হার্ট অ্যাটাক করে ম”রতে নারাজ।
•
এক যুগ পূর্বের কথা। সপরিবারে তখন রাজশাহী থাকতেন সাজ্জাদ সাহেব। ওখানে ওনার ইলেকট্রনিক্সের একটি মাঝারি দোকান ছিল। দোকান থেকে যা আয় হতো তাদের জন্য পারফেক্ট ছিল। বেশ ভালোভাবেই কাটছিল দিনকাল। হঠাৎ একদিন এলো কৃষ্ণকালো লগ্ন। মার্কেটে আগুন লেগে অসংখ্য দোকান পু’ড়ে ছাই হলো। উপার্জনের উৎস হারালো অগণিত পরিবার। তাদের মধ্যে সাজ্জাদ সাহেব নিজেও অন্তর্ভুক্ত। আয়ের একমাত্র উৎস চোখের সামনে জ্ব*লেপুড়ে ছারখার। সইতে পারলেন না উনি। চেতনা হারালেন মুহুর্তেই মধ্যেই। চেতনা ফেরার পর শুরু হলো নতুন জীবন, এক নতুন লড়াই। আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত সাজ্জাদ সাহেব তখন দিশেহারা বোধ করছেন। পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে বহু টাকা খরচ হলো। ব্যাংক ব্যালেন্স তখন সামান্য। এ অবস্থায় নতুন করে কি থেকে কি করবেন বুঝতেই পারছেন না। সব পাওনাদারের পাওনা এখনো পরিশোধ হয়নি। তারা যখন তখন টাকা ফেরত চাইছে। বাড়ি বয়ে এসে হু”মকি ধামকি দিচ্ছে। বিপদের সে-ই মুহূর্তে সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিলেন ভায়রা ভাই নিজাম সাহেব। নিজাম সাহেব তখন ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। স্বনামধন্য উচ্চবিত্তদের কাতারে তার নামটিও রয়েছে। উনি তাহমিদা এবং তার পরিবারের দুরবস্থা জানতে পেরে সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন নিঃস্বার্থভাবে। তবে প্রবল আত্মসম্মানবোধের অধিকারী সাজ্জাদ সাহেব তা মানতে নারাজ। উনি বিনা শ্রমে কারো থেকে এক পয়সা নিতে অনিহা প্রকাশ করলেন। হতে পারেন উনি মধ্যবিত্ত। বিপদে পড়েছেন। তবে আত্মসম্মান বিসর্জন দেননি। ওনার প্রবল আত্মসম্মানবোধ দেখে নিজাম সাহেব গর্বিত হলেন। স্বেচ্ছায় পেশ করলেন এক দুর্দান্ত অফার।
” ঠিক আছে। তোমাকে আমার নিঃস্বার্থ হেল্প নিতে হবে না। তবে বিপদের সময় আমি তো টাকা ধার দিতেই পারি। কি পারি না? নিশ্চয়ই পারি। আমি তোমাকে পরামর্শ দেবো তুমি টাকাটা ধার হিসেবে নাও। পরবর্তীতে নাহয় ফেরত দিলে। ”
নিজাম সাহেবের পরামর্শ পছন্দ হলো সাজ্জাদ সাহেবের। উনি সহধর্মিণীর সঙ্গে আলাপচারিতা করে টাকাগুলো ধার হিসেবে গ্রহণ করলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুধাবন করতে পারলেন রাজশাহীতে ওনার হারানো পজিশন আর ফিরবে না। ওখানে টাকা ব্যয় করা অর্থহীন। বেকার। শেষমেষ নিজাম সাহেব আবারো পরামর্শ দিলেন। ওনার পরামর্শ অনুযায়ী সাজ্জাদ সাহেব সপরিবারে স্বপ্নের শহর ঢাকায় স্থানান্তর হলেন। ঢাকায় শুরু হলো তাদের নতুন এক সূচনা। নিজাম সাহেব এবং তাসলিমা নিজ উদ্যোগে তাদের বাসার কাছাকাছি ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সময়ের পরিক্রমায় স্বাভাবিক হলো সবটা। নতুন উদ্যমে জাগ্রত হলেন সাজ্জাদ সাহেব। দুই পরিবারের মধ্যে সখ্যতা, ঘনিষ্ঠতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাঢ় হতে লাগলো। একসময় সাজ্জাদ সাহেব ভায়রা ভাইয়ের থেকে ধারকৃত অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হলেন। নিজস্ব অর্থে অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করলেন। যা কিনা ‘ ছায়াবিথী ‘ হতে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। সে-ই থেকে আজো দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা অম্লান – অটুট!
সাজেদার স্বামী ইন্তেকাল করেছেন প্রায় চৌদ্দ বছর পূর্বে। আদরের ছোট বোনটা তখন বিধবা। স্বামী ভিটা বগুড়ায় পুত্র-কন্যাসহ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সাজ্জাদ সাহেব কত করে বললেন বোনকে চলে আসতে। কিন্তু বোন তা শুনলো না। অগত্যা সাজ্জাদ সাহেব হার মেনে নিলেন। তবে প্রতি মাসে মাসে বোনের পরিবারের খরচপাতির জন্য একটা অ্যামাউন্ট পাঠাতেন। যা কিনা সাজেদার জন্য খুবই উপকারী ছিল। সাজ্জাদ সাহেব টেরও পেলেন না তার আদরের ছোট বোনটা কবে এত বড়, আত্মসম্মানের অধিকারী হলো! তবে উনি মনে মনে খুশি হতেন। দিনরাত স্রষ্টার নিকটে বোনের জন্য দোয়া করতেন। ভাগ্নে ভাগ্নীর জন্য দোয়া করতেন। আজ সেই বোনটি কিনা এমন পর হয়ে গেল! রিসিপশন পার্টিতে বড় ভাইকে দেখে এমন আচরণ করলো যেন বাহিরের লোক সে। নামমাত্র পরিচিত হতে এসেছে। এমনকি ভাইয়ের দিকে মুখ তুলে ভালোমতো তাকালোও না? বোনের চোখে এতটাই অপরাধী সে! যার ক্ষমা হয় না! এসব ভাবতে গিয়ে দুঃখবোধ করলেন সাজ্জাদ সাহেব। নেত্রকোণে জমায়িত হলে অশ্রু কণা। পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই! চিরন্তন সেই নিয়ম রক্ষার্থে উনি কাঁদলেন না। নিজেকে কোনোমতে সামলে শুয়ে পড়লেন। শয্যা গ্রহণ করলেন স্ত্রীর পাশে। তাহমিদা তখনো সজাগ। স্বামীর উপস্থিতি টের পেয়ে মৃদু স্বরে শুধালো,
” তুমি ঠিক আছো তো? ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি পোষণ করলেন সাজ্জাদ সাহেব। রাতের আঁধারে বিলীন হয়ে গেল তার সমস্ত দুঃখকষ্ট- যাতনা!
•
দিবাকরের আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। কক্ষজুড়ে অস্থির মেয়েটি পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। কখনো নখে দন্ত আ’ক্রমণ করছে। কখনোবা সে বসে পড়ছে টাফটেড বেঞ্চে। মাইরা’র এমন দশা দেখে কিছুটা অবাক হলো তূর্ণ! মেয়েটি এমন করছে কেন?
চলবে.