তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0
204

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৪

” আরে আস্তে আস্তে। এখুনি পড়ে যাচ্ছিলে তো। সাবধান। ”

বিছানা ত্যাগ করে সাবধানী ভঙ্গিতে মেঝেতে পদযুগল ঠেকালো তূর্ণ। উদ্দেশ্য ওয়াশরুমে যাওয়া। অসুস্থ শরীরে ধীরে ধীরে কদম ফেলে হাঁটছিল। ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল পায়ের চোটে। হঠাৎই ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। পড়ে যেতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। ওর পেশীবহুল ভারী শরীরটি ঠিক আগলে নিলো দুয়া। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠলো,

” আরে আস্তে আস্তে। এখুনি পড়ে যাচ্ছিলে তো। সাবধান। ”

দুয়া’র হাতে হাত রেখে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হলো তূর্ণ। দাঁড়ালো সোজা হয়ে। দুয়া ওর বাহুতে হাত রেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশ্ন করলো,

” তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছে? একাকী উঠলে কেন? ওয়াশরুম যাবে? ”

তূর্ণ মলিন মুখে সম্মতি জানালো। দুয়া স্বামীর হাত ধরে ওয়াশরুমের কাছে নিয়ে গেল।

” দরজা আটকাতে হবে না। ভিজিয়ে রাখো। আমি এখানেই আছি। ”

তূর্ণ কিছু বললো না। নীরবে ওয়াশরুম চলে গেল। তবে দুয়া’র কথা অমান্য করে দরজা বদ্ধ করে নিলো। তপ্ত শ্বাস ফেললো মেয়েটা। খানিক বাদে বেরিয়ে এলো তূর্ণ। দুয়া ওর হাতটি ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গেল। বসতে সহায়তা করলো। অর্ধাঙ্গের ম্লান মুখখানা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো সহধর্মিণী। বিপরীতে দিকে বসে হাত রাখলো বাঁ কপোলে। চিন্তা মিশ্রিত স্বরে শুধালো,

” কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ করছে? ”

তূর্ণ তার মাইরা’র পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। কিছুটা সময় নীরবে অতিবাহিত করে মৃদু স্বরে বলে উঠলো,

” সবাইকে খুব অসুবিধায় ফেলে দিয়েছি তাই না? আমার পেছনে সবাইকে পড়ে থাকতে হচ্ছে। খুঁটিনাটি সবটাই করে দিতে হচ্ছে। অসুস্থ শরীরে এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছি যে সামান্য ওয়াশরুম অবধি একা যেতে পারছি না। দিন নেই রাত নেই সবাইকে জ্বালাতন করছি। ”

ধক করে উঠল মেয়েটির হৃদয়। তার স্বামী এসব কি বলছে? এমন অসহায়ত্ব অনুভব করছে! কবে থেকে? তাদের কারোর আচরণে কি কষ্ট পেয়েছে? দুয়া নিভৃতে আরো সান্নিধ্যে এলো। দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো স্বামীর মুখখানা। প্রশ্ন করলো,

” তুমি এভাবে বলছো কেন? আমরা কেউ কি তোমাকে অজান্তে আঘাত করে ফেলেছি? তাহলে ক্ষমা চাইছি। তুমি এমন করে বলো না। জ্বালাতন করবে কেন? এসব বাজে কথা বলো না। ”

” ভুল কিছু তো বলিনি। এটাই সত্যি। ”

” উঁহু। এটা তোমার ভুল ধারণা। আজ যদি তোমার জায়গায় আমি কিংবা বাড়ির অন্য কেউ থাকতো তুমি কি দেখভাল করতে না? নাকি আপনজনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে? নার্সের ভরসায় রেখে দিতে। হুঁ? ”

তূর্ণ কিচ্ছুটি বললো না। অবনত করে নিলো দৃষ্টি। দুয়া অশ্রুসজল নয়নে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময়। অতঃপর স্বামীর বক্ষে মাথা এলিয়ে দিলো। বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরলো পেটের দিকে টি-শার্টের একাংশ। ভেজা কণ্ঠে বলতে লাগলো,

” এভাবে মন খারাপ করে থেকো না। তুমি তো আমার অর্ধাঙ্গ। অর্ধেক অঙ্গ। আমার একান্ত আপনজন। তোমার বিপদে যদি আমি পাশে না থাকি তবে কিসের জন্য তোমার সহধর্মিণী হলাম? সহধর্মিণী শুধু সুখের নয় বরং দুঃখেরও সাথী। আমরা একে অপরের পরিপূরক প্রিয়। একে অপরের সুখদুঃখের অংশীদার। তুমি শুধু শুধু মন খারাপ করো না। বরং আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করো। ইনশাআল্লাহ্ তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আমার সেই পুরনো খালাতো বর ফুল ফর্মে ফিরে আসবে। ”

অজান্তেই শব্দ করে হেসে উঠলো তূর্ণ। খালাতো বর! মন্দ নয় তো। স্বামীর হাস্য ধ্বনি কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই স্বস্তি বোধ করলো মেয়েটি। আলতো করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো বক্ষপটে। স্রষ্টার নিকটে প্রার্থনা করলো স্বামীর আরোগ্য। আঁখি বুজে অর্ধাঙ্গের বক্ষস্থলে আরো ভালোমতো লেপ্টে গেল। তূর্ণও দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। নিজের সনে আগলে নিলো সঙ্গিনীকে।

ভানু’র কিরণে উজ্জ্বল বসুধা। বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে তূর্ণ। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। হাতে শার্লক হোমসের বই। সম্পূর্ণ মনোযোগ বইয়ের পাতায়। খানিক বাদে কর্ণ কুহরে পৌঁছালো,

” ভাইয়া। আমার প্রিয় ভাইয়া। ভেতরে আসতে পারি? ”

বইয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই তূর্ণ দুষ্টু হাসলো। বললো,

” এখানে প্রিয় নামে কেউ থাকে না। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

তৃষা পেঁচামুখী বদনে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভাইয়ের ডান পাশে দাঁড়িয়ে প্রথমে হাতে থাকা ক্ষুদ্র বক্সটি মেঝেতে রাখলো। অতঃপর ভাইকে বলতে লাগলো,

” ভেবেছিলাম ধুরুম ধারুম বাড়ি খেয়ে ভাই আমার ভালো হয়ে গেছে‌। কিন্তু না। ভাই আমার আগের মতোই ফা.টাকেষ্ট আছে। একটুও বদলায়নি। ”

তূর্ণ হেসে ওর দিকে তাকালো।

” সরি বোন। আপনার এই ক্ষুদ্র আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ ভালো হতে পারেনি। আগের মতই রয়েছে। ”

” হাঁ। সে তো দেখতেই পাচ্ছি। পুরো আগের মতো আছো। দিনরাত আমার ভাবি রূপী বেবিটাকে জ্বালাতন করছো। ”

তূর্ণ বইয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

” বউ আমার। তাকে জ্বালাতন করবো না সোহাগ করবো এটা সম্পূর্ণ আমার বিষয়। এখন তুই বলে ফেল হঠাৎ উদয় হলি কোথা থেকে? কি চাই? ”

তৃষা অবাক বদনে ভাইয়ের পাশে বসলো।

” তুমি এতবড় কথাটা বলতে পারলে? আমি শুধু তোমার কাছে চাইতে আসি? কখনো কিছু দিই নি? ”

তূর্ণ তাকালো। ভাবুক হয়ে শুধালো,

” দিয়েছিস? ঠিক মনে করতে পারছি না। আসলে সমুদ্রের পানিতে হঠাৎ এক ফোঁটা পানি যুক্ত হলে সে কি আর টের পাওয়া যায়? যায় না তো। ”

তৃষা ভাইয়ের বাহুতে আঘাত করতে গিয়েও দমে গেল। নেহাৎ ভাইটা অসুস্থ। নাহলে কি ল পড়তো কয়েকটা। আদুরে বোনটার শুকনো মুখ দেখে তূর্ণ ওকে ডান হাতে আলিঙ্গন করলো। মধুর কণ্ঠে বললো,

” কি হয়েছে বোন? বল। ভাইয়া শুনছি। ”

তৃষা সিক্ত কণ্ঠে বললো,

” তোমার জন্য ছোট্ট গিফট এনেছি। দেবো? ”

তূর্ণ বোনের ললাটে চুমু এঁকে দিলো। উৎসাহী কণ্ঠে বললো,

” দে। দেখি দেখি বোন আমার কি এনেছে। ”

তৃষা খুশি খুশি মেঝে হতে ক্ষুদ্র বক্সটি তুলে বিছানায় রাখলো। তূর্ণ অবাক হলো র.্যাপিং পেপারে মোড়ানো উপহার দেখে!

” এটা কি? কি আছে এতে? ”

” ওয়েট। ওয়েট। দেখাচ্ছি। ”

তৃষা আস্তে আস্তে মোড়কমুক্ত করলো উপহারটি। চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো উপহার। বক্সে রয়েছে ‘আরিফ আজাদ’ রচিত বেশকিছু বই। তন্মধ্যে প্যারাডক্সিকাল সাজিদ, বেলা ফুরোবার আগে, প্রত্যাবর্তন অন্যতম। বোনের কাছ থেকে উপহার পেয়ে তূর্ণ অবাক! পুলকিত! তৃষা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

” পছন্দ হয়েছে ভাইয়া? আমি জানি তুমি আরিফ আজাদের বই পছন্দ করো। সবগুলো সময়ের অভাবে কিনতে পারোনি। তাই আমি বেশ কয়েকটা কালেক্ট করেছি। তোমার অবসর সময় ভালোই কেটে যাবে। তাই না? ”

তূর্ণ বোনকে আলিঙ্গন করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

” খুব সুন্দর হয়েছে বোন। ভাইয়া ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। শুধু এতটুকু জেনে রাখ বোনের থেকে পাওয়া ছোট থেকে বড় সমস্ত উপহার ভাইদের কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার। ”

আবেগী হয়ে পড়লো তৃষা। ভাইকে জড়িয়ে তার প্রিয় বাক্য আওড়ালো,

” আমার প্রিয় ভাইয়া। ”

অশ্রু ভেজা হাসিতে সংক্রমিত হলো দুই ভাই-বোন। দরজায় দাঁড়িয়ে এমন অসাধারণ মুহুর্তের সাক্ষী হলেন নিজাম সাহেব। ওনার অধরে তৃপ্তির ছোঁয়া।

নিশুতি রাত। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা। তূর্ণ’র পাশে দাঁড়িয়ে তাসলিমা। ছেলের প্লেটে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছেন। আজ সবটাই তূর্ণ’র পছন্দের খাবার। উনি খাবার পরিবেশন শেষে ছেলের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন।

” নাও আব্বা। খেতে শুরু করো। ”

তূর্ণ মুচকি হেসে মায়ের একটি হাত আঁকড়ে ধরলো। অনুনয়ের স্বরে বললো,

” খাইয়ে দেবে আম্মু? ”

তাসলিমা কিঞ্চিৎ অবাক হলেন! কতবছর বাদে ছেলে ওনার হাতে খাওয়ার আবদার করলো? বড় হওয়ার পর তো নিজের হাতে খেতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো। ওনার কাছে তেমন একটা আবদার করতো না। আজ এতবছর বাদে! তাসলিমার চোখে খুশির নোনাজল। উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন। শূন্য বোলে হাত ধুয়ে বসলেন ছেলের পাশের চেয়ারে। খাবার মাখিয়ে মুখের কাছে ধরলেন। তূর্ণ খুশিমনে খাবার গ্রহণ করলো। উপস্থিত সকলেই খুশি এ দৃশ্য দেখে! তাসলিমা সযত্নে ছেলেকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ বাদে শোনা গেল,

” আমরা বোধহয় বানের জলে ভেসে এসেছি। তাই না তৃষ? ”

” ঠিক বলেছিস রে ভাবি। আমরা তো পর। ওনার আদরের বাবুসোনা ই সব। তাই তো চোখের সামনে অন্যকে খেতে দেখতে হচ্ছে। ”

তূর্ণ হেসে উঠলো। খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,

” হিংসুটের দল। ”

জিভ বের করে ভেংচি কেটে দিলো দুয়া। তূর্ণ মিটিমিটি হাসছে। তাসলিমা দুই কন্যার উদ্দেশ্যে বললেন,

” অ্যাই। আমার ছেলেটা অসুস্থ। ওর খাবারে একদম নজর দিবি না।”

দুয়া বললো,

” আমাদের বয়েই গেছে তোমার বাবুসোনার খাবারে নজর দিতে। হুহ্! ”

নিজাম সাহেব বললেন,

” দুয়া মা। মন খারাপ করিস না। বাবা আছি তো। একদিন তোদেরকে আমিও মজাদার খাবার খাইয়ে দেবো। তখন এরা মা-ছেলে দেখবে আর জ্বলবে। ”

তৃষা ফিক করে হেসে উঠলো।

” পেট্রোলের আ.গুনে জ্বলবে নাকি? হি হি হি। ”

হাসিঠাট্টায় ডিনার টাইম অতিবাহিত হতে লাগলো।

দিবাবসুর দীপ্তিতে আলোকিত ধরনী। তূর্ণ লিভিং রুমে সোফায় বসে। হাতে মোবাইল। পাশে বসে ইউটিউবে মগ্ন তৃষা। সে মুহূর্তে কলিংবেল বেজে উঠল। হেল্পিং হ্যান্ড গিয়ে খুলে দিলো দ্বার। হাসিমুখে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলো নিশাদ এবং রাজীব। তূর্ণ, তৃষা দু’জনেই ওদের খেয়াল করে খুশি হলো।

” আসসালামু আলাইকুম দোস্ত। কি অবস্থা? বাড়ি বসে অলস দিনকাল কেমন কাটছে? ”

লম্বা সালাম দিয়ে বিপরীত দিকের সোফায় বসলো রাজীব, পাশে নিশাদ। তূর্ণ মোবাইল রেখে বললো,

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ্। তোদের কি খবর বল? ”

নিশাদ আড়চোখে তৃষার পানে তাকিয়ে বললো,

” আমরাও আছি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তোর শরীর কেমন আছে এখন? ঠিকঠাক? ”

” হুঁ। ”

রাজীব তৃষার পানে তাকিয়ে বললো,

” কি ছোটবোন? কেমন আছো? ”

তৃষা হাসিমুখে জবাব দিলো,

” আমি তো অ্যাজ ইউজুয়াল আলহামদুলিল্লাহ্ ফাটাফাটি আছি।”

নিশাদ ফোঁড়ন কেটে বললো,

” খেয়েদেয়ে কাজকর্ম নেই। ভালো থাকবে না তো কি থাকবে? ”

তৃষা মুখ ফুলিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। এই আশায় যে ভাই বুঝি সাপোর্ট করবে। তূর্ণ নিশাদকে বললো,

” ক্যান রে? ওর কাজকর্ম না থাকায় কারোর অসুবিধা হচ্ছে বুঝি? ”

আকস্মিক খুক খুক কেশে উঠলো নিশাদ। তূর্ণ’র অধর কোণে বাঁকা হাসি। রাজীব বন্ধুর পিঠে চাপড়ে দিতে লাগলো। তৃষা বিড়বিড় করে উঠলো,

” যক্ষ্মা রোগীর মতো খ্যাক খ্যাক করছে কেন? ”

নিশাদ তা শুনতে পেল কি? কেমন ত্যা.ছড়া নজরে তাকালো। এতক্ষণে বেচারার কাশি উড়ে গেছে। তৃষা ভাইয়ের উদ্দেশে বললো,

” ভাইয়া তোমরা কথা বলো। আমি আসছি। ”

মোবাইল হাতে উঠে দাঁড়ালো তৃষা। প্রস্থান করলো সেথা হতে। ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিশাদদের হৃদয়ে বেজে উঠলো,

” যেয়ো না সাথী। ও ও ও। ”
.

তৃষা করিডোর ধরে হেঁটে যাচ্ছে। একাকী বকবক করে চলেছে,

” এই নিশাদ ভাইয়ার মধ্যে সামথিং তো অভিয়াসলি ফিশি। কেমন যেন হাবভাব করে। আমার সিক্স সেন্স তো সতর্কবার্তা দিচ্ছে। আসলেই কি তাই? ”

তৎক্ষণাৎ আঁতকে উঠলো।

” নো নো। দুয়া বেবির মতো আমিও ধ’মকা ধমকি জিন্দেগী চাই না। আমি তো একটা পা.গলাটে লাভিং বর চাই। যে হবে আমার জন্য পা গ ল। যার পা.গলামিতে পা.গলপ্রায় হবো আমি। প্রেমে পড়বো নিত্যনতুন। এমন একজনকে চাই। ”

একাকী কল্পনায় ডুবে গেল মেয়েটা। যেখানে শুধু সে এবং তার পা’গল প্রেমিক। অন্য কেউ নেই। শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসা। খানিক বাদে কল্পনা ভঙ্গ হলো নিশির ডাকে। একাকী বিড়বিড় করতে করতে নিশি’র রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো মেয়েটা। ধুৎ! ভেঙে দিলো ভালোবাসাময় স্বপ্নটা। ভাল্লাগে না।

চলবে.

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৫

নিশুতি রাত। হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। বিছানায় বসে দুয়া। হাতে বই। বইয়ের পাতায় ভাসমান শব্দগুচ্ছ উচ্চারিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। বাঁ কাঁধে মাথা এলিয়ে বসে মানুষটি। চক্ষু বদ্ধ করে অর্ধাঙ্গীর মুখনিঃসৃত বর্ণনা শুনছে। কক্ষের আলো নিভিয়ে রাখা। শুধু সাইড ল্যাম্পের আলো বিদ্যমান। সে আলোয় উজ্জ্বল বইয়ের পাতা। বিগত আধ ঘন্টা ধরে এমনটিই চলমান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে তূর্ণ। মাইরা’র এতটা সন্নিকটে সে। মেয়েলি সুবাস ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে কড়া নাড়ছে। হারিয়ে যেতে চাইছে মন ওই দীঘল কালো কেশের রাজ্যে। নে!শা ধরে যাচ্ছে তনুমনে। একটুখানি ছুঁয়ে দেয়ার জন্য আনচান করছে হৃদয়। কতদিনের তৃষ্ণার্ত চিত্ত আজ প্রেম তৃষ্ণা মেটাতে উদগ্রীব। নিজেকে সামাল দেয়া হয়ে উঠলো দুষ্কর। আস্তে আস্তে করে নড়ে উঠলো তূর্ণ। নাসিকা ছুঁয়ে দিতে লাগলো কাঁধের কোমল ত্বকে। আকস্মিক ছোঁয়ায় শিউরে উঠলো মেয়েটি। পড়ার তালে তালে নড়তে থাকা অধর থমকে গেল। শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো বই। তূর্ণ নড়েচড়ে আরাম করে বসলো। কাঁধে মুখ লুকানো অবস্থাতেই বাঁ হাতে কাঁধ হতে কেশ সরিয়ে দিলো। সেথায় অঙ্কন করতে লাগলো ওষ্ঠের আদুরে কিছু স্পর্শ। আবেশে মুদিত হয়ে এলো দুয়ার নেত্রপল্লব। অনাদরে বইটি পড়ে রইলো কোলে। ধীরজ গতিতে বাঁ হাতটি চলতে লাগলো। পৌঁছে গিয়ে স্থাপিত হলো স্বামীর পৃষ্ঠদেশে। হঠাৎ কাঁধের কোমল আবরণে দন্তের আলতো ছোঁয়ায় মৃদু কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটি। নখ বিঁধে গেল স্বামীর পৃষ্ঠে।

মৃদু আর্ত পৌঁছালো তূর্ণ’র কর্ণ কুহরে। থেমে গেল মানুষটি। দন্ত আ.ক্রমণের শিকার লালচে স্থানে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। ক্ষমা চাইলো ফিসফিসিয়ে। দুয়া কোমল হাত বুলাতে লাগলো স্বামীর পৃষ্ঠে। বুঝিয়ে দিলো তার মনোভাব। ক্ষমা চাইতে হবে না। তূর্ণ’র অধরে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো। দুষ্টুমি করে পুনরায় কাঁধের ত্বকে দন্ত ছুঁয়ে দিলো। দুয়া মৃদু কঁকিয়ে অর্ধাঙ্গের পৃষ্ঠ ইচ্ছাকৃতভাবে খামচে ধরলো। নিঃশব্দে হেসে উঠলো মানুষটি। আদুরে ছোঁয়ায় তার মাইরা’কে বাহুডোরে আগলে নিলো। শুইয়ে দিলো বালিশের বুকে। বিছানায় শুয়ে দুয়া। উপরিভাগে একান্ত জন। দু’জনের নয়নে মিলিত নয়ন। লাজে রাঙা মেয়েটি বেশিক্ষণ ওই নয়নে ডুবে থাকতে পারলো না। আসন্ন প্রেমময় অনুভূতির আবেশে আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে পড়লো কপোলদ্বয়ে। তূর্ণ বিমুগ্ধ চাহনিতে সে লাজুক আভা দর্শন করলো। পুলকিত হলো হৃদয়। নিজ ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে লালাভ আভায় ছেয়ে থাকা দু কপোলের মসৃণ আবরণে ওষ্ঠ চাপ বসালো। সম্মোহনী স্বরে আওড়ালো,

” আমার একান্ত মাইরা! ”

অসুস্থ মানুষটি সহধর্মিণী এবং পরিবারের সদস্যদের যত্নশীল আচরণ, দিনরাত প্রার্থনা, সর্বোপরি স্রষ্টার অশেষ রহমতে সুস্থ সবল হয়ে উঠলো। সম্পূর্ণ সুস্থ সবল হতে সময় লাগলো প্রায় দেড় মাস। সবল মানুষটি অবশেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে‌। আগের মতো ভার্সিটি, পরিবার, বন্ধুমহল এবং তার একান্ত মাইরা। দিনকাল বেশ কাটছিল।
.

বন্ধুরা মিলে আজ সিনেপ্লেক্স এসেছে। পরপর দুই সারির একই কলাম দখল করে বসেছে ওরা। দুয়া, তৃষা, পুষ্পি, বিন্দু বসে পাশাপাশি। ওদের ঠিক পেছনেই বিশাল। একাকী বসেছে বেচারা। পড়ুয়া তিয়াশ সঙ্গে আসেনি। ওরা এই মুহূর্তে দেখছে হৃত্বিক রোশন এবং টাইগার শ্রফ অভিনীত ‘ ওয়্যার ‘ মুভিটি। বরাবরের মতই ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে চলেছে পুষ্পি। কখনো হৃত্বিক, কখনোবা টাইগার শ্রফ। কাকে রেখে কাকে মন দেবে কনফিউজড। দুয়া নাকমুখ কুঁচকে মৃদু স্বরে বললো,

” তোর মতো লুচি আমি এক পিসও দেখিনি। দিনের মধ্যে কত শতবার যে ক্রাশ খাস! অত বার তো খাবারও খাস না। ”

” মানে কি? তুই কি চাস? আমি অত বার খাবার খেয়ে জলহস্তী হয়ে যাই? আমার শখের ফিগার বরবাদ করি?” পুষ্পি অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে।

তৃষা বিদ্রুপ করে বললো,

” ইহ্! জিরো ফিগার ওয়ালা আসছেন! যেই না বডি! ভিতরে মাংস আছে টাছে? হুদা তো হাড্ডি। ”

পুষ্পি দুয়া’কে অতিক্রম করে তৃষার বাহুতে চাপড়ে দিলো।

” অ স ভ্য মাইয়া! আমারে কিনা বডি শেমিং করে! তোর নামে মামলা করমু। ”

” হ কর কর। আমি অগ্রীম জামিন করাইয়া রাখতেছি। ”

দুয়া দুই পাশে বসে থাকা দু’জনের হাত চেপে ধরলো। মৃদু স্বরে বললো,

” চুপ করবি তোরা? মুভি দেখতে এসে ঝগড়া করছিস? থাম। ”

পেছন থেকে বিশাল ফোঁড়ন কাটলো,

” এই হইলো বেডি মানুষ। যেহানে যায় খালি ঝামেলা। ”

চার ললনা ক্ষে.পে একসঙ্গে পিছু ঘুরে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। বিশাল আবহাওয়া গরম অনুধাবন করে বোকা হাসলো। স্বেচ্ছায় সারেন্ডার করলো। নইলে যে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আসন্ন। বোকা বোকা হেসে বললো,

” সামনে চা। তোগো ক্রাশ বাঘ পর্দায় আইছে। ”

বিন্দু তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো,

” সম্মান দিয়ে কথা বল। হি ইজ টাইগার শ্রফ। নট বাঘ। ওকে? ”

” আরে একই তো হইলো। যাহা ইংলিশে টাইগার তাহাই আবার বাংলায় বাঘ। ভিন্নতা কি? ”

” খা টা শ। ”

বিন্দু বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তাকালো সমতল বৃহৎ পর্দায়। পুষ্পি যথারীতি টাইগারে ফিদা হলো। একটু পর হৃত্বিক এলে আবার তার ওপর ফিদা হবে। হায় রে ক্রাশ পার্টি!

মাস দুয়েক পরের কথা। দুয়া’দের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। যথারীতি মাস্টার তূর্ণ তার সহধর্মিণী এবং বোনকে প্রপার গাইড করছে। ওরাও বাঁ!দরামি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হলো। তূর্ণ বারবার করে বলে দিয়েছে,

” ভালোমতো প্রিপারেশন নে। এই পরীক্ষার পর ফাইনালের বেশি দেরি নেই। ফার্স্ট ক্লাস যেন নির্বিঘ্নে আসে। ওকে? ”

দুই সখী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। দুয়া’র মনে পড়ে গেল সে পুরনো এক স্মৃতি।
___

দিনভর চিন্তায় চিন্তায় পাড় করলো দুই সখী। চিন্তা হবে না? আজ সন্ধ্যায় প্রথম বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশিত হবে। কি থেকে যে কি হবে! নাওয়া-খাওয়া ভুলে দু’জনেই দুশ্চিন্তায় দিশেহারা। তূর্ণ তা দেখে বিরক্ত হলো।

” তোদের অবস্থা দেখে আমি সত্যিই অবাক। আরে ভাই পরীক্ষা তো একদা আমরাও দিয়ে এসেছি। তাই বলে নাওয়া খাওয়া ভুলে এমন করেছি? করিনি তো। কারণ এমন করে বিন্দুমাত্র লাভ নেই। পরীক্ষার খাতায় যা লিখে এসেছিস রেজাল্ট ঠিক তাই হবে। একটুও এদিক ওদিক হবে না। সো ভুংভাং টেনশন না করে খাবার খেয়ে নে। ”

” খাবো না। ” আপত্তি জানালো দুয়া।

তূর্ণ কিঞ্চিৎ কড়া কণ্ঠে বললো,

” দুয়া বেশি ফটরফটর করবি না। খেয়ে নে বলছি। পড়ে ফিট খেলে রেজাল্ট দেখবি কি করে? ”

” বাজে লোক একটা। খালি অলক্ষুনে কথা বলে। ”

অসন্তুষ্ট বদনে সেথা হতে প্রস্থান করলো মেয়েটা। তৃষা নখ খুঁটতে খুঁটতে একবার ভাবি আরেকবার ভাইয়ের দিকে তাকালো। অতঃপর প্রস্থান করলো সেথা হতে। নইলে ভাইয়ের এক্সট্রা জ্ঞান শুনতে হবে। যা কান ও মস্তিষ্কের জন্য বেশ ক্ষতিকারক।

সেদিনটা বেশ চিন্তায় চিন্তায় অতিবাহিত হলো। অবশেষে এলো মাহেন্দ্রক্ষণ। সন্ধ্যার পর প্রকাশিত হলো প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল। খুশিতে চিৎকার করে উঠলো তৃষা। বসা থেকে দাঁড়িয়ে লাফাতে লাফাতে দু হাতে ওষ্ঠাধর লুকিয়ে বলতে লাগলো,

” ও মাই আল্লাহ্! ফার্স্ট ক্লাস ডান! থ্যাংকস আল্লাহ্। থ্যাংকস অ্যা লট! উফ্। ফেবুতে পোস্ট দিতে হবে। আমার মোবাইল? মোবাইল বোধহয় রুম। ওহ্ হো! ”

ঠে*লাগুতোঁ খেয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে তৃষা রানী। খুশিতে আত্মহারা। দৌড়ে কক্ষ ত্যাগ করলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে করতে হয়ে গেল ক্লান্ত। তবুও থেমে নেই। ওদিকে জাহিরাহ্ দুয়া? মেয়েটা ছলছল নয়নে ল্যাপটপের পর্দায় তাকিয়ে। সিজিপিএ ৩.৬৯ এসেছে। ফার্স্ট ক্লাস! আবেগে আপ্লুত হয়ে ডানে থাকা স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলো দুয়া। তূর্ণ’র অধরে তৃপ্তির আভা। মুচকি হেসে অর্ধাঙ্গিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সফল তারা। স্বার্থক তাদের পরিশ্রম। মনে মনে মহান স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করলো। নিশি খুশি খুশি কক্ষ হতে বেরিয়ে এলো। সুসংবাদ জানালো পরিবারের সকলের কাছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো ‘ ছায়াবিথী ‘। দুই পরিবারের সকলেই সন্তুষ্ট। বেশ খুশি। স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করলো তারা। নিজাম সাহেব ছোট ভাইকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লেন। খুশিতে ক্রয় করলেন সাত কেজি মিষ্টি। কয়েক পদের মিষ্টি রয়েছে তন্মধ্যে। সেদিনটা ছিল সকলের জন্য খুশির দিন। আনন্দঘন মুহূর্ত।
___

পুরনো স্মৃতি মনে করে আবেগী হয়ে পড়লো দুয়া। আগামীতে আরো ভালো ফলাফল করার স্পৃহা জন্মালো অন্তঃপুরে। ইনশাআল্লাহ্ দ্বিতীয় বর্ষে আরো ভালো ফলাফল হবে।

সুষ্ঠু রূপে পরীক্ষা শেষ হলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুয়া, তৃষা যুগল। আনন্দে কাটালো কয়েকদিন। এদিক ওদিক ঘুরতে গেল। ছোটখাটো পার্টি করলো। বন্ধুমহলের কত কি মুহূর্ত কাটলো। সময়ের পরিক্রমায় অতিবাহিত হলো আরো কতগুলো দিন। হঠাৎ একদিন এলো চমকপ্রদ মুহূর্ত। এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না কেউ। ‘ ছায়াবিথী ‘তে এ কি বি*স্ফোরণ ঘটালো তূর্ণ! এতে যে পরিবারের সদস্যরা কতটা চমকিত হয়েছে সে কি জানে?

চলবে.

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৬

” আব্বু আমি বিয়ে করতে চাই। ”

তূর্ণ’র মুখনিঃসৃত শব্দমালায় ছোটোখাটো বি*স্ফোরণ হলো লিভিংরুম জুড়ে। হতভম্ব পরিবারের প্রতিটি সদস্য! নাজমুল সাহেব অবাক স্বরে বললেন,

” কি বললি ভাতিজা! আমি কি ভুল শুনলাম? ”

তূর্ণ লিভিংরুমের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে। সকলের দৃষ্টি তার পানে নিবদ্ধ।

” না চাচু। তুমি ভুল শোনোনি। আমি সত্যিই বিয়ে করতে চাই।”

নিজাম সাহেব রাগত স্বরে বললেন,

” সকাল সকাল বোধহয় মাথায় ব্যামো হয়েছে। তুমি ভুলে যাচ্ছো যে তোমার ইতোমধ্যে একটা বউ আছে। ”

” হাঁ। আছে। আমি কি তা অস্বীকার করেছি? ”

” করোনি। তাহলে বিয়ের কথা কোন মুখে বলছো? লজ্জা করে না? ”

তূর্ণ তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,

” ওহ্ আব্বু। এভাবে রিয়েক্ট করছো কেন? লজ্জা করবে কেন? জানো না বিয়ে করা সুন্নত? ”

তৃষা বলে উঠলো,

” ভাইয়া তুমি কি বিয়ে করা সুন্নত এটাই বলতে চাইছো? নাকি চার বিয়ে সুন্নত সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছো? ”

তূর্ণ ওর পানে কেমন দুর্বোধ্য চাহনিতে তাকালো। তাসলিমা এবার মুখ খুললেন। কঠিন বাক্যে বললেন,

” তূর্ণ সকাল সকাল মশকরা বাদ দিয়ে নিজের কাজে যা। শুধু শুধু ফাজলামি করে আমাদের মাথা গরম করিস না। ”

” আম্মু আ’ম সিরিয়াস। ”

ছোট এক বাক্য। তাতে নৃ!শংসভাবে ক্ষ.তবিক্ষত হলো মেয়েটির কোমল হৃদয়! নোনাজলে ভরপুর আঁখি যুগল। বাঁ হাতে খামচে ধরলো সোফা। র-ক্তাক্ত হৃদয়ের অলিগলি। অবাক নেত্রে তাকিয়ে স্বামীর পানে। মানুষটি এসব কি বলছে? দ্বিতীয় বিয়ের মতো নির্দয় কথা বলছে! কি করে? তারা তো দম্পতি। একে অপরের পরিপূরক। অর্ধাংশ। দু’জনে তো খুব জমিয়ে সংসার করছিল। চার বর্ণের জাদুকরী শব্দ ‘ভালোবাসি’ না বলেও ভালোবেসে যাচ্ছিল। একে অপরের সনে কাটাচ্ছিল জীবনের অন্যতম মধুর লগ্ন। তবে কি হলো আজ? বিয়ের বেশ কয়েক মাস পাড় হতে না হতেই সবটা সমাপ্ত? উড়ে গেল হাওয়ায়? পালিয়ে গেল হৃদয়ে জমানো সবটুকু ভালোবাসা? দুয়া’র অক্ষিকোল গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা। তাসলিমা উঠে দাঁড়ালেন। ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কণ্ঠে বললেন,

” মাথা গরম হয়ে আছে। রুমে যাও। বিশ্রাম নাও। পরে কথা হবে। ”

তূর্ণ দু হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো।

” আম্মু তোমরা বুঝতে পারছো না। শুধু শুধু রিয়েক্ট করছো। আমি বিয়ে.. ”

অসম্পূর্ণ রয়ে গেল কথাটি। তাসলিমা গলা হতে হাত সরিয়ে নিলেন। দাঁড়ালেন কয়েক কদম পিছিয়ে। কাঠিন্যতায় মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,

” আর একটা বাজে কথা বললে এই বয়সে আমার হাতে মা*র খাবে। খুব লায়েক হয়ে গেছো তাই না? ঘরে বউ থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করার শখ জেগেছে? চরিত্রের এতটাই অবনতি?”

তূর্ণ কিছু বলতে উদ্যত হতেই নিজাম সাহেব বলে উঠলেন,

” তূর্ণ! আর একটাও বাজে কথা নয়। যাও এখান থেকে। ”

নিশি বললো,

” ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো? দুয়াকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে! তুমি এমনটা করতে পারো না। দুয়া? দুয়া ভাবির কি হবে তাহলে? ”

” দ্বিতীয় বিয়ে। আর কি? ”

তূর্ণ’র খাপছাড়া আচরণে স্তম্ভ সকলে! নিজাম সাহেব ক্ষি প্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন।

” তূর্ণ! এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে সরো। আমার মাথায় রীতিমতো আগুন জ্বলছে। কি থেকে কি বলে বসবো কষ্ট পাবে। যাও এখান থেকে। ”

তূর্ণ সকলের পানে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বললো,

” কি আশ্চর্য! বিয়ে করা বউকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করবো। বাড়ির লোক তা-ও হতে দেবে না? ”

” না। দেবো না। ”

নিজাম সাহেব বলে তো উঠলেন। হঠাৎ হুঁশ ফিরল ওনার। উপস্থিত সকলের অবস্থাই এক।

” কি! ” বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে নিজাম সাহেব।

তূর্ণ মিটিমিটি হাসছে। প্যান্টের দু পকেটে গলিয়ে রাখা হাত। স্টাইল করে দাঁড়িয়ে। তৃষা ও নিশি উঠে দাঁড়িয়েছে সে-ই কখন।

” ভ্ ভাইয়া! তুমি এসব কি বলছো? দুয়াকেই বিয়ে করবে? ” তৃষা অবাক চাহনিতে তাকিয়ে।

” আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ। তাকে ছাড়া আর কাকে বিয়ে করবো? ”

দুয়া ক্রন্দন ভুলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে। তূর্ণ ওর পানেই তাকিয়ে। আকস্মিক চোখ টিপে দিলো। হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। তড়িৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অধর কা’মড়ে হাসলো তূর্ণ। সম্বিৎ ফিরল মায়ের কণ্ঠে।

” তুই দুয়া’কে বিয়ে করার কথা বলছিলি? ”

” হুম। ও ছাড়া আর কে আছে আমার? সেধে সেধে কেউ তো আর সুদর্শন বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করবে না। তাই বাধ্য হয়ে এই সুশ্রী পেত্নীটাকেই কবুল করতে হবে। ”

রাগে মেয়েটার নাকের ডগা ফুলে উঠলো। নিজাম সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

” কতবড় অ স ভ্য ছেলে দেখলে? কিভাবে আমাদের ঘোল খাইয়ে দিলো। ”

” আমি কোথায় খাওয়ালাম? তোমরাই তো স্বেচ্ছায় খেলে। এখন যত দোষ তূর্ণ ঘোষ? ”

তূর্ণ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো। নিজাম সাহেব রাগত চাহনিতে তাকিয়ে। এবার নাজমুল সাহেব প্রশ্ন করলেন,

” তা ভাতিজা। হঠাৎ পুনর্বিবাহ এর শখ হলো যে? ”

” হঠাৎ নয় চাচু। এটা বহু পুরনো ইচ্ছে। শুধু আমার একার নয়। আমাদের দু’জনার। ”

” মানে? দুয়া মা-ও বিয়েতে ইচ্ছুক? কই কখনো বলেনি তো। ”

” এই মুখচোরা মেয়েটা আর কি বলবে? কখনো কি নিজের সমস্যা মুখ খুলে বলে? বিয়ের পর উনি পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছেন কিনা। শাবানাগিরী দেখায়। ”

তৃষা ও নিশি মুখ টিপে হাসছে। তূর্ণ বলতে লাগলো,

” তোমরা তো জানোই আমাদের বিয়েটা ঠিক কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিল। বিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সবার কত স্বপ্ন থাকে। ইচ্ছে থাকে। তোমাদের ছিল। আমাদের দুজনেরও ছিল। কিন্তু কিছু হলো আর কোথায়? পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিয়েটা হলো। তাই ভাবলাম এবার সমস্ত আচার অনুষ্ঠানের সহিত বিয়েটা হোক। মাস গেলেই তো আমাদের ফার্স্ট অ্যানিভার্সারি। তখনই না হয় বিয়েটা হবে। ”

তূর্ণ এবার মধুর কণ্ঠে বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

” উইথ ইয়্যুর পারমিশন উই ওয়ান্ট টু রি-ম্যারি। ”

বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুমতির অপেক্ষায় তূর্ণ। ওনারা দুয়া’র পানে তাকালেন। মেয়েটা দুই ননদের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে। নিজাম সাহেব ধীরপায়ে হেঁটে পুত্রবধূর কাছে গেলেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” কি রে মা? তোর কি মতামত? এই বদ ছেলেটিকে স্বামী হিসেবে মঞ্জুর করিস? নাকি সম্বন্ধ বাতিল করে দেবো? ”

তূর্ণ হতবিহ্বল! পরিবারের সদস্যরা মিটিমিটি হাসছে। দুয়া আড়চোখে তাকালো স্বামীর পানে। মানুষটা কেমন অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে। চোখের ইশারাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছে তার মনোভাব। আকাঙ্ক্ষা। সে চোখে বেশিক্ষণ তাকানো সম্ভব হলো না। আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো দুয়া। তাতে আশাহত হলো প্রেমিক চিত্ত। হতাশায় নিমজ্জিত হলো মানসলোক। নিজাম সাহেব মৃদু স্বরে শুধালেন,

” কি রে মা? বল। ”

দৃষ্টি অবনত করে মেয়েটি মিহি স্বরে বললো,

” বাবা-মা হিসেবে তোমরা যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তাতেই রাজি। ”

হো হো করে হেসে উঠলেন নিজাম সাহেব। স্মার্ট জবাব। লাজে রাঙা মেয়েটি তড়িঘড়ি করে সেথা হতে প্রস্থান করলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তূর্ণ। বক্ষস্থল হতে নেমে গেল কয়েকশ’ মণ ওজনের পাথর। তবে এই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। বাবা ওর দিকে ক্ষ্যা পা ষাঁড়ের মতো তাকিয়ে।

” হ*তচ্ছাড়া! অহেতুক স্টার জলসার ড্রামা করে সকাল সকাল আমাকে দিয়ে কত কথা বলালি। সুন্দর মেজাজ খারাপ করে দিলি। তোকে তো আমি.. ”

তেড়ে গেলেন উনি। দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে ছুটলো তূর্ণ। পিছু নিলেন নিজাম সাহেব।

” দাঁড়া। দাঁড়া বলছি। বদ ছেলে। তোর কাছে আমি মেয়ে দেবো না। অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। ”

তূর্ণ লিভিংরুমে ছুটতে ছুটতে বললো,

” পারলে দিয়ে দেখাও। সে পাত্রের হাত-পা ভেঙে যদি কাঙালি ভোজের আয়োজন না করেছি তো আমার নাম তূর্ণ নয়। ”

নিজাম সাহেব বুড়ো বয়সে আরো তেড়ে গেলেন। অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো উপস্থিত সকলে।

তমস্র রজনী। সিঙ্গেল সোফায় পা তুলে বসে মেয়েটি। হাতে সমরেশ মজুমদার রচিত বই। মনোযোগ বইয়ের পাতায়। পেরিয়ে গেল কিছু মুহূর্ত। হঠাৎ ধ্যান ভঙ্গ হলো। বাঁ কর্ণে উষ্ণ শ্বাসের আঁকিবুঁকি। খাড়া হয়ে যাচ্ছে লোমকূপ। শিহরণে আবিষ্ট তনুমন। মানুষটি ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন করছে। তাকে আদুরে জ্বালাতনে অতিষ্ট করে তুলছে। তবুও সাড়া দিলো না মেয়েটি। সে যে রাগ করে রয়েছে। সকালের ঘটনা এখনো ভোলেনি। মনে আছে। তূর্ণ আলতো করে কর্ণে ফুঁ দিতে লাগলো। তবুও আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পেল না। মেয়েটি জোরপূর্বক বই পড়ছে। তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এবার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বসলো সে। কর্ণ পাতায় ছুঁয়ে দিতে লাগলো ওষ্ঠ। প্রেমময় সে পরশ আস্তে ধীরে নিম্নে ধাবিত হতে লাগলো। কর্ণ পাতা পেরিয়ে কাঁধ, সেথা হতে গলদেশ। আবেশিত রমণীর হাত খসে পড়ে গেল বইটি। আয়ত্ত্বে পেয়ে তূর্ণ বক্র হাসলো। দ্রুত তুলে নিলো পাঁজাকোলে। ভীত রমণী দু হাতে বেষ্টিত করে নিলো অর্ধাঙ্গের গলদেশ। তূর্ণ মোহনীয় হেসে গোল গোল করে একবার ঘুরলো। টুপ করে কোমল ওষ্ঠে এঁকে দিলো জাদুকরী পরশ। ভ্যাবাচ্যাকা খেল দুয়া।

” উহ্! ছাড়ো আমাকে। নামাও। ”

” হুয়াই? ”

” আমি তোমার মতো বদ লোকের কোলে থাকতে ইচ্ছুক নই। তাই। ”

তূর্ণ ওকে পাঁজাকোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

” আচ্ছা? তাহলে কার কোলে উঠতে চাও? আব্বুর পছন্দ করা পাত্রের? ”

দুয়া কথাটা ঠিক বুঝলো না। তবুও ইতিবাচক সাড়া দিলো।

” হাঁ। হাঁ। তার কোলেই উঠবো। নামাও আমাকে। ”

বিছানার সন্নিকটে তখন দু’জনে। তূর্ণ কঠিন চোখে তাকিয়ে। আকস্মিক ওকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। নরম বিছানায় ডুবে গেল মেয়েটি। তেমন আঘাত লাগেনি। তবুও মিথ্যা কঁকিয়ে উঠলো। তখনই আ.ক্রমণ করে বসলো ক্ষ্যা পা ষাঁড়। ওর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিছানায় চেপে ধরলো দু হাত। চোখে চোখ রেখে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

” কার কোলে উঠবি? হুঁ? আমার ওপর মন উঠে গেছে? আরেকজন চাই? আব্বুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবি? মে রে ভূত বানিয়ে দেবো। ”

সশব্দে হেসে উঠলো মেয়েটি। স্বল্প উঁচু হয়ে টুপ করে অর্ধাঙ্গের নাকে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। অতঃপর বিছানায় মাথা এলিয়ে মধুরতম স্বরে বললো,

” আচ্ছা? আমাকে মে রে ভূত বানিয়ে নিজে আবার দেবদাস হয়ে যাবে না তো? নাকি চন্দ্রমুখী খুঁজে বেড়াবে? ”

সুডৌল নাকে দন্তের আলতো আ.ক্রমণে মৃদু কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটি।

” ইশ্ রা.ক্ষস। এখন থেকেই ভ*য়ঙ্কর রা.ক্ষস হওয়ার ট্রেনিং শুরু করে দিয়েছে। ”

” বেশ করেছি। তোকে মে রে ভূত বানিয়ে আমিও রাক্ষস হয়ে যাবো। এরপর পেত্নী আর রাক্ষসে মিলে সুখেশান্তিতে সংসার করবো। হ্যাপিলি এভার আফটার।”

বলে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো তূর্ণ। হাতের বাঁধন আলগা অনুভব করে পুরুষালি হাতের মাঝ হতে নিজের হাত দু’টো ছাড়িয়ে নিলো দুয়া। স্বামীর গলা দু হাতে জড়িয়ে বললো,

” বাহ্! কি সুন্দর! মানে তূর্ণ-দুয়া মানুষ কিংবা ভূতুড়ে নগরীর বাসিন্দা। যাই হোক না কেন, তারা একে অপরের সঙ্গী। তাই তো? ”

হেসে সম্মতি জানালো তূর্ণ। বিপরীতে দুয়াও হেসে উঠলো। তূর্ণ স্বল্প ঝুঁকে গেল। সঙ্গিনীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

” তূর্ণ নামক প্রেমিক পুরুষটিকে ভালোবেসে আরো একবার কবুল করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন বিবিজান। ”

ভানু’র কিরণে উজ্জ্বল বসুন্ধরা। পুষ্পির সঙ্গে হাসিঠাট্টায় মেতে তৃষা। হাঁটতে হাঁটতে দু’জনে বেরিয়ে এলো ভার্সিটি হতে। অপেক্ষারত রিকশার জন্য। হঠাৎ তৃষার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো বিপরীত দিকের পথে। অতটাও অবাক হলো না তৃষা। ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষটি দাঁড়িয়ে। স্বেদজলে পরিহিত শার্ট সিক্ত। লেপ্টে সুঠামদেহে। মৃদু এলোমেলো মসৃণ চুল। গরমে লালাভ আভা ছড়িয়ে মুখশ্রীতে। তবুও অবর্ণনীয় সুদর্শন লাগছে! আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মেয়েটি। তাতে আশ্চর্যান্বিত হলো নিশাদ! কোনোরূপ নিজেকে ধাতস্থ করে রাস্তা পাড় হতে উদ্যত হলো। ঠিক সে মুহূর্তে রিকশা হাজির। তৃষা, পুষ্পি রিকশায় বসে পড়লো। চলতে আরম্ভ করলো রিকশা। একটিবারের জন্যও পিছু ঘুরে তাকালো না নির্দয় মেয়েটি। রাগে ক্ষো ভে গাড়ির বনেটে ঘু.ষি মে রে বসলো নিশাদ। কঠিন হলো মুখখানা।

একমাস পর তূর্ণ এবং দুয়া’র প্রথম বিবাহবার্ষিকী। সে দিনে ওদের পুনর্বিবাহের সময়কাল ধার্য করা হলো। একই তারিখে দ্বিতীয়বারের মতো বাঁধা পড়বে ওরা। পূর্ণতা পাবে ওদের সম্পর্ক। ধর্মীয় এবং সামাজিক ভাবে পরিচিত পাবে তূর্ণয়া জুটি।

হাতে মাত্র একমাস সময়। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। বিবাহ বলে কথা। কত আয়োজন! খুশিতে আত্মহারা পরিবারের প্রতিটি সদস্য। কি থেকে কি করবে পরিকল্পনা চলছে দিবা-রাত্রি।

চলবে.